রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

দুরত্ত-ব্যবধান কবিতা

premer kobita

কাল তুমি ছিলে এখানে
আজো আছো
তাহলে কেন এত দূরে.............

নিঃশব্দতা যখন করবে প্রশ্ন
বলে দাও আমায়
কি বলবো আমি
নিয়ে এক বুক উষ্ণ...............

তুমি করোনি বিশ্বাস কখনো
হয়তো আমার মাঝেই ছিলো কিছু কমতি
শুধু মনে রেখো যেমনি আমার ছিলে
থাকবে তেমনি............

এ মনে কি ব্যথা
কখনো জানতে চাইলেনা
জানিনা কেন.........

আছো আমার পাশেই
তবুও আছি একাকী
কিভাবে বলি.........

শুধু তুমি আমায় বলো
কিছু না বলে আমি কি করে থাকি
তোমার এই আনমনা
আমি কি করে দেখি.........

কখনো কি আমি বলেছি
কখনো কি তুমি শুনেছো
সত্য কি আর মিথ্যা কি
সেটা আজ নাও জেনে
আমার ছিলে আমারি রবে.........

এ দূরত্ব এ ব্যবধান
কেন আজ তোমার আমার মাঝে............

অশান্ত সাগর ভাবছো যেটা তুমি
ভালো করে চেয়ে দেখো সেটা আমার
চোখের পানি............

কিছুটা তুমি কেঁদেছো
কিছুটা আমি কেঁদেছি
তবুও কারণটা হলো না জানা.........

ভুলে যাও সব পুরনো কথা
বাড়িয়েছি হাত শুরু করো পথ চলা
এ কথা ভেবে আগাই যতো আগে
হটাৎ দেখি সব দূরত্ব ব্যবধান তোমার আমার মাঝে.........।।

ভালোবাসি বলতে হবে না

প্রেমের কবিতা

ভালোবাসি বলতে হবে না !
-----গোলাম সারোয়ার অনিক

আমায় ভালোবাসি বলতে হবে না
শুধু তোমার ঐ শতরঞ্জিত মুখে
আমার নামটি উচ্চারন কর
আমি জ্ঞানহীন যাব।

আমায় দামী কোন উপহার দিতে হবে না
শুধু তোমার পবিত্র হাত দু'টি দিয়ে
আমায় ছুঁয়ে দিও
আমি হারিয়ে যাব।

আমাকে কখনো আর বলতে হবে না
'তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে'
শুধ আমার দিকে চোখ দুটো বাঁকিয়ে তাকাও
আমি স্বর্গ দেখে নেব তোমার চোখে।

আমার দিকে দৌড়ে আসতে হবে না তোমাকে
শুধু তোমার নগ্ন পা দু'খানি দিয়ে
আমার পানে একপা' হাটো
আমি হাইপার ডাইভ গতীতে তোমার কাছে ছুটে যাব।

আমাকে ভালোবেসে ফুল হাতে দাড়াঁতে হবে না আজ
শুধু আমি আসলে মুচকি একটু হেসে
জিঙ্গেস করবে, কেমন আছ ?
আমি ভালোবাসা খুজে নেব তোমার হাসিতে।

আমার সাথে বেরুতে হবে না কখনো
একবার ভালোবাসি বললেই হবে,
সেদিন থেকেই আমার ভ্যালেনটাইন শুরু হবে....
আজ না আমার ভ্যালেনটাইন শুরু করতে ইচ্ছে করছে
একবার বলবে 'ভালোবাসি ভালোবাসি'.

