শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

পারিবারিক জীবনে দাম্পত্য সমস্যার কারণ ও ধরণ

সেক্স টিপসবিবাহ হলো একটা জটিল বাস্তবতা।তাই দাম্পত্য জীবন একেবারে সম্পূর্ন সমস্যা ও সংকটমুক্ত নয়।দাম্পত্য জীবনের চলমান বাস্তবতা চোরের মত যে কোন সময় ইচ্ছা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে কোন সমস্যা প্রবেশ করতে পারে।সমাজবিজ্ঞানীদের মতে দাম্পত্য সমস্যা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার।বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রুপে এর আবির্ভাব ঘটে।দাম্পত্য সমস্যা মূলত সৃষ্টি হয় দুজনের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে।অর্থাৎ একজনের ও প্রয়োজনের চাহিদার সাথে অন্যজনের প্রয়োজনের চাহিদার মধ্যে সংঘর্ষ।

দাম্পত্য সমস্যার কারণ ও ধরণ:
কারণ গুলো হলো বাহক অর্থাৎ যার জন্য সমস্যাগুলো দাম্পত্য জীবনে আসে,আর ধরণ গুলো এর হাবভাব অর্থাৎ এর রকম ও গুরুত্ব হিসেবে এর প্রভাব।
ক) সমস্যার কারণঃ এটাকে আমরা সমস্যার agent বলতে পারি।অর্থাৎ যার বা যাদের দ্বারা এই সমস্যার সৃষ্টি বা কারণ। দাম্পত্য সমস্যার পিছনে ৩ রকমের agent রয়েছে। তাহলো- ১) ব্যক্তি নিজে  ২।বিবাহের মূল উপাদানেএবং ৩। বাইরের বা পারিপার্শ্বিক কারণ

১) ব্যক্তি নিজে কারণঃ বিবাহ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর দাম্পত্য বন্ধন। স্বামী স্ত্রী উভয়ে এক হলেও তারা নিজস্ব বৈশিষ্ঠে ও স্বতন্ত্র জীবনবোধ নিয়ে সমৃদ্ধ।এখানে ব্যক্তি হিসেবে স্বামী স্ত্রী নিজেরাই দাম্পত্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

যেমন-স্বামী স্ত্রির শারীরিক কারণঃ
শারীরিক দীর্ঘকালীন রোগ ব্যাধি,অসুস্থ্যতা, শারীরিক দূর্বলতা, শারীরিক অক্ষমতা, ছোঁয়াছে রোগ, মানসিক বিকারগ্রস্থতা, ট্রমাটীক, সাইকিক, নিয়োরটিক, সিজোফ্রেনিক ,এলকোহলিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।

ব্যক্তিত্বঃ অন্তর্মূখী
যেমনঃ ঘরকোনা, চাপা স্বভাব, হীনমন্য, সন্দেহবাটিক, সংকীর্ণচেতা, নিঃসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ। আবার অন্যদিকে বহির্মূখী যেমন- অতিরিক্ত হৈহুল্লুর স্বভাব, সময় জ্ঞানের অভাব, বাইরে বাইরে সময় কাটানো, বন্ধু সার্কেল নিয়ে আড্ডা মারা, দায়িত্বজ্ঞান হীনতা ইত্যাদি।

দুর্বল ব্যক্তিত্বঃ পরনির্ভরশীলতা সিদ্ধান্তহীনতা, দায়িত্ব নেওয়ার অক্ষমতা, অন্যের কথায় কান দেওয়া, গোপনীয়তা রক্ষা না করার দুর্বলতা, মেরুদন্ডহীন হীনমণ্য, আস্থার অভাব, খুঁতখঁতে স্বভাব, নিজস্বতা রক্ষা করার দুর্বল মানসিকতা, সন্দেহপ্রবণ ইত্যাদি।

ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বঃ আত্ন-অহমিকা, ব্যক্তিমর্যাদা ক্ষুন্ন করা, দমনীয় ভাব, নমনীয়তার অভাব, কতৃত্বপরায়ণতা, অতিরিক্ত মেজাজ ও আবেগ প্রবণতা, গ্রহণশীলতার অভাব, প্রবল আত্ন-মর্যাদা বোধ, স্বার্থপরতা, পেশী শক্তি প্রয়োগ প্রবণতা, অস্বচ্ছলতা, গোয়াতুর্মি ভাব, অনাস্থা আপোষহীন মানসিকতা, জেদ, জবাবদিহিতার ভাব, দোষ খোঁজার মানসিকতা ইত্যাদি।
২,বিবাহের মূল উপাদানঃ দুজন নর-নারীর পারস্পারিক সন্মতির বিনিময়ই বিবাহ।সন্মতির মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটাই বিবাহের মূল উপাদান।আর দাম্পত্য জীবনে বিবাহ প্রতিশ্রুতি এই উপাদানের অনুপস্থিতি এবং এর অভাবই দাম্পত্য সমস্যার কারণ।
যেমন- ভালবাসার অভাব, বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার অভাব, যৌনাচার,বহুগামিতা, দৈহিক যৌন সম্পর্কে অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা, সমকামিতা, যৌনবিকৃতি, পাশবিকতা, যৌন মিলনের অনিহা এবং এড়িয়ে চলা, সন্তান দানে অক্ষমতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভবঘুরে, ভুল সঙ্গী নির্বাচন।

৩,পারিপার্শ্বিক কারণঃ এখানে বাইরের কোন শক্তি বা তৃতীয় কোন শক্তি বা পক্ষ পারিপার্শ্বিক কোন এজেন্ট দাম্পত্য সমস্যার কারণ হয়ে আসে।এর মধ্যে পিতা, মাতা, ভাই বোন, শশুর শাশুড়ি, দেবর ননদ, ননাশ, কোন মিথ্যা গুজব, অন্যের পক্ষপাতিত্য মনোভাব, অন্যের অতিরিক্ত আবেগ সোহাগ, ঈর্ষা প্রতিহিংসা, মদ-নেশা। অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, বেকারত্ব চাকুরী পেশা, অসৎ ব্যবসা, মোবাইল, ফেসবুক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অসততা, অতীত টেনে আনা রকমারি, বশ করা চাকুরীর তাগিদে দূরে অবস্থান।

খ) সমস্যার ধরণঃ
এই দাম্পত্য সমস্যার যে কারণগুলো রয়েছে এইগুলোর আবার গুরুত্বের মাপকাঠিতে তিন রকম এর পর্যায় বা ধরণ রয়েছে। এই গুলো হলো –
ক।মৌলিক সমস্যা, ২।অ-মৌলিক সমস্যা ও ৩,অযৌক্তিক বা বিরক্তিকর সমস্যা
১,মৌলিক সমস্যাঃ বিবাহের যে মূল ভিত্তি এবং দাম্পত্য সম্পর্কে (Basic Problem) যে মূলশক্তি এবং নীতি তার মধ্যে যে দুর্বলতা এবং অভাবই হলো এই মৌলিক সমস্যা।আর যখন এই মূলভিত্তি এবং শক্তি দুর্বলতা প্রকটভাবে দাম্পত্য সম্পর্কে সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন দাম্পত্য জীবনটাকে ভয়ানক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।তখন সেটা দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য বড় হুমকিস্বরুপ হয়ে দাঁড়ায়।বিবাহের মূল হলো পারস্পারিক ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, একতা ও সম্পূর্ণ আত্ন-দান।পরস্পরের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং মর্যাদাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা পারস্পারিক দাম্পতিক দায়িত্বশীলতায় স্বচ্ছলতা এবং সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দান। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক ভালোবাসার অভাব,অবিশ্বস্ততা, পর-পুরুষ পর নারীতে আসক্তি,সম্পর্কে বহুগামিতা,ব্যভিচার,শারিরিক দুর্বলতা অক্ষমতা,শারীরিক যৌন সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থতা এবং অনীহা, যৌন বিকৃতি এবং সমকামিতা, একেবারেই ভুল সঙ্গী নির্বাচন, মানসিক বিকার গ্রস্থতা, ব্যক্তিত্বে দুর্বলতা, পরনির্ভরশীলতা, সন্দেহবাতিকতা এবং দায়িত্ব কর্তব্যে উদাসীনতা এবং অবহেলা, প্রতারণা, অসততা, নেশাসক্তি।

২।অ-মৌলিক সমস্যাঃ এটা মূলে কোন সমস্যা নয় যা দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া বা শেষ করে দিতে পারে তবে এটা প্রতিদিনের সম্পর্কের মধ্যে অশান্তি অস্থিরতা এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যায়।
যেমন-মদ-নেশা, শারীরিক মানসিক নির্যাতন, সবকিছুতে সামান্য কিছুতে উত্তেজনা-রাগারাগি, অধৈর্য ও তর্কাতর্কি, দুর্বল ব্যক্তিত্ব, গুজবে বিশ্বাস করা, সময় সমর্থন না দেওয়া, টাকা পয়সা বেতনভাতার অস্বচ্ছতা, পেশাগত গোপনীয়তা, মিথহ্যাচার, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও বাড়াবাড়ি, অভাব-অর্থ সংকট ও বেকারত্ব, যৌন সম্পর্কে স্বার্থপরতা এবং অবিবেক হওয়া,স্বামী বিদেশে থেকে স্ত্রী সন্তান্দের জন্য টাকা না পাঠানো, স্বামী স্ত্রীর কাজ ও মর্যাদার লড়াই, ব্যক্তিত্বের সংঘাত দ্বন্দ্ব, অসামাজিক কার্যকলাপ, অর্থনৈতিক জীবন ও ব্যবসা।
৩,বিরক্তিকর সমস্যাঃ
এই সমস্যা সচরাচর দাম্পত্য জীবনে সম্পর্কে এবং পরিবারে একটু না একটু লেগেই থাকে বা স্বামী স্ত্রীর উভয়ের অসচেতনতার জন্য বা ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে।এইগুলি হলো বিরক্তিকর সমস্যা যা সয়ে যায়, আবার সময় সময় মাথা গরম করে আবার অবান্তর জ্বালান্তর সৃষ্টি করে। যেমন- ছোট ছোট বিষয়ে খুঁত ধরা, পরস্পরকে appreciate না করা, সময়মত কিছু না করা, সময় না দেওয়া, পক্ষাবলম্বন করা, যার যার বাবা মার পক্ষে কথা বলা, ঠিক সময়ে ঘরে না ফেরা, একে অন্যের সমন্ধে এবং তাদের পরিবার নিয়ে খোঁচা মেরে কথা বলা, সময়মত বাজার না করা, মোবাইলে লুকিয়ে বা এড়িয়ে কথা বলা, দাম্পত্য যৌন সম্পর্কে পরস্পরকে না বোঝা, মিথ্যা কথা বলা, কাজের সঠিক মূল্যায়ন না করা, পরস্পরের কাজের খোঁজ খবর না রাখা, অসুস্থতায় খেয়াল না করা, পরস্পরের যত্নে খেয়ালে ঘাটতি, সংসারের প্রয়োজনে বেখেয়ালীপনা, নেশায় বদ অভ্যাস, জেদ,কথা ও আচরনে রুক্ষতা,পরস্পর কথা বন্ধ করে দেওয়া, রান্না-বান্নার ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করা, পরস্পর চাহিদা পূরনে খেয়ালীপনা এবং অনীহা,গুজবে কান দিয়ে ভুল বুঝা,অতীত টেনে আনা, স্বামী স্ত্রির কথা অন্যকে বলে দেয়া, কোন ঘটানা লুকানোর চেষ্টা,সন্তান না হওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে দোষারোপ করা, প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে না যাওয়া, বৌ শাশুড়ি ও শুশুরের মধ্যে আন্তরিকভাবে গ্রহন না করার জের, অহেতুক সন্দেহ, কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার অধৈর্য হওয়া,অতিরিক্ত পীড়াপীড়ি, অন্যেরটা দেখে তুলনা করা, সংসার স্রোতে নতুনত্বের অভাব, বিনোদনের অভাব, সংসারে অভাব, গায়ে হাত তোলা, পারিবারিক কড়াকড়ি নিয়ম, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রন করা, অবহেলার কারণে এই সব বিরক্তিকর সমস্যাগুলি বড় আকার ধারণ করতে পারে। আবার অন্যদিকে উভয়ের সচেতনতা, প্রয়োজনীয় আন্তরিক পদক্ষেপ এবং পারস্পরিক ক্ষমা,সহনশীলতার মধ্য দিয়ে অনেক মৌলিক গুরুতর সমস্যারও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ উন্মুক্ত করতে পারে।

পুরুষকে বিরক্ত করে নারীর ১০ অভ্যাস

মেয়েদের কথা
নারী পুরুষ একে অপরের প্রতি ভালবাসা, আসক্তি ও দুর্বলতা নিয়েই জন্ম নিয়ে থাকে। এদের একজনের জীবন অন্যজনকে ছাড়া যেমন পূর্ণাঙ্গ হয় না, তেমনি নারীর প্রতি পুরুষের মোহ স্বভাবতই একটু বেশি। মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক গঠনের দিক দিয়েই পুরুষ এভাবে বেড়ে ওঠে। নারীর প্রতি অধিক আসক্ত হলেও তাদেরকে কখনও আবার চরম বিরক্তও হতে দেখা যায়। এই বিরক্তি নারীকে অনেক সময় বহু দূরেও ঠেলে দেয়। এই বিরাগ বিভাজনের মূলে রয়েছে নারীর কিছু বদ অভ্যাস। এসব অভ্যাসের উল্লেখযোগ্য ১০টি উল্লেখ করা হলো। 

১. খাবারের অর্ডার না দেয়া 
নারীর একটি অভ্যাস হচ্ছে সে কখনও হোটেল বা রেস্তোরাঁয় গেলে নিজের জন্য খাবারের অর্ডার দেয় না। উল্টো পুরুষের নেয়া খাবার থেকে সে কোন দ্বিধাবোধ ছাড়াই নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলে। এটা পুরুষকে খুবই বিরক্ত করে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

ছেলেদের ব্রেকআপের নান দিক

ব্রেকআপ
১ম পর্যায়, “আমার মন মানে না…”:
এই পর্যায়টা ব্রেক আপের সবচেয়ে ইমোশনাল পর্যায়। একই সাথে গুরুত্বপূর্ণও – কেননা এই সময়ে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্ত আলটিমেটলি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
ব্রেক আপের এ পর্যায়ে কারো ভেতর থেকে যে ইমোশনগুলো বেরিয়ে আসে তা একদমই Raw ইমোশন। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ইমোশনটা বেরোয় বুক ফাটা কান্না বা তীব্র মানসিক বেদনার রূপে। তবে ব্যতিক্রমী কারো কারো ক্ষেত্রে ব্রেকআপ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তবে যেটাই হোক না কেন, তা স্বাভাবিকের বাইরে, এর সবই আবেগের বশে।
যাদের জন্য ব্রেকআপটা কষ্টের তাদের মন মানেনা… “কেন আমিই এতো দুর্ভাগা” – এই প্রশ্ন বারবার ফিরে আসে মনে।
ব্রেক ঠিক পরপর এই তাৎক্ষণিক পর্যায়টিতে অধিকাংশ মানুষ ৩টি কাজের একটি করে:

ক. নিজের ক্ষতি করে (আত্মহত্যা, ড্রাগস ইত্যাদি)
খ. যে মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো তার ক্ষতির চেষ্টা করে (ফেইসবুক/ইমেইল হ্যাক, নেটে বাজে ছবি ছাড়া, মোবাইল নাম্বার ম্যানিপুলেশন)
গ. যার কারণে এই ব্রেক আপ (অন্য আরেক ছেলে হতে পারে) তার ক্ষতির চেষ্টা করে। এবং আরেকটি টাইপ আছে যারা এই ৩টির একটিও করে না – They just let it go. এরা আবার ৩ প্রকার:
ক. মন খারাপ করে থাকার দল
খ. ‌’এই বেশ ভালো আছি’ বেশ ধরা দল
গ. ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন রিলেশন আর ব্রেকআপের কারণে এদের মনে ব্রেকআপ আর নতুন করে কোন অনুভূতির জন্ম দেয় না – সেই দল (সঙ্গতঃ কারণেই এই পোস্টে তাদের কথা আলোচনা করা হয়নি)
উপর্সগ:
১. শুধু ওকে ফোন দিতে ইচ্ছে করে/দেখা করতে ইচ্ছে করে/মনে হয় এখনই গিয়ে দেখা করি – যদি জানা আছে তাতে সিদ্ধান্ত বদলাবে না।
২. নিজে থেকেই নিজের দোষ/ত্রুটি বের করে ব্রেকআপের পিছনে নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করা – যদিও হয়তো আদতে নিজের কোন দোষই নেই।
৩. ওর রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্নগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা… মন আরও খারাপ করা। কেউ কেউ অবশ্য এগুলো নষ্ট করে ফেলে।
কমন ডায়ালগ:
১. “আমার তো কোন দোষ ছিলো না… তাহলে কেন….?
২. “সব মেয়ে এক…” (এটা একটা বিশেষ টাইপের ছেলেরা বলে)
৩. “আমি আর কখনও রিলেশন করতে পারবো না…”
অত্যন্ত ইমোশনাল এ পর্যায়টাকে ঠিক শব্দে প্রকাশ সম্ভব নয়। যতো কম বলে শেষ করা যায় ততোই ভালো। তাই পরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছি।
২য় পর্যায়, সান্ত্বনা:
আপনার ফ্রেন্ডকূল এবং পরিচিতরা যারা আপনার রিলেশনের ব্যাপারে জানতো তারা এ পর্যায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাকে সান্ত্বনা দিতে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, মনে মনে আপনার বেশির ভাগ বন্ধুই (স্পেশালি যাদের রিলেশন আছে) কিন্তুই খুশি। খুশি এ জন্য যে – “যে এটলিস্ট তারা আপনার মতো এতো দুর্ভাগা না…”। এটা মানুষের আদি ধর্ম। অপরের বিপদের কথা চিন্তা করলে সচেতন বা অবচেতনভাবে আমাদের মন আনন্দ পায়।
“জাস্ট ঐ কষ্টকর পরিস্থিতিতে সে নেই” – এই চিন্তাটাই মনে আনন্দের খোরাক জোগানোর জন্য যথেষ্ট। এটা খারাপ কিছু নয়। এটা মানুষের ধর্ম। ইনফ্যাক্ট এটার কিছু ভালো দিক আছে। যেমন ধরুন, যেদিন আপনার ব্রেকআপের কথা আপনার ফ্রেন্ডরা শুনলো, পরের বার তাদের গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডের সাথে আলোচনায় এ প্রসঙ্গটা একবার হলেও অন্ততঃ উঠবে। তখন তারা একে অপরকে প্রমিস করবে – তারা কখনও এভাবে বিচ্ছেদ ঘটাবে না। রিলেশন যে পর্যায়েই থাকুক না কেন – তারা আবারও নতুন করে অনুধাবন করবে, একে অপরকে পেয়ে তারা কতোটা লাকি। নিজেদের রিলেশনের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত ছিলো, এমন কাপলদের নিজেদের সমস্যা আর কিছু বলে মনেই হবে না। প্রিয় বন্ধুর ব্রেকআপের পর এ সময়টায় গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ করেই একটু বেশিই সুইট হয়ে যেতে পারে – তবে এটা টেম্পোরারি। এর কোন স্থায়ী প্রভাব নেই।
যাই হোক এ পর্যায়ে ফ্রেন্ডকূল ও পরিচিতদের সান্ত্বনা আর উপদেশ বাণীতে সিক্ত হবেন আপনি -
১. “যা হয়েছে ভালো জন্য হয়েছে…” (হ তোরে কইসে!)
২. “জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না…”
৩. “এটা ক্যারিয়ার গড়ার সময়…” (নরমালি এটা বন্ধুরা না, স্বজনেরা বলে)
৪. “নিশ্চয়ই তোমার কপালে জন্য এর চাইতেও ভালো কিছু অপেক্ষা করছে…”
৫. “থাক দোস্ত… বাদ দে…”
৬. “ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটাও…”
৭. “ব্যাপার না… সব ঠিক হয়ে যাবে…”
৮. “চল বাইরে চল…”
আপনার রিলেশন সম্পর্কে আপনার ফ্রেন্ডদের আগে না বলা কিছু তথ্যও উঠে আসতে পারে এ পর্যায়ে -
১. “এমনিতেও এই রিলেশন নিয়ে তোর পরে সমস্যা হইতো…”
২. “ওর চাইতে হাজার গুণ বেটার মেয়ে তুই পাবি…” (৫ মাস আগেও “তোদের দেখে ঈর্ষা হয় বলার পর”)
৩. “এমনিতেও ওর অনেক সমস্যা ছিলো…”
৪. “আমার কেন জানি আগে থেকেই মনে হচ্ছিলো রিলেশনটা টিকবে না…”
৩য় পর্যায়, নিজেরে বুঝাই:
ব্রেক আপের এই পর্যায়টা একান্তই নিজের। নিজের জীবন, ক্যারিয়ার সব কিছুই নতুন করে শুরু করার একটা প্রত্যয় এই স্টেজে জন্মায়। এ পর্যায়ে একটা ছেলে এমন অনেক কিছুই করবে, যা সে সাধারণ অবস্থায় কখনোই করতো না। এমন অনেক কাজ সে করবে যা এইতো ক’দিন আগেও তার কাছে ছ্যাবলামি মনে হতো। এমন অনেক মানুষ যাদের সাথে দীর্ঘদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না/ বা অনেকটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়তে পারে। পুরো ব্যাপারটাই আসে জীবনে সামগ্রিক পরিবর্তনের একটা চিন্তা থেকে।
৪র্থ পর্যায়, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো:
এ পর্যায়ে সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। বাসার বিভিন্ন কাজে এবং ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে অন্তরঙ্গতা বাড়ে। পুরো দুনিয়া কেমন একটা ‌’মায়ার চশমা’ দিয়ে ফিল্টার হয়ে চোখে এসে ধরা দেয়। মানুষের উপকার করতে ইচ্ছে করে। মানুষের সাথে একটু বেশিই নরমভাবে কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায়।
উপসর্গ:
১. বন্ধুবান্ধবদের সাথে বের হয়ে তাদের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডেদের মধ্যে রিলেশনের অন্তরঙ্গতা দেখে খুব প্রচন্ড ঈর্ষা ও অস্বস্তি।
২. কথায় কথায় বন্ধুদের কাছে – “ইশ ও এইটা করতো…”, “আই উইশ ও এইটা দেখতো…” বা “আমি আর ও প্রায়ই এটা করতাম…” – টাইপের কতাবার্তা।
৩. সুযোগ পেলেই মানুষকে নিজের ব্রেকআপের কথা জানানো, সহানুভূতির আশায় নয় – এটার মধ্যে কোথায় যেন ক্রেডিট নেয়ার মতো বিষয় আছে।
৪. “জীবনে অনেক কিছু দেখে ফেলেছি…” টাইপের মানসিকতা।
৫. ফেইসবুকে নিজের জীবনদর্শন তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেয়া। কারো কারো স্ট্যাটাস দেখলে মনে হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে।
৬. দাড়ি রাখা।
৫ম পর্যায়, আমি যেন কার আশায আশায় থাকি:
এতোদিনে আপনার ব্রেকআপের ঠিক পরপর টাটকা ক্ষত অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তবে পরিচিত যায়গা, পরিচিত মানুষ দেখলে বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগে। পরিচিত জায়গা দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় আগের কথা মনে পড়ে। সাথে একটা ভয় কাজ করে যদি দেখা হয়ে যায় – তাহলে কি হবে? আবার মনে মনে ঠিকও করে ফেলেন দেখা হলে কি করবেন। যদিও ভয় পাচ্ছেন দেখা হওয়ার বিষয়টা চিন্তা করে, আবার কাইন্ড অফ যেন চাচ্ছেনও দেখা হোক।
৬ষ্ঠ পর্যায়, নতুন করে আবারও:
ব্রেকআপের স্মৃতি মনে আর অবশিষ্ট নেই তেমন একটা -শুধু খুব অকেশনালি মনে পড়ে। মনে মনে আপনি ঠিক করে ফেলেছেন ওর সাথে সামনে কখনও দেখা হলে (তা নতুন বয়ফ্রেন্ড সহই হোক না কেন) আপনি ওকে ওর নতুন লাইফের জন্য কনগ্র্যাচুলেট করবেন – যেন এতোটুকু মানসিক শক্তি আপনি অর্জন করেছেন।
আপনার মধ্যে মেয়ে দেখলেই আগ্রহ জন্মাচ্ছে। বন্ধুকূলকেও জানিয়ে দিয়েছেন আপনি রেডি – হয়তো খুঁজতেও বলে দিয়েছেন।
উপসর্গ:
১. অনলাইনে/ফেইসবুকে বা ফ্রেন্ডের মাধ্যমে নতুন মেয়েদের সাথে পরিচয় হওয়া মাত্র তাৎক্ষণিকভাবে রিলেশনের জন্য মনস্থির করা। (যদিও আপনি নিজেও জানেন ৯৯% চান্স যে সেটা কাজে আসবে না)
২. ডার্টি জোকস/গালি প্রিয়তা – যদিও আপনি এসবের জন্য মোটেও বিখ্যাত নন।
৩. নিজের মধ্যে সাময়িক লুইচ্চামি গ্রো করা।
৪. হঠাৎ করে আপনার মনে হচ্ছে রিলেশনে থাকা অবস্থায় জগৎটা অনেক সহজ ছিলো, সবকিছু খুব নিশ্চিৎ ছিলো – হাত বাড়ালেই আরেকটা হাতের ছোঁয়া, চাইলেই একটা কাঁধে মাথা রাখা। কিন্তু এখন রিলেশন ভেঙে যাওয়াতে জগৎটাকে অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। আবারও নতুন করে রিলেশন, আবারও নতুন করে শুরু আদৌ হবে কিনা – ধারণাটাকে অলরেডি আপনি প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করেছেন। ঠিক প্রথম রিলেশনটার আগে যেমনটা মনে হয়েছিলো আপনার।

মেয়েদের সন্দেহ কীভাবে দূর করা যায় আসুন জেনে নিই

সুন্দর মেয়েবিশ্বাস ও অবিশ্বাসের অন্তর্বর্তী যে নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি আমাদের যন্ত্রণা বা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার নাম 'সন্দেহ। এ সন্দেহ নামক ঘুণপোকা যার মনের ঘরে আশ্রয় নেয়, তাকে একেবারে মানসিক যন্ত্রণার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং নিঃশেষ করে ফেলে।

সন্দেহ যেমন হতে পারে খুব স্বাভাবিক পর্যায়ের, আবার তেমনি খুবই অস্বাভাবিক অসুস্থ পর্যায়েরও। ইংরেজিতে এই অসুস্থ পর্যায়ের সন্দেহের নাম ডিলিউশন প্যারানয়েড সাইকোসিস এবং মরবিড জেলাসি। এই অসুস্থ সন্দেহের পেছনে না থাকে কোনো বাস্তব প্রমাণ, না থাকে কোনো যৌক্তিক কারণ। তবে ব্যক্তির মনের মধ্যে এই সন্দেহ মাসের পর মাস বেঁচে থাকে অটলভাবে। সাধারণভাবে সন্দেহকে আমরা সাসপিশাসনেস বলে থাকি, যা যেকোনো মানুষের মধ্যেই আসতে পারে যেকোনো সময়ে এবং যেকোনো কারণে।

নারীদের মধ্যে সুস্থ এবং অসুস্থ পর্যায়ের সন্দেহপ্রবণতা দেখা যায়। প্রথমত একজন নারীর সঙ্গীকে নিয়ে সন্দেহ হতে পারে, বিয়ের আগে প্র্রেমের সময় আবার বিবাহিত জীবনেও। বিয়ে-পূর্ববর্তী সময়ে সন্দেহ আসার সুযোগ অনেক বেশি থাকে, আবার তা শেষ করে ফেলারও সুযোগ থাকে। কেননা তখন পর্যন্ত তারা তাদের সম্পর্কে কোনো আইনগত বা সামাজিক রূপ দেয়নি (বিয়ে)। তবে বিয়ে-পরবর্তী যে সন্দেহ জন্ম নেয়, তা শুধু দুজনকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে তা নয়, বরং সংসার জীবন, সন্তান (যদি থেকে থাকে), আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী- সবাই এর খারাপ ফলাফল ভোগ করেন। স্ত্রীর সন্দেহের শিকার হতে গিয়ে কিছু কিছু পুরুষ প্রচণ্ড রেগে যান, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন, গালিগালাজ ও ভাঙচুর করেন। আবার কখনো কখনো ঠাণ্ডাভাবে প্রমাণ সহকারে বোঝানোরও চেষ্টা করেন। কিছু পুরুষ তার স্ত্রীর সন্দেহের ফলে নিজে প্রথম দিকে সন্দেহের কোনো কাজ শুরু করলেও তাড়াতাড়ি তা গুটিয়ে নেন। অর্থাৎ স্ত্রীর সন্দেহ বাড়তে দেওয়ার রাস্তা বন্ধ করে ফেলেন। আবার কিছু পুরুষ অতি সাবধানী হয়ে ওঠেন এবং নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেন অর্থাৎ 'ধরি মাছ না ছুঁই পানি'- তাদের স্ত্রীরা হয়তো সবচেয়ে হতভাগ্য।

নারীর সন্দেহের কারণ হতে পারে অনেক কিছু নিয়ে, যেমন- সঙ্গীর অন্য নারীর প্রতি দুর্বলতা, চরিত্রগত ত্রুটি, নেশার বস্তু (সিগারেট নিয়েও হতে পারে), বন্ধুদের আড্ডায় সময় দেওয়া, টাকা-পয়সা, সম্পদ, স্ত্রীকে বা সঙ্গীকে না জানিয়ে অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতা বা সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া, কোনো অসুখ থাকলে তা নিয়েও সন্দেহ হতে পারে।

অনেক সময় সঙ্গিনী নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক আত্মধারণা থেকেও পুরুষকে সন্দেহ করতে পারে, যেমন- আমি দেখতে সুন্দরী নই, অতটা শিক্ষিতও নই, স্মার্ট নই, আমার স্বামী বা সঙ্গী হয়তো আমাকে নিয়ে সন্তুষ্ট নন, হয়তো তিনি অন্য কাউকে নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করেন ইত্যাদি।

কী করণীয়
* প্রথম আপনার মনের সন্দেহ কী শুধু সন্দেহ (স্বাভাবিক পর্যায়ের), নাকি তা সন্দেহ বাতিক (অসুস্থতা) তা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন। লক্ষণীয়, স্বামীর প্রতি সন্দেহের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য কারোর সঙ্গে খুলে আলাপ করতে পারেন, এতে মন হালকা হবে, কিন্তু যাকে-তাকে বলে স্বামীর মানসম্মান নষ্ট করবেন না এবং নিজেকেও হাসির পাত্র বানাবেন না।
* সুনির্দিষ্ট বাস্তব কোনো প্রমাণ না থাকলে অকারণে সন্দেহ করবেন না এবং সন্দেহমূলক প্রশ্ন করে সম্পর্কের জটিলতা বাড়াবেন না। কেননা যাকে সন্দেহ করছেন তিনি যদি সত্যিই সন্দেহের কিছু না করে থাকেন, তবে তার জন্য বিষয়টি একই সঙ্গে অপমানজনক, কষ্টকর এবং রাগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
* যদি সুনির্দিষ্ট বাস্তব প্রমাণ থেকে থাকে, তার পরও আরেকটু সময় নিন, বিষয়টা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। এক-দুটি প্রমাণের ভিত্তিতেই গর্জে উঠবেন না।
* খুব ইতিবাচক পদ্ধতিতে সুন্দরভাবে স্বামী/সঙ্গীকে আপনার সন্দেহের বিষয়টি জিজ্ঞেস করুন। তিনি যেন এ রকম মনে না করেন যে তাঁর পেছনে টিকটিকি লেগেছে।
* যদি মনে হয় সঙ্গী আপনাকে ভুল বোঝাচ্ছেন, সব কিছু লুকাচ্ছেন, তবে দুজনের সম্মতিতে আলোচনায় বসুন। আপনি আপনার প্রমাণগুলো ইতিবাচক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করুন।
* এর পরও যদি আপনি সদুত্তর না পেয়ে থাকেন, তবে তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিন (যাকে আপনার সঙ্গী মেনে নিতে রাজি হবেন), এই তৃতীয় পক্ষ হতে পারে পরিবারের কোনো নিরপেক্ষ সদস্য, কোনো মুরবি্ব। আবার হতে পারেন কোনো কাউন্সিলর অথবা থেরাপিস্ট যার মধ্যবস্থতায় কোনো একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যাবে।
* অসুস্থ পর্যায়ের সন্দেহ হলে অবশ্যই অবশ্যই সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসক দেখাতে হবে ও ওষুধ সেবন করতে হবে।
সন্দেহ বাতিক নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। 'সন্দেহ' একটি চিন্তার পদ্ধতিগত জটিলতা বা রোগ, এটি নারী-পুরুষ যারই হয়ে থাকুক না কেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

অসাধারণ একটি ভালবাসার গল্প

ভালবাসার গল্পরোজ নামে একটি মেয়ে ছিল যে গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করত।।

তার স্বামী তাকে প্রতিটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া পাঠাতো আর সাথে থাকতো একটি করে কার্ড,যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালবাসে।
...
কিন্তু হঠাত্‍ একদিন রোজের স্বামী মারা যায় ।কিন্তু রোজের স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেও রোজ একি ভাবে কার্ড সহ গোলাপের তোড়া পেল, কার্ডে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালবাসা আরো বাড়বে”।

রোজ ভাবল, তার স্বামী হয়ত মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার জন্যে গোলাপের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল আজকের দিনটির জন্যে। সে মন খারাপ করে ভাবলো এটাই তার শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া গোলাপের তোড়া। সে ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল আর তার স্বামীর ছবি দেখেই দিনটি কাটিয়ে দিল।

এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। এই এক বছর ভালবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একা থাকা রোজের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন সকালে তার বাসায় কে জানি বেল বাজালো। সে দরজা খুলে দেখতে পেল দরজার সামনে কার্ডসহ গোলাপের তোড়া রাখা। সে অবাক হয়ে কার্ডটিপড়ে দেখল এটা তার স্বামী পাঠিয়েছে। এবার সে রেগে গেল কেউ তার সাথে মজা করছে ভেবে। সে ফুলের দোকানে সাথেসাথে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। দোকানদার তাকে যা বলল তা হল “আমি জানি আপনার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন, আমি এও জানি আপনি আজকে আমাকে ফোন করে সব জানতে চাইবেন। আপনারস্বামী আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রাখতেন। তিনি অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন আপনাকে যেন প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার দোকান থেকে গোলাপ ফুল পাঠানো হয়।তিনি আগাম টাকা পরিশোধ করে গেছেন। আরওএকটি জিনিষ আছে, যা আপনার জানা দরকার। আপনার স্বামী আমার কাছে আপনার জন্যে একটিবিশেষ কার্ড লিখে রেখে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যদি আমি কখনো জানতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, শুধু তাহলেই যেন কার্ডটি আপনাকে দেয়া হয়। আমি আপনাকে কার্ডটি পাঠিয়ে দিব”।

রোজ যখন কার্ডটি হাতে পেল তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখতে পেল, সেখানে তার স্বামী তার জন্যে কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল “আমি জানি আমার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে, এই এক বছরে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। তাই প্রতি বছর তুমি আমার কাছ থেকে ফুল পাবে।
যখনই তুমি ফুলগুলো পাবে, তখন ফুলগুলোকে দেখে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করবে, মনেকরবে আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করবে, আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে তবুও আমি আশাকরি তুমি পারবে। প্রতি বছর তোমাকে গোলাপ পাঠানো হবে একবার করে। তুমি যদি ফুলগুলোকে কোন একদিন না নাও, তাহলে দোকানী সেদিন তোমার বাসায় পাঁচবার যাবে দেখার জন্যে যে তুমি বাইরে গেছো কিনা। শেষবার দোকানী অবশ্যি জানবে তুমি কোথায়। সে তখন ফুলগুলোকে সেখানে পৌছে দিয়ে আসবে যেখানে আর তুমি আবার একবারের মত একসাথে হব চিরদিনের জন্যে। তুমি সবসময় মনে রাখবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।”

***আপনার জীবনে কখনো না কখনো এমন একজন আসে যে আপনার জীবন কে পুরো বদলে দেয় আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে। যে আপনাকে উপলব্ধি করতে শেখায় যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।***

গল্পটি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করলে এবং ভাল লাগলে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন

আকর্ষণীয় থাকতে হাত পায়ের নখের যত্ন নিন

লাইফ স্টাইল সুন্দর ঝকঝকে নখ সবার পছন্দ। আর হাত-পায়ের দিকে তাকালে প্রথমেই নজর পড়ে নখের দিকে। নখ
রাঙিয়ে বা সাজিয়ে আকর্ষণীয় করতে চায় সবাই। এটি নিয়ে সমস্যা নেহাৎ কম নয়।

নখের রং বদলে হলদেটে ভাব হওয়া, কখনো বা নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে ও নখ ভালো রাখতে প্রথমেই দরকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। সে জন্য নিয়মিত হাত-পায়ের যত্ন নিতে হবে।

মাসে অন্তত দুবার ম্যানিকিউর, পেডিকিউর করতে হবে। সম্ভব হলে প্রতি ১৫ দিনে একবার করা ভালো। এতে নখের সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে।

যাদের নখ ভাঙার সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত নেইল হার্ডনার ব্যবহার করতে পারেন। এটি নেইলপলিশের মতো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া নখে হলদেটে ভাব দেখা দিলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখুন।

সকালে গোসলের আগে বাফার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে হলদেটে ভাব কেটে যাবে। আর সপ্তাহে একদিন গরম পানিতে শ্যাম্পু দিয়ে হাত-পা ডুবিয়ে রাখুন। এরপর নরম ব্রাশ দিয়ে হাত-পা ঘষে পরিষ্কার করুন। হাত-পায়ের ত্বক ও নখ দুটোই পরিষ্কার থাকবে।

অনেক সময় সবজি কাটলে নখে দাগ হয়ে যায়। সে অবস্থা থেকে রেহাই পেতে লেবু কেটে ঘষে নিতে পারেন। নিমিষেই দাগ দূর হবে। এক সপ্তাহের বেশি নেইলপলিশ লাগিয়ে রাখা উচিত নয়। মাঝে অন্তত দুই দিন বিরতি দিয়ে আবার নেইলপলিশ ব্যবহার করতে পারেন।

তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

মাঝ রাতে যদি" বাংলা গানের লিরিক্স

bangladeshi meye

গানের নামঃমাঝ রাতে যদি
কন্ঠঃ টিপু
ব্যান্ডঃ অবসকিউর
অ্যালবামঃ আনপ্লাগড

মাঝ রাতে চাঁদ যদি
আলো না বিলায়
ভেবে নেবো আজ তুমি চাঁদ দেখোনি
আকাশের নীল যদি আধাঁরে মিলায়
বুঝে নেবো তারে তুমি মনে রাখোনি।

আকাশের বুক চিরে যদি ঝরে জল
বুঝে নেবো অভিমানে তুমি কেঁদেছো
সরোবরে যদি ফোটে রক্ত কমল
অনুভবে বুঝে নেবো মান ভেঙ্গেছো।

রূপালী বিজলী যদি নিরব থাকে
কেঁদোনা ভেবো শুধু আমিতো আছি
স্বপ্নলোকেতে যদি ময়ূরী ডাকে
বুঝে নিও আমি আছি কাছাকাছি

মন বাড়িয়ে ছুঁই

সুন্দরী ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে তো!আগে কেমন একটা পিচ্চি পিচ্চি ভাব ছিল।এখন তার ছিঁটেফোঁটাও তার
মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।বরং শক্ত-সমর্থ এক যুবক হয়ে গেছে।কিন্তু মুখটা আজও সেই ভীষন মায়া মায়া।

আমি তখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।ভার্সিটিতে এক বছর সিনিয়র হয়ে গিয়েছি সেই ভাবে আমি তখন পুরা পাংখা।ফার্স্ট ইয়ারদের র‍্যাগ দেওয়ার জন্য আমরা তখন ছটফট করছি।র‍্যাগ দেওয়াটা খুব অনুচিত কাজ জানি,কিন্তু এটাকে ঠিক র‍্যাগ বলি না আমরা। জাস্ট বড়দের সাথে ছোটদের পরিচিত হওয়া আর একটু চমকে দেওয়া এই আর কি!আমরাও তো এই সময়টা পার করেছি তাই ওরা বাদ যাবে কেন?ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে আছি আমরা কয়েকজন।ফার্স্ট ইয়ারের রূপবতী একটা মেয়ে আর একটা চশমা পড়া গোবেচারা ছেলেকে আমরা র‍্যাগ দেওয়ার জন্য বেছে নিলাম।ছেলেরা ছেলেদের র‍্যাগ দিবে আর মেয়েরা মেয়েদের,এটাই নিয়ম।কিন্তু আমরা নিয়ম মানি না।মেয়েটাকে অবশ্য খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলাম।রাফসান মেয়েটাকে একটা ছড়া বলতে বলেছে আর রূপবতী কন্যার চোখ ছলছল করে উঠেছে তাই বেচারীকে ছেড়ে দিলাম।আমাদের হাতে আটকা পড়ে গেল এই ছেলেটা।আমিই প্রশ্ন করতে শুরু করলাম ছেলেটাকে।

-নাম কি?
-অর্ঘ্য।
-আগে-পিছে কিছু নেই?শুধু অর্ঘ্য?সার্টিফিকেটে তাই লেখা?
-না,না।সরি।অর্ঘ্য মিত্র।
-মানে কি নামের?
-পূজার ফুল।
-বাহ!ফুল।আমাদের সামনে তাহলে ফুল বসে আছে।কিন্তু ফুলের গন্ধ নাই কেন?আর কি ফুল?গাঁদা,গোলাপ নাকি?
-যে ফুল দিয়ে পূজা করা হয়।অনেক ফুলই তো হতে পারে। -তা ফুলবাবু তোমার চশমার পাওয়ার কত?
-মাইনাস সিক্স।
-চশমা ছাড়া কি অন্ধ?
-হুম,প্রায়।
-চশমাটা আমাকে দিয়ে তুমি মুনীর মামার টং থেকে আমাদের সবার জন্য এক কাপ করে চা আনো তো।
-জী,চশমা ছাড়া আমি কিছু দেখি না।এক কদমও হাঁটতে পারব না।
-এক থাপ্পড় লাগাব।আমি তোমার বড় না?কথা বলার সময় আপু বলা যায় না?বেয়াদব ছেলে দিয়ে ডিপার্টমেন্ট ভরে যাচ্ছে।একদম সোজা করে দেব।

ধমকের চোটে অর্ঘ্য নামের ছেলেটা অন্ধের মত হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে টুকটুক করে রাস্তা দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে চশমা ছাড়া।ধুর!ভালো লাগছে না।গাধাটাকে ধরে চশমাটা দিয়ে দিলাম।র‍্যাগ পর্বের সেদিন সেখানেই সমাপ্তি ছিল। মুনীর মামার টঙে বসে আছি মনমরা ভাবে!বাসায় যাওয়ার জন্য মন কেমন করছে,ক্লাসের জন্য যেতেও পারছি না।সকালের ক্লাসটাও মিস হয়ে গেছে,রাফসান,মিতু,নিশা,রাশেদ সবাই ক্লাসে।আমিই ক্লাস মিস করে গেছি,যদিও প্রক্সি পড়ে যাবে।চা'এর কাপ অনেকক্ষণ থেকে ধরেই আছি শুধু একটা চুমুকও দেই নি।চা ঠান্ডা মেরে গেছে বোধ হয় ততক্ষনে।

-আপনার চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল। তাকিয়ে দেখি অর্ঘ্য।
-চা খেতে ইচ্ছে করছে না।
-তাহলে নিয়েছেন কেন শুধু শুধু?
-অভ্যাসের ঠেলায়।তারপর এক্সামের ডেট দিয়েছে নাকি?
-হুম।দিল।১২ নভেম্বর।
-প্রিপারেশন কেমন?
-যতটুকু খারাপ হওয়া দরকার।
-ক্লাস নাই তোমাদের এখন?
-হচ্ছে।
-ক্লাস মিস দিয়ে এখানে কি পিচ্চি?
-আপনারও তো ক্লাস ছিল এখন,আপনি কি করছেন? মুচকি হেসে অর্ঘ্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চাহনিতেই কেমন একটা ছেলেমানুষি কাজ করছে।আমিও হেসে বললাম "ক্লাসটা মিস হয়ে গেছে রে পিচ্চি।"
-আর আপনাকে দেখে আমি এখানে।
-মানে কি?
-কিছু না।আপনার নামটা ভয়ঙ্কর সুন্দর কিন্তু।অনিন্দিতা।আচ্ছা,যাই।ভালো থাকবেন। পিচ্চি চলে গেল।আমি তাকিয়ে দেখলাম।ছেলেটার মাথায় ছিট আছে বোধহয়।একটা জিনিষ খেয়াল করেছি কখনো ও আমাকে আপু বা দিদি বলে না।অথচ মিতু,নিশাকে বলে!কি অদ্ভুত!কার কাছ থেকে যেন আমার ফোন নাম্বার যোগাড় করে একদিন রাতে ফোন দিয়ে আমার কাছ থেকে পরীক্ষার সাজেশন চাইল,দিলাম।নাম্বার কোথায় থেকে পেয়েছে জানতে চাওয়ায় জবাব না দিয়ে হুট করে একটা কবিতা বলল।নিজে নাকি লিখেছে।অর্ঘ্য আর আমার দুইজনেরই বই পড়া আর মুভি দেখার চরম নেশা ছিল।বই আর মুভি শেয়ার করতে করতে কিভাবে জানি একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেল।বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতাম,ঝগড়া করতাম।লেখালেখি করতাম দুইজনই।ও লিখত কবিতা আর আমি টুকটাক গল্প।মাথায় লেখা জট পাকিয়ে গেলেই ফোন দিতাম "ওই,পিচ্চি,লেখা আটকে গেছে মাথায়।ছাড়ায়ে দাও তো!"অর্ঘ্য তখন গল্পের কাহিনী শুনত,কিভাবে আগালে ভালো হবে বলে দিত।নতুন কোন কবিতা লিখলে আমাকে ওর সবার আগে শোনানো লাগবেই লাগবে!আমার কোন গল্প ভালো না হলে তার ভুল ধরিয়ে দিয়ে একগাদা সমালোচনা করা,ওর রোমান্টিক কবিতা নিয়ে আমার হাসাহাসি করা,ওকে পিচ্চি বললে রাগে গাল লাল করে ফেলা এভাবেই দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেল।

-অনু,আমি কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসি।বুঝতে পারো? অর্ঘ্য যেদিন বলেছিল কথাগুলো আমি পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম।অবাক হই নি কারন জানতাম একদিন না একদিন ও আমাকে বলবেই এই কথা!আমি বুঝতাম আগে থেকেই,এড়াতে পারতাম হয়তো!কিন্তু এড়াই নি কারন আমি নিজেই নিজেকে ওর কাছ থেকে এড়াতে পারি নি।এই আবেগে ভরা পিচ্চিকে আমি বহু আগেই ভালোবেসে ফেলেছি,ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে,সমাজের কথা মাথায় না এনে,পরিবার-আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুদের কথা না ভেবে আমি আমার চেয়ে এক বছরের ছোট অন্য ধর্মের একটা ছেলেকে ভালোবাসেছি!আমাদের এই সম্পর্কের পরিণতি আমরা দুজনই জানতাম কিন্তু কি আর করা?দুজন দুজনকে এড়াতে পারলাম কই?বাসায় আসতে থাকা সব বিয়ের প্রাস্তাব আমি একে একে ফিরিয়ে দিতে লাগলাম।বাবা-মা কারন জিজ্ঞেস করে করে ক্লান্ত হয়ে গেলেন।আমি বলতাম "আমি কখনো বিয়ে করবো না,প্লিজ মা আমাকে জোড় করো না।আমার স্কলারশিপ হয়ে গেছে।আমি আর দুই-তিন মাসের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।এর মাঝে বিয়ে বিয়ে করে আমার মাথা দয়া করে খেয়ো না।" বাবা-মা কোন কারন বের করতে না পেরে চুপ হয়ে গেলেন।কারনটা আর কি হবে?পিচ্চি।আমি আর ও ঠিক করেছিলাম আমি আর ও কখনো বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে কিছু করবো না।আমাদেরকে ওনারা কখনো মেনে নেবেন না তাই আমরা দুজন এভাবেই দূর থেকে ভালোবেসে যাব।আমি অস্ট্রেলিয়া চলে গেলাম।পিচ্চি থাকল বাংলাদেশে।স্কাইপে যোগাযোগ হত,ফোনে কথা হত।আমাদের ভালোবাসা কমে নি একটুও।

তিন বছর পর দেশে এসে বইমেলায় আমি আর পিচ্চি ঘুরছি।আমার একটা উপন্যাস আর পিচ্চির কবিতার বই এইবারের একুশের বইমেলায় বের হয়েছে।পিচ্চি অবশ্য আমার চেয়ে বড় হয়ে গেছে,অনেক বেশি বোঝে এখন।কিন্তু ও তো আমার সেই পিচ্চিই।আমরা ভালো আছি।দূর থেকেই একজজন অন্যজনকে অনেক বেশি ভালোবেসে অনেক বেশি ভালো আছি।রাত আটটা বেজে যাচ্ছে।পিচ্চি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।আমি ওর যাওয়া দেখছি।বাসায় ঢুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এখন মা'র হাতের ঝাল মুরগী ভুনা দিয়ে ভাত খাব,একপাশে বাবা অন্য পাশে মা।ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি।

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না
তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই
দুইকে আমি এক রি না
এককে করি দুই

এ কথা হয়ত কেউ বলবেননা ভালোবাসার গল্প

ভালোবাসা By--অনন্যা

বিকেল ৪ টা। 'বেইলি শর্মা হাউস' এর একেবারে গ্লাসের সাইডে বসেছে শুভ্র।এখানে আসলে বরাবরই এই সোফাটায় বসে সে।ভীষণ ভাললাগে কাঁচের ওপাশে ব্যস্ত শহরের কোলাহল দেখতে। সে বসে আছে তার বন্ধু আবিরের জন্য।কয়েকটা নোটস আর দুইটা গেমসের ডি.ভি.ডি. নিয়ে এখানেই আসার কথা ওর। তাই অপেক্ষা করতে করতে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছিল সে, চোখে পড়ছিল কিছু জোড়া মনের সুখে গল্প করছে,কার সাথে কাকে কেমন মানিয়েছে ভাবতে বেশ মজা পাচ্ছিল । শুক্রবার বিকেল বলে কোথাও একটুও ফাঁকা নেই,তার সোফাটা ছাড়া। দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখে কাউন্টারে একটা মেয়ে,ভীষণ মিষ্টি চেহারার,তার প্রিয় নীল-সাদা রঙের শাড়ি পড়া, চোখে সুন্দর একটা ফ্রেমের চশমা। একরাশ কাল চুল পিঠে ছড়ানো। খাবারের অর্ডার দিচ্ছে,খুব তাড়াহুড়ায় আছে মনে হয়। অসহায়ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বসার জায়গা পাওয়ার আশায়। মনে মনে ভাবছে শুভ্র,'ইশ কি সুন্দর মেয়েটা! আমার পারফেক্ট ক্রাশ! নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড আছে,তার সাথেই দেখা করতে আসছে হয়ত। আজকালকার মেয়েরা আর কিছু পারুক আর না পারুক একটা বয়ফ্রেন্ড ঠিক ঝুলায়ে রাখবে সঙ্গে। ' নিজের জন্যে ভীষণ আফসোস হতে থাকে তার। বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সে।সবার মতে ভীষণ হ্যান্ডসাম দেখতে,অথচ এপর্যন্ত একটা নিষ্পাপ মিষ্টি মিষ্টি চেহারার মেয়ে পাইলনা সে ! ধ্যাৎ,জীবনটাই বৃথা ! মাঝে মাঝে তো তার থেকে দুই বছরের ছোট ভাগ্নে লজ্জা দেয় এই বলে যে, 'মাম্মা! তোমার তো ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতেসি।আজ পর্যন্ত একটা মেয়ে পটাইতে পারলানা! তুমি তো আমার নাম ডুবাবা! ' উত্তরে মাথায় জোরে একটা গাট্টা দিয়ে বলে ,'হইসে আর পাকনামো করা লাগবেনা! নিজেরটা নিয়ে খুশি থাক। আমার জন্য কেউ না কেউ নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছে !' কিছুক্ষণের জন্যে সাহিত্যিক হয়ে ওঠা আর কি ! ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই হেসে ওঠে শুভ্র !

সাহিত্যের পোঁকা হওয়ায় উপন্যাসের নায়ক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করতে ভালবাসত।কিন্তু কলেজে ভর্তি হয়ে যখন বাইরের জগতে খুঁজতে যায়,তখন কল্পনার সাথে মিল খুঁজে পায়না। আসলে এখনকার ফাস্ট যুগে,গল্প থেকে উঠে আসা নায়িকা পাওয়া মুশকিল ! একটা মেয়ে হয়ত ভালবাসে সাদা-সিধে একটা মধ্যবিত্ত ছেলেকে,কিন্ত যেই পরিবার থেকে বিজনেসম্যান ছেলে পছন্দ করা হল,ওমনি সুরসুর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ে ! সবাই ভীষণ অভিনয় বাজ,আর এই বিষয়টাই ওর সবচেয়ে অপছন্দ। নিজের জন্য এমন কাউকে খোঁজে,যে হয়ত ডানাকাটা পরী হবেনা,কিন্তু নিষ্পাপ একটা চেহারা হবে,যে তাকে সত্যিকারের ভালবাসবে।এতদিন মনে হত,তাড়া কিসের! সময় হলে হবেনে! কিন্ত ইদানিং নাটক - সিনেমা আর আশেপাশে দেখে মনে হয়,কাউকে অধিকার করতে পারার,কাউকে জীবন দিয়ে ভালবাসার খুব প্রয়োজন।। এমন একজনকে অবশ্য পেয়েও গেছিল,কিন্তু ... এমনই সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা মিষ্টি কন্ঠে হুঁশ হয় তার। - এক্সকিউয মি,বসতে পারি ? তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায় সে,আরে! এ তো ঐ মেয়েটা ! চশমার আড়ালে কাজল কাল চোখের দিকে তাকিয়ে সব ভাষা হারিয়ে ফেলে সে যেন... - ইয়ে,মানে...আসলে...বলছিলাম কি... আমার একটা ফ্রেন্ডের জন্য ওয়েট করছিলাম। - সমস্যা নাই,আমার দশ মিনিটের মত লাগবে।আসলে আমার এক ফ্রেন্ড এর বাসায় অনুষ্ঠান। এখানে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলাম, দিতে একটু সময় লাগবে, আর সব সিট ফিল আপ, তাই.. - জী,আ-আচ্ছা..বসুন তাহলে । এরপর ধন্যবাদ বিনিময়। - কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি ? - জ্বী,বলুন। - আপনি তখন ওভাবে তোতলাচ্ছিলেন,আপনার কি কথা বলায় সমস্যা আছে ? আরে এই মেয়ে কী বলে ! কলেজে কবিতা আবৃত্তিতে পুরস্কার পাই, আর আমি তোতলা ! কত্ত বড় ফাজিল ! মনে মনে এসব ভাবলেও মুখে একটা শুকনো হাসি ফুটিয়ে বলে, - জ্বী না। - ও আচ্ছা।

কি আজব সরি ও বলেনা ! কেমন বেত্তমিজ ! আবার মুচকি মুচকি হাসে ! এমনে তাকায়ে আছে, যেন জীবনেও ছেলে দেখেনাই ! মোবাইল টিপতে টিপতে এগুলাই ভাবতেসিল শুভ্র। এদিকে নীলাঞ্জনা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে ! কেন যেন ছেলেটাকে খুব চেনা চেনা লাগছে,বলে দেখব নাকি ?না থাক এমনেই বেচারা মুখ কাল করে বসে আছে,খুব মজা লাগছে দেখতে! এমনসময় শুভ্র দেখে, কল আসে মেয়েটার, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে যেন! নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ড এর ফোন,নাইলে এত হাসে! গোমড়া মুখে,কিছুটা সন্দেহের চোখে আর মুগ্ধনয়নে দেখছিল সে , ইশ কি সুন্দর হাসি ! মনে হচ্ছে যেন রিনিঝিনি সুরে হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি বাজছে,নাকি মেয়েটার হাতের চুড়িই বাজছে ? নাহ!এটা হাসিরই শব্দ।

কথা বলা শেষ। একমূহুর্তের জন্য মনে হল,মেয়েটাকে আরেকবার হাসতে বলে...!হঠাৎ বেরসিক ওয়েটার এসে জানাল, 'ম্যাম,প্যাকেট রেডি।' শুভ্রর ইচ্ছে করছিল একটা ঘুসি মারতে ওয়েটারের মুখে।কি ভাল লাগছিল মেয়েটাকে ! আরো কিছুক্ষণ না হয় থাকত বসে ! মেয়েটা মোবাইলটা টেবিলে রেখে খাবার আনতে যায়।মেয়েটা বলছি কেন ! ইতিমধ্যে শুভ্র মনে মনে একটা নাম দিয়ে ফেলেছে, "নীলাবতী" অথবা" নীল পরী "। কিন্ত কোনটা বেশি মানাবে বুঝতে পারছেনা ! শেষমেশ সিদ্ধান্তে পৌছাল যে,নীল শাড়িতে,খোলা চুলে আর বেলী ফুলে, যাকে এত্ত সুন্দর মানিয়েছে, তার নাম হওয়া উচিত" নীলাম্বরী" নিজের কৃতিত্বে,নিজেই পুলকিত হয় সে। বাহ কি সুন্দর একটা নাম দিয়েছি! ^_^্হঠাৎ টেবিলে চোখ যায় তার। আরে!এটা তো আমার ফোনের মডেল! নাহ! সুন্দরীর চয়েস ও আছে বলতে হয় ! হঠাৎ আবির , মানে,যার জন্য অপেক্ষা করছিল সে,তার কল। ' কিরে দোস্ত,কই তুই ? আধা ঘন্টা ধরে বসায়ে রাখছিস!' উত্তরে বোঝে সে,জ্যাম এ আটকেছে ব্যাটা !আসতেসে।'উফ' বলে ফোনটা টেবিলে রাখে শুভ্র। এমনসময় ফিরে আসে নীলাম্বরী , ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলে, - শুনুন,আরেকটা কথা বলি ? - জ্বী বলুন,তখন থেকে তো বলেই যাচ্ছেন ! শুনে হাসতে হাসতে মেয়েটা বলে, - শুনতে বাংলা সিনেমার মত মনে হলেও, আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে,কোথায় দেখেছি বলুনতো ? - জ্বী,আল্লাহর রহমতে আমার চেহারা বিশ্বের অন্যতম কমনচেহারা,মেয়েদের সবসময়ই চেনা চেনা লাগে ! শুনে হা হয়ে যায় সে! বলে কী ছেলেটা,এমনে অপমান করল! নিজেকে ভাবে কি সে ? রণবীর কাপুর ? চেহারা একটু ভাল হইলেই হইসে,ছেলেদের ভাব এর জ্বালায় বাঁচা যায়নাহ ! হুহ! মুখ বাঁকিয়ে ,ফোনটা হাতে নিয়ে, চলে যায় ওখান থেকে। মনে মনে খুশি হয় শুভ্র। হুহ!আমারে পচাইতেসিলা না, এখন কেমন লাগল ?

অবশেষে অবশ্য তার নীলাম্বরীর চলে যাওয়া দেখে কিছুটা মন খারাপ হয় ! ইশ ! না জানি কার ভাগ্যে আছে তার "নীল পরী " যদিও একটু পচানিমার্কা কথা বলে !জন্মের পর মনে হয় মুখে মধুর পরিমাণ কম দিয়ে ফেলসিল ওর মা।তাতে কি ? আমি না হয় "ডেইরি মিল্ক সিল্ক" খাওয়ায়ে মিষ্টি মুখ করায়ে দিতাম ! দরজা থেকে চোখ ফেরে টেবিলের উপর,রিংটোনের আওয়াজ শুনে।কিন্তু আশ্চর্য হয় সে,আমার ফোনে আবার তাহসানের গানের রিংটোন হইল কবে থেকে ! বিস্ফোরিত চোখে কতক্ষণ ফোনটার দিকে তাকায়ে থাকে শুভ্র। বেজে চলছে - 'মাঝে মাঝে তোমায় ভেবে এলোমেলো লাগে সবই, মাঝে মাঝে তোমার চোখে, কে আঁকে অন্য ছবি '.....তাহসানের মধুময় কন্ঠে। স্ক্রিনে ভাসছে 'মেঘলা কলিং ' ,সাথে একটা মেয়ের লাস্যময়ী ছবি। শুভ্র স্মৃতির পাত্র হাতড়ে খুঁজতে থাকে ,এই নামে এমন চেহারার কোন মেয়েকে সে চেনে কিনা,চিনলেও তার কাছে নাম্বার গেল কেমনে ? আর গেলেও,এই মেয়ে আমাকে ফোন দিসে !!!ধাতস্থ হতে কিছুক্ষণ সময় লাগে তার। কি হয়েছে বুঝে উঠতেই সব ফেলে দরজার দিকে দৌড় দেয়।তিন চার লাফে সিঁড়ী পার হয়ে রাস্তায় পৌঁছে, এদিক - ওদিক খুঁজতে থাকে।যখন বোঝে যে তার দৃষ্টিসীমানার মধ্যে একমাত্র মাথার ওপরের আকাশ ছাড়া আর কোথাও নীল রং পরিহিতা কেউ নেই,রাগে, দু:খে নিজের মাথায় নিজেরই বাড়ি মারতে ইচ্ছা করে। মেয়েটার সৌন্দর্য তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে,আশেপাশের কিছুর দিকে কোনো খেয়াল ছিলনা। এখন বোঝ মজা ! 'আচ্ছা,মেয়েটাকে দেখে তো কত ভদ্র মনে হল,ও নিশ্চয়ই আমার ফোনটা চুরি করার জন্যে নেয়নি !অবশ্যই ভুলে নিয়েছে' নিজেকেই নিজে সান্ত্বনা দেয় যেন। 'আর যদি চোর হয়! প্রোফেশনাল পকেটমার না তো ! ওরা তো এমনই করে,সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে...হয়ত মেয়েটার দোষ নাই কোনো, অভাবে পড়ে করতে হচ্ছে। ' ছি ছি !কি ভাবছি আমি! এত পবিত্রতা যার চেহারায়,সে কখনই এমন করতে পারেনা। আর ঐ হাসি, তাতে যে সরলতা ছিল.... , কক্ষণো না! নিজের সাথেই দ্বন্দে মেতে ওঠে শুভ্র। সম্বিত ফেরে আবার কলের শব্দে। উফ!এই মেয়ের ফোন তো বাজতেই থাকে! 'কত কথা বলে রে !' [ ক্ষণকালের জন্যে নীলাম্বরী, নীল পরী সব বিশেষণ বাদ ,এখন এই মেয়ে,শুধুই এই মেয়ে]

ফোনটা কেটে নিজের ফোনে কল দেয় সে,কিন্তু সুইচড অফ !!!! এইবার ওর মাথায় বাজ ! সত্যিই চুরি করসে নাকি !আমার নতুন Xperia-Z .... কল্পনায় কেমন যেন কাঁদো কাঁদো লাগে নিজের কন্ঠস্বর ! ক্রমাগত ট্রাই করে অবশেষে রাতে খোলা পাওয়া যায়, জানে যেন পানি ফিরে আসে শুভ্রর। ফোন করতেই,এক মিষ্টি কন্ঠস্বরে সে আবার মোহিত হয়ে যায়। কিন্ত ওপাশ থেকে যখন ঝাড়ি ভেসে আসে,- "এই যে,আপনি ফোন চুরি করলেন কেন আমার, হ্যা? একে তো অপরিচিত মেয়েদের অপমান করেন,তার উপর আবার চুরি করেন !সাহস তো কম না আপনার ! আপনার ফোন তো আছে আমার কাছে,RAB এর কাছে যদি ধরায়ে না দিসি,আমার নাম নীলা না! RAB এর ডি.আই.জি. আমার আপন মামা! আপনার বারোটা না বাজায়ে ছাড়ব না! ...." " আরে! এর নাম দেখি সত্যিই নীলা! মেয়েটার কথা মাথায় ঢুকছিল খুব কম কারণ সে এক নিশ্বাসে বলে যাইতেসে তো যাইতেসে.." শ্বাস নেওয়ার জন্য একটু থামতেই শুভ্র বলে, - ও হ্যাল্লো ম্যাডাম শোনেন,আমার কোন শখ নাই,আপনার পুরানো সেট চুরি করার,আমারটা একদম নতুন ছিল,একমাস আগে আমার খালামনি পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে,বুঝছেন ? আর বলেন তো ফোনটা নিয়ে চলে গেসিল কে ?আপনি না আমি? তাই দয়া করে আপনার বকবকানি বন্ধ রেখে,বলেন কোথায় আসবেন। - কি ! একে তো চুরি করেন,তারপর আবার বড় বড় কথা! আসবো মানে কি হ্যা? আপনি বল্লেই আমি আসবো ?নিজেকে মনে করেন কি বলেন তো, টম ক্রুজ ?.....' - মিস,আমি একটু বলি ? - না,আপনি শুধু শুনবেন,আমার এত সাধের ফোনটা নিয়ে গেসেন,আবার বলেন, "কোথায় আসবেন? " কেন ?আমি কি gf নাকি আপনার, যে আপনার বলার সাথে সাথে আহ্লাদে আটখানা হয়ে রওনা দিব ?' আহারে ফোনের শোকে মেয়েটার মাথা পুরাই গেসে ! কিছু বলতে গিয়ে হেসে ফেলে শুভ্র। ওপাশে নীলা বলেই যাচ্ছিল,কিন্ত হঠাৎ হাসির শব্দে যেন সে থমকে যায়। তার মনে হতে থাকে এই হাসির মালিককে আর যাই হোক বকা দেওয়া যায়না।এত প্রাণোচ্ছল যার আনন্দের প্রকাশ,সে কি মিথ্যা বলতে পারে ? চুপ হয়ে যায় সে। - কি ব্যাপার মিস,থামলেন কেন? আরো বলেন। গলা শুকায়ে গেসে? পানি দিব? হাসতে হাসতে বলে সে। নীলা তখনো চুপ।আসলেই সে এবার একটু লজ্জা পেয়ে যায়। অচেনা একজনকে তখন থেকে একভাবে বকেই যাচ্ছে, তার ফোনটাও তো আমার কাছে।- মিস নীলা,আপনাকে আমার gf হয়ে আসতে বলছিনা বিশ্বাস করুন, শুধু ফোনটা দিয়ে যেতে বলছি। এবার নীলা আর চুপ করে থাকতে পারলনা,হেসে দিল জোরে। মুহূর্তের জন্য শুভ্রর মনে হল, পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।তার কানে বাজছে শুধু সেই রিনরিনে শব্দ। মনে হচ্ছে শুধু দুটো লাইন, " কাঁচ ভাঙা হাসির শব্দে আমি এলোমেলো হয়ে যাই,আরেকবার সে শব্দ শুনতে আমি পৃথিবীর মালিকানা ছাড়তে রাজি আছি। " নীলাম্বরীকে আরেকবার হাসতে বলার পুরনো ইচ্ছেটা আবার নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল।। কিন্ত না ,এবার নীলা স্বাভাবিক সুরেই বলল, - সরি ভাইয়া, আসলে ওটা হারানোর পর থেকে মাথা ঠিক নাই আমার।অনেক প্রিয় আমার এই সেট টা। - আরে আমার তো তার চেয়ে দ্বিগুণ প্রিয়। এমনকি আমার ফ্রেন্ড রা এটাকে আমার gf টাইটেল ও দিয়ে দিসিল। - (হেসে) জ্বী বুঝলাম,এবার আপনার gf কে ফেরত নিয়ে আমার ফোনটা দিলে খুশি হতাম।আজকে বিকালে আসেন, বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টে ? - ( মুগ্ধ ) জ্বী জ্বী অবশ্যই। টাইম টা বলেন। - উমম.... ৪:৩০ ...? - ওকে, তাহলে ঐ কথাই থাকল। কিছু নীরবতার পর,নীলা যখন ফোন রাখতে যাবে, - মিস নীলা, আরেকটা অনুরোধ করতে পারি ? রাখবেন ? - অনুরোধ ! আমাকে! রাখব কি না তা তো বলতে পারিনা,আপনি বলে দেখতে পারেন। - আসলে,মানে....আপনার নামের মতই নীল ড্রেস- এ আপনাকে খুব মানায়... - (বিব্রত)...জ্বী ধন্যবাদ। রাখছি। শুভ্র একদম বোকা বনে গেল।কথাটা বলা ঠিক হল কিনা,বুঝলোনা। ' থাক ! বলে তো ফেলসিই।প্রশংসা কোন মেয়ে না পছন্দ করে ?এ ও নিশ্চয়ই করসে,একটু ভাব দেখাইল আর কি ...' নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে। বিকেলবেলা — ৪:৩০ শুভ্র কথামত দাঁড়িয়ে আছে এস্কেলেটর এর পাশে।নিচে তাকিয়ে উপর থেকে পুরো টা দেখছিল সে।খুব ভাললাগে তার এভাবে দেখতে।এমন সময় চোখ আটকে গেল একটা মেয়ের দিকে। আরে এই তো নীল পরী।আজকেও নীল পড়েছে।নীল,সাদা,সবুজ আর সোনালী রঙে মিশ্রিত একটা ড্রেস। অপূর্ব লাগছে দেখতে।নীল রঙের কথাটা বলাতে সে যে খুশি ই হয়েছে,বোঝা যাচ্ছে। শুভ্র কখনই 'love at first sight ' এ বিশ্বাসী না।মানুষের মনকে ভালবাসতেই ভাললাগে তার।কিন্ত এই মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে, ' কাউকে দেখলেই প্রেমে পড়া যায়না হয়ত,তবে প্রেমে পড়ার যে ইচ্ছাটা মনে জাগে,তাই বা কম কিসের।'

কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলা পৌঁছাল।তার মনে শুধু এখন একটাই চিন্তা,ফোনটা ঠিক মতন ফেরত পাব তো ?সেদিন দেখে তো ভালই মনে হচ্ছিল। কথাবার্তাও ভদ্র।আল্লাহই জানে....!' নীলা উঠে আসে সিঁড়ী বেয়ে। অস্থির চোখে শুভ্রকে খুঁজে বেড়ায়।এবং মজার ব্যাপার শুভ্রর দিকে একবার নজর দিয়েও চোখ ফিরিয়ে নেয়। শুভ্রর খুব মজা লাগে নীলার অস্থির চেহারা দেখতে। সে দেখে নীলা গিয়ে কে.এফ.সি এর সামনে বসে। দু'মিনিট পর শুভ্র সেখানে গিয়ে বসল। নীলা প্রথমে কিছুক্ষণ তাকিয়ে প্রথম যে লাইনটা বলে, - আমার ফোনটা এনেছেন তো? দেন। শুভ্র ভাবছে, 'কেমন মেয়ে !ভাল-খারাপ কেমন আছি তা ও জিজ্ঞেস করলনা ! ' - জ্বী, আপনি আমারটা এনেছেন তো? - হুম,নিন.... অবশেষে এক শুষ্ক ফোন আদান প্রদান এর মধ্যে দিয়েই ঘটনার সমাপ্তি ঘটে। - থ্যাংকস। বলেই নীলা যেন উড়ে চলে যায়। শুভ্র কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে অবশেষে চলে যায়,কিছুটা মনমরা হয়েই। ভাবে মেয়েটা হয়ত এমনই,অমিশুক!

এরপর প্রায় এক মাস কেটে যায়। কোন অলস দুপুরে ,একলা বিকেলে অথবা বিষন্ন সন্ধ্যায় কিংবা নির্ঘুম রাত্রির সঙ্গে মিতালি পাতায় সে ' স্বপ্নিল নীলাম্বরীর ' সাথে। কোন সুন্দর মেয়ে দেখলেই আর ঝটপট 'ক্রাশ' এ পড়েনা, চশমা পড়া এক জোড়া কাজল-কালো চোখ যেন তার চোখে বাসা বেঁধেছে। শুভ্র সারাটাক্ষণই মেঘলার চিন্তায় বিভোর। বারবার তার মনে হয়, 'ইস!' বন্ধুরা ইতিমধ্যেই ওকে 'নীল ' নাম দিয়ে দিয়েছে ! কিন্তু মাসখানেক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে,তাকে হয়তোবা ভুলেই যেত শুভ্র, যদি না.....

সকাল থেকেই মনটা ভাল ছিল না। ভার্সিটির ক্লাস শেষ হতেই ক্যাম্পাস এ ঘুরতে বের হয়,একা একা। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে চারুকলার দিকে।তার প্রিয় চা এর টং এ বসে আনমনে এদিকওদিক দেখছিল। দোকান থেকে কিছু দূরে একটা জটলা দেখতে পাচ্ছিল কিছু ফুল,চা,চকলেট, পেপার বিক্রেতা বাচ্চা জড় হয়ে আছে ; কে যেন খাওয়াচ্ছে তাদের,বিরিয়ানি,ঘ্রাণ ভালই আসছে !! একটু এগিয়ে যায় মানুষটাকে দেখতে, একটা মেয়ে,সাদা রঙের জামা,খোলা চুল..... মেয়েটা ফিরে তাকাতেই শুভ্রর দুনিয়া যেন থমকে যায়।। চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, এ তার সেই শত অপেক্ষার প্রহর আর বিনিদ্র রজনী জুড়ে থাকা রমণীরত্ন, নীলা। হঠাৎ মেয়েটার ডাক, 'শুনছেন '... শুভ্র ভাবে নীলা চিনেছে তাকে! !! তার বুকে যেন প্রাণ ফিরে আসে। - শুনছেন, আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন ? আমার ফ্রেন্ড গুলার এখানে আসার কথা, অথচ একটাকেও খুঁজে পাচ্ছিনা। আমি আবার আমার ফোন টা ফেলে এসেছি! আপনার মোবাইল টা একটু দেওয়া যাবে প্লিজ? শুভ্র প্রমাদ গোনে মনে মনে,আবার ফোন!তবে খুশি ই হয়,ভাবে আমাকে মনে হয় চিনেনাই,ফোন দেখলে হয়ত চিনবে! - জ্বী অবশ্যই। (৩২ দাঁত বের করা একটা হাসি দিয়ে ) নীলা একটু অবাক হয়েই ফোনটা নেয়। কিন্তু শুভ্রর আশায় গুড়েবালি! চিনতে পারেনি তাকে ! কথা বলা শেষে শুকনো মুখে বলে, - জ্যামে পড়েছে ওরা! আপনি একটু আমার সাথে থেকে যদি সাহায্য করতেন.... - জ্বী জ্বী অবশ্যই, এত ভাল একটা কাজ করছেন। প্রায় দেড় ঘন্টা খেঁটে সব শেষ করে দুজনে মিলে। নীলার স্বতঃস্ফূর্ত হাসিতে শুভ্র ভুলে যায় সব ক্লান্তি। এরপর নীলা শুরু করে পরিচয়পর্ব। যেন কস্মিনকালেও শুভ্রকে চেনেনা! - " আমি নীলাঞ্জনা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি।চারুকলার এই জায়গাটা আমার খুব পছন্দ আর এই বাচ্চাগুলোও। আমার জন্মদিন উপলক্ষে আজকের এই প্ল্যানটা করেছি। বদমাইশ ফ্রেন্ডগুলা! আগে রওনা দিতে পারেনা! - ওহহ! শুভ জন্মদিন ।:)- থ্যাংকস।যেটা বলতেসিলাম... ক্লাস শেষে আসতে বলসিলাম! অন্য ভার্সিটি তে ওরা। আর আপনি! আপনাকে এএএএত্তওও গুলা থ্যাংকস !! এত সাহায্য করলেন! দুপুরবেলা, কেউ নাই,আর কাউকে চিনিওনা ছাই! চলুন আমার সাথে লান্চ করবেন। " একনাগাড়ে গড়্গড় করে সব বলে যায়। - " বাব্বাহ! আপনার কথা শেষ হইল তাইলে! (মুচকি হেসে) লজ্জা পেয়ে যায় নীলা। - (হেসে) সরি, আসলে আমি এতই বেশি এক্সাইটেড যে ! - হুম,ব্যাপার নাহ! তাইলে আপনার ফ্রেন্ডদের জন্যে অপেক্ষা করেন,আমি এবার যাই ? - যাই মানে কি! আমার কথা কানে কিছুই যায়নাই? এতটাই বিরক্ত আপনি ! আজকের খাবারটা আমার রান্না করা,আমি আমাদের সবার জন্যে আলাদা করে আনসি।আপনাকে দিয়ে শুভ উদ্বোধন টা করব বুঝচ্ছেন? - না নাহ! কি যে বলেন!বিরক্ত হব কেন! কিন্ত, আ-আমার উপর এত্ত বড় অত্যাচার! - অত্যাচার !!!!! - না,আসলে... মানে,জীবনে প্রথম রাঁধলেন নাকি ? - ( শয়তানিমার্কা একটা হাসি দিয়ে ) খেয়েই বুঝবেন ! খাওয়া শেষে,শুভ্রর প্রথম উক্তি, - এরপর যখনি কখনো বিরিয়ানি খাব, আপনারটার কথা পাক্কা মনে পড়বে! ভাগ্যিস এখানে এসেছিলাম! - ওহ! মেনশন নট ! ক্ষুধার্তদের খাওয়াতে আমি বড় ভালবাসি! - হা হা হা... খাবারের সাথে খোঁচাটা হজম করে নিলাম!এমন সময় হৈ -চৈ করে কারা যেন নীলাকে ডাকতে শুরু করে,ওর ফ্রেন্ডরা চলে আসছে। - দেখেছেন! সবাই খেতে হাজির! আমি আসি তাহলে। আপনার সাহায্যের জন্যে আবারো অন্নেক থ্যাংকস!" শুভ্র মনে মনে আর্তনাদ করে ওঠে! কিন্তু কিভাবে বলবে বুঝতে পারেনা। কিছু ঠিক করার আগেই — - আর শুনুন,'আপনার চেহারা বিশ্বের কমন তম চেহারা না।আমার সারাজীবন মনে থাকবে....' এটুকু বলে,এক রহস্যময় হাসি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় নীলা।

শুভ্রকে পাগল করে দেয়ার জন্য ওটুকুই যথেষ্ট ছিল।

কাহিনীটা নাটক সিনেমার হলে হয়ত ওদের হয়ত আবার কোথাও দেখা হত,একসময় হয়ত রিলেশন টা হয়েই যেত এতদিনে...!

কিন্তু বাস্তবের নীলাঞ্জনা রা হারিয়েই যায়.... তাদের খুঁজে পেতে যে মিরাকেলের দরকার হয় , সেটা খুব কম শুভ্র দের ভাগ্যেই ঘটে... অবশ্য চেষ্টা বলতে একটা কথা আছে, শুভ্রও কম করেনি সেটা... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটা অনুষদ খুঁজেছে পাগলের মতন। নীলা নামের পাঁচজন কে পেয়েছিল কিন্তু আফসোস,একজনও তার নীলাঞ্জনা না.. যে বাচ্চাগুলোকে সেদিন খাওয়েছিল,তাদেরকে জিজ্ঞেস করেও কোন পাত্তা পায়নি... ফেবুতেও অনেক খোঁজ নিয়েছিল..... অবাক হয়ে মাঝেমাঝে ভাবত মেয়েটা উধাও হয়ে গেল কেমনে! নাকি আমাকে ভুল ইনফরমেশন.... না না,তা কেন.... অবশেষে নিয়তির লিখন ভেবে মেনে নিয়েছে....

এই ক'দিনে নীলাঞ্জনা র প্রতি তার আবেগ কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবে,বুঝতে পারেনা শুভ্র। এটাকে ঠিক প্রেম ও বলা যায়না আবার ক্রাশ পর্যন্ত ও আটকে ছিলনা...... কেমন যেন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ!

বর্তমানে,শুভ্র অবশ্য আছে আরেক চিন্তায়।ওর ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড শ্রাবন্তী কে নিয়ে... ওর আচার-আচরণ কেমন যেন বদলায়ে গেসে শুভ্রর প্রতি.... গাধীটা সারাক্ষণ হা করে তাকায়ে থাকে ওর দিকে ইদানিং .. শুভ্র অবশ্য নীলাঞ্জনা কে রেখে দিয়েছে মনের কোন এক জায়গায় ....কখনো কখনো মনে আসলে একটা হাসি একান ওকান হয়ে যায় এই আর কি .....।

# প্রতিদিন চলার পথে,যাত্রা পথে,অথবা যেকোন স্থানে...কত মানুষের সঙ্গেই দেখা হয় আমাদের। এর মধ্যে কাউকে কাউকে হয়ত বিশেষভাবে ভাল লেগে যায়।কিন্ত পরিস্থিতির কারণে,লজ্জা পেয়ে অথবা সম্পূর্ণ অচেনা কারো সাথে কিভাবে কথা বলা যায়..এরকম নানা দ্বন্দে কখনো সেই পরিচয় আর এগোয়না।কিন্তু কোন অবসর সময়ে,অবচেতন বা চেতনাগ্রস্ত মনের মাঝে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ মৃদু সুখানুভূতির দোলা লাগায়না,এ কথা হয়ত কেউ বলবেননা।
এই গল্পটা, #উৎসর্গ আমার সেইসব অজানা অচেনা #crush , অথবা আমার উপর #crush খাওয়া বেচারাদের প্রতি

ভালোবাসার অসময় সুন্দর একটি গল্প

ভালোবাসার গল্পআর কতক্ষণ মন খারাপ করে থাকবি? এত ফ্যাচফ্যাচ কাঁদুনে মার্কা ছেলে কখনো দেখিনি বাবা। আমি
মেয়ে হয়েও তো জীবনে এতবার মন খারাপ করিনি,তুই দিনে যতবার করিস!” এক নিঃশ্বাসে বকে যায় মুনা। তনয় আর মুনা,খুব ভাল বন্ধু। মেডিকালের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মুনা। তনয় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষ। চুপচাপ শান্ত শিষ্ট ধরণের ছেলে তনয়। মায়াময় বিষণ্ণ দুটি চোখ। এই চোখ দেখেই আর ঝাড়ি দেয়া যায়না। মুনা যতই বকে। তনয় ততই মাথা নিচু করে থাকে। মায়া লাগে মুনার।
“চল তোকে চটপটি খাইয়ে নিয়ে আসি,তাহলে ওই মেয়ের ভূত বের হবে তোর মাথা থেকে “
“কোন কিছুতেই বের হবেনা। ভালবেসেছিস কখনো কাউকে? কিভাবে বুঝবি কেন এত বিষণ্ণ থাকি? খুব কাছের কেউ অবহেলা করলে বুঝতি রে মুনা অবহেলা কত কষ্টের। “
“আমার এত কিছু বোঝার দরকার নেই। এইসব ভালবাসা প্রেমের মধ্যে আমি নেই। যেমন আছি তেমনই ভাল। তোর মত বিষণ্ণতার পাল্লায় পড়ার শখ নেই আমার। চলতো, উঠ। “ তনয়কে নিয়ে চটপটি খেতে যায় মুনা। একটি মেয়েকে ভীষণ ভালবাসে তনয়। নাম দিশা। মেয়েটি তার বন্ধু,কিন্তু বন্ধুত্তের বাইরে পা বাড়াতে রাজি হয়না কখনও। তনয় বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছে মেয়েটিকে, কিন্তু সে যেন বুঝেও না বুঝার ভান করে তনয়ের অনুভূতিগুলোকে। মুনা সবসময় পাশে থাকে তনয়ের। তার সুখ,তার দুঃখ কোনকিছুই অজানা নয় মুনার। মুনার প্রতি মন থেকে কৃতজ্ঞতা বোধ করে তনয়। এই পাগলি মেয়েটা পাশে না থাকলে কে এত সামলাত তাকে? তার সব কষ্টের ঘ্যানর ঘ্যানর কে শুনত বিরক্ত না হয়ে? হাসিখুশি মেয়েটার পাশে থাকলে বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থাকাও যায়না। মন ভাল করে তবেই ছাড়ে সে। এইভাবে দিন গড়াতে থাকে। হঠাৎ একদিন রাতে তনয়ের ফোনে ঘুম ভাঙ্গে মুনার। ভীষণ উৎফুল্ল শোনাচ্ছে তনয়ের কণ্ঠ।
“কি হয়েছে রে? রাত দুপুরে এভারেস্ট জয় করেছিস?” “তার চেয়েও বেশি। বলতো কি হয়েছে?”
“বললে বল নাইলে ফোন রাখ, ঘুমাতে দে আমাকে।“ “শুনলে আর ঘুমাতে পারবিনা খুশিতে।“
“মানে?“
“ মানে হচ্ছে দিশা বলেছে সে আমাদের বন্ধুত্বকে আরেকধাপ আগে বাড়াতে রাজি আছে!”
“ সত্যি?? অভিনন্দন দোস্ত,কালকে treat দে আমাকে”
“ পরে পরে। কালকে দিশার সাথে দেখা করতে যেতে হবে।”
“ ও আচ্ছা”
, খট করে কথা টা কানে লাগে মুনার। তার সাথে দেখা করার সময় নেই তনয়ের! তার সাথে!
“রাখি রে,দিশাকে ফোন দিব বলেছিলাম,পরে কথা হবে তর সাথে”
মুনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দেয় তনয়। তনয় রেখে দেয়ার পর ও দীর্ঘ সময় ফোন কানে নিয়ে বসে থাকে মুনা। এমন লাগছে কেন? গলায় কি যেন দলা পেকে আছে মনে হচ্ছে। তনয় তাকে রেখে অন্য কাউকে সময় দিবে, গুরুত্ত দিবে মেনে নিতে পারছেনা সে। কিন্তু কেন? তিন বছরের দীর্ঘ বন্ধুত্তে কখনো এমন মনে হয়নি তার। আর তনয়ের বিষণ্ণতা মুক্ত কণ্ঠস্বর শুনে তার খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু মনে হচ্ছে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে সে হারিয়ে ফেলেছে। তার সেই বিষণ্ণ চোখ জোড়াই যে মুনার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। সারারাত জেগে কাটিয়ে দেয় মুনা। তনয় ঠিক ই বলেছিল, সারারাত মুনা ঘুমোতে পারবেনা “খুশিতে” খুব কম সময়ের ভিতরেই তনয়ের জীবনে মুনার জায়গাটা দিশার হয়ে যায়। মুনা নিরব চোখে তনয়ের বদলে যাওয়া দেখে। অনেক চুপচাপ হয়ে যেতে থাকে মুনা। ব্যাপারটা চোখ এড় ায়না তনয়ের। মুনাকে সে অনেক ভাল করে চিনে। একদিন বিকেলে মুনাকে দেখা করতে বলে তনয়। মাথা ব্যথার বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যায় মুনা। কিন্তু তনয়ের অনুরোধে শেষমেশ রাজি হয় সে।
“কি হয়েছে তোর? এত চুপচাপ থাকিস কেন?”
“না তো ,এমনি”
“তোকে আমি চিনিনা ভেবেছিস? আমি জানি আমি তোকে সময় কম দেয়ায় খারাপ লাগছে তোর”
“কম??? হাসে মুনা।
“শেষ কবে আমাকে দরকার ছাড়া ফোন দিয়েছিস বলতো? তোর মন খারাপ থাকলেই মুনাকে লাগে। এছাড়া একবারও জিজ্ঞেস করেছিস কেমন আছি আমি? স্বার্থপর তুই।“
“আমি জানি মুনা তুই অনেক একা হয়ে গিয়েছিস। কিন্তু আমি যে অপারগ। কি করতে পারি আমি তুই বল?”
“আমি তোকে কিছু করতে বলেছি? তুই আসতে বলেছিস কেন আমাকে? আমি অনেক ভাল আছি,আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা তোর।“
চলে যায় মুনা। তাকে কোনভাবেই শান্ত করতে পারেনি তনয়। তনয় কিভাবে বোঝায় মুনার জন্য তার গভীর মায়া কাজ করে। হাসিখুশি এই মেয়েটি তার সব খারাপ সময়ে তাকে আগলে রেখেছে। আসলেই স্বার্থপর সে। মুনা বুঝতে পারে সে তনয়কে অনেক ভালবাসে।তনয়ের জগত জুড়ে শুধু সেই ছিল তাই এই অনুভূতিকে আবিষ্কার করতে পারেনি আগে। তার জায়গাটায় অন্য কেউ বসে যাওয়াতে সে বুঝতে পারছে তনয় তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মুনা ভাবে তনয়কে সব বুঝিয়ে বলে তার জীবন থেকে সরে আসবে সে। একদিন ফোন করে সব কথা খুলে বলে তনয়কে। চুপচাপ শুনে যায় তনয়। মুনার ভিতর চিৎকার করে বলতে থাকে প্লিজ তনয় আমাকে চলে যেতে দিস না, একটা বার আটকানোর চেষ্টা কর আমাকে।তুই ই যে আমার হাসির কারন ছিলি।তুই ছাড়া আমি কখন হাসতে পারবোনা রে। কিন্তু মুখে কিছুই বলেনা মুনা।শক্ত কণ্ঠে বলে
“ভাল থাকিস, আমার দূরে সরে যাওয়াটাই ভাল। কাছের মানুষের অবহেলার স্বাদ আমি পেতে চাইনা।“
তনয় বলে “আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো ...” “না তনয়,আমি জানি কি বলবি তুই। করুণা চাইনা আমি। আমাকে সরে যেতে দে, দোহাই লাগে তোর। তুই সুখে থাক,তাতেই আমার চলবে”
ক্রমেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব বাড়তে থাকে।তনয় মুনাকে ভালবাসার প্রতিদান দিতে পারেনি,কিন্তু তার বিষণ্ণতা টুকু পাকাপাকি ভাবে মুনার চোখে গেঁথে দিয়ে গেছে। কয়েক বছর পেরিয়ে যায়। তনয় বিয়ে করে দিশাকে, ফুটফুটে এক মেয়ে হয় তাদের। মুনার ও বিয়ে হয়ে যায়। সেই গভীর ক্ষত শুকিয়ে গেলেও তার চিহ্ন চাঁদের কলঙ্কের মত মুনার মনে ভেসে থাকে। সময় সব ঠিক করে দেয়না সব সময়। সংসার কে নিজের করে সাজাতে ব্যর্থ হয় মুনা। এক অসঙ্গায়িত ক্লান্তি তাড়া করে বেড়ায় তাকে প্রতিনিয়ত। ভালবাসা হীন সংসারের ঘানি টানতে না পেরে একসময় হাল ছাড়ে সে।ফলাফল বিচ্ছেদ।।

কয়েক বছর পরের কথা। চাইল্ড স্পেশালিষ্ট ডাঃ মুনা জামান। চেম্বারে রোগীর ভিড়। “নেক্সট রোগী পাঠাও” ছোট্ট একটা মেয়ে রুমে ঢুকে। অসম্ভব সুন্দর চোখ। পিছনে মেয়ের বাবা। কেঁপে উঠে মুনা তাকে দেখে। তনয়। কত্ত বছর পর দেখা। শুকিয়ে গেছে অনেক। চোখে আবারও সেই বিষণ্ণতার ছাপ। চিনচিনে ব্যথা করে উঠে মুনার বুকে। বসতে বলে মুনা। কিছুক্ষণ অস্বস্তিকর নীরবতা। কেমন আছ মুনা? মুনা হাসে,জবাব দেয়না।
“কি নাম তোমার বাবু?’
“আমার নাম তানজিন”
“কোনও সমস্যা ওর ?”
তনয়কে জিজ্ঞেস করে মুনা।
“হুম, জ্বর কয়েকদিন থেকে খুব”
“ওই ব্যাড এ আস,দেখি কি হয়েছে তোমার।“ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে দেখল মুনা। চোখ কেন জানি বারবার ঝাপসা হয়ে আসছে। তনয়ের মেয়ে! কেমন অদ্ভুত এক শিহরণ লাগে মুনার।
“তোমার আম্মু কেমন আছে,মা?”
“মা তো কোথায় যেন চলে গেছে। বাবা বলে আকাশের তারা হয়ে গেছে মা।“
ধক করে উঠে মুনার বুকে। তনয়ের বিষণ্ণ চোখের কারন বুঝতে পারে সে। বড় একা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। কেউ কি পাশে ছিল তার এত খারাপ সময়ে? তনয় একদম একা থাকতে পারেনা।কিভাবে সামলাল নিজেকে?
“তুমি বাবার পাশে গিয়ে বস,আমি আসছি” ওয়াশ রুমে গিয়ে অঝর ধারায় কাঁদতে থাকে মুনা। এতবছর পর ও এত বেশি কষ্ট হচ্ছে কেন তার? সব অনুভূতিকে তো সে কবেই মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিল। তবে কেন এত খারাপ লাগছে তনয়ের শুকনো মুখ খানা দেখে? যার জন্য এতটা বছর মরে মরে বেঁচেছে সে,তাকে বিষণ্ণ দেখে কি এক পৈচাশিক আনন্দ পাবার কথা নয় তার? নিজেকেই ধমক লাগায় মুনা। চোখ মুছে বাইরে বেরিয়ে আসে। তনয় মুনার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে মুনা কাঁদছিল। কান্নার পর নাকের ডগা লাল হয়ে যাওয়া এই মেয়েটিকে সে বর ভাল করে চিনে। কিন্তু সে যে বড় অসহায় ছিল। কিছুই করতে পারেনি মুনার জন্য। মুনার বিয়ে,বিচ্ছেদ সব খবর ই নিয়েছে সে। কিন্তু কি করার ছিল তার? আচ্ছা এখন কি সব আগের মত করা সম্ভব না? যে আনন্দের দেখা মুনা কখনো পায়নি,বাকি জীবনটা সেই আনন্দ দিয়ে ভরিয়ে দেয়া যায়না? মুনাকে কি বলে দেখা উচিত? নাকি আবারও স্বার্থপর ভাব্বে আমাকে? এত গভীর মমতা অনুভব করছি কেন মেয়েটার কান্না ভেজা চোখ দেখে? এতবছর পরও এত ভালবাসে আমাকে? সেদিনের মত বিদায় নেয় তনয়। রাতে ফোন করে মুনাকে।
“আমার সাথে একটু দেখা করবে মুনা?”
“কেন?”
“কিছু কথা ছিল।“
“হুম।“
যাবেনা ভেবেও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারেনা মুনা। দেখে মনে হয় সেই আগের তনয়কে দেখছে সে। বিষণ্ণ চোখ। দেখলেই যাকে ভালবাসতে ইচ্ছা করে। মনে মনে তার প্রিয় কিছু লাইন বলে মুনা।
“হয়ত তুমি কাছেই আছ, তবু তোমায় ছুঁতে কি পাই, তোমার বুকে ব্যথা ছিল কেমন করে কথা দিয়ে সেই ব্যথাতে আঙুল বুলাই”

অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে দুইজন।
“কেমন ছিলে মুনা?”
“ভাল...”
“মিথ্যা বলছ কেন?”
“ সব যখন জানই তো জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“তোমাকে আমি সুখী দেখতে চাই মুনা”
মানুষের সব চাওয়া পূরণ হয়না” কিন্তু তুমি চাইলেই তা হয়”
“কিভাবে?”
“মাঝখানের কয়েকটা বছর মুছে ফেলো,আমি তোমাকে ভাল রাখতে চাই।“
“কেন?”
“অনেক কষ্ট পেয়েছ তুমি, তোমার মত ভাল একটা মেয়ের এত কষ্ট প্রাপ্য না”
“করুণা করতে চাচ্ছ? করুনা চাইনা বলে আগেও সরে এসেছিলাম, এত বছর পর আবার সেই করুণার ডালি নিয়ে এসেছ?”
“করুণা নয় মুনা, বিশ্বাস কর”
“তবে কি? আমি ভাল ছিলাম না জেনে এখন করুণা করে ভাল রাখতে চাইছ আমাকে”
“কি বললে বিশ্বাস করবে বল?”
“প্লিজ তনয়, আমি আমার অনুভূতি গুলো নিয়েই বেঁচে ছিলাম,আছি। করুণার নিচে চাপা দিয়ে আমার অনুভূতির শুদ্ধতা নষ্ট করে দিওনা।“
“আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ।“
“না তনয়। তুমি কখনই দিশার জায়গা আমাকে দিতে পারবেনা মন থেকে। তুমি ই তো বলতে কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য করা যায়না। আমাদের মাঝখানে দিশা অদৃশ্য দেয়াল হয়ে থাকবে। আমি পারবনা তোমার করুণা,তোমার অবহেলা নিয়ে বাঁচতে”
তনয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাঁটতে থাকে মুনা। সূর্য অস্ত যাচ্ছে। মুনা হেঁটে চলে। প্রাপ্তির শেষ শেষ সীমানায় এসে কেন অপ্রাপ্তিকে বরণ করে নিল জানা নেই তার। চাইলেই পারত তনয়ের হাত টেনে নিয়ে। কিন্তু অবহেলা, করুণা মিশ্রিত জীবন থেকে তার অনুভূতি গুলোই তার কাছে দামি।
“বড় অসময়ে এসে তুমি স্মৃতি চিহ্ন রেখে যাও
বড় অসময়ে এসে বসে থাক অচেতন ভুবনে,
অসময়ে এসেছ বলে অসময় হয়েছে সময়
বেদনায় এসেছ বলে বেদনাই তীর্থ আমার”.........।।

মরতে পারি তোমার বুকে

মা মা যাই না? দেখ আমি ঠিক জিতে আসব।
কথাটা শুনে নাতির দিকে একবার তাকালেন রাহেলা বেগম। নাতির নাম ঈশান। ক্লাস সিক্সে পড়ে। মায়ের কাছে আবদার করছে কাবাডি খেলতে যাবার জন্য। চোখে মুখে সেই ছাপ, যেন বিজয়ী হয়ে আসবেই। কাল রাত থেকে মাকে বুঝাচ্ছে, মা বুঝতে চাইছে না।জুনিয়র কাবাডি দলের অধিনায়ক ও। লুকিয়ে লুকিয়ে এতদিন খেলেছে। মাকে শুনতে দেয় নি। মা অকারণেই ভয় পায়। ক্রিকেট খেলতে গেলে মা বলে, আরে তোর গায়ে বল লেগে ব্যথা পাবি। ফুটবল খেলতে গেলে বলে, পা ভেঙ্গে ফেলবি। ব্যাডমিন্টন খেললে বলে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবি। কিন্তু ছেলে যে সবকিছুতে অনেক ভাল খেলোয়াড়, মা তা বুঝতে চান না। মায়ের মন বলে কথা। সবকিছু কিছু কি বুঝে? তাই লুকিয়ে লুকিয়ে খেললেও এতদিন, আজ আর পারছে না ঈশান। ২ দিনের জন্য হোটেলে থাকতে হবে। সাথে স্যাররা থাকবে অবশ্য। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কাবাডির। জুনিয়র কাবাডি প্রতিযোগিতা, ভারত , নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রী লঙ্কা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নিবে। আর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ঈশান। ছোট বাচ্চা কাচ্চাদের আসর। শিক্ষকরা সন্তানের মত দেখাশুনা করবে। তবুও মা বুঝে না। ঈশানের ওখানে যাবার আবদার শুনে মা বললেন, তুই এর আগে একবার ট্রেনিং এ যেতে চাইছিস। দিনে দিনের ব্যাপার ছিল। তাই তোর বাবা যেতে দিল। আমি তোকে ট্রেনিং এ যেতেই মানা করছি, আর এখন তুই দুই দিনের জন্য বিদেশি মানুষগুলোর সাথে খেলতে যেতে চাচ্ছিস? তোর কিছু হলে আমি থাকব কি করে? তুই ব্যথা পাবি খেলতে গেলে বাবা।
- আমার কিছু হবে না। আমি জিতব আম্মু। আমাকে ছাড়া চলবে না।
রাহেলা বেগম আবার তাকালেন নাতির দিকে। চোখে মুখে তিনি আবারও সেই বিজয়ী ছাপ দেখছেন। চোখ ছলছল করছে তার। ছেলের বউকে ডেকে বললেন, বউ মা। যেতে দাও তো। ওর কিছু হবে না। ও পারবে দেখো।
- কিন্তু মা, আপনার ছেলে রাগ করবে।
- করবে না।আমার ছেলেকে আমি দেখব। যেতে দাও তো।
- মা, কিন্তু যদি কিছু হয়? এতটুকু বাচ্চা।
- হবে না বললাম তো। তুমি দেখে নিও। আমাদের ঈশান জিতে আসবে।
- দেখেন আপনি। আপনার কথার উপরে কথা বলি কি করে?
ঈশানের মা ছেলের সব গুছাতে চলে গেলেন। রাহেলা বেগম ঈশানকে ডাক দিলেন, শোন দাদু।
- বল।
- পারবি জিততে?
- হ্যাঁ পারব। জানো, দাদু আমি না অধিনায়ক। আমাকে ছাড়া কি করে জিতবে বল? আর অন্য দেশ খেলতে আসল, তাদের হারাতে না পারলে পচা বলবে সবাই আমাদের। আমি জিতব দাদু।
- তাই দাদু আমার? আচ্ছা, তোকে এই দোয়া করে দিলাম। মাথায় হাত রেখে, আমার দাদুটা জিতে আসবে।
রাহেলা বেগম ঈশানকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তার চোখ আজ ভিজে আসছে বার বার।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ঈশানের কাছে এটা নতুন না, দাদি যখনই ঈশানকে বুকে নেন এভাবে কাঁদেন। আজ বোধহয় একটু বেশিই কাঁদছেন। ঈশানের দিকে তাকিয়ে বললেন, দাদু তোকে একটা জিনিস দিব।
- দাও।
রাহেলা বেগম তার বিছানার পাশ থেকে একটা কাপড়ের মত কি একটা বের করলেন। ঈশানের হাতে দিয়ে বললেন, দাদু, জিততে হবে তোকে। জিতে এটা চাদরের মত শরীরে জড়িয়ে ছবি তুলবি।
ঈশান হাতে নিয়ে দেখল, একটা পতাকা।তবে এটা একটু কেমন যেন। বাংলাদেশের পতাকাই, তবে মাঝের বৃত্তের মধ্যে আবার বাংলাদেশের মানচিত্র। দাদি বলল, আগে পতাকা এমন ছিল।
মা সব গুছগাছ করে ফেলেছে। ঈশান বের হবে এখন। ওদের স্কুলের স্যার এসেছে ঈশানকে নিয়ে যেতে। ঈশান একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, ব্যাগের কোণায় দাদির দেয়া পতাকাটা। দাদির দিকে আর একবার তাকিয়ে বলল, দাদু, আমি জিতব।
রাহেলা বেগমের চোখ আবার চিকচিক করে উঠল,ঈশানের চোখের ভাষা দেখে। বুকের বা দিকটায় ব্যথা করছে রাহেলা বেগমের। পানি খেলেন কাজ হল না। বার বার ঈশানের সেই বিজয়ী হবার প্রত্যয়ী মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। অনেক মিল এই দুই মুখের। একটা মুখ ঈশানের অন্যটা রাহেলা বেগমের স্বামী সাদেকের। সাদেক তখন ২৫ বছরের যুবক। দেশে খুব যুদ্ধ চলছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ। এবার বাঙালি স্বাধীনতা নিয়ে আসবেই। যত রক্তচক্ষু , যত অত্যাচার হোক, যত নিপীড়ন, ভয় হোক। কিছু মানবে না। এবার প্রাণ দিয়ে হলেও স্বাধীনতা আনবে। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হবে। সাদেক তার মায়ের সাথে অনেকক্ষণ ধরে তর্ক করছে। মা বলছেন, তুই অখন আমার শুনবি ক্যান? তুই তো বাচ্চার বাপ হইছস। কত বড় হই গেছস। অনেক বুঝস।
- আম্মা, দেখেন, দেশের এই অবস্থায় ক্যামনে ঘরে বইসা থাকি। পাকিস্তানিরা একের পর এক মানুষ মারতাছে। আমাগো বাড়ি ঘর পুড়াইতেছে।সেদিন কাদেররে ধইরা নিয়া মাইরা ফেলছে। কাদের আমার ন্যাংটা কালের বন্ধু। বাসায় একটা ভাল কিছু রাঁধলেও আমারে দিয়া যাইত। আমারে ছাড়া কখনই থাকত না। গ্রামের মানুষগুলারে একের পর মারতাছে, আর আপনি আমারে ঘরে বইসা থাকতে বলেন।
- হ কই। তোর কি এতো? দেশে মানুষের অভাব? তারা যুদ্ধ করতাছে করুক। তোর যাওয়া লাগবে না। তোর কিছু হইলে আমি থাকব ক্যামনে?
- আম্মা ভয় পাইয়েন না। আমি জিতা ফিরা আসব।
বউ রাহেলার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে সাদেক। রাহেলার কোলে ১ বছরের বাচ্চা, জালাল।সেও মিটমিট করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাহেলা তাকিয়ে আছে, সাদেকের চোখ মুখের দিকে। যেন বিজয় নিয়ে আসবেই, এমন ভাব চোখে মুখে। চোখ দুটোকে মনে হচ্ছে আগুনের গোলা, যেন সেই আগুনে সব পুড়িয়ে ছাই করে দিবে, শত্রুর এই আগুনের সামনে দাঁড়াবার মত অবস্থা নেই।
সাদেকের মা বলছেন, তুই ট্রেনিং এ যাবার সময়ই তোরে মানা করছি। অখন, যুদ্ধে যাইতে চাস? আমার কথা না ভাবলি, বউ বাচ্চার মুখটা দেখ একবার।
- আম্মা, আমি জিতে আসব বললাম তো। দেশ স্বাধীন কইরা আসব। আমার জালাল, স্কুলে বাংলার পতাকা উড়াবে। আম্মা আমি ছাড়া হবে না।
রাহেলা এখনও সাদেকের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে এখনও সেই আগুনের ছাপ।রাহেলা শাশুড়িরে বললেন, আম্মা, যেতে দেন তারে। তিনি ঠিক জিতে ফিরে আসবেন। এসে আমাদের জালালকে আদর করবেন।
সাদেকের মা আর কিছু বলে না। সাদেক বউয়ের কাছে যায়। বউয়ের হাত ধরে বলে, বউরে দেশের অবস্থা বড় খারাপ। ওরা খালি মানুষ মারতাছে। দেশটারে স্বাধীন করতে হবে রে। আমি জিতে ফিরে আসব দেখিস, এসে আমার জালালরে কোলে নিয়ে আদর করব। তোরে নিয়ে স্বাধীন দেশের মেলায় ঘুরব, তোরে লাল চুরি কিনে দিব।
- আমি জানি আপনি জিতে আসবেন।
সাদেক বাচ্চাটাকে একবার কোলে নেয়, কপালে একটা চুমু দেয়। আর বলে, বাপ রে, আমি জিতে ফিরে আসব। এসে তোরে আদর করব। তুই স্কুলে বাংলার পতাকা উড়াবি।
সাদেক মায়ের থেকে দোয়া নিয়ে চলে যায়। যুদ্ধে গিয়েছে। ঠিক দেশ স্বাধীন করে ফিরে আসবে, রাহেলা জানে।স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে, রাহেলা। প্রতিদিন অপেক্ষা করে। আসে না। না আসাতে বাচ্চার সাথে একা একা কথা বলে, মা বলা শেখায়, বাবা বলা শেখায়। আশ্চর্য ভাবে জালাল, বাংলা বলাও শিখে যায়। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে, বানলা। জালালকে বলে, বাবা দেশ স্বাধীন করে আসবে। ওকে কোলে নিয়ে আদর করবে। অপেক্ষার প্রহর কাটতে চায় না।
একদিন হঠাৎ সাদেকের কণ্ঠ শোনা যায়, বউ বউ, আম্মা, জালাল।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে ঘরে আসে। রাহেলা দৌড়ে এসে বলে, কি হইছে আপনার?
- বউরে দেশ স্বাধীন করে আসছি। বলছি না তোরে, আমি জিতা আসব। ঠিক আসছি রে বউ। সবগুলারে শেষ কইরা দিছি। আমার জালাল কই? ওরে দে একটু আদর করি।
রাহেলা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জালালকে দেয় সাদেকের কোলে। সাদেক কোলে নিয়ে বাচ্চাকে আদর করে, বাপ তোরে কইছি না, আমি জিতে এসে তোরে আদর করব। আমি জিতে আসছি।
জালাল অস্পষ্ট স্বরে বাবা বলে। এই বাবা ডাক শুনে সাদেকের চোখ ভিজে আসে। বুকের সাথে জালালকে জড়িয়ে কাঁদে সাদেক। আনন্দের কান্না। বউ সাদেকের হাত ধরে আছে শক্ত করে। সাদেকের উরুতে আর কোমরের কাছে ২ টা গুলি লাগছে। গুলি বের করা হইছে। তবুও অবস্থা বেশি ভাল না। বাসায় আসার পর থেকে আরও খারাপ। বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। আজ বড় অস্থির লাগছে তার। এতো যন্ত্রণা কোনদিন হয় নি। রাহেলাকে কাছে ডেকে সাদেক বলে, বউরে তোরে নিয়া আর মেলায় যাওয়া হবে নারে মনে হয়।তোরে লাল চুরি কিনে দিতে পারব না। বড় শখ ছিল। আমারে মাফ কইরা দিস।
- আপনি কি বলেন এইসব?
- হ্যাঁ রে বউ। জালালটারে একটু আনবি, কোলে নিতাম।
জালালকে বুকের সাথে মিশিয়ে অনেকক্ষণ শুয়ে থাকে সাদেক। জালালের গায়ে একটা পতাকা জড়িয়ে দেয় সাদেক। আর মুখে বলে, আমার ছেলে বাংলার মানুষ। স্বাধীন বাংলার মানুষ। যার বাবা দেশ স্বাধীন করছে।
রাহেলা সাদেকের হাত ধরে বলে, আপনার ছেলে কি বলতে পারে শুনবেন?
- কি বলতে পারে?
রাহেলা জালালকে বলে, বাংলা বাংলা।
জালাল অস্পষ্টভাবে বলে, বানলা।
সাদেকের শুনে বুকের ভিতর বুক শান্তি লাগে। শরীরে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবুও কানের কাছে জালালের অস্পষ্ট বাংলা বাজছে। বাংলা, আমার প্রাণের সাথে মিশে আছে। বাংলাদেশ আমার দেশ। এতো যন্ত্রণায়ও একটাই সুখ, দেশ স্বাধীন। জালাল স্কুলে বাংলার পতাকা উড়াবে। জালারের মুখ থেকে আর একবার বাবা শুনতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কানে আর কোন শব্দই আসছে না।
সেদিন রাতেই সাদেক মারা যায়। স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে মারা যায়। রাহেলা বেগম স্বামীর দেয়া পতাকাটা যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। আজ ঈশানকে দিলেন। ঈশানও ঠিক জিতে আসবে। কারণ ঈশানের মুখেও সাদেকের মত বিজয়ী হবার ভাষা রাহেলা বেগম দেখেছেন।
২ দিন ধরে টিভিতে খেলার খবরে সবার খুব মনোযোগ। রাহেলা বেগম, ঈশানের মা, জালাল, সবার। ঈশানের কাবাডি দল, সেমি ফাইনালে গেছে। সেমি ফাইনালে পাকিস্তানকে হারাল। রাহেলা বেগম চোখ মুছে মুছে বলেন, আমার দাদু কত ভাল খেলে।
তিনি খেলা বুঝেন না, তবুও জানেন ঈশান ভাল খেলছে। ফাইনালে ঈশানের দল খেলবে ভারতের সাথে। রাহেলা বেগম জানেন এখানেও ঠিক জিতে যাবে ঈশান। ঈশানের মা সারাক্ষণ বলেন, আল্লাহ । আমার ছেলেটা যেন ব্যথা না পায়।
রাহেলা বেগম বিশ্বাস নিয়ে আসেন তার নাতি জিতবেই। ঠিকই ফাইনালে জিতে গেল ঈশানের দল। ঈশানকে দেখাচ্ছে টিভিতে, গায়ে দাদির দেয়া পতাকা জড়িয়ে ক্যামেরার সামনে এসেছে। বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে। রাহেলা বেগমের খুব খুশি লাগছে, আসলেই জিতল ঈশান।
বাঙালি হেরে যেতে জানে না। শুধু বিশ্বাস দরকার, আসলেই স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারব, আসলেই দেশকে ভালবাসব। আসলেই জিতব, দেশের স্বার্থে।
রাহেলা বেগমের আজ বড় সুখের দিন, তার স্বামীর কথা খুব মনে পড়ছে। জালালকে কাছে ডেকে আনলেন। ডেকে বললেন, তোর ছেলে অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। ও যে জানে দেশের জন্য জিততে হবে, তোর বাবার মত। জালাল আজ আবার ঐ গানটা শুনাবি?
- কোনটা মা?
- ঐ যে জন্ম আমার ধন্য হল।
সাদেক গান গাইছে,মায়ের কোলে মাথা রেখে, আর রাহেলা বেগম চোখ বুজে কাঁদছেন। এই দেশ আসলেই সাদেকের মত অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া। এই দেশের বুকে হাঁটতে গেলে এখনও তাদের নিঃশ্বাস পাওয়া যায়, স্বাধীন দেশের পতাকায় বা স্বাধীন দেশের ধুলি কণায়।ঈশানের মত তরুণদের হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে আরও অনেক দূর,রাহেলা বেগমের মত কাউকে লাগবে সেখানে সাহস দেবার মত। আর সাদেকের মত, ঈশানের মত চোখে মুখে বিজয়ের স্পৃহা থাকতে হবে। জালালের কণ্ঠের গান এখনও বেজে যাচ্ছে রাহেলা বেগমের কানে।এই সুর ভালবাসার সুর, এই দেশ অনেক ভালবাসার, এই দেশ মায়ের সমান, তাইতো জালাল গেয়ে যাচ্ছে,
" জন্ম আমার ধন্য হল মাগো,
এমন করে আকুল হয়ে
আমায় তুমি ডাকো।।
তোমার কথায় হাসতে পারি,
তোমার কথায় কাঁদতে পারি,
মরতে পারি তোমার বুকে,
বুকে যদি রাখো মাগো।।

তুমি আমার ভালোবাসার জয়ী

by প্রাঞ্জলিকা গোমেজ 
সুন্দরী মেয়েআদিত্য বরাবরই খুব এলোমেলো।ওকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন আমি ভার্সিটিতে প্রথম এসেছিলাম।যদিও ক্লাস দুইমাস আগে থেকেই শুরু হয়েছে কিন্তু আমার টাইফয়েড ছিল তাই এতদিন আসি নি।একগাদা নতুন ছেলেমেয়ের মাঝে আমি!নিজেকে বড় খাপছাড়া মনে হচ্ছিল।ক্লাসে অন্য ইয়ারের ক্লাস চলছিল তাই আমরা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।আমি এককোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছি।অফ হোয়াইট কালারের শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পড়া একটা ছেলের শাথে চোখাচোখি হয়ে গেল।আমি ভীষন অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।ছেলেটার চোখজোড়া অনেক তীক্ষ্ণ।কি গভীর কালো চোখ।মনে হচ্ছিল চোখের মাঝে ডুব দেই।হ্যাঁ,প্রথম দেখাতেই ছেলেটার সম্পর্কে এই কথাটাই মনে হয়েছিল।
-আপনাকে আগে কখনো ক্লাসে দেখি নি বোধ হয়!আজ কি প্রথম এলেন?
-জী,হ্যাঁ।অসুস্থ ছিলাম তাই আসা হয় নি।
-ও,আচ্ছা।আপনার নামটা জানতে পারি কি?
-জয়ী।আপনি?
-আমি আদিত্য।আমরা যেহেতু একই ক্লাসের তাই আমরা দুজন দুজনকে তুমি বলে সম্বোধন করতে পারি।আপত্তি আছে? -না,না,আপত্তি নেই।তুমিই ঠিক আছে!
এইভাবেই ছেলেটার সাথে পরিচয়।নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো ওর বরাবরের অভ্যাস।সবসময় ছুটাছুটি করছে,হুরাহুড়ি করছে।কখনো শান্ত নয়।ক্লাসও ঠিকমত করত না। "জয়ী,আজ আমার প্রক্সিটা দিও তো,আজ ওখানে মিটিং আছে,আসতে বোধ হয় পারব না।" আমি ওর প্রক্সি দেওয়ার দায়িত্ব নিবিড়ভাবে পালন করতাম।মাঝে মাঝে দুই-তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ।কোন পাত্তা নেই!আচমকা একদিন আসল।কাঁধে কোন ব্যাগ নেই,কিছু নেই।হাতে একটা খাতাও নেই।
-কোথায় ছিলে এতদিন?
-রংপুর গিয়েছিলাম।
-হঠাত রংপুর কেন?
-ওখানে সভা ছিল একটা।
-কেন এসব মিটিং-সভায় যাও?
-দেশটাকে বদলাতে চাই তাই।
-এভাবে কিছু হবে না।দেশ পাল্টানো এত সহজ নয়।তুমিও ধীরে ধীরে ওদের মত হয়ে যাবে।দুর্নীতির সাথে হাত মেলাবে। -আমাকে তোমার তাই মনে হয়?
-মনে হয়না কিন্তু হতে কতক্ষন?
-আমি হবো না কক্ষনো ওরকম।তুমি দেখে নিও।আমাদের দেশটা আজ স্বাধীন কিন্তু তবুও যেন কেমন পরাধীন পরাধীন মনে হয়!আসলেই স্বাধীনতা রক্ষা করা খুব কঠিন।আমরা বোধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের আশা পূরনে ব্যর্থ হয়েছি।নিজেকে তখন খুব ছোট মনে হয়।মনে হয় কিছু একটা করি।
-আজও ক্লাস করবে না?
-করি আজ তোমার সাথে না' হয়।
-উরিবাপরে!চলো যাই।তার আগে তোমার আসা উপলক্ষে আমাকে এককাপ কফি খাওয়াও।

আদিত্য সারাক্ষন শুধু নানান কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। ওর নাগাল পাওয়াই যেত না।তার মাঝেই একদিন খুব ব্যস্ত হয়ে ছুটে এসে বলল "জয়ী,আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।কি করব বুঝতে পারছিলাম না,তাই তোমাকে বলে ফেললাম।খুব অস্থির লাগছে।" আমি লজ্জায় কি রং ধারন করলাম বুঝতে পারলাম না। যেহেতু ফর্সা নই তাই লাল বাদে অন্য কোন রং হতে পারি।আমি আর কি বলব?আমার তো পেছনে তাকানোর সাধ্য নেই।এই ছেলের গভীর চোখের মাঝে আমি অনেক আগেই যে ডুব দিয়েছি।
জাহিদ স্যারের ক্লাস চলছিল।ক্যাম্পাসেই কোথাও গোলাগুলির আওয়াজ হল।অল্প কিছুক্ষন,তারপর সব ঠাণ্ডা।আমরা তেমন গুরুত্ব দিলাম না।ক্যাম্পাসে এসব প্রায়ই হয়।ক্লাস শেষে বের হলাম।হঠাৎ কোন এক ছাত্রের লাশ নিয়ে মিছিল শুরু হল।আমি অবাক!কে মারা গেল?ডিপার্টমেন্টের সামনে লাশ রাখার পর লাশ দেখে আমি গলাকাটা মুরগীর মত কিছুক্ষন তড়পালাম।সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল,আমার আদিত্য লাশ হয়ে গেছে।

খোয়া বিছানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে এসেছি খালি পায়ে।পা কেটে রক্তাত হয়েছে।আমার আর কোন কিছুতেই কষ্ট লাগেনা।সেখানে পৌঁছালাম অবশেষে যেখানে আদিত্য পাঁচ বছর ধরে ঘুমিয়ে আছে।ওর গায়ে হাত বুলালাম।আমার স্পর্শ ও নিশ্চয় বুঝবে।কে যেন আমার গায়ে হাত রাখ।তাকিয়ে দেখি আমার মা।মা'র চোখে পানি।আমার মা এই কষ্টটা পেয়েছেন।তিনি চোখের সামনে পাকিস্তানী জানোয়ারগুলোর হাতে আমার বাবাকে মারা যেতে দেখেছেন।আমার বাবা একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।আমার জন্মের খবর পেয়ে বাবা আমাকে দেখতে এসেছিলেন!আমাকে বাবা দেখতে পেয়েছেন,কোলে নিতে পেরেছেন কিন্তু আমি আমার বাবাকে দেখি নি!আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন,বিজয় এনেছেন তাই আমার নাম জয়ী।আদ্যিত্য এই স্বাধীন দেশটাকে মনের মত করে গড়তে চেয়েছিল,স্বাধীনতার মান রক্ষা করতে চেয়েছিল কিন্তু সেও পারে নি,সেও ঘুমিয়ে গেছে!মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।মা কাঁদছে স্বামী হারানোর কান্না,মেয়ের ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়ার কান্না।কিন্তু আমি কাঁদছি না,কাঁদতে পারছি না।কান্না আসছে না।আজ ষোলই ডিসেম্বর,বিজয় দিবস।আমি জয়ী তো তাই আমার কাঁদলে চলবে না,একদম চলবে না।

তথ্য প্রযুক্তি কি অভিশাপ!

তথ্য প্রযুক্তিরাশেদ (ছদ্মনাম), একটি স্বনামধন্য স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।  প্রতিদিন বিকালে সে স্কুল থেকে ফিরে একটু
বিশ্রাম নিয়ে পড়তে বসে। ১১টা বাজলে পরিবারের সাথে রাতের খাবার শেষে করে।  পরিবারের সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন রাশেদ তার কম্পিউটারের সামনে বসে।

 কৈশর বয়সে প্রযুক্তির নতুনত্বের স্বাদ পেতে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে তার ঘুরে বেড়ানো। ফ্রেইন্ডশিপ ওয়েব সাইটে রেজিস্ট্রেশন ও মেইল আদান প্রদান, থ্রেড পড়া এবং ওয়েব ক্যামে অবাধ চ্যাট- এভাবেই প্রতি রাতে তার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় পার হয়।

 তার ব্যক্তিগত কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভিডিও চিত্র। মাল্টিমিডিয়া সুবিধাসমৃদ্ধ মোবাইল ফোন ও পেনড্রাইভের মাধ্যমে এসকল ভিডিও চিত্র মাঝে মধ্যে সে তার সহপাঠীদের দিয়ে থাকে। তার সহপাঠীরাও রাতের বড় একটি সময় ব্যয় করে কম্পিউটারের সামনে।

অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজের বড় একটি অংশ আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সাইবার ক্রাইমে।

 সাইবার ক্রাইম থেকে পরবর্তীতে ঘটছে নানা ধরনের বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, নতুনত্বের প্রতি তরুণ সমাজের আসক্তি, সামাজিকভাবে সচেতনতার অভাব, পরিবারের উদাসীনতা, ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে জীবন যাপন, সুফল কুফল বিচার বিবেচনা না করেই প্রযুক্তির ব্যবহার, সঙ্গ দোষ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবই মূলত সাইবার ক্রাইম সংঘটনের মূল কারণ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের গাফিলতিও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সাইবার ক্যাফে। এ সকল ক্যাফেতে মূলত উঠতি বয়সীরাই বেশি ভিড় করে থাকে। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা এ সকল ক্যাফেতে সময় কাটায়। ফেসবুক, স্কাইপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে।

 এ ধরনের কয়েকটি সাইবার ক্যাফেতে কথা বলে জানা গেছে, মূলত এখানে যারা আসে তারা ইন্টারনেটে চ্যাট বা কনভারসেশন করে বেশি সময় পার করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন অশ্লীল ওয়েব সাইটে তারা প্রবেশ করে ভিডিওচিত্র সিডিতে বা পেনড্রাইভে ডাউনলোড করে নিয়ে যায়। পরে তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।

 সরকারের টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে শতাধিক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিলেও এখনো কয়েক হাজার অশ্লীল ও অরুচিকর ওয়েব সাইট বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এসকল ওয়েব সাইটে ১৮ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশে নামমাত্র একটি সতর্কতা নোটিশ দেয়া থাকে। যা বাস্তবিক অর্থে কেউই মানে না। এ সকল ওয়েব সাইট শুধু মাত্র নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না।

ইদানীং মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির মারাত্মক বিস্তার ঘটেছে। বিভিন্ন সিডি’র দোকান ও সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন।

 বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। কম দামী হওয়ায় মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সম্বলিত হ্যান্ডসেট তরুণদের হাতে হাতে ঘুরে ফিরছে। ইন্টারনাল বা এক্সটারনাল মেমরীর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো সংরক্ষণ ও ব্লু টুথ প্রযুক্তিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মোবাইল ফোনে।

 এক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী ও গৃহবধূরা।

সব কিছুরই ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। প্রযুক্তির এ দু’টি দিক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের আগেই প্রযুক্তি আমাদের হাতে চলে আসে। তরুণ প্রজন্ম স্বাভাবিকভাইে নতুনত্বকে গ্রহণ করে। কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয়।



তাই আইনের প্রয়োগের চেয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা বেশী জরুরী। পরিবারের অসচেতনতাও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তর রয়েছে।

 সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব থেকেই মূলত ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে।

 নৈতিক অধঃপতন থেকে তাদের ফেরাতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় লাইব্রেরী ও খেলাধুলার ক্লাব স্থাপন করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারকে সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ করতে সরকারেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে।