রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

সময় থাকে না থেমে

চোখ খুলে রাতের আকাশটার দিকে তাকালাম । ওইতো ছোট্ট তারা । এই তারাকে আমার আজ অন্য রকম ভাল লাগছে ।
যতই দিন যাচ্ছে বুঝতে পারছি রাইসাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি । সে বাসে কিনা বুঝতে পারছি না । মেয়েদের মন বোঝা বড়ই কঠিন । আর কিছুদিন পর পহেলা বৈশাখ । ঠিক করলাম রাইসাকে ওইদিন প্রপোজ করব । যা হবে হোক, আল্লাহ ভরসা ।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন । জান্নাতকে কল দিলাম ।
__ জান্নাত, কালতো সেই দিন । আমার ভয় করছে ।
__ টেনশন নিস না । আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে আমি চিনি । তুই গ্রীন সিগনালই পাবি । আর যদি রেড সিগনাল পাস তাইলে আমিতো আছি নাকি? কালই তোকে বিয়ে করে নিব ।
__ হারামি কুফা লাগাস না ।
__ আচ্ছা লাগালাম না । অল দ্য বেস্ট ।
আজ পহেলা বৈশাখ । রাইসাকে টিএসসি তে ডাকলাম । সে আসলো । হালকা নীল শাড়িতে তাকে চমত্‍কার লাগছে ।
লাল গোলাপ নয়, একটা চকোলেট দিয়ে ফিলমি স্টাইলে প্রপোজ করলাম । সে টোল পড়া হাসি দিয়ে চকোলেট টা নিল । গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে গেছি ।
তারপর ভালবাসায় কেটে গেল দুটি বছর । খুব সুন্দর কেটেছে দিনগুলি । রাইসা আমাকে অসম্ভব ভালবাসে, আর আমি রাইসাকে ।

-----------------
এগার বছর পর
"আব্বু উঠ । এত দেরি করে উঠলে হবে?"
__ হু বাবা, আরেকটু ঘুমাই ।
__ না । এখন না উঠলে আমি কিন্তু আম্মুকে ডাক দিব ।
আমি ধরাস করে উঠে গেলাম ।
__ মাথা খারাপ তোর । তুই কি চাস সকালে উঠেই তোর মার চিল্লাফাল্লা শুনি?
__ হিহি । তাহলে উঠ । একসাথে খাব...
তারপর আবির দৌড়ে চলে গেল । আমি বিছানা থেকে উঠলাম । ছেলেটা যা হয়েছে না! পুরাই মায়ের মত দুষ্টু । সকালে আবার আমাকে ছাড়া খাবে না ।
আমি হাতমুখ ধুয়ে নাস্তার টেবিলে গেলাম ।
__ মামুন, বিকালে আমি আর আবির ওর নানীর বাসায় যাব । বেশি রাত হলে খেয়ে নিও ।
__ বাবা তুমিও চল আমাদের সাথে ?
__ থাক বাবা । আমি বাসায় থাকি । আজকে অন্তত স্টার প্লাস থেকে মুক্তি পাব ।
ছেলে হাসা শুরু করল, ওর মা আমার উপর অগ্নিদৃষ্টি ধারণ করল । আর আমি নাস্তার দিকে মনোযোগ দিলাম ।
সন্ধ্যায় আমার অফিসের ফাইলগুলা ঘুচাচ্ছিলাম । তখন আমি আলমারিতে একটা ডায়েরী পেলাম । ডায়েরীটা রাইসার । পড়া শুরু করলাম ।

১৬/৫/২০১৬
আজ আমি যা লিখছি কেন লিখছি জানি না । আমার কষ্ট থেকেই লিখছি । আজ আমার কষ্টের দিন । আজ তোমার সাথে আমার ব্রেক আপ হয়ে গেল । ইচ্ছা করেই করেছি । জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমিতো জলে পুড়ে মরছি । তুমি আমাকে অনেক ভালবাস তাই তোমাকে এর চেয়ে বেশি কষ্ট কি করে দিই বল ? কারণ আমিও তোমাকে ভালবাসি ।

ডাক্তার বলেছে আমি বড়জোড় এক, দুই বছর বাঁচব । ব্লাড ক্যান্সার । আয়ুটা আরো কম হল না কেন ? এক, দুই বছর তোমাকে ছাড়া কি করে বাঁচব ? আমি জানি তুমি আমাকে ঘৃণা কর । আজ তোমার সাথে কত খারাপ খারাপ কথা বলেছি । প্লিজ আমাকে মাফ করে দিও । নাহলে যে মরে গেলেও শান্তি পাব না ।
মেঘের ভাজে কষ্টগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরেছিল আজ । সারাদিন ভিজেছি । আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । ভাললাগা, ভালবাসা অতঃপর যে শুধুই ভালবাসা ।

১১/১১/১৬
আজ তোমার বিয়ে । খুব শখ ছিল তোমার বউ হবো । লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পড়ব, তুমি আর আমি নিজেদের বিয়ের বাজার করব । কিন্তু তা আর হল না ।
ভেবেছিলাম তোমার বিয়েতে যাব । কিন্তু তুমি তখন আমাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখবে । তখন আমার কষ্ট হবে । আজ আমি কেঁদেছি খুব কেঁদেছি ।
মেঘ পরীকে খুব কিউট লাগছে তাই না ? মেঘ পরীকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে । লাল শাড়িতে কতই না সুন্দর লাগছে আমার গাধীকে ! বিয়েতে আসার জন্য অনেকবার ডেকেছে জান্নাত । রাগ করেছে আমার উপর, যায়নি তাই । জান্নাত, তুইতো সব জানিস । প্লিজ মাফ করে দে ।
তোদের জীবন অনেক সুন্দর হোক । ভালবাসায় কাটুক তোদের দিনগুলি । রাতের আকাশের ছোট্ট তারা হয়ে আমি তোদের খুনসুটি ভালবাসা দেখব আর মিটিমিটি হাসব ।

ডায়েরীটা বন্ধ করে আমি ছাদে গেলাম । কি সুন্দর পরিবেশ । জোছনার আলো , প্রশান্তির বাতাস চারিদিকে । অনেক দিন পর আজ আমি কাঁদছি । শেষবার কেঁদেছিলাম রাইসা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায় । সেইদিন নিঝুম বৃষ্টিতে আমিও ভিজেছিলাম ।
রাইসা, আমি তোমাকে কখনোই ঘৃণা করি নি । পাগলি তুই । তোকে ঘৃণা করলে তো আমি বাঁচতাম না ।
__ মামুন, তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ ? রাইসা কিছু বলতে মানা করেছিল ।
চোখ মুছে পিছনে ঘুরে দেখলাম জান্নাত এসেছে ।
__ তুমি কখন এলে?
__ একটু আগে । বিছানায় রাইসার ডায়েরী দেখলাম । বাসায় তোমাকে পেলাম না । তাই ভাবলাম ছাদে আছ ।
__ হ্যাঁ ডায়েরীটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেছিল তাই ছাদে এলাম ।
জান্নাত আমার হাত ধরে বলল,
__ প্লিজ সোনা, মন খারাপ করো না । আমি কিন্তু কেদে দিব ।-- এ বলেই জান্নাত কান্না শুরু করল ।
আমি জান্নাতকে কাছে টেনে তার মায়া ভরা চোখের অশ্রু মুছে বললাম, "আরে গাধী, কান্নার কিছু নাই । তুই আমার মেঘ পরী । পরীরা কখনো কাঁদে নাকি ! আমি তোমাকেই ভালবাসি, অনেক ভালবাসি ।" জান্নাত আমার বুকে মাথা রেখে বলল, "আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি ।"

শত তারার মাঝে ছোট্ট একটি তারার দিকে হাত বাড়িয়ে জান্নাতকে বললাম, " দেখ দেখ আমাদের দেখে তারাটি মিটিমিটি হাসছে ।"
জোছনার অল্প আলোতে আমরা দুজন ছোট্ট সেই তারার দিকে তাকিয়ে আছি । আমাদের দেখে তারাটি কি হাসিটাই হাসছে আজ !

রাগ ও কিছু ভালবাসা

-কিরে....!তুই এই কাজটা কেন করলি?
=কানে হেডফোন লাগাই হাটতেছিস,ডাক দিলে কি শুনতি নাকি?
-শুনতাম কি শুনতাম না এটা পরে,আগে ডাক দিয়ে দেখবি তো।
=যা করছি ভাল করছি।পারলে এইগুলা গিলে ফেল।
valobasa-তা তুই এখানে কেন?
=কেন?এই এলাকাতে শুধু তুই থাকবি নাকি?
-এত চটাং চটাং করে কথা বলিস না তো।আমি বলতিছি এটা কাদের বাসা?
=যার হবে হোক,তাতে তোর কি?
-আচ্ছা বাদ দে।আমাকে ডাকলি কেন বল?
=আমি তুরে ডাকলাম কখন?
-মানে?তুই না আমার গায়ে থু থু মারলি?
=থু থু মারছি,ডাকি নাই।আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন,বলার না থাকলে সামনে হাটা ধরেন।

এমন কথা শোনার পর রাগ সামলানো কঠিন।দোতলার ব্যালকনি থেকে থু থু মারবে আবার ভাবও নিবে।আমি কিছু না বলে হাটা ধরলাম।মনে করেছিলাম পিছন থেকে বোধহয় ডাক দিবে।কিন্তু না,কোন ডাক শোনা গেল না।
টিউশনির জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।হেডফোন লাগিয়ে হাটতে যাওয়াটাই ভুল হয়েছে।নাহলে আজকে অরুর থু থু গায়ে লাগত না।
আচ্ছা এখনও তো কারও পরিচয়টাও দেয়া হল না।আমি অভি।আর এত্ক্ষণ যার সাথে কথা হচ্ছিল তার নাম অরু।কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের মাঝামাঝি সময়টাতে ওর সাথে পরিচয় হয়।অরুর সাথে পরিচয় হওয়ার আগে আমি নিজেকে অনেক বড় ফাজিল মনে করতাম।শুরুর দিকে ওকে শান্ত স্বভাবের মনে হয়েছিল।পরে দেখি মেয়ে ফাজলামিতে আমার চেয়ে এক ডিগ্রী উপরে আছে।

মেয়েটা আমার সাথে এমন সব কান্ড করে যেগুলো খুব রাগ লাগে।ওর কোন কাজকর্ম আমি কখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারি না।কখনো মনে হয় মেয়েটা আমাকে ভালবাসে,কখনো মনে হয় আমাকে দুচোখে দেখতে পারেনা।কিন্তু সমস্যাটা ওকে নিয়ে না,সমস্যাটা আমার।অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওকে আমার বারবার মনে পড়ে,মায়াবী মুখের কোমল হাসিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে।এটা এমন না যে,আমি নিজের ফিলিংস নিজে বুঝিনা।কিন্তু স্বভাবসুলভ আমি সবকিছুই এক চামচ বেশি বুঝিতো,তাই এটাকে ইনফেচুয়েশন মনে করে ভাবনাগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখি।
এমন মোহ,ভালবাসা বিষয়ক আজেবাজে চিন্তা করতে করতে হাটছি।হঠাত্‍ আবার অরুর ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালাম।ফাজিলনীটা রিক্সায় বসে গা জ্বালানো মুচকি হাসি দিচ্ছে।
-আবার কি হইছে?তখন তো ব্যালকনি থেকে থু থু মারছিলি,এবার রিক্সা থেকে মারবি নাকি?
=একবারে স্বাদ মিটে গেছে।এখন নতুন কোন আইডিয়া খুজতিছি।
-এই এলাকাতে একটা পাগল আছে,এর্ও তোর মত থু থু মারার অভ্যাস।অনেক সময় লুঙ্গি মাথার উপর তুলে ফেলে।
=আচ্ছা অনেক হইছে।এবার রিক্সায় উঠ।
-আমার টিউশনি আছে।
=লাথি মারি তোর টিউশনির।এখন রিক্সায় উঠ বলতিছি।না উঠলে তোর ইজ্জত এখানেই লুট করব।

আমি আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রিক্সায় উঠে বসলাম।আর তখনই শুরু হয়ে গেল তার এলোপাতাড়ি বকবকানি।মেয়েরা যে খুব কথা বলতে পারে,তা নিউটনের সূত্রের মতই ধ্রুব সত্য,কথাটা আমার খুব ভাল করেই জানা আছে।কিন্তু অরুর বকবকানির মাত্রাটা বাড়াবাড়ি রকমের যা কারও মাথা ধরানোর জন্য যথেষ্ট।তবুও ওর পাশে বসে থাকতে ভালই লাগছে আর এই মুহূর্তে কেন জানি ওর হাতটা ধরতে খুব ইচ্ছা করছে।
=কিরে,তুই এমন চুপ কেন?
-কথা বলার সুযোগ পেলাম কই?
=কথা বলতে আবার সুযোগ লাগবে নাকি?আমি কি তোর মুখ আটকায় রাখছি?
-তোর বকবকানিতে ডিসটার্ব করতে চাচ্ছিলাম না।
=আহারে আমার সাধুরে!ডিসটার্ব করতে চাচ্ছিলাম না!
-আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
=আমিও ঠিক জানিনা,আসলে ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছিল,তাই বের হলাম।
-তো আমাকে কি দরকার ছিল?
=একলা ঘুরাঘুরিতে মজা নাই।আর তুই থাকলে তোর সাথে হালকা পাতলা প্রেমও করা যাবে।
-অরু,আমি গরিব মানুষ,প্রেম করার সামর্থ্য নাই।
=ওমরসানি মার্কা ফিল্মী ডায়লাগ মেরে লাভ নাই।বদ কোথাকার।শুধু বদ না,এক নাম্বার ভন্ড।
-আমি আবার কি করলাম?
=তোরে আর হিমু সাজার দরকার নাই,তুই হিমু না।
-কিছুই বুঝলাম না।তোর কেন এরকম মনে হ্ইতেছে?
=তোর এখন আমার হাত ধরতে ইচ্ছে করতেছে কিনা বল।
-করতেই পারে।
=জানতাম তুই এমন কিছুই বলবি।আর মনে করবি এটা সম্পূর্ণ জৈবিক ব্যাপার।কিন্তু আমি জানি তুই আমাকে ভালবাসিস।আর এটাও জেনে রাখ আমিও তোকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি।আর আমার ভালবাসা জৈবিক কিছু না।আমি চিন্তা করে রাখছিলাম আমি নিজে থেকে একথাগুলো বলব না,চাচ্ছিলাম তোর মুখ থেকে আগে ভালবাসার কথাগুলো শুনতে।কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম তোর থেকে এমন কিছু আশা করাটা বৃথা।তাই আজ অনেকটা ঝোকের বশে কথাগুলো বলে ফেললাম।

এতগুলো কথা একসাথে শোনার পর আমি আসলে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।আমার দীর্ঘদিনের ভাবনার দেওয়ালগুলো মেয়েটা এক নিমেষে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল।এখন কারও মুখে কোন কথা নেই আর সারাক্ষণ বকবক করা মেয়েটার নীরবতা সহ্য করার মত না।অরু অন্যদিকে ফিরে আছে আর বুঝতে পারলাম ও কাঁদছে।আমি তখন সব রকমের দ্বিধা ভুলে ওর হাতটা ধরলাম।অশ্রুভেজা চোখ আর মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে ও আমার দিকে তাকালো।আমি চেষ্টা করলেও মনে হয় কখনো সেই হাসিটা ভুলতে পারব না।তখন মনে হল জীবনটা সত্যিই সুন্দর আর এই মায়াবীনীকে নিয়ে পথ চলতে খুব একটা কষ্ট হবে না।।

এক ফোঁটা জল

Love golpoপড়ন্ত বিকেল।শুভ্র বসে আছে ধানমন্ডি লেকের পাশে এক সুন্দর বাসার ড্রইংরুমে।অনেক ধনী লোকের বাসা,খুব সুন্দর করে সাজানো।দামি টি টেবিল,দামি সোফা,কোনার দিকে ফুলের ভাসের ভেতর ফুল।প্লাষ্টিকের ফুল নয় আসল ফুল।সামনে একটা বিরাট সিনেমা হলের পর্দার মত টিভি।শুভ্রর খুব টিভিটা অন করে দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সাহস হচ্ছে না।কিছুক্ষন আগে এক মহিলা চা দিয়ে গিয়েছে।যেন তেন
সাধারণ টঙ্গের দোকানের চা নয়।সুন্দর সবুজ কালারের চা।খেয়ে কেমন যেন চা এর মত লাগছে না তাই আর খায় নি শুভ্র।চা না খেয়ে শুভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাসা দেখছে।শুভ্রর কখনো এই রকম ধনী লোকের বাসায় আসার কথা ছিল না।সে এসেছে একজনের সাথে দেখা করতে।অনেক পুরোন একটা মানুষের সাথে।হঠ্যাৎ চারপাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা ছবির দিকে চোখ আটকে গেল।ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের এক চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আর সেই জলের ফোটাটা রোদের আলোয় লেগে মুক্তার মত জ্বলজ্বল করছে।দেখেই বোঝা যায় প্রশংসা করার মত ছবি।কিন্তু শুভ্র প্রশংসা করতে পারছে না।কারন ছবিটি তারই আঁকা আর নিজের প্রশংসা কোন শিল্পীর করতে মানা।অনেক দিন বাদে ছবিটা দেখতে পাচ্ছে শুভ্র।এই ছবিটা জুড়ে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে।তাই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে শুভ্র।ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনমনেই অতীতে ফিরে যায় শুভ্র।

সেই দিন ছিল এমনি পড়ন্ত বিকেল।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার পক্ষ থেকে সবথেকে ভাল ৫০টা ছবির এক্সিভিশন হয় ছবির হাটে।তার মাঝে শুভ্রর ছবিও থাকে।এই ছবিটা নিয়ে অনেক আশা ছিল শুভ্রর।কারন এই ছবিটা এক্সিভিশনে উঠাতে পারলে শুভ্র ছবিটা বিক্রি করতে পারবে আর বিক্রির টাকা দিয়ে জমে থাকা রুম ভাড়া পরিশোধ,কিছুদিনের জন্য খাবার এবং কিছু কাগজ রঙ কিনতে পারবে।তাই এক বন্ধুর কাছ থেকে কাগজ এবং রঙ ধার নিয়ে এই ছবিটা আঁকে।সারারাত ধরে পরিশ্রমের ফল এই ছবি।আর ছবিটাও ভাল হবার ফলে এক্সিভিশনে উঠে যায় ছবি।এখন শুভ্রর চিন্তা এই ছবি কেউ কিনবে তো?তাই সে বারবার পায়চারী করতে থাকে।খুব সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে কিন্তু পকেটে টাকা না থাকার ফলে তাও কিনতে পারছে না।মাসুম ভাই হঠ্যাৎ ছুটতে ছুটতে এসে বলে কোন এক ছবি যেন নিলামের মত দাম বেড়ে চলেছে আর যত মেয়ে আছে সবাই অই ছবিটা কেনার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে।একটু মন খারাপ হয় শুভ্রর।জিজ্ঞেস করে,ছবির নাম কি?মাসুম ভাই বিরক্ত স্বরে বলে,এক ফোটা জল।নাম শুনে শুভ্র দৌড়ে যায় সেখানে কারন সেই ছবিটি আর কারো না ওটা তারই আঁকা ছবি।চারপাশে চিল্লাচিল্লি উপেক্ষা করে ও এগিয়ে যায় সামনে।সুজন ভাই বলে,আচ্ছা আর চেচামেচি করতে হবে না এই হল এই ছবিটির শিল্পী।তিনিই ঠিক করুক কে ছবিটি নিতে পারবেন?শুভ্র আমতা আমতা করে বলল,দেখুন ছবি একটা আর আপনারা নিতে চাচ্ছেন অনেক।অতএব বুঝতেই পারছেন যে কোন একজনকে এই ছবিটি নিতে হবে।কথা বলতে বলতে এক মেয়ের দিকে চোখ পড়ল শুভ্রর।মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর হাত তুলে আছে।নিচু গলায় সুজন ভাইকে বলল শুভ্র,ঐ যে মেয়েটি হাত উচু করে আছে ছবিটি তাকে দিয়ে দিবেন যত দাম দিবে ততই নিয়েন সুজন ভাই।এই কথা বলে শুভ্র সেখান থেকে চলে আসল।মাগরিবের আযান পড়ছে।রাস্তার বাতিগুলো জ্বলে উঠছে আর শুভ্র তা এক কোণে বসে দেখছে।সেই মেয়েটি তার সামনে এসে দাড়ালো এবং বলল,

-আপনাকে ধন্যবাদ।অনেক ভাল লেগেছে ছবিটা।এত সুন্দর ছবি কেউ আঁকতে পারে তা আমার জানা ছিল না।অনেকের মাঝে ছবিটা কিনে আনতে পেরেছি বলে নিজেকে জয়ী মনে হচ্ছে।আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
-জ্বী বলুন,নির্লিপ্ত স্বরে জবাব দেয় শুভ্র।
-অনেকেই তো এই ছবিটা কিনতে চেয়েছিল।আপনি কেন তাদের কাছে বিক্রি না করে আমার কাছে করলেন?
-আসলে এই ছবিটা আপনার প্রাপ্য তাই।কিছুক্ষন নিচে তাকিয়ে জবাব দেয় শুভ্র।
-আমার প্রাপ্য কেন?
-আসলে ছবিটা আঁকার সময় আমি একটা মানুষের ছবি মনে মনে কল্পনা করে নিয়েছিলাম আর সেই মানুষটি আপনি।
-আমি???অবাক স্বরে বলল মেয়েটি।
-জ্বী আপনি।
-ও আচ্ছা আমি চিত্রা আপনার নাম?
-শুভ্র।আচ্ছা এখন তাহলে আসি ভাল থাকবেন।
শুভ্র চিত্রা নামের মেয়েটিকে অবাক ঘোরের মাঝে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করে।এরপর থেকে যখনি কোন এক্সিভিশন হত তখনি চিত্রাকে দেখতে পেত শুভ্র।শুভ্র খুব সহজেই বুঝতে পারছিল মেয়েটি তাকে ভালবাসতে শুরু করেছে।তবুও শুভ্র তার ভাঙ্গাচোড়া শিল্পী জীবনে চিত্রাকে জড়াতে চাইতো না।দেখা হলে কেমন আছেন ভাল আছি এই টুকুতে আটকে রেখেছিল শুভ্র চিত্রাকে।একদিনের কথা চিত্রা শুভ্রর সামনে এসে দাড়াল আর বলল,
-আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
-বলুন।
-এখানে নয়।আপনি কি আমার সাথে একটু সামনে যেতে পারবেন?
-আচ্ছা চলুন।
কিছুদুর সামনে হেটে যাওয়ার পর চিত্রা বলল,
-আচ্ছা আপনি কি বুঝতে পারেন না আমি আপনাকে কতটা ভালবাসি।আপনার আঁকা সকল ছবি আমি কিনে আমার ঘ্র ভর্তি করে ফেলেছি।আপনি কি একটি বারের জন্য বুঝতে পারেন না??
-না আমি বুঝতে চাই না চিত্রা তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাসো।
-কেন?কিসের জন্য আপনি আমাকে ভালবাসবেন না?
-আমি এক সাধারণ শিল্পী।যে কিনা রংতুলির আঁচড়ে তার জীবনটাকে রাঙ্গাতে চায়।যার বাবা মা নেই।আমি ছোটবেলা থেকে মামার ঘরে মানুষ।আজ আমি এই সামান্য শিল্পীটুকু হয়েছি নিজের একান্ত চেষ্টায়।আমার জীবনটা ভাঙ্গাচোড়ায় গড়া।তুমি আমার কল্পনার রাজকন্যা।কল্পনার রাজকন্যা কখনো বাস্তবে আসে না।আর আজ তুমি নিজের ইচ্ছায় আমার জীবনে আসলে কিছুদিন পর নিজেই চলে যাবে নিজের ইচ্ছায়।আমি শত ভালবাসলেও তোমাকে ধরে রাখতে পারব না।
-আমি যদি আপনাকে এই মুহুর্তে বিয়ে করি আপনি কি বিশ্বাস করবেন কল্পনার রাজকন্যা সত্যি হয়?
-না চিত্রা এটা ঠিক নয়।তুমি অনেক ধনী পরিবারের মেয়ে।আমার জীবনের সাথে তুমি মানিয়ে চলতে পারবে না।
-আমি আজ পর্যন্ত বাবার কাছে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।আপনি একটি বার রাজী হন দেখবেন বাবাও রাজী হয়ে গিয়েছে।
-আমি তোমাকে খাওয়াবো কি?তুমি থাকবে কোথায়?
-আপনার কিচ্ছু করা লাগবে না।আপনি যেভাবে চলবেন আমিও সেভাবে চলব আমরা ছোট্ট দুই রুমের একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকব আর আপনি শুধু ছবি আকবেন।
-কিন্তু
-কোন কিন্তু নয় আমি আজি আপনাকে বিয়ে করব।

অতপর বিয়ে।কিভাবে যেন চিত্রা তার বাবাকে রাজী করিয়ে ফেলেছিল।ঘরোয়াভাবেই বিয়ে হল তাদের।শুভ্রর কাছে কেমন যেন স্বপ্ন আর সিনেমার মত লাগছিল।সে তার কল্পনার রাজকন্যাকে পেতে চলেছে বাস্তবে এটা তার বিশ্বাস হচ্ছিলো না।সে কেমন যেন ঘোরের মাঝে জীবনের সুখের সময়গুলো কাটাতে লাগল তার।কিন্তু এই সময়টাতে শুভ্র ভুলে গিয়েছিল রোদে ঝলমলে দিনের শেষে অন্ধকারছন্ন রাত আসে।হ্যা দেখতে দেখতে ২ বছর কেটে গেল।এর মাঝে অনেক পরিবর্তন এসে গেল চিত্রার মাঝেও।চিত্রা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করত শুভ্রর সাথে।অনেক রাত করে বাসায় ফিরত কারণ ছাড়া।একটা সময় চিত্রা বাসা ছেড়ে তার বাবার বাসায় এসে উঠল।কারণ তার নাকি এই ছোট দুই রুমের বাসায় আর ভাল লাগছে না।১০ দিন যায় ১৫ দিন যায় তবু চিত্রা আর বাসায় আসে না।ফোন দিলে ফোন ধরে না।হঠ্যাৎ একদিন ফোন দিয়ে চিত্রা এই ধানমন্ডির বাসার ঠিকানা দিয়ে আসতে বলে কি যেন জরুরী কথা আছে।আর তার ফোনের কারনেই আজ শুভ্রর এই বাসায় আসা।

-শুভ্র এই শুভ্র।
চিত্রার ডাকে লাফ দিয়ে উঠে শুভ্র।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তার খেয়ালি ছিল নেই।
-স্যরি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।আচ্ছা তুমি যেন কি বলবে?
-আসলে শুভ্র তোমাকে একটা জরুরী কথা বলতে ডাক দিয়েছি।
-হ্যা বল।
-শুভ্র আমি আসলে তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছি না।
-মানে?
-মানে আমি আসিফকে বিয়ে করতে যাচ্ছি সামনে।এটা আমার আর আসিফের বাসা।আমরা এই বাসাটা নতুন নিয়েছি।
-এখন আমি কি করব?আমাকে কি জন্য ডেকেছ?নিচের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ্র।
-I want divorce শুভ্র।
-তার মানে তুমি মুক্তি চাও?
-মানে?
-নাহ কিছু না।বাসাটা সুন্দর সাজিয়েছ আমার সেই ছবিটাও এনে রেখেছ দেখছি।
-হ্যা তাহলে আমি ডিভোর্স পেপারটা পাঠিয়ে দিব ওটাতে তুমি সাইন করে দিও।
-আচ্ছা ঠিক আছে আজ তাহলে উঠি।
-চা খেয়েছ?আরেক কাপ চা দিতে বলি।
-নাহ থাক আজ যাই ভাল থেকো।

শুভ্রর কেন যেন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।বলতে ইচ্ছে করছে,না আমাকে ছেড়ে যেও না চিত্রা।তুমি আমার রাজকন্যা।যে কিনা কল্পনা থেকে বাস্তবে এসেছিল।নাহ বলতে পারছিল না শুভ্র গলার ভেতর থেকে কি যেন স্বরটাকে আটকে ধরে রাখল।তাই চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে আসল সে।সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে শুভ্রর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল এক ফোটা জল।

যে ভালবাসা হারাতে নেই

valobasar golpo- আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? আমি দাঁড়িয়ে আছি তো।
বিছানায় শুয়ে ভাবছে আবির আসলে আর কতক্ষণ লাগবে।
- কি হল? কই তুমি?
- এইতো বের হলাম। বাস এ উঠবো। কতক্ষণ লাগে তা তো জানি না। তবে তারাতারি আসার চেষ্টা করব।

আসলেই বের হয়েছে আবির। খুব প্রিয় এক জায়গা থেকে। ঘুম। সারাদিন বিছানার সাথে লেপটে থাকতে
পারে। শরীরের অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এই ছেলে এত ঘুমায়। মারিয়া যে কয়েকটা দিন দেখা করেছে সবসময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কোনদিন আগে এসে পৌঁছাতে পারেনি আবির। মারিয়া নিজেও বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছে। ওর অনেক দিনের ইচ্ছা আবির অপেক্ষা করবে, আর মারিয়া বলবে, রাস্তায় অনেক জ্যাম। তাই দেরি হল। আজই হয়ত সেইদিন।
আবির কোনমতে উঠে রেডি হয়ে নিল। আবিরের নিজেরও অনেক ইচ্ছা একদিন আগে যাওয়ার। কিন্তু কোনদিনই হয় না। এই ঘুম আর জ্যাম সব কিছুর জন্য দায়ি। প্রতিটা বার লেট আর প্রতিটা বার শাস্তি। ওহ, সে কি শাস্তি। ভাবাই যায় না।

বাসের জন্য প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা শেষে অবশেষে বাস আসল। মনে মনে অনাগত শাস্তির কথা ভাবছে আবির। খুব ভাল করেই জানে আজকের প্রশ্নের উত্তর দিতেও ব্যর্থ হবে। আজ পর্যন্ত একটা দিনও উত্তর দিয়ে শাস্তি থেকে পার পায়নি আবির। বাসে উঠার পর জানালার পাশে বসল। পাশে কেউ নেই। ২ সিটের অধিকারী হয়ে খুবই খুশি আবির। সব সময় ভাগ্য এত ভাল হয় না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সব ভেঙ্গে এক মানুষ এসে আবিরের পাশে বসল। ২ সিটের সুখ এখন হাফ সিটে নেমে এসেছে। এত বড় শরীর নিয়ে পাশে যে মানুষটা বসে আছে তার দেড় সিটেও মনে হয় হচ্ছে না। ২ সিট পেলে সে হাসি মুখে দাঁত বের করে বসে পরবে। ধন্যবাদও দিবে না একবার আবিরকে। মারিয়ার সাথে দেখা হলে তো এমনিতেই শাস্তি অপেক্ষা করছে। তার আগে এই কোন শাস্তি পাচ্ছে আবির?
লাস্ট যেদিন দেরী করে গেল, মারিয়া রাগি রাগি চোখ করে বলল- দেরী হল কেন এত? প্রতিদিন আমি অপেক্ষা করব? কি পাইছ তুমি?

- জ্যাম ছিল রাস্তায়।
- প্রতিদিন এক কথা বলবা না। রাস্তায় জ্যাম ছিল? তো তুমি জামেই থাকতা। আমি যদি এর মাঝে অন্য কারও সাথে বসে গল্প করা শুরু করে দিতাম তুমি কিছু করতে পারতা?
- না না। কি বল তুমি? তুমি কত ভাল মেয়ে। তুমি অমন করতেই পার না।
একটু রাগি মুখে তাকাল মারিয়া। মুখটা নিচু করে ফেলল আবির। নিশ্চয় এখনি প্রশ্ন করবে আবিরকে।
- তুমি তো বাসে আসছ, তাই না?
- হ্যাঁ।
- পাশে কে বসছিল?
- একটা মেয়ে।
- বয়স কত?
- তোমার মত হবে।
- কি কালারের ড্রেস পরেছিল?
- কালো।
- আচ্ছা। ঠিক আছে। আচ্ছা বাসে সিট কয়টা ছিল?
- বাসে সিট? গুনছি নাকি আমি?
- পাশে বসা মেয়ের ড্রেসের কালার দেখতে পারছ আর বাসের সিট গুনতে পার নায়?
- না,ওটা কি সম্ভব নাকি? পাশে বসলে ড্রেস দেখব না?
- তাই দেখ। আমি প্রশ্ন করছি উত্তর দিতে পারনি তুমি। শেষ।
- আজ আবার কি শাস্তি দিবা?
- আজ আমার হাত ধরতে পারবা না। পাশে পাশে ঘুরবা, বসে থাকবা, খাবা একসাথে। কিন্তু হাত ধরতে পারবা না।
- এটা কেমন কথা? আমি কি করে থাকব হাত না ধরে?
- থাকতে হবে। অপরাধ করছ, আবার উত্তরও দিতে পার নায় প্রশ্নের।
- আর এমন হবে না। এরপর থেকে আর দেরী করে আসব না, বিশ্বাস করো।
- না। এর আগেও অনেকবার বলছ। তাও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আর সম্ভব না।
- একবারের জন্যও না? আমি না তোমাকে ভালবাসি? আমি হাত ধরব না?
- না।

সেদিন সত্যিই একবারের জন্যও হাত ধরতে দেয়নি মারিয়া। কয়েকবার ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল আবির। প্রতিবারই হতাশ।
একটু চলার পরই জ্যাম। সহ্য করার মতন না। মাঝে ২ বার মারিয়া ফোন দিল। প্রতিবারই বলল আবির, এই তো চলে এসেছি, আর একটু।
আজ কি প্রশ্ন করতে পারে? বাসে লাইট আছে ৪ টা। জানালা ১২ টা। একটা মাত্র ফ্যান যা ড্রাইভার এর মাথার উপর প্রাণপণ ঘুরে চলছে। selfish ড্রাইভার। খালি নিজেরটাই বুঝে। এইদিকে একজন যে হাফ সিটে বসে টিকে থাকার যুদ্ধ করছে সেই দিকে কোন খেয়াল নেই।
মনে হচ্ছে পাশে বসা লোকটাকে কিছু বলতে কিন্তু পরে আর বলা হল না। জানালা দিয়ে বাহিরের লোকজন দেখছে আবির। কত মিষ্টি করে শাসন করে মারিয়া। রাগ করে কত মিষ্টি করে। এত মিষ্টি ভালবাসার সম্পর্ক হয়ত খুব কম মানুষের ভাগ্যেই থাকে।

- ঐ জোরে চালা বাস।

জানালায় সজোরে বিশাল হাত নিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলল আবিরের পাশে বসা বিশাল দেহী মানুষটা। তার বগলের নিচে যে একজন পরে আছে সেই দিকে একদমই খেয়াল নেই।
ওহ, কি দুর্গন্ধ। কি দোষ করেছিল আবির আল্লাহই জানে। দেড় সিট নিয়েছে সমস্যা নেই। বগলের নিচে এভাবে রেখে বাস থাপড়াতে হবে। আরে বডি স্প্রে না থাকুক, অন্তত ঘামাচি পাউডার তো দিয়ে আসতে পারত। বমি আসছে দুর্গন্ধে।
বমির কথা ভাবতেই হঠাৎ মাথায় একটা কথা আসল, আচ্ছা বাসে উঠলে তো অনেকেই বমি করে। ড্রাইভারদের কখনও বমি আসে না? আসলে তখন কি হত?

আজও মারিয়া আগে চলে আসল। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ছেলেটা প্রতিদিন দেরি করে আসে। এই যে দেরি করে আসলে হাত ধরতে দেই না, রাগ করি, কথা বলি না। তাও একটা দিন আগে আসে না। আর ছেলেটা কেমন যেন, রাগ করে থাকতে পারিনা ওর উপর। চোখের দিকে তাকালেই রাগ চলে যায়। তাই যতটা সময় রাগ করে থাকি ভুলেও চোখের দিকে তাকাই না। চোখের দিকে তাকালেই এমন একটা অসহায়ের মত ভাব করবে যেন কত কষ্টে আছে। আসলে তো সব ঢঙ। তাও পারি না রাগ করতে। আর ফাজিলটাকে শাস্তি দিয়ে যেটা করতে মানা করব ঐটা আরও বেশি করে করবে। ফাজিল, শয়তান। আজ আসুক , আজ আর ফাজিলটার অসহায়ের মত তাকানো দেখে রাগ ভাঙবে না।
জ্যাম ছেড়েছে তাহলে। বেশি সময় লাগার কথা না আর। আসলেই বড্ড বেশি দেরি করে যাওয়া হয়। মেয়েটা প্রতিদিন একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। একটু সময় মত একদিনও যাওয়া হয় না। খারাপ লাগে অনেক, কিন্তু ঘুম না ভাঙলে আমার কি করা?

আবির বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনিতেই মারিয়ার জন্য মন খারাপ। আজ ও শাস্তি পেতে হবে। তার উপর পাশের দানবের যন্ত্রণা। কিছুক্ষণ ধরে অন্য এক যন্ত্রণা দিচ্ছে লোকটা। বাসের হেল্পার পিচ্চিটা যখনি বলছে, বায়ে পেলাস্টিক, বায়ে পেলাস্টিক।
আর আবিরের পাশের লোকটা উঠে উঠে জানালা দিয়ে " পেলাস্টিক " দেখার চেষ্টা করছে। সাথে সাথে আবিরকে তার শরীরের সুগন্ধে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে যাচ্ছেন। আজব মানুষ।
বাস থেকে নেমে তারতারি একটা রিকশা নিয়ে গেল। রিকশা থেকে নেমে আস্তে করে মারিয়ার সামনে এসে দাঁড়াল আবির। আবির বলতে শুরু করল - জানো, আজ এত জ্যাম......

- চুপ। আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
- না, দেরি করলাম তো তাই।
- সে তো প্রতিদিনই করো, আর প্রতিদিন এসে একই কথা বল।
- সত্যি কথা বিশ্বাস করো...
- চুপ। বাসে আসছ তো?
- হ্যাঁ।
- বাসে চাকা ছিল কয়টা?
- লাইট ৪ টা, জানালা ১২ টা, ফ্যান একটা selfish ড্রাইভার এর মাথার উপর।
- এগুলো জানতে চাইছি? চাকা কয়টা ছিল?
বাসে চাকা কয়টা ছিল একটু চিন্তা করলেই বলা যাবে। কিন্তু মাথায় কোন কিছু ঢুকছে না এখন।মাথায় একটাই চিন্তা মারিয়া আজ কি শাস্তি দিবে।
- বলতে পারবা না, তাই তো?
- ঠিক মনে করতে পারছি না।
- আজ বাসা থেকে আসার সময় ভেবে এসেছিলাম, আজ আমি তোমাকে

খাইয়ে দিব। একসাথে খেতে বসলেই তো বল, একটু খাইয়ে দাও না। ভেবেছিলাম আজ তোমার ইচ্ছাটা পূরণ করব। আজও তুমি দেরি করে আসলা। তোমার ইচ্ছাটা আর পূরণ হচ্ছে না।
আবির মুখ ঘোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল। কোন কথা বলল না। মারিয়াও চোখ নিচের দিকে দিয়ে তাকিয়ে আছে। আবিরের মুখের দিকে তাকানো যাবে না। প্রতিদিন দেরি করবে আর মাফ করে দিবে। কখনও না। মারিয়ার কষ্ট হয় না?

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মারিয়ার হঠাৎ মনে হল আবির চুপ করে আছে কেন? আজ আর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে না কেন? মারিয়া মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকাল। আবিরও মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মারিয়া আবিরের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল- এই কি হইছে? এমন চুপ করে আছো কেন? আজ আর রাগ ভাঙ্গাবা না।
- আমি কি ইচ্ছা করে এমন করি? আমার ঘুম ভাঙতে চায় না সকাল বেলা। আর বাস কি আমি চালাই, জ্যাম বাধলে আমি কি করব? আমার খারাপ লাগে না তুমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাক? প্রতিদিন আমাকে শাস্তি দাও।
অসহায়ের মত মুখ করে কথা গুলো বলছে আবির। আবারও রাগ চলে গেল মারিয়ার। হাতটা আরও শক্ত করে ধরল মারিয়া। মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল- আহারে, আমার পাগলটা দেখি রাগ ও করতে পারে। কত্ত রাগ করছ দেখি তো?

- আমাকে খাইয়ে দিবে না,না?
- দিব তো। তোমাকে দিব না তো কাকে দিব বল? আচ্ছা বল, কি খাবা?
- ফুস্কা, আইস ক্রিম, বাদাম ...
- এই এই, আস্তে আস্তে বল। একটা একটা করে বল।
- সবগুলো খাবো।
- হ্যাঁ সবগুলো খাবে। কিন্তু একসাথে তো পারবা না। একটা একটা করে খাবা, আচ্ছা?
- না খাবো না, খাইয়ে দিবে।
- দিব তো, পাগল।
আইস ক্রিম খাইয়ে দিচ্ছে মারিয়া আবিরকে। আবির খাওয়াতে ব্যাস্ত। আর মারিয়া তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে। বড্ড বেশি কান্না পাচ্ছে মারিয়ার। কষ্টে না। খুশিতে। এত ভালবাসে কেন আবিরকে ও? পাগলটার মাঝে কি আছে? জানা নেই। সব কিছু সবসময় জানতে নেই। ভালবাসে বাসুক। এত কিছু বুঝতে গেলে ভালো লাগাটুকু হারিয়ে যেতে পারে।
- আর একটা খাইয়ে দিবে?
আবির আবারও সেইরকম মুখ করে তাকিয়ে আছে। না করার উপায় নেই।
-আচ্ছা দিচ্ছি।
- একটা কথা বলি?
- বল।
- আমি আর কখনও দেরি করে আসব না। আমাকে প্রতিদিন এভাবে খাইয়ে দিবে?
- দিব।
- আমিও তোমাকে একটু খাইয়ে দেই।
- দাও।

আবির আইস ক্রিমটা নিয়ে মারিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে এখনও মারিয়ার। পাগলটার সে দিকে একদম খেয়াল নেই। শুধু খাওয়া নিয়েই ব্যাস্ত। মারিয়া আবিরের হাতটা আর একটু শক্ত করে ধরল। মনে মনে বলল, তোমাকে অনেক ভালবাসি, ছেড়ে যেওনা কখনও।
আবির বুঝল কিনা জানে না।

আবির সবই দেখছে সবই বুঝছে। সব কিছু সবসময় বুঝতে দিতে নেই। একটু রাগ করুক না মেয়েটা। রাগলে অনেক সুন্দর লাগে দেখতে মারিয়াকে।

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

একটি ভালবাসার মৃত্যু!!

প্রত্যেকদিন তার মিষ্টি সুরে আমার ঘুমটা ভাঙ্গে।আজ অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙ্গে দিল।তারপর হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বলল "শুভ জন্মদিন",আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।তাড়াতাড়ি বাসায় আসিও।
Love story
আজ আমার জন্মদিন অথচ আমার মনে নেই।জন্মদিনটা ভুলে যাওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে।কারণ না থাকলে'ত কেউ নিজের জন্মদিনটা ভুলে যায় না।জন্মদিনটা ভুলার কারণটা হল 'ফারিয়া' তার সাথে ব্রেক-আপ হওয়ার পর থেকে আমি আর আমার জন্মদিনটা মনে রাখি না।ফারিয়া আর আমার জন্মদিন
ছিল একই দিনে।ফারিয়া চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমার জীবন থেকে জন্মদিনটাও হারিয়ে যায়।

আজ আমার স্ত্রী তানিয়া শুভ জন্মদিন বলে আবার আমার জন্মদিন আর ফারিয়ার সাথে কাটানো অতীতের কথা মনে করে দিল।
ফারিয়া ছিল আমার একান্ত কাছের মানুষ।ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য আমি একটা কোচিং-এ ভর্তি হয় আর এই কোচিং-এ তার সাথে পরিচয় হয়।কোচিং-এ বেশ কয়েকজন ভাল বন্ধু পাই তার মধ্যে ফারিয়া অন্যতম।
আমরা বন্ধু সবাই মিলে বেশ মজায় ছিলাম।সবার স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া।তাই এই লক্ষ্য ঠিক রেখে সবাই পড়ালেখায় ব্যস্ত ছিল।পড়ার ক্ষেত্রে সবাই সবাইকে সাহায্য করত।মাঝে মাঝে আমরা কোচিং ফাঁকি দিয়ে সবাই মিলে একসাথে ঘুরতে যেতাম।বেশ মজায় দিন কাটছিল।
দেখতে দেখতে ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা চলে আসল।পরীক্ষা দিলাম।ভালই হল।
ভার্সিটিতে দেখি আমাদের বন্ধু সার্কেলের সবাই চান্স পেয়ে গেল।সবাই খুশিতে আত্মহারা।

আমি আর ফারিয়া একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম।
নতুন পরিবেশ,নতুন বন্ধু।সবার সাথে নতুন পরিচয়।আস্তে আস্তে সবার সাথে কথাবার্তা,চলাফেরা,আড্ডা বাড়তে লাগল।
ফারিয়ার সাথেও বন্ধুত্ব আরও গাঢ়ত্ত হতে লাগল।ফারিয়া ছাড়া আমি এক মুহূর্তও চলতে পারতাম না।তার সাথে প্রত্যেকদিন রাত জেগে মোবাইলে কথা বলতাম।একদিন কথা না বললে কেমন জানি লাগত।সারাদিনের কল্পনায় ছিল ফারিয়া।অবশেষে বুঝতে পারলাম ''অ্যাই এম লাভ ইন ফারিয়া" কিন্তু কোন এক অজানা কারণে থাকে আমার ভালবাসার কথা বলতে পারতাম না।

ফারিয়া আমার বেশির ভাগ এসাইনমেন্ন্ট করে দিত।সে পড়ালেখায় অনেক ভাল ছিল।তার নোট গুলো আমি কপি করে পড়তাম।
দেখতে দেখতে প্রথম বর্ষ শেষ হয়ে এল।মোটামুটি একটা ভাল রেজাল্ট করি।
দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হল।ক্লাস শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর অপু নামে একটি ছেলে ফারিয়াকে প্রপোজ করে।এতে মনে এক অজানা ভয়ের সৃষ্টি হয়।এই ভয় ফারিয়াকে হারানোর ভয়।তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ভালবাসার কথা ফারিয়াকে জানাব।আমি জানে সেও আমাকে ভালবাসে।কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছি না।

আমার মনে যে ভয়ের সৃষ্টি হল তা অতি অল্প সময়ে অবসান ঘটল।ফারিয়া অপুকে পরিষ্কার জানিয়ে দিল তার পক্ষে অপুকে ভালবাসা সম্ভব না।এতে অপু ফারিয়াকে হুমকি দেয়।তারপরও ফারিয়া তার আগের অবস্থানে অনড়।
এই ঝামেলা কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
কয়েকদিন পর আমি ফারিয়াকে আমার ভালবাসার কথা জানায়।তাকে আমি প্রপোজ করি।ফারিয়া সে দিন কিছু না বলে শুধু আমার দিকে চেয়েছিল,আর নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিল।আমি তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার সময় সে আমাকে জরিয়ে ধরে আর বলল আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।
সে দিন ফারিয়ার হাত ধরে অনেকক্ষণ হাঁটলাম।হাত ধরার সময় ফারিয়া বলল,"আজীবন আমাকে এইভাবে ধরে রাখতে পারবে'ত।কোন দিন দূরে ঠেলে দিবে না'ত'' আমি থাকে বলি,"জীবন দিয়ে হলেও এই হাত মৃত্যেুর আগ পর্যন্ত ধরে রাখব"।
এই কথাটা আমাকে এখনও তাড়না দেয়।এই তাড়না কষ্টের,দুঃখের,বেদনার,হতাশার।

একটু অভিমান,রাগ,সুখ,দুঃখ নিয়ে আমাদের প্রেম বেশ ভালই চলছিল।আমরা ছিলাম ডিপার্টমেন্টের অন্যতম এক জুটি।স্যার থেকে শুরু করে ডিপার্টমেন্টের সবাই আমাদের ভালবাসার কথা জানত।
দেখতে দেখতে ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে এল।আর সে সাথে আমার দুঃখের বোঝা আস্তে আস্তে ভারি হতে লাগল।
আমি ভার্সিটি থেকে একটা স্কলারশিপ পাই।আর এই স্কলারশিপটি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া ছিল আমার সবচে বড় ভুল।
আর অন্যদিকে ফারিয়াকে তার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিছে।
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য সব কিছু ঠিক হয়ে যায়।যাওয়ার দুই দিন আগে আমি ফারিয়াকে কল করে দেখা করতে বলি।ফারিয়া আমার সাথে বিকালে দেখা করে আর এই দেখা ছিল শেষ দেখা।
আমরা দুইজন একটা রেস্টুরেন্টে যায়।তখন আমাদের বেশ কথা কাটাকাটি হয়।কিছুটা এইরূপ---

ফারিয়াঃদেখ নিলয়, বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।বাবা অনেক সিরিয়াস।এখন আমি কি করব?প্লিজ,তুমি একটা কিছু কর।
আমিঃতুমি আমার জন্য দুই বছর অপেক্ষা কর।তুমি জান আমি একটা স্কলারশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছি।এর মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার গঠন হবে।এখন'ত আমি তেমন কিছু করি না।আর এই অবস্থায় তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হবে না।
ফারিয়াঃতাইলে তোমার কিছু করার নাই??আমার সাথে বাবা অন্য কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলে তোমার কিছু যায় আসবে না??
আমিঃকেন তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করবে,তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর।আমি প্রতিষ্ঠিত হয় তারপর তোমাকে বিয়ে করব।
ফারিয়াঃতোমার জন্য এত দিন অপেক্ষা করা সম্ভব না।বাবা অনেক সিরিয়াস।ইতিমধ্যে পাত্র দেখা শুরু করেছে।যদি তুমি কিছু করতে না পার তাইলে বাবার কথায় রাজি হয়ে যেতে হবে।

আমিঃতখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়।ঠিক আছে,তোমার যা খুশি তাই কর।
এই কথা বলার পর ফারিয়া রেস্টুরেন্ট থেকে উঠে চলে যাই।আমি নির্বাক হয়ে ফারিরা চলে যাওয়া দেখতে লাগলাম।তখন আমার কিছু করার ছিল না।আর এখন ফারিয়াকে বিয়ে করা সম্ভব না।বাসা থেকে কখনও আমাদের বিয়ে মেনে নিবে না।
দুইদিন পর আমি অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসি।তারপর সপ্তাহখানিক তার সাথে অল্প কথা হয়।কয়েকদিন পর দেখি তার মোবাইল বন্ধ।তখন অনুমান করতে পারি,ফারিয়ার সাথে অন্য কারোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
একমাস পর এক বন্ধু থেকে শুনলাম ফারিয়ার আমার এক বন্ধুকে বিয়ে করে।তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।নিজের পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে।নিজেকে অনেক কষ্টে সামাল দিয়।
বিয়ের সাত মাস পর ফারিয়া আমাকে একটা চিঠি দেয়।চিঠি ছিল এইরকম---

"কেমন আছ?আশা করি আমাকে কষ্টে রেখে খুব ভাল আছ।তোমার সাথে আমার ব্রেক-আপ হয় অনেক আগে।
ব্রেক-আপ হওয়ার কারণ তুমি।কেননা তুমি বললা তোমার পক্ষে আমাকে এখন বিয়ে করা সম্ভব না।তোমার ফ্যামিলি এইটা মেনে নিবে না।তাই আমি বাবার ইচ্ছা মত বিয়ে করি।
তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল অনেক আগে থেকে।তারপর ভার্সিটির ২য় বর্ষের শুরুর দিকে তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে।
আমি না বলতে পারিনি কেননা আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি।
আমাদের প্রেম বেশ ভালই চলছিল।তারপর ৩য় শুরুর শেষের দিকে আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়।

তোমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা ছিল আমার জীবনের সবচে বড় ভুল।
কিছু দিন পর বুঝতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট হতে চলেছি।তারপর দুই জনের সিদ্ধান্ত আর ডাক্তারের পরামর্শে আমি আমার গর্ভের ভ্রুন নষ্ট করে ফেলি।
আমার জন্য ভ্রুন নষ্ট করা ছিল খুব অপরাধের কাজ।এই অপরাধমূলক কাজটা তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানত না।
আজ আমার বিয়ের সাত মাস অতিবাহিত হচ্ছে।আর আজই আমার স্বামী আমার এই অপরাধমূলক কাজটা সম্পর্কে জানতে পারে।আজ সে আমাকে নিয়ে একজন মহিলা বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিল।আর তিনি বললেন আমি আর কোন দিন মা হতে পারব না।আমার স্বামী কোন দিন বাবা ডাক শুনবে না।আমি যখন ভ্রুন নষ্ট করি তখন নাকি চিরদিনের জন্য মা হওয়ার ক্ষমতা হারায়।

আর কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে না।তোমাকে এখন প্রচন্ড ঘৃণা করি।তুমি আমার সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে অনেক দূরে পাড়ি জমালে।আর আমাকে রেখে গেল কষ্টের সাগরে।
বেশ ভাল থেক।বিদায় নিলাম চিরতরে"।
এই চিঠিটা পড়ার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যায়।তাকে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলাম না।আজ নিজেকে নিজে ধিক দিছি।কেন আমি এত বড় অপরাধ করতে গেলাম।নিজের জীবনকে কেন এই ভাবে শেষ করলাম।ক্যারিয়ার গঠন করতে গিয়ে নিজ হাতে হত্যা করলাম আমার ভালবাসাকে।
পিছন দিক থেকে আমার স্ত্রী তানিয়া ডাক দিল,এই কিছু বললানা যে?কি ভাবছ এত?

না,কিছু ভাবছি না।তুমি যেখানে যেত চাও ঐখানে নিয়ে যাব।
জীবনটা দীর্ঘশ্বাসে ভরপুর

কিছু ভুল এবং আত্বশুদ্ধি

বউমা রাত হয়ে গেছে সেটা দেখতে পাচ্ছনা?
নাকি চোখ গিলে খেয়েছ! এখনো উঠানে কি কর। যাও নিজের ঘরে, আর হ্যা তোমার শশুর কে পান সাজিয়ে দিও।
জ্বি যাচ্ছি মা, বলে ভেতরে ঢুকে পড়ল রাখি। শশুর কে পান দিয়ে ঘরে চলে এলো সে । ঘরটা ঘুট ঘুটে
notun love
অন্ধকার, কিন্তু লাইট জ্বালাতে ইচ্ছে করছেনা তার। যেনো তেনো ভাবে দিনটা যদিও চলে যায়, কিন্তু রাত হলেই একাকীত্ব আর বিষন্নতা গ্রাস করে রাখীকে। অপুর্ণ চাওয়াগুলো আর অপ্রাপ্তির ব্যাথাগুলো ঝাপি খুলে বেরিয়ে আসে। এক সময়ে ঘুমকাতুরে খেতাব পাওয়া রাখীর রাত কাটে প্রায় বিনিদ্র। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। যা পালটে দিতে পারে সব কিছু।
¤¤¤
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রাখী। মা বাবা আর ৩ বোনেতে মিলে বেশ ভালই ছিল। সব থেকে চঞ্চল আর দুষ্ট ছিল রাখী। পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখত সে। পুতুলের বিয়ে খেলতে খেলতে কখন যে নিজের বিয়ে হয়ে গেল। বুঝতেই পারেনি। এইচ.এস.সি পরীক্ষায় সবে পাস করেছে । কত ইচ্ছে ছিল ভার্সিটিতে পড়বে, হয়নি তা। দেখতে খুব ভাল সে। তাই ছেলে পক্ষ বিয়েতে দেরি করেনি। ছেলে ওয়াসাতে চাকুরি করে পরিবার ও ভাল। তবে বয়সটা বেশি। ৩৬ বছর। তবুও সবদিক মিলিয়ে রাখির মা বাবা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। আর তার সব স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়। রাখীর রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিলনা। মা বাবার অবাধ্য হয়ে তাদের কষ্ট দিতে চায়নি।

¤¤¤
তবুও দু চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে শশুর বাড়িতে পা রেখেছিল সে। রাখীর বর জহির দেখতে খুব ভাল না হলেও, ভদ্র , ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।বা-ঝে কোন স্বভাব নেই। তবে কিছুটা কাঠ খুট্রা টাইপ। আর তার উপর বয়সের বিশাল ফারাক। রাখী জহির কে বুঝতে চেষ্টা করেও বুঝ্তনা। আর জহির ও রাখীকে বুঝে উঠতে পারছিল না। যার দরুন সম্পর্কের মাঝে দুরত্ব থেকেই গেল। রাখী ভেবে ছিল সে হয়ত ঢাকাতে জহির এর সাথেই থাকবে। কিন্তু জহিরে মা বাবা রাখী কে নিজের বাড়িতেই রাখতে চায়। আর জহির ও আপত্তি করেনি । আর ছুটি না থাকায় পনের দিন পর পর জহির আসে দু দিন থেকে চলে যায়। তবে মোবাইলে মাঝে মাঝে কথা হত। আর বাসায় এসে জহির বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মা বাবার সাথে সময় দেয়া। আর লম্বা ঘুম।ঐগুলোতে সময় চলে যায়। তাই বছরখানিক হল বিয়ে হলেও এখনও রাখী সহজ হতে পারেনি। পারেনি নিজেকে পুর্ণ রুপে প্রকাশ করতে জহিরের সামনে। শুধু অভিমানের পাল্লাটা একটু একটু করে ভারি হয়েছে।

¤¤¤
বড় বউ হয়ে আসার কারনে পুরো সংসারের দায়িত্ব তার কাধে ছেড়ে দিয়ে শাশুড়ি এবার নিশ্চিন্ত। প্রায় সব কাজ করতে হয়। শশুর শাশুড়ির সেবা, ননদ দেবরের আবদার। রান্না বান্না। সব। কিছু ভুল হলেই বাপের বাড়ির গালমন্দ করে সবাই। রাখী শশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হচ্ছে বিষয়টা এমন না। তবে সংসারের সব দায়িত্ত নিজের কাধে নেয়ার মত এতটা ধৈর্য বা সামর্থ্য তার ছিলনা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কাজে লেগে পড়তে হয়। রাখীর মনে হয় যেন সে নিজে ফুরিয়ে যাবে তবু কাজ ফুরাবে না। সে ভাল বউমা, ভাল ভাবি, ভাল বউ হয়ে উঠতে পেরেছে। তবে নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। লিখাপড়া করাটাও আর হয়ে উঠেনা। কারন শশুর শাশুড়ি বলেছে কাজ সামলে পড়ালেখা করতে। কিন্তু সে সব সামাল দিতে গিয়ে এত ক্লান্ত হয়ে যায় যে তার পড়ায় মন বসেনা। সে সবদিক দিয়েই হয়ত হেরে যাচ্ছে।

¤¤¤
রাখী বই পড়তে ভালবাসত খুব। রোমান্টিক গল্প তার পছন্দের ছিল। সে গল্প পড়তে পড়তে নায়কের প্রেমে পড়ে যেত। আর নায়িকা হিসেবে নিজেকে ভাব্ত। সব নায়ক চরিত্তের ভাল ভাল দিক গুলো নিয়ে মনপটে একেছিল স্বপ্নের রাজ্কুমার এর এক ছবি। কল্পনায় ডুবে থাকত তাকে নিয়ে। সে ভাব্ত তার বর এরকমই হবে যে তার জন্য কবিতা লিখবে চোখের পানে চেয়ে বুঝে নেবে তার মনের অব্যক্ত কথা। মাঝ রাতের বৃষ্টিতে একসাথে ভিজবে। শীতের ভোরে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে উপর দিয়ে হেটে যেতে যেতে একে অপরের উষ্ণতা অনুভব করবে। পদ্ম পুকুরের উপর টুকরো টুকরো জোছনা চুরি করা জোনাকিগুলোর ছুটে বেড়ানোয় মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকবে। অথবা হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসা বুনো ফুলের মাদকিয় সুবাসের মাঝে লিন হয়ে যাবে। নাহ! কিছুই পুর্ণ হবার নয়। শুধু বুক ছিড়ে দ্বীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিল। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে অসীম দুরত্ব তা সে উপলব্ধি করেছিল।

¤¤¤
এর মাঝে একটা ঘটনা রাখীর জীবন কে কিছুটা পালটে দিল। বিয়ের যখন আটমাস চলছিল তখন একটা ফোন এল। অপরিচিত নাম্বার থেকে।
-হেল্লো
-হেল্লো কে বল্ছেন?
-আমি মামুন।
-কাকে চান?
-আপনাকে
-মানে ?
-আপনার সাথে কথা বলতে চাই। একটু কি সময় হবে?
- আমি অপরিচিত কারোর সাথে কথা বলিনা, রাখব এখন। আর আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
-আপনার নাম্বার আর আমার নাম্বার প্রায় সেম। শুধু একটা সংখ্যা চেঞ্জ করেছি মাত্র। আর আপনে ফোন রাখবেন না আমার কথাগুলো শুনেন পরে কেটে দিয়েন।
-ওকে বলেন।
আজ আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি খুব, বুকটা মূচড়ে উঠছে। আমি আমার কষ্ট গুলো কাউকে বলতে চাই। জানেন তো আজ্কাল মানুষ কারোর দুঃখের পেন পেন শুনতে চায় না। আপনার আপত্তি না থাকলে বলি? আর কখনো ফোন দিয়ে জ্বালাবনা আপনাকে।
- রাখী অনিচ্ছা সত্বেও রাজি হল।
অনেক্ষণ কথা বলল ওই লোকটা। তার কষ্টের কথা শুনে রাখীরও চোখ ভিজে গেল। এই পৃথিবীতে কতই না কষ্টে থাকে মানুষ।
ঊচ্চ বিত্ত পরিবারে জন্ম নেয় মানুন। কিছুদিন পরই মা বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। বাপে খেদানো মায়ে তাড়ানো সে। নানুর কাছে মানুষ। বাউন্ডুলে হয়ে গেছিল। মদ খেত খুব। এরি মাঝে একজন কে ভালবেসে বিয়ে করে , নিজেকে বদলে ফেলে। কিন্তু দূর্ভাগ্য তার। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় তার স্ত্রী আর সন্তান দুজনই। আজ তাদের মৃত্যু দিন। তাই সে কষ্টগুলোকে শেয়ার করতে শ্রোতা খুজছিল নিজেকে হালকা করার জন্যে।

¤¤¤
এরপর থেকে তাদের প্রায় প্রতিদিনই কথা হতে লাগল। তাদের মাঝে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একে অপরের দুঃখ কষ্ট চাওয়া পাওয়া সবই শেয়ার করতে লাগল। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে গেল। রাখী এখন আর বিষন্ন না হাসিখুসি থাকে। মামুন তাকে কবিতা পড়ে শুনায়। দরাজ গলায় রবিন্দ্র সঙ্গীত শুনায়। রাখী ধীরে ধীরে মামুনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে নিজের অজান্তেই। প্রতিদিন কথা বলার নেশায় পেয়ে গেছে। হঠাত মামুনের কাছ থেকে দুদিন ফোন এলনা। এদিকে রাখীর মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়। মামুনের ফোনও অফ। ৩ দিন পর মামুন ফোন করতেই শুরু হল অনুযোগ আর অভিমানের ঝড়।
মামুন বলল আমি দেখছিলাম যে আমাকে তুমি কতখানি মিস কর। আমার উদ্দেশ্য সফল। তবে কি জান আমিও তোমাকে খুব মিস করেছি। এর কদিন পর মামুন রাখীকে প্রপোজ করল। রাখী ভুলে গেল তার বিবাহিত জীবনের কথা। সে গ্রহন করে নিল ও তার বিনিময়ে ভালবাসি বলে দিল। তার মাথায় একটাই ভাব্না ছিল। যে সে মামুন কে ভালবাসে। আর ভালবাসা সবই জায়েয। তাদের গোপন প্রেম সাগরের জলরাশির মত উপচে পড়ছিল। মামুনের সাথে রাখী দেখাও করল। সারিন্ধায় আধো আন্ধকারে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছে লাঞ্চ করার অজুহাতে। সে সাহসি হয়ে উঠেছে হঠাত করেই।

¤¤¤
এর মাঝেই রাখীর বিয়ের এক বছর পুর্ণ হল। জহির ছুটি নিয়ে বাড়ি আসল। কিন্তু রাখী তাকে এড়িয়ে চলছে। ভাল করে কথাও বলছেনা। রাখীর আচরনের পার্থক্য বেশ কিছুদিন যাবত জহিরও বুঝতে পারছে। ফোনেও আগের মত কথা বলেনা। জহির মনে মনে খুব কষ্ট পেলেও কিছু বল্ছেনা। সে ভাবছে বউ কে এখানে ফেলে রাখছে, নিজের কাছে নিচ্ছেনা তাই রাগ করেছে। সে মানাতে চাইলেও রাখী কথা এগুতে দেয়নি। কিছুটা অবহেলা অবজ্ঞা ভরা ভাব দেখিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে গেছিল।জহির জখন চলে যায়। ঠিকমত বিদায়ও জানায় নি।

¤¤¤
আন্ধকার ঘরে বসে রাখী পুরনো অনেক স্মৃতি মনে করছে। কাল সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে নতুন এক পথের সন্ধানে। পরিচিত সম্পর্ক , পরিচিত মানুষদের সাথে সব বন্ধন ছিড়ে। হঠাৎ করেই খুব কষ্ট লাগছে তার। এই বাড়িটার আর বাড়ির মানুষদের প্রতি তার এত মায়া পড়ে গেছে বুঝতে পারেনি সে। তার মা বাবা ২ বোন সবার চেহারা চোখের সামনে একে একে ভাসছে। আর তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। তার বিবেক তাকে এই অন্যায় করতে বাধা দিচ্ছে। তার নেশার ঘোর কিছুটা হালকা হয়েছে। সারা রাত তার বিবেক আর মনের সাথে যুদ্ধ চলেছে। মনই জিতেছে বোধহয়। কারন এখানে থাকার খুব বড় কারন খুজে পাচ্ছেনা।
ছোট্র একটা বেগে অল্প কয়েকটা কাপর চোপড় ভরেছে। একটা শাড়ি বের করতেই রঙ্গীন রেপিং করা ছোট্র বক্স দেখে ওপরে একটা চিরকুট আটকানো।

রাখী,
ভেবনা এটা শুধু মাত্র একটা উপহার । এতে রয়েছে আমার ত্যাগ , পরিশ্রম , আর তোমাকে একটু খুশি দেওয়ার প্রত্যাশা। আমি তোমাকে অনেক কিছুই দিতে পারিনা যার তুমি যোগ্য। এমনকি আমার কাছে ও তোমাকে আনতে পারিনি এখনও। কিন্তু এটা জেনে রাখ অনেক অনেক ভালবাসা দিতে পারি তোমাকে। তুমি কি সেটা অনুভব করতে পার?
আমি অনেক কথা মুখে বলতে পারিনা। এমন কি সহজে বুঝাতেও পারিনা। কিন্তু বিশ্বাস কর তোমাকে আমি খুব ভালবাসি। প্রতি মুহুর্তেই আমি তোমাকে অনুভব করি। তুমিই আমার একান্ত শান্তির নীড়। আমি জানি তোমার স্বপ্নের রাজ্কুমার আমি নই।তাই তোমাকে সময় দিয়েছি যাতে আমাকে বুঝ্তে পার। আমি আর তুমি কে আলাদা নয় একই ভাব। আমি কথা দিলাম শীগ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসব। আর কটাদিন ধৈর্য রাখ শুধু। তখন আমরা একান্তই আমাদের থাকব।
জহির।
এই মাত্র কয়েকটা লাইন রাখীর ভাব্না কে ওলঠ পালঠ করে দিল। সে ভুল করেছে বিরাট বড় ভুল। তার নিজেকে অতি জঘন্য লাগছে।
বক্সটা খুলে দেখল এতে একটা ডায়মন্ড পেনডেন্ট আছে। রাখী বুঝ্ল ওটা কিনতে তাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে। সে বক্সটা হাতে নিয়ে অজোরে কাদতে লাগল।

¤¤¤
ময়মনসিংহ রেল ষ্টেশনে দাড়িয়ে রাখী। সামনে দাড়ানো তাকে নিতে আসা মামুন।
তুমি জাননা আমি কি পরিমান খুশি হয়েছি তুমি এসেছ বলে। খুব টেনশনে ছিলাম যদি না আস। আমি এই কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না, মামুন বলল।
রাখী চুপ মেরে আছে। এদিকে আন্তঃনগর তিস্তা ষ্টেশনে এসে গেছে। মামুন রাখীকে নিয়ে গেল ট্রেন এর সামনে । মামুন উঠে হাত বাড়িয়ে দিল রাখীর দিকে। রাখী বলল , আমি এখানে এসেছি তোমাকে বিদায় জানাতে। আমি নিজে যেতে নয়। আমার জীবন থেকে চিরতরের জন্যে তোমার সাথে আমার সম্পর্কের সমাপ্তি টানতে এসেছি আমি। আমার উপর সবার বিশ্বাসের অপমৃত্যু ঘটতে দেব না। এই মূহুর্ত থেকে তোমাকে আমি চিনিনা। তুমি ও রাখী নামে কাউকে চেননা। ভাল থেক তুমি,আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
হতভম্ব মামুন অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে রাখীর দিকে, কিছু বলতে পারছে না সে। কথা বলার শক্তি ও হারিয়ে ফেলেছে সে। ট্রেনটা চলা শুরু করে দিয়েছে। আর রাখী চলে যাচ্ছে দুর থেকে আরও দুরে। একসময় চলে গেল দৃষ্টিসীমার বাইরে।

¤¤¤
রাখী যেতে পারেনি তার পরিবার কে ছেড়ে। তার পদস্খলনই তাকে জীবনের অনেক বাস্তবতা শিখিয়ে দিয়েছে। যা হয়ত সে বুঝতে পারত না। সম্পর্ক ছেদ কর্রতে গিয়েই সে বুঝেছে কি শক্ত সে বাধন। তার ভুল সিদ্ধান্তে তার মা বাবা কি পরিমান কষ্ট পেত। লজ্জিত হত সে বুঝতে পেরেছে। তার আর ২টা বোন এর জীবনে যে অন্ধকার নেমে আসত সেটাও সে অনুধাবন করতে পেরেছে। এত মানুষকে কষ্ট দিয়ে এত মানুষের দ্বীর্ঘশ্বাস মিশে থাকা জীবনে সে কখনো সুখী হতে পারতনা। সে জেনে গেছে সুখ কখনো নিজে এসে ধরা দেয়না। তাকে খুজে নিতে হয় অনেক কষ্টের ভীড়ের মধ্যিখান থেকে। জহির কে ভালবেসে এতদিনে অবহেলা ধুয়ে মুছে দেবে। এই মামুন কে ভুলে যাবে সে। আরেক জনকে সুখী করার মাঝেই প্রকৃত শান্তি খুজে পাওয়া যায়। হঠাৎ একটা ডোবার সামনে দাড়িয়ে পড়ল রাখী। একটা লম্বা করে শ্বাস নিল। আর ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিল সে। শেষ বারের মত একবার পিছু ফিরে তাকাল। তার পর সে চলতে শুরু করল। এক পুরনো সম্পর্ককে নতুন ভাবে সাজাতে।

ভালোবাসার সরলরেখা

জাহিদ কখনোই শব্দ না করে পানি খেতে পারেনা। এখনো সে নাস্তার টেবিলে বসে বিকট ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করে পানি খাচ্ছে। শারমিন ওর দিকে কঠিন চোখ করে তাকিয়ে আছে। জাহিদ পানির গ্লাস হাতে নিলেই শারমিনের সেদিকে চোখ আটকে যায়। প্রথমে সে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। এরপর প্রতিটি শব্দের তালে তালে তার চোখ একটু একটু করে কোঁচকাতে থাকে। মাঝেমাঝে শারমিনের ইচ্ছে হয় নিজের পানির গ্লাসটা ওর মুখে ছুঁড়ে মারতে। তার বদলে তাকে হেসে কথা বলতে হয়, প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে হয়।
জাহিদকে কোনোকালেই পছন্দ ছিল না শারমিনের। তবু নিম্ন-মধ্যবিত্ত পিতার বোঝা কমাতে এই
valobasa, loveমাঝবয়েসী লোকটাকে বিয়ে না করে উপায় ছিল না ওর। তাও নিজের সাথে আপোস করে হলেও সে মোটামুটি সবটাই মানিয়ে নিয়েছে এই সংসারে, শুধু ওই আওয়াজটা ছাড়া। এটা তার কিছুতেই সহ্য হয় না। ওর মনে পড়ে নিজের বিয়ের জমকালো রিসেপশনের কথা। অনেক বড় পার্টি দিয়েছিল জাহিদ। শারমিনের মন খারাপ ছিল ঠিকই, তবু মৃদু সুরে বাজতে থাকা প্লেয়ারে ওর পছন্দের কয়েকটা গান শুনে অনেকটা ধাতস্হ হয়ে এসেছিল সে। কিন্তু, খাওয়া দাওয়ার পরে যখন জাহিদের ওই বিকট ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দে পানি গেলা শুরু হল শারমিন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। শুধু ওই বা কেন, পুরো অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ লোকই তখন তাকিয়েছিলো জাহিদের দিকে। অবশ্য শারমিনের মত বিরক্তি নিয়ে নয়। বাচ্চারা সার্কাস বা চিড়িয়াখানা দেখে যেমন সকৌতুক জ্বলজ্বলে চোখে তাকায়, ঠিক তেমন করে। শারমিনের সেদিন লজ্জায় ইচ্ছে হয়েছিল মাটিতে মিশে যেতে। শুধু এক জাহিদই ছিল নির্বিকার, সে যেন অনেক উপভোগ করে করে অনন্তকাল ধরে বিকট শব্দে পানিই গিলছিল শুধু। যেন এই পৃথিবীতে সে আর এই পানি ছাড়া আর কিছুরই কোন অস্তিত্ব নেই।
সম্বিত ফিরতেই শারমিন টের পেল এরইমধ্যে জাহিদ অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে।

পাশের বাড়ির আন্টিটা দেখতে অনেক সুন্দর, শাহিন ভাবে। ওর আম্মুও দেখতে সুন্দর, তবে আন্টি আরও বেশি সুন্দর। প্রতিদিন আন্টি বারান্দায় এসে দাঁড়াবে সেজন্যে শাহিন অপেক্ষায় থাকে। আন্টিকে দেখতে ভাল লাগে তার। আন্টি ওর মা হলে ভালই হত। ফুলদানিটা শক্ত কিনা পরীক্ষা করার জন্য একটু আগে শাহিন সেটা টেবিলের ওপর থেকে ফেলেছে। তাতেই সেটা ভেঙ্গে চুরচুর। অমনি আম্মু দৌড়ে এসে কান টেনে দিয়েছে। গতকাল আব্বু আম্মুকে বলছিল নুতন প্যান্টটা বেশ অনেকটা বড় হয়েছে। টেইলারের কাছে নিতে হবে।তাই শাহিন নিজ দায়িত্বে মায়ের ড্রয়ার থেকে কাঁচি জোগাড় করে সেটা কেটে ছোট করে দিয়েছে। সে দেখে আম্মু কেনই বা রাগল আর কেনই বা এতগুলো বকা দিল কিছুতেই ঢোকে না শাহিনের মাথায়।
সে মাথা নেড়ে ভাবে আন্টিই আম্মু হলে বেশ হত। আন্টি নিশ্চয়ই আম্মুর মত সবকিছুতে বকাবকি করত না। বা বকা দিলেও সেগুলোও নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর হত। সুন্দর মানুষের সবকিছুই সুন্দর হয়। আন্টির সুন্দর বকাতে শাহিনের একদমই মন খারাপ হতনা। ভাবতে ভাবতেই আন্টিকে দেখতে পেল শাহিন। একটা মগ হাতে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। ওর মন ভালো হয়ে গেল। সে হাসিহাসি মুখ করে আন্টির দিকে তাকিয়ে মাথা দুলাতে লাগল বাবার রকিং চেয়ারটাতে দুলে দুলে।

আন্টির বোধহয় আজ মন খারাপ। আজ একবারও শাহিনের দিকে তাকিয়ে হাসল না! প্রতিদিন আন্টি ওর দিকে তাকিয়ে হাসে, হাত নাড়ে। শাহিন তবু হাসিমুখে চেয়ে থাকে, যদি আন্টি তাকায়! হঠাৎ কি হল ও ঠিক বুঝল না, তবে দেখল আন্টি হাতের মগটা রাস্তায় ছুঁড়ে দিল। মগটা নিচে পড়ে ভেঙ্গে গেল ফুলদানিটার মতই। শাহিনের হাসি পেল। আম্মু এটা দেখলে আন্টিকেও কান টেনে দিত। আন্টি ওর আম্মু হলে অনেক ভাল হত। ওরা দুজনে মিলে সবকিছু বারান্দা থেকে ফেলে দিত। কেউ কিছু বলত না ওদের। শাহিনের খুব ইচ্ছে করে আন্টিকে একবার আম্মু ডাকতে। সে হাসিমুখে হঠাৎই চিৎকার করে ওঠে- আমমমমু !!
জাহিদ চলে গেলে শারমিন প্রায়ই বারান্দায় গিয়ে বসে। আজও তার ব্যতিক্রম হলনা। সে কফির মগ হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। জাহিদ যাওয়ার পর পুরো ঘরটাই শূন্য শূন্য হয়ে যায়। ওর একা একাই কাটাতে হয় পুরোটা দিন। জাহিদ বেশ একটু আনমনা খামখেয়ালী প্রকৃতির। এইসব একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা সে এসব কিছুই বোঝেনা। শারমিনও ওকে বোঝাতে যায়না। ধীরে ধীরে সম্পর্কটা যান্ত্রিক হচ্ছে ক্রমশঃ। আগে কান্না আসত শারমিনের। এখন অনেকদিন ধরে সেটাও কমে গেছে। শুধু মাঝেমধ্যে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে বুক থেকে।

ওদের ছয়তলার বারান্দা থেকে শহরটার অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায়। শারমিন আনমনে সেদিকে চেয়ে কফিতে চুমুক দেয়। কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠান্ডা কফি খেতে ইচ্ছে হয়না ওর। মগটা কাত করে কফিটুকু বারান্দা দিয়ে ফেলে দেয় ও। সামনের ইলেকট্রিকের তারে একটা কাক বসে আছে। সেটা কা কা করে দুবার চেঁচিয়ে ওঠে। কিছু একটা করার জন্য হাতটা নিশপিশ করছে শারমিনের। ভেতরটা ক্রমেই অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা মগটা ফেলে দিলে কি হয়? ভাবতেই ও মগটা ছেড়ে দিল। ওটা ঘুরতে ঘুরতে নিচে নেমে গেল। নিচ থেকে আসা কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজটা ভালই লাগে শারমিনের। আচ্ছা ও নিজেও মগটার মত যদি নিচে পড়ে যায়? এভাবেই কি ভেঙ্গে যাবেও নিজেও? সব দুঃখ, অভিমান জমানো আবেগ সব গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে? ওর বেশ ইচ্ছে হয় লাফিয়ে পড়ার। শারমিন চোখ বন্ধ করে করে মনে মনে প্রস্তুত হয়। ঠিক তখনই ও শুনতে পায় কেউ চিৎকার করছে- আমমমমু !!
সম্বিত ফিরে পায় শারমিন।

এতদিনের অনুচ্চারিত প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছে ও। বুঝে গেছে কার জন্য ওকে বাঁচতে হবে। জাহিদকে বলতে হবে কয়েকটা বাচ্চার ছবি আনার জন্য। দেয়ালে টাঙাতে হবে। পাশের বারান্দার পিচ্চি ছেলেটার আম্মু ওকে পানি এনে দিয়েছে। শারমিন অবাক হয়ে খেয়াল করল ছেলেটাও শব্দ করে পানি খাচ্ছে।
তবে সে এটা খেয়াল করল না যে, এতদিনের অসহনীয় ব্যাপারটা এবার তার খুব একটা খারাপও লাগল না।

যে জীবন শুধুই বন্ধুত্বের

একটু পর রাত ১২ টা বাজবে ।

নিরবান আমার বাসায় চলে আসবে প্রিয়ন্তীর জন্মদিন সেলিব্রেট করতে । আজ ৪ বছর ধরে নিরবান এই কাজ টিই করে আসছে । আমি কখনো নিরবান এর এই কাজ এ বাঁধা দেই নি ।কেক কাটার পর ও ওর বাসায় চলে যায় ।তারপর সকালে ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে আমি আর নিরবান মিলে কেক বিলি করি । ওর
bondhu
জমানো টাকা নিয়ে সেই দিন আমরা পথের শিশুদের সাথে কাটাই ।আমার অনেক ভালো লাগে নিরবান এর এই ছেলে মানুষী গুলো । প্রিয়ন্তী হলো নিরবান এর ভালো লাগা আর ভালবাসার সেই মানুষ ,যাকে ঘিরে নিত্য নতুন পাগলামি করে যাচ্ছে ছেলেটি । পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে নিরবান প্রিয়ন্তী কে ভালবাসে ।এক তরফা লাভ যে টা কে বলে । প্রিয়ন্তী কে নিয়ে কবিতা ,গান ,গল্প আর ও কত কি যে করে নিরবান ,আমি না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না ।গীটার এ কোনো নতুন সুর সৃষ্টি হলে কিংবা ওকে নিয়ে কোনো গান লিখলে তার একমাত্র স্রোতা হই আমি । রাত ২ টার সময় ফোন দিয়ে বলে নিবেদিতা শোন তো গান টা কেমন হয়েছে ? আমি ঘুম জড়ো কন্ঠে বলি ,হুম বেশ সুন্দর । আসলেই নিরবান অনেক সুন্দর গান করে ।

অনেক কষ্টে আজ প্রিয়ন্তী কে মেনেজ করে আমি পার্কে নিয়ে আসছি। সুধু মাত্র নিরবান এর জন্য । এর আগের দিন রাত এ নিরবান ওর লেখা ১টা গান শুনিয়েছে । আজ সেই গান গেয়েই নাকি প্রপোজ করবে প্রিয়ন্তি কে। নিরবান আসছে ওর গীটার টা কাঁধে ঝুলিয়ে । আসলেই অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে নিরবান কে । ওদের কে পাশাপাশি বসিয়ে কথা বলতে বলে আমি একটু দূরে গিয়ে বসলাম । নিরবান খুব সুন্দর ভাবে ওর মনের সব কথাই প্রিয়ন্তী কে বলল । প্রিয় মানুষের সামনে বসলে যে মানুষ কেনো ঘামতে শুরু করে নিরবান কে দেখে বোঝা যাচ্ছিলো ।ওদের সব কথাই আমার কান এ এসে লাগছে । সব কথা শুনে প্রিয়ন্তী এমন ভাবে রিএক্ট করলো আমি কল্পনা তেউ ভাবি নি ।আমার সামনে আমার প্রিয় বন্ধু কে বলল ,কুকুরের মতো তো অনেক ঘুরছো আমার পেছনে , এভাবে ঘুরে কোনো লাভ আছে ? তোমার মতো অনেক থার্ড ক্লাস ছেলেই আমার পিছনে ঘুরঘুর করে সারাক্ষন । তাই বলে সবাই কে আমার ভালবাসতে হবে ? প্রিয়ন্তী যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলো নেক্সট টাইম আমাকে ডাকার আগে ভাববি , ফাজিল ছেলে গুলোর জন্য তোর দরদ থাকতে পারে । ওদের জন্য আমার মনে কখনই সিম্পেথি তৈরি হবে না । কথা গুলো বলেই প্রিয়ন্তী চলে গেলো । আমি নিরবান এর দিকে চেয়ে থাকলাম ।ওর চোখ জ্বলজ্বল করছে পানি তে । প্রিয়ন্তীর জন্য আনা ওর ডায়েরী আর বেলি ফুল টা ওইখানেই পড়ে আছে । একটা মেয়ে ওইভাবে কাউ কে হার্ট করতে পারে আমার জানা ছিলো না ।নিরবান কে তো আমি চিনি, ওর আচার ব্যাবহার সব কিছুই আমার জানা । ওকে অনেক বুঝানোর পর , বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলাম । এরপর থেকে ৭ দিন ওর ফোন অফ ।ফেসবুক এউ আসে না । বাসায় গেলেউ দরজা খোলে না ।সারাদিন রুম আটকিয়ে রাখে ।নিরবান এর লাইফ স্টাইলে এই কয়েক দিন এ অনেক পরিবর্তন এসেছে । আমাকে আর ফোন দেয় না । আমি ফোন দিলেউ রিসিভ করে না । সিগারেট , গাঁজা ,ফেন্সিডিল আর ঘুমের ওসুধ নিয়ে থাকে সারাদিন । যে ছেলে সিগারেট এর ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না ,সে এই কয়েক দিনের মাথায় কেমন যেনো নেশাগ্রস্ত হয়ে গেছে ।আমার খুব কান্না পায় নিরবান এর জন্য । ফোন দিয়ে আমাকে আর সময় অসময়ে জ্বালায় না ।ওর জ্বালানো টা অনেক বেশি মিস করি । আন্টি আমাকে ফোন দিয়ে বলে , তুই তো ওর ভাল বন্ধু প্লিজ বল আমার নিরবান এর কি হয়েছে । আমি কিছু বলতে পারি না ,শুধু কান্না পায় আন্টির কথা শুনে । তুই প্লিজ কিছু কর মা , তোর বন্ধু টা খায় না কিছুই । একটা মেয়ের জন্য আমার বন্ধু টার জীবন

আজ বিপন্ন হতে চলেছে .........
কয়েক দিন পর নিরবান আমাকে ফোন দিয়ে বলে সাদিয়া ইসলাম প্রিয়ন্তী ওকে ফেসবুক এ sorry লিখে এস এম এস করছে ।আমার বন্ধু টা এই sorry মাঝে যেনো নতুন প্রান ফিরে পেলো । প্রিয়ন্তীর সাথে এখন নিরবানের প্রতিদিন ফেসবুক এ চ্যাট হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ।প্রথম প্রথম নিরবান আমাকে ওদের সব কথা বলতো ,এখন আর তেমন কিছু বলে না । আমি অনলাইন এ থাকলেউ নক করে না ।হুম আমার প্রিয় বন্ধু টা আসলেই অনেক ভালো আছে এখন । সিগারেট টা ছেড়ে দিয়েছে । ঘুমের ওসুধ খায় না আর । প্রিয়ন্তীর সাথে কন্ডিশন হয় যেদিন ভাল জব পাবে নিরবান, সেইদিন দেখা করবে । এর আগে কখনো ফোন দিতে পারবে না , ওর পিছনে ঘুর ঘুর করতে পারবে না । সব কন্ডিশন মেনে নেয় নিরবান । সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে নিরবান । সারাদিন এখন স্টাডি নিয়ে বিজি থাকে । সামনে সেমিস্টার ফাইনাল । যে বন্ধু কে আমি ঠিক করতে পারি নি ,প্রিয়ন্তী তা পেরেছে । আমাদের এতো দিনের বন্ধুত্ব প্রিয়ন্তীর কাছে হার মেনেছে । প্রিয়ন্তী নাকি নিরবান এর আমার সঙ্গে মেলামেশা টা মেনে নিতে পারে না , তাই এখন প্রিয় বন্ধু টা আমাকে এভোইড করতে শুরু করেছে । আমি মেনে নিয়েছি সব কিছু আমার প্রিয় বন্ধু টির জন্য ।

নিরবান আজ ভাল জব পেয়েছে । ফেসবুক এ প্রিয়ন্তী কে এস এম এস করে জানিয়ে দিয়েছে ।প্রিয়ন্তী ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে । আজ বিকাল ৫ টায় ওদের দেখা করার কথা । ফোন দেওয়া মাত্র ই অপর পাশ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো এই মুহূর্তে নাম্বার টি তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রিয়ন্তী ওর কথা রাখে নি ।
প্রিয়ন্তীর বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই , দিনের দিনের পর দিন আমি সাদিয়া ইসলাম প্রিয়ন্তী আইডি দিয়ে ওর সাথে চ্যাট করেছি । আমার এই ভুল এর কোনও ক্ষমা নেই আমি জানি । নিরবান আমাকে ওর ইমোশন নিয়ে খেলার অধিকার দেয় নি ,তবু আমি খেলেছি । নিরবান কে আজ আমি সব বলেছি ,ও সব শুনে আমাকে একটা থাপ্পর মেরেছে। আমি অপরাধীর চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।.........

( আজ ১০ বছর পর নিরবান এর সাথে আমার দেখা , ও ওর বউ কে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো নিবেদিতা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড , যে আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে )বন্ধু হিসাবে এর থেকে বেশি আনন্দ আর কিই বা হতে পারে ...... আমার বন্ধু টা আসলেই অনেক সুখ এ আছে এখন...... অনেক টা সত্যি কাহিনী অবলম্বনে ............

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৩

***রঙহীন রংধনু***ভালোবাসার গল্প

ছবিটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে তুর্য। এত মায়াময় চাহনী কেমন করে হয়? চেহারায় কোন হাসির চিহ্ন নেই তবুও যেন দেখলেই মনে হয় মুচকী করে হেসে আছে।কি গভীর দৃষ্টি। প্রথম দেখায় যেন অন্য

রকম একটা মায়া অনুভুত হয়।মনে মনে ভাবতে থাকে তূর্য-‘মেয়ে কি এমন আছে তোমার মাঝে ? শুধু কাছেই টানছো...’
rogdhonu
সকালে নাস্তার টেবিলে যখন নাকে মুখে কোন রকম খাবার দিয়ে বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ঠিক ওই সময়ই কোন কথা নেই বার্তা নেই তূর্যর মা ছেলের সামনে ছবিটা রেখেই বলা শুরু করলেন
-মেয়েটির নাম অতপীয়া। ইন্টার্নী করছে।ঢাকায় সেটেলটড।ওরা দুই বোন, অতপীয়া ছোট। আমার খুব পছন্দ হয়েছে ।এখন তুই বললেই আগাবো।

কিছু্ক্ষন থেমে আবার বলা শুরু করেন।
-দেখ বাবা তুই দেশে আছিস আর মাত্র ১ টা মাস। দেশে বেড়াতে এসেও শুধু কাজ কাজ করিস। আর এবার চলে গেলে আবার কবে না কবে আসবি কে জানে। আমার কি ইচ্ছা হয় না বউ নাতি নাতনি তে ঘরটা ভরে উঠুক।কত কাল আর একা থাকবো বল। একা একা আর ইচ্ছে হয় না থাকতে বাবা। এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে রান্না ঘরের দিকে চলে যান।

আচমকা এমন পরিস্থিতিতে কি করবে কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা তুর্য। মায়ের উপর খানিকটা বিরক্তও হয়। মা টা যে কি!! এত কান্না করতে পারেনা !! সুন্দর করে বললেই তো হয়। ছবিটার দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে নাস্তার শেষ অংশটুকু মুখে পুরে বের হয়ে যায় ।

রাতে অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে যখন তূর্য বিশ্রাম নিচ্ছিল এমন সময় তার মা মাথার কাছে বসে জিগেস করে
-কিছু বললিনা যে?
-কি বলবো মা? অবাক হয়ে জানতে চায় তুর্য।
-কি বলবো মানে? ছবিটা দিলাম কেন তোকে? দেখ বাবা এবার একটু কাজের চিন্তা মাথা থেকে বের করে নিজেকে নিয়ে চিন্তা কর। তোর এই ছাড়াছাড়া জীবন আমার আর ভালো লাগেনা। রাগন্বিত কন্ঠে কথাগুলো বলতে থাকেন।
-মা আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও প্লিজ।
-ঠিক আছে সময় নিবি নে। তবে এইবার তোকে বিয়ে না করিয়ে যেতে দিচ্ছিনা মনে রাখিস।
কিছুক্ষন চুপ থেকে... এই যে রাখ অতপীয়ার ফোন নাম্বার। ইচ্ছা হলে তার সাথে কথাও বলতে পারিস। নাম্বারের কাগজটা তুর্যর হাতে গু্জে দিয়ে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান।
অবাক হয়ে যায় তূর্য। নাম্বরও নেয়া হয়ে গেছে! বাহ ! আসলে মা যতই কথায় কথায় কান্না কাটি করুক বুদ্ধির দিক থেকে সেরা আমার মা মানতেই হবে।

রাত প্রায় ১২টা। ফোন হাতে নিয়ে তূ্র্য ভাবতে থাকে মেয়েটাকে কল দিবে নাকি না। একবার ডায়াল করছে তো পরোক্ষনে আবার কেটে দিচ্ছে। একবার রিং দিতে ইচ্ছে করছে তো আবার ইচ্ছেও করছেনা। কল দিলেও বা কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা সে । আর এত রাতে ফোন দিলে সে যদি রাগ হয় কিংবা খারাপ ভাবে।

মাথা থেকে সব ঝেরে ঝুড়ে ফোন দিয়েই ফেলে। একবার দুবার তিনবার......রিং হয়েই যাচ্ছে... কেও রিসিভ করছে না দেখে ঝটপট ফোন কেটে দেয় সে।

কিছু্ক্ষন পর সেই নাম্বার থেকে কল ব্যাক আসছে দেখে ঘাবড়ে যায় সে। নিশ্চয় ঝারি খেতে হবে।ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করা মাত্রই...
-আমি খুব দুঃখিত আপনার ফোন রিসিভ করতে না পারায়। নিশ্চয় রাগ করেন নি ? খুব মোলায়েম স্বরে বিনীতভাবে বলে অতপীয়া।

তূর্য খুব বেশি অবাক হয়ে যায় মেয়েটার এমন কথায়। সে কি তাকে চিনেছে নাকি না চিনেই এমন রিঅ্যাক্ট করছে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু তার কথা বলার ধরন মুহুর্তেই তূর্যকে এতটাই আচ্ছন্ন করে ফেলে যে কোন মতেই সে আর কথাই বলতে পারছিলোনা । ভীষন রকমের মুগ্ধতা তাকে ঘিরে ফেলে। এত সুন্দর করে কেও কথা বলতে পারে ? কি করে কারও কন্ঠস্বর এতটা সুন্দর হয় !! ভাবতে থাকে সে।

-হ্যলো... হ্যালো... শুনতে পাচ্ছেন? অতপীয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে আসে তূর্য।

-জী। শুনতে পাচ্ছি বলুন ।

-রাগ করার কথা তো বললেন না? ফোন রিসিভ করতে পারিনি বলে রাগ করেছেন ? আমি আসলে ফোনের পাশেই ছিলাম না তাই আর কি। জানেন এই ফোন রিসিভ করা নিয়ে কত যে বকা খেয়েছি। সবার এক কথা ফোন না ধরলে ফোন ইউজ করছি কেন !! ফেলে দিলেই পারি।কিছুক্ষন থেমে আবারও বলা শুরু করে সে। কেও বুঝে না যে ইচ্ছা করে তো আর কেও ফোন না রিসিভ করে থাকে না তাই না? ওহ আমি খুব বেশি বক বক করছি । আপনাকে কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছিনা। স্যরি... স্যরি...

-না না ঠিক আছে। সমস্যা নেই আপনি বলুন।

অনর্গল কথা বলে যায় অতপীয়া আর মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনতে থাকে তূর্য। কি করে প্রথম কথায় এতটা স্বাভাবিক ভাবে নিজেকে মেলে ধরলো? কি করেই বা বাঁধাহীন ভাবে কথা বলে যাচ্ছে? নাহ বলতেই হচ্ছে মেয়েটার সাথে যেই কথা বলবে তার মাঝে অবশ্যই ভালো লাগা ছুয়ে যাবে। তূর্যর সবসময়ই চেয়েছিলো তার জীবনে যে আসবে সে যেন অনেক বেশি কথা বলে আর অনেক চঞ্চল হয়। অন্তত নিজের মত এতটা চুপচাপ না হয়। অতপীয়া হয়েছেও এক দম মনের মত। এক রাতেই যেন ভালোবাসাটা অনেক বেশি গভীর হয়ে যায় তূর্যর।

এই তূর্য এইইইইইই... কত ঘুমাবি আর... মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তূর্যর। আয় না... নিচে আয় নাস্তা খেতে।

নাস্তার টেবিলে নাস্তা খেতে খেতে তূর্যর মা আমতা আমতা করে আবারও বলা শুরু করেন,

-তুই তো আমাকে এখনও কিছুই জানালি না বাবা । মেয়ের মা তো বার বারই ফোন করছে । আমি একবার এইটা আবার ঐটা বলে বুঝ দিচ্ছি। ফাইনালি কিছু তো বলতে হবে তাই না?

-মা কেন এতটা পাগল হয়েছো বলতো? কিছুটা দিন তো সময় দাও। এরপর আমি হ্যা বা না কিছু জানাবো তোমাকে।

-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। সময় নিবি নে ।এই ক'দিনের মধ্যে আমিও তোকে আর জালাবোনা যা। তবে বাবা এইবার তোকে বিয়ে না করিয়ে যেতে দেবো না মনে রাখিস।

মুচকী হেসে চলে যান তূর্যর মা।

--------------------------

শুরু হয়ে যায় তাদের কথার মালা বোনা। কথায় কথায় সময় চলে যেতে থাকে। অফিসে গেলে ফোন দিয়ে খোজ নেয়া বাসায় ফেরার সাথে সাথে ফোন করা, নাস্তা খেয়েছে কিনা, সব কিছুই যেন দু তিন দিনেই মেয়েটা আয়ত্ত্বে নিয়ে ফেলে। আর মেয়েটার এই অনর্গল বক বক শোনার জন্য যেন তূ্র্য প্রতিটাক্ষন অস্থির হয়ে থাকে। সে তার মাকে জানিয়ে দেয় তার মনের কথা।

দুজনের মাঝে অনেক ব্যবধান থাকলেও প্রতিটা মুহুর্তই তূর্যর মনে হত অতপীয়া যেন তার খুব কাছাকাছিই আছে। কখনও মোবাইলে কখনও ফেইসবুকে অবিরত কথা চলতেই থাকে তাদের মধ্যে। যেন কোন ক্লান্তি নেই, নেই কোন বাঁধা।

তূর্য নিজেও বুঝতে পারেনা অল্প কটা দিনেই কখন কিভাবে এই মেয়েটি তার প্রতিটা ক্ষনের একটা অংশ হয়ে গেছে। যেন তার প্রতি মুহুর্তেই ভেসে উঠে অতপীয়ার হাসি মাখা সেই মিষ্টি মুখের প্রতিচ্ছবি। মাঝে মাঝে ভীষন অবাক লাগে আর ভাবে যে কিনা জীবনের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে কাটিয়েছে এবং সেখানে স্বাধীন জীবন পেয়েও কখনই সেই স্বাধীনতার সাগরে গা ভাসিয়ে দেয় নি। আর কত শত রকমের মেয়ে তার জীবনের সাথে তাদের বাঁধতে চেয়েছিলো অথচ সব সময়ই সে এই সব কিছুই এড়িয়ে গেছে। আর এখন এই মেয়েটা যেন কয়েকটা দিনেই খুব বেশি আপন করে নিয়েছে। এতটাই আপন করে ফেলেছে যে একটা মুহুর্তও সে অতপীয়াকে তার ভাবনা থেকে দূরে সরাতে পারেনা।

''সারা দিন তোমায় ভেবে...হলোনা আমার কোন কাজ
হলোনা তোমাকে পাওয়া...দিন যে বৃথাই গেল আজ,

সারাদিন গাছের ছায়ায়...উদাসী দুপুর কেটেছে
যা শুনে ভেবেছি এসেছো...সে শুধু পাতারই আওয়াজ
সারাদিন তোমায় ভেবে...

হাওয়ারা হঠাত এসে জানালো...তুমি তো আমার কাছে আসবেনা...
এক হৃদয় হয়ে ভাসবেনা...তবে কি একাই থাকবো?
তবে কি আমার কেও নেই...
সারাদিন তোমায় ভেবে... !!! "

-আরিবাবাহ আপনি তো ভালোই গান করতে পারেন।

-এইতো একটু আধটু... মুচকী হেসে জবাব দেয় তূর্য।

-ভীষন সুন্দর হয়েছে। গানটা যে আমার খুব বেশি প্রিয় জানেন...?

হঠাত করেই গম্ভীর হয়ে যায় অতপীয়া।বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে কোন রকম ভনিতা ছাড়া হঠাত করেই কাল দেখা করার কথা বলে ফেলে । আচমকা এমন কথায় চমকে গেলেও বুঝতে দেয় না তূর্য। তবে ফোন রেখে দেওয়ার পর ভাবনাগুলো যেন ঘিরে ফেলে তাকে। কি এমন হল, কেন দেখা করার কথা বলল, আর কেনই বা হাসি হাসি কথা বার্তা থেকে হুট করেই অনেক বেশি ঠান্ডা হয়ে গেলো সে...কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।

পরদিন...

অফিসে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে এক রকম ছুটে যায় সে । এক গুচ্ছ হোয়াইট গ্ল্যাডিওলাস ফুল কিনে নিয়ে হাজির হয় মনের মানুষকে দিবে বলে..কারন সে জেনেছিলো এই ফুলটা নাকি তাকে একেবারে পাগল করে দেয়। আজ সেই মানুষটার সাথে দেখা হবে যার সাথে কিনা গত ৭ দিন অবিরাম কথার বন্যায় ভেসে গিয়েছিলো সে। এক রকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে। সে নিজেও বুঝতে পারেনা কেন এমন অদ্ভুত ধরনের অনুভুতি হচ্ছে। আজ তূর্যর কাছে মনে হয় সেই যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখীদের একজন।

কিন্তু ১০ মিনিট আগেও তূর্য কখনই ভাবেনি যে এমন একটি দিন তার জন্য অপেক্ষ করছে। অতপীয়ার মুখোমুখি হতেই সে জানিয়ে দেয় তার জীবনের কিছু বাস্তবতা। জানিয়ে দেয় তার কিছু চাওয়া পাওয়ার কথা। জানিয়ে দেয় তার ব্যর্থতার কথা। কিছু পারা না পারার কথা। কিছু পেয়েও হারিয়ে ফেলার কথা।

সব শুনে তূর্য যেন পুরোটাই পাথর হয়ে যায়। ফুলের গুচ্ছটা বেঞ্চের উপর রেখে সে একা একাই হাটতে থাকে কিছু কষ্টকে বু্কের ভেতর আগলে রেখে। ক্ষনে ক্ষনে শুধু চোখ ঝপসা হয়ে আসে তার। ভাবতে থাকে কেন এমন কিছু হল তার জীবনে! কেন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখী হতে হল তাকে। যে মানুষটাকে অল্প ক দিনেই পাগলের মত ভালোবেসেছিলো সেই মানুষটাই............

নাহ আর ভাবতে পারেনা সে।বাসায় ফিরেই সে তার সিদ্ধন্তের কথা মা কে জানিয়ে দেয়। কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে সে তার রুমে চলে যায়...

রাত ২ টা। এয়ারপোর্টে বসে আছে তূর্য। আর কিছুক্ষন পরই সে রওয়ানা দিবে প্রিয় দেশ কে ছেড়ে, কিছু প্রিয় মানুষকে একলা করে দিয়ে। অতপীয়ার কথা মনে আসতে অজান্তেই বুকটা যেন ডুকরে কেঁদে উঠে। মেনে নিতে পারছে না কিছু্তেই তার মুখের সেই কঠিন কঠিন কথা গুলো। কোনভাবেই যেন ভুলতে পারছেনা কঠিন কিছু সত্যকে...অনেক কিছু ভেবে সে তার নোট প্যাড খুলে বসে।ফেইসবুক ওপেন করে অতপীয়ার কাছে লিখতে শুরু করে শেষবারের মত দেয়া এস এম এস...

'আমি ভালোবেসেছিলাম আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল সেই তারাটিকে। যেই তারাটি মিট মিট করে আলো দিয়ে সবার মাঝে নিজের উপস্থিতি জানান দিত। ভালোবেসেছিলাম সেই সময়টিকে যে সময়গুলোকে কখনই আর ফিরে আসবেনা। নিজের মাঝেই লু্কিয়ে রেখেছিলাম একান্তই নিজের কিছু মুহুর্তকে। ভেবেছিলাম সেই ক্ষনগুলোকে আজীবন আগলে রাখবো খুব যতন করে। কিন্তু...

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি যখন শুনেছি তোমার প্রিয় মানুষই তোমার সাথে প্রতারনা করেছে। অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম যখন দেখেছি প্রিয় মানুষটাকে হারানোয় তোমার চোখের কোনে পানি জমে চিক চিক করছিলো। নাহ কষ্ট পাইনি।বিশ্বাস কর একদমই কষ্ট পাইনি। কারন তখন মনে হয়েছিলো "তুমি তো আমার। একান্তই আমার...।" আর বেশ মগ্ধ হয়েছিলাম তোমার রঙহীণ কান্না দেখে।

তবে জানো যখন তুমি অবলীলায় বলে যাচ্ছিলে সেই ছেলেটির সাথে তোমার ফিজিকেল রিলশনের কথা তখনও কেন জানি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা ঠিক আগের মতই ছিলো। বিন্দু পরিমান দূরে সরাতে পারছিলাম না তোমাকে। কিন্তু আসলে কি জানো? সৃষ্টিকর্তা কিছু কিছু মানুষকে শুধুমাত্র ভালোবাসতেই পাঠিয়েছেন ভালোবাসা পেতে নয়... তোমার মনের মানুষ সব ভুল স্বীকার করায় তুমি আবারও তার কাছে ফিরে যেতে চেয়েছো। কি করে তোমায় আটকে রাখি বল???

সত্যি বলছি তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম এক বুক ভালোবাসা দিয়ে । চেয়েছিলাম এই মুহুর্তটাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিতে। ভেবেছিলাম তোমার ফোনের শব্দে ঘুম থেকে জেগে এলোমেলো সময়গুলো দূরে ঠেলে দেবো । তখন খুব বেশি মনে হচ্ছিলো কেন অতিমানব হলাম না। যাতে কোন কষ্টই আমাকে ছুতে না পারে । কেন সমস্ত কষ্ট কে উড়িয়ে দিতে পারছিনা দিগন্তের ওপারে !

ফিরিয়ে নিলাম তোমার কাছ থেকে আমার এই আমিকে। কষ্ট পেলেও নিজেকে সান্তনা দেবো এই ভেবে যে অতপীয়া নামের কেও একজনের আগমনে আমার জীবনটা কিছু সময়ের জন্য হলেও অনেক বেশি পুলোকিত হয়েছিলো...রোবটের মত মানুষটা ভালোবাসতে শিখেছে।পাগলের মত ভালোবেসেছিলো কোন এক হারিয়ে যাওয়া মানুষকে...

ভালো থেকো তুমি... খুব বেশি ভালো থেকো..."

মেসেজটা সেন্ড করেই অতপীয়া নামক আইডীটা চলে যায় ব্লক লিস্টে। আর তূর্য নামের আইডিটাও ডিএকটিভ হয়ে যায়। কত কাল নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে রাখবে তা তূর্য নিজেও জানেনা !

এয়ারপোর্টের আর সবাইকে জানান দিয়ে ভেসে আসে সেই কন্ঠস্বর 'এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর যাত্রী বৃন্দ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই.....'

চোখের নোনা জল আড়াল করে কিছু খন্ড খন্ড সুখ স্মৃতিকে বুকের ভেতর জমা করে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে প্লেনের দিকে...

অতঃপর গল্পের মত করে লিখা হয় একেকটা লেখা !! কল্পনার আড়ালে লুকিয়ে থাকে কিছু বাস্তবতা... কিছু গল্পের হয় সুন্দর পরিসমাপ্তি আবার কিছু গল্পে গেঁথে থাকে কাউকে কাছে পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কিংবা প্রিয়জন হারিয়ে যাওয়ার অসহ্যকর অনুভুতি। তবুও থেমে থাকে না কারও জীবন। থেমে নেই কারও পথচলা। অনন্তহীন পথে সময়কে সাথে নিয়েই হেটে চলেছে
ক্লান্তহীন পথিক... যাত্রাবিহীন এই পথ চলা চলতেই থাকবে...!!

''আকাশের ঠিকানায় লেখা চিঠি'' ।।

cithiতোমাকে একটা চিঠি লিখতে ইচ্ছে হয় রুদ্রর মতো করে । যেই চিঠিটার ঠিকানা হবে আকাশ। যে চিঠি পরে তুমি জানতে পারবে আমি ভালো আছি। কিন্তু রুদ্রর মতো করে তোমার মালা খানি আমি আর চাইব না। তোমার মালা স্বযতনেই থাক তোমার কাছে। আমার কাছে তোমার দেওয়া সেই পুরনো মালাটা আছে। হয়তো বইয়ের ভাজে থাকতে থাকতে একে ফুল বলে চেনা যায় না । হয়তো তুমি নিজেও চিনতে পারবে না । তবে আমি কিন্তু এখনও সেই মালাটা থেকে ফুলের গন্ধ পাই। যত বার মালাটা স্পর্শ করি কেন যেন মনে হয় তোমাকে স্পর্শ করি। ফুলের গন্ধটার সাথে তোমার শরিরের গন্ধটার অনেক মিল খুজে পাই। জানি
অনেক বাজে বকছি। তোমার সাথেই যত বকবক করতে পারতাম। এখন অন্য কারও সাথে এত কথা বলতে পারি না। একটু বলেই চুপ করে যেতে হয়, কথা খুজে পাই না।
তোমার জন্য চিঠিটা লিখতে গিয়ে বার বার থেমে যাই, কি দিয়ে শুরু করবো আসলে বুজতে পারি না। আচ্ছা তুমি কি এখনও বৃষ্টিতে ভিজ ? এখনও কি পূর্ণিমার চাঁদটা দেখ বারান্দার গ্রিল এ মাথা ঠেকিয়ে ? এখনও কি কাচের চুড়ি গুলো বাজে তোমার ঐ হাতে? খুব ইচ্ছে করে কোন এক জোছনার দিনে তোমার হাত ধরে হাটতে। বৃষ্টি পরলেই মনে পরে যায় সেই দিন টার কথা যে দিন আমরা দুজন রিক্সা নিয়ে ঘুরছিলাম, এর মাঝেই বৃষ্টি শুরু হোল। আমি রিক্সা থামাতে বললাম । কিন্তু তুমি চাইলে ভিজতে। তারপর এই বৃষ্টি ভেজা শহর দেখল রিক্সার হুড নামিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দুইটা পাগল ছেলে-মেয়ে যাচ্ছে। তুমি নেই তাই এখন আর পাগলামিও করা হয় না।
জানি হয়তো অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে তোমার। হয়তো ঘৃণাও থাকতে পারে ঐ অভিমানের ভাজে ভাজে। কিন্তু জেনে রেখ আমার হৃদয়েও আছে কষ্টের দাগ। তোমার মতো আমিও দাগ গুলো ঢেকে রাখতে শিখছি। তুমি যাওয়ার আগে কখনো বুজতেই পারিনি আদরেরও ক্ষত হয়। আমার আদরের ক্ষতগুলো আমি পুষে রাখব। মাঝে মাঝে ক্ষতগুলো দেখব, আর ভাবব কোন এক সোনালি সময়ে আমারও ছিল একটা ভালবাসার পাখী। আমি চাই না আমার দেওয়া ক্ষত গুলো তুমি বয়ে বেড়াও। তবে সময় নামের ঔষধ আমাদের এই ক্ষত গুলো একদিন মুছে দিবে। কিন্তু মুছতে পারবে না তোমার আমার মাঝখানের ঐ ভালোবাসাটা কে। শেষ একটা কথা বলি, যখনি তোমার ক্ষতগুলো কষ্ট দিবে তখনি জেন আমি তোমাকে প্রতিনিয়ত বলছি ..................
''ভালো আছি,ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো............ ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে.......

প্রথম দেখার প্রেম

বৃষ্টি মাত্রই ধুয়ে দিয়ে গিয়েছে রাজপথটাকে । ঢালু রাজপথের উপর পানির আধারে চুপচাপ খেলে বেড়ায় বাতাস । আর বাতাসের সাথে পানির মৈত্রিতে তৈরি হয় মৃদু স্রোত । পানি মাঝে বিশাল আকাশের উজ্জ্বল
prothom prem
প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে । স্রোতের মাঝেও পানির আপ্রান চেষ্টা থাকে আকাশের প্রতিবিম্বকে ধরে রাখার । দৃশ্যপট বদলে যায় না , শুধু চরম নিঃসঙ্গতার মাঝে নিজের নিরব অস্তিত্ব ধরে রাখে । খুব ভোর এখন , সচারচর এতো ভোরে সাধারনত মানুষ বের হয় না । কিন্তু আমি বের হয়েছি , হ্যা এই ঘন বর্ষনের দিনও বের হয়েছি । ক্ষনে ক্ষনে আবেগ আর বাস্তবতার মধ্যে যুদ্ধ চলছে । এশা তো বলেই দিয়েছে সে আসবে না তারপরও কেন আসলাম ? আমি সত্যিই জানি না কেন আদৌ আসলাম , শুধু জানি আমি আসতে বাধ্য ছিলাম । অনেকদিন বৃষ্টিতে ভিজা হয়নি , এখন বৃষ্টি হচ্ছে না । কিন্তু আমি জানি বৃষ্টি আসবে , অন্তত আমাকে ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য হলেও আসবে । ধানমন্ডি লেকের পাশে রাস্তাটা দিয়ে হাটছি আমি । কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে রাস্তাটাকে ঘিড়ে ! জমে থাকা পানিতে পায়ের স্যান্ডেল ডুবে যায় , পা ভিজে গিয়েছে , তবুও আপনমনেই চলতে থাকে আমার হাটা । হাটতে হাটতে ফিরে গেলাম অতিতে । কুমিল্লা টু সিলেট বাস কাউন্টারের নিচে চোখ কুচকে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । চোখে দেয়া কাজল লেপ্টে গিয়েছে , কিন্তু তাতে যেন সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গিয়েছে মেয়েটার । মুখের ভঙ্গিমাই বলে দেয় প্রচন্ড রেগে আছে মেয়েটা । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম , তারপর ধিরে সুস্থে সিগারেটের দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে নিলাম । লাইটারটা একদম নতুন , ছোট একটা পিস্তলের মতো । লাইটারটা বের করে ট্রিগারে টিপ দিয়ে আগুন জ্বালানোটায় বেশ মজা লাগে । বাসটা আর মাত্র পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে যাবে সিলেটের উদ্দেশ্যে । কয়েকটা গভীর টান দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বাসটা বিশেষ সুবিধার না , মুড়ির টিনকে টেনে টুনে লম্বার করার ব্যার্থ প্রয়াস বলা যেতে পারে । হেলে দুলে এগোতে থাকলাম দু সারি সিটের মাঝখান দিয়ে । সিট খুজতে গিয়ে দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটেই বসে আছে । বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যতই বলি না কেন যে "দোস্ত পাশে একটা সুন্দরি মাইয়া থাকলে জীবনডা পাত্থরকুচি হইয়া যাইতো । খালি সুখের পাতা সৃষ্টি হইতো !" কিন্তু বাস্তবে ভ্যাবাচ্যাকা ছাড়া কিছুই খেলাম না । যথাসম্ভব ভদ্রভাবে বসতে না বসতেই সুন্দরি নাক কুচকে বলে উঠলো "আপনি স্মোক করেন ! ছিঃ ! প্লিজ অন্য সিটে গিয়ে বসুন !" আমার মান ইজ্জত যাই ছিল না কেন সব কিছু বেনসনের ধোয়ার মতো উবে গেলো । মুখ কালো করে পাশের সিটে বসলাম । বাস ভর্তি হতে থাকলো এবং যাত্রীরা বেশিরভাগই এলিট শ্রেণীয় অর্থাত্‍ নিন্মবিত্ত । কয়েকজন তো কোদাল , শাবল , কড়াই নিয়ে উঠলো ! সুন্দরির দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখি আতংকিত দৃষ্টিতে লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে । তাদের মধ্যে একজন সুন্দরির পাশে বসার উপক্রম করতেই সুন্দরি আমার দিকে ফিরে প্রায় চিত্‍কার দিয়ে বলল "এই যে এই এই আপনার টিকেটে ১৫ লেখা না ? এই যে এটা আপনার সিট তো । এখানে এসে বসেন ।" এ সুযোগ হাতছাড়া অথবা বলা যেতে পারে সিটছাড়া করার পাত্র আমি না । সুতরাং লক্ষী ছেলের মতো সুন্দরির পাশে বসে গেলাম । একটু পর বাস ছেড়ে দিলো , সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো বাসটার ভিতরে তিল ধারনের জায়গাটাও আর রইলো না । রাতের বাসে উঠার অসুবিধা এটাই , সিটিং বাস লোকাল হয়ে যায় । যদিও আমার কোন সমস্যা নেই , আমি দিব্যি ঘুমিয়ে যেতে পারবো । কিন্তু পাশে বসা সুন্দরির কপালের রেখা ঘন হতেই বুঝলাম উনি আজকে অন্তত ঘুম কি জিনিস ভুলে যাবেন । আমি ভাবিনি আমার ভাগ্য এতটা খারাপ হবে । সুন্দরি সময় কাটানোর জন্য আমার সাথে খাজুরা আলাপ জুড়ে দিল ! জানতে পারলাম তার নাম এশা । কিছুক্ষন আলোচনায় অংশগ্রহন করলেও একটু পর ঘুমের দিকেই কেন যেন আমার মস্তিস্ক বেশি আকর্ষন অনুভব করলো । এই আকর্ষন যখন ভাঙ্গলো তখন দেখি আমার পিছনের সিটে বসা পিচ্চি আমার চুল টানাটানি করছে আর এশা সুন্দর করে এই দৃশ্য ভিডিও করছে । মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো , তবুও আস্তে করে পিচ্চিটার হাত সড়িয়ে দিলাম । তারপর এশার দিকে শীতল দৃষ্টিতে যেই তাকাতে গিয়েছি , পিচ্চি আর শক্ত করে চুল চেপে ধরলো ! এবার আর সহ্য করলাম না , পিছন ফিরে বললাম "বেয়াদপ পোলা থাপড়ায়ে বেহুশ কইরা দেমু !" যদিও পিচ্চি ভয় পেলো কিনা যথেষ্ঠ্য সন্দেহ আছে আমার । আসলে ভয় তো দূরের কথা পিচ্চি নিজের আত্মসম্মানের উপর আঘাত মনে করলো আমার ধমকটাকে । সোজা চুলের মধ্যে চুইংগাম লাগিয়ে দিলো ! রাগে দুঃখে দিশেহারা হয়ে গেলাম একদম ! কিছু বলতে গেলাম কিন্তু তার আগেই দেখি পিচ্চির মা পিচ্চিকে বেদম বকা দিচ্ছে । কিন্তু আমার মস্তিস্ক তখন অন্যদিকে ঘুড়ে গিয়েছে । খিল খিল করে হাসছিলো এশা , অদ্ভুত হলেও সত্য জীবনে কখনো কাওকে এতো সুন্দর লাগেনি হাসতে দেখে । চুপচাপ হয়ে গেলাম একদম , একটু লজ্জাও পেয়েছিলাম বোধহয় , সুতরাং এশাকে হাসতে দিয়ে চুল চুইংগাম মুক্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলাম । মূলত এটাই ছিল এশার সাথে আমার প্রথম পরিচয় । তারপর আর কি ছয় ঋতুর আগাগোনা শেষে দেখি ওর হাত ধরে ধানমন্ডির এই রাস্তাটায় হেটে যাচ্ছি আমি । এশা মাঝে মাঝে যখন রেগে যায় তখন তার পুরো মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে উঠে । আমার তখন মাথায় একটাই চিন্তা থাকে যে মানুষ রেগে গেলে তার মুখ টমেটো আকার ধারন করে কেন ! আমি ভবঘুরে , আপনভোলা টাইপের একটা ছেলে । এশার ভাল লাগা , মন্দ লাগাগুলো কখনো বুঝতে চেয়েছি বলে মনে পরে না আর যখন চেয়েছি তখন হয়তো এশা বলে না । আমার জানা হয়নি এই জানা শোনা আর চেনা অচেনার বেড়াজালে কখন আমরা দূরে সরে গেলাম । প্রথম ব্যাপারটা উপলব্দি করলাম সেদিনই যেদিন বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় আমার পাশে এশা ছিল না । অথবা ধোয়া উঠা কফির কাপ দুটোর একটা একদম ভর্তি ছিল । কিংবা হয়তো লেকের পানিতে রোদ্রের প্রতিচ্ছবি শুধু আমাকেই রাঙ্গিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তখন ।

রায়হানের ব্যাপারটা আসলে আমি তেমন পাত্তা দিতাম না । ছেলেটা এশার ক্লাসমেট এবং বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল । কখনো দেখিনি ছেলেটাকে , তবে সুদর্শন যে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই । এশার কাছে শুনতে শুনতে মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেছে ছেলেটার সবকিছু । প্রথমদিকে বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনতাম সবকিছু । কিন্তু যেদিন শুনলাম ছেলেটা এশাকে ভালবাসে । কেন যেন খুব অসহ্য লাগতো ছেলেটাকে । এশা পছন্দ করতো না তাই সিগারেট প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম । আবার বেড়ে গেলো সিগারেট এর মাত্রা , বিশাক্ততার মাঝে হারিয়ে যেতে থাকলাম আমি । তবুও বিশ্বাস ছিল এশার উপর । মেয়েটা যখন চুপচাপ হাত ধরে বসে থাকতো , কিংবা আলতো করে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিতো সত্যিই সব ভুলে যেতাম । একটা সময় পড়াশোনার তাগিতে চলে আসলাম অন্য একটা জেলায় । জীবন যুদ্ধ এক অদ্ভুত যুদ্ধ , যেখানে সব খানে আহত হতে হয় । এশার সাথে যোগাযোগ সেলফোনে এসে ঠেকলো । ফোনের এপাড় ওপাড় শুধু অনুভূতির আদান প্রদান চলল । কতো যে ইচ্ছা করতো এশাকে একটা বার দেখার । ঢাকায় যখন যেতাম অল্প কিছুদিনের জন্য তখন এশার নানান মুখি সমস্যা থাকতো । সন্দেহ জাল বুনতে শুরু করে দিয়েছিলো ততদিনে , এশাকে সাফ বলে দিলাম রায়হানের সাথে না মিশতে । আমাকে অবাক করে দিয়ে এশা অস্বিকার করলো । আমার কি হয়েছিলো জানি না , ভয়াবহ রেগে গিয়ে যা তা বলে ফেলেছিলাম তাকে । সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলো সেখান থেকেই । আমার জানা হলো না এশার দুঃখের সময়টা রায়হান আপন করে নিয়েছে ততদিনে । প্রতিদিনের ঝগড়ায় একদিন হুট করে এশা বলে ফেলল কথাটা । নিয়তিকে বড় নিষ্ঠুর মনে হলো হটাত্‍ । তারপর একদিন সম্পর্কের ইতি টানতেই হলো আমাদের । এশা জানিয়ে দিলো আমার সাথে আর হচ্ছে না , মিলছে না তার কিছুই । আমি শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছিলাম কথাগুলো । তারপর আবারো সেই সিগারেট । শুধু মাঝে মাঝে অনেক খারাপ লাগা নিয়ে লেকের পাশে চুপচাপ বসে থাকার মাঝে নিজের অস্তিত্বকে খোঁজার চেষ্টা করে যাই ।

আজকে অনেকদিন পর এশাকে আসতে বলেছি । স্কলারশিপটা পেয়ে গিয়েছি , জার্মানিতে চলে যাব এই তো কিছুদিনের মধ্যেই । অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম বৃষ্টির প্রথম ফোটা মুখের উপর পরায় । ডিঙ্গি রেসটুরেন্টের কাছাকাছি এসে পরেছি , একটু দ্রুত হেটে ডিঙ্গির নিচে দাড়িয়ে পরলাম । সিগারেট ধরালাম একটা , এক টান দিয়ে ধোয়া ছাড়তেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেলো । এশা যখন এলো তখন ঝুম বৃষ্টি নেমেছে , সেই আগের মতোই ধীর পায়ে ছাতা মায়া এগিয়ে আসছে সে । সে কাছাকাছি আসতেই সিগারেটটা ফেলে দিলাম । বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে পরে ছ্যাত্‍ করে নিভে গেল সেটা । "তুমি আবার সিগারেট ধরেছো ?" ছাতা বন্ধ করতে করতে বলল এশা । জবাব দিলাম না , এশার দিকে তাকিয়ে আছি । ছাতা বন্ধ করে সরাসরি আমার দিকে তাকালো এশা । মনে হলো একটু যেন ধাক্কা খেয়েছে সে । এশাকে সেজে আসতে বলেছিলাম একটু , চোখে কাজল দিয়ে আসতে বলেছিলাম । এশা চোখে কাজল দিয়ে আসেনি , তার সিগ্ধ মুখটা কেমন যেন খালি খালি দেখাচ্ছে । "কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন ? বলো কেন ডেকেছো ?" আবার বলল এশা । এশার চিবুক বেয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে নামছে , হটাত্‍ করে মনে হলো খুব আস্তে এশার চিবুক স্পর্শ করি , মুছে দিই পানির ফোটা । সামলে নিলাম দ্রুত , বললাম "কেমন আছো ।" এশা হাসলো , সে হাসির মাঝে কোন উচ্ছলতা নেই । বলল "হমম ভালই আছি । তুমি ?"-"হ্যা এই তো আছি একরকম"--"তারপর কি করছো আজকাল ?"-"তেমন কিছু না , জার্মানিতে চলে যাচ্ছি কিছুদিনের মধ্যে ।"--"ও আচ্ছা । ভাল" নিস্পৃহ কন্ঠে জবাব দিলো এশা । কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না , খুব অসহায় লাগলো নিজেকে । আশে পাশে গুমোট অন্ধকার হয়ে আসা প্রকৃতির মাঝে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম ! "আচ্ছা তুমি কি কিছু বলবা ? আমার যেতে হবে । রায়হান ওয়েট করতেছে আমার জন্য ।" আবারও বলে উঠলো এশা । কিছু বলতে পারলাম না , ধক্ করে উঠলো বুকের ভিতরে । অনুভূতিটা সুখকর নয় মোটেই , মাথা নিচু করে রইলাম । "অযথা এতো নাটক না করলেও পারতা । আর শোন আর কখনো কল করে এসব নাটক দেখাবা না আমাকে ।" এশা আবার বলল । ঝট করে উঠে দাড়ালো সে , তাড়াহুড়ো করে ছাতা খুলতে গিয়ে ছাতার একটা শিক ভেঙ্গে গেলো । আমি তখন এশার যাত্রাপথের উল্টোদিকে বসে আছি । ছপ ছপ আয়োয়াজ তুলে পায়ের শব্দ দ্রুত বৃষ্টির পানির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে । শেষ সিগারেটা ধরালাম , লাইটারটা বেশ পুরোনো হয়ে গিয়েছে , গ্যাস প্রায় শেষের দিকে । সিগারেট ধরিয়ে লম্বা একটা টান দিলাম , তারপর ধোয়াগুলো ছেড়ে দিলাম বাতাসের মাঝে । মানুষের জীবনের সমীকরনগুলো ক্ষণে ক্ষণে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে , সব সময় তারা সুখকর হয় না । এই জ্বলন্ত সিগারেট আর ধূসর ধোয়ার মাঝে দেখা দুনিয়াটাকে খুব ঘোলাটে লাগে । জমে থাকা পানিরা আর আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখতে পারে না , বিক্ষিপ্ততার মাঝে হারিয়ে ফেলে প্রতিবিম্বকে । সিগারেট প্রায় শেষের দিকে , হটাত্‍ পিঠে ভয়াবহ একটা বাড়ি লাগায় হাত থেকে ছিটকে পরে গেলো সিগারেটটা । অবাক হয়ে পিছনে ফিরে দেখতেই দেখি এশা হাতা ভাজ করা অবস্থায় চুপচুপে ভেজা অবস্থায় দাড়িয়ে আছে । "অসভ্য ছেলে । দেখস নাই ছাতা ভেঙ্গে গেছে ? দেখস নাই আমি ভিজতেছিলাম ? যাস নাই কেন ফিরিয়ে আনতে ? সব সময় আমাকেই কেন তোর কাছে আসতে হবে ? এরপর যদি কখনো আসতে হয় প্রত্যেকবার দশটা করে ছাতার বাড়ি খাবি তুই ।" অশ্রুশিক্ত চোখে বলল এশা । আমি তখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে । হটাত্‍ করেই মনে হলো ধূসর ধোয়ার আড়ালের পৃথিবীটাও অনেক সুন্দর । বিক্ষিপ্ত পানির আধারও আকাশের প্রতিবিম্ব ধরে রাখে তার প্রতিটি পানি কণার মাঝে । এশা হু হু করে কাঁদছে , খুব মায়া লাগছে দেখতে । এগিয়ে গিয়ে এশাকে জড়িয়ে ধরলাম । কান্নার মাঝেই ব্যাগ থেকে কাজলের স্টিক বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো সে । হেসে ফেললাম এবার , এশাও হেসে ফেলল । বাহিরে বৃষ্টির বেগ বাড়ছে , রাস্তার উপর জমা পানির বিক্ষিপ্ততা বাড়ছে । বিক্ষিপ্ততার মাঝে আমাদের প্রতিবিম্ব যদিও দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি জানি পানির প্রতিটি কণা তাদের অভ্যন্তরে আমাদের প্রতিবিম্ব ধারন করেছে । শুধু কখনো প্রতিবিম্বের পরিস্ফুটন হবে না কখনো । থাকুক না অনেক গোপনে , সব কিছু পরিস্ফুটিত না হলেও তো চলে ।

কিছু কথা এবং উত্‍সর্গঃ

গল্পটা হ্যাপি এন্ডিং কেন দিলাম ? কেন দিলাম হ্যা ? আসলে রাগে দুঃখে হতাশায় হ্যাপি এন্ডিং দিয়ে দিছি কারন স্যাড এন্ডিং দিলে নায়ক ধোয়ার মাঝে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে চাইতো যার ফলে তার অনেক অনেক সিগারেট লাগতো । এমনিতেই সরকার সিগারেটের দাম বাড়াইছে , নায়ক গরীর মানুষ আর যদি গরিব নাও হয় তাইলে অস্পষ্ট পৃথিবী দেখতে গিয়ে যে গরিব হয়ে যাবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই । তাই অবিলম্বে সিগারেটের দাম কমাবার দাবি জানাচ্ছি নাইলে আমার গল্পের নায়কের কি হবে বলেন ?

এশার দৃষ্টিভঙ্গিটা উহ্য রাখলাম । এশা রায়হানকে কখনো ভালবাসেনি , ভালবেসেছে গল্পের নায়ককে । মাঝখানে ব্রেকআপের ব্যাপারটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি আর অতিরিক্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের ফলে হয়েছে । এশার দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষন আর করবো না । কারন রহস্য থাকা ভাল ....

এবার আসি উত্‍সর্গে । আমি জানি গল্পখানা পড়ে অলরেডি জুতা ছেড়ায় ব্যাস্ত আপনারা । কারন খুব ভাল করেই জানেন যে ভাল জুতা আমার গায়ে মারলে আমি জুতার ব্যাবসা শুরু করে দিব । আমার হাইট মাত্র পাচ ফুট দশ ইন্চি । জুতা মারলে মুখ মিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে । এজন্য আমার পিছনে অর্নব ফায়েককে দাড় করায়ে দেওয়ার জোড় আবেদন জানাচ্ছি । তাতে আমার মুখ মিস হলেও ছয় ফুটি ঐ দৈত্যেরটার কখনই মিস হবে না । তাতে অন্তত মুখ সই করার আনন্দটা পাইবেন । হে হে

ফারিয়া জহির মেয়েটাকে আমার একদমই সহ্য হয় না । আমার কাছে যা কিছু ভাল লাগে সব এই মেয়ের কাছে বাজে লাগে । জিকু ভাইয়ের পাংখা দাড়ির স্টাইল তার ভাল লাগে না । অর্নইব্বার হেয়ালি তার ভাল লাগে না । সবচেয়ে বড় কথা আমার এতো সুন্দর এডিট করা ছবিটা (ভয়াবহ !) যেটা হাজারো তরুনি অজ্ঞান করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তবে সেটা ভয়ে নাকি সৌন্দর্যে তা আমি অবশ্য জানি না , ঐ ছবি নাকি ভাল হয় নাই ! এইগুলা কোন কথা হৈলো ? তারপরও মানুষ বলে মেয়েটা নাকি অনেক লক্ষী , আমিও কিছু কিছু নিদর্শন পাইছি বটে । কিন্তু তাতে কি ? এই মেয়ে ভাল তাতে কি ? তাকে সহ্য হয় না ।


শিরোনামহীন ভালবাসা

কাঁধে গরম পাতলা কি জানো পড়ল।ড্যাম।কাকের বাচ্চা কাক।কাউয়া।আর টাইম পাইলি না।বিড়বিড় করে কিছুক্ষন গালাগালি পাড়ল রেজা।শাদা শার্টের কাধের জায়গাটায় অলরেডি সুন্দর একটা আলপনা তৈরি হয়ে গেছে।এখন আর বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করার সময় নাই।চেঞ্জ করতে গেলে চাকরীর ইন্টারভিওটা মিস
sironam hin valobasa
হয়ে যাবে।এতদিন গ্রাহ্য না করলেও এখন এই চাকরীটা পাওয়ার উপরই নির্ভর করছে ওর সাথে লিনার বিয়ের ব্যাপারটা।আপাতত একটা টিস্যু দিয়ে কাকের ছোঁড়া মিসাইলের ব্যাপারটা সমাধান করল রেজা।
প্রায় ২ ঘন্টা যাবত বসে আছে রেজা ওয়েটিং রুমে।চেয়ারগুলা আরামদায়ক,ঘুম চলে আসছে।গত মাসের ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিল রেজা,ঘুম থেকে জেগে দেখে তার চাকরী আরেকজন নিয়ে চলে গেছে।নাহ এসব বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতে এসির নিচে বসে কেমনে চাকরী করবে তা নিয়ে যখন ভাবছে তখনই ওর ডাক পড়ল।

-স্যার আসবো? রেজা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে।
-আসতে তো হবেই,বাতচিত না করলে চাকরী দিব কিভাবে?
বয়স্ক একজন বলল।রেজা ঢুকেই বসে পড়ল।অনুমতি নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে গেছে।৩ জন।রেজা হিসেব করছে।বয়স্ক,টাকলু,গোফওয়ালা।
-কি নাম? টাকলু জিজ্ঞেস করল।
-কার নাম স্যার?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পাড়তে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু লিনার

বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।নাহলে লীনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
আজ লিনার বিয়ে।লিনার পরিবার লিনাকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিচ্ছে।রেজা কল্পনা করছে লিনাকে বিয়ের সাজে কেমন লাগতে পারে।টিশার্ট টা মাথায় গলিয়েই বেড়িয়ে পড়ল রেজা।রাস্তায় বের হতেই সেই গরম পদার্থ।রেজা হাসলো কিছুক্ষন,উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,নাইস শট,আজ পুরা মাথার মাঝখানে ফেলতে পারছিস।রেজা একটা টিস্যুপেপার দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে একটা রিকশা ডাকলো।রিকশা মামাকে বলল মগবাজারের দিকে যেতে।মাথার উপর তপ্ত রোদ,রেজা ভাবছে,লিনার বিয়ে আজ।গত ৬ টা বছর দুজন দুজনকে আগলে রেখেছিল।শেষ চাকরীর ইন্টারভিউতে চাকরিটা হলো না।যেই লোক পাখির হাগু সদৃশ শার্ট পড়ে ইন্টারভিউতে আসে তাকে নিয়ে কোম্পানির লোকজনের ভরসা করা মানায় না।রেজার জীবনটাই হয়ে গেছে ভরসাহীন।লিনাকে বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে লিনার কান্না,রেজাকে অপদার্থ,বেয়াক্কেল,কতকিছু বলে ফোনটা রেখে দেয় লিনা।ঠিকই তো,পাশ করার ২ বছরেও একতা চাকরী জোগাড় করতে পারলো না রেজা,কোন হিসেবে লিনা আর অপেক্ষা করবে।রেজা শুনেছে লিনাকে যে বিয়ে করবে সে নাকি আমেরিকা থেকে পিএইচডি করা ইঞ্জিনিয়ার,বিশাল বেতনে চাকরী করে।লিনা কেন রেজার মত ভবঘুরে কে বিয়ে করবে।রেজা ভাবতে থাকে,তপ্ত রোদে ঝিমিয়ে আসে চারিপাশ।

-এই তোমার আসা,আমি কতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছি।উফফ তুমি কি মানুষ হবা না।আর কি পড়ে আসছো তুমি এটা।তুমি কি জীবনে আর বিয়ে করতে পারবা?তোমাকে নিয়ে আর পারি না।মাথায় কি?আজও তোমার কাউয়া তোমার সাথে টার্গেট প্র্যাকটিস করছে।চল,মানুষজন তাকিয়ে আছে।আচ্ছা বলতো বিয়ের সাজে একতা মেয়ে আর টিশার্ট পড়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে কথা বলছে,মানুষ কি ভাবছে।চল...এক নিশ্বাসে লিনা কথাগুলো বলে গেল রেজাকে।

-হুম চলো। রেজা আকাশের দিকে তাকায়,আরো রোদ চাই,পৃথিবী আজ আলোর বন্যায় ভেসে যাক।কাজি অফিসের দিকে পা বাড়ায় রেজা।
নাহ,ভালোবাসাটা ব্বৃথা যায় নাই।বিয়ের আসর থেকে যে মেয়ে পালিয়ে আসতে পারে ওর মত একটা অলস কর্মহীনের জন্য, সে মেয়ের ভালোবাসার কাছে নিজেকে তুচ্ছ মনে হতে থাকে রেজার।বাকী জীবন এই মেয়ে কঠিন বাঁধনে বেধে রাখবে দুজনকে।কারণ এটাই যে শিরোনামহীন ভালবাসা।

৮ বছর পর...

রেজা বসে আছে এসি দেয়া একটা রুমে,সাথে তার দুই ম্যানেজার।ইন্টারভিউ নিচ্ছে চাকরীর।
হতদন্ত হয়ে একটা ছেলে প্রবেশ করলো রুমে,
-স্যার আসবো?
-এসেই তো পড়েছ।। রেজা দেখল ছেলেটার শাদা শার্টের কাঁধের কাছটায় পাখির মুত্রের দাগ...
-কি নাম?
-স্যার কার নাম?
-কার নাম মানে?
-মানে স্যার আমার না বাবার?
-কার নাম মানে?ফাইজলামী কর?আর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ,শার্টের কাঁধে ময়লা কেন?
-স্যার ময়লা না স্যার,কাকের বিষ্ঠা,কাকটা খুব বজ্জাত,আমাকে দেখলেই...।।
-আরে?চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে এসেছ নাকি মামাদের সাথে খেজুরে আলাপ পারতে এসেছ?
-স্যার চাকরীর জন্য।আসলে স্যার চাকরীটা আমার লাগতো না,শুধু অহনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এইটা সেফটি ফ্যাক্টর।।নাহলে ওকে আরেক জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবে।
-তারপর?লিনা জিজ্ঞেস করল।চাকরীটা দিলে?
-হুম,চিন্তা করলাম ওকে চাকরীটা না দিলে হয়ত ওর মনের মানুষকে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসতে হতো তোমার মত।ভুলে গেছ সেই দিনগুলার কথা।কি স্ট্রাগলটাই না করেছিলাম আমরা।
-হুম,দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লিনা।ভালো করেছ।নাও কফি ঠান্ডা হয়ে গেল তো।বারান্দায় যা বাতাস।
খুব দূরে একটা তারা মিটমিট করে জ্বলছিল।রেজা লিনার কথোপকথন চলতে থাকে মাঝরাত অবধি যতক্ষন তারাটা থাকে।ওরা ঘুমিয়ে গেলে তারাটাও ঘুমিয়ে যায়,আরেকটা নতুন ভোরকে আহবান করতে