অভিমানিনী কান্না ভালবাসার গল্প


ভালবাসার গল্প By- Pinky Saha

টিভিটা খুলেই চোখ পড়ল নিউজ স্ক্রলের দিকে। কারওয়ান বাজার মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই ভয়ে কাঁটা দিয়ে উঠল সমস্ত শরীর। লিখন তো ওইদিক দিয়েই অফিসে যায়। ওর কিছু হয়নি তো? দৌড়ে মোবাইলটা নিয়ে ফোন করলাম লিখনের ফোনে।মনে হল অনন্তকাল ধরে রিং হচ্ছে।নো আনসার! কাঁপা কাঁপা হাতে আরেকবার ফোন করলাম।
হ্যালো।
তুমি ঠিক আছো? ওর কন্ঠটা শুনে মনে হল জীবন ফিরে পেলাম!
কেন, আমার আবার কখন কি হল? আমি মিটিং এ। অফিস টাইমে যে কেন ফোন কর, বুঝিনা। কি বলবে একটু তাড়াতাড়ি বল।
না, কিছু বলবনা।
ওকে, টা টা।
কতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেছে লিখন আজকাল।আমি তো ওকে লাঞ্চ ব্রেক ছাড়া ফোনই করিনা, আজ করেছি কতটা টেনশনে পড়ে তা যদি ওকে বোঝাতে পারতাম। এমন রুক্ষ ব্যবহার করার কি খুব দরকার ছিল? লাঞ্চের সময়ও তো প্রতিদিন আমিই ফোন করি। ও খাওয়াদাওয়া করল কিনা না জানা পর্যন্ত কিছুই মুখে তুলতে ইচ্ছা করে না। কই ও তো কোনদিন জানতে চায়না আমি খেয়েছি কিনা। অফিস থেকে আসার কথা সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে, মাঝে মাঝেই আটটা-নয়টা বাজে। আমি তো রাগ করিনা, ঝগড়াও করিনা। শুধু একদিন ভেবেছিলাম কথা বলবনা ওর সাথে। কিন্তু আমার এই অভিমান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলাম না। সেদিন ও অফিসিয়াল ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, আমি কথা বলছি কিনা এইটা খেয়ালই করলনা। ও তো এমন ছিলনা। আমাদের ভার্সিটি লাইফের প্রেম। অনেক প্ল্যানিং ছিল বিয়ে নিয়ে। আমি নতুন নতুন রান্না করে ওকে খাওয়াব, খেতে যেমনই হোক ও প্রশংসা করবে, যত ব্যস্ততাই থাকুক অফিস থেকে আসার পর আমরা অনেক অনেক গল্প করব, আর ছুটির দিনগুলো বেড়াতে যাব দূরে কোথাও। একসাথেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি আমরা। কিন্তু সংসারে সময় দিতে পারবনা ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাকরি না করার। ইচ্ছা ছিল আগে সংসারটা গুছিয়ে নিয়ে তারপর ওসব চাকরির চিন্তা করব। ওর নতুন চাকরিজীবন, আমি পাশে না থাকলে কি ও পারবে এতটা প্রেশার নিতে? ওর চাকরির তিন মাস হতে চলল, এখন ওর ব্যস্ততার মাঝে আমাকে কোথাও খুঁজে পাইনা। তবু অপেক্ষা করি, হয়তো আসবে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার দিন।
একটা বাজে, ওর লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, আবার কি ফোন করা ঠিক হবে? দোটানার মধ্যেও ফোন টা করেই ফেললাম।
সীমা, আমি জরুরি মিটিং এ আছি, প্লিজ এভাবে বারবার ফোন করনা।
তুমি কি লাঞ্চ করেছ?
না, দেরি হবে।
কখন খাবে? শরীর খারাপ করবে তো।
উফ, তুমি কেন আমার সিচুয়েশনটা একটুও বোঝার চেষ্টা করনা বলতো? এখন রাখলাম, আমার মিটিং শেষ হলে খেয়ে নেব। বাই।
মনের অজান্তেই চোখ জলে ভিজে উঠল। আমি কি সত্যি পারছিনা ওর যোগ্য সহধর্মিনী হতে?
সারাটা দিন কাঁদলাম। কারো সাথে শেয়ার করতেও ভাল লাগেনা, যদি কেউ আমাদের ভালবাসাকে ছোট করে! প্রেমের বিয়ে সুখের হয়না- এই উদাহরণের মধ্যে যদি কেউ আমাকে ফেলে! আমার একটুও ভাল লাগবেনা। ও তো আমাকে বলে ছিল চাকরিটা পার্মানেন্ট না হওয়া পর্যন্ত ওকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে, আমাকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আমিও বুঝি, তবু মনে হয় ও কি আমাকে আর একটু বেশি সময় দিতে পারতনা?
কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওহ, ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। পাঁচটা বাজে। কিন্তু এখন আবার কে এল? দরজা খুলতেই দেখি অবাক হয়ে গেলাম, লিখন!
তুমি? এত তাড়াতাড়ি?
আই লাভ ইউ, মাই ডিয়ার ওয়াইফ!
মানে? আর তোমার হাতে এত্ গোলাপ কেন?
তোমার জন্য, তোমার মনে নেই? আজ কত তারিখ? আজ আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার তারিখটা তুমি কি ভাবে ভুলে গেলে?
সরি, মনে ছিলনা, কিন্তু তোমার কিভাবে মনে থাকল?
তুমি তো জানো, আমি কাজের মধ্যে থাকলে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কিছু ভাবতে পারিনা, একটা এসাইনমেন্ট ছিল, আজ প্রেজেন্ট করলাম, সবাই খুব প্রশংসা করেছে, আমার চাকরি পার্মানেন্ট উইথ প্রমশোন ফ্রম নেক্সট মান্থ!
সত্যি?
হ্যাঁ, আর আমার এই সব কিছুর ক্রেডিট তো তোমার সোনা। আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি তা তুমি কখনই জানবেনা, আমি তো সেভাবে এক্সপ্রেস করতে পারিনা। তুমি আমার উপর অনেক অভিমান কর তাই না? সরি…আচ্ছা, তুমি আমার সরি গ্রান্ট করেছ কিভাবে বুঝব? বোঝাতে হলে চটপট রেডী হয়ে এস, আজ বাইরে ডিনার করব, ক্যান্ডল লাইট ডিনার।
আমি জানিনা কেন অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলাম, সারাদিন কষ্ট পেয়ে অনেক কেঁদেছি আবার এখন কাঁদছি অনাবিল আনন্দ নিয়ে। কি বলব আমি লিখনকে? নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছিল।কি নাকি ভেবেছি এতগুলো দিন, অকারনে কস্ট পেয়েছি।
কি হল, এত কাঁদছ কেন? এখন কান্নার আবার কি হল?
কিছুই বলতে পারছিলামনা, শুধু ফিসফিস করে বললাম, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি আর সবসময় বাসব…।।

এটা গল্প হলেও পারত


hot girls photoলিখেছেন - কানিজ

“এই ছেলে তুমি আমার খাতা দেখে লিখছ কেন?” হঠ্যাৎ চিৎকার শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় শ্রাবণ। মেয়েটার ননস্টপ বকবকানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগই পায় না সে। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো ক্লাস ওর দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে এমনকি গার্ড এ থাকা ভাইয়াটা পর্যন্ত সবার এমন ভাব যেন পৃথিবীতে সেই প্রথম ব্যাক্তি যে অন্যের খাতা দেখে দেখে লিখছিল । আর এই মেয়ে যে বকবক শুরু করসে এর কোনো থামাথামি নাই টেপ রেকর্ডার এর মত চলছে , পুরাই অসহ্য। আগে জানলে শ্রাবণ ভুলেও এই মেয়ের খাতার দিকে তাকাতই না। এই মেয়েটা হচ্ছে তিতলি । বাইরে থেকে খুব রাগি আর অহংকারী মনে হলেও আসলে তিতলি খুবি ইমশোনাল আর ভালো একটা মেয়ে,এই গোপন তথ্যটা অবশ্য তিতলির মা ছাড়া আর কেউ জানে না। সেদিন সকাল থেকেই ওর খুব মেজাজ খারাপ ছিল এর ক্লাস এ অই ছেলেটার হা করে ওর খাতাও দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর নিজেকে একদমই কন্ট্রোল করতে পারে নি ,সারাদিন এর সমস্ত রাগ অই ছেলের উপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু বাসায় আসার পর থেকেই তিতলির মনে হতে লাগলো কাজটা একদমই থিক হয় নি একটা সামান্য কাজের জন্য এত কথা শুনানোর কোন দরকার ছিল না। বেচারা কেমