শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

ভালবাসার জন্য

valobasar photo,valobasar golpoসকাল বেলার মেঘ

হায় আল্লাহ্! ট্রেন চলে এসেছে। রিক্সায় বসেই প্রত্যয় দেখতে পেল ট্রেনটা স্টেশনে। একটু পরই ট্রেনটা ছেড়ে যাবে। প্রত্যয় তাড়াতাড়ি রিক্সা ভাড়া দিয়ে দৌড়ে ট্রেনে উঠলো। ওর অবস্থা দেখে মনে হয় যেন কত জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিল তাই ট্রেন ধরতে লেট করেছে। কিন্ত তার জরুরী কাজটা যে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া তা হয়তো বাইরের সবারই অজানা। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়াই তার প্রধান কাজ। নানা রকম দুষ্টুমি কাজ আর কথা বার্তায় সবাইকে মাতিয়ে রাখে সে। অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়েও তার দুষ্টুমি এখনও কমে নি। ক্যাম্পাসে সবাই ওকে "বান্দর" নামে চেনে। বান্দর নামেই বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছে সে। টিচাররা পর্যন্ত তার বাদরামির হাত থেকে রক্ষা পায় না। পড়ালেখার ধারে কাছে নাই সে। কোন মতে পরীক্ষায় পাশ করে গেলেই হল। আর পরীক্ষার হল এ হেল্পলাইন তো আছেই। সবাই জানে প্রত্যয়কে পরীক্ষায় হেল্প না করলে উপায় নেই। কোন না কোন দিক দিয়ে সে সবাইকে ব্ল্যাকমেইল করে রাখে। তাই বাধ্য হয়ে ওকে পরীক্ষায় হেল্প করতেই হয়। এভাবেই কেটে যায় বান্দর উপাধী প্রাপ্ত এই ছাত্রের পরীক্ষা গুলো। ট্রেনটা চলতে শুরু করেছে। ভাগ্য ভাল যে টিকিটটা আগে থেকেই কাটা ছিল। জানালার কাছের সিটটা পেয়েছে ও। ভালই হল প্রকৃতি দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে। এখন ট্রেনে একা একা কোন বাদরামী করা যাবে না তাই প্রকৃতি দেখাই ভাল। প্রত্যয় ট্রেনে করে তার নানু বাড়ি যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ওর মা নানু বাড়ি গেছে। তাই মা কে আনতে যাচ্ছে সে। হেডফোনটা লাগিয়ে একমনে গান শুনে যাচ্ছে প্রত্যয়। হঠাৎ তার চোখ পড়লো দু সিট সামনে বসা মেয়েটির দিকে। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে ওর। কিন্ত মনে করতে পারছে না মেয়েটি কে। হঠাৎ মনে পড়লো মেয়েটির সাথে একদিন ক্যাম্পাসে ওর ধাক্কা লেগেছিল। এরপর মেয়েটির অনেক ঝাড়ি হজম করতে হয়েছিল ওকে। পরে বন্ধুদের কাছে জানতে পারলো মেয়েটির নাম অথৈ। ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। মেয়েটিও ট্রেনে করে কোথায় যাচ্ছে প্রত্যয়ের খুব জানতে ইচ্ছে করছে। হয়তো কোন আত্মীয়ের এখানে যাচ্ছে। মেয়েটা দেখতে খারাপ না। দুপুরের কড়া রোদ একদম অথৈ এর মুখে এসে পড়ছে। খুবই অসহ্য অবস্থা। উড়না টা দিয়ে মাথাটাকে রোদ থেকে রক্ষা করে অথৈ। একটা লাল জামা পড়েছে সে। মাথায় উড়নাটা দেওয়াতে একদম নতুন বউ এর মত লাগছে মেয়েটাকে। প্রত্যয় মুগ্ধ হয়ে দেখছে সেই নতুন বউ এর মত মুখ খানি। বাতাসে চুল গুলো বার বার উড়ে এসে অথৈ এর মুখে এসে পড়ছে। প্রত্যয়ের খুব ইচ্ছে করছে আলতো করে অথৈ এর চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিতে। কিন্ত সব ইচ্ছেই তো আর পূরন হয় না। প্রত্যয়ের অপূর্ন ইচ্ছা গুলোর মধ্যে এটি একটি। প্রত্যয় বুঝতে পারে না কেন এমন লাগছে ওর। কোন মায়ার জালে আটকে যাচ্ছে না তো সে! অবাধ্য চোখ গুলো শুধু অথৈ এর মুখ খানি দেখতে চাচ্ছে। নানু বাড়ি গিয়েও রাতে শুধু অথৈ এর কথাই মনে পড়ছে ওর। মনের ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে তা আর প্রত্যয়ের বুঝতে বাকি রইলো না। চুন্নী মেয়েটা প্রত্যয়ের ঘুমটাও চুড়ি করে ফেলেছে। একদমই ঘুম আসছে না ওর। দিন যেতে থাকে আর প্রত্যয় বুঝতে পারে সে অথৈ এর প্রেমে পড়ে গেছে। আচ্ছামতই পড়েছে। সেখান থেকে আর উঠার উপায় নেই। দুষ্টু ছেলেরাও যে কাউকে ভালবাসতে পারে বুঝে গেল সে। তারা শুধু সারাদিন দুষ্টুমি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও কাউকে গভীরভাবে ভাল বাসতেও পারে। ক্যাম্পাসে গিয়েই অথৈ কে বলতে হবে মনের কথা। কিছুদিন পর প্রত্যয় ক্যাম্পাসে গেল। ওর চোখ জোড়া শুধু একজন মানবীকেই খুঁজছে। অবশেষে দেখা মিললো সেই মানবীর। কিন্ত প্রত্যয় আজ সব সাহস হারিয়ে ফেলেছে। পূর্বে অনেক দুঃসাহসিক কাজের জন্য খ্যাতি থাকা সত্বেও আজ সে অথৈ কে ভালবাসার কথাটা বলতে পারছে না। সারাদিন অথৈকে আড়ালে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে সে। কিন্ত কিছু বলতে পারেনি। পরদিন প্রত্যয় ঠিক করলো অথৈ কে গিয়ে সরাসরি বলবে মনের কথা। অথৈ বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। প্রত্যয় এসে অথৈ কে ডাক দেয়। : অথৈ তোমার সাথে একটা কথা ছিল। একটু এদিকে আসবে? -- না। আপনার যা বলার এখানেই বলেন। : প্লিজ আসো না। মাত্র দুমিনিট। -- আচ্ছা চলেন। হ্যাঁ বলেন কি বলবেন : আসলে অথৈ.... ইয়ে.... মানে.... --আপনি কি তোতলা? এমন করতেছেন কেন? কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন। : আ..মি তোমাকে ভা..ভা..ভালবাসি। বিয়ে করতে চাই তোমাকে... -- কি??!!! আপনার সাহস তো কম না। আপনাকে! যাকে সবাই বান্দর ডাকে সে আমাকে বিয়ে করতে চায়! সারাদিন ভন্ডের মত ঘুড়ে বেড়ান। পড়ালেখা নাই। আপনার লজ্জা করে না আমাকে এসব বলতে!! : দেখো আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমি ভাল হয়ে যাব তোমার জন্য। -- এসব ভন্ডামি আমার জানা আছে। আর আমার বাবা যার সাথে আমাকে বিয়ে দিবে আমি তাকে বিয়ে করবো। আমার বাবা নিশ্চই আপনার মত বান্দরের সাথে আমার বিয়ে দিবেন না। দেখেন আপনি কখনও আমার সামনে আসবেন না। পারলে যোগ্য হয়ে আমার বাবার সামনে দাড়ান।

এত অপমানের পর প্রত্যয় কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল। ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়টায় বসে শুধু ভাবছে অথৈ তো ঠিকই বলেছে আমার মত ছেলের সাথে কেনই বা কোন বাবা তার মেয়ে কে বিয়ে দিবে। এই পর্যন্ত কি করতে পেরেছ সে..! সারাদিন বাসায় গেল না প্রত্যয়। বাসার কেউ ওর কোন খোঁজ পাচ্ছে না। মোবাইল টাও অফ।

ছয় বছর পর... অথৈ এর আড়াই বছরের পিচ্চি মেয়েটা সুন্দর লাল জামা পড়ে এসে তার বাবা কে বলছে- ~বাবা, বাবা তলো, তালাতালি যাই। আমি তো লেডি হয়ে গেছি। মা ও লেডি। (বাবা, বাবা চলো, তাড়াতাড়ি যাই। আমি তো রেডী হয়ে গেছি। মা ও রেডী) আধো আধো কথা বলতে শিখেছে মেয়েটা। অনেক দুষ্টু হয়েছে। হয়তো বাবার কাছ থেকে পেয়েছে দুষ্টুমি গুন টা। অথৈ এসে এক ঝাড়ি দিয়ে বলল- --এই প্রত্যয়!!! তুমি এখনও রেডী হওনি?? আমরা তো রেডী। পরে কিন্ত ট্রেন মিস হয়ে যাবে। : এইতো আর দুমিনিট। আজ প্রত্যয় কোন দুষ্টুমি বা আড্ডাবাজির জন্য লেট করছে না। অফিসের জরুরী কাজটা শেষ করার জন্য একটু লেট হচ্ছে।

ছয় বছর আগে অথৈ এর সেই অপমানের পর নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে প্রত্যয়। পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। বান্দর উপাধী বর্জন করে ভদ্র উপাধী কুড়িয়ে নেয়।পড়ালেখা শেষ করে ভাল চাকরী পায়। ভালবাসার জন্য দেবদাস না হয়ে অবশেষে যোগ্য পাত্রের বেশে অথৈ এর বাবার সামনে দাড়ায়। পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয় ওদের। প্রত্যয়ের এতটা পরিবর্তনের পর অথৈ আর অমত করেনি। প্রত্যয় নিজের এতটা পরিবর্তন আনতে পেরেছিল শুধু 'ভালবাসার জন্য। অথৈ কে সে অনেক বেশীই ভালবেসেছিলো। সত্যিকার ভালবাসা আসলেই মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে।

আজ ওর সংসার হয়েছে। অনেক দায়িত্ববান হয়েছ।ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে ওদের। ওরা তিনজন আজ প্রত্যয়ের নানুবাড়ি যাচ্ছে ট্রেনে করে। আজ প্রত্যয় অথৈ এর মুখের উপর থেকে উড়ে আসা চুল গুলো সড়িয়ে দিবে। ছয় বছর আগের সেই ইচ্ছাটি পূরন করবে.....

নারীদের যে গোপন বিষয়গুলো ছেলেরা কখনো জানতে পারেনা

প্রেমিকরা কি তাদের প্রেমিকার সম্পর্কে সব কিছু জানতে পারে? সম্পর্ক যত দীর্ঘ সময়েরই হোক না কেন
প্রেমিকার মনের সব গোপন কথা প্রেমিক কখনোই জানতে পারবে না এ কথা হলফ করে বলা যায়। মেয়েদের কিছু কিছু সিক্রেট থাকে যেগুলো তারা কাউকেই বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। বিশেষ করে তারা কিছু বিষয় ভুলেও প্রেমিককে জানায় না। আসুন জেনে নেয়া যাক প্রেমিকাদের সেই ৬টি সিক্রেট বিষয়গুলো তারা প্রাণপণে লুকিয়ে রাখে প্রেমিকদের কাছ থেকে।

আসল বয়স
মেয়েদের আসল বয়স জানা আসলেই কঠিন। আসল বয়সটা ঠিক কত এটা বেশিরভাগ মেয়েরাই তার প্রেমিককে বলতে চায় না। এমনকি অনেক মেয়ে তার সবচাইতে কাছের মেয়ে বান্ধবীকেও নিজের আসল বয়স বলতে দ্বিধা বোধ করে। তাই নিজের প্রকৃত বয়সের চাইতে কয়েক বছর কমিয়ে বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় অনেকের মধ্যেই। বয়স বললেই বুড়িয়ে যাবেন এমনটাই মনে করেন বেশিরভাগ নারী।

প্রেমের সংখ্যা

প্রেমিকার পূর্বে কত গুলো প্রেম ছিলো এটা জানাটা প্রেমিকদের জন্য মোটামুটি অসম্ভব একটি ব্যাপার। কারণ কোনো নারীই নিজের জীবনের সঠিক প্রেমের সংখ্যা বলে না কাউকে। প্রেমিককে তো একেবারেই নয়। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ নারীই তাদের প্রেমিকের কাছে বলে থাকে যে এটাই তার জীবনের প্রথম প্রেম।

কুমারীত্ব

বর্তমান সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কারনে অনেক মেয়েই বিয়ের আগেই কুমারীত্ব হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যাচ্ছে সেই সম্পর্কটি টিকছে না এবং অন্য কোথাও বিয়ে করছে তারা। প্রেমিক কিংবা স্বামী যদি কুমারীত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে তাহলে প্রায় সব মেয়েই কুমারীত্ব হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করে কিংবা এড়িয়ে যায়, কিংবা বানোয়াট একটা কাহিনী বলে। কখনোই স্বীকার করে না যে ব্যাপারটি তার মর্জিতেই হয়েছে।

প্রেমের প্রস্তাব
বেশিরভাগ মেয়েরাই মনে করেন যে প্রেমের প্রস্তাবের সংখ্যা যার যত বেশি সে তত বেশি সুন্দরী ও যোগ্য। আর তাই নিজের প্রেমিকের কাছে অনেক মেয়েই প্রেমের প্রস্তাবের সংখ্যাটা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে থাকে। জীবনে একটি প্রেমের প্রস্তাব না পেলেও অনেকেই সেটাকে বাড়িয়ে অনেক গুলো প্রেমের প্রস্তাব পাওয়ার কথা বলে থাকে।

বাবার সম্পত্তি

মেয়েরা বাবার সম্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু বিষয় প্রেমিকের কাছে সিক্রেট রাখে। অধিকাংশ মেয়ের ধারণা যে যার বাবার যত বেশি সম্পদ, প্রেমিকের কাছে তার দাম তত বেশি। আর এই ধারণার কারনেই বেশিরভাগ প্রেমিকা তার প্রেমিকের কাছে বাবার ধন সম্পদের বিবরণটা কিছুটা রঙ-চং মাখিয়ে বাড়িয়ে বলে থাকে। অর্থাৎ প্রেমিকার বাবার প্রকৃত আর্থিক অবস্থার বিষয়টি অনেক প্রেমিকই জানতে পারে না।

মেকআপ সিক্রেট
মেয়েরা মেকআপ করতে ভালোবাসে এই কথা সবাই জানে। কিন্তু তার পরেও বেশিরভাগ মেয়েই এই বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না প্রেমিকের কাছে। অধিকাংশ মেয়েই প্রেমিকের কাছে বলে যে তারা খুব সাধারণ ভাবে মেকআপ ছাড়া থাকতেই ভালোবাসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা প্রেমিকের সাথে দেখা করার সময় হালকা করে হলেও মেকআপ করে আসে।


যেসব কারণে অল্প বয়সী মেয়েরা অধিক বয়সের পুরুষদের প্রেমে পড়ে

লাইফ স্টাইলব্যাপারটা যে কেবল বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, তা কিন্তু মোটেও নয়। অতীতেও ছিল, তবে অবশ্যই এতটা
প্রকট ভাবে দেখা যায়নি। পিতার বয়সী কিংবা তাঁর চাইতেও বেশি বয়সের পুরুষদের প্রেমে পড়াটা, কিংবা প্রেম করে বিয়ে করাটা তরুণীদের জন্য ইদানীং খুব সহজ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে পুরুষটি হয়তো বিবাহিত, এবং তরুণীটি একপ্রকার ছলে-বলে-কৌশলে প্রেমিকের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নিজেকে তার স্ত্রী রূপে অধিষ্ঠিত করছে। কমবয়সী একটি মেয়ে প্রেমে হাবুডুবু খেলে বেশিরভাগ পুরুষের জন্যই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব একটি ব্যাপার। আবার অনেক পুরুষই সূক্ষ্ম কৌশল বাদ দিয়ে বেশ মোটা দাগেই কমবয়সী মেয়েদের পটাবার চেষ্টা করে থাকেন। পুরুষের কারণটি পরিষ্কার, একটি তরুণী নারীকে সঙ্গী হিসাবে কামনা করেন তারা। কিন্তু একটি কমবয়সী মেয়ে কেন প্রেমে পড়ে বাবার বয়সী একজন পুরুষের? কী সেই কারণ গুলো?

প্রেমিকের মাঝে বাবাকে খোঁজা
বিচিত্র শোনালেও অন্যতম প্রধান কারণ এটাই যে মেয়েরা যদি নিজের বাবার খুব ভক্ত হয়ে থাকে, তবে কোনো পুরুষের মাঝে বাবার ছায়া দেখা মাত্রই প্রেমে পড়ে যায়। যেহেতু বাবা একজন মধ্যবয়সী পুরুষ, তাই স্বভাবতই এই বয়সী অন্য পুরুষদের মাঝেই বাবার ইমেজ খুঁজে পাওয়া সহজ। বাবার মতন যত্ন নেয় বা স্নেহ করে, এমন মধ্য বয়সী পুরুষদের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয় এক শ্রেণীর মেয়েরা। বিশেষ করে কোনো কারণে যারা বাবাকে হারিয়ে ফেলে, তারা।

আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
একজন মধ্যবয়সী পুরুষ মানেই অর্থনৈতিক ভাবে তিনি যথেষ্ট স্থির ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত। মেয়েরা সেই আর্থিক নিরাপত্তাটাই খোঁজে, বিনা পরিশ্রমে নিজের জন্য সুখ নিশ্চিত করতে চায়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মেয়েরা শুধু সেইসব মধ্যবয়সী পুরুষদের প্রেমেই পড়ে যারা আর্থিক ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

সুখের সংসারের লোভ
পুরুষটি যদি নিজের স্ত্রী সংসারকে অনেক ভালোবেসে থাকেন ও তাঁদের নিয়ে অনেক সুখী হয়ে থাকেন, অনেক মেয়েই তাঁদের এই সুখ দেখে লোভে পড়ে যায়। বিশেষ করে পারিবারিক অশান্তি দেখে বেড়ে উঠেছে এমন মেয়েরা। তারা ভাবে পুরুষটি নিজের প্রথম স্ত্রীকে যেমন ভালোবাসছে বা যত্ন করছে, তাকেও তেমনটা করবে। সেই সুখের স্থানে নিজেকে বসাবার লোভে মেয়েরা প্রেমে পড়ে বাবার বয়সী একজন পুরুষের।

নিজে কিছু করতে না পারা
অনেকে মেয়েই আছে পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের মতন। তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না, প্রতিটি ব্যাপারেই অন্য মানুষের সহযোগিতা চায়। তারা মনে করে যে একজন “ম্যাচিউর” পুরুষ তাদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারবে। তাই বেছে নেয় সঙ্গী হিসাবে পিতার বয়সী পুরুষকে।

যৌনতার আনন্দে-অভিজ্ঞতায়

অনেক মেয়ে মনে করে একজন মধ্যবয়সী পুরুষ মানে যৌনতা সম্পর্কে অনেক বেশি অভিজ্ঞ কমবয়সী একজন তরুণের তুলনায়। অনেকের আবার ভালোই লাগে মধ্যবয়সী পুরুষকে। তাছাড়া এই বয়সী পুরুষের অতি অবশ্যই একাধিক নারীর অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। ফলে একজন কমবয়সী তরুণীকে ভালো বোঝে সে। সব মিলিয়ে তরুণীরা নিজের চাইতে অধিক বয়সের পুরুষকে সঙ্গী রূপে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে যৌনতা বেশ একটা বড় ভূমিকা পালন করে।

তরুণ প্রেমিক থেকে আঘাত পাওয়া
নিজের প্রথম প্রেমিক যদি আঘাত দিয়ে চলে যায়, তবে অনেক মেয়েই অধিক বয়সের পুরুষদের দিকে ঝোঁকে। কারণ তাদের মনে হয় তরুণ প্রেমিকেরা ভালোবাসায় অসৎ ও অস্থির আর বয়স্ক পুরুষেরা স্থির ও নির্ভরযোগ্য।


মাসিকের সময় খুব বেশী ব্যথা হলে করনীয়

মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা আমাদের দেশে একটা কমন ব্যাপার। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এই
মেয়েদের গপন কথা ব্যথা এড়িয়ে চলা যায়।মনে রাখতে হবে পৃথিবীর সকল মেয়েরি মাসিকের সময় কম বেশী ব্যথা হয়।সামান্য ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক।ব্যথা বেশী হলেই নিচের পদ্ধতি গুলো ফলো করতে পারেন।প্রাথমিক ভাবে ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন নেই।

১/কোন বোতলে গরম পানি ভরে বা কাপড় গরম করে তলপেটে ২০/২৫ মিনিট ছ্যাক লাগাতে হবে। এটা সপ্তাহে টানা ৩/৪ দিন করে করতে হবে। এতে ধীরে ধীরে মাসিকের সময় ব্যাথা কমে যাবে।

২/এছাড়া আরেকটা পদ্ধতি আছে- সিজ বাথ। ৩ মিনিট গরম পানিতে কোমর ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে। পরের ২/১ মিনিট ঠাণ্ডা পানিতে। এভাবে ২০/২৫ মিনিট সিজ বাথ নিতে হবে। এটাও সপ্তাহে টানা ৩/৪দিন নিতে হবে। শুধু পানি বা পানিতে কিছু লবন, বেকিং সোডা বা ভিনেগারও ব্যবহার করা যায়।

৩/আরেকটা পদ্ধতি আছে- কেজেল ব্যায়াম। এটাও খুব উপকারী।
এগুলো করলে যোনি মধ্যে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে আবার ঠিকঠাক হয়ে যাবে, ব্যাথাও কমে যাবে।

আমাদের দেশের অনেক মেয়েদেরই শারীরিক ফিটনেস ভালো নয় বলে এরকম সমস্যা বেশি হয়। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরবর্তিতে আলোচনা করার ইচ্ছা রইল।

ধর্ষণের জন্য মেয়েরা নিজেরাও দায়ী

dhorsonএকজন মেয়ের পোশাক, আচার ব্যবহার এবং তিনি কোন সময়ে কোন জায়গায় আছেন তার উপরেই
নির্ভর করে তিনি ধর্ষিতা হবেন কি না | দিল্লির নির্ভয়ার কী দরকার ছিল বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে রাত ১১ টার সময় বাড়ি ফেরার? আর মুম্বইয়ের ওই চিত্র সাংবাদিক? ওই তরুণীর কী দরকার ছিল সন্ধেবেলা শক্তি মিলস-এর মতো একটা নির্জন পরিত্যক্ত জায়গায় যাওয়ার?’ বললেন এক মহিলা | কোনও গ্রাম্য গৃহবধূ নন | এই মন্তব্য এক রাজনীতিক-এর | তিনি আশা মিরগে | একজন NCP নেত্রী এবং মহারাষ্ট্রের মহিলা কমিশনের সদস্য | নাগপুরে NCP-র মহিলা সংগঠনের একটি সমাবেশে এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন আশা | তাও আবার NCP সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের পাশে বসে | পরে সুপ্রিয়া নিজের বক্তব্যে এর বিরোধিতা করেন | এবং বলেন, এটা আশার ব্যক্তিগত মত | তাই বাধা দেওয়া হয়নি | কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরে পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন আশা | কিন্তু আশার মতো একজন উচ্চশিক্ষিত মহিলার মুখেই যদি এই মন্তব্য শোনা যায়, তাহলে সমাজের নিম্ন বর্গ কী দোষ করল? ধর্ষণের জন্য যদি মেয়েরাই দায়ী হয়, তাহলে শিশুরা কী দোষ করে,যখন তাদের নৃশংস লালসার শিকার হতে হয়? অথবা লাভপুরের মতো ঘটনা? যেখানে সালিশি সভার সাজা হয় গণধর্ষণ? অথবা দিল্লির পাহারগঞ্জের ওই মধ্যবয়সী বিদেশিনী? রাস্তা ভোলার মাশুল যাঁকে দিতে হল গণধর্ষিতা হয়ে? এসব ক্ষেত্রে নেত্রী আশা মিরগে দয়া করে কিছু বলবেন?

এবার ধর্ষণ নিয়ে মুখ খুললেন বলিউড নায়িকা পুনম (ভিডিও)

ponam pandeমুম্বাইয়ে সাংবাদিক ধর্ষণের ঘটনার জন্য নাকি অনেকে বিতর্কিত বলিউড নায়িকা পুনম পাণ্ডেকে দায়ি
করছে। ইন্টারনেট, ম্যাগাজিনে তার খোলামেলা ছবি দেখেই নাকি নষ্ট হচ্ছে তরুণ সমাজ। আর বেড়ে গেছে ধর্ষণের মতো নারীর প্রতি অপরাধের ঘটনা। কিছুদিন আগে মুম্বাইতে মুক্তি পেয়েছে তার বহুল আলোচিত ছবি ‘নেশা। ছবিতে পুনম এতটাই খোলামেলা অভিনয় করেছেন যে, অনেকেই এখন বলছেন এসব ছবিই তরুণ সমাজকে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অবশ্য পুনম এইসব অভিযোগের কিছুই পাত্তা দিচ্ছেন না। এই অভিযোগ কানে যাওয়ার পর পুনম বলেন, ‘সত্যি, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে আমার ছবি দায়ি! দিল্লীতে নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনায়ও আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছিল। আমি সেই মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করতে চাই, কে আমাকে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার জন্য যথেস্ট উত্তেজক বলে চিহ্নিত করেছে। আমি যখন ছিলাম না তখন কী নারীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটতো না।’

মানুষ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তাকে বলির পাঁঠা বানাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। পুনম আরো বলেন, ‘কেনো আমাকে সমাজের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে? আমি শুধুই একজন মেয়ে যে পৃথিবীতে নিজের জায়গা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাকে নৈতিক পুলিশি টার্গেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন আইন শৃঙ্খলা ব্যর্থ হয় তখন সবাই দোষ চাপাতে সুবিধা জনক কোনো টার্গেটকে বেছে নেয়।’

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

ভালবাসার গল্প শফিক তাড়াহুড়ো করে রিকশায় উঠলো। হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে একজন রোগীর অবস্থা বেশ খারাপ। রাজশাহী মেডিকেলের শিশু মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার(IMO) সে। হসপিটালে ঢোকার পরই জানতে পারল রোগী মারা গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ব্যাডের কাছে গিয়ে দেখল মারা যাওয়া শিশুটির পাশে শিশুটির মায়ের পিঠে হাত রেখে ব্যাকুল নয়নে কেঁদে যাচ্ছে নতুন ইনটার্নশীপে জয়েন করা মেয়েটি। মৃত্যু দেখে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠেনি। কাজলে চোখ মাখামাখি হয়ে আছে। অনেকদিন পর শফিক কোন মেয়ের জন্য মায়া অনুভব করল। তার জীবন থেকে শিলার চলে যাওয়ার পর মনটা কেমন জড় পদার্থের মত হয়ে গেছে। মনের আগল নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে সে। মেয়েটির এমন কান্না দেখে বহুদিন পর যেন এক চিলতে বাতাস নাড়া দিয়ে গেল মনকে। কাছে গিয়ে শফিক বলল, “শান্ত হও নাদিয়া। ডাক্তার যখন হয়েছ মৃত্যুকে মেনে নিতে হবে। আবেগ এখানে অচল। যাও ডেথ সার্টিফিকেট লিখার ব্যবস্থা কর।“ নাদিয়া অনেকক্ষণ থেকেই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু চোখের সামনে ফুটফুটে শিশুটির মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। বাচ্চার মা কেমন পাথরের মত বসে আছেন। নাদিয়ার মনে হচ্ছে সে নিজে যেন মায়ের কষ্ট টা অনুভব করতে পারছে। শফিক স্যার এর কথায় টনক নড়ল তার। স্যার এর কথাই ঠিক। কিন্তু আবেগ তো তার নিয়ন্ত্রণে না। এই যে জয়েন করার কয়েকদিনের মাথায় স্যার এর ব্যক্তিত্ব তাকে মুগ্ধ করেছে এই মুগ্ধতা কি তার হাতে ছিল? কেমন গম্ভীর একজন মানুষ। হাসেনও যেন মেপে মেপে। ভারী কণ্ঠস্বরে যখন কথা বলেন তখন শুনে যেতেই ইচ্ছে করে শুধু। এত যত্ন করে দিয়ে আসা কাজল তো কান্না করেই নষ্ট করে ফেললাম! অবশ্য তাতেই কি, উনার কি আর এসব নজরে আসবে? সে ভাল করে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে নিয়ে স্যার কে দেখাল। “মন ভাল হয়েছে তোমার?” শফিক জিজ্ঞেস করল। “জী স্যার।“ বলে সার্টিফিকেট টা দেখাল। শফিক কিছু জিনিস ঠিক করে দিল। “ফ্রেশ হয়ে আস ওয়াশ রুম থেকে, কেঁদে কেটে মেয়ের কি অবস্থা। তারপর ঠিক করে আরেকবার লিখে নিয়ে আসবে।“ মিনমিন করে জী স্যার বলে ওয়াশ রুম এ গেল নাদিয়া। শফিক হাসল একটু। কয়েকদিন পর একটা রিপোর্ট দেখাতে শফিকের রুম এ আসল নাদিয়া।দরজায় নক করতে যাবে তখন শুনল ভেতরে শফিক আবৃত্তি করছে নিজের মনে। “তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই দেখ আমি সব কাজে মনোযোগ হীন সবখানে খাপছাড়া, তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে কিভাবে যে ক্ষয়ে গেছি অন্তরে বাহিরে, কিভাবে যে হয়ে গেছি নিঃস্ব রিক্ত, উদ্দামহীন,” নাদিয়ার বুকের ভেতর কেমন করে উঠে। কি গাড় বিষাদ স্যার এর কণ্ঠে। দীর্ঘদিন বুকে কিছু চেপে রাখলে তবেই কণ্ঠ থেকে এমন অশ্রু ঝরে। দরজায় নক করে ভেতরে ঢুকল নাদিয়া। “মহাদেব সাহার কবিতা না স্যার?” মুচকি হাসে শফিক,”তুমি কবিতা পড়?” “কবিতা আমার খুব প্রিয় স্যার” নানান কথা হতে থাকে তাদের মাঝে। হঠাৎ শফিকের মনে হয় এত কথা বলছে কেন সে মেয়েটির সাথে? আর কারও সাথে তো এমন হয়না তার। তবে কি মেয়েটি তার মনের কোথাও জায়গা করে নিচ্ছে? দিন গড়াতে থাকে। শফিক আর নাদিয়ার সখ্যতা সবারই একটু নজর কাড়ে।শফিক নিজেও বুঝতে পারে নাদিয়া তার প্রতি বেশ দুর্বল। শফিক ভাবে লুকোচুরি করার বয়স পার করে এসেছে অনেক আগে। শিলার কথা নাদিয়াকে জানিয়ে তার নিজের মনের কথা প্রকাশ করার সময় এসে গেছে। শফিক একদিন বাইরে দেখা করতে বলে নাদিয়াকে। নাদিয়া দুরু দুরু বুকে দেখা করতে যায়। অজানা আনন্দে আর শঙ্কায় তার মন দুলছে। কি বলবে স্যার? তার মনের কথা কি স্যার টের পেয়ে গেল? স্যার ও কি তাকে পছন্দ করে? এত গম্ভীর মুখোশের ভেতরের মানুষটাকে বুঝে উঠতে পারেনা সে। “বস নাদিয়া” কিছু না বলে পার্কের বেঞ্চে বসে পড়ে নাদিয়া। বুকের ভেতর ঢাক বাজছে যেন। “তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল নাদিয়া।“ “বলেন স্যার” “আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। খুব বেশি। মেয়েটির নাম ছিল শিলা। আমরা এক কলেজে পড়তাম। বেশ ভাল বন্ধু ছিলাম। খুব আগলে রাখতাম তাকে। কোন মলিনতাকে স্পর্শ করতে দেইনি তাকে কোনদিন। কিন্তু আমার এ ভালোবাসার মূল্য সে দেয়নি। ফিরিয়ে দিয়েছিল আমার সব আবেগকে। এরপর নিজেই নিজের মনের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ভেবছিলাম কখনও ভালবাসতে পারবোনা কাউকে। কিন্তু তুমি আচমকা সেই দরজা খুলে সেখানে জায়গা করে নিয়েছ। বুঝতে পারছ আমি কি বলছি?” শফিক তাকিয়ে দেখে মেয়েটির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অঝরে। এত কাঁদতে পারে মেয়েটা। শফিক নাদিয়ার হাত ধরে আলতো করে। কাঁপছে হাত থরথর করে। নাদিয়ার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। একটু পর চোখ খুললে দেখবে সে নিজের রুমে। চোখ বন্ধ করে সে বলতে থাকে “স্বপ্ন না হোক , এ স্বপ্ন না হক” কি বলবে সে শফিক কে? সে তো ছাই স্যার এর মত এত গুছিয়ে কথাও বলতে পারেনা। স্যার কি বুঝতে পারছেনা তার মনের কথা? তার চোখের দিকে তাকালেই তো বুঝে যেতেন। তা না, উনি মুচকি হাসছেন! শফিক বলে উঠে, “তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি? মধ্য রাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি? একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা কেমন যেন বিষাদ হবি? প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায় কথা দিয়েও না রাখার এক কথা হবি? তুই কি একা আমার হবি? তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?” নাদিয়া শফিকের হাত শক্ত করে ধরে রাখে। কেউ কোন কথা বলেনা। মৌনতাই মাঝে মাঝে সব কথা বলে যায়।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

তুমি বুজলেনা আমায়

বাংলা গার্ল ফটো

তুমি বুজলেনা
এই হৃদয় জুড়ে
রয়েছে শুধু তোমারি ছবি...

তুমি শুনলে না
এই মনের প্রতিটি ছন্দে
জড়িয়ে রয়েছে শুধু তোমারি কথা...

তুমি বললেনা
কতটা আমায় তুমি
আজো ভালোবাসো...

তুমি জানলেনা
আমার লুকানো হাসিতে
রয়েছে কান্নার দল...

তুমি খুজলেনা
তোমারি মনের ক্যানভাস এ আমারি ছবি
তুমি আজো অনুভব করলেনা
কতটা আমি তোমায় ভালবেসেছি

সোমবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৪

ফিরে পাওয়া ভালবাসা

sundori meyeder photoলিখেছেন- টাইটান অব স্যাটার্ন


- এই যে মিস্টার ! আপনি কি চোখে দেখেন না ?
- কি হয়েছে ?
- নিচের দিকে তাকান !
নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার এক পা কাদার মধ্যে আর সেই কাদা ছিঁটে মেয়েটার ড্রেস ময়লা করে দিয়েছে । বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটার সময় কখন যে কাদার মধ্যে পা দিয়ে দিয়েছি খেয়াল করি নি । মাথা তুলে তাকালাম মেয়েটার দিকে । একটা ভেংচি দিয়ে মেয়েটা চলে গেল , একবার স্যরি বলার সুযোগ ও পেলাম না ! এভাবেই মেয়েটার সাথে আমার প্রথম দেখা ফার্মগেটের এক ব্যস্ত রাস্তায় ...
ভার্সিটি ভর্তি কোচিং এর প্রথম ক্লাস ছিল সেদিন । এই ঘটনার পর বন্ধুদেরকে বিদায় বলে কোচিং করতে গেলাম । ক্লাসে ঢুকে দেখি টিচার ভাইয়া এসে পড়েছেন আর প্রত্যেকটা বেঞ্চ পূর্ণ । ভাইয়া আমাকে একদম পিছনের একটা বেঞ্চে যেতে বললেন যেখানে শুধুমাত্র একটা মেয়ে বসা ছিল । পিছনে গিয়ে বসতে যাব তখন দেখি এই মেয়েটা হল সেই মেয়েটা যার ড্রেস একটু আগে আমি ময়লা করে দিয়েছি ! একবার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই চুপচাপ বসে পড়লাম ।
ভাইয়া ক্লাসের শুরুতে নিজের পরিচয় দিলেন আর এর পর একে একে সবার নাম জিজ্ঞাসা করলেন আর এভাবেই আমি জানতে পারলাম যে মেয়েটার নাম অহনা । ক্লাস শুরু করলেন ভাইয়া , ম্যাথ ক্লাস ছিল সেদিন । খাতায় নোট করছি এমন সময় অহনার দিকে তাকিয়ে বললাম ,
- একটু আগের ঘটনার জন্য স্যরি
- ব্যাপার নাহ্ ! আমি ও স্যরি
- আপনি কেন স্যরি বলছেন ?
- খারাপ ব্যবহার করার কারণে
- নাহ্ , দোষটা তো আমার
- ঐ বিষয় বাদ ! আপনি তাহলে রাফিন ?
- হ্যাঁ , আর আপনি অহনা ?
- হ্যাঁ , পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো
- আমার ও ভাল লাগলো
এভাবেই অহনার সাথে আমার পরিচয় নিছক এক দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে .....


অহনার সাথে পরিচয়টা খুব ভালভাবেই হয়েছিল যার কারণে প্রতি ক্লাসেই একটা মিষ্টি হাসি বিনিময় হত আর সামান্য কথাবার্তা । সামান্য কি আর সামান্য থাকে ? তার স্বভাব হল ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া । এভাবেই আমাদের কথা বলার হারও বৃদ্ধি পেতে থাকলো তবে তা শুধুমাত্র পড়ালেখার বিষয়ে অন্য কোন বিষয় নয় । একজন আরেকজনকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে ভালোই চলছিল সময়ের বয়ে চলা ।
একসময় পড়ালেখার সীমানা ছাপিয়ে পারিপার্শ্বিক কথাবার্তা ও শুরু হল আমাদের । ফোন নাম্বার ও বিনিময় হল দুইজনের মধ্যে । কোচিং না থাকার দিনগুলোতে ফোনে কথা হত একটু-আধটু । বুঝতে পারলাম আমাদের মধ্যে হয়তো বন্ধুত্বের একটা ভাল সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে গেছে । একদিন অহনাকে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম ,
- আচ্ছা অহনা আমরা কি বন্ধু হয়ে গেছি ?
চোখগুলো বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো অহনা ! তারপর বললো ,
- আচ্ছা তুমি কোন দেশের গরু আগে বল তো ? ডেনমার্ক না নিউজিল্যান্ড ?
- আমি গরু হতে যাব কোন দুঃখে ? আমি বাংলাদেশের মানুষ
- তোমাকে গরু বলবো না তো কি বলবো ( রেগে গিয়ে ) ? এতদিনে ও বুঝতে পারলে না যে আমরা খুব ভাল বন্ধু ।
- এত রাগ করার কি আছে , বুঝিয়ে বললেই তো হয় !
- গরু যে তাই বুঝিয়ে বলতে হয় !
এই কথা বলে অহনা চলে গেল , আজকে তাহলে ভালোই রাগ উঠেছে মেয়েটার । একটা ব্যাপার আজও বুঝতে পারলাম না মেয়েটা আমাকে গরু ডাকে কেন ? গরুর প্রতি অহনার আকর্ষণ বেশি মনে হয় .....


পড়ালেখার ব্যাপারে ব্যাপক পরিমাণে সিরিয়াস ছিল অহনা আর আমি ছিলাম এর উল্টো ! তবে ঐ মেয়ের সংস্পর্শে এসে আমিও খানিকটা সিরিয়াস হয়েছিলাম । ভালোই লাগতো মেয়েটার সাথে মিশতে , অনেক সহজ-সরল । ওর যে ব্যাপারটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করতো তা হল ওর কথা বলার ভঙ্গি । হাত নাড়িয়ে কেমন করে যেন কথা বলতো , আর আমি তা শোনা ও দেখা দুইটাই একমনে চালিয়ে নিয়ে যেতাম । রিকশা করে ঘুরতে অহনার খুব ভাল লাগতো । তাই মাঝে মাঝে ক্লাস শেষে দুইজন একসাথে ঘুরতে বের হতাম । একটা মেয়ে যে কত কথা বলতে পারে তা আপনি কখনোই বুঝতে পারবেন না যদি মেয়েটার সাথে না মেশেন ! তবে অহনার কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগতো । ওর খারাপ লাগা , ভাল লাগা , ওর স্বপ্ন , ওর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা এসব প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপ ফিরে পেত ওর কথার মাঝে । স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতে পারছিলাম যে আমি ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি । তারপর ও চেয়েছিলাম এই দুর্বলতা কাটাতে , কারণ প্রেম-ভালবাসা এসবের প্রতি কখনোই কোন আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখি নি অহনাকে । অযথা , বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা !
একজন বিখ্যাত লেখক বলে গেছেন যে , একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে যত ভাল বন্ধুই হোক না কেন , একসময় তারা একে অপরের প্রেমে পড়বে ! আমার ও ঠিক তাই হয়েছিল । অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও নিজেকে মানাতে পারি নি । অবশেষে বাধ্য হয়ে ঠিক করলাম যে , অহনাকে বলে দিব আমার ভালবাসার কথা .....


গত কিছুদিন ধরে শরীরটা খারাপ , কোচিং এ ও যেতে পারছি না । কিন্তু , সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এই কয়েকদিনের মধ্যে অহনা আমাকে একবার ও ফোন দেয়নি , আমি যে কোচিং এ যাচ্ছি না এই ব্যাপারে ওর কোন খেয়ালই নেই ! হতে পারে পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন এসব ভাবছিলাম তখনই অহনার ফোন ...
- হ্যালো !
- রাফিন তুমি কোথায় ?
- বাসায় ।
- প্লিজ , কোচিং এ আসো না তোমার সাথে জরুরী কথা আছে , প্লিজ !
- আসছি ।
তাড়াতাড়ি কোন রকমে নাস্তা খেয়ে অসুস্থ শরীরটা নিয়েই বের হলাম । ক্লাসে যে ঢুকলাম ঐদিকে অহনার কোন নজর নেই । কোচিং শেষে অহনার সাথে দেখা হল .....
- কি ব্যাপার ! কি এমন জরুরী কথা বল তো ।
- বলবো , বলবো অবশ্যই বলবো !
- হুম বল ।
- তুমি জানো আবির আমাকে প্রপোজ করেছে আর আমি একসেপ্ট করেছি । কি আশ্চর্যের ব্যাপার আমি আবিরকে পছন্দ করতাম , চেয়েছিলাম আমি আবিরকে প্রপোজ করবো অথচ আবির নিজেই করে দিল ! আবির আমাকে ভালবাসতো তা আমি জানতাম না ।
- তুমি আবিরকে ভালবাসতে ? কবে আবির তোমাকে প্রপোজ করলো ?
- হ্যাঁ , কোচিং এর প্রথম থেকেই আবিরকে ভাল লাগতে শুরু হয় কিন্তু কখন যে এই ভাল লাগা ভালবাসায় রূপ নিয়েছে বুঝতেই পারি নি । এক সপ্তাহ আগে আবির প্রপোজ করেছে একদম সবার সামনে । তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এতদিন বলি নি ।
- সত্যিই অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়েছি অহনা !
আমাদের কথার মাঝখানেই আবির এসে অহনাকে নিয়ে যায় । আসলেই জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ পেলাম আজকে ....


কিছু বলার আগেই সব এভাবে শেষ হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনা ও করি নি । আসলে মানুষ যা কল্পনা করে না , তা ই তার সাথে ঘটে ! যত চেষ্টাই করি না কেন অহনা কে আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না , এটা আমি ভালো করেই জানি । প্রথম ভালবাসা কোনদিন ভুলে থাকা যায় না । যখন অহনার কথা মনে হয় তখন কেন জানি অজান্তেই চোখটা ভিজে উঠে । সবকিছুর পর ও এই ভেবে আমি সুখী যে অহনা সুখে আছে এবং থাকবে । আবির যথেষ্ট ব্রিলিয়ান্ট একটা ছেলে , সবার ভাষ্যমতেও আবির অনেক ভাল একটা ছেলে । ব্রিলিয়ান্ট আর ব্রিলিয়ান্টে জুটি হয়েছে , একদম পারফেক্ট একটা জুটি !
ভর্তি পরীক্ষার আর একমাস বাকি । এখন আর অহনার সাথে আগের মত যোগাযোগ হয় না । অহনা ও ফোন দেয় না , আমিও না । বোঝা ই যাচ্ছে অহনা অনেক সুখে আছে । সুখে থাকলে বুঝি মানুষ সবকিছুই ভুলে যেতে পারে ! আর আমি তো অহনার কাছে কিছুই না । যোগাযোগ না হওয়াই ভাল , দূরে থাকলে মায়া কম থাকে । আর মায়ার বাঁধন বড় শক্ত বাঁধন সুতরাং এ মায়া না থাকাই ভাল ।
বেশ কিছুদিন ধরে পড়ালেখায় মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি । যেভাবেই হোক একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স তো পেতে হবে । পুরো পরিবারের আশা তো এভাবে আমি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারি না । পুরোপুরি মনযোগ হয়তো দিতে পারি না তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি । আমাকে যে পারতেই হবে .....


অবশেষে এডমিশন টেস্ট শেষ হল । নিজেকে আজ অনেক মুক্ত লাগছে । ভেবে ভাল লাগছে যে , আমার পরিশ্রম বৃথা যায় নি ! ঢাকায় কোথাও চান্স না হলে রাজশাহী ভার্সিটিতে চান্সটা হয়ে গেল । বাসায় সবাই ও খুশি !
অহনা আর আবিরের খোঁজটা নেওয়া দরকার । অহনা কে ফোন দেয়ার সুযোগ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে । ওদের রিলেশন শুরু হওয়ার দুইমাস পর আবির অহনা কে নিষেধ করে যেন সে আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না রাখে ! অহনা ও শেষমেশ আমাকে মেসেজ করে নিষেধ করে দেয় যেন আমি কখনোই ওর সাথে যোগাযোগ করার কোন প্রকার চেষ্টা না করি । এর পর থেকেই আমাদের মধ্যে সকাল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন । আবির যে অহনা কে নিষেধ করেছিল তা অহনা আমাকে বলে নি , পরে আমি তা জানতে পারি অহনার এক বান্ধবীর মাধ্যমে ।
কিছুদিন পর ....
অনেক চেষ্টার পর আবির আর অহনার খবর জানতে পারলাম । দুইজনের একজন ও কোথাও চান্স পায় নি । অহনা একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে আর আবির চেষ্টা করছে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার । এই খবরে তো আশ্চর্য হয়েছি ই সাথে সাথে আরেকটা খবরে বেশ মন খারাপ হল ! ইদানিং না কি আবির আর অহনার মধ্যে বেশ ঝগড়া চলছে । এরকম কিছু হবে তা কখনোই আশা করি নি । যতবার নামায পড়ি ততবারই আল্লাহর কাছে এটাই চাই যে ওদের মধ্যে যত সমস্যা আছে সব যেন ঠিক হয়ে যায় । ওরা যেন সবসময় ভাল থাকে , সুখে থাকে .....


টানা ছয় মাস পড়ালেখার পর্ব শেষে ঈদের ছুটিতে বাসায় আসলাম । অনেক দিন পর সব বন্ধুদের সাথে দেখা । বেশ আনন্দেই কাটছিলো সময়গুলো । সেদিন হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল অহনার বান্ধবী দিশার সাথে । আমি অবশ্য কখনোই চিনতাম না যদি ও ডাক না দিতো .....
- এই রাফিন !
- তুমি ?
- দিশা , চিনতে পেরেছো ?
- হ্যাঁ দিশা ! কেমন আছো ?
- এইতো ভাল , সবাইকে দেখি ভুলে গেছো ?
- আরেহ না , ভুলি নি । আসলে অনেকদিন ধরে দেখা হয় না তো ।
- তুমি কেমন আছো ?
- এইতো আছি একরকম ।
- পড়ালেখার কি অবস্থা ?
- হুম চলছে ভালোই । তোমার কি খবর ?
- এইতো বেশ আছি !
- দিশা , অহনা কেমন আছে ?
- থাক রাফিন , ওর কথা না শোনাই তোমার জন্য ভাল ।
- কেন ? কি হয়েছে ?
- মেয়েটার সাথে কি হয়নি সেটা জিজ্ঞেস কর ! প্রথমে তো ভার্সিটিতে চান্স পেল না । তারপর আবির ওকে ছেড়ে চলে যায় । দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর ও অহনার সাথে কোন যোগযোগ করে নি । শুধু একটা মেইল করেছিল এবং বলেছে ওকে ভুলে যেতে । একটা বন্ধুও এখন ওর পাশে নেই । সম্পূর্ণ একটা হয়ে গেছে মেয়েটা । এখনের অহনা আর আগের অহনা নেই রাফিন । একদম বদলে গেছে ।
- হুম ...
- আচ্ছা রাফিন তুমি না অহনাকে ভালবাসতে ?
- হুম !
- এখনো ভালবাসো ?
- হ্যাঁ ।
- তো বসে আছো কেন ? অহনাকে বলছো না কেন তোমার ভালবাসার কথা । হয়তো তোমার হাত ধরেই ও ওর নতুন জীবনটা শুরু করতে পারবে । প্লিজ রাফিন !
- আমি অহনার সাথে দেখা করবো ।
- আচ্ছা ঠিক আছে । আমি তোমাদের দেখা করিয়ে দিব । কোথায় দেখা করবে আমি সব ঠিক করে তোমাকে জানাবো । এবার আর কোন ভুল কর না রাফিন ।
- না , এবার আর কোন ভুল নয় ।
- তুমি পারবে ! আচ্ছা আমি এখন চললাম । তোমার নাম্বার আমার কাছে আছে । আমি সব জানাবো সময়মত ।
- ওকে , আবার দেখা হবে ।
কি থেকে কি হয়ে গেল ? মাথায় কিছুই কাজ করছে না .....

.
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি । অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হল , দিশা আর অহনা আসলো । তোমরা কথা বল , এই কথা বলে দিশা সরে গেল .....
- ভাল আছো , অহনা ?
- হ্যাঁ , তুমি ?
- মিথ্যা বলছো কেন ? আমি জানি তুমি ভাল নেই ।
- আরেহ না , ভাল আছি তো ।
- আমি সব জানি । আবির তোমার সাথে এরকম করবে তা আমি কখনো স্বপ্নে ও কল্পনা করি নি !
- তাহলে তো দেখছি সব জেনেই গেছো ।
- দিশা যদি না বলতো তাহলে কখনোই জানতাম না ! কোন দিন তো যোগাযোগ ও করো নি ।
- কোন মুখ নিয়ে যোগাযোগ করতাম ? যে মুখ দিয়ে তোমার মত ভাল বন্ধুকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম ?
- আমি কিন্তু দূরে সরে যাই নি , তোমার পাশেই ছিলাম । কিন্তু , এখন শুধু বন্ধু হয়ে নয় আরো বেশি কিছু হয়ে তোমার পাশে থাকতে চাই !
- মানে ?
- আমি তোমাকে ভালবাসি , অহনা !
- করুণা দেখাচ্ছো ?
- যদি করুণা দেখাতে হত তাহলে এতদিন ধরে ভালবেসে আসতাম না ।
- কি ?
- আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি । একদম কোচিং এর শুরু থেকেই । কিন্তু তা আর বলার সুযোগ পাই নি । এখন সুযোগ পেয়েও আমি আবার তোমাকে হারাতে চাই না । প্লিজ , অহনা !
- আমার ভয় করে যদি আবার কষ্ট পেতে হয় ?
- আমাকে বিশ্বাস করতে পার , কোনদিন কষ্ট পাবে না । হাতে হাত রাখবে ?
- হাতটা তো আগে বাড়াবে !
এই কথা বলে হাসতে শুরু করলো অহনা । আমিও অহনার হাতটা শক্ত করে ধরলাম , আর কোনদিন ছাড়বো না এই হাত .....
( সমাপ্ত

রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৪

নাম দিয়েছি ভালোবাসা

প্রেমের কবিতা,কবিতা,ভালবাসার কবিতা

আমরা মিশিনি ভালোবেসে সব
মানুষ যেভাবে মেশে,
আমরা গিয়েছি প্রাজ্ঞ আঁধারে
না-জানার টানে ভেসে।

ভাসতে ভাসতে আমরা ভিড়িনি
যেখানে নদীর তীর,
বুনোবাসনার উদ্বেল স্রোতে
আশ্লেষে অস্থির।

আমরা দুজনে রচনা করেছি
একে অপরের ক্ষতি,
প্রবাসী প্রেমের পাথরে গড়েছি
অন্ধ অমরাবতী।

আমরা মিশিনি বিহবলতায়
শুক্রে-শোণিতে-স্বেদে,
আমাদের প্রেম পূর্ণ হয়েছে
বেদনায় বিচ্ছেদে/.

স্বাস্থ্যকর যৌন জীবনের জন্য

মেয়েদের স্বাস্থ্য যৌন সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত পাচ্ছি ফোন কল, চেম্বারে আসছেন ভুক্তভোগীরা। এদের মাঝে শতকরা ৯৯
ভাগই পুরুষ। সকলেই কমবেশি একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। প্রত্যেকেই মনে করেন তার সমস্যা আর কারো হয় না এবং এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। দুসচিন্তার কারনে শারীরিক সমস্যার থেকে বড় হয়ে দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। অথচ কিছু সাধারণ খাবারেই আছে অধিকাংশ যৌন সমস্যার ভালো সমাধান।

সমস্যায় পড়লে আমরা ওষুধের মাঝে খুঁজি মুক্তি, অথচ আশেপাশের কত খাবারে যে রয়েছে জাদুকরী কেরামতি সেটা আমরা জানি না।

সবুজ শাকপাতা দিয়ে শুরু করা যাক। দেশি সবুজ শাক, পালং শাক, লাল শাক ইত্যাদি পাতা অবহেলা করবেন না। ব্রুকলি, স্পিনেচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি এসব সবজীতে রয়েছে ভিটামিন বি সহ অন্যান্য এন্টি অক্সিডেন্ট যেগুলো সুস্থ যৌন জীবনের জন্য অপরিহার্য।

ডিম খাবেন। ডিমে পাবেন শরীরের বৃদ্ধির জন্য আমিষ এবং বিভিন্ন ভিটামিন। সুস্থ যৌন জীবন যাপনে আমিষের প্রয়োজন রয়েছে। আমিষ ছাড়া দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণ হয় না।

প্রতিদিন ফল খেতে হবে। দেশি টক ফল খেতে পারেন। লেবু, বাতাবি লেবু, কমলা লেবু, মাল্টা ইত্যাদি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল প্রয়োজন প্রতিদিন। গরমের দিনে খাবেন তরমুজ। তরমুজে রয়েছে মহা উপকারী এক রাসায়নিক সিট্রুলিন; পুরুষের জন্য যার ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। দেশি জাম, বিদেশি স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলেও রয়েছে এধরণের গুণাবলী।

চা পান করবেন প্রতিদিন। দিনে এক বা দুই কাপ চা পান করলে দেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট যারা পুরুষের নানা সমস্যার সমাধানে সিদ্ধহস্ত।

পুরুষের সক্ষমতার পেছনে জিঙ্ক বা দস্তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। মাংসে পাবেন জিঙ্ক। অনেকেই খাবারের মেনু থেকে প্রাণীজ আমিষ তথা মাংস বাদ দিয়ে দেন, এটা ঠিক না। মাংস খাবেন পরিমিত পরিমাণে। এর সাথে সুষম খাদ্য দুধ পান করবেন। দুধেও পাবেন জিঙ্ক।

নিয়মিত বাদাম খাওয়া খুব ভালো একটা অভ্যাস। বাদামের তেল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। এটা পুরুষদের জন্য খুব উপকারী। দেশি বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি যেকোনো বাদামেই এই উপকার পাবেন। বাদামে আরো রয়েছে ভিটামিন ই যার সুনাম রয়েছে বার্ধক্যের সাথে যুদ্ধে।

সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যা সুস্থ জীবনের অন্যতম উপাদান। জাতীয় মাছ ইলিশ এই ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডে ভরপুর, অন্যান্য সামুদ্রিক মাছেও পাবেন প্রচুর পরিমাণে এই তেল। মাছে আরো রয়েছে আরজিনিন নামে একধরনের যৌগ যার একটি কাজ হচ্ছে পুরুষদের সক্ষমতায় সহায়তা করা।

চকোলেটের মাঝে ডার্ক বা কালো রঙের চকোলেটে রয়েছে ফেনথায়লামিন নামের রাসায়নিক পদার্থ যা বাড়তি উদ্দিপনা যোগায় শরীরে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই খাবারগুলো আমরা সহজেই পেতে পারি হাতের নাগালে। একটা কথা মনে রাখবেন, পুরুষদের অধিকাংশ যৌন সমস্যা আসলে কোন সমস্যা নয়, আত্মবিশ্বাসের অভাবই মূল কারণ। নিজের ওপরে আস্থা রাখুন আর স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। সুখী দাম্পত্য জীবনের স্বাদ গ্রহণ করুন সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে।

মেয়েদের কন্ডোম হয় নরম কিন্তু কঠিন

মেয়েদের কন্ডোমমেয়েদের ব্যবহারের জন্য কন্ডোম হয় নরম কিন্তু কঠিন, স্বচ্ছ আচ্ছাদন।মেয়েদের শরীরের ভিতরে এটি
রাখতে হয়।তার ফলে শুক্রাণু ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না,বাধার সৃষ্টি করে। অবশ্য আরও একটা উপকারে লাগে এবং তা হল সেক্সুয়ালি সংক্রামিত অসুখগুলি থেকে রক্ষা করে।এই আচ্ছাদনটি সিলিকন দিয়ে আগেই পিচ্ছিল করে রাখা হয়।একটিমাত্র কন্ডোম একবারই ব্যবহারযোগ্য, সব বয়সে ব্যবহার করা যায়।পুরুষেরা যেখানে কন্ডোম ব্যবহার করতে চান না বা গর্ভনিরোধক বড়ি যদি মহিলার সহ্য হচ্ছে না দেখা যায়,তাহলে মহিলাদের জন্য তৈরি কন্ডোম ব্যবহার করা যেতে পারে।এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পলি ইউরেথেন দিয়ে তৈরি,সেইভাবে কোনও অ্যালার্জির খবর পাওয়া যায়নি।

পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে এই ফিমেল কন্ডোম নিয়ে পড়াশোনা হয়েছে। ভারতেও HIV AIDS নিয়ে যত প্রোগ্রাম হয়েছে তাতে এই কন্ডোমের কথা আলোচিত হয়েছে।সমস্যা একটাই — আমাদের দেশে মেয়েদের ওপর আর কত বোঝা চাপানো হবে? আর নিজেদের জন্য নিত্যনতুন ব্যবস্থার কথা ভাবার সময় আজকের মেয়েদের কি আছে? তবে পশ্চিমবঙ্গে ফিমেল কন্ডোমের ব্যবহার তেমন নেই বা এ নিয়ে তেমন হৈ চৈ কিছু হয়নি। তার তুলনায় অন্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয় বেশি। যেহেতু জরায়ুর মুখ (Cervix) আর প্রসবদ্বারের সংক্রমণ মেয়েদের জননস্বাস্থ্যের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে, সেহেতু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চেক-আপ করিয়ে তবে এই পদ্ধতি নেওয়া দরকার।

কন্ডোমের সুবিধা

১) সহজলভ্য

২) নিরাপদ ও স্বল্পমূল্যের

৩) সহজে ব্যবহার করা যায়

৪) ডাক্তারি উপদেশ ও তত্ত্ববধান লাগে না

৫) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই

৬) হালকা, ছোট ও সহজে ফেলে দেওয়া যায়

৭) HIV AIDS থেকে সুরক্ষা দেয়

কন্ডোমের অসুবিধা

১) ঠিকমত ব্যবহার না করতে পারলে ছিঁড়ে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে

২) শারীরিক মিলনে কারও কারও অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ হতে পারে

কন্ডোম ভারতে তৈরি হয় চেন্নায় এবং তিরুঅনন্তপুরমে।

ডায়াফ্রাম

ডায়াফ্রাম মহিলাদের প্রসবদ্বারে বাধা হিসাবে কাজ করে,যার ফলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘততে পারে না। ১৮৮২ সালে এক জার্মান চিকিৎসক এটি আবিষ্কার করেন।ডায়াফ্রাম একটি অগভীর পেয়ালার মত দেখতে,তৈরি হয় কৃত্রিম রবার বা প্লাসটিক দিয়ে।এর ব্যাস হয় ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার,এর নিচের দিকে একটি নমনীয় স্প্রিং জাতীয় জিনিস লাগানো থাকে।বিভিন্ন মহিলার ডায়াফ্রাম হবে বিভিন্ন সাইজের, সাইজটি মহিলাকে পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে হয়।শারীরিক মিলনের ঠিক আগে মহিলাকে ডায়াফ্রাম পরে নিতে হবে এবং তারপরেও আরও ৬ ঘণ্টা পরে থাকতে হবে। ডায়াফ্রামের সঙ্গে সব সময় ব্যবহার করতে হয় স্পার্মিসাই(শুক্রাণুনাশক) জেলি।এর মুশকিল হল এটি কেমন করে পরতে হবে তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে একজন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ দরকার।তা ছাড়া পরা,খোলা,রাখা ইত্যাদি ঝামেলার জন্য আমাদের দেশের মহিলাদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা একেবারেই নেই।

স্পঞ্জ

কয়েকশো বছর আগে নারীশরীরে ভিনিগার বা অলিভ অয়েলে ভেজানো স্পঞ্জ রেখে সন্তানসম্ভাবনা আটকাবার চেষ্টা করা হত।কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা সাফল্য লাভ করত না।পরে এই পদ্ধতিকে ভিত্তি করে আমেরিকায় Today নাম দিয়ে এক ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা চালু হয়।একটি ৫ সেন্টিমিটার x ২.৫ সেন্টিমিটার পলি ইউরেথেন ফোম ভেজানো থাকে নোনো জাইনল-নাইন নামক স্পারমিসাইডাল দিয়ে।এই পদ্ধতি যে ১০০ ভাগ কার্যকরী তা মোটেই বলা যায় না।তবে একথা অনস্বীকার্য,যে কোনও জন্মনিয়ান্ত্রণ ব্যবস্থাই না নেওয়ার থেকে যা হোক কিছু ব্যবহারেরও কিছু সুফল আছে।

কেমিক্যাল মেথড

১৯৬০ সালের আগে,যখন ওরাল পিল ও লুপ বা কপার-টির এত বহুল ব্যবহার প্রচলিত হয়নি,তখন ভ্যাজাইনাল কেমিক্যাল কন্ট্রাসেপটিভের খুব চল ছিল।এগুলিও স্পারমিসাইভাল,অর্থাৎ শুক্রাণুকে মেরে ফেলাই এদের কাজ।এগুলি নানাভাবে ব্যবহৃত হত যেমন ফোম,ক্রিম,জেলি, পেস্ট,সাপোজি,সলিউবল ফিল্ম ইত্যাদি।এই পদ্ধতির কিছু অসুবিধা আছে যেমন অসাফল্যের হার খুব বেশি। শারীরিক সম্পর্কের অব্যবহিত আগে ব্যবহার করতে হবে,ব্যবহাএ বিশেষ সতর্কতা দরকার।কারও কারও একটু জ্বালা বা অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ হতে পারে।এইসব কারণে এর ব্যবহার আজকাল উঠে গেছে,বিশেষজ্ঞরাও আর স্পারমিসাইভালের পরামর্শ আজকাল দেন না।

লুপ, কপার-টি CU-T)

(ইউটেরাসের আভ্যন্তর গর্ভনিরোধক)

১৯২৮ সালে জার্মানিতে ভন গ্রাফেনবার্গ জরায়ুর মধ্যে রুপোর রিং লাগিয়ে গর্ভনিরোধের চেষ্টা করেন্।কিন্তু তাতে ইউটেরাসে প্রদাহ ও অন্য নানারকম উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।পরে প্লাস্টিক শিল্পের খুবই অগ্রগতির কারণে উন্নত মানের পলিথিন রিং ব্যবহার করা যায় কিনা এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়।১৯৫৯ সালে ডা:মারগুইলি একটি খুব সরু পলিথিনের সাহায্যে একটি ছোট্ট প্লাস্টিকের রিং জরায়ুতে ঢুকিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন।১৯৬২ সালে আমেরিকা থেকে ডা:লিপ্পি একটি পলিথিনের লুপ জাতীয় জিনিস আবিষ্কার করেন যার নিচে খুব সরু চুলের মত দুটো ল্যাজ জারায়ুর মুখ থেকে বেরিয়ে থাকে।এই উপকরণ যতদিন জরায়ুর মধ্যে দেওয়া থাকবে ততদিন গর্ভসঞ্চার হবে না। তবে এ কথা মানতেই হবে যে,এই পলিথিনের লুপ ঠিক কিভাবে গর্ভ নিরোধ করে তা নিয়ে একাধিক থিওরি আছে।বলা যেতে পারে‚ এইটি জরায়ুর ঝিল্লিতে বা মাংসপেশিতে এমন কিছু বদল আনে যে উর্বর ডিম্বাণু (fertilised ovum) জারায়ুতে এলেও স্থাপিত হয়ে বাসা বাঁধতে পারে না।লুপের চেয়ে আরও উন্নততর ব্যবস্থা হল কপার-টি।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
সুপারিনটেনডেন্ট, কলকাতা পুরসভা হাসপাতাল
ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট – ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া

যে বিষয়গুলো আপনার কন্যাকে অবশ্যই শেখাবেন

সুন্দরী মেয়ে টিনএজ- সময়টাই অন্যরকম! স্বপ্ন দেখার বয়স, স্বপ্নে ওড়ার বয়স, ভুল করার বয়স, ঠেকে ঠেকে শেখার
বয়স। টিনএজের সময়টা যেদিকে পথ পায় ঢেউয়ের গতিতেই সেদিকে এগিয়ে চলে।

বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা কম থাকে বলে এ সময়ের স্বপ্নগুলোও হয় বড় বেশি আনাড়ি! তাই এ সময়ের করা কিছু ভুল জীবনে নিয়ে আসতে পারে বড় ধরনের দুর্ভোগ। তাই এ সময়ে প্রয়োজন বিশেষ দিক নির্দেশনার। এই দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের ওপরেই বর্তায়। বিশেষ করে বাবা-মা'র ওপরে।টিনএজের ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই প্রয়োজন ভালো-মন্দ বোঝানোর।

একজন উঠতি বয়সী মেয়ে যেন নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে বড় হতে পারে, তা অনেকখানি নিশ্চিত করবে এ বিষয়গুলো।

অটুট থাকুক ভবিষ্যতের লক্ষ্য :

একজন ভালো সন্তান, ভালো স্ত্রী, ভালো মা হবার পাশাপাশি একজন ভালো ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রেরণা দিন তাকে। সে জীবনে কী করতে চায় বা কী হতে চায়, তার জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত এ ব্যাপারে তাকে দিক নির্দেশনা দিন। তাকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করুন।

পরিবার সবার আগে :

টিনএজের মেয়েরা ঘরের চেয়ে বাইরের লোকেদের কথা অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মেয়েকে এটা অনুভব করান যে, একটা মানুষের জন্য পরিবার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। মূলত একজন নারীই থাকেন পরিবারের শেকড় হিসেবে। মেয়েকে বোঝান, তারও একসময় নিজের পরিবার হবে, সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখা, তাদের গুরুত্ব দেয়া - এ সবকিছু মেয়েকে শিক্ষা দেয়া একজন মায়ের অন্যতম দায়িত্ব।

কিছু ব্যাপার গোপন থাক :

মেয়েকে নিজের ব্যাপারে কিছু গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলুন। বিশেষ অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত লোকদের কাছে। আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কল্যাণে খুব সহজেই মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে। আপনার টিনএজ কন্যাটি যেন কোনো সাইবার ক্রাইমের শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাকে বলুন, নিজের ফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা বা এমন কোনো তথ্য কাউকে না জানাতে যাতে সে বিপদে পড়ে। তার ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য যতটা সম্ভব কম লোকজনকে জানাতে বলুন।

সবার জীবনে প্রেম আসে :

সবার জীবনেই প্রেম আসে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনি যখন একজন টিনএজ কন্যার মা, তখন আপনাকে এটা মেনে নিতেই হবে যে, আপনার মেয়েরও কাউকে ভালো লাগতে পারে।টিনএজ বয়সটাই হলো অল্পতেই ভালো লাগার বয়স! বিশেষ করে এ সময়টাতেই মেয়েদের আগ্রহ জন্মায় ছেলেদের প্রতি। এই আগ্রহ জন্ম দেয় বিশেষ একজনকে ভালো লাগার। কিন্তু ভালোলাগা আর ভালোবাসা যে এক নয়, তা বোঝার মতো বোধবুদ্ধি থাকে না এ সময়। তাই অনেক মেয়েই ভালোলাগাকে ভুল করে ভেবে বসে ভালোবাসা!

মেয়েকে এটাই বোঝান যে, ভালোলাগা এবং ভালোবাসা এক নয়। আর যদি প্রেম হয়েও যায়, তাকে চাপ প্রয়োগ না করে এটাই বোঝান যে, প্রেম জীবনের সবকিছু নয়, বরং জীবনের একটা অংশ মাত্র! তাই এর পেছনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সময় ব্যয় করা মানে নিজেরই ক্ষতি করা। সাথে এটাও বুঝিয়ে বলুন যে, নির্দিষ্ট সময় এলে সে তার জন্য একজন ভালো সঙ্গী পাবেই।

শারীরিক সম্পর্কের নেতিবাচক দিক :

মায়েরা মেয়ের সাথে এ বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করেন। অথচ এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ সাধারণত টিনএজ বয়সের মেয়েরাই চিন্তাভাবনা না করে আবেগের বশে প্রেমিকের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। মেয়েকে অসময়ে বা অপরিণত বয়সে শারীরিক সম্পর্কের কুফল সম্পর্কে জানান, তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করুন। এর ফলে হওয়া শারীরিক সমস্যা, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, অকাল গর্ভপাত ইত্যাদির নেতিবাচক দিক সম্পর্কে অবহিত করুন।

পুরুষদের প্রলোভনের ফাঁদ :

টিনএজ একটি কমনীয় বয়স, নমনীয় সময়। মেয়েরা এ সময় থাকে সরল, এ সময়েই মেয়েরা তাদের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হয়। ফলে কেউ তাদের রূপের প্রশংসা করলে সহজেই অভিভূত হয়। অনেক পুরুষই এর ফায়দা লোটে। সরলতার সুযোগ নেয়। আপনার মেয়েকে পুরুষদের প্রলোভনের ফাঁদ সম্পর্কে অবহিত করুন। তাকে সতর্ক করুন পুরুষদের কুটিল মানসিকতা সম্পর্কে।

একটি লাভ লেটার ও ভালবাসার কাহিনী

প্রেমের গল্পলিখেছেন-শান্তনু চৌধুরী

রাইসা কাঁদছে । যাকে বলে অঝরে কাঁদতে থাকা । কিন্তু তাতে কারো কিছু আসে যায় না । রুমটি বাহির থেকে বন্ধ । ১৬ তে পা দিবে দিবে মেয়েটির ব্যাগে যদি তার মা লাভ লেটার পায় তাহলে এটা করাটাই তো স্বাভাবিক ।
.
কিন্তু টিন এইজের একটা মেয়ের মাথায় এই যুক্তিই বা কেন কাজ করবে ?
.
পরনে এখনো স্কুল ড্রেস । কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলেছে । আর কিছুক্ষণ পর তার জন্মদিন । সে ঠিক করেছিলো কাল স্কুল পালিয়ে সারাদিন রবির সাথে ঘুরবে । প্রথম ভালবাসার হাত ছুঁবে ।
.
আশাটা অপুর্ণ থাকলো ।
.
খট খট খট খট খট
.
রাইসা আধবোজা নয়নে তাকালো জানালায় , রবি ! জানালার ওপাশের খোলা বারান্দার , গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে । অজানা এক ভয়ে দৌড়ে এলো বারান্দায় ।
.
তিনতলায় উঠলে কেমনে ? এত রাতে কেন এসেছো ? জানো বাসায় চিঠিটা পেয়ে গেছে ?
.
সুসস
.
রাইসা চুপ হয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো
.
এত প্রশ্ন করছো কেন ? এসেছি এটাই তো বড় কথা । জানতো আজ তোমার জন্মদিন ?
.
বিস্ময় তার চোখে মুখে , এত দুঃখে সে সবই ভুলে গেছে ।
.
আলতো করে হাত ছুঁলো রাইসার । আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ বুজে ফেলল সে । স্রষ্টাকে শত কোটি ধন্যবাদ একটা মানুষ আর একটা মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারে না বলে । না হলে রবির সামনে সে লজ্জায় সে মরেই যেত ।
.
চোখ বুজে আছে সে , অনুভব করলো তার শুকিয়ে আসা অশ্রু গুলো এক হাতে মুছে দিচ্ছে রবি । হাতটা তার ঠোঁটের উপর এসে থামনো । রাইসা চোখ খুলবার সাহস করলো না । বুক থরথর কাঁপছে ।
.
মেয়ে চোখ খুলো , আমাকে দেখো
.
না ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালো রাইসা । রবি হাসলো । চোখ বুজে থাকলেও রাইসা বুঝতে পারছে রবির মাথাটি আস্তে আস্তে তার দিকে ঝুকে পড়ছে ।
.
কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো সে । এবার রাইসা চোখ খুলল । এক জোড়া মায়াময় চোখ তারদিকে তাকিয়ে আছে ।
.
তোমার জন্য কবিতা একটা লিখেছি , শুনবে ?
.
হাসলো সে , মাথা ঝাকালো , শুনবে । ছোট একটা পৃষ্টা বেরুলো রবির পকেট হতে ।
.
.
.
.
তোমার চোখে আছে এক মায়া
যেন কালো কাজলে রাঙিয়েছে এক সুন্দরীতমা
.
চশমা পড়া , সিল্কি চুল
হাসিতে বেলুনছড়া হয়েছে সুমধুর ,
প্রান্ত থেকে প্রান্ত ভরে গেছে ফুলে
তারই এক বিন্দুতে আছো পাপড়ির আড়ালে
.
মেয়ে তুমি শুনছো ?
তুমি বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপদেখার অনুভূতি ,
তুমি আলোকিত চাঁদ
একটি নিটোল স্বপ্নের নীলভ ভাজ ,
.
কখনো মনে হয়
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"
.
এতসব ভাবনার মাঝে ভাবনা সাজাই
কাব্যের পন্ক্তিতে ভেলা ভাসাই
সবই এসেছে এক বিশেষ দিনে,
তুমি জানো ?
এ ছিলো তোমারই জন্মদিনে
.
.
.
.
রবি খেয়াল করেনি , যখন সে কবিতা পড়ছিল রাইসার চোখ বেয়ে আবার শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরছিলো , এবারেরটা উৎস ছিল এক অপ্রকাশিত সুখ ।
.
.
রবি কবিতা পড়া শেষ করে তাকালো তার দিকে । মেয়েটা ছুটে এসে তার ঠোঁটজোড়া চিপসে দিলো তার ঠোঁট দুটো ।
.
রবি তার চোখে মুখে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করছে । মেয়েটাকে ভালবাসে সে , কখনো তাকে ছাড়বে না ।
.
না ছড়বে না ।
.
যেন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করছে ।
.
.
.
.
.
২০ বছর পর
.
রাইসা তার মেয়ের ব্যাগ থেকে চিঠিটা পেল । রাফা থর থর কাঁপছে । যা ভাবলো তাই মেয়েটা লাভ লেটার পেয়েছে ।
.
রাফা অবাক হয়ে দেখলো মার মুখটি অস্বাভাবিক শান্ত রূপ ধারণ করেছে ।
.
"রুমে যাও " গলাটা কেঁপে উঠলো ।
.
রাফা ভুল দেখলো কি না বলতে পারছে না । মায়ের চোখে ছলছল করছিলো ।
.
রাইসা অনেকদিন পর তার পুরানো এলবামটা খুলল । ছবির নীচ থেকে কাগজ দুটো বেরুলো ।
.
প্রিয় রাইসা
কাল তোমার জন্মদিন । তোমাকে কতটা ভালোবাসি তা ইনিয়ে বিনিয়ে লিখা আমার দ্বারা সম্ভব না । তাই লিখছি না । তবে একটা কবিতা লিখেছি । কাল তোমার শোনাবো । তুমি শুনবে তো ?
.
তোমার রবি
.
.
.
রবি আজ বেঁচে নেই , সেই রাতে তিনতলা থেকে নামতে গিয়ে পা ফসকে যায় । হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে । সে মরে গেলেও তার স্মৃতির পৃষ্টাগুলো আজো তার মনে সাড়া ফেলে ।
.
আজ সে তার মেয়ের মাঝে সে ২০ পুরানো রাইসাকেই যেন দেখছে ।
.
রাফার চিঠিটা টেবিলে রেখে এসেছে । বাহিরে অনেক বৃষ্টি । আজ কেন যেন সেই বূষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছা করছে । হয়তো চোখের পানিটা লুকানো যাবে বলে ।
.
বিড়বিড় করছে রাইসা
.
তুমি সজীব কবিতা ,
চির ঝংকৃত সুরের কিছু ছন্দের দ্যোতনা ,
শিল্পীর আঁকা একটি জীবন্ত ছবি
তোমার চোখে লিখা আছে আমারই নাম
"রবি"

সবচেয়ে বড় যৌন পল্লীর মেয়েদের খবর

অপরাধ, জোন পল্লী যৌন পল্লীর মেয়েরা ভালো নেই। দেশের সবচে বড় যৌন পল্লী দৌলতদিয়া এবং ফরিদপুর শহরের
রথখোলা যৌন পল্লী ঘুরে পাওয়া গেছে সুদের টাকা,মাদক, গরু মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট,স্থানীয় মাস্তান এবং পুলিশ তাদেরকে ভালো থাকতে দেয়নি। এখানে বয়স দেহের গঠন এবং আকর্ষণ অনুসারে একজন খদ্দেরের কাছ থেকে একজন যৌনকর্মী পায় ২শ থেকে ৫শ টাকা। এক রাতে একজন খদ্দেরের কাছ থেকে পায় ৮শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। কখনও তার চেয়ে বেশী। বেশ ভালো আয় আছে এদের। কোন কোন যৌনকর্মী মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে।
তারপরও ভালো থাকে না এরা। যৌন পল্লী ঘিরে প্রভাবশালী কিছু সুদখোর মহাজন আছে। তারা এখানে চড়াসুদে টাকা খাটায়। পুলিশের সঙ্গে যোগসাজসে এরা টার্গেট করে বিপদে ফেলে যৌনকর্মীদের। আইনের মারপ্যাচে ফেলে টাকা দিতে বাধ্য করে পুলিশ এবং স্থানীয় মাস্তানদের। অনেক সময়ই যৌনকর্মীদের ঘরে বেশী নগদ টাকা থাকে না। সে সময়ে নগদ টাকা ঋণ দিতে এগিয়ে আসে সুদখোর মহাজনরা। তারা সুদে টাকা দিয়ে তাৎক্ষনিক বিপদ থেকে উদ্ধার করে যৌন কর্মীদের। সুদের পরিমান দিনে একহাজার টাকায় ১শ টাকা সুদ। যৌনকর্মীরা যতই টাকা দিক মহাজনদের সুদের টাকা আর শোধ হয় না। মহাজনদের খাতায় থেকে যায় দেনার দায়। প্রতিবাদ করার সাহস পায় না কেউ। প্রতিবাদ করলেই কপালে জুটে প্রহার। অনুসন্ধানে জানা গেছে এমনই একজন সুদখোর মহাজন আছে ফরিদপুর রথখোলা যৌন পল্লীতে নাম জাহাঙ্গীর। সন্ধ্যা নামলেই তার ক্যাডার বাহিনী হাতুড়ি এবং সাড়াশি নিয়ে পল্লীতে সুদের টাকা আদায় করতে যায়। কেউ টাকা দিতে না পারলে বা প্রতিবাদ করলে তাকে পেটানো হয় হাতুড়ি দিয়ে, হাতের নখগুলোতে ছ্যাচা দেয়া হয় সাড়াশি দিয়ে। ভয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করে মেয়েরা। জানা গেছে দৌলতদিয়া পল্লীতে এমন সুদখোর মহাজনের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ জন। ওই পল্লীতে দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার যৌনকর্মী।
যে ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা হয় যৌন পল্লীর বাড়িয়ালীরা সে ট্যাবলেট খাইয়ে দ্রুত দেহবর্তী করে তোলে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের। দ্রুত শরীর বাড়িয়ে তাদেরকে খদ্দের উপযোগী করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এতে ওই সকল মেয়েদের কিডনি নষ্ট হয়ে যায় কয়েক বছর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা। তাদের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। এই ধরনের রোগে একাধিক মুত্যূর খবর পাওয়া গেছে দৌলতদিয়া পল্লীতে। অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িয়ালীরা তাদেরকে বের করে দেয় পল্লী থেকে। বাড়িতে ফিরে তারা মারা যায় বিনা চিকিৎসায়।
পল্লীগুলোতে মাদক এক ভয়ঙ্কর সমস্যা। আপরাধীদের অবাধ চলাফেরার স্থান পল্লী। দেশী মদ থেকে শুরু করে ইয়াবাসহ নানা জাতের নেশা অবাধ বেচা কেনা হয় এখানে। আগে কেবল অপরাধ জগতের লোকেরা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করলেও ধীরে ধীরে নেশার জগতে জড়িয়ে পড়ছে যৌনকর্মীরা। প্রতিদিন হাতে কাচা টাকা আসায় আরও বেশী পরিমান নেশায় জড়িয়ে পড়ছে এরা। দৌলতদিয়া পল্লীর নেত্রী পারভীন জানিয়েছেন, কর্মীদের সামনে মহাবিপদ ধীরে ধীরে এরা নেশার দিকে ঝুঁকছে তার বড় কারণ অপরাধ জগতের নেশাগ্রস্ত ছেলেরা এখানে এসে মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ধীরে ধীরে মেয়েদেরকে নেশার দিকে টেনে নিচ্ছে। গোয়ালন্দ এলাকায় প্রচার আছে ওই থানার ওসি বদল হয় কুড়ি লাখ টাকায়। এখানকার ওসিদের সবচেয়ে   বড় আয় পল্লী থেকে। নানা অজুহাতে পুলিশ টাকা নেয় যৌনকর্মীদের কাছ থেকে। প্রচার আছে পুলিশের মাধ্যমে ওই টাকার ভাগ যায়
রাজবাড়ির জনপ্রতিনিধিদের পকেটেও। এছাড়াও আছে স্থানীয় মাস্তান। যৌনকর্মীদেরকে নিপীড়নের মাধ্যমে তারা টাকা আদায় করে। সব মিলে ভাল নেই যৌনকর্মীরা। নানাবিধ সমস্যা ঘিরে ধরেছে তাদেরকে। এ থেকে মুক্তির কোন পথও নেই বলে জানালেন যৌনকর্মীদের নেত্রী আলেয়া বেগম। খোলাখুলি ভাবে বললেন, এখানে সকলে আসে ধান্ধা নিয়ে যৌনকর্মীদের সহায়তা করার কেউ নেই। এরা অসহায়। নিজের জীবনের সবকিছু হারিয়ে বাঁচার স্বপ্নটুকু এখানে কেবলই মিছে। কথা প্রসঙ্গে একজন যৌনকর্মী জানালেন বাঁচার আর কোন অবলম্বন থাকলে এই অভিশপ্ত জীবনে আর থাকতে চান না তিনি।

বাড়ছে কিশোর অপরাধ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?

অপরাধ অধুনা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর দেশে দেশে একটি সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটি হলো
কিশোর অপরাধ। কিশোরদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চুরি, হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, পকেটমার, মাদকসেবন, ইভটিজিং (Eve-teasing) ইত্যাদিসহ এমন সব ভয়াবহ কাজ করছে, এমন সব অঘটন ঘটিয়ে চলছে এবং এমন সব লোমহর্ষক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছে যা কি না অকল্পনীয়। বিষয়টি সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানী, আইনবিদ, রাজনীতিবিদ ও সুশীলসমাজকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলছে। একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সভ্যতার এ চরম উৎকর্ষের যুগে আমাদের আগামী দিনের আশা ভরসার স্থল কিশোরসমাজের এ ব্যাপক বিপর্যয় সত্যিই বড় দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক। এ সর্বনাশা ছোবল থেকে আমাদের কিশোর-কিশোরীদেরকে রক্ষা করতে হবে।

কিশোর অপরাধচিত্র
১৯৯৪ সালে ইলিশিয়াম ভবনে স্কুল বন্ধুদের দ্বারা দশম  শ্রেণীর ছাত্র ঈশা (১৫)  হত্যাকাণ্ড ঘটে। গ্রেফতার হয় ঈশার বন্ধু প্রিন্সসহ ৫ কিশোর। খুন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিশোরটি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে নীল ছবি দেখছিল। ঘটনায় দেশবাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। অথচ এ ঈশাই মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তার মাকে বারবার আর্তনাদ করে বলছিল মা তুমি চাকরি ছেড়ে দাও, আমি একা বাসায় থাকতে পারছি না।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সম্প্র্রিতিক ও নিকট অতীতের আরও কিছু অবাক করা ঘটনা
ক. ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের তাসনুভা নামে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় সে আত্মহত্যা করে বলে কলেজ কর্র্তৃপক্ষের ধারণা। তার বাড়ি কুষ্টিয়াদের। তাসনুভার বাবা মো: একরাম একজন এনজিও কর্মকর্তা। গতকাল তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
(দৈনিক আমাদের সময়, ৩০.১১.২০০৮)
১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সন পর্যন্ত এই ৫ বছরে পুলিশের ডায়েরি মতে, শুধু ঝিনাইদহ জেলায় ৬১ জন শিশু, ১৯১ জন কিশোর ও ৪৩৬ জন কিশোরী অত্মহত্যা করে। দৈনিক ইতেফাক, ২২. ৩. ১৯৯৫ ।
খ. কোতোয়ালী থানা পুলিশ গত ১৫ই জুলাই পাট গুদাম হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র নাজমুল হাসান বাবু (১২) হত্যা রহস্য উদঘাটন এবং হত্যার সহিত জড়িত একই মাদ্রাসার ছাত্র হামিদুল ইসলাম (১৪) ও আবদুর রহমান মুন্না নামের অপর এক কিশোরকে গ্রেফতার করিয়াছে। পুলিশ নিহত বাবুর অপহৃত সাইকেল ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করিয়াছে। উল্লেখ, গত ১২ই জুলাই রাত্রে শহরের কেওয়াটখালী নিবাসী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসর এমরান হোসেনের পুত্র নাজমুল হাসান বাবুকে জবাই করিয়া হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ধৃত কিশোরদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, নিহত বাবু গত ৫ জুলাই পাট গুদাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা হইতে হেফজ সম্পূর্ণ করায় তাহার পিতা তাহাকে একটি সাইকেল কিনিয়া দেয়। বাবু সাইকেল লইয়া রাস্তায় বাহির হইলে তাহার সহপাঠী কোতয়ালী থানার চর নিকলিয়ার হামিদুল ইসলাম চালানোর জন্য বাবুর নিকট সাইকেলটি চায়। বাবু সাইকেল না দেয়ায় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাবু হামিদুলকে চপেটাঘাত করে। হামিদুল তাহার বন্ধু কোতয়ালী থানার মড়াখোলার আবদুল জলিলের পুত্র আবদুর রহমানকে ওরফে মুন্নাকে ঘটনা অবহিত করে এবং বাবুকে মারিয়া ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১২ ই জুলাই রাত্রি সাড়ে আটটায় তাহার এক বাড়িতে কুরআন খতমের দাওয়াতের কথা বলিয়া একই সাইকেলে তিনজন রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে পাওয়ার হাউজের দৌয়ালের পার্শ্বে হামিদুল অতর্কিত বাবুকে জাপটাইয়া ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া দিয়া দুইজন মিলিয়া দা দিয়া তাহাকে জবাই করিয়া ফেলিয়া রাখে। ঘটনার পর হমিদুল ও মুন্না সাইকেলযোগে চলিয়া যায়। (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮.০৭.১৯৯৬)
গ. পকেটমার আরিফ হোসেন (১৬) বয়সে কিশোর হলে কাজে সে ভয়ঙ্কর। চার বছরে শতাধিক মোবাইল ফোন সেট চুরির অভিজ্ঞতা আছে তার। সুযোগ পেলে আস্ত্রের মুখে পণবন্দী করেও পথচারীদের ফোন ও টাকা লুটে নেয়। এসব অপরাধে এ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে চারবার। তবে কিশোর হওয়ার সুবাদেই বারবার ছাড়া পেয়ে যায়। আরিফ ও তার সহযোগী কিশোর অপরাধী রাজ্জাক মূলত বাস বা জনবহুল স্থানে পকেট মারে। প্রতিপক্ষ তাদের থেকে দুর্বল হলে তখন পকেটমার থেকে তারা ছিনতাইকারীতে পরিণত হয় তাদের টার্গেট মূলত জনসাধারণের পকেটে থাকা মোবাইল সেট ও মানিব্যাগ। পকেটমার হিসেবে দুজনই খুব দক্ষ। পকেট কেটে এ পর্যন্ত এক থেকে দেড়শটি মোবাইল ছিনতাই করেছে। ছিনতাইকৃত মোবাইল বিক্রি করে গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের মফিজ ভাই, নজু ভাইসহ অনেকের কাছে। তবে বয়সে ছোট হওয়ার কারণে ন্যায্যমূল্য পায় না তারা। সে জানায়, নোকিয়া এন সিরিজের একটি মোবাইল আনতে পারলে তাদের মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। বেশি টাকা চাইলে বড় ভাইয়েরা পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায়। এ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে আরিফ চারবার পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। তবে বয়স কম থাকায় প্রতিবারই সে বেরিয়ে এসেছে। সে জানায়, আগে ছাড়া পেলেও এবার মনে হয় পাব না।
আরিফের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। অভাবের তাড়নার লেখাপড়া বাদ দিয়ে ছয় বছর আগে এক প্রতিবেশীর সাথে ঢাকায় আসে। এখানে এসে পুরান ঢাকার একটি ওয়ার্কশপে ওয়েলিংয়ের কাজ শেখে। সেখানে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয় তার। এ জাহাঙ্গীর যে ছিনতাই ও পকেটমার শেখানোর ওস্তাদ তা সে জানত না। এক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জাহাঙ্গীর তাকে পকেটমার শেখায়। এরপর থেকে চলতে থাকে ছিনতাই ও পকেটমার। আরিফ ও রাজ্জাক মূলত একসাথে পকেট কাটার কাজ করে থাকে। এ কাজের জন্য তাদের কিছু সাঙ্কেতিক শব্দ রয়েছে। বুকপকেটকে বলে বুককান, পাঞ্জাবী বা প্যান্টের ঝুল পকেটকে নিচকান ও প্যান্টের পেছনের পকেটকে বলে থাকে পিচকান। বাস বা জনবহুল স্থানে পকেট কাটার জন্য তারা এক ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে। এরপর ওই ব্যক্তির পিছু নেয়। সাধারণত রাজ্জাক ওই ব্যক্তির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর চুলকাতে থাকে। রাজ্জাকের হাত নাড়াচাড়ার এক ফাঁকে আরিফ ওই ব্যক্তির পকেটে হাত ঢুকিয়ে নিয়ে যায় তার মূল্যবান জিনিসপত্র। হাত দিয়ে সহজভাবে কাজ সম্পন্ন না হলে সে ক্ষেত্রে ব্লেড ব্যবহার করা হয়। আর পকেট কাটার জন্য সব সময় জিলেট কোম্পানীর উন্নতমানের দামি ব্লেড ব্যবাহার করে থাকে বলে সে জনায়। দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৫-৪-২০০৮।
ঘ. দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া এক স্কুলছাত্রী শিমুকে ধর্ষণ করেছে দুর্র্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবেশী লুৎফর রহমানের পুত্র হুমায়ুন (১৮) ও হযরত আলীর পুত্র শাকিল (১৫) দুজন মিলে ৮ বছর বয়সী দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী শিশুটিকে ধরে জোরপূর্বক একটি টমেটো ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে হুমায়ুন ও শাকিল পালাক্রমে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় শিশুটির কান্না ও আর্তচিৎকার শুনে অশপাশের লোকজন ছুটে এসে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং উপজিলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে শিশুটির শারীরিক আবস্থায় আরো অবনতি হলে তাকে কিশোরগঞ্জের সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনার পরপর দুষ্কৃতিকারী হুমায়ুন ও শাকিল পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দৈনিক অপরাধকণ্ঠ, ০৫-০১-২০০৯।
বর্ণিত ঘটনাগুলো থেকে আমাদের দেশে কিশোর অপরাধের মাত্রা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায।

কিশোর অপরাধ কী
মানবিক জীবনে কৈশোর কালটি নানা প্রতিকূল প্রতিবন্ধকতার মাঝ দিয়ে পার হয়। স্কুল পেরুনো বয়সটাই হেলো উডু উডু চঞ্চল। বাধা না মানার বয়স। এ বয়সে বন্ধু খুঁজতে থাকে সে। পেয়েও যায়। বন্ধুকে ঘিরে যা সত্য না তাও ভাবতে থাকে। কখনও সে মধুর স্বপ্নে আনন্দে বিভোর থাকে। আবার কখনও বিভিন্ন জটিল সমস্যার কারণে ভিষণœতায় ভোগে। এ ক্রান্তিলগ্নে তার মাঝে এসে ভর করে অস্থিরতা, রোমান্টিসিজম, অ্যাডভারটারিজম ও হিরোইজম। এ সব চিন্তার মাঝে যেমন আছে ভালো লাগা তেমনই আছে নীরব পতনের পদধ্বনি।
সংক্ষেপে যে সমস্ত কাজ প্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় সে ধরনের প্রচলিত আইন ভঙ্গকারী কাজ অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত হলে সেটিকে কিশোর অপরাধ বলা হয়। অন্য কথায়, অসদাচরণ অথবা অপরাধের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিচারালয়ে আনীত কিশোরকে কিশোর অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে বলা হয় যে, আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত কিশোররাই হচ্ছে কিশোর অপরাধী। কিন্তু আদালতের অপরাধ নিরূপণ পদ্ধতি ও রায় দেশ ও সমাজ ভেদে বিভিন্ন ধরনের হয়। তাই বলা যেতে পারে যে, কোনো কিশোর অপরাধী কি না তা নির্ভর করে তার মাতাপিতা, প্রতিবেশী সমাজ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সর্বোপরি আদালতের বিচারকের মনোভাবের ওপর।
অপরাধ ও অপরাধীদের বিচার সম্পর্কিত ১৯৫০ সালের আগস্টে লন্ডনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের দ্বিতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে বলা হয় যে, শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত যে সব আচরণ অসংগতিপূর্ণ বা আইনভঙ্গমূলক অর্থাৎ যা সমাজিকভাবে বাঞ্ছিত বা স্বীকৃত নয় তা সবই কিশোর অপরাধের অন্তর্ভূক্ত। অন্যদিকে আমেরিকান চিল্ড্রেন ব্যুরো কিশোর অপরাধের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছে যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক বা কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত রাষ্ট্রিক আইন বা পৌর বিধি বিরোধী সব কাজই কিশোর অপরাধের আওতাভুক্ত। উপরন্তু, সমাজ সদস্যদের অধিকারে আঘাত করে এবং কিশোরদের নিজের ও সমাজের কল্যাণের পথে হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়, কিশোরদের দ্বারা সংঘটিত এমন যে কোনো মারাত্মক সমাজবিরোধী কাজও কিশোর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
অপরাধ বিজ্ঞানী  cavan এবং ferdinand এর মতে সমাজ কতৃক আকাক্সিক্ষত আচরণ প্রদর্শনে কিশোদের ব্যর্থতাই কিশোর অপরাধ। পি ডব্লু টটাপপান কিশোর অপরাধীদের চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন
ক. যার বৃত্তি আচরণ, পরিবেশ অথবা সংগীতদল তার নিজস্ব কল্যাণের পথে ক্ষতিকর।
খ. যে অবাধ্য, কিংবা যে তার মাতা-পিতা বা অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়;
গ. ইচ্ছাকৃতভাবে যে স্কুল পালায় কিংবা সেখানকার নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং
ঘ. যে রাষ্ট্রিক আইন বা পৌর বিধি বহির্ভূত কাজ করে।

কৈশোরে বিশেষ চাহিদা
ক. স্বাধীনতা ও সক্রিয়তার চাহিদা (Need for freedom and activity) : এ বয়সে কিশোর কিশোরীরা সর্ব ব্যাপারে স্বাধীন হতে চায়। তার আত্মসম্মানবোধ মনে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে। দায়িত্ব বহন করার, নিজের মত প্রকাশ করার, দশের মধ্যে একজন হবার প্রবল আকাক্সক্ষা তার মধ্যে দেখা দেয়। তখন সে সদা কর্মমুখর থাকে। তার এ স্বাধীনতা ও সক্রিয়তাবোধ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
খ. সামাজিক বিকাশের চাহিদা : বয়ঃসন্ধিকালে সমাজ চেতনার বিকাশ খুব গভীর হয়। আত্মসম্মান ও মর্যাদাবোধ তাকে সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। গৃহের বন্ধন অপেক্ষা বাইরের আহবান তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সে তখন বৃহত্তর সমাজ জীবনের ভাবের দোসর খোঁজে, সঙ্গীসাথীদের সাথে মেলামেশায় সুযোগ গ্রহণ করে, অপরিচিতের মধ্যে আত্মীয়তা অনুসন্ধান করে।
গ. আত্মপ্রকাশের চাহিদা : এ বয়সে অরেকটি চাহিদা হলো নিজেকে প্রকাশ করা। আবেগপ্রবণ হওয়ায় বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তারা নিজেদের মূল্যবোধকে সমাজের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। সমাজের অন্যান্য ব্যক্তি তাদের এ কর্মের মূল্য দেবে এটাই তারা বিশেষভাবে চায়। এ চাহিদার তৃপ্তি ব্যক্তিসত্তার সুষম বিকাশের পক্ষে অপরিহার্য। এ চাহিদা পূরণ না হলে তারা দুর্বলচেতা, আত্মবিশ্বসহীন ও নিষ্ক্রিয় হয়। পড়াশুনা, খেরাধুলা, গান বাজনা, অভিনয়, অংকন, কবিতা লেখা, পত্র মিতালী, ডায়েরি লেখা এবং অন্যান্য কালেজের মাধ্যমে তারা আত্মপ্রকাশ করে।
ঘ. আত্মনির্ভরতার চাহিদা : আত্মপ্রকাশের চাহিদা থেকেই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তারা ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা শুরু করে। পরনির্ভর না হয়ে স্বাধীন জীবন যাপনের প্রবল ইচ্ছা বয়ঃসন্ধিকারে দেখা দেয়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবে সে চিন্তা সে করে।
উপযুক্ত পেশা নির্বাচনে মাতাপিতা ও শিক্ষকের সহায়তা এ বয়সে বিশেষভাবে প্রয়োজন।
ঙ. নতুন জ্ঞানের চাহিদা : এ বয়সে মানসিক বিকাশ পূর্ণতা লাভ করে। ফলে কৌতূহলপ্রিয়তা, অজানাকে জানার আকাক্সক্ষা তাদের মধ্যে দেখা দেয়। নতুন কিছু জানতে চায়, শিখতে চায়, অসীম কৌতূহলে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডার আহরণ করার তাকিদ অনুভব করে। এ স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞানের আকাক্সক্ষাকে যদি মাতা-পিতা, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারেন তবে এ ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে, কর্মক্ষেত্রে, সমাজে সাফল্য লাভ করতে পারে।
চ. নীতিবোধের চাহিদা : বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নীতিরোধ জাগ্রত হয়। ভালো মন্দ, ন্যায় অন্যায়, উচিত অনুচিত বোধ সে মন থেকে উপলব্ধি করে। নিজের এবং অপরের কাজকে নীতিবোধের মানদণ্ডে বিচার করে। সমাজের রীতি নীতি, আদর্শবোধ তার বিবেককে নাড়া দেয়। নিজে নীতিবিরোধী কোনো কাজ করলে তার মনে অপরাধবোধ সৃষ্টি হয়।
ছ. নিত্য নতুন চমকপ্রদ ও অভিনব বিষয়ে আগ্রহ : প্রাত্যহিক জীবনের কার্যক্রম এ বয়সের ছেলেমেয়েদের একঘেঁয়ে এবং বিরক্তিকর মনে হয়। তারা চায় নতুন নতুন চমকপ্রদ ও অভিনব বিষয়ের মাধ্যমে আনন্দ পেতে। তারা চায় দল বেঁধে পিকনিক করতে অথবা সিনেমা দেখতে। শিক্ষককে ফাঁকি দিয়ে পাঠশালায় পলায়ন, রাতের অন্ধকারে পাড়া প্রতিবেশীর বাগানের ফল চুরি করা, সিগারেট বা মাদকদ্রব্য চেখে দেখা ইত্যাদি কাজে তাদের অসীম আগ্রহ ও নিষ্ঠা দেখা যায়। মাদকাসক্তদের কেইস হিস্ট্রি থেকে জানা যায় প্রথম মাদকদ্রব্য সেবনের অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে সহযোগী বন্ধুদের পরামর্শে অ্যাডভেঞ্চার করতে যেয়েই এবং পরবর্তীতে ড্রাগস এর মরণ ফাঁদে তারা জড়িয়ে পড়েছে।
জ. নিরাপত্তার চাহিদা : বেশির ভাগ কিশোর কিশোরীর মনে নিজের কর্মক্ষমতা, পরিবারের দলে অথবা স্কুলে তার অবস্থান এবং নৈতিক মূল্যবোধ এর সমন্বয়ে নানারকম মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ দ্বন্দ্বের টানাপোড়েনে তারা আত্মবিশ্বাস হারিযে অসহায় বোধ করে। এ বয়সের চাহিদাগুলোর পাশাপাশি শাস্তি পাওয়ার ভয়ও তাদের মনে কাজ করে। ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
ঞ. আত্ম পরিচিতির চাহিদা (Need for self identity) : এ বয়সের ছেলেমেয়েদের নিজ সম্পর্কে ধারণা পাকাপোক্ত হয়। তারা (gendr appropriate behaviour)- এর মাধ্যমে নিজের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরিকসন ও স্তরে Identity vs.role diffusion এ দ্বন্ধের কথা বলেছেন এ বয়সের ছেলেমেয়েরা সমাজে তার স্থান ও ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করে এবং যাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, উদ্যম ও স্বাধীনভাব অর্জিত হয়, তারা নিজেদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধনাত্মক পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে, নিজ সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা থাকলে অনেক সময় আত্মসংযম হারিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কিশোর কিশোরীরা এ বয়সে মাতা-পিতার ও সমাজের মূল্যবোধকে তীক্ষèভাবে যাচাই করে আত্ম পরিচিতি গড়ে তোলে।

কৈশোর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সামাজিক প্রক্রিয়া
বয়ঃসন্ধিক্ষণে মানব জীবনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। কৈশোরে পা দেয়ার পর থেকে কিশোর-কিশোরীরা ভাবতে শুরু করে যে, তারা আর ছোটটি নেই, আবার ঠিক বড়ও হতে পারেনি। কারণ, পরিবারের অন্য সদ্যগণ তাদের ছোট হিসেবে দেখে। এ বয়সে মা বাবার কাছ থেকে সন্তান যেন সরে যেতে থাকে। ছেলের সাথে মায়ের, বাবার সাথে মেয়ের মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে। ছেলেমেয়ের আলাদা শোবার ঘর করে দেন বাবা মা। হঠাৎ করেই ছেলে অথবা মেয়ে একা হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে একজন কিশোর মনে করে, সে ছোট ও বড়র মাঝামাঝি এক অচেনা জগতের বাসিন্দা। তার তখন কোনো কিছুই ভালো লাগে না। কোনো কিছুতেই যেন মন ভরে না।
অন্যদিকে একজন কিশোরী আয়নায় এক অন্য আমিকে আবিষ্কার করে। নিজেকে দেখতে বা নিজের শরীরে পরিবর্তনকে দেখতে গিয়ে অনুচিত হীনমন্যতায় ভূগতে শুরু করে। সামান্য কারণে যখন তখন মার বকুনি শুনতে হয়। যে মেয়েটি মা ছাড়া একদিন কিছু বুঝত না সে তখন ধীরে ধীরে মায়ের চেনা জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে।

কিশোর অপরাধীদের বিভাগ
কিশোর অপরাধীদেরকে কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যায়। এখানে কয়েকটি মূল বিভাগের উল্লেখ করা হলো
ক. দুর্বোধ্য মনস্ক : ইংরেজিতে এদের problem boy বলা যায়। অনেক কিশোর তারা কী চায় তা তারা নিজেরাই জানে না। লক্ষ্যবস্তু সম্বন্ধে তাদের নিজস্ব কোনোও ধারণা নেই। তাই কোনো কাজই তাদের মনৎপূত হয় না। তারা বারে বারে একটি কাজ বা পাঠ ছেড়ে অন্য কাজ বা পাঠ গ্রহণ করে। পরক্ষণেই তারা বুঝে যে, এটিও তাদের মনপূত নয়।
খ. আক্রমণাত্মক (Aggresive) : এ কিশোর সদাব্যস্ত ও একরোখা হয়, তারা লক্ষ্য ও পথ পরিবর্তন করতে চায় না, সব কিছুই ওদের তাৎক্ষণিক চাই। ঈপ্সিত লক্ষ্য সম্বন্ধে তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে। কিন্তু ওদের সকলে বিনা বাধায় ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে না। কাউকে কাউকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। ওই বাধাবিঘœ অতিক্রম করতে অসমর্থ হলে তাদের ভাবাবেগ রুদ্ধ হয়। অবরুদ্ধ ভাবাবেগ নৈরাশ্যের সৃষ্টি করে। এ ণৈরাশ্য হতে দু’শ্রেণির আক্রমণাত্মক কিশোরের উদ্ভব হয় পরাঘাতী ও আত্মঘাতী।
গ. বিকল্পপন্থী : এরূপ কিশোরদের লক্ষ্যস্থল খুব উঁচু বা খুব নিচু নয়। বাধা পেলে তারা বিকল্প লক্ষ্য কিংবা পথ খুঁজে নেয়। সাধ্যাতীত লক্ষ্যবস্তুকে এরা এড়িয়ে চলে। এদের আকাক্সক্ষা সীমিত। নিজেদর সীমিত ক্ষেত্রে এরা প্রায়ই সফল হয়। এ সফলতা তাদের ভয়শূন্য করে। ব্যর্থতাও এদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ না। এটা তারা সহজভাবে গ্রহণ করে। এদের নিকট ভাবাবেগ অপেক্ষা যুক্তি বুদ্ধিই প্রধান। অভিজ্ঞতা দ্বারা সমস্যার গুরুত্ব কমিয়ে আনে। বয়স্ক লোকদের মত এদের ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস আছে।
ঘ. অস্বভাবী : অস্বভাবী কিশোরগণ নানারূপ অন্তর্দ্বন্দ্বে ভোগে। প্রশমিত মনোজট (comple) এর কারণ হতে পারে। কেউ বিচ্ছিন্নমনা (ssplit up) সরহফ রোগে ভোগে । কারো মধ্যে দ্বৈত বা বহু ব্যক্তিত্ব দেখা যায়।
সিনেমায় কিংবা থিয়েটারে যাব কিংবা ভাত বা রুটি কোনটি গ্রহণীয়। এরূপ সামান্য অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্ষতিকর না। এ দুটি তাদের নিকট সমান প্রিয় হতে পারে। কিন্তু গুরুতর অন্তর্দ্বন্দ্ব বেদনাদায়ক। তাদের মধ্যে বহু হেতুহীন ভয় ও ক্রোধ দেখা যায। মাঝে মাঝে এরা বিমর্ষ হয়ে ওঠে। কিন্তু এর কারণ বুঝতে পারে না। কোনোও কিছুতে মনোনিবেশে অক্ষম হয়। এরা ধৈর্যহীন ও বিস্ফোরণশীল হয়ে থাকে।
ঙ. অপরাধমুখী : অপরাধমুখী কিশোরদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা কিছু বেশি থাকে। সুযোগ ও সুবিধা পেলে অপকর্ম করার জন্য তারা সদা উম্মুখ। এদের মধ্যে লোভী কিশোরদের মতো প্রতিহিংসাপরায়ন কিশোরও থাকে। এদের অপরাধ প্রতিরোধ সম্পর্কীয় স্নায়ু অত্যন্ত দুর্বল । সামান্য প্রলোভন বা ক্রোধ এদের প্রদমিত অপস্পৃহাকে গর্হিত করে। ওদের কেউ কেউ যৌনজ ও অযৌনজ এবং কেউ সম্পত্তির বিরুদ্ধে অপরাধ করে। এরা স্বার্থপর হয় ও লাভালাভ বোঝে । এরা ভবিষ্যৎ আশু ফল প্রয়াসী।
চ. দুর্বল-চিত্ত (Feeble-minded) : দুর্বলচিত্ত কিশোদের বুদ্ধিমত্তা বয়সের তুলনায় কম থাকে। এটিকে চিত্তদৌর্বল্য বলা হয়। এরা সরলমনা ও বিশ্বাসী হয়। কিছু বিষয়ে অভিযোগমুখর হলেও এরা প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়ে কৃতজ্ঞতা ও কর্তব্য বোধ দেখায়। এরা সহজেই অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এদের ভুল বোঝানো ও ভুল বিশ্বাস করানো সহজ। ভিটামিন, প্রোটিন খাদ্য ও হরমোনের ঘাটতিপূরণ এদের নিরাময় করে। বয়সের সাথে ওদের অনেকেরই বুদ্ধি দ্রুত বেড়ে পূর্বক্ষতি পূরণ করে।
মধ্যবর্তী কালে ওদের প্রতি কিছু বেশি লক্ষ্য রাখা সহ উৎপীড়কদের হাতে থেকে ওদের রক্ষ করার প্রয়োজন হয়। অবশ্য বহু সরলমন কিশোরের সাধারণ বুদ্ধি প্রখর হয়। তবে উন্মাদ ও নির্বোধদের জন্য স্বতন্ত্র মানসিক ও দৈহিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
ছ. নেতৃত্ব বিলাসী : এ শ্রেণীর বালক অতি মাত্রায় নেতৃত্ব অভিলাষী হয়ে থাকে। এদের কেউ কেউ এজন্য নিজেদের মধ্যে মারপিট পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু এদের সকলের মধ্যে নেতৃত্বের উপযুক্ত গুণ থাকে না। এদের মধ্যে কিছু শান্তিপ্রিয় কিংবা দুর্বলদেহী কিশোর থাকে। এরা নেতা হওয়ার সহজ পন্থাসমূহ বেছে নেয়।
এরা বাড়ির কিংবা অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করে ফুটবল বা খেলার সরঞ্জামাদি কিনে ক্লাব তৈরি করে নিজেই ক্লাবের প্রধান হয়। পড়াশুনা বা অন্য বিষয়ে এরা মধ্যপন্থা কিশোর। এদের অভিভাবকরা প্রয়োজনীয় যৎ সামান্য অর্থ দিলে এরা এরূপ অপকর্মে লিপ্ত হতো না। ওদের এরূপ নেতৃত্ব আরোপিত হলেও তারা সেটির দ্বারা সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব লাভ করে।

কিশোর অপরাধীদের বৈশিষ্ট্য
কিশোর অপরাধীদের মাঝে নিম্নোক্ত বৈশিস্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়
ক.স্বাস্থ্যগত বৈশিষ্ট্য : নিরেট দেহী, সুসংবদ্ধ, পেশীবহুল।
খ. মানসিক বৈশিষ্ট্য : অস্থির, ধৈর্যহীন, ভাবুকতা।
গ. কর্মশক্তিগত বৈশিষ্ট্য : মাত্রাহীনতা, আক্রমণাত্মক, নাশকতাপ্রিয়।
ঘ. আচরণগত বৈশিষ্ট্য : শত্রুতা, বেপরোয়া, বিঘœসৃষ্টিকারী, সন্দিগ্ধ, জেদী, অধিকার বিলাসী, দুঃসাহসিক, সংস্কারবিহীন মন ও আনুগত্যহীন।
ঙ. মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য : জবরদস্তি স্বভাব, নেতত্ববিলাসী, সফলতার জন্য অন্যায় পন্থা গ্রহণ, নিষ্ঠুরতা, নির্দয়ভাব, স্বার্থপরতা।

কিশোর অপরাধের কারণ
১ মনস্তাত্ত্বিক কারণ
ক. বয়ঃসন্ধিপ্রাপ্ত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সহনশীলতার অভাব খুব প্রকট হয়ে ওঠে। এ সঙ্কটের অন্যতম কারণ অপরিণত আবেগের বৃদ্ধি। মনস্তত্ত্বের পরিভাষায়, অপরিণত মনস্তাত্ত্বিক উন্নতি মানে সুস্থ আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বৃদ্ধি ঘটতে না দেয়া। সহনশীলতা ব্যাপারটা সৃষ্টি হয় আবেগ থেকে। সেই স্বতস্ফূর্ত আবেগে যদি বাধা আসে, তাহলে সহনশীলতার অভাব ঘটতে বাধ্য। এই মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ই কৈশোরে অনেক বিতণ্ডার মূল।
খ. শিশু-কিশোরদের আমরা নৈতিক কিছুই  ঠিকমতো শেখাই না। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা সেভাবে সচেতন হয়ে উঠতে পারে না। জীবনে অনেক জিনিসই পাওয়া যায় না। না পাওয়া ব্যাপারটা যে জীবনেরই অঙ্গ, আমরা তা শেখাই না।
এমনিতেই বয়ঃসন্ধির সময় হরমোন এবং শারীরিক পরিবর্তনের জন্য ছেলেমেয়েদের মধ্যে সঙ্কট দেখা যায, এ সঙ্কট এতোটাই মারাত্মক হয়ে ওঠে যে, তখন কোনো ব্যর্থতা দেখা দিলে তারা তা সহ্য করতে পারে না। সহ্য না করতে পেরে তারা ভেতরে ভেতরে নানাভাবে অপরাধী হয়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ এক ধরনের পলায়নপর মনোবৃত্তির আশ্রয় নেয়। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো রাস্তা থাকে না। এটি যেমন পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে ঘটে থাকে, তেমনটা ঘটে থাকে প্রেম বা অন্য কিছুর ক্ষেত্রেও ।
গ. কোনো কোনো ছেলেমেয়ে এ বয়সে Pathological lier হয়ে যায়। তারা মিথ্যের মধ্যেই থাকতে শুরু করে। মিথ্যে আর সত্যের মাঝে ভেদরেখাটা তাদের সামনে ক্রমশ মুছে যায়। অবাস্তব বা রোমান্টিক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা। মাতা-পিতার সঙ্গে যত বেশি মানসিক বিভেদ, বাড়িতে যত অশান্তি বাড়তে থাকে, ততই এ মিথ্যাচারও বাড়তে থাকে। পলাতকী মনোভাব (Escapism ) থেকে এ মিথ্যা বিশ্বাস, মিথ্যা কথার ব্যাপারটা আসে। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা একটু বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। মাথা পিতার মধ্যে কোনোও রকম টেনশন থাকলে, নিঃসঙ্গ বা Neglected বোধ করলে ছেলেমেয়েরা খুব বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। অসম্ভব জেদি, রাগী, একগুঁয়ে, সন্দেহপ্রবণ হয়ে এমন একটা পর্যায়ে তারা ক্রমশ চলে যায় যে, শেষ পর্যন্ত জীবন বিমুখ হয়ে পড়ে। সব রকম আনন্দ স্পৃহা, উৎসাহ থেকে দূরে চলে যায় এবং একেবারে খেতে চায় না। খিদেই পায় না এবং এদের শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায় না। বয়ঃসন্ধির এ মানসিক রোগকে বলে Anorexia nervosa। যারা এতদূর যায় না তাদের অনেকেই বিষণতায় (depression) ভোগে।
ঘ. একটি কিশোরের ভেতরে Input output খুব স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হতে থাকে। তাদের হাবভাবও ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে ওঠে। ওরা বুঝতে পারে, যদি সে পরীক্ষায় ভালো ফল করে, তাহলে মা তাকে ভালোবাসবে। এ মানসিকতার ফলে মা-শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক ভালোবাসার ঘাটতি দেখা যয়। ভালোবাসা ব্যাপারটা শর্তসাপেক্ষ হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারটা শুরু হয় স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় এ থেকেই। স্কুলে ভর্তি হওয়ার চাপ থেকে এই Input output এর চাপ তৈরি। তখন থেকেই দূরে সরে যায় সহজ সরল জীবনের যাবতীয় সম্ভাবনা।
ঙ. অতি অল্পবয়স থেকেই কিশোরকে একটা যান্ত্রিক রুটিনের মধ্যে বেঁধে ফেলার চেষ্টা চলে। সে যেন কোনো এক উপকরণ বা কাঁচামাল। ওই যান্ত্রিক রুটিনের মধ্যে তাকে ক্রমশ বড় করে তোলা হয়। সে যখন বন্ধুদের সাথে খেলছে, তখন হয়তো তাকে টেনে হিঁচড়ে অঙ্ক কষানোর জন্য টিচারের কাছে বসিয়ে দেয়া হল। পড়ানো শেষ না হতেই সাঁতারের সময় হয়ে যায়। তখনই আবার দৌড়। এরপর নাচগানের ক্লাস আছে। ড্রইং শেখা রয়েছে। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, এ সব যান্ত্রিকতা ওদের ভালো লাগে না। এ ধরনের যান্তিকতায় তারা মরিয়া হয়ে পড়ে। ফরে পড়াশোনাটা স্বাভাবিকভাবে হয় না, পুরোটাই জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়। ‘নাও এবার এটা মুখস্থ করো’- এ মনোভাবে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এমন কি বাড়ির গণ্ডি ছাড়িয়ে গেলেও দৃশ্য একই পদ্ধতি। সেখানেও রয়েছে সেই যান্ত্রিকতা। স্কুলে গিয়েও একই পদ্ধতির শিকার হয়।
চ. কিশোররা অনেক কিছু আঁচ করে নিতে পারে। তারা বুঝতে পারে বাবা মায়েরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমাগত ভাবনা-চিন্তা করছেন। বাবা-মায়ের উদ্বেগ তাদের ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে, এ ব্যাপারে কোনোও সন্দেহ নেই। কিশোরদের মনেও তৈরি হয় অপরাধবোধ।
ছ. বাবা-মায়েদের কৃত্রিম ব্যবহারও কিশোররা বেশ বুঝতে পারে। সারাদিনের ধকল সামলে বাবা মায়েরা নিতান্ত অনীহা সত্ত্বেও যখন ছেলেমেয়েদের সঙ্গ দেন হাসিমুখে রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে, তখন সে বুঝতে পারে বাবা কিংবা মায়েরা ক্লান্তি, বিরক্তি সত্ত্বেও মুখে উৎসাহের ভান করছেন। তাদের সংবেদনশীল মন এ ব্যাপারটা বুঝতে পারে এবং ক্রমশ বাবা-মায়েদের মেকি ব্যবহারে দুই পক্ষের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় নিজেরই অজ্ঞাতসারে। ফলে পরীক্ষায় খারাপ ফল বা
প্রেমে ব্যর্থ হলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে না। অন্যদিকে ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
জ. অভিভাবকেরা সব সময়ই চান তাদের চাহিদামতো সন্তানটি বেড়ে উঠবে। অর্থাৎ তার কোনো স্বকীয়তা থাকার দরকার নেই, তারা যেমনটি চাইবেন, ঠিক তেমনটি তাকে হতে হেবে। একচুল এদিকে ওদিক হবার জো নেই
ঝ. একসময় মায়ের ভালোবাসা ছিল শর্তহীন। আমার সন্তান সুতরাং চাওয়া-পাওয়ার হিসেব না করে হৃদয়ের নিষ্কলূষ ভালোবাসা দিয়ে যাব এ মনোভাব কাজ করত। মা মানেই সকল দুঃখের অবসান, অফুরান ভালোবাসা এ শ্বাশত ধারণা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে। আজকাল মায়েরা নিজস্ব জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে মায়ের ভূমিকা এখন মিশ্র।
২. স্বভাবগত কারণ
কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে কিছু স্বভাবগত কারণও রয়েছে। বিশেষত নিম্নোক্ত কয়েকটি স্বভাব ওদের অপরাধী হওয়ার সূচনা ঘটায়। যেমন : সৃষ্টি জগতের প্রতি নির্ধয় ব্যবহার, অতিরিক্ত অবাধ্যতা, স্কুল পলায়ন, দেরিতে ঘরে ফেরা, বেঢপ ও মলিন পোশাক পরিধান, শারীকি অপরিচ্ছন্নতা, অকর্তিত কেশ, দুঃসাহসিকতা, অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়তা, অতিমাত্রায় ছায়াছবিপ্রিয়তা ইত্যাদি।
৩. কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে মাতা-পিতা
নিম্নোক্ত প্রকার মাতা-পিতার সন্তানগণ কিশোর অপরাধী হয়ে থাকে-
ক. সংসারত্যাগী বা পলাতক মাতাপিতা : এরা সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না করে পলাতক হয়েছেন। সন্তান এদের অপত্য স্নেহ-মমতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
খ. অপরাধী মাতাপিতা : এরা সন্তানকে পাপের মধ্যে রেখে বড় করেন। কখনওবা সন্তানের সহায়তায় পাপ করেন।
গ. অপকর্মে সহায়ক মাতা-পিতা: এরা সন্তানের অপরাধ স্পৃহায় উৎসাহ দেন।
ঘ. অসচ্চরিত্র মাতা-পিতা : তারা নির্বিচারে সন্তানের সামনেই নানা অসামাজিক কাজ করেন ও কথা বলেন।
ঙ. অযোগ্য মাতা-পিতা : এরা সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগী বা অপারগ।
আধুনিককালে শহরগুলোতে দেখা যায় যে, মা বাবা উভয়ে ঘরের বইরে কাজ করছেন। ফলে সন্তানসন্ততি তাদের উপযুক্ত স্নেহ-শাসন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা আচরণে বিদ্রোহধর্মী হয়ে যাচ্ছে। এমনটিও দেখা যায় যে, মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে কোনো কোনো কিশোর মা অথবা বাবাকে হরাচ্ছে। এ কারণেও কিশোরদের স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা সংলগ্ন আচরণ তথা সমাজবিরোধী কাজকর্মে লিপ্ত হয়। অধিকন্তু পারিবারিক পরিমণ্ডলে কোনো শিশুকিশোর যদি সর্বদা ঝগড়া-বিবাদ, ব্যক্তিত্বের সংঘাত এবং অপরাধমূলক ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তাহলে তাদের পক্ষে সহসা কিশোর অপরাধী হয়ে উঠা অসম্ভব নয়।
৪. দারিদ্র্য
দারিদ্র্য যে অপরাধের জন্য দায়ী তা বলাই বাহুল্য। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের কিশোর-কিশোরী তার নিত্য দিনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে তার মধ্যে কিশোর অপরাধমূলক আচরণ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে এরা ছোট-খাটো চুরি বা ছিনতাই-এ অংশগ্রহণ করে। দারিদ্র্যের কারণে আত্মহত্যা বা ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতেও বাধ্য হয় অনেক কিশোর-কিশোরী।
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয় দুই ভাগ্যবিড়ন্বিতা কিশোরীর ঘটনা। চরনগরদীর শবমেহের কাঁদিতেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক শুশ্রুষা, শিয়রে নির্বাক ভাইয়ের উপস্থিতি কিছুই সর্বস্বহারা নারীত্বের এ কান্না থামাইতে পারিতেছে না। নারী ব্যবসায়ের প্রথাসিদ্ধ নিয়মে শিকারীরা দূর গ্রামাঞ্চলে শিকার সন্ধানে গিয়া এ এতিমকে শিকার করিয়া আনিয়াছে। নারায়ণগঞ্জে টান বাজারের অসামাজিক বন্দীত্বে তাহার নারীত্ব হরণের আগে জনপদবধুর বরণে সাজানোর ভূষণ সেলোয়ারটি এখনও তাহার আছে। কিন্তু যাহা গিয়াছে, শবমেহের তাহা পাইবে না। ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেয়ালে দেয়ালে শাশ্বত নারীত্বের কান্না গুমরাইয়া মরিতেছে কিশোরী শমমেহেরের কান্না ও প্রলাপে।”
“আট নয়দিন আগেও কৃষক জনপদের উদ্দাম কিশোরী ছিল শবমেহের (১১) দারিদ্র্য ও বয়সের দিকটি ছাড়া শঙ্কা তাহার ছিল না। কোনো এক জরিনা তাহাকে ফুসলাইয়া নারায়ণগঞ্জে আনিয়া টানবাজার পতিতালয়ে দুই হাজার টাকায় বিক্রয় করে। পতিত গনগরে বিধ্বংস হয় পল্লীর দারিদ্র্য-প্রপীড়িত স্বপ্ন-শবমেহের। তিনটি দিন পর মৃত্যুন্মুখে অসাড় দেহে শবমেহেরকে ট্রেনের কামরায় ফেলিয়া পতিতালয়ের লোকেরা চলিয়া যায়। কমলাপুরে সংজ্ঞাহীন শবমেহের ট্রেনে করিয়া আসিয়া পৌঁছিলে লোকজন তাহাকে হাসপাতালে লইয়া আসে। সংজ্ঞা ফিরিয়া পাইবার পর হইতে শবমেহের কাঁদিতেছে। নীরব কান্নার মাঝে মাঝে প্রলাপ কহিয়া উঠে। সে প্রলাপে ধিক্কার কাহার প্রতি, স্পষ্ট বোঝা যাইতেছে না।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৪-০৪-১৯৮৫)
দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় ২০ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে প্রকাশিত আরও একটি রিপোর্ট : শিশুশ্রম নিষিদ্ধ সারাবিশ্বেই। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তা সত্ত্বেও ঢাকা মহানগরীর সর্বত্রই শিশুশ্রম আছে। বিদেশীদের হস্তক্ষেপে গার্মেন্টস কারখানায় শিশুরা এখন আর কাজ করে না, কিন্তু বাসে অথবা গ্রামীণ নামক ২২-২৪ সিটের ছোট বাসে। এরা কাজ করছে। রামপুরা যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন রুটে এ বাস চলছে। এ ছোট বাসে যে শিশুরা কাজ করে এদের অধিকাংশের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। যে বয়সে মা-বাবার আদরে আহলাদে এদের স্কুলে যাওয়ার কথা, বিকেলে সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সে বয়সে এরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করছে। মাঝে মাঝে ছোট এ বাসের ভেতরে অথবা হ্যান্ডল ধরে ঘুমিয়ে পড়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে। অন্য দিকে যাত্রীদের দুর্ব্যবহার তো এদের নিত্যদিনের সঙ্গী। একটু আদর, একটু ভালোবাসার কাঙাল এ শিশুদের সুযোগ দেয়া হলে এরাই একদিন দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। দরিদ্র মাতা-পিতার ঘরে জন্ম নেয়াই এদের অপরাধ। জন্ম অপরাধে এদের সাথীরা যাচ্ছে স্কুলে আর এদের বাসের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে ঝুলে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত কাটিয়ে সামান্য পারিশ্রমিক নিয়ে ঘরে ফেরা। এ ধরনের হাড়ভাঙা শ্রমের কাজ থেকে এদের সরিয়ে নিয়ে হালকা কাজ দিয়ে লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার কী কেউ নেই?
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় ও চিকিৎসাসহ জীবনধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা। তাছাড়া দেশে বিদ্যমান আছে অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৩৩ (The suppression of Immoral traffic Act, 1933)। কিন্তু সংবিধান, আইন সব কিছজুই নাগরিকগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে অদ্যাবধি অসমর্থ। অসংখ্য শবমেহের এর আত্মদান তারই প্রমাণবহ।
দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও একথা সত্য যে, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করেন তা শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিল থাকে না। আর এসব বাস্তবতা আমাদের সমাজে বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্নীতি এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। দুর্নীতি, অপরাধের সে থাবা ছাড়ছে না আমাদের কিশোরদেরও। এমতাবস্থায়, জঠর যন্ত্রণা নিবৃত্তির জন্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো কিশোরকিশোরী বাধ্য হয়ে যদি দুষ্কর্মে বা পাপাচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাকে কতখানি দোষারোপ করা যায় তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
সুতরাং, দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবনধারনের মৌলিক উপকরণসমূহ কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে জাতীয়ভিত্তিক সর্মসূচি নিতে হবে। এ দায়িত্ব পরিবার প্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্র প্রধান পর্যন্ত সবার। এ লক্ষ্যে সামাজিক ন্যায় বিচারের স্বার্থে সম্পদের সুষম বণ্টনসহ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে অতি দরিদ্র ও দুস্থদের জন্যে অর্থনৈতিক-আর্থিক নিরাপত্তামূলক সুযোগ সুবিধাদির ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্যে বিশেষ করে অনগ্রসর অঞ্চল ও জনগোষ্টীর জীবনযাত্রার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে সবার আগে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা ছাড়া দারিদ্র্য দূর করার কোনো উপায় নেই।
৫ সুষ্ঠু বিনোদন সঙ্কট
শিশু-কিশোরদের জন্য চাই উপযুক্ত চিত্তবিনোদনমূলক ব্যবস্থা। এজন্য খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সঙ্গীত এবং নানাবিধ সুস্থ বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এ সবের অভাব শিশু-কিশোরকে যত্রতত্র রাস্তাঘাটে ঘুরতে ফিরতে এবং ছুটাছুটি করতে দেখা যায়। এ ধরনের বিশৃঙ্খল ঘোরাফেরা কিশোরদের মনে সাময়িক আনন্দ দিলেও বস্তুত পক্ষে তা একটি আদর্শ ও সুশৃঙ্খলা পরিবশে সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। আর এ কারণেও কিশোররা অসৎ সঙ্গে মেশে এবং একটি অনিয়মতান্ত্রিক পন্থার মধ্যে সময় কাটানোর কারণে তাদের চরিত্রে অনিয়ম এবং অসংলগ্নতার সৃষ্টি হয় এবং পরিণামে তারা হয়ে ওঠে অপরাধপ্রবণ।
প্রসঙ্গত আকাশ সংস্কৃতির অপব্যবহারের কথা বলা প্রয়োজন। ইদানীং নিয়ম নীতিহীনভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা সাইবার ক্যাফেগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের নামে চলছে রীতিমত পর্নোগ্রাফির প্রদর্শনী। সার্ভিস চার্জ কম হওয়ায় এবং অন্যান্য অসৎ সুবিধা থাকায় উঠতি বয়সীরা এখন সাইবার ক্যাফের প্রধান গ্রাহক। অবাধ তথ্য প্রযুক্তির নামে অশ্লীল ওয়েবসাইটগুলো হয়ে উঠছে তাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে। শিক্ষার্থীরা নিজস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নানা অজুহাতে বেরিয়ে এসে সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নো ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করছে। এখানে এক ভিন্ন নেশায় মত্ত হয়ে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি কেউ কেউ পুরোদিনই চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকছে। এর ফলে পড়াশোনার প্রতি তাদের অমনোযোগিতা সৃষ্টিই শুধু নয়, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়াসহ নৈতিক চরিত্রের অবনতি ঘটছে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন দেশে সাইবার ক্যাফে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সাইবার নীতিমালা থাকলেও বাংলাদেশে এখনও তা প্রণীত হয়নি। কিশোরদের জন্য উপযুক্ত কিশোর সাহিত্য, নাটক , চলচ্চিত্র ও বিনোদন কেন্দ্রের চরম সঙ্কট রয়েছে আমাদের।
৬. শিল্পায়ন ও নগরায়ন
শিল্পায়নের ফলে নগরায়ন ত্বরান্বিত হয় এবং শিল্পনির্ভর নগর জীবনে কতিপয় সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এগুলোর মধ্যে আবাসিক সমস্যা অন্যতম। এর অনিবার্য ফলস্বরূপ বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং গোটা শহর জনাকীর্ণ হয়ে পড়ে। চরম আবাসিক সঙ্কটের কারণে জনাকীর্ণ এলাকার কিশোরদের চলাফেরা, গল্পগুজব এবং নানা ধরনের মেলামেশা বৃদ্ধি পায়। একদিকে দারিদ্র্য অন্যদিকে অবাধ ও সারাক্ষণ দলবদ্ধ জীবনযাপন করতে গিয়ে অনেক সময় কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা জাগে। তাদের এই অপরাধপ্রবণতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে দুঃসাহসিক অভিযান ও কাজকর্মকে কেন্দ্র করে। এ অবস্থায় তারা কখনও একাকী আবার কখনও বা ছোট ছোট দল বেঁধে নানা ধরনের অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।
বাংলাদেশের শহর এলাকার মধ্যে রাজধানী ঢাকা শহরের চিত্র ভয়ঙ্কর। বস্তি আর রাস্তায় বেড়ে উঠা শিশু-কিশোররা সবকিছু এখানেই রপ্ত করে। এরা চলতে শিখলেই ছোট ছোট চুরি করে। একটু সাহস হলেই স্ট্রিটলাইট, ম্যানহোল, ইট, রডের টুকরো চুরি করে। পরবর্তীতে পরিবেশ পরিস্থিতি এদেরকে ক্রমশ মাদকদ্রব্যের দিকে টেনে নেয়।
কখনও এরা পরিণত হয় রাজনৈতিক দলের টোকাইবাহিনী যা হয়ে ওঠে হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধ তথা কোনো দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের হাতিয়ার। এদের ব্যবহার করা হয় অস্ত্র বহনের কাজে। এমনকি মাঝে মধ্যে ওদের ব্যবহার করা হয় মানুষ মারার মতো ঘৃণ্য ও ভয়াবহ কাজে। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবেও এরা কাজ করে থাকে। অপরদিকে ছিন্নমূল কিশোরীরা নেমে পড়ে ভাসমান পতিতাবৃত্তিতে। কিন্তু এ তো গেল দরিদ্রদের কথা। ধনীর দুলালেরা নষ্ট হচ্ছে ঘুষখোর, উচ্ছৃঙ্খল, মদ্যপ, জুয়াড়. মাতা পিতার অযতœ, অবহেলা, উদাসীনতা, স্নেহহীনতা, বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যের কারণে। তাছাড়া ড্রাগ, ভিসিআর, ডিশ অ্যান্টেনার অনুপ্রবেশ, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও ঠেশে দিচ্ছে নগরের বিত্তবানদের সন্তানদের অপরাধকর্মে।
৭ স্বাস্থ্যগত কারণ
কিশোর অপরাধের জন্য সামাজিক, রাজনৈতকি, অর্থনৈতিক কারণ ছাড়া স্বাস্থ্যগত কারণও দায়ী হতে পারে। মানসিক ও স্নায়রোগবিশেষজ্ঞগণের মতে, নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর কারণে একটি কিশোরের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কাজ করতে পারে-
বার্থট্রমা : জন্মের সময় কোনো আঘাত পেলে। এটি হতে পারে নিচের কারণগুলোর জন্য :
ক. ফোরসেপ ডেলিভারি, খ. অপস্ট্রাকটেড ডেলিভারি, গ. কর্ড ইনজুরি, ঘ. অত্যধিক রক্তপাত, ঙ. মেকোনিয়াম অ্যাসপিরেশন ও ফিট্যাল সিসট্রেস।
এছাড়া মায়ের অসুস্থতার কারণেও এটি হতে পারে। মা অসুস্থ হতে পারেন নিচের কতিপয় কারণে :
ক. নেশাগ্রস্ত হলে অথবা মদ, গাঁজা, অত্যধিক ঘুমের ওষুধ সেবন করলে, খ. উন্মাদগ্রস্ত বা মানসিক বিকারগ্রস্ত হলে, গ. ডিভোর্সী হল, ঘ. অপরাধপ্রবণ হলে।
জেনিটিক ইনহেরিটেল-এর কারণে শিশু-কিশোররা অপরাধপ্রবণ হতে পারে :
ক. ক্লোমাজমাল ডিজিস, খ. এক্স, ওয়াই, ওয়াই, ক্রোমোজমের শিশুকিশোররা : কয়েদীদের ওপর জরিপে দেখা গেছে যে, এ উপাদানটির কারণে তারা নরহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে জড়িত হয়েছে, গ. বর্ডার লাইন পারসোন্যলিটি থাকলে সামান্য কারণে উত্তেজিত ও বদ মেজাজী হতে পারে, ঘ. শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, বাতিকগ্রস্ত মন, দুর্বল দেহ, ভগ্ন স্বাস্থ্য, বিকলাঙ্গতা ইত্যাদি হলে, ঙ. অস্বাস্থ্যকর বা বস্তির ছিন্নমূল হলে।
৮ ডুয়েল ম্যাসেজ এফেক্ট
মা বললেন ‘হ্যাঁ’ কিন্তু বাবা বললেন, ‘না’- একজন কিশোরের এমন বিব্রতকর অবস্থায় পড়াকে মনোচিকিৎসকরা বলেন ‘ডুয়েল ম্যাসেজ এফেক্ট’। এমন অবস্থা একজন কিশোর-কিশোরীর জন্য দারুণ ক্ষতিকর। এমন অবস্থার শিকার হলে সেই বয়সী কিশোরেরা এক দ্বন্দ্বের অবদ্ধে আটকে পড়ে। তারা বুঝতে পারে না আসলে কোনটা সত্য বা মিথ্যা। কারণ একেই অবস্থায় দুটোই সত্য বা মিথ্যে হতে পারে না। তাই সে মানসিক বিপর্যয়ে পড়ে এবং এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।
ডুয়েল ম্যাসেজ এর ধরন ভিন্নও হতে পারে।
“অভিদের স্কুলে বার্ষিক বনভোজন আর বেশিদিন নেই। সবাই খুব হৈ হুল্লোড় করছে। বন্ধু-বান্ধবরা সবাই মিলে পরিকল্পনা করছে। বনভোজনে কী করবে। সবকিছু ঠিকঠাক। অভির মনেও দারুণ আনন্দ। এখন শুধু বাবা-মাকে জানানোই বাকি। কিন্তু সে কাজটা করতে গিয়েই যতকিছু ঘটল। বাবা বলল, বনভোজনে একা যাওয়ার মতো বড় তুমি এখনো হওনি। অনেক আকুতি মিনতি করেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে অভি না যাওয়াতেই রাজি হলো।”
সাধারণত ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের এমন অবস্থা মুকাবিলা করতে হয়। কেননা এ বয়সী কিশোররা চট করে মুখের ওপর না বলতে পারে না। ওরা নীরবে নিজেদের কষ্ট দিতেই ভালোবাসে। তখন তাদের মাঝে একধরনের দুঃখ বিলাসিতাও কাজ করে। মাতা-পিতা বা অভিভাবকের কথা ব্যথার অপমানের-অসন্তোষের হলেও অপারগতা সত্ত্বেও সেগুলো মেনে চলে।
সাধারণ কিশোর অপেক্ষা কিশোরীরাই এ অবস্থার শিকার হয় বেশি। মেয়েদের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি সেই মেয়েকে শিখিয়ে দেয় যে সে বড় হয়েছে। কিন্তু শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক বৃদ্ধিও প্রয়োজন। আর এর অভাব থাকলে সেই মেয়ে চিন্তা করে যে, সে তেমন একটি বড় হয়নি। তাই তারা মা-বাবার অনুশাসনমূলক বাধা-বিপত্তির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়ে। এতে সে দারুণ বিষণœতায় ভোগে। নিজেকে জগৎ থেকে আলাদা মনে করতে থাকে। এক পর্যায়ে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে বসে এবং তাতে সফল হয় অনেকে।
মা-বাবার দু’জনের দু’রকম বাক্য ব্যয়ে সন্তান আক্রান্ত হয়ে থাকে। যদি না বলতে হয় তবে ভালোভাবে যুক্তিসহকারে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যদি হ্যাঁ করেন তাহলেও তাই।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণের মতে, অবসাদ, মাদকসক্তি, ভগ্নমনস্কতা (Schizophrenia)সহ বহু মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে। মূলত অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এমনটি হয়। তাই কিশোর-কিশোরীদের মনকে বুঝতে হবে। সব সময় ‘না না’ বাক্য কারোরই ভালো লাগার কথা নয়। ওদের মনকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙ্গে দেয়া যাবে না। ওদের দ্বন্দ্বমুক্ত রাখতে হবে এবং যথাসম্ভব স্বাধীনভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দিতে হবে। কখনো যেন মানসিক বিপর্যয় না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরি। ছেলেমেয়ে বিভেদ-বৈষম্য করা ঠিক না যা কিছু নিষিদ্ধ তা দুজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে হবে।
৯. অন্যান্য কারণ
সামাজিক অসাম্য, দুঃখ-দুর্দশা, তদারকীর ঘাটতি, অবিচার, আশৈশব দুর্ব্যবহার প্রাপ্তি, কুসংস্কার ও কুসঙ্গ, প্রাকযৌন অস্থিরতা, প্রকাযৌন অভিজ্ঞতা, অসময়ে পিউবারটি (puberty), অপছন্দকর কর্মস্থান, অতি আদর বা অনাদর, আর্থিক অসচ্ছলতা বা আর্থিক প্রাচুর্য, অনিদ্রা, পরাশ্রয়, বিমাতা বা দূর আত্মীয়দের গলগ্রহ হওয়া, মাতা বা পিতার মালিকের গৃহে বসবাস, মালিক-তনয় দ্বারা নিগ্রহ ও অবজ্ঞা, অপুষ্টি, ভেজাল আহার বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের উপেক্ষা ও উপহাস, দ্বন্দ্বরত মন ও বিবিধ প্রদমিত মনোজট (complex) কিশোরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো কিশোরদের উন্মাদ নির্বোধ ও অপরাধী করে তোলে যা জীবন প্রভাতে তাদের চরিত্রবান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার পথে প্রবল প্রতিবন্ধক।

কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে করণীয়
আগেই বলা হয়েছে যে, মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অধ্যায় হলো কৈশোরকাল। এটি এমন এক সময় যখন একজন ব্যক্তি বয়স ও বুদ্ধি এ উভয়দিক থেকে ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকে বটে, তবে যথার্থ অর্থে বয়সী তথা প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে না। প্রাকৃতিকভাবে জীবনের এ সন্ধিক্ষণটি হয় স্বাপ্নিক ও কৌতূহলোদ্দীপক। এ সময়ে সে জানতে চায়, জানাতে চায়। জানতে ও জানাতে গিয়ে যদি বাধাগ্রস্ত হয় বা হোঁচট খায় তাহলে সে মূক ও বিমূঢ় হয়ে পড়ে, বিভ্রান্তি তাকে অপরাধী করে তোলে, নিয়ে যায় সর্বনাশার অতল গহ্বরে। অন্যদিকে যদি সে অবলীলায় জানতে পারে, জাতে পারে, উত্তর পায়, মানসিক আশ্রয় ও অবলম্বন পায়, নৈতিক দীক্ষা ও প্রেরণা পায় তাহলে তার অগ্রগতি-অগ্রযাত্রার হয়ে ওঠে অনিবার্যভাবে সুন্দর, শাশ্বত ও সাবলীল।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনোমানুষই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নানাবিধ কারণে আবেগ ও পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সুতরাং কিশোর অপরাধীরা পেশাদার অপরাধীদের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হচ্ছে তো অনুনন্ধানপূর্বক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এজন্য সবার আগে দরকার গ্রাম কিংবা শহর, পাড়া কিংবা মহল্লায় সর্বত্র ভালো পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষিত সজ্জন ও অভিভাবক শ্রেণীর সম্মিলিত প্রয়াস। অধ্যয়ন, সৃজনশীলতা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। পরিবার, সমাজ ও স্কুলের পরিবেশ হওয়া দরকার আনন্দময় ও প্রণোদনাপূর্ণ।
পরিবারের দায়িত্ব : শিশু-কিশোরদের কাদামাটির সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। শিল্পী কাদামাটিকে যেভাবে রূপ দিতে চান, সে রূপেই গড়ে তুলতে পারেন। বস্তুত, শিশু-কিশোররা কাদামটির মতোই কোমল। পরিবার ও সমাজ জীবনের পরিপার্শ্বের মধ্যে তারা বেড়ে ওঠে। সভ্যতার প্রথম সোপানই হলে াপরিবার সংগঠন। দয়া, মায়া, প্রেম-ভালোবাসা অপরের প্রতি সৌজন্যবোধ, সহনশীলতা, সত্যবাদিতা প্রভৃতি হৃদয়বৃত্তিগুলোর বিকাশের উপযুক্ত শিক্ষালয় হচ্ছে পরিবার। পরিবারকে বলা যায়, মানব জীবনের প্রধান বুনিয়াদ।
তাই সুষ্ঠুভাবে শিশু-কিশোরের ব্যক্তিত্ব বিকাশে এবং কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে একটি সুসংহত পরিবার এবং পারিবারিক দায়িত্ব অপরিসীম। অস্বীকার করার জো নেই যে, নৈতিক শিক্ষার ভিত এখানেই রচিত হয় যা আজীবন টেকসই হতে পারে। এ প্রসঙ্গে নিম্নে কয়েকটি দিকের প্রতি আলোকপাত করা হলো-
ক. নিয়ন্ত্রণ : শিশু-কিশোরদের এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা তাদের কার্যকলাপ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিবদ্ধ রাখে এবং সীমার বাইরের কাজ করলে তা অন্যায়ের পর্যায়ে পড়বে, এ বোধ তৈরি হয়।
খ. বোধজ্ঞান : শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট নৈতিক মানের সৃষ্টি করতে হবে। স্বাভাবিক উচিত, অনুচিত, ভালোমন্দের সাধারণ প্রভেদ তাকে বুঝতে দিতে হবে।
গ. সাহায্য : মাতা-পিতাকে প্রত্যেক শিশু-কিশোররের আস্থাভাজন হতে হবে। সন্তানেরা যাতে নিজের ও অন্যের উপকার করবার মানসিকতা র্অনণ করতে পারে তার জন্য তাকে সাহায্য করতে হবে।
ঘ. বিশ্বাস : কাকে বিশ্বাস করা উচিত এবং কাকে বিশ্বাস করা অনুচিত এসব সম্বন্ধে তাকে অবহিত করা প্রয়োজন।
ঙ. স্বাধীনতা : একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে কিশোরদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া প্রয়োজন এবং অপরিহার্য নাহলে তাদের কোনো কাজের প্রতিবন্ধক হওয়া অনুচিত।
চ. ভালোবাসা : কিশোররা যেন অনুভব করে যে, তাদের প্রতি তাদের মাতা-পিতার অসীম ভালোবাসা ও গভীর দরদ রয়েছে এবং এ ভালোবাসায় আছে তাদের প্রতি তাদের মাতাপিতার সমতা নীতি।
ছ. প্রশংসা : কিশোরদের প্রতিটি সুন্দর ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং প্রশংসা করতে হবে। তাদেরকে উৎসাহ দেয়া দরকার, তবেই তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্ম নেবে। মাতা-পিতার বলা উচিত ‘আমি জানি এটা তুমি করতে পারবে’। তারপর হয়তো বলা হলো, ‘জানতাম, তুমি পারবে’ ইত্যাদি। কোনও সাফল্যই অভিনন্দন জানানোর জন্য ক্ষুদ্র নয়। কখনও কাজে সফল না হলে সমালোচনা করতে হবে, তবে প্রশংসাসহ। ছেলে যদি ফুটবল খেলতে গিয়ে গোল করতে না পারে, তাহলে তাকে বলা উচিত, ‘তুমি যেভাবে ড্রিব্ল (Dribble) করলে তা অসাধারণ ছিল। কালকে আর একটু ভালো করে প্র্যাকটিস করো।’ এভাবে তাদের ছোটখাট সাফল্যকে মূল্য না দিলে তাদের জীবনে দ্বন্দ্ব ঘিরে আসবে। কোনো লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারবে না ওরা। পায়ের নিচে জমি নড়বড়ে হয়ে যাবে।
জ. রক্ষা কার্য : কিশোররা যেন বিশ্বাস করে যে, মাতা-পিতা তাদের বিপদের বান্ধব, সর্বোপরি সবসময়ের অকৃত্রিম রক্ষাকবচ। ঝ. নিরাপত্তা : কিশোররা যেন উপলব্ধি করে যে, তাদের ঘর তাদের জন্য সর্বোত্তম আশ্রয় ও সর্বাপেক্ষা নিরাপদ স্থান।
ঞ. সংযম : ব্যবহার, কাজকর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ে কতটা পর্যন্ত এগুনো উচিত, কী পরিমাণে একটি কাজ করা উচিত, কখন ও কেন একটি কাজ পরিহার করা উচিত ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিমিতিবোধ ও তৎসম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান তাকে দিতে হবে।
ট. প্রশ্নোত্তর দান : শিশু-কিশোরদের প্রতিটি প্রশ্নের সদুত্তর দেয়া উচিত। জার্মান শিক্ষাবিদ Friedrich froebel (১৭৮২-১৮৫২ ) এর একটি উপদেশ প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘হে শিশুর পিতা, শিশুর প্রতি কঠোর হয়ো না। তার পুনঃপুনঃ প্রশ্নবাণে অস্থিরতা প্রকাশ করো না। প্রতিটি কঠোর শব্দের আঘাত তার জীবন ফুলের পাপড়ি নষ্ট করে দেয়। জীবন তরুণের শাখা বিনষ্ট করে ফেলে।’
কিশোরদেরকে সরল ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় বোঝাতে হবে। কথা অপেক্ষা ঘটনা ও দৃষ্টান্ত তাদেরকে প্রভাবিত করে বেশি। তারা অনুকরণপ্রিয়। সুতরাং মাতা-পিতাকে তাদের সামনে মিথ্যাচার, ভণ্ডামী বা নৈতিকতাবর্জিত আচরণ হতে বিরত থেকে নিজেদেরকে অনুকরণযোগ্য দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতে হবে। মাতা-পিতা হবেন সন্তানের কাছে একজন সৎ ও সুন্দর মানুষের প্রোজ্জ্বল প্রতিভূ।
ঠ. আবিষ্কার করতে দেয়া : একবার এক ঘন বৃষ্টির পর একটি কিশোর বাবার কাছে দৌড়ে এলোÑ দ্যাখো বাবা কী সুন্দর পাথর। বাবা তো কোনও পাত্তাই দিলেন না, বরং রাগ করলেন, কী সব সময় যে কাদা ঘাঁটো! কিশোরটির মুখ শুকিয়ে গেল। বাবা যদি ছেলের এ প্রয়াসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতেন, বা কী সুন্দর! কেথা থেকে পেরে আরও ভালো পেতে পারে! ইত্যাদি। তাহলে ছেলেটি আরও উৎসাহিত হতো। নতুন কিছু করার আনন্দ পেত, জীবনে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এগোনোর সুবিধা হতো।
ড. সন্তানের স্বপ্ন সম্বন্ধে জানা : মাতা-পিতা দেখলেন তাদের কিশোর ছেলেটি খেলোয়াড় হতে চায়। কিংবা কিশোরী মেয়েটি হতে চায় বিমানের পাইলট যা মাতা-পিতার অপছন্দ। এক্ষেত্রে ওদেরকে ভর্ৎসনা করার আগে পুরো ব্যাপারটি ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। তাই ওদের পছন্দের পেশার খোঁজখবর নিতে হবে, সেগুলোর ভবিষ্যৎ জানতে হবে। মাতা-পিতার অপছন্দ হলো ওদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে পুরো ব্যাপারটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করতে হবে।
এখানে এটি বলা হচ্ছে না যে, কিশোর-কিশোরীর সব ইচ্ছেকে বিনা বাক্যে যাচাই-বাছাই ছাড়াই মেনে নিতে হবে। যাচাই বাছাই অবশ্যই করতে হবে। তবে ওদের আবেগ-অনুভূতি-চিন্তা-রুচি ইত্যাদিকেও সহানুভূতির সাথে বিশ্লেষণ করে দেয়া প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের ভূমিকা : কিশোর-কিশোরীরা দিবসের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে বিদ্যালয়ে অবস্থান করে। বিদ্যালয়ের রীতিনীতি, আচরণ, শৃঙ্খলা, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ব্যবহার, দৃষ্টিভঙ্গি, সিলেবাস কারিকুলমা ইত্যাদি কিশোর-কিশোরীদের মানস গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে। একটি বিদ্যালয়ের রীতিনীতি আচরণ-শৃঙ্খলায় যদি সভ্যতা, ভব্যতা, নিয়মানুবর্তিতা, সমতা ইত্যাদিসহ নানামুখী সুস্থ সংস্কৃতির নিয়ত চর্চা ও প্রাত্যহিক অনুশীলন ঘটে তাহলে কিশোর-কিশোরীরা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে বাধ্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ । তাঁদের চরিত্র-মাধুর্য, চিন্তা-চেতনা, আচার-ব্যবহার, রুচি-লেহাজ, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি দ্বারা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। সুতরাং শিক্ষক যদি চত্রিবান না হন, সুন্দর স্বভাবের অধিকারী না হন, সমতা ও সমদর্শিতার গুণে গুণান্বিত হয়ে না ওঠেন, সর্বোপরি শিক্ষার্থীর মনোরাজ্যে একটি নির্মল আসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন তাহলে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর কাছ থেকে নিছক পাঠ্য পুস্তকের বাইরে জীবন গঠনের কোনো দীক্ষা লাভ করতে পারবে না। সুতরাং সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং আদর্শ ও চরিত্রবান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি স্কুল-মাদ্রাসার সিলেবাস কারিকুলামকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিশু-কিশোরদের মাঝে একগুচ্ছ অভিন্ন নৈতিক মূল্যবান মুল্যবোধ তৈরিতে সহায়ক হয়, হয় জীবনমুখী।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছে বৈষম্যের ছড়াছড়ি। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ব বোধের জাগরণ এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের মৈত্রীবন্ধন। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এক্ষেত্রে হাঁটছে বিপ্রতীপ পথে। এ জায়গাটিতে প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি সংস্কার। বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার অসম্ভব বাংলাদেশ বিরাজমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংরাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সাধারণ স্কুল, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, ক্র্যাডেট কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদির ধারা-উপধারা মিলে মোট তের ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। সন্দেহ নেই যে, শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ্যপুস্তক, কারিকুলাম, শিক্ষা পদ্ধতি, সংস্কৃতি একেক রকম। ফলে ওরা একে অপরের সাথে স্বচ্ছন্দে মিশতে পারে না, মন খুলে কথা বলতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একশ্রেণীর অভিভাবকও এতে উৎসাহ যোগান। এভাবে ক্রমশ একজন শিক্ষার্থী অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা (superior of inferior) ভাবতে শুরু করে। সৃষ্টি হয় অতি শৈশবেই বৈষম্য সৃষ্টিকারী মানসিকতা। এ মানসিকতা শিশু-কিশোরকে সমতা, একতা, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদির পরিবতেৃ নিজের অজান্তেই অপরাধমনস্ক অথবা অনুচিত হীনমনা করে তুলতে সহায়ক হয়। কাজেই এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার জন্য মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত একটি একমুখী সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন।