শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৩

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ সিটি ব্যাংকের

city bank.jaliatসিটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের অজ্ঞাতে টাকা উত্তোলন করার
অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগি।বহুবার অভিযোগ করেও ভুক্তভোগি মো. রাজু আহমেদ সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর জানতে পারেননি।

মঙ্গলবার ওই গ্রাহক তার অভিযোগটি জানিয়ে বলেন, ‘তিনি টাকা উত্তোলন না করা সত্ত্বেও ব্যাংক তাকে টাকা পরিশোধ করতে বলছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মাসের এক তারিখেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে মেইলে স্টেটমেন্ট পাঠিয়ে থাকে। গত ৬ এপ্রিল তার নামে উত্তোলিত ২০ হাজার টাকার কথা তিনি ১ মে এর স্টেটমেন্ট দেখে জানতে পারেন।’

এ ব্যাপারে ২ মে তিনি সিটি ব্যংকের ফরিদপুর শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জানান। তখন ব্যাংকের ম্যানেজার তাকে কলসেন্টারে ফোন করে অভিযোগ জানাতে বলেন।

ব্যাংকের ম্যানেজারের পরামর্শ মতো তিনি ওইদিনই (২ মে) বিকেল সাড়ে ৫টায় কলসেন্টারে ফোন করে তার অভিযোগটি জানান। তার অভিযোগটি তদন্ত করে যথাশিগগিরি তাকে জানানো হবে বলে কলসেন্টার থেকে জানানো হয়।

কোনোকিছু জানতে না পেরে ওই গ্রাহক ৯ মে আবারও সিটি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করেন। ২ মে দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের ফলাফল জানতে চাইলে এরকম কোনো অভিযোগ তারা পাননি বলে জানান কলসেন্টারের কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ।

ওইদিন আবারও তারা নতুন করে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে রাখেন এবং যথারীতি তদন্ত করে তাকে জানানো হবে বলে আগের মতোই আশ্বস্ত করা হয়।

এরপর ওই গ্রাহক ১৮ মে, ২০ মে ও ৬ জুন কলসেন্টারে ফোন করে তার অভিযোগের তদন্তের ফলাফল জানতে চাইলে এখনও প্রসেসিং চলছে এবং কোনো আপডেট আসলে তাকে জানানো হবে বলে বলা হয়।

এরপর ওই গ্রাহক ঈদের আগে আবারও কলসেন্টারে ফোন করে তার অভিযোগের তদন্তের ফলাফল জানতে চান। তখন কলসেন্টার থেকে তাকে বলা হয়, ‘এই প্রবলেমটা ক্লোজ হয়ে গেছে। আপনার ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকাটা তোলা হয়েছে। আপনি টাকাটা পরিশোধ করে দেন।’

টাকা উত্তোলন না করেও টাকা পরিশোধের এমন কথা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে না পেরে ওই কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভকে জানান, তাকে কিছুই না জানিয়ে কেন প্রবলেমটা ক্লোজ করা হলো। তিনি আবারও তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে রাখতে এবং সুষ্ঠু তদন্তের কথা বলেন।

এরপর গত ৭ আগস্ট সিটি ব্যাংক ফরিদপুর শাখা থেকে ফোন করে ওই গ্রাহককে ঈদের পর ব্যাংকে এসে কথা বলতে বলেন। ঈদের বন্ধের পর প্রথম খোলার দিনই ওই গ্রাহক সিটি ব্যাংক ফরিদপুর শাখায় গিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করেন। ওই গ্রাহক ম্যানেজারকে বলেন, ‘আমি টাকা তুলে থাকলে আপনাদের কাছে এর প্রমাণ স্বরূপ এটিএম বুথে ধারণকৃত ভিডিও দেখান। প্রমাণ করতে পারলে আমি সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলিত পুরো টাকাই পরিশোধ করে দেবো। কিন্তু প্রমাণ করতে না পারলে আমার পক্ষে এ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে বিড়ম্বিত ওই গ্রাহক মোবাইল অপারেটর রবির স্পেশালিস্ট (আরও) হিসেবে বর্তমানে ফরিদপুরে চাকরি করছেন। ওই গ্রাহকের নামে কথিত ২০ হাজার টাকা উত্তোলনের ট্রানজেকশন তারিখ হচ্ছে ০৬/০৪/২০১৩ বাংলামেইল

লাখ টাকা ভুয়া ম্যাসেজ

mobaile.messegesমুঠোফোনে ভুয়া ক্ষুদেবার্তা (ম্যাসেজ) দিয়ে কয়েকটি বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে
নিয়েছে একটি চক্র।

দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গত কয়েকদিনে এ ধরনের অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিকাশ এজেন্টরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ফলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা নিয়ে গ্রাহক ও এজেন্টরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েছেন।

এজেন্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের তমা ইন্টারন্যাশনাল, আলম মোবাইল হাউজ, এসএম পত্রিকা ঘর, জিয়ানগরের খলিশ্বর বাজারের গোলাম মোস্তফাসহ কয়েকটি বিকাশ এজেন্টের মুঠোফোনে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল করে বলা হয় আপনার বিকাশ একাউন্টে টাকা পাঠালাম। আমার লোক এসে টাকা নিয়ে যাবে। এরপর বিকাশের অবিকল ম্যাসেজে ওই এজেন্টের মুঠোফোনে টাকার পরিমাণ আসে। সেই মোতাবেক ওই লোকের প্রতিনিধি এসে এজেন্ট থেকে পরিচয় দিয়ে টাকা তুলে নেয়। পরে ওই এজেন্ট তার ব্যালান্স চেক করে দেখে তার একাউন্টে বার্তার কোনো টাকা আসেনি। এভাবে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বিকাশ এজেন্ট মালিকরা একলাখ ত্রিশ হাজার টাকা খুইয়েছেন।

বিকাশ এজেন্ট মাসুদ রানা বলেন, মুঠোফোনে ম্যাসেজ দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই, এটি ভুয়া ম্যাসেজ। ব্যালান্স চেক না করে এভাবে টাকা দিতে গিয়ে অনেক এজেন্ট প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

বিকাশের টেরিটরি ব্যবস্থাপক (টিএম) আবু নাছের মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা এজেন্ট দেওয়ার সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব ব্যাপারে সতর্ক করেছি। প্রতি মাসে এজেন্টদের লিখিত নির্দেশনায় এসব বলা হয়। তারপরও কেউ প্রতারণার শিকার হলে আমাদের করার কিছু নেই।’

দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, গত কয়েকদিন আগে এ ধরনের প্রতারণার একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। ওই মোবাইলের নম্বর ধরে ক্ষতিগ্রস্তের টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

ঘুম হারানো রাত


romantic photo,love photo.ভালবাসার ছবিকখনো যদি এমন হয়-
তুমি আর আমি একসাথে আমাদের সব স্বপ্ন পূরণ করবো
কখনো যদি এমন হয়-
আমি কিছু না বলতেই তুমি সব শুনে নেবে
আমাদের চলার পথও এক হয়ে যাবে তখন
আমার হাতের মুঠোয় তোমার উষ্ণ স্পর্শ থাকবে সেদিন
কেন আজ মনে হয় তুমিহিনা অসম্পূর্ণ এ পৃথিবী?
কেন আজ প্রথম প্রেমের শিহরণ তুমিবিনা অসম্পৃক্ত?
সেই তোমার পাশে কাটানো কোন এক বসন্ত
আর ভালবাসার নিঃশ্বাসে জড়িয়ে থাকা মায়াজালের হাতছানি-
আজও প্রতিরাতে আমাকে কাঁদায়
কখনো যদি এমন হয়-
সব শেষের শুরুতে শুধু তুমি আর আমি
আরেকবার হারাবো আমি তোমার বিশ্বাসে
আরেকবার তুমি ফিরবে সেদিন
আগের মতই পেছন থেকে চোখ জড়িয়ে বলবে-
বল তো আমি কে?
আরেকবার আমি তোমার মিষ্টি হাসির প্লাবনে ভেসে যাব
যেদিন মুছে যাবে এসব স্মৃতি,
হৃদয়টা হয়তো পাবে তৃপ্তি
জানি সেদিন ভাসবে চোখে
জীবনের শেষ দৃশ্যটি...

এই পর্যন্ত লিখে ডাইরিটা বন্ধ করে দেয় আবির। অনেকটাই তো লেখা হল, অথচ যার জন্য এতকিছু সে-ই আজ অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে, অন্য কেউ আজ থেকে তাকে নিয়ে এমন কিছু লিখবে। ঠিক এমন কিছু নয়, এটা তো আবিরের ভেঙ্গে যাওয়া হৃদয়ের অতল থেকে উঠে আসা অশ্রাব্য চিৎকার। তাকে নিয়ে হয়তো লেখা হবে নতুন করে সাজান একটি ঘরের কাব্য, অথবা একই চাদরে জড়িয়ে থাকা কয়েকটি ভালোবাসার মুহূর্ত যেখানে সে অন্য কারো চোখের নীলে আপন স্বর্গ খুঁজে নেবে...

রাত প্রায় ২ টা হতে চলল। এখনো ঘুম আসছে না আবিরের। বাস্তব কারণ- শত জোরাজোরি করেও আম্মু আজ রাত ৮ টার ওষুধ গেলাতে পারেনি তাকে। আর মানসিক কারণ- আজকে আনিলার বিয়ে।

মাথার ভেতরের অসহ্য যন্ত্রণাটাকে পাত্তা না দিয়ে বিছানায় উঠে বসে আবির। পিসি টেবিলের সামনে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে। আজকাল প্রায়ই 'Bypolar Disorder' নিয়ে ছোটোখাটো গবেষণা করে সে। এতে খুব যে লাভ হয় তা না। সবজায়গায় একই ধরণের কিছু শব্দ তার দিকে আঙ্গুল তাক করে বসে আছে-'' আজীবন তোমাকে এই অসুখ নিয়েই বাঁচতে হবে। ওষুধ দিয়ে অনেকটা বড় সময় পর্যন্ত এর অস্তিত্ব ঢেকে রাখা যায়, কিন্তু ওষুধ ছাড়লেই যেই কে সেই''

প্রথম প্রথম আবিরের এই 'আজীবন' শব্দটা পড়লেই ভয় হত। আনিলা কি পারবে পুরো পৃথিবীর সাথে এক হাতে যুদ্ধ করে এই বাস্তবতা মেনে নিতে? এই অসুখের জন্য একটানা ৪ বছর পড়াশোনা নষ্ট হওয়া একটি ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে? বাবা হারানো এই মেয়েটা মায়ের সংসারে সারাজীবন কষ্টই পেয়ে গিয়েছে, সে কি চাইবে অসুস্থ একটা ছেলের ভার নিজের কাঁধে নিয়ে সেই কষ্টের বোঝা বাড়াতে?
এসব দুঃস্বপ্ন এক মুহূর্তেই নাই হয়ে গিয়েছিল যেদিন ধানমণ্ডির রিজবিজের দোকানে বসে কোন এক সন্ধায় আধো আলো আধো ছায়ার মাঝে আবিরের কাঁধে মাথা রেখে আনিলা সরল কণ্ঠে বলেছিল-
'' তোমার সবকিছু জেনেই তো আমি তোমাকে ভালবেসেছি। আমার কাছে তো তুমি শুকনো পাতার মত ঝরে পড়া কোন প্রাণ নও। আমার কাছে তুমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিনান্সে ৫৭ তম হয়ে চান্স পাওয়া একটা তুখর ছেলে, যেই ছেলের লেখা গান শুনে নবীন বরনে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ডেইলি স্টারে ছাপান যার প্রতিটি লেখা আমি কেটে রেখে দিতাম আর রাতের বেলা পড়ার বই বাদ দিয়ে একই লেখা বারবার পড়তাম''
হ্যাঁ, আনিলা নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করত। ওর কাছে তখন হয়তো বাস্তবতার চেয়ে আবেগের রাজ্যেরই হাতছানি ছিল বেশি। তাই জীবন আর জগতের নিষ্ঠুরতা বুঝে উঠতে পারেনি। অথবা হয়তো আনিলার মত মানুষের হাত ধরেই নতুন নিষ্ঠুরতার জন্ম হয়।
অস্বাভাবিক মানসিক চাপ এই অসুখের একটা বড় কারণ বলে মনে করা হয়। আবির ছিল বংশের বড় ছেলে, মা-বাবার প্রথম সন্তান। ছোটবেলা থেকেই বাবার ভয়ঙ্কর শাসন মাঝে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ। মায়ের স্নেহের যতটুকু ভাগিদার সে ছিল তাও একসময় চাপা পড়ে বাবার ভয়ে ভীত মায়ের অকারন শৃঙ্খলের পিছে। সে ভাল ছাত্র ছিল তাই সবার হয়তো তাকে ঘিরে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা টা কখন যে তাকে একজন কারাবন্দী মানুষ করে দিয়েছে সেটা হয়তো তার পরিবারের মানুষও বুঝতে উঠতে পারেনি। বহুদিন পর্যন্ত বাবার উপর একটা ক্ষোভ কাজ করত আবিরের। সময়ের সাথে সাথে সেই ক্ষোভটাই এই অসুস্থতা আকারে বড় হয়ে দেখা দেয়।

আবির যখন বারবার ইউনিভার্সিটি তে রি-এডমিশন নিয়েও পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিল না, মিলির মত হীন চরিত্রের একটি মেয়ের পাল্লায় পড়ে যখন পুরো বন্ধুমহলের চোখের বিষ হয়ে গিয়েছিল সে, পরিবারের কারোই যখন আর তাকে নিয়ে আশার বালাই ছিল না ঠিক সেই সময়টাতে আনিলা এসেছিল তার সাদাকালো জীবনটাতে নতুন করে রঙের ছোঁয়া দিতে।
-এই তুমি রাত ৮ টার ওষুধ খাইস?
-না
-কেন না?
-ইচ্ছা হয় নাই, তাই খাই নাই। তোমার কি তাতে?
-আমার কিছুই না। শুধু আমার বাবুটার সাথে সারারাত জেগে বসে থাকতে হবে। আমার জাগতে কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু বাবুটাকে গান শুনাতে হবে। আমি জানি বাবুটা গান শুনাবে, কিন্তু বাবুর কাউয়া মার্কা গলা শুনে আমার শ্বশুর- শাশুড়ির ঘুম ভেঙ্গে যাবে- আমার সমস্যাটা এখানেই...
আর আনিলার এসব অকাট্য(???) যুক্তির সামনে আবিরকে সমর্পণ করতে হত।
মাঝে মাঝে আবিরের মনে হত আনিলা না থাকলে আজ হয়তো তার স্থান হত কোন মানসিক হাসপাতালের বিছানায়। তাছাড়া কোন বাসার মানুষই প্রতিদিন ভাঙচুরের শব্দ সহ্য করতে রাজি নয়। ছোট বোনটার পরীক্ষার সময়ও রাত জেগে মাকে পাহারা দিতে হয়েছে কখন না জানি ছেলে উঠে কি করে বসে- এমন ছেলেকে কেই বা ঘরে রাখতে চায়?
আর এখন এই 'আজীবন' শব্দটা পড়তেই আবিরের ঠোঁটে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে। আনিলা আজ হেরে গিয়েছে। আজ না, হেরেছে আরও ৩ মাস আগেই যখন আবির আনিলার ফুলার রোডের বাসার সামনে গিয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্যে ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিল আর আনিলা বাসার নিচে এসে বলেছিল-
''চলে যাও এখান থেকে। আমার পক্ষে আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। আমি পারব না আমার মাকে এত বড় কষ্ট দিতে''
আবির কিছুই বলেনি সেদিন। আনিলার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভেবেছিল-
''আমি তো বলিনি তোমাকে আমার হৃদয়ে এসে বাসা বাধতে, চাইনি তোমাকে আমার করে পেতে। আমার মোহে অন্ধ তুমি যেদিন আমার মাঝে ধরা দিয়েছিলে সেদিনও কি এই সমাপ্তি ভেবে রেখেছিলে?''
ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ছোট বোনের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় আবির। ঘরের মধ্যে এই একটামাত্র মানুষ যে কিনা সত্যিকার অর্থে তাকে বোঝে। বয়স মাত্র ১৭, অথচ কথা বলার সময় মাথা নাড়ে এমনভাবে যেন সবজান্তা শমশের। আবিরের যত গান, কবিতা আর লেখা আছে সবকিছুর প্রথম পাঠকের দাবিদার তিনি।

বোনটার বিছানার পাশে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করে চোখে জল নিয়ে একটা ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। সেই ছবিতে বাবা- মায়ের পাশে ছোট্ট একটা আবির, সেই আবিরের কোলে অনভ্যস্ত হাতে ধরা ৯ মাস বয়সী অথৈ।

কান্নাটা গলায় এসে আটকে যায় আবিরের। নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড অচেনা মনে হতে থাকে তখন। ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে। চোখের সামনে তখন শেষ রাতের তারার ছড়াছড়ি আর মনের মধ্যে নিজেকে বদলে দেয়ার আরেকটা আকুতির হাতছানি।

জেনে নিন তাওবা করলে কি হয়

ইসলাম-islam

হযরত আনাস ইবনে মালক (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, "বান্দা গুনাহ করার পর তাওবা করলে আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উট কোন ময়দানে হারিয়ে যাবার পর হঠাৎ তা পেয়ে গেলে যে খুশী হয়।"

– বুখারী, মুসলিম, রাহে আমল- ৩৬০

যখন কোন মুসলমান লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে

আল্লাহ্‌-allha .islam.ইসলাম

“কোন মুসলমান যখন ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই) বলে তখন বাক্যটি আকাশসমূহ ছেদ করে যায়, এমনকি তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সামনে গিয়ে পৌঁছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বলেন: “স্থির হও”; তখন বাক্যটি বলে, “আমি কি-করে স্থির হব?- যে আমাকে উচ্চারন করেছে, এখনও তাকে মাফ করা হয়নি!” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তখন বলেন: “আমি তোমাকে এমন লোকের জিহ্বা দিয়ে উচ্চারন করিয়েছি; উচ্চারনের আগেই যাকে মাফ করে দিয়েছি” [হাদীসে কুদসী]

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

ঝিলমিল রাত

সাত পা একসঙ্গে হাঁটলে তবে
বন্ধু হয়, আমি বন্ধু নই/ রোজ যে নৌকোয় আসো তুমি
রাতের গল্প
আমি সে নৌকোর পলকা ছই… (জয় গোস্বামী)

তারপর একসময় বৃষ্টি ধরে এল। একসময় মানে, শহরে সন্ধে নামার রাতকলি মুহূর্তে। বৃষ্টির বোলচাল বদলে এখন ঘনঘন রিমঝিম থেকে টিপিস-টিপিস। সে তেহাই দিচ্ছে কখনও টুপ-টাপ-টুপ! কালো মেঘের চাদর কেটে কেটে কখন ফিকে হয়ে গেল গহন ভাদরের গগনও। নিঃশ্বাসে বুঝতে পারছি, বাতাসে বৃষ্টির গন্ধে একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে কলকাতার নিজস্ব গন্ধ।

নির্জন পথের একটা বাঁক ঘুরতেই নিওনের আলোয় রঞ্জাকে দেখতে ইচ্ছে করল ফিরে ফিরে। ওর বুকের গন্ধ নাকে এল, নাগরিক গন্ধ সরিয়ে। বৃষ্টি ভিজে চোখের কাজল, এখন স্মোকি হয়ে গেছে। বেশ গহন। যেন স্মাজার দিয়ে উজানে আলতো টান দিয়েছে ও! চিবুকের তিলটা মারকাটারি লাগছে।

দেখতে দেখতেই দিলভাসান। মনে হল, ওই অদূরে লেকের কথা। লেকের জলে সদ্য সদ্য বৃষ্টির জল যে বর্ষামঙ্গল কাব্য লেখা শেষ করেছে, গাছেরা তুমুল উৎসাহে হয়তো পড়ে ফেলবে আজ, এক্ষুনি-এক্ষুনি। একটা প্রাচীন ইউক্যালিপটাস গাছের নিচ দিয়ে যেতে যেতে মনে হল, লেকের কালো জলে ওদের ছায়ার সাপ দীর্ঘ হচ্ছে!

এই শহরের মধ্যে রোজ এমন কত যে কাব্য লেখা হয়- বিজন সেতু, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, সরোবর, পূর্ণদাস রোড, আহিরিটোলারা জানে তার খবর। এলোমেলো এসবের কথা ভাবতে ভাবতেই কখন দু’জনে এসে পড়েছি যোধপুর। ২৮/৪ গড়িয়াহাট রোডের তন্দুর পার্ক। প্রথম পেগটা শেষ করে, মেনু চাইল রঞ্জা।

মিক্সড কাবাবের কথা মনে পড়ল। এঁদের চাইনিজ আর নর্থ ইন্ডিয়ান- দুটোতেই বেশ সুনাম রয়েছে। চাইনিজ স্টার্টারও বেশ জমজমাট। মেনুতে যে সব লিস্টি, গোগ্রাসে তা পড়তে পড়তে মিক্সড কাবাবের-ই অর্ডার দিলাম। ঝিলমিল উৎসব চোখে রঞ্জা একটু কাছে সরে এসে বসল। টেবিলে রাখা একটা হাত মুঠোয় তুলে নিয়ে বলল,

- এই জয়েন্টে কেন এত যাদবপুরের লোকজন আসে জানো ফকির?

- প্রথমত কম খরচ। লোকেশন আর খাবারের মান ভাল হওয়ার কারণেও খুব জনপ্রিয় তন্দুর পার্ক। এবং একইসঙ্গে হল্লাবাজ ও নিভৃতে মন দেওয়া-নেওয়ার জয়েন্ট!

- ঠিক। খুব সত্যি কথা। এখানে বসেই যাদবপুর ক্যাম্পাসের কত প্রেম যে দীর্ঘজীবী হল। যুগলে যুগলে কত কানাকানি। ভেঙে চুরমার কত!

- তোমার হৃদয়ে পৌছোবার পথ বড় দীর্ঘ-/ যেতে যেতে সমস্ত জীবন কেটে গেল।

- বাজে কবিতা। খুব খারাপ। যা-তা!

- সুজিত সরকার যা-তা?

- শোনো তবে… যা বলতে চাইছ- তার জবাব শোনো শঙ্খ ঘোষে। ‘সঙ্গিনী : মূর্খ বড়ো সামাজিক নয়’। হাতের উপর হাত রাখা সহজ নয়/ সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়/ এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে/ সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়।

- আরিব্বাস। এটা তো দারুণ। ভেঙে চুরমারের পর এটাই যায়! এই জন্য তুই-তুই!

- আমি-আমি কী?

- লোলো একটা! ফকিরের আদরের ধন, পাগলি!

বাইরে ফের কি বৃষ্টি এল অন্ধকারে? মেঘ ডাকছে। ডাকুক। রাতভর বৃষ্টি হবে আজ। ওয়েটার দুটো বিপি লার্জ রিপিট করে গেল। ঠোঁট ডুবিয়ে বললাম,

- ইদানিং জেইউ-এর সেই রাশটা এখানে নেই রঞ্জা। নেই মানে, ক্যাম্পাসের কাছেই তো একাধিক ঠেক গড়ে উঠেছে। পার্ক স্ট্রিট বা বাইপাসে পাড়ি জমাচ্ছেন কেউ কেউ। একটা বড় অংশ সাউথসিটি-নন্দনে।

কথার মাঝে এল মিক্সড কাবাব। এখানে এলে রঞ্জাবতীর প্রিয় ডিশ। দিব্য খুশি মেয়ে। যেখানে বসেছি, সেখান থেকে দারুশালার সম্ভ্রান্ত সেলারটা নজরে আসছে। নানা পানীয়ের বোতলে ঠিকরে পড়ছে আলো। বার টেন্ডার মাতোয়ারা হয়ে পেগ সাজচ্ছে। চোখ গেল তন্দুর পার্কের ফ্যামিলি জোনে, বেশ নিরিবিলি।

- লোকজনের আসার এটাও একটা কারণ। একসঙ্গে দুটো জোনকেই পায়।

রঞ্জার কথার সমর্থনে বললাম,

- এই শহরের বহু পানশালায় এখন এই ব্যবস্থা। তুমি ঠিক-ই বলেছ। এতে উইকএন্ডে বলো, কোনও ছোটখাটো ফ্যামিলি গেট টুগেদারে জনতাকে ছুটোছুটি করতে হয় না। শুধু সপরিবারে এসে পড়লেই হল।

বিল দিয়ে যখন উঠছি, মনে হল রঞ্জার পা যেন টলে গেল একটু। বাইরে এসে দু’জনেই আনন্দে দিশেহারা। তুমুল বৃষ্টি নেমেছে ফের। চরাচরের আকাশ ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎরেখার তরবারিতে। রঞ্জাকে জড়িয়ে ভিজতে ভিজতে হাঁটতে ইচ্ছে করল। হাঁটছি। ওর ভিজে চুল, ঠোঁট থেকে চিবুকে গড়িয়ে পড়া বারিধারা, ভিজে শরীরের সুঘ্রাণে নেশা চড়ছে ফকিরের। নেশায় বুঁদ শনিবারিয়া নিশি!

ক্রমশ…

-আবীর মুখোপাধ্যায়

দীপিকা ৫ কোটির নায়িকা

দীপিকা,dipika

২০০৭ থেকে ‘ওম শান্তি ওম’-এর মতো বিগ বাজেটের ছবির মধ্য দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু। ক্যারিয়ারের সবকটি ছবিই বলিউড বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিট হয়েছে। আর এই বছরটা দীপিকার জন্য সবচেয়ে লাকি বছর। এই ২০১৩-এর অর্ধ বছরে ‘রেস টু’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ ও ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিগুলো মুক্তি পায়। আর এই ৩টি ছবিই বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হিট হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ বলিউডের এ যাবতকালের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এই ৩টি ছবির ব্যবসায় দীপিকা পাড়ুকোন এই বছরে ৫০০ কোটির নায়িকা হিসেবে বক্স অফিসে স্থান পেয়েছেন। আরও হিট দু’টি ছবি রয়েই গেছে। খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে সঞ্জয় লীলা বানসালীর ‘রাম লীলা’ ছবিটি। বরাবরের মতো বানশালীর ছবি এবারও বক্স অফিসে সাফল্যের ছোঁয়া নেবে, এতো নিঃসন্দেহেই বলা যায়। এর চেয়েও বড় কথা হলো হার্টথ্রব রজনীকান্তের সঙ্গেও একটি ছবি মুক্তি পেতে চলেছে তার। ছবিটির নাম ‘কচাড়িয়ান’এসব হিসেব কষলে দেখা যায়, দীপিকা পাড়ুকোন বক্স অফিসে এ বছর কমপক্ষে ৭০০ কোটি রুপির নায়িকা হিসেবে স্থান করে নেবেন। যা বলিউডের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঘটতে যাচ্ছে

খোলামেলা পোশাকে অগ্নি কন্যা মাহি


মাহি

 ঢালিউড মাতাচ্ছেন ঢালি পাড়ায় অগ্নিকন্যা মাহি। তিনি এখন এক আলোচিত নাম। ক্রমাগত দর্শকদের মনের খোঁড়াক মেটাচ্ছেন।

সম্প্রতি তিনি অভিনয় করছেন নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীর ‘অগ্নি’ চলচ্চিত্রে। তার বিপরীতে রয়েছেন আরেফিন শুভ।

রোববার এর শুটিং চলছিল বি এফ ডি সির চার নম্বর ফ্লোরের বাংলা নাইট ডিস্কো বারে। সেখানেও খোলামেলা পোশাকে আমি দিওয়ানা নামক এক আইটেম গানের সাথে নাচছিলেন তিনি। মাহির নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন নির্মাতা সহ উপস্থিত সবাই। আসছে কোরবানির ঈদে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।

শুধু তোমার জন্য

BY- অজানা পথিক

আমি আশা । বসে আছি নিজের ঘরে। আজ আকাশ টা মেঘলা এলোমেলো বাতাস বয়ছে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে পুরানো সব দিনে, জানি পারবনা তবু স্মৃতিতে তো নিজেকে হারাতে পারি ।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগের কথা এমন এক দিনে দেখা হয় নীর এর সাথে। নীর আর আমি একই ভর্সিটিতে পড়তাম ও আমার সিনিয়ার ছিল আর নীলার বড় ভাই। ছোট থেকেই আমি খুব চঞ্চল ছিলাম আর জীবনের প্রতিটা সময় আনন্দে কাটাতাম । মা বাবার একমাএ মেয়ে বলে তারা কখন কোন কাজে বাঁধা দেয়নি। দেখতে দেখতে নীর এর সাথে আমার খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একটু শান্ত সভাবের ছিল ছেলেটা তাই ওকে খেপিয়ে বেশ মজা লাগত।

অর্পূব গানের গলা ছিল ওর, আমিও ঠিকঠাক গেয়ে নিতাম, দুজনে মিলে ভর্সিটি মাতিয়ে রেখেছিলাম। কিছু দিনের মধ্যে আমাদের এক নামে চিনতে লাগে সকলে। যে কোন অনুষ্ঠান আমাদের ছাড়া অপূর্ণ । আমরা এক সাথে বসে গান তুলতাম। মাঝে মাঝে লক্ষ্য করতাম নীর আমার দিকে মুগ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে। আরে বাবা সামনে কি ভূত বসে আছে, নাকি গাধাটা আমার প্রেমে পরতে শুরু করল। যাই হোক, সামনে যাই থাকত ওটা দিয়ে ওর মাথায় একটা বারি দিয়ে বলতাম, কি দেখছিস? ও একটু হেসে বলত,কিছু না ।। হাসিতে এতো কৃপণতা কেন যে ছেলেটার । এই নীর তোর মুখে কি কোন সমস্যা আছে...? কেন রে... কি হয়ছে? না এভাবে হাসলি যেন বেশি হাসলে তোর দাঁত গুলো খুলে পরে যাবে। কেন তোর মত হি হি করে হাসব নাকি, যাতে আশেপাশে যারা আছে সবাই তাকিয়ে দেখে।

যা যা , এটা বল যে হাসতে জানিস না আমার হাসির দিকে নজর দিবি না।
ওকে নিয়ে প্রায় সপিং এ যেতাম। সত্যি বলতে ওকে সপিং এ নিয়ে যাওয়ার মজাটাই আলাদা, চুপচাপ আমার সাথে দাঁড়িয়ে থাকত আর আমি যতই দেরি করি না কেন কখনো রাগ করে চলে যেত না। ও সাথে থাকলে কখনো সপিং ব্যাগ আমাকে ধরতে হত না আর ওর পছন্দটাও ভাল ছিল ।

দেখতেও মোটামোটি ভালই ছিল, অনেক মেয়ে ওর আশেপাশে ঘুরাঘুরি করত কিন্তু নীর যেন ওদের দেখতই না এমন ভাব নিয়ে থাকত। কিরে কেউ আছে নাকি , থাকলে বলে দে নইলে ওদের থেকে কাউকে ঠিক করি....।ও হেসে বলত , অন্য কারও দরকার নেই তুই আছিস না, তোকে বিয়ে করব। আরে থাম থাম, তোকে কে বলেছে যে আমি তোর মত গাধাকে বিয়ে করব। দুনিয়ায কি আর কোন ছেলে নেই।

ভালই যাচ্ছিল দিনগুলো , একদিন আমরা লাইব্রেরীতে বসে ছিলাম যাবার সময় ওর একটা ডাইরি আমার বই এর সাথে আমার কাছে এসে য়ায,ওটা ওর পারসনাল ডাইরি ছিল। জানি ও জানলে খুব রাগ করবে , তবু জানিনা কেন আমি ডাইরি টা পড়া শুরু করি। ডাইরি তে শুধু আমার কথাই লেখা ,বুঝতে বাকি ছিলনা গাধাটা আমাকে পাগলের মত ভালবাসে । কিন্তু আমার পক্ষে ওর ভালবাসা শিকার করা সম্ভব নয়। প্রতিটা মেয়ে চায় কেউ তাকে পাগলের মত ভালবাসুক কিন্তু আমার কি ভাগ্য!! আমাকে যে পেয়েও হারাতে হবে।

নীর আমাকে আনেক বার বলার চেষ্টা করে ওর মনের কখা কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দেই, ওর থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করি । কিন্তু 14 ফের্রুয়ারি এক গুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে আমার সামনে আসে আর সব না বলা কথা গুলো বলে দেয়, যা আমি চাইনি ও কখনো আমাকে বলুক।

এসব কি বলছ নীর তুই আর আমি এক সাথে , তুই ভাবলি কি করে এটা কখনো সম্ভব । আমি তোর সাথে একটু হেসে খেলে কথা বলছি বলে তুই এসব ভেবে ফেললি। তুই তো দেখেছিস আমার জীবন কেমন, এসি ছাড়া ঘুমাতে পারি না , কখনো কিছু করার আগে ভাবিনি , যা ভাল লাগে সব পেয়ে যাই কখনো না শুনতে হয় না আমাকে। তোর পক্ষে আমার খরচ উঠানো সম্ভব না, আর তুই আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিস কি করে । নাকি আমার বাবার টাকায় এক লাফে বড়লোক হবার ইচ্ছা জেগেছে ।

আমার কথাগুলো শুনে ওর চোখ লাল হয়ে যায় ।ও আমাকে বলে এতোদিন এসব কি ছিল আশা ? এক দিন এর জন্য কি তোমার মনে আমার জন্য ভালবাসা জন্মে নি ? না !!! আমি তো গরিব ,তোদের মত ধনী না , আমার মত ছেলেকে এতদিন time দিয়েছিস এজন্য tnx … একখা বলে সে চলে যায় এক বারও ফিরে তাকায় না ।।

ঐ দিন এর পর থেকে কখনো দেখা হয়নি নীর এর সাথে , কখনে জানতেও দেয় নি কোথায় আছে কেমন আছে । আজ আমি ওর বিয়ের কার্ড হাতে বসে আছি,,,,,, সুনলাম অনেক ভাল চাকরি করে , বেশ ধনী ও এখন । জেনে ভাল লাগল নীর আজ সুখে আছে , জীবন সাথি খুঁজে পেয়েছে যে ওকে কখনো ছেড়ে যাবে না ।

নীর কখনো তোকে বলা হবে না, লাল গোলাপ হাতে সাদা শার্ট পরা ঐ দিন তোকে অনেক সুন্দর লাগছিল । হয়তো তুই কখনো জানতে পারবি না কতটা ভালবাসি আমি তোকে । তুই আমাকে যতটা ভালবাসিস এর চেয়ে আনেক বেশি , আনেক বেশি .....। সারা জীবন যেন কাঁদতে না হয় এজন্য ঐ দিন তোকে অনেক কাঁদিয়ে ছিলাম রে , হয়তো আমি তোর চেয়ে অনেক বেশি কেঁদেছিলাম । কিন্তু আমার যে আর কিছু করার ছিল না , ভালবাসা যে আমার জন্য নয় । ডাক্তার বলেছে বশি সময় নেই আমার কাছে, বেশি হলে আর তিন মাস।।। আমার জন্য যে কষ্টটা মা বাবা পাচ্ছে এ কষ্টটা আমি তোকে দিতে চাইনি । এ ক্যান্সার যে আমাকে বেশি দিন বাঁচতে দিবে না এটা আমার আগে থেকেই জানা ছিল । তাইতো তোকে আমার এ ছোট জীবনের সাথে জড়াতে চাই না । ভালবাসা কি এর মানে আমি জানি , তাই যাকে ভালবেসেছি তাকে সারা জীবন সুখি দেখতে চাই। জানি আমার ওই কথাগুলো তোকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল, কিন্তু কি করব বল আমার এই সত্য জানলে যে আরও বেশি কষ্ট পেতি । আমার সাথে তোর জীবন টাও শেষ হয়ে যেত যা আমি দেখতে পারব না । দেখ নীর আমার কখাগুলো আজ তোকে কই পৌঁছে দিয়েছে । তোর জন্য না হয় আমি খারাপ আর স্বাথর্পর ই রইলাম । তুই ঠিকই বলেছিস, আমি পাষান , আমার কাছে মন নেই নেই .... কারন আমার মনটা আমি অনেক আগেই তোকে দিয়ে দিয়েছি । জানিস আমার আর কোন দু:খ নেই , কারন আমি জানি আমি সারা জীবন বেঁচে থাকব তোর মনে তোর হাসি হয়ে । এই আশার জীবনে এখন শুধ একটাই আশা , যাবার আগে তোকে দূর থেকে একবার দেখতে চাই । জানি তোর চোখে কখনো চোখ রাখতে পারব না , তোর কোন প্রশ্নের উওর আমার কাছে আজও নেই । শুধু বলতে চাই সুখে থাক

জুলেখার কান্না

জুলেখা কাঁদিতেছে ।
ভালবাসার গান,love photo
রাত নয়টা, কর্মচঞ্চল এই শহরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় । আর আকাশে গোল থালার মতো একটি বিশাল স্বচ্ছ চাঁদ এই গুরুত্বটাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে উঠতি সাহিত্যিকদের কাছে । ফেসবুকে আজ এই মূহূর্তে তাই চাঁদময় স্ট্যাটাসের ছড়াছড়ি । কিন্তু এই মায়াবী রাতের সকল কর্মব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে, ফেসবুকের চৌম্বক আকর্ষণকে বিকর্ষণ করে, সবসময় কানে ধরে রাখা মোবাইলটাকে সাইলেন্ট মুডে রেখে বিশাল বড় বারান্দার ছোট্ট একটি কোণে দাঁড়িয়ে, বারান্দার গ্রিলগুলোকে দুই হাতে শক্ত করে ধরে বয়ফ্রেন্ডের দেয়া ব্যান্ড্র নিউ সানি লিওন জামাটাকে চোখের জলে ভাসিয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে অষ্টাদশী কন্যা জুলেখা । এ কান্না গ্লিসারিনের কান্না নয় । সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে চোখ থেকে নির্গত কাজল মিশ্রিত কান্না । সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে রয়েছে জুলেখা । বারান্দায় আর কেউ নাই । চুরি করে জ্যোত্‍স্নার এক ফালি আলো গ্রিলের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করেছে । প্রবেশ করিয়া চোখের জল আর মুখের অজস্র মেকাপের কম্বিনেশনে প্রতিভাত জুলেখার ভৌতিক চেহারাটাকে দেখে সে যেন থমকে দাঁড়িয়েছে । 

কেন এ কান্না ??? কি সেই কারণ ???

প্রেম !!!! - হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে । এই সুন্দর চন্দ্রবিধৌত রাতে সুন্দরী অষ্টাদশী কন্যার ডাগর চোখে অশ্রুর উপস্থিতির কারণ, প্রেম হতে পারে । জুলেখার জীবনে প্রেম কয়বার এসেছিলো কিংবা আদৌ এসেছিল কিনা সেই গবেষণায় আমি যাবো না । তবে বিশ্বস্ত সূত্রে এতটুকু জানা গেছে, সত্যিকারভাবে সাগর খান নামের একটা ছেলেকে জুলেখার খুব মনে ধরেছিল । পাশের বাসার ভার্সিটি পড়ুয়া মায়াবী চেহারার ব্যাকব্রাশ চুলের ছেলেটিকে জুলেখার খুব ভালো লেগেছিলো । ভালো লাগা থেকে হয়তো ভালবাসাও হয়ে যেত কিন্তু যেদিন জুলেখা জানতে পারলো যে, সাগরের পকেটমানি জুলেখা ও তার বান্ধবীদের দৈনিক ফুর্তিখরচের কাছে বেশ নগণ্য ঠিক সেদিনই সেই ভালোলাগা খান খান হয়ে জানালা দিয়ে রীতিমতো রকেটের বেগে পালিয়ে গিয়েছিলো । তাই বর্তমান যুগের প্রেমের অলিখিত নিয়মকে প্রতিষ্ঠা করতেই জুলেখা বিল্ডিং এর উপরতলার চৌধুরী সাহেবের একমাত্র ছেলে আকাশ চৌধুরীকে তার বয়ফ্রেন্ড বানালো । আকাশকে জুলেখা এ কারণে বয়ফ্রেন্ড বানায়নি যে, আকাশের সাথে সবসময় একটি পেটমোটা মানিব্যাগ থাকে বরং আকাশ জুলেখার বয়ফ্রেন্ড রেসে প্রথম হয়েছিলো এই কারণে যে, ঐ পেটমোটা মানিব্যাগটাকে জুলেখার পিছনে সম্পূর্ণ খালি করার হিম্মত আকাশের ছিলো । আর এ কারণেই গার্লফ্রেন্ডের অনুরোধে আকাশ তার ফেসবুক প্রোফাইল নেম রেখেছিলো 'হিম্মতওয়ালা আকাশ' ।

হয়তো এই গভীর রাতে জ্যোত্‍স্নার আবেশে সেই সাগর ছেলেটিকেই জুলেখার বার বার মনে পড়ছিলো । নির্জন বারান্দায় তারই স্মরণে হয়তো এই অকস্মিক অশ্রুবিসর্জন ।

হতেই পারে । নারীর মন বড়ই বিচিত্র । তাদের মনস্তত্ত্বও অদ্ভুত । সে সম্বন্ধে চট করে কোন মন্তব্য করা উচিত বলে আমি মনে করি না । বস্তুত স্ত্রী জাতির সম্বন্ধে কোন কিছু মন্তব্য করাই দুঃসাহসের কাজ । বিশেষ করে ফেসবুকে । ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার দেখে যে রমনীকে মনে হয়, বয়স বোধ হয় ঊনিশ কুড়ি, চেহারা সুরতের দিক দিয়ে ক্যাটরিনা কাইফের যমজ বোন অথচ অনুসন্ধান করলে জানা যাবে যে, উক্ত রমনীর বয়স আটাশ কিংবা ত্রিশ আর বাংলার ময়ূরী উহার থেকে অধিকতর সুন্দরী ।

সুতরাং এ যুগের নারী সংক্রান্ত কোন ব্যাপারে বেকুবের মতো ফস করিয়া কিছু একটা বলে বসা ঠিক নয় । সর্বদা ভদ্রভাবে ধৈর্য্য ধরাই সঙ্গত । জুলেখার কান্না সম্বন্ধে সহসা আমি কিছু বলবো না । কারণ আমি জানি না । তাই এই কান্নার শোভন ও সঙ্গত কারণ যতগুলো হওয়া সম্ভব, তার প্রত্যেকটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো আমি ।

গভীর রাতে একা বারান্দায় একটি যুবতী কন্যা দাঁড়িয়ে ক্রমাগত কেঁদে চলেছে - ইহা একটা ডিটেকটিভ উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদের বিষয়ও হতে পারে । কিন্তু আমি বিশ্বস্তসূত্রে অবগত আছি - তা নয় । পাঠক পাঠিকাগণ অন্তত এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন । জুলেখা আর তার বয়ফ্রেন্ড আকাশকে যতদূর জানি, তাতে তাদের ডিটেকটিভ উপন্যাসের নায়ক নায়িকা হবার মতো যোগ্যতা আছে বলে আমার মনে হয় না । তবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড আকাশের আগে জুলেখার ঠিক কতজন বয়ফ্রেন্ড ছিলো তার সঠিক হিসাবটা বের করা রীতিমতো ডিটেকটিভদের কাজ । আর এতটুকু নিশ্চিত থাকুন যে, নামকরা ডিটেকটিভরা যে এই কাজে ডাক (গোল্লা) মারবে সে বিষয়ে কোনরকম সন্দেহ নেই ।

সাগর, আকাশ তাদের কথা ছেড়ে দিলে জুলেখার কান্নার আর একটি সম্ভাবনার কথা মনে হচ্ছে । কিছুদিন পূর্বে ফেসবুকে জুলেখা 'Princess Mehjabin' নামে একটি একাউন্ট খুলেছিলো । দাদার দেয়া এই আদি খ্যাতমার্কা জুলেখা নামটা তার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য ছিলো না । তাই বাংলাদেশী মডেল মেহজাবিনের নামখানা ধার করে তার পূর্বে Princess লাগিয়ে ফেসবুক সেলেব্রেটি হওয়ার জন্য সে কিই না করেছে । প্রতি মিনিটে মিনিটে ফটোশপের কারিশমায় প্রায় ক্যাটরিনার মতো দেখতে ছবি আপলোড কিংবা 'তুমি এত্তোগুলা পঁচা', 'আজকে এত্তোগুলা মার্কেট করেছি', 'এত্তোগুলা মন খারাপ' টাইপ স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের নাম মেহজাবিন প্রতিষ্ঠায় জুলেখা অনবরত ব্যস্ত থেকেছে । কিন্তু বিধি বাম !!! হঠাত্‍ গত মাসে জুকারবার্গের ফেকবুকীয় ছলাকলায় ডলা খেয়ে জুলেখার সাধের একাউন্টখান চিরতরে ব্লক খেয়ে ফেসবুকের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে হারিয়ে গেছে । হতে পারে সেই একাউন্টের হোমপেজ জুলেখার সেলেব্রেটি হৃদয়কে কাঁদাইতেছে । একাউন্টের মৃত্যুর পর জুলেখা দুই দিন ফেসবুক বর্জন করেছিলো । এটা আমি বিশ্বস্তসূত্রে জানি । চিরকালের জন্য যা হারিয়ে গেছে তাকে ক্ষণিকের জন্যও ফিরে পাবার আকুলতা কঠোর পুরুষের মনেও মাঝে মাঝে হয় । কোমলহৃদয়া জুলেখার মনে তা হওয়া কিছুমাত্র বিচিত্র নয় । কান্নার কারণ তাই ব্লক খাওয়া সেই একাউন্টের শোকও হতে পারে ।

বর্তমান এই ফেসবুক যুগে একাউন্ট শোক খুব বড় শোক । নানান বর্ণে, নানান ঢঙে সজ্জিত এসব একাউন্ট আমজনতার কাছে প্রায় সন্তানতুল্য । তবে হ্যাঁ - আর একটা কারণও হতে পারে । সন্তানসম একাউন্ট শোক - প্রসঙ্গের পর এই কথাটি বলছি বলে আপনারা আমাকে ক্ষমা করুন । কিন্তু জুলেখার কান্নার এই তুচ্ছ সম্ভাবনাটাকেও আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না । বিগত কয়েক দিন হইতে জ্বলন্ত খলিলের "ভালবেসে জীবন দিয়েছি - Love takes away my life" ছবিখান বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে দেখানো হচ্ছে । জুলেখার অগণিত বন্ধু বান্ধবী ছবিটি দেখে এসেছে এবং উচ্ছ্বসিত হয়ে ফেসবুকে প্রশংসামূলক অজস্র স্ট্যাটাসও আপডেট দিয়েছে । কিন্তু আকাশ বড়ই বেরসিক । এতোটাই বেরসিক যে, জুলেখার বার বার ন্যাকু ন্যাকু অনুরোধ সত্ত্বেও সে জুলেখাকে উক্ত সিনেমা দেখাতে নিয়ে যায়নি । বিশ্বস্তসূত্রে আমি জেনেছি, আকাশ তার এক্স গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এ কয়দিন স্টার সিনেপ্লেক্সে বেশ ব্যস্ত ছিলো । তাই কোনভাবেই যাতে এক্স এবং প্রেজেন্ট গার্লফ্রেন্ডের মধ্যে কোন কলিশন না হয় সেজন্য আকাশ কোনোরকম রিস্ক নেয়নি।

তাই হয়তো এই নিশ্চুপ মায়াবী উদাসী রাতে জুলেখার বুকে সিনেমা শোক উথলে উঠেছে । হতেই পারে । কোন সম্ভাবনাকেই ছোট করে দেখা যাবে না । সবই হওয়া সম্ভব ।

বাস্তবিকভাবে আমি যতই ভাবছি, ততই আমার বিশ্বাস পোক্ত হচ্ছে । জুলেখার কান্নার হেতু সবগুলোই হতে পারে । হয়তো এ পর্যন্ত আমার তুলে ধরা প্রত্যেকটা কারণের সম্মিলিত দুঃখে জুলেখার এই কান্না । কিংবা আজকে দুপুরেই মার্কেটে জামা কিনতে গিয়ে আকাশের সাথে যে মতভেদ হয়েছে সেটাও একটা কারণ হতে পারে । লিওন প্রেমী অকাশের 'সানি লিওন' জামা খুবই পছন্দ । কিন্তু ক্যাটরিনাকে রোল মডেল মানা জুলেখার 'চিকনী চামেলী' জামার প্রতিই বেশী আকর্ষণ । যদিও তার ইচ্ছা ছিলো বয়ফ্রেন্ডকে ভাঙ্গিয়ে 'সানি লিওন' ও 'চিকনী চামেলী' দুটো জামাকেই কুক্ষিগত করা কিন্তু আকাশের পীড়াপিড়িতে শুধু 'সানি লিওন' জামা নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে । যদিও এটা নিয়ে ফোনে আকাশের সাথে তার তুমুল ঝগড়া হয়েছে । রূঢ়ভাষী কঠোর পুরুষেরা যা করে - আকাশও তাই করেছে । গলার জোরে অর্থাত্‍ চিত্‍কার করে জিতেছে । আর ন্যাকা ঢঙ্গী মেয়েরা যে উপায়ে বয়ফ্রেন্ড এর সাথে জিতে থাকে জুলেখা সম্ভফত তাই করছে অর্থাত্‍ জুলেখা কাঁদছে।

কারণ যাই হোক, ব্যাপারটা নিঃসন্দেসে করুণ । জ্যোত্‍স্না রাত্রি হওয়াতে আরও করুণ অর্থাত্‍ করুণতর । কোন সহৃদয় পাঠক কিংবা পাঠিকা যদি একে করুণতমও বলেন তা হলেও আমি প্রতিবাদ করবো না । কারণ জুলেখা তরুণী । রাত্রি যতই নিবিড় কিংবা জ্যোত্‍স্না যতই আকাশপ্লাবনী হোক না কেন, এ বিষয়ে খুব সম্ভবত আমরা একমত যে, এই রাত দুপুরে একটা বালক কিংবা একটা বুড়ি কাঁদলেও আমরা এতটা বিচলিত হতাম না । উপরন্তু হয়তো বিরক্তই হতাম ।

জুলেখা কিন্তু তরুণী । আর এ কারনেই আমাদের সবার মন কমবেশী বিচলিত হয়েছে এবং এ কথাও অস্বীকার করার উপায় নাই যে, জুলেখার কান্নার কারণ না নির্ণয় করা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছি না । এমনকি সাগরকে জড়িয়ে একটা সস্তা গোছের ভালবাসার গল্পও ফেসবুকে নোট আকারে প্রকাশ করার ইচ্ছাকে দমন করতে পারছি না । মন বলছে - কেন নয় ??? এমন চাঁদনী রাতে সেই অর্ধ প্রস্ফুটিত প্রেম কি পূর্ণতা পেতে পারে না ???? এমন দুর্লভক্ষণে সাগরের কথা মনে হওয়া কি অসম্ভব, না অপরাধ ???

মনের বক্তৃতা আমার বন্ধ হয়ে গেল । কারণ ততক্ষণে বেডরুম আর বারান্দার সংযোগস্থলে সগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা দরজাটি হঠাত্‍ করেই খুলে গেল । ব্যস্তসমস্ত জুলেখার মা শ্রদ্ধেয় সুলেখা আন্টি বারান্দায় প্রবেশ করলেন । মুখে শঙ্কার ছায়া । হয়তো কন্ন্যার কান্নার হেতু তিনি নিজেই ।

কিন্তু এ কি !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

সুলেখা আন্টির চোখেও যে বিন্দু বিন্দু জল চিকচিক করছে যে কোন সময় ভারী বর্ষণের অপেক্ষায় ।
মুখটাকে আরো কাঁদো কাঁদো করে তিনি মেয়েকে বললেন,

"আমার জুলেখা মামনি, আর কান্না করো না । তোর বাবা বিদ্যুত অফিসে ফোন দিয়েছিলো । ওরা বলেছে কালকে সকালের আগে আর কারেন্ট আসবে না । একদিন না হয় স্টার জলসার সিরিয়ালগুলো নাইবা দেখলি । কিইবা এমন হবে ??? প্লিজ মামনি আর কাঁদিস না ।"

এই বলে ভেউ ভেউ করে তিনি নিজেই কেঁদে দিলেন । 
বিপুল জ্যোত্‍স্নাময় এই মায়াবী রাতে বারান্দায় বসে মা ও মেয়ে একে অপরের গলা জড়িয়ে হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছে মাত্র একদিন স্টার জলসার সিরিয়াল মিস হওয়ার শোকে ।

থমকে দাঁড়ানো সেই জ্যোত্‍স্নার টুকরাটি তখন মুচকি মুচকি হাসছে ।

দেখলেন তো সবাই ??? প্রথমেই বলেছিলাম - সবই সম্ভব ।

(গল্পটি বনফুলের 'সুলেখার ক্রন্দন' গল্প অবলম্বনে রচিত । 'সুলেখার ক্রন্দন' গল্পটিকে পরিবর্তন করে 'জুলেখার কান্না' তে রূপান্তরিত করা হয়েছে । মূল কথা হচ্ছে 'সুলেখার ক্রন্দন' গল্পের প্রেজেন্ট ভার্সন হচ্ছে 'জুলেখার কান্না'

নতুন ভাষাই প্রেম প্রকাশ

ভালবাসার ছবি,ফটো,সেক্স ফটো

১.বাংলা =আমি তোমাকে ভালবাস
২.ইংরেজি = আই লাভ ইউ
৩.ইতালিয়ান = তি আমো
৪.রাশিয়ান =ইয়া তেবয়া লিউব্লিউ
৫.কোরিয়ান=তাঙশিনুল সারাঙ
হা ইয়ো
৬.কানাডা = নান্নু নিনান্নু প্রীতিসুথিন
৭.জার্মান = ইস লিবে দিস
৮.রাখাইন =অ্যাঁই সাঁইতে
৯.ক্যাম্বোডিয়ান=বোন স্রো লানহ্উন
১০.ফার্সি = দুস্তাত দারাম
১১.তিউনিশিয়া =হাহে বাক
১২.ফিলিপিনো =ইনবিগ কিটা
১৩.লাতিন =তে আমো
১৪.আইরিশ =তাইম ইনগ্রা লিত
১৫.ফ্রেঞ্চ = ইয়ে তাইমে
১৬.ডাচ = ইক হু ভ্যান ইউ
১৭.অসমিয়া = মুই তোমাকে ভাল্ পাও
১৮.জুলু = মেনা তান্দা উইনা
১৯.তুর্কি = সেনি সেভিউর ম
২০.মহেলি = মহে পেন্দা
২১.তামিল = নান উন্নাই কাদালিকিরেন
২২.সহেলি = নাকু পেন্দা
২৩.ইরানি = মাহ্ন দুস্তাহ্ত দোহ্রাহম
২৪.হিব্রু = আনি ওহেব ওটচে (মেয়েকে ছেলেকে)
আওটচা (ছেলেকে মেয়ে)
২৫.গুজরাটি = হুঁ তানে পেয়ার কার ছু
২৬.চেক = মিলুই তে
২৭.পোলিশ = কোচাম গিয়ে
২৮.পর্তুগীজ = ইউ আমু তে
২৯.বসনিয়ান = ভলিম তে
৩০.তিউনেশিয়ান = হা এহ বাদ
৩১.হাওয়াই = আলোহা ওয়াউ লা ওই
৩২.আলবেনিয়া = তে দুয়া
৩৩.লিথুনিয়ান = তাভ মায়লিউ
৩৪.চাইনিজ = ওউ আই নি
৩৫.তাইওয়ান = গাউয়া আই লি
৩৬.পার্শিয়ান = তোরা ডোস্ট ডারাম
৩৭.মালয়শিয়ান = সায়া চিনতা কামু
৩৮.মায়ানমার = মিন কো চিত তাই
৩৯.ভিয়েতনামিস = আনাহ ইউই এম
(ছেলে মেয়েকে) এম ইউই আনাহ (মেয়ে ছেলেকে)
৪০.থাইল্যান্ড = চান রাক খুন
(ছেলে মেয়েকে) ফেম রাক খুন (মেয়ে ছেলেকে)
৪১.গ্রিক = সাইয়াগাপো
৪২.চেক = মিলুই তে
৪৩.বর্মিজ = চিত পা দে
৪৪.পোলিশ = কোচাম গিয়ে
৪৫.মালয়ি = আকু চিন্তা কামু
৪৬.ব্রাজিল =চিতপাদে

৪৭.হিন্দি = ম্যায় তুমছে পেয়ার করতাহুঁ,

৪৮.জাপানী = কিমিও আইশিতের
৪৯.পাকিস্তান = মুজে তুমছে মহব্বত হায়
৫০.ফার্সি = ইয়ে তাইমে
৫১.সিংহলিজ = মামা ও বাটা আছরেই
৫২.পাঞ্জাবী = মেয় তাতনু পেয়ার কারতা
৫৩.আফ্রিকান = এক ইজ লফি ভির ইউ
(ছেলে মেয়েকে) এক হাত যাও লিফ(মেয়ে ছেলেকে)
৫৪.তামিল = নান উন্নাহ কাদা লিকিরেণ
৫৫.রোমানিয়া = তে ইউবেস্ক
৫৬.স্লোভাক = লু বিমতা
৫৭.নরওয়ে = ইয়েগ এলস্কার দাই
৫৮.স্প্যানিশ = তে কুইয়েবু
৫৯.ফিলিপাইন = ইনি বিগকিটা
৬০.বুলগেরিয়া = অবি চামতে
৬১.আলবেনিয়া = তে দাসরোজ
৬২.গ্রীক = সাইয়াগাফু
৬৩.এস্তোনিয়ান = মিনা আর মাস্তান সিন্দ
৬৪.ইরান =সাহান দুস্তাহত দোহরাম
৬৫.লেবানিজ = বহিবাক
৬৬.ক্যান্টনিজ = মোই ওইয়া নেয়া
৬৭.ফিনিশ = মিন্যা রাকাস্তান সিনোয়া
৬৮.গ্রিনল্যান্ড= এগো ফিলো সু
৬৯.আরবী = আনা বেহিবাক(ছেলে মেয়েকে)
আনা বেহিবেক(মেয়ে ছেলেকে)
৭০.ইরিত্রয়ান = আনা ফাতওকি
৭১.ইথিওপিয়ান = ইনি ওয়াডিসাল্লেহ
৭২.তেলেগু = নেনু নিন্নু প্রেমিসতুন্নানু
৭৩.সুরিনাম = মি লোবি যোই

মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামমানবতা ও সাম্যের কবি, গানের বুলবুল জাতীয় কবি কাজী নজরুল
কাজী নজরুল ইসলাম
ইসলামের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৭ আগস্ট। ঢাকায় তদানীন্তন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়েন কবি। দ্রোহে ও প্রেমে, কোমলে-কঠোরে বাংলা কাব্য ও সংগীতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছিলেন তিনি তাঁর অনন্য প্রতিভায়। সব রকমের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কবি ‘চির উন্নত মম শীর’ বলে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য তাঁর ক্ষুরধার লেখনী ছিল অব্যাহত। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও তিনি কখনো আপস করেননি। মাথা নত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি ও অর্থবিত্তের বৈভবের কাছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান, কবিতা সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে। তাঁর চেতনা ও আদর্শ চিরভাস্বর হয়ে আছে আমাদের জীবনে। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ১৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবা কাজী ফকির আহমেদ এবং মা জাহেদা খাতুন।

সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৩

কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর – কিছু অর্থহীন সংলাপ

সমাজঃ এইছেলে?? কী করো তুমি?? কোথায় পড়??
ডাক্তারঃ জ্বী মানে আমার পড়া শেষ। আমি এখন মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ণি করছি।
সমাজঃ ও তুমি ডাক্তার?? আরে নাহ তুমি তো কসাই। যা শুরু করেছো না তোমরা?
ডাক্তারঃ কেন?? আমরা কি শুরু করেছি??
সমাজঃ কী কর নাই বলো? তোমাদের কাজই তো মানুষকে জিম্মি করে, তাদের অসহায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে টাকা কামানো।
ডাক্তারঃ আপনি নিজে দেখেছেন কখনো এমন করতে কাউকে??
সমাজঃ দেখবো না কেন?? এই সেদিনই তো আমি আমার এক আত্নীয়কে নিয়ে গেলাম তার ডাক্তারের কাছে। সেইবার তার ৩য় বারের মত যাওয়া। তারপরও তার কাছ থেকে ভিজিট নিলো। আরে আমার রোগ এখনো সারেনি। যে রোগের জন্য চিকিৎসা তা না সারিয়েই এভাবে প্রতিবার ভিজিট নেবার কোন অর্থ হয়?? ভন্ডামি আর কসাইগিরি নাতো কি??
ডাক্তারঃ তা ঠিক বলেছেন। তা কি সমস্যা ছিলো আপনার আত্নীয়ের?
সমাজঃ আরে সমস্যা হলো প্রেসার আর ডায়াবেটিস। বয়স হয়েছে তো।
ডাক্তারঃ আহা। খারাপ কথা। আচ্ছা ঐ কসাইটা কি পুরো ভিজিট নিয়েছিলো??
সমাজঃ আরে পুরো ভিজিট নিলে কি আর আমার হাত থেকে রেহাই পেত?? থাপ্পড় দিয়ে দাঁত গুলা ফেলে দিতাম না বদমাইশটার। অর্ধেক টাকা নিয়েছে।
ডাক্তারঃ ও আচ্ছা। ভালো কথা, আপনি কি কখনো কোন উকিলের কাছে গিয়েছেন??
সমাজঃ হুম গিয়েছি তো। আর বলো না আমার গ্রামে দেড় বিঘার মত একটা ধানী জমি আমার চাচাতো ভাইয়েরা মেরে দিচ্ছিলো প্রায়। হাইকোর্টের এক বড় উকিল ঠিক করলাম। ৬ মাসের মাথায় আমার নামে রায় হয়ে গেলো। আহা কি জাঁদরেল উকিল। এমন প্যাঁচ কষলো, সে আর কি বলবো। শেষে তাদের হলো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। তার ফি অবশ্য বেশি। প্রতিবার কোর্টের ফি ছাড়াও ৫০ হাজার করে দিতে হয়েছে। তাও দিয়েছি। কোটি টাকার জিনিস বলে কথা। ভালো কথা, উকিলের প্রসঙ্গ আসলো কেন??
ডাক্তারঃ পরে বলছি। আচ্ছা তার আগে আরেকটা কথা বলেন। আপনার বাচ্চা কি প্রাইভেট পড়ে??
সমাজঃ হুম পড়ে তো। স্কুলের এক টিচারের কাছে। খুবই ভালো টিচার। অংকের জাহাজ। এবার আমার মেয়ে পরীক্ষায় ৯৫ পেয়েছে।
ডাক্তারঃ বাহ! খুব ভালো কথা। তাকে কত করে দেন মাসে??
সমাজঃ তা তাকে অবশ্য একটু বেশীই দিতে হয়। মাসে প্রায় ৬ হাজার।
ডাক্তারঃ আপনার মেয়ে সপ্তাহে কয়দিন পড়ে??
সমাজঃ আরে ছোকড়া তুমি এত কিছু জানতে চাচ্ছো কেন???
ডাক্তারঃ আহা ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? বলেন না। একটু পরেই বলছি কেন জিজ্ঞেস করছি।
সমাজঃ তা আমার মেয়ে সপ্তাহে ২ দিন যায়।
ডাক্তারঃ মানে মাসে ৮ দিন। তার অর্থ হলো প্রতিদিনের জন্য প্রায় হাজারের কাছাকাছি। আচ্ছা অংক ঠিক আছে তো না??
সমাজঃ তোমার উদ্দেশ্য কি বলতো?? এত হিসাব কিসের জন্য??
ডাক্তারঃ না তেমন কিছু না। হিসাব করে দেখছিলাম আপনার স্বাস্থ্য আপনার ধানী জমি আর আপনার মেয়ের জীবনের কাছে কত তুচ্ছ।
সমাজঃ মানে?? কি বলতে চাও???
ডাক্তারঃ কি বলতে চাই শুনবেন?? ভালো লাগবে বললে?? আমাদের কথা শোনার মানুষ তো খুব একটা নেই এখন। আপনি শুনবেন??
সমাজঃ আরে এত ভণিতা না করে কি বলবে বলে ফেলো।
ডাক্তারঃ কথা হচ্ছে আপনি প্রতিবার আপনার উকিলকে কোর্ট ফি বাবদ ৫০ হাজার করে টাকা দিয়েছেন। কেস কিন্তু একটাই ছিলো। এই টাকা দিতে আপনার কোন কষ্ট হয়নি। আপনি আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য একদিন ২ ঘন্টা পড়ানোর খরচ হিসাবে প্রায় হাজার টাকা দিতে পারেন। আপনার কোন ক্ষোভ নেই তাতে। আপনার যত অভিযোগ আপনার আত্নীয়ের স্বাস্থ্যের যত্ন যিনি নিচ্ছেন তার প্রতি। তিনি কেন প্রতি বার রোগী দেখে ভিজিটের টাকা নেবেন। যদিও সে টাকার পরিমাণ খুব সামান্য হোক না কেন। আপনার আত্নীয়তো আর প্রতি দিন ডাক্তারের কাছে যান না। বা মাসে দুই বারের বেশি যাবার দরকারও হয় না। তাহলে মাসে আপনার আত্নীয় স্বাস্থ্য সেবা দানকারী ডাক্তার নামের মানুষটাকে যে সামান্য অর্থ দিচ্ছে তার জন্য আপনার এত কষ্ট কেন?? আপনার আত্নীয় যে রোগে ভুগছে তাতো নিরাময় যোগ্য নয়। তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কেবল। তাহলে প্রতিবার যাবার জন্য সেই ডাক্তার ভিজিট নিয়ে কি খুব বেশী ভুল করছেন। ধরেন আমি আপনাকে একটা সম্ভাবনার কথা বলছি। সেই ডাক্তার যদি পুরোনো রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া বন্ধ করে দেন এবং তার রোগীর সংখ্যা যদি দিনে ৫০ হয় এবং তার অর্ধেক রোগীও যদি পুরনো হয় তাহলে সেই বেচারা কীভাবে জীবন চালাবে???? তার বাচ্চাকেও তো তার ভালো স্কুলে পড়াতে হবে তাইনা?? ধরেন সেই বেচারার যদি আপনার মত ধানী জমি নিয়ে কোন সমস্যা হয় তাহলে তারও তো উকিলকে টাকা দিতে হবে আপনার মত। তখন?? আপনারা শুধু ডাক্তারদের টাকা নেয়াটাই দেখেন। অন্যকিছু দেখেন না। কেন???
সমাজঃ এত বড় বড় কথা বলো না। তোমরা তো ডায়াগনস্টিকের কাছ থেকে ভালো টাকা পাও। অহেতুক টেস্ট দিয়ে আমাদের বাড়োটা বাজাও।
ডাক্তারঃ আপনার এই কথা সত্য। আমাদের ডাক্তারদের মধ্যে এই অসম্ভব খারাপ একটা জিনিস খুব বাজে ভাবে ঢুকে গেছে। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন স্বাস্থ্য সেবার যে কাঠামো তাতে সরকারী ডাক্তারদের কিন্তু এই সুযোগ খুব একটা নেই। এই খারাপ কাজটা করে থাকে প্রাইভেট প্রাকটিস করা কিছু মানুষ। এর জন্য অবশ্যই ডাক্তার সমাজ দায়ী। তবে এর জন্য সরকারের দায়িত্ব এড়ানো মনোভাবের একটা বড় ভূমিকা আছে।
সমাজঃ কীভাবে??
ডাক্তারঃ ধরেন সরকার যদি একটা নীতিমালা ঠিক করে দিতো যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিটি টেস্টের খরচ কত পড়বে তাহলে ওদের মধ্যে এই অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যেতো। আপনি নায্য খরচে টেস্ট করাতে পারতেন। সেক্ষেত্রে এই মনোপলি ব্যবসা একসময় বন্ধ হয়ে যেত। ডাক্তাররা সেখানেই আপনাকে টেস্ট করতে বলতেন যেখানে টেস্ট ভালো হয়। তখন মানের সাথে আপস করে ডাক্তারকে টাকা বাড়িয়ে দেবার মত অসুস্থ্য ঘটনা অনেক কমে যেত।
সমাজঃ কিন্তু তোমরা এত এত টেস্ট দাও কেন???
ডাক্তারঃ আপনার এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, কিছু কিছু রোগের সাথে টেস্টের সম্পর্ক এত বেশি যে সেই টেস্ট ছাড়া ডায়াগনসিস করা সম্ভব না। এখন আমি টেস্ট না করে যদি ভুল ডায়াগনসিস করি তাহলে তো সমস্যাটা আপনারই হবে। তবে অবশ্যই ডাক্তারদের এথিকাল প্রাকটিস করা উচিত। যেটা করার পরিবেশ এখন আমাদের দেশে নাই।
সমাজঃ কেন নাই??? তোমরা চাইলেই পার। তা না করে তোমরা দলবাজি করে নিজেদের সুনাম নষ্ট করছো। শুনেছি তোমাদের নাকি কী সব ইথিক্স মেনে চলতে হয়। সেখানে নাকি বলা আছে তোমরা পার্টি পলিটিক্স, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এসব করতে পারবেনা। তাহলে তোমরা এগুলো কর কেন??
ডাক্তারঃ আপনার এই কথাটাও সত্য। ডাক্তাররা নীতিগত ভাবে পলিটিক্স করতে পারেনা।
সমাজঃ তুমি কি পলিটিক্স কর। অবশ্যই কর। তাইনা??
ডাক্তারঃ জ্বী আমাকেও কোন না কোন দলের খাতায় নাম লেখাতে হয়েছে। কেন জানেন?? শুনতে চান একজন তরুণ চিকিৎসক কীভাবে প্রতিমুহুর্তে তার নিজের পেশার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পরে। তাহলে শোনেন।
সমাজঃ বল। শুনছি।
ডাক্তারঃ যখন মেডিকেলে ভর্তি হলাম তখন অনেক আশা ছিল দেশের মানুষের জন্য কিছু করব। আমার ভাবনায় তখন মানবিকতা, মানব সেবা আর মানুষের হাসি মুখ দেখার ঐকান্তিক আকাঙ্ক্ষা। দিন যায় আমি অবাক হতে শুরু করি। চারপাশের বড় ভাইদেরকে দেখি। আমাদের টিচারদের দেখি। কোথায় আমার স্বপ্নের জীবন। এতো স্বপ্ন নয়। এ বিভীষিকা। আমি প্রতিটি দিন একটু একটু করে বুঝতে শিখি এখানে পাস করতে গেলে আমাকে দল করতে হবে। আমার ক্লাশের কিছু ছেলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন সিনিয়রদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। সেই ছেলেদের দাপটে আমাদের অবস্থা খারাপ। তারা যা বলে ক্লাশে তাই হয়। আমাদের কথার কোন দাম নেই। তারা পরীক্ষা না দিয়েও প্রফেশনাল পরীক্ষার এডমিট কার্ড হাতে পাচ্ছে। আর আমরা আইটেম নামের সারাজীবনের বোঝা মাথা থেকে নামানোর জন্য সব কিছু উৎসর্গ করে চলেছি। এই মেডিকেলের ৫টি বছর জীবনের কত কিছু বাদ দিতে হয়েছে জানেন?? কত দিন ভুলে যেতে হয়েছে আমিও মানুষ। আমারও একটা সামাজিক জীবন আছে, বন্ধু আছে। আমারও ইচ্ছা করে দূর পাহাড়ে কারো সাথে ঘুরে আসতে। কেউ আমার সময়ের জন্য অপেক্ষার ডালি সাজিয়ে বসে থাকে। আমি পারি না। আমরা পারিনা। আমরা শুধু আইটেম ক্লিয়ার করতে পারি। ক্লিয়ার না হলে মন খারাপ করতে পারি। একটা সময় মন খারাপ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। কারণ তখন মনটাই নষ্ট হয়ে যায়। এরপর অতিকষ্টে প্রফের টেবিলে বসি। ভাগ্য ভালো হলে একবারে পাস করে যাই। আর না হলে আবার সেই চক্রে বাঁধা পড়ি। কোন রকমে সবকিছু শেষ করে যখন বের হই তখন জীবনের সুন্দর সময় গুলো আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বসন্ত বাতাস আর আমাদের ছুঁয়ে যায় না। আমাদের তখন পেটের দায়। এতদিন বাবার হোটেলে খেয়ে জীবন কেটেছে। আর কত?? অন্য প্রফেশনের বন্ধুরা বিয়ে করে ফেসবুকে কী সুন্দর সুন্দর ছবি আপলোড করে। আর আমরা আমাদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে রাতে বিয়ের কথা তুললেই ঝগড়া করি। পায়ের নিচের মাটি যে একেবারে নরম। ওকে নিয়ে কীভাবে দাঁড়ায় বলেন?? তখনি দেখি, বুঝতে শিখি পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে গেলে আমাকে একটা পক্ষ বেছে নিতে হবে। যদি ক্ষমতাশীন পক্ষ বেছে নেই তবে আমি পাবো কাঙ্ক্ষিত চাকরী। বিসিএস হয়ে যাবে আমার। তখন দুজন একসাথে দাড়াতে পারবো জীবনের পলল ভূমিতে। তখন দেখার সময় কোথায় চাকরী কি সৎ ভাবে এলো না অসৎ ভাবে। তারপর শুরু হবে তেনাদের যন্ত্রণা। আজ চাঁদা, কাল মিটিং, পরশু নির্বাচন। বাঁচি আর মরি উপস্থিত থাকতেই হবে। না হলে যে পায়ের নিচের মাটি আবার নরম হয়ে যাবে। কে চায় বলেন নিজের ক্ষতি। সময়ের নিষ্ঠুর প্রয়োজনের শিকলে বন্দী আমার বিবেক। আমি পারি না এই শিকল ভাঙতে। উপরে ওঠার সিঁড়ির গোড়ায় রাজনীতি নামের পাহারাদার। সে দরজা না খুললে আমার যে কিছুই হবেনা। এখন বলেন একজন তরুণ ডাক্তার হিসাবে আমি কী করতে পারি?? কীভাবে আমি মানব সেবা করবো??
সমাজঃ হুম। কিন্তু তোমাদের নিজেদের মধ্যে এই দলাদলি করে লাভ কি??
ডাক্তারঃ লাভের কথায় তো এতক্ষন বললাম। জাগতিক লাভের জালে বন্দী হয়েই তো আমাদের এই দশা। আরো মজা হলো, আমি যে উচ্চতর ডিগ্রি নেবো সেখানেও রাজনীতির মাধ্যমে যেতে হবে। প্রাইভেট হাসপাতালে আমাদের মেডিকেল অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেয়। ৮ ঘন্টা ডিউটি করে আমরা ৩৫০ টাকা পাই। এবার বলেন একজন রিকশাচালক ৮ ঘন্টা রিকশা চালিয়ে এই টাকা উপার্জন করতে পারে কি না?? যদি পারে তাহলে আমরা কোথায় আছি??
সমাজঃ কিন্তু তাই বলেতো তোমরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারনা। প্রায় তোমাদের ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবার খবর আসে। এইটা কেন??
ডাক্তারঃ জ্বী। আমাদের ভুল চিকিৎসায় মানুষ মারা যায়। তবে সেই সংখ্যাটা হাজারে কত সেটা কি একটু খেয়াল করেছেন।
সমাজঃ কী হাজারে কত??
ডাক্তারঃ আচ্ছা তাহলে আরেকটু বুঝিয়ে বলি। আচ্ছা ধরেন সরকারী হাসপাতালে প্রতিদিন যে পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা হয় তার মধ্যে প্রতিদিনই কি রোগী মারা যাচ্ছে ভুল চিকিৎসায়?? না যাচ্ছেনা। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছে। এমনও অনেক ডাক্তার আছেন যারা নিজেদের পকেটের টাকা দিয়েও মাঝে মাঝে গরীব রোগীদের চিকিৎসা করেন। কই সেই খবরতো পত্রিকায় আসেনা। প্রতিদিন কত গাইনি ডাক্তার একটা নতুন জীবনকে পৃথিবীতে আনতে সাহায্য করছে এর মাঝে কত কেস যে চ্যালেঞ্জিং কেস থাকে যেখানে সর্বোচ্চ পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয়, অনেক ধৈর্য্য আর কষ্ট নিয়ে রোগী ম্যানেজ করতে হয় সে খবর কি আমরা পাই?? না পাই না। আমরা পাই শুধু খারাপ খবর গুলো। এর মধ্যে এমনও কেস থাকে যেগুলো সত্যি অনেক খারাপ অবস্থায় ছিল। এমনও হয় ডাক্তার ঠিক মত সব কিছু করলেও প্রয়োজনীয় উপকরণ বা ওষুধের অভাবে রোগী মারা যাচ্ছে। সেটা কেও ডাক্তারের দোষ বলে প্রচার করছে মিডিয়া। কারণ এইসব মিডিয়ার কাজ হচ্ছে খবর বেঁচে ব্যবসা করা। সাধারণ মানুষ যা পড়তে পছন্দ করবে সে ধরণের খবরই তারা বিক্রি করবে।
সমাজঃ তারমানে কি তুমি বলতে চাচ্ছো তোমাদের কোন দোষ নেই?? সব মিডিয়ার দোষ??
ডাক্তারঃ আমি এমন কিছুই বলতে চাচ্ছিনা। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি যে আমাদের মধ্যে ভালো খারাপ দুই ধরণের মানুষই আছে। সেখানে শুধু খারাপ খবর গুলো প্রকাশ করে আমাদেরকে সমাজের একটা নষ্ট অংশ হিসাবে প্রচার করে কি খুব বেশী লাভ আছে?? সাধারণ মানুষের মনে যদি ডাক্তার সম্পর্কে খারাপ ধারণার জন্ম হয় তবে তো সে আর নিজের চিকিৎসকের উপর বিশ্বাস রাখতে পারবেনা। এর ফলাফল কত খারাপ হবে ভেবে দেখেছেন কি?? আমাদের ভুল গুলো তুলে ধরার সাথে সাথে ভালো উদাহরণ গুলো তুলে ধরলেই তো আর সমস্যাটা হয়না।
সমাজঃ তোমাদের ভালো খবরগুলো কি আসেনা বলতে চাচ্ছো???
ডাক্তারঃ ভালো খবর?? একজন ডাক্তারকে ধর্ষণ করতে যেয়ে না পেরে মেরে ফেললেও সে খবর পেপারে আসে না। তার জন্য আমাদের সমাজের কোন সহানুভূতি নেই। সেতো ডাক্তার, সে তো মানুষ না। সে হলো কসাই। সমাজের উঁচু স্তরের কোন মানুষ যদি একটা মহান পেশা সম্পর্কে ঢালাও ভাবে এধরণের মন্তব্য করতে পারেন তাহলে সেই মন্তব্য তো আমাদের মত হুজুগে পাগল জাতি লুফে নেবেই। তার অনিবার্য পরিণতি হলো এই পেশা সম্পর্কে মানুষের অযাচিত ভুল ধারণা। আমাদের এক বোন মারা গেলেন। তাকে খুন করা হল। তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হল। আমাদের সেই বোন অনেক মেধাবী ছিলেন। প্রফে প্লেস করা ছাত্রী ছিলেন। হয়তো ভবিষ্যতে অনেকদূর যেতে পারতেন তিনি। এই সমাজ তার জন্য চোখের পানি ফেলছে না। দেশের বিবেক নামের তথাকথিত বিবেকহীন মানুষগুলো এখন নিশ্চুপ। একজন অখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়ার মারা গেলেও পেপারে তাকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অথচ তার তুলনায় সমাজের জন্য আমার সেই বোনটা কত বেশি মূল্যবান ছিল ভেবে দেখেনতো। আমরা আসলে বুঝতে পারিনা আমাদের কোন বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমাদেরকে সেই দিক নির্দেশনা দেবে এমন লোকও নেই।
সমাজঃ কিন্তু তোমাদের সংগঠনও তো চুপ। সেই কথাটা বলো না কেন?? তারা কী করছে??
ডাক্তারঃ আমাদের নিজেদের সংগঠন কাজ করছে তো। তারা বিএমএ ভবনে বসে চা-পানি খাচ্ছে। কাকে কোথায় পোস্টিং দেয়া যায় তা আলোচনা করছে। কত টাকা কোন খাত থেকে পাওয়া সম্ভব সেই অংক করছে। তাদের আর কাজ কি?? আসলে এই ব্যাপারে আমাদের ডাক্তারদের লজ্জিত হওয়া উচিত যে সাংগঠনিক ভাবে আমরা এত দূর্বল। কিন্তু ঐ যে রাজনীতি। সেই কারণে আমরাও এখানে নিরব দর্শক।
সমাজঃ আসলে আমরা খুব খারাপ একটা সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি।
ডাক্তারঃ শুধু একটা অনুরোধ করবো আপনাকে।
সমাজঃ কি অনুরোধ??
ডাক্তারঃ আপনার পরিচিত কেউ যদি মেডিকেলে পড়তে চায় তবে কষ্ট করে তাকে নিরুৎসাহিত করবেন। জীবনের এই নিদারুণ অপচয় আর ভালো লাগেনা। সহ্য হয়না।

লিখেছেন- Dr. Tanvir- UH, UK

দহন

ক্লাস শেষ করে মোবাইলটা হাতে নেয় ইশতিয়াক। ওরে বাবা!! 13 missed calls and 6 messages!! ইশতিয়াক জানে এসব কে পাঠিয়েছে। ৪ বছরের সম্পর্কে এটা এই প্রথম না। অর্থী, হা,এই মেয়েটাকে প্রবল ভালবাসে সে।হয়তবা নিজের জীবনের থেকেও বেশি। জীবনের প্রতিটা পদে অর্থী যেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অর্থী ছাড়া ইশতিয়াক যেন আলো ছাড়া চাঁদ। অর্থীর ছাড়া ইশতিয়াকের অস্তিত্ব যেন অকল্পনীয়। ইশতিয়াকের মতে অর্থীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টা। অর্থীর জীবনে ইশতিয়াক যেন চাঁদের কলঙ্কের মত। কি নেই মেয়েটার?? তবুও সে কেন যে ইশতিয়াকের মত অপদার্থকে ভালবাসে খোদাই জানে!! যদিও এসব কিছুই ইশতিয়াকের নিজস্ব ধারনা!! এসব ভাবতে ভাবতে অর্থীকে ফোন দেয় ইশতিয়াক -'হ্যালো'
'এতক্ষণে স্যার এর সময় হল ফোন ধরার?' আপনে কি জানেন কয়বার আপনে ফোন ও মেসেজ করেছি??'রেগে থাকলে অর্থী সবসময় ইশতিয়াককে "আপনি" বলে সম্বোধন করে।
তবুও ইশতিয়াক স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করে-'ফোন দিয়েছিলে?? অহ!! ক্লাসে ছিলাম তাই ধরতে পারিনি ।মোবাইল সাইলেন্ট ছিল ।কেন ফোন দিয়েছিলে??'
'ইশ!!ভাবখানা দেখো না স্যার এর। মনে হয় জগতে শুধু সে একাই ক্লাস করেন।থাক! আমার সাথে আর কথা বলতে হবে না। আপনে ক্লাসই করতে থাকেন।' বলেই খুট করে ফোনটা রেখে দেয় অর্থী। ইশতিয়াক আর রাগ ভাঙাতে ফোন দেয় না। কারন জানে সে এই রাগ ক্ষণস্থায়ী। কিছুক্ষণ পর অর্থী আবার ফোন দিবে। সে জানে এবং আবার সে ঝগড়া করবে।পরের বার রাগ করার বিষয় হবে অর্থী রাগ করে ফোন রেখে দেয়ার পরও ইশতিয়াক ফোন দিলো না কেন?আসলে সে তাকে ভালইবাসে না! তাইতো তার রাগের কোন মূল্যই নেই ইশতিয়াকের কাছে।এসব ভাবতে ভাবতেই ইশতিয়াক হেসে ফেলে। কখন যে আপন ভাবনায় সে গেটের সামনে এসে পড়েছে সে জানে না। গেটের সামনে একটা জটলা দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। হা,যা ভাবছিল তাই। ইমরান আজকেও ভেজাল করছে। আজকের মারামারিতে তার প্রতিপক্ষ এক ফুচকাবিক্রেতা।সে ও তার দলের সবাই প্রথমে লোকটার কাছ থেকে ফুচকা খায়।পরে দাম চাইলে তার ভাগ্যে জুটে এই। ইমরানকে ইশতিয়াক চিনে প্রায় ৩ বছর থেকে।এই ভার্সিটিতেই সে, ইমরান ও অর্থী একই সাথে পরত।গত বছর সে এক মহিলা শিক্ষকের সাথে অনৈতিক ব্যাবহারের ফলে ছাড়পত্র পায়। কিন্তু ভার্সিটি এর হোস্টেলে এখনও সে বহাল তরিয়াতে বাস করছে। ইমরানেরও একটি দুর্বলতা আছে এবং সে আর কেউ না "অরথী"।৩ মাস আগে অর্থী ও ইশতিয়াক এর আংটি বদল হয় পরিবারের সম্মতিক্রমে।এরপর অর্থী নিজের ইচ্ছা থেকেই ভার্সিটিতে আসা বন্ধ করে দেয়। ইশতিয়াক অনেক বলার পরও অর্থী ভার্সিটিতে আসে না। অর্থীকে দেখতে না পাওয়ার জন্যই হোক অথবা আংটি বদলের কারনেই হোক এরপর থেকেই ইমরান অর্থী ও ইশতিয়াকের ক্ষতি করতে যেন উঠে পড়ে লাগে।

ইশতিয়াক নিজের খাটে শুয়ে, হাতে নিজের ল্যাপটপ। এফবিতে লগিন করতেই দেখে অর্থী অনলাইনে। সে নিজে থেকে নক করে না।কিছুখন পর অর্থী নিজের থেকে নক করে
'ওঁই'
'কি বল??'
কই তুমি??'
"এইতো বাসায়" ইশতিয়াকের জবাব।
'আজ আমি আর সায়মা 6 to 9 শোতে মুভি দেখব,তুমি যাবা??'
ইশতিয়াক কিছুখন ভেবে বলে 'না,তোমরা যাও,have fun,,,আমার শরীর টা ভাল লাগছে না।'
'তোমার শরীর ভালো থাকে কবে শুনি??হা,আমরা তো মজা করবই,তোমার আর তা বলতে হবে না! বাই,আমি তোমার সাথে আর কথা বলব না' বলেই অর্থী অফলাইনে চলে যায়।ইসতিয়াক শুধু মুচকি হাসে।

রাত নয়টা ত্রিশ। অর্থী ও সায়মা রিক্সাতে 'দোস্ত, মুভিটা কিন্তু অনেক জোশ ছিল।'
'তোর ভালো লাগসে?আমার তো পুরাই বাজে লাগসে।'
'হা, তোমার ভালো লাগবে কেমনে? ইশতিয়াক ছিল না যে!'
'বাজে বকিস না, ওই দেখ তোর বাসা এসে পরেছি,নাম।'
'ওকে দোস্ত, বাসায় যেয়ে ফোন দিস'।

রাত ১১টা ৫,সায়মা হাতপা ভয়ে রীতিমতো কাপতে শুরু করেছে। অর্থীতো কখনও এমন করে ,নিশ্চয় তার কোন বিপদ হয়েছে। তার এখন কি করা উচিত, ইশতিয়াককে ফোন দিবে নাকি অর্থীর বাসায়।অরথীর পারসনাল নাম্বার সুইটচ অফ। অর্থীর বাসা থেকে ফোন তার সকল দ্বিধা কাটিয়ে দিলো। মুঠোফোনের অপর প্রান্তে অর্থীর বাবার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ। তিনি যা বললেন তার সারমর্ম এইযে অর্থী এখনও বাসায় আসেনি।এর আগে অর্থী কখনও এমন করেনি। অর্থীর বাসা থেকে ইশতিয়াককে ফোন দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অর্থীর বাবা যাচ্ছেন পুলিশকে খবর দিতে। সায়মা যদি কোন খবর পায় তবে তাদের যেন জানায়।

সায়মাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিয়ে আগে যেতে থাকে অর্থী।পাগলিটা এতো বুঝে কিভাবে তাঁকে? দূর থেকে একটা গাড়ির আলো চোখে এসে পরায় তার ভাবনায় ছেদ পরল। গাড়িটা ঠিক তার রিক্সার সামনে এসে থামল।রিক্সাওয়ালাকে হার্ড ব্রেক করে সংঘর্ষ থামাতে হল। গাড়ি থেকে ইমরান নেমে আস্ল,তাকে দেখেই অর্থীর মন যেন ভয়ে কেমন করে উঠল। অন্ধকারে ইমরানের চোখ দুটো যেন হিংস্র চতুষ্পদী জন্তুর মত জ্বলছিল। ইমরানের সাথিরা রিক্সাওয়ালাকে ভাগিয়ে দিলো। ইমরান অর্থীকে অদূরে একটি অর্ধনির্মিত ভবনে টেনে হিছড়ে নিয়ে গেল। সে যেন অর্থীর সমস্ত সম্পদ ধংস করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু অর্থী তার সর্বস্ব দ্বারা প্রতিহত করার চেষ্টা করলো। যেই রিক্সাওয়ালে ইমরানের সাথিরা ভাগিয়ে দিয়েছিল সে লোকজন জড় করে নিয়া আসছে।তা দেখে ইমরানের বন্ধুরা পালিয়ে যায়। ইমরানও পালিয়ে যেতে নেয়,কিন্তু যাওয়ার আগে অর্থীর জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করে জায়।কি একটা যেন সে অর্থীর চেহারার দিকে ছুড়ে মারে। অর্থী জানেনা তা কি ছিল।কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা যেন কারো জীবনে আর না আসে।সেই তরল পদার্থ যেইদিক দিয়ে যাচ্ছিলো তার চামড়া মাংস যেন জলসে যাচ্ছিলো ।এরপর চারিদিক অন্ধকার হয়ে পড়ে।এরপরের আরকিছুই মনে নেই।

অর্থীর খবর পেয়েই ইশতিয়াক হসপিটালে ছুটে গেল। হসপিটালের ওয়েটিং রুমে অর্থীর বাবামার বিধ্বস্ত চেহারা যেন অর্থীর উপর বয়ে যাওয়া ঝরের পরের চিত্র। ডাক্তার এর কাছ থেকে জানতে পারল অর্থীর প্রায় ৮৫ শতাংশ এসিডের তেজে ঝলসে গেছে। ডাক্তারকে ইশতিয়াক জিজ্ঞেস করে 'আমি কি অর্থীকে একবার দেখতে পারব ?'
'আপনি তার কি হন?'
"আমি ওর বাগদত্তা"
ডাক্তার এই প্রথম চোখ তুলে ইশতিয়াকের দিকে তাকালেন ।তার চোখে বিস্ময়ের উপস্থিতি স্পষ্ট। 'হা, যান।কিন্তু খেয়াল রাখবেন রোগীর যেন কোন অসুবিধা না হয়'।

রুমের গেট খুলে ইশতিয়াক অর্থীর সামনে গেলাম।কিন্তু একি!!আমার অর্থীকে চেনার যে কোন উপায়ই নেই।তার সারা মুখে ব্যান্ডেজ। গেট খোলার শব্দে অর্থী চোখ খুলে তাকাল। কিন্তু সে ইশতিয়াককে দেখেই হাত দুটো দিয়ে চেহারা দেখে ফেলল। সে চায় না ইশতিয়াক তার এই কুৎসিত রুপ দেখুক। ইশতিয়াক তার সামনে চেয়ারটায় বসে এবং হাত দুটো মুখ থেকে সরায় এবং বলে "ভালোবাসা মানে শুধু সুন্দর মুহূর্তে শুধু পরস্পরএর হাত ধরা না,খারাপ সময় একজন আরেকজনের সঙ্গি হিসেবে তা জয় করা। আমার ভালোবাসা এতটা দুর্বল না যে তোমার চেহারা দেখে তা ঘৃণায় পরিনত হবে।আমি আজও তোমাকে আগের মতই ভালবাসি,আজ থেকে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন।"

ইমরান এখন কারাগারে।তার ৩ বছরের শাস্তি হয়েছে।তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল যে সে এক জনৈক অর্থীর মুখে এসিড নিক্ষেপ করেছে। ইমরান হাসে এবং ভাবে " একটা জীবন ধ্বংসের বিপরীতে মাত্র ৩বছরের কারাগার।খারাপ কি?৩বছর পর তো বের হয়েই যাব, কিন্তু অর্থী যে এসিডের দাগটা সারাজীবন বহন করবে অভিশাপ হিসেবে ,এটাই আমার সার্থকতা।"

এখন পাঠকদের কাছে আমার প্রশ্ন এসিড নিক্ষেপকারীদের সর্বনিম্ন শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেও কি কম হত না??তবে কারাগার কি আর এমন শাস্তি?

উৎসর্গ- এসিডের তেজস্ক্রিওতায় জলসানো সকল প্রান। জীবনকে ২য় বার সুযোগ দেন। ভুলবেন না আমরাই হচ্ছি সমাজ কিন্তু আপনেরা হচ্ছেন এই সমাজের গর্ব।

লিখেছেনঃ Safat Shoeb

একজন ধর্ষক বলছি

চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে লিখতে গেলে মাঝে মাঝে আমি দিশেহারা হয়ে যায়। এই সমাজের মানুষগুলোর এত দোষ যে কোনটা ছেঁড়ে কোনটা নিয়ে লিখবো তার সিরিয়াল দিতেই হিমশিম খেতে হয়। অনেকটা বড় বড় রক্তচোষাদের রোগীর সিরিয়াল দিতে হিমশিম খাবার অবস্থার মত। ডাক্তাররা আসলে কি?? আপাতত এই প্রজাতি সম্পর্কে যতগুলো বিশেষণ আবিষ্কৃত হয়েছে তার কোনটাই বোধকরি গত কালকের ‘ধর্ষক’ শব্দটির ধারে কাছ দিয়েও যায়নি। এর আগে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল ‘কসাই’ উপাধিটা। এছাড়া ‘গলাকাটা’, ‘রক্তচোষা’ উপাধিগুলো তো আছেই। এত উপাধি থাকার পরেও কিছু কিছু মহামানব/মানবীর মনে হয়েছে যে, না, এত অল্প গালিগালাজে ডাক্তারদের কিছু হবেনা। ওদের চামড়া গন্ডারের মত। ওদের জন্য আরো যুতসই কিছু শব্দ দরকার। সেই হিসাবে ‘ধর্ষক’ শব্দটিকে খুব একটা খারাপ বলা যায় না। বরং উপাধিটি পেয়ে ডাক্তার সমাজ গর্ব বোধ করতে পারে। দেশে যে আগে থেকে ধর্ষনের সেঞ্চুরী পালন করার রেওয়াজ চলে আসছে। তবে এটা নিয়ে পত্রিকা ওয়ালাদের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। তাদের সমস্ত মনযোগ এই ডাক্তার সমাজের প্রতি। লেখার এই পর্যায়ে কিছু বাস্তব সত্য না বলে পারছি না। কথাগুলো বলার আগে দুটো ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

ঘটনা ১
আমরা তখন হলি-ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করছি। গাইনি এন্ড অবস ওয়ার্ডে আমাদের অল্প কয়েকজনের প্লেসমেন্ট চলছে। আমাদের মধ্যে একজন ছিল বেশ লম্বা-হালকা পাতলা গড়নের। মুখে দাড়ি। অসম্ভব ভদ্র আর বিনয়ী। ছেলেটার নাম শুভ। কাজের ব্যাপারে আমরা কিছু ফাঁকি দিলেও ও খুব সিরিয়াস। লেবার রুমে প্লেসমেন্টের সময় তাকে বেশীরভাগ সময় লেবার রুমেই পাওয়া যেত। একদিনের কথা বলছি। লেবার রুমে শুভ একজন রোগীকে রিসিভ করেছে। প্রথমবার মা হতে যাওয়া সেই রোগী শুভ-র ব্যবহারে এতটাই মুগ্ধ যে ডেলিভারি টেবিলে শুয়ে সে শুভকে দেখতে না পেয়ে ম্যাডামকে অনুরোধ করেছে শুভকে ডেকে আনার জন্য। শুভ ডেলিভারির সময় হাতের কনুই দিয়ে হিপ এবডাকশন থেকে শুরু করে অন্য অনেক কাজ করেছে পরম যত্নে। সেই মায়ের চোখে আমি কৃতজ্ঞতা ছাড়া একজন পুরুষ ডাক্তারের প্রতি ভয় দেখিনি, দ্বিধা দেখিনি।

ঘটনা ২
ঘটনাটি আমাদের কলেজে প্রফের এক্সটার্নাল হয়ে আসা একজন প্রফেসরের মুখ থেকে শোনা। লেকচারার হিসাবে স্যারের কাছ থেকে শোনা অনেক অভিজ্ঞতার একটি শেয়ার করছি।
রেপ কেসের শুনানি হচ্ছে। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের একজন মহিলা ডাক্তার এক্সপার্ট সাক্ষী হিসাবে গেছেন। সাথে স্যার-ও গেছেন। আসামী পক্ষের উকিল সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো একজন মহিলা ডাক্তারকে কীভাবে অপমান করেন তার কথা বলতে গিয়ে স্যার বারবার চোখ মুখ শক্ত করে ফেলছিলেন। জেরার একপর্যায়ে উকিল প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি কি কখনো রেপের সম্মুখীন হয়েছিলেন যে আপনি বুঝবেন রেপ ভিকটিমের মেন্টাল ট্রমা কি জিনিস???

ঘটনা দুটি উল্লেখ করার কারণ- প্রথম আলোর এক সাংবাদিকের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারি করা নিয়ে লেখা রিপোর্টের একদম শেষের দিকের একটি লাইন, যা থেকেই আজকের লেখার শিরোনাম। লাইনটিতে এসেছে যে, রেপ ভিক্টিম যখন ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য যান এবং একজন পুরুষ ডাক্তার যখন তাকে পরীক্ষা করেন তখন সে ২য় বার ধর্ষিত হয়। এই লাইনটি পড়ার পর নিজেকে একজন ধর্ষক ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারছি না। এই কথাটি শুনানির সময় আইনজীবিরা আদালতকে বলেছেন। তাদের কথাকে আমলে নিলে ফরেনসিক মেডিসিনের সাথে যে সকল পুরুষ ডাক্তার জড়িত আছেন তারা প্রত্যেকেই এক একজন ধর্ষক। সেই ধর্ষকদের একজন ছিলাম সাড়ে তিনবছর ধরে। সেই ধর্ষকদের একজন হয়েই আজ আবার কলম তুলে নিলাম কিছু বলার জন্য।

১. ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে কোন নারী চিকিৎসক নেই। দোষ কার???? ডাক্তার সমাজের। কিন্তু কেন এই ফরেনসিক বিভাগে নারী চিকিৎসকরা আসতে চান না সেই কারণটি কি আদালত খতিয়ে দেখেছে?? ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত প্রতিটি চিকিৎসককে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয় সে ব্যাপারে কি কোন ধারণা আছে সেই নারী সাংবাদিক বা আইনজীবিদের?? প্রতিদিন অনেকগুলো পোস্টমর্টেম, রেপ ভিক্টিম এক্সামিনেশন, কোর্টে দৌড়ানো, সাক্ষী দেয়ার ঝামেলা পোহানো, আদালতে আইনজীবিদের কাছ থেকে অসৌজন্যমূলক আচরণ এত হ্যাপা মেয়েরা সহ্য করতে পারেন না বলেই তারা ফরেনসিকে আসতে চাননা। এই ব্যাপারগুলোর জন্য কি আদালতের কোন রুল নেই??? নাকি তারা ডাক্তার বলে জাগতিক ও সামাজিক সব রুলের উর্ধ্বে তারা?

২. আমাদের একজন নারী চিকিৎসক নিজেকে ধর্ষনের হাত থেকে বাঁচাতে যেয়ে নৃশংসভাবে খুন হল। তখন কোথায় ছিল এই সাংবাদিক সমাজ??? তখন এই খুনের শাস্তি দাবী করে করা মানববন্ধনে এসে এক মহিলা রিপোর্টার বলেছিলেন যে ‘একজন ডাক্তার খুন হয়েছে এটা কোন সংবাদ না’।
ফরেনসিকের ডাক্তার যারা পোস্টমর্টেম করেন বা রেপ ভিক্টিম এক্সামিনেশন করেন তারা জানেন তাদের কি পরিমাণ হুমকি-ধামকি সহ্য করতে হয়। তাদেরকে মিথ্যা রিপোর্ট দেবার জন্য কি পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হয়। এই যে মানসিক যন্ত্রণা যা মাঝে মাঝে অত্যাচারের পর্যায়ে পরে তা থেকে ডাক্তার সমাজকে রক্ষা করার জন্য কি করেছে আইন কিংবা আদালত??? নিজের রেস্ট রুমে একজন মহিলা ডাক্তারের জীবনের নিরাপত্তা যেখানে নেই সেখানে এই ফরেনসিক মেডিসিনের জগতে মেয়েরা কেন আসবেন?? এই প্রশ্ন কি কখনো মাথায় এসেছে বিজ্ঞ আদালতের?

৩. যে আইনজীবিরা আজকে ২য় ধর্ষনের কথা তুললেন, তারা কি কেউ কখনো কোন রেপ কেসে আসামী পক্ষ ডিফেন্ড করেননি??? নাকি তারা করবেন না??? যখন রেপ কেসের ভিক্টিমকে আদালতে সবার সামনে আসামী পক্ষের উকিল জেরা করেন, ভিক্টিমকে নিজের মুখে রেপের ঘটনা সবার উদ্দেশ্যে বলতে বলেন এবং কুৎসিত চোখে একটা ছিদ্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন, ভিক্টিমের উদ্দেশ্যে মন্তব্য ছুঁড়ে দেন যে, ‘তুমি তো ব্যাপারটা উপভোগই করেছো তাই না?’ তখন কি সেই মেয়েটা আবার ধর্ষিত হয় না??? তখন তো আসামী পক্ষের জোর প্রচেষ্টা থাকে মেয়েটাকে দুশ্চরিত্র বলে প্রমাণ করার। এই বিষয়গুলো কি সাংবাদিক বা আদালতের চোখে পড়ে না???

৪. ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাড়াও দেশে আরো অসংখ্য সরকারী মেডিকেল কলেজে রেপ ভিক্টিমের পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া জেলা সদর হাসপাতালে সিভিল সার্জন রেপ ভিক্টিম এক্সামিনেশন করেন। এখন প্রতিটি জায়গায় যদি মহিলা চিকিৎসক না পাওয়া যায় তাহলে কি রেপ ভিক্টিম এক্সামিনেশন বন্ধ থাকবে??? প্রতিটি স্থানে প্রতিটি দিন মহিলা ফরেনসিক এক্সপার্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা কি আদৌ সম্ভব??? না হলে কি হবে??? যে সাংবাদিক রিপোর্ট করেছেন তিনি কি জানেন যে দ্রুততম সময়ে এক্সামিনেশন না করা হলে সাসপেক্টকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়। তাহলে কি আমাদের বোনেরা তাদের উপর নারকীয় অত্যাচার চালানোর জন্য বিচার চাওয়া বন্ধ করে দেবে???

হে সাংবাদিক মহাশয়া, হে আইনের রক্ষক সমাজের মহামানবেরা,

আমরা যারা রক্তচোষার দল আমরা রক্ত চুষে খাবার সময় নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করি না। আমাদের রক্ত হলেই হয়। আমরা গলাকাটার সময় লক্ষ্য করিনা গলাটা কি পুরুষের খোঁচা খোঁচা দাড়িযুক্ত নাকি নারীর গলার মত মসৃন। আমরা কসাইগিরি করার সময় দেখিনা টাকাটা কোন হাত থেকে আসছে?? সেটা কি পুরুষের মোটা আঙ্গুল থেকে আসছে নাকি নারীর সরু হাত থেকে আসছে??

আমাদের ডিকশনারীতে তিনটি শব্দ আছে যার কোন লিংগ ভেদাভেদ নেই। কান খুলে শব্দ তিনটি শুনে রাখুন। শব্দ তিনটি হল- রোগ, রোগী এবং চিকিৎসা- যার কোন লিংগ ভেদাভেদ চিকিৎসক সমাজ করে না। আমরা সবাই ধোয়া তুলসি পাতা তা কখনোই বলবো না, কিন্তু যেভাবে ঢালাও ভাবে সব ফরেনসিক ডাক্তারদের ২য় ধর্ষক বানিয়ে দিলেন তাতে কিন্তু সমাজ দূষণ মুক্ত হবে না।
অবকাঠামো উন্নতির কথা না বলে, লোকবলের অভাবের কথা না বলে, সিস্টেম পরিবর্তনের কথা না বলে এভাবে যদি সব কিছুকেই অবৈধ ঘোষণা করে দেন তাহলে কিছুদিন পরে না জানি মহিলা ফরেনসিক ডাক্তারের মধ্যেও আপনারা লেসবো-র দোষ আবিস্কার করে বসেন। আপনাদের দ্বারা তো আবার সবই সম্ভব।

বর্তমানে আমাদের দেশের সবথেকে বড় ধর্ষক সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসাবে আমার মোটেও গর্ব বোধ করার কথা না। কিন্তু আমি গর্ব করছি। আমি গর্ব করছি কারণ এই আমাদের ফরেনসিক ডাক্তার ভাইদের কারণেই ১০০ ভাগ না হলেও ৯০ ভাগ ধর্ষক তার শাস্তি পেয়েছে। সেই সব নির্যাতিত বোনদের পাশে কিন্তু সাংবাদিকরা আসেনি। তাদের পত্রিকায় পরিমলদের জন্য অ্যালিবাই বের করে রিপোর্ট করা হয়। আর যাদের কারণে পরিমলরা শাস্তি পায় তাদেরকে ২য় ধর্ষক উপাধি দেয়া হয়।

এত কিছুর পরেও আমি গর্বের সাথে উচ্চারণ করবো
‘আমি রক্তচোষা হব এটাই আমার অ্যাম্বিশন
আমি বড় কসাই হব এটাই আমার অ্যাম্বিশন
তবুও আমি ধর্ষক রবো এটাই আমার অ্যাম্বিশন’

লিখেছেন- Dr. Tanvir- UH, UK (16/04/13)

একটু খুনসুটি একটু ভালবাসা

মেয়ে-কীসে?
জীবনের কাছে
ছেলে-কী হবে এত তারাতারি? হওয়ার এখনো বয়স হয়ছে? আমার কী হবে, হলে তো তোমার হওয়ার কথা:-P
-কী? বিয়াদপ! তাহলে ওভাবে তাকিয়ে আছ কেন?
-তোমাকে দেখছি,
-আমাকে দেখার কী হল, আগে কখনো দেখনি আমাকে?
-না তা দেখেছি,
-তাহলে?
-তোমার দিকে যতই তাকায় ততই তাকাতে ইচ্ছে করে। কী যেন আমাকে টানে চুম্বকের মত। এইটানের রহস্য আমি বুঝিনা। কিন্ত যতই তাকায় ততই ভাল লাগে। এমন কী আছে তোমার মাঝে যা আমাকে টানে?:-|
-অ্যা, ঢং! আমি জানি আমি কিরকম, আমার গুণ গেয়ে আমাকেখুশি করতে হবে না।:->
-ধুর ভাল কথা বললেই দোষ। যাও আর বলবনা:->
-আরে রাগ কর কেন? আমি তো এমনি বলছি।;-)
-কী?:-@ এখন ঢং কে করতেছে? আমি জানি প্রশংসা করলে তোমার খুশি লাগে, তোমার কি, সব মেয়েরই লাগে।:-P
-কী মেয়েদের খুশি লাগ না?;-> আর তোমাদের রাগ লাগেতাইনা? আহা! কত সাধু,যাও আমার প্রশংসা করতে হবনা, আমার সাথে কথাও বলতে হবেনা,হু:->
-আরে, দেখ রাগ করছে। একটা আয়না এনে দেব? দেখ, গাল ফুলে একেবারে লাল! পুরাই টমেটো:-D, খুব সুন্দর;-)।
-যাও শয়তান:-),
-আচ্ছা গেলাম,
-তুমি না যেতে বল্লে,
-বল্লেই হল? এখন আমার সামনেথেকে যাও আর অন্য মেয়ের সাথে টাংকি মার, তা হবেনা, আমি তোমাকে একা যেতে দিচ্ছিনা,;-)-অ খোদা! মেয়েদের এত ক্ষমতা দিছ কেমনে? এক সেকেন্ডে বদলে যায়, আর এক মুখে হাজার কথা:-(।
-কী?:-@ -না কিছু না, চল,
-কোথায় যাব?
-"চল আজ হাঁটব দুজন ধরে হাত খোলা রাস্তায়, গাছের ছায়ায় মাড়াব পথ, অন্তহীন একসাথে চলার আশায়, ঘরের কার্ণিসে পাখির বাসায়, একজোড়া চড়ুই হয়ে খুনসুটি আর ভালবাসায় বাঁধব ঘর

আপনি কি সুখী

বন্ধুদের আড্ডার ঠিক মাঝ পর্বে এসে মন এবং মেজাজ দুটোই খারাপ হয়ে গেল তন্ময়ের। কিছুক্ষন আগে সৌমেনের সাথে বেশ একটা বাজে ঝগড়াও হয়ে গেছে। যদিও সবার হস্তক্ষেপে সেটা মিটমাট হলেও রাগটা দুজনের মধ্যেই আছে বুঝা যাচ্ছে। এই আড্ডায় থাকার আর একবিন্দুও ইচ্ছা নাই তার। কিন্তু হুট করে উঠে চলে আসাও যাচ্ছে না। রাখি ভাবী মানে সজলের বউ খুব রাগ করবে। আজ অনেক আয়োজন করেছেন উনি। চাকরী আর সংসারের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ভার্সিটি আর কলেজ জীবনের খুব কাছের কিছু বন্ধুর সাথে মাঝে মাঝে এমন একটা আড্ডার আয়োজন করে তন্ময়রা। সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করে সবার কাছে জানিয়ে দেয়া হয়। জায়গা ঠিক হয় কারো না কারো বাসা। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবার বাসাতেই আড্ডার আসর বসে। বন্ধুদের মাঝে বেশির ভাগ বিবাহিত। কাজেই যার বাসায় আড্ডা বসে তার দায়িত্ব থাকে নাস্তা-পানির আয়োজন করার। অধিকাংশ সময়ে আড্ডা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। রাতের খাবার আয়োজন থাকে তাই প্রায় সময়।

কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা তন্ময়। তখনি শিলার ফোন। ফোনটা ধরেই খিটমিটে গলায় বললো, 'হ্যালো'
ওপাশ থেকে কিছু কথা শোনার পর ছোট্ট করে কিন্তু বেশ জোড়েই বললো, 'আচ্ছা আমি এখুনি আসছি'. জোড়ে বলার উদ্দেশ্য সবাই যাতে শুনতে পায় আর বুঝতে পারে যে বাসা থেকে জরুরী ফোন এসেছে বলে ওকে চলে যেতে হচ্ছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে ওর উদ্দেশ্য সফল। রিয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, কিরে? কোন সমস্যা??
-হ্যাঁ দোস্ত। শিলা ফোন করে বললো, মা-র শরীর নাকি বেশী ভালো না। বাসায় যাওয়া দরকার।
ওর বন্ধু মহলের সবাই জানে ওর মা বেশ কিছুদিন থেকেই হার্টের অসুখে ভুগছেন। কাজেই কেউ আর তেমন একটা অবাক হলনা। রুমি বললো, 'বাসায় চলে যা তাড়াতাড়ি। আর কোন সমস্যা হলে জানাস।
এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো তন্ময়। 'আচ্ছা যাই তাহলে'- বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না।

রাস্তায় এসে বেশ জোরে একটা দম নিয়ে নিজেকে হালকা করে সিগেরেট ধরালো তন্ময়। নিজের এই ছোট খাটো অভিনয়ে সে নিজেই মুগ্ধ। বন্ধুদের আড্ডা থেকে বের হবার জন্য এই মিথ্যা কথাটুকু বলা তার খুব দরকার ছিল। আসল ঘটনা হল ফোন তার বউ শিলা করেছিল এবং তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছিল এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের অসুখের কথাটুকু বাড়িয়ে বলে আড্ডা থেকে সে নিজেই বের হয়ে এসেছে। এখন হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে। কি করা যায় ভাবছে সে। রাত মাত্র তার কিশোর বয়সে পা রেখেছে। ঘড়িতে ৮টা বাজে। যদিও শিলা তাড়াতাড়ি ফেরার কারণ হিসাবে মায়ের ওষুধ নিয়ে আসার কথা বলেছে তবুও তন্ময়ের এখুনি বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না। বাসায় গেলেই তো আবার সেই অভিনয়ের পালা শুরু হবে। সুখী থাকার অভিনয়। ভালো থাকার অভিনয়। গত ১টা বছরের কিছু বেশি সময় সে এই অভিনয়ই তো করে আসছে। মায়ের পছন্দে শিলাকে বিয়ে করার কিছুদিন পর থেকে এই কষ্টটার শুরু। যদিও গায়ের রঙ কালো আর চেহারাটা খুব সাধারণ ছাড়া শিলার বাকি সব কিছুই অসাধারণ। তার মাকে শিলা ঠিক নিজের মায়ের মত যত্ন করে। বাসার সবকিছু একহাতে সামলানোর পরেও তার মুখে হাসি লেগেই থাকে। এমনকি সিগারেটের ধোয়ায় বেডরুম অন্ধকার করে রাখলেও ও কিছু বলে না। ওর হাতের রান্নাও ভালো। যদিও প্রায় প্রতিদিনই খেতে বসে রান্না খারাপ হয়েছে বলে শিলাকে বাজে কথা বলে সে। কোনোদিন ঝাল বেশি হয়েছে বলে তো কোনদিন লবন বেশি। বেচারি প্রথম প্রথম মন খারাপ করে কাঁদত। ইদানিং কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকে। তন্ময়ের মনে হয় এই শিলার জন্যই ওর জীবনটা এমন কষ্টের। আজকেও ঠিক এই কারণেই বন্ধুদের আড্ডা থেকে উঠে চলে আসা। ব্যাপারটা আসলে সম্পূর্ণ তার নিজের মানসিক সমস্যা এটা জানে তন্ময়। তবুও সে মানতে পারেনা। ঘটনা আসলে খুব সামান্য। বাসার উদ্দশ্যে রিকশায় বসে আরেকটা সিগারেটে টান দিতেই আড্ডার কথাটা মনে পরে তার।

আজকের আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল বউ নিয়ে। কার বউ কত সুন্দর, কে কত গুনবতী এইসব। তবে রাখি ভাবীকে আজকে হিসাবের মধ্যে আনা হয়নি কারণ আজকে উনার বাসাতে আড্ডা। এই বউ সম্পর্কিত ব্যাপারটা এলেই তন্ময় চুপসে যায়। সে কোন কথা বলে না। চুপকরে অন্যদের কথা শোনে। আজও সে চুপ করেই ছিল। শিলার ব্যাপারে তার একধরনের হীনমন্যতা আছে। তার বন্ধুর সবার বউ-ই বেশ সুন্দরী। বিশেষকরে সৌমেনের বউ এর প্রশংসা ওর বন্ধু মহলে সব থেকে বেশি। গীতি ভাবী খুব সুন্দর। যাকে বলে সেই রকম সুন্দর। ৫ মাস আগের বিয়ে করা বউ নিয়ে সৌমেনের গর্বটা খালি চোখেই বেশ বোঝা যায়। শিলার কথা ভুলেও কেউ ওদের আড্ডায় উচ্চারণ করে না। সবাই জানে শিলা বেশ কালো এবং তন্ময় এই ব্যাপারে কথা বললে রাগ করে এটাও সবাই জানে। তবুও আজ সৌমেন তন্ময়কে খোঁচাটা দিয়েই দিল। সৌমেন বেশি কিছু বলেনি। সে শুধু বলেছে, সবার কপাল কি কালি দিয়ে মাখা থাকে নাকি? কি বলিস তন্ময়? এই কথার পরেই সেই বিশ্রি ঝগড়াটা শুরু হল। বাজে কথা যা বলার বেশি তন্ময়ই বলেছে। সৌমেন চুপ করেই ছিল। এখন তন্ময়ের বেশ খারাপ লাগছে। কালকেই সৌমেনের বাসায় যেয়ে ক্ষমা চাইবার সিদ্ধান্ত নিলো তন্ময়।

বাসায় ঢুকে তন্ময় দেখে শিলা তার মায়ের মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছে। আজকের যুগে এই দৃশ্য খুবই বিরল। তবুও এই চমৎকার ঘরোয়া শান্তির ছবি ওর কাছে কোন আবেদন বহন করে না। খাবার টেবিলে মেজাজ খারাপের প্রভাব আরো ভালোভাবেই পরে। খাবার মুখে দিয়েই তন্ময় চিৎকার করে ওঠে, 'এটা কি রান্না করেছো? এই খাবার কুত্তাও মুখে দেবে না।
আজ অনেকদিন পরে শিলা বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে মনের সুখে কাঁদল। গায়ের রঙ এর জন্য ওর কষ্ট কোনদিন যাবেনা।

পরের দিন তন্ময় অফিস শেষ করেই গেল সৌমেনদের বাসায়। কলিং বেল দেবার কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলেন সৌমেনের বাবা। তন্ময় অবাক হয়ে দেখলো বুড়ো মানুষটা দরজা খুলতে হেঁটে আসার কষ্টে হাঁপাচ্ছে। তার চোখ লাল হয়ে গেছে। তন্ময় উনাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিতেই কানে এল সৌমেন আর গীতি ভাবীর উত্তেজিত কন্ঠ।

গীতি ভাবী চিৎকার করছে, 'আমি তোমাকে বিয়ের রাত থেকেই বলেছি ওই বুড়োটাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসো। আমি ওকে টানতে পারবো না। তুমি শোননি।
- উফফ আস্তে বল। বাবা শুনবে।
- আস্তে বলবো মানে? শোনার জন্যই তো বলছি। ঐ বুড়ার জন্য আমি আমার জীবন নষ্ট করতে পারবো না।

তন্ময় প্রচন্ড অবাক হয়ে ভাবছে চেহারা সুন্দর হলেই কি মানুষ এমন বাজে মানসিকতার হয়? আড়চোখে সৌমেনের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষটার দু গাল বেয়ে প্রচন্ড কষ্টের জল গড়িয়ে পড়ছে। চোখে মুখে চরম অসহায়ত্ব। তন্ময় আর থাকতে পারলো না।

সেদিন রাতের খাবার টেবিল। শিলা সাধারণত তন্ময়ের খাওয়া শেষ হলে খায়। তন্ময় শেষ কবে ওকে একসাথে খেতে বলেছিল ও মনে করতে পারেনা। কিন্তু আজ তাকে তন্ময়ের অনুরোধে একসাথে খেতে বসতে হয়েছে। মনে মনে সে প্রস্তুত হয়েই আছে একটা ঝাড়ি খাওয়ার।

তন্ময় খাবার মুখে দিয়ে শিলার দিকে তাকালো।
- কাল তো ছুটির দিন। সকালে তোমার ঐ স্পেশাল ঝোল ঝোল সব্জি খিচুড়িটা রান্না কর না। অনেকদিন খাইনা।
প্রচন্ড অবাক হয়ে শিলা তন্ময়ের চোখের দিকে তাকালো। তন্ময়ের চোখের দৃষ্টি খুব অদ্ভুত। ভালোবাসা আর অনুতাপ মিলে মিশে গেলে দৃষ্টিটা একটু অদ্ভুতই হয়।

আপনি কি সুখী

বন্ধুদের আড্ডার ঠিক মাঝ পর্বে এসে মন এবং মেজাজ দুটোই খারাপ হয়ে গেল তন্ময়ের। কিছুক্ষন আগে সৌমেনের সাথে বেশ একটা বাজে ঝগড়াও হয়ে গেছে। যদিও সবার হস্তক্ষেপে সেটা মিটমাট হলেও রাগটা দুজনের মধ্যেই আছে বুঝা যাচ্ছে। এই আড্ডায় থাকার আর একবিন্দুও ইচ্ছা নাই তার। কিন্তু হুট করে উঠে চলে আসাও যাচ্ছে না। রাখি ভাবী মানে সজলের বউ খুব রাগ করবে। আজ অনেক আয়োজন করেছেন উনি। চাকরী আর সংসারের ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ভার্সিটি আর কলেজ জীবনের খুব কাছের কিছু বন্ধুর সাথে মাঝে মাঝে এমন একটা আড্ডার আয়োজন করে তন্ময়রা। সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করে সবার কাছে জানিয়ে দেয়া হয়। জায়গা ঠিক হয় কারো না কারো বাসা। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবার বাসাতেই আড্ডার আসর বসে। বন্ধুদের মাঝে বেশির ভাগ বিবাহিত। কাজেই যার বাসায় আড্ডা বসে তার দায়িত্ব থাকে নাস্তা-পানির আয়োজন করার। অধিকাংশ সময়ে আড্ডা চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। রাতের খাবার আয়োজন থাকে তাই প্রায় সময়।

কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা তন্ময়। তখনি শিলার ফোন। ফোনটা ধরেই খিটমিটে গলায় বললো, 'হ্যালো'
ওপাশ থেকে কিছু কথা শোনার পর ছোট্ট করে কিন্তু বেশ জোড়েই বললো, 'আচ্ছা আমি এখুনি আসছি'. জোড়ে বলার উদ্দেশ্য সবাই যাতে শুনতে পায় আর বুঝতে পারে যে বাসা থেকে জরুরী ফোন এসেছে বলে ওকে চলে যেতে হচ্ছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে ওর উদ্দেশ্য সফল। রিয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো, কিরে? কোন সমস্যা??
-হ্যাঁ দোস্ত। শিলা ফোন করে বললো, মা-র শরীর নাকি বেশী ভালো না। বাসায় যাওয়া দরকার।
ওর বন্ধু মহলের সবাই জানে ওর মা বেশ কিছুদিন থেকেই হার্টের অসুখে ভুগছেন। কাজেই কেউ আর তেমন একটা অবাক হলনা। রুমি বললো, 'বাসায় চলে যা তাড়াতাড়ি। আর কোন সমস্যা হলে জানাস।
এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো তন্ময়। 'আচ্ছা যাই তাহলে'- বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না।

রাস্তায় এসে বেশ জোরে একটা দম নিয়ে নিজেকে হালকা করে সিগেরেট ধরালো তন্ময়। নিজের এই ছোট খাটো অভিনয়ে সে নিজেই মুগ্ধ। বন্ধুদের আড্ডা থেকে বের হবার জন্য এই মিথ্যা কথাটুকু বলা তার খুব দরকার ছিল। আসল ঘটনা হল ফোন তার বউ শিলা করেছিল এবং তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছিল এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু মায়ের অসুখের কথাটুকু বাড়িয়ে বলে আড্ডা থেকে সে নিজেই বের হয়ে এসেছে। এখন হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে। কি করা যায় ভাবছে সে। রাত মাত্র তার কিশোর বয়সে পা রেখেছে। ঘড়িতে ৮টা বাজে। যদিও শিলা তাড়াতাড়ি ফেরার কারণ হিসাবে মায়ের ওষুধ নিয়ে আসার কথা বলেছে তবুও তন্ময়ের এখুনি বাসায় যেতে মন চাচ্ছে না। বাসায় গেলেই তো আবার সেই অভিনয়ের পালা শুরু হবে। সুখী থাকার অভিনয়। ভালো থাকার অভিনয়। গত ১টা বছরের কিছু বেশি সময় সে এই অভিনয়ই তো করে আসছে। মায়ের পছন্দে শিলাকে বিয়ে করার কিছুদিন পর থেকে এই কষ্টটার শুরু। যদিও গায়ের রঙ কালো আর চেহারাটা খুব সাধারণ ছাড়া শিলার বাকি সব কিছুই অসাধারণ। তার মাকে শিলা ঠিক নিজের মায়ের মত যত্ন করে। বাসার সবকিছু একহাতে সামলানোর পরেও তার মুখে হাসি লেগেই থাকে। এমনকি সিগারেটের ধোয়ায় বেডরুম অন্ধকার করে রাখলেও ও কিছু বলে না। ওর হাতের রান্নাও ভালো। যদিও প্রায় প্রতিদিনই খেতে বসে রান্না খারাপ হয়েছে বলে শিলাকে বাজে কথা বলে সে। কোনোদিন ঝাল বেশি হয়েছে বলে তো কোনদিন লবন বেশি। বেচারি প্রথম প্রথম মন খারাপ করে কাঁদত। ইদানিং কেমন যেন গম্ভীর হয়ে থাকে। তন্ময়ের মনে হয় এই শিলার জন্যই ওর জীবনটা এমন কষ্টের। আজকেও ঠিক এই কারণেই বন্ধুদের আড্ডা থেকে উঠে চলে আসা। ব্যাপারটা আসলে সম্পূর্ণ তার নিজের মানসিক সমস্যা এটা জানে তন্ময়। তবুও সে মানতে পারেনা। ঘটনা আসলে খুব সামান্য। বাসার উদ্দশ্যে রিকশায় বসে আরেকটা সিগারেটে টান দিতেই আড্ডার কথাটা মনে পরে তার।

আজকের আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল বউ নিয়ে। কার বউ কত সুন্দর, কে কত গুনবতী এইসব। তবে রাখি ভাবীকে আজকে হিসাবের মধ্যে আনা হয়নি কারণ আজকে উনার বাসাতে আড্ডা। এই বউ সম্পর্কিত ব্যাপারটা এলেই তন্ময় চুপসে যায়। সে কোন কথা বলে না। চুপকরে অন্যদের কথা শোনে। আজও সে চুপ করেই ছিল। শিলার ব্যাপারে তার একধরনের হীনমন্যতা আছে। তার বন্ধুর সবার বউ-ই বেশ সুন্দরী। বিশেষকরে সৌমেনের বউ এর প্রশংসা ওর বন্ধু মহলে সব থেকে বেশি। গীতি ভাবী খুব সুন্দর। যাকে বলে সেই রকম সুন্দর। ৫ মাস আগের বিয়ে করা বউ নিয়ে সৌমেনের গর্বটা খালি চোখেই বেশ বোঝা যায়। শিলার কথা ভুলেও কেউ ওদের আড্ডায় উচ্চারণ করে না। সবাই জানে শিলা বেশ কালো এবং তন্ময় এই ব্যাপারে কথা বললে রাগ করে এটাও সবাই জানে। তবুও আজ সৌমেন তন্ময়কে খোঁচাটা দিয়েই দিল। সৌমেন বেশি কিছু বলেনি। সে শুধু বলেছে, সবার কপাল কি কালি দিয়ে মাখা থাকে নাকি? কি বলিস তন্ময়? এই কথার পরেই সেই বিশ্রি ঝগড়াটা শুরু হল। বাজে কথা যা বলার বেশি তন্ময়ই বলেছে। সৌমেন চুপ করেই ছিল। এখন তন্ময়ের বেশ খারাপ লাগছে। কালকেই সৌমেনের বাসায় যেয়ে ক্ষমা চাইবার সিদ্ধান্ত নিলো তন্ময়।

বাসায় ঢুকে তন্ময় দেখে শিলা তার মায়ের মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছে। আজকের যুগে এই দৃশ্য খুবই বিরল। তবুও এই চমৎকার ঘরোয়া শান্তির ছবি ওর কাছে কোন আবেদন বহন করে না। খাবার টেবিলে মেজাজ খারাপের প্রভাব আরো ভালোভাবেই পরে। খাবার মুখে দিয়েই তন্ময় চিৎকার করে ওঠে, 'এটা কি রান্না করেছো? এই খাবার কুত্তাও মুখে দেবে না।
আজ অনেকদিন পরে শিলা বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে মনের সুখে কাঁদল। গায়ের রঙ এর জন্য ওর কষ্ট কোনদিন যাবেনা।

পরের দিন তন্ময় অফিস শেষ করেই গেল সৌমেনদের বাসায়। কলিং বেল দেবার কিছুক্ষন পর দরজা খুলে দিলেন সৌমেনের বাবা। তন্ময় অবাক হয়ে দেখলো বুড়ো মানুষটা দরজা খুলতে হেঁটে আসার কষ্টে হাঁপাচ্ছে। তার চোখ লাল হয়ে গেছে। তন্ময় উনাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিতেই কানে এল সৌমেন আর গীতি ভাবীর উত্তেজিত কন্ঠ।

গীতি ভাবী চিৎকার করছে, 'আমি তোমাকে বিয়ের রাত থেকেই বলেছি ওই বুড়োটাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসো। আমি ওকে টানতে পারবো না। তুমি শোননি।
- উফফ আস্তে বল। বাবা শুনবে।
- আস্তে বলবো মানে? শোনার জন্যই তো বলছি। ঐ বুড়ার জন্য আমি আমার জীবন নষ্ট করতে পারবো না।

তন্ময় প্রচন্ড অবাক হয়ে ভাবছে চেহারা সুন্দর হলেই কি মানুষ এমন বাজে মানসিকতার হয়? আড়চোখে সৌমেনের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষটার দু গাল বেয়ে প্রচন্ড কষ্টের জল গড়িয়ে পড়ছে। চোখে মুখে চরম অসহায়ত্ব। তন্ময় আর থাকতে পারলো না।

সেদিন রাতের খাবার টেবিল। শিলা সাধারণত তন্ময়ের খাওয়া শেষ হলে খায়। তন্ময় শেষ কবে ওকে একসাথে খেতে বলেছিল ও মনে করতে পারেনা। কিন্তু আজ তাকে তন্ময়ের অনুরোধে একসাথে খেতে বসতে হয়েছে। মনে মনে সে প্রস্তুত হয়েই আছে একটা ঝাড়ি খাওয়ার।

তন্ময় খাবার মুখে দিয়ে শিলার দিকে তাকালো।
- কাল তো ছুটির দিন। সকালে তোমার ঐ স্পেশাল ঝোল ঝোল সব্জি খিচুড়িটা রান্না কর না। অনেকদিন খাইনা।
প্রচন্ড অবাক হয়ে শিলা তন্ময়ের চোখের দিকে তাকালো। তন্ময়ের চোখের দৃষ্টি খুব অদ্ভুত। ভালোবাসা আর অনুতাপ মিলে মিশে গেলে দৃষ্টিটা একটু অদ্ভুতই হয়।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

বিড়ালের ভয়ে ভীত নগরবাসী

ভয়

মানুষ চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী কিংবা ভয়ঙ্কর কোনো প্রাণীর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্টয়েট শহরের বাসিন্দারা একটি বিড়ালে ভয়ে ভীত। বাসিন্দা-দের মতে, এটা কোনো সাধারণ বিড়াল নয়। তাই এত ভয়!

মোটরগাড়ির শহর ডেট্টয়েটের বাসিন্দা পল হ্যাটলি (১৪) কিছুদিন আগে ওই বিড়ালটিকে চিহ্নিত করে। সে জানায়, এটি সাধারণ কোনো বিড়াল নয়। কারণ এর উচ্চতা চার ফুট। অন্যান্য বিড়াল হয়তো তার লেজের সমান হবে। সাধারণ বিড়ালের মতো এটা দৌঁড়ায় না। প্রাণীটি দেখলেই ভয় লাগে বলে জানায় হ্যাটলি। বিড়ালটি বন থেকে এসেছে না কারো পোষ্য সেই বিষয়ে এলাকাবাসী স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি। এই ধরণের বিড়াল হাল আমলে দেখা যায় না। হাজার বছর আগে আফ্রিকায় এ ধরনের বিড়াল দেখা গেছে।- ইউপিআই

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

রনি অথবা মৌয়ের গল্প

চেম্বারে ঢুকেই টেবিলের উপর সাদা খামটা দেখে মনটা অদ্ভুত খারাপ লাগায় ভরে গেলো।আজ দিনটাই
ভালবাসার জীবন
হয়তো খারাপ যাবে।ভাবছি সকালে যে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।অবশ্য অন্যের মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠার সুযোগটা আমার এখনো হয়নি।নিপাট ব্যাচেলর মানুষ হিসেবে প্রতিটাদিন ঘুম থেকে উঠে ওয়াশিং বেসিনের আয়নায় নিজের মুখটাই সবার আগে দেখতে হয়।তাই আপাতত নিজেকেই অপয়া ভাবতে হচ্ছে।যাইহোক খামের কথা বলতে গিয়ে কতো কি বলে ফেললাম।শহরতলীর একমাত্র প্যাথলজিকাল টেস্টের সুবিধাসম্পন্ন চেম্বারে এইরকম অনেক খামেই আমাকে সাইন করতে হয়।কিন্তু এই খামটা আর দশটা খামের মতো নয়।এই খামটা প্রতিটাবার আমার মন খারাপ করিয়ে দেয়।খামটার গায়ে লেখা ‘মিসেস রনিবাবু,বয়স ২৫...নিচে লেখা pregnancy test report...

রনিবাবুর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আমি যখন মেডিক্যাল কলেজের ২য় বর্ষে পড়ি।ডিসেম্বরের কোন এক বিকেলে কলেজের কাছেই কলোনির রাস্তার ধারে হাঁটছিলাম।হঠাৎ দেখি ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের জটলা আর শোরগোল।আমাদের বয়সী একটা ছেলে সেখানে বাচ্চাদের চকলেট বিলাচ্ছে।বাচ্চাদের কেউ তার ঘাড়ে,কেউ তার কোলে চেপে বসে হাত তালি দিয়েই যাচ্ছে।অদ্ভুত ভালোলাগায় মনটা ভরে গেলো।একটা মানুষ যে কতো মায়া নিয়ে বাচ্চাদের আদর করতে পারে ছেলেটাকে না দেখলে বোঝা যাবে না।পরে এই ছেলেটার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কলেজ মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে।ডাক নাম রনি।বাচ্চাদের অসম্ভব ভালবাসে বলে এলাকার মানুষ আদর করে ওকে বাবুরনি ডাকে।মায়াকাড়া সহজ সরল চেহারা।মসজিদে প্রায়ই দেখা হতো বলে ছেলেটা অল্প সময়েই আমার ঘনিষ্ঠ একজন হয়ে উঠল।অদ্ভুত একটা ছেলে,বাচ্চা দেখলেই মাথা ঠিক থাকতো না।রাস্তায় হাঁটতে গেলে কারো কোলে বাচ্চা দেখলে রনি যে করেই হোক কোলে নিবেই।রনি আমাকে মাঝে হেসে বলতো,তাকে যদি কিছু খাবার আর একটা ছোট্ট বাচ্চা দিয়ে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়,তাহলে সে দিনের পর দিন কোন চাহিদা ছাড়াই পার করে দিতে পারবে।

রনি তার জীবনের কোনকিছুই আমার কাছে লুকোতো না।প্রেমটা রনির জীবনে বড্ড অদ্ভুত ভাবেই এসেছিল।মৌয়ের মুখেই কাহিনীটা শুনেছিলাম।রনি প্রায় বিকেলেই মৌয়ের বাসার সামনে কাছাকাছি দাড়িয়ে থাকতো।আর ওদিকে চাচাতোবোন বৃষ্টিকে প্রতিদিন বাসার বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া মৌয়ের নিত্যদিনকার রুটিনে পরিণত হয়েছিল।রনিকে এইভাবে প্রতিনিয়ত দাড়িয়ে থাকতে দেখে মৌয়ের আর দশটা বখাটে ছেলের মতই মনে হয়েছিলো।কিন্তু রনির সাথে চোখাচোখি হলে সেটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হতো মৌর।কিন্তু যেদিন রনি আড়াল ভেঙ্গে তার সামনে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো সেদিন তার বুকের মাঝে ভয়ের শীতলস্পর্শ বয়ে গেলো।ছেলেটা এরকম আচমকা তার সাথে কথা বলতে আসবে সে ভাবতেও পারেনি।কিন্তু এইরকম মুহূর্তে ছেলেটা তাকে যে কথা বলল,তা বোধহয় পৃথিবীর কোন নারীই শুনেনি।রনি অতি আগ্রহের সাথে দেড় বছর বয়সী বৃষ্টিকে কোলে নিতে চাইলো।মূর্তির মত স্তব্দ হয়ে মৌ বৃষ্টিকে ছেলেটির কোলে দিল।ছেলেটির আদর করার ভঙ্গি দেখেই বুঝে গেল বাচ্চাদের প্রতি তার গভীর মায়া।মৌয়ের মাঝে তখন একি সাথে দুটি অনুভুতি কাজ করছে।একটা অবাক করা অনুভুতি আরেকটা অনুশোচনা বোধ।এই দেবতাতুল্য মানুষটাকে কি ভুলটাই না সে এতদিন বুঝেছিল।সেদিনই মৌ বুঝেছিল বিধাতা নিজ হাতে এই ছেলেটিকে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।এখন শুধু ছেলেটিকে তার জীবনে বুঝে নেবার পালা।নিজের সবচেয়ে ভাললাগার মানুষের আসনে রনিবাবুকে বসাতে মৌয়ের একটুও ভুল হল না।

এরপর শুরু হল মৌ-রনির একসাথে পথচলা।দুজনের মাঝেই অদ্ভুত কি একটা মিল। দেখে মনে হবে যেন এই দুজনেরইতো একসাথে থাকার কথা ছিল।দুজনেই খুব হাসিখুশি,যেন দুনিয়ার কোন দুঃখ তাদের স্পর্শ করেনি।দুজনেই বাচ্চাদের অসম্ভব ভালবাসে।রনির সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য মৌও আমার কাছের কেউ হয়ে গেল।কোথায় যেন পরেছিলাম প্রেমের গল্প কখনো মসৃণ হয়না।মৌ-রনির ক্ষেত্রেও সেটা হল না।রনির জোরাজুরিতে ওর পরিবার রাজি হলেও মৌয়ের পরিবার কিছুতেই রাজি হল না।বরং মৌকে দ্রুত বিয়ে দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলো।শান্তশিষ্ট ছেলে রনিবাবু মৌকে ছেড়ে দেবার কথা কল্পনাতেও ভাবতো না।তখন আমি ইন্টার্নী করি।মৌকে হারাতে হবে জেনে আমাকে জড়িয়ে ধরে রনিবাবুর সেই কান্নার কথা আজও আমি ভুলতে পারি নি।সেদিনই মনে হয়েছিল আর যাই হোক এই জুটিকে কখনই বিচ্ছিন্ন হতে দেয়া যাবে না।এপ্রিলের কোন এক বৃষ্টিস্নাত বুধবারে আমি আর আমার দুজন বন্ধুকে সাক্ষী রেখে উত্তরা কাজী অফিসে মৌ আর রনির বিয়ে হয়ে গেল।এরপরের কাহিনী আমার তেমন জানা নেই।মেডিক্যাল পাশ করে চাকরীতে ঢুকে যাওয়ায় জানার তেমন সুযোগও ছিল না।শুধু শুনেছিলাম মৌয়ের বাসায় বিয়েটা মেনে নিলেও তার বাবা মা কখনো সেটা সহজ ভাবে নেয় নি।আর রনির বাসায় বিয়ে মেনে নিলেও রনির সংসার চালানোর খরচ দিতে তারা নারাজ।পরে বাধ্য হয়ে রনি কোন একটা ছোটখাট চাকরী জুটিয়ে নেয়।

এরপর প্রায় ৫ বছর পার হয়ে গেছে।আমি মফস্বলের এক পাড়াগাঁয়ে পোস্টিং নিয়ে এলাম।কোন এক শীতের রাতে বাজারে একটু ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম।হঠাৎ কালো চাদর পরা কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরল।এই এলাকায় এমনিতেই চরমপন্থীদের উৎপাত একটু বেশী।তাই খুব বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।রনিবাবুকে ৫ বছর পর আবার এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা পেয়ে যাবো আশা করিনি।এমনিতে এই অজপাড়াগায়ে কিছুটা নিঃসঙ্গতায় ভুগি।রনিকে পেয়ে ভালই হল।তাছাড়া ছেলেটাকে আমি খুব পছন্দ করি।রনি মৌকে নিয়ে ছোট্ট একটা বাসা নিয়েছে।রনির পাশাপাশি মৌও বাচ্চাদের স্কুলে চাকরী নিয়েছে।দুজন একসাথে বেরুলে আমার চেম্বারে একবার ঢুঁ মেরে এককাপ কফি চাইই চাই।আগেই বলেছি দুজনেই খুব হাসিখুশি স্বভাবের।আগের সেই হাসিমুখের সাথে এখনকারটায় কোথায় যেন সুক্ষ অমিল।মৌয়ের মায়াময়ী চোখগুলোর মাঝে কেমন যেন গভীর কষ্ট লুকিয়ে আছে।একদিন মৌ একা চেম্বারে এসে সেই কষ্টগুলোর কথা আমাকে বলল।গত ৫ টা বছর ওরা সন্তান নেবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি।দেশের এমন কোন infertility বিষয়ক ডাক্তার নেই যাদের কাছে ওরা যায়নি।অনেক ডাক্তার বলেছেন সমস্যাটা মৌয়েরই,কিন্তু কি সমস্যা সেটা তারা ধরতে পারছেন না।যে রনিবাবু পাগলের মত বাচ্চাদের পছন্দ করে সেই রনিবাবুকে সন্তান না দিতে পেরে মৌ প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগছিল।তাছাড়া মৌয়ের শ্বশুরবাড়ির ওরাও খোটা মারতে ছাড়ত না।বাচ্চাপাগল রনি বাবা হতে পারবে না এটা মৌ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।তবে রনি কখনই কোন আচরনে মৌকে সেটা বুঝতে দেয়নি।মৌয়ের সমস্যা আমি জেনে যাই সেটাও সে চায়নি।সেজন্যই আমার কাছে কখনোই খুলে বলেনি।সেদিন চেম্বারে মৌয়ের কান্না আমি কখনোই ভুলতে পারব না।সবচেয়ে খারাপ লাগলো যেদিন ওদের বাসায় দাওয়াত খেতে গেলাম।পুরোটা ঘর কিউট কিউট বাচ্চাদের ছবি দিয়ে সাঁটানো।ওদের বেডরুমটা সুন্দর সুন্দর পুতুল দিয়ে সাজানো।সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।বিধাতার বিবেচনাকে বড্ড এলোমেলো মনে হচ্ছিল।নাহলে যে ছেলেটা সারাটাজীবন বাচ্চাদের জন্য উৎসর্গ করলো,সে কেন বাবা হতে পারবেনা।

কোনভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।রনিকে অনেকটা জোর করেই ইন্ডিয়ায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে রাজি করালাম।৩ মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রনি কোন সুসংবাদ দিতে পারল না।ওখানেও কোন সমস্যা খুজে পেল না।শুধু বলল চেষ্টা চালিয়ে যেতে।আমারও হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করছিল না।আমার কলেজের এক বড়ভাই ইংল্যান্ড থেকে infertility এঁর উপর ডিগ্রি নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন,তার কাছে পাঠালাম।তিনি কিছু ঔষধ দিয়েছিলেন।কেন জানিনা উনার চিকিৎসা রনি আর মৌকে খুব আশাবাদী করে তুলল।কিন্তু ৬ মাসেও কিছু না হওয়ায় ওরা খুব বেশি হতাশ হয়ে পরল।তখন মনে হচ্ছিল এতো কিছু না করানোই বরং ভাল ছিল।নিরাশ মানুষকে আশা দেখিয়ে আবার নিরাশ করলে সে নিরাশার অতল গহবরে হারিয়ে যায়।

আজকে সকালে আমার ল্যাবে মৌয়ের ৭ম pregnancy test হয়েছে।গত ৬টা রিপোর্ট নেগেটিভ লিখে সাইন করতে হয়েছে।খামটা যখন সাইনের দেবার জন্য খুলছি,তখনি রনি মৌ এসে হাজির।সেই চিরাচরিত হাসি হেসে বলল,দাদা তোমার বানানো ম্যাক-কফি খেতে হাজির হয়ে গেলাম।কে বলবে এই হাসি মুখদুটোর মাঝে একটা গভীর দুঃখ লুকিয়ে আছে।এই হাসিমাখা মুখ দুটোকে ৭ম বারের মত নেগেটিভ শব্দটা শুনাতে মনটা চাইছিল না।কিন্তু সাইন করতে গিয়ে আমি মনে হয় পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখে ফেললাম।pregnancy Test POSITIVE লেখাটা কেমন যেন স্বপ্নময় মনে হল।আমার হতভম্ব অবস্থা দেখে রনি-মৌ খুব অবাক হয়ে গেল।ওদের কিছু না বলে ল্যাবে গিয়ে নিজ হাতে মৌয়ের প্রেগনেন্সির কনফার্মেটরী টেস্ট আবার করালাম এবং পজিটিভ পেলাম।দৌড়ে গিয়ে শুধু রনিকে জড়িয়ে ধরলাম,মুখে কিছু বলার ভাষা ছিল না।পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাবা তখন আমার বুকে মুখ লুকিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছিল।আর পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মাটা তখনও ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি।আমার কেন জানি খুব কাদতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু পুরুষ মানুষেরতো কাঁদতে হয় না।আমিও কাঁদছি না।শুধু চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরেই যাচ্ছে,এই যা আর কি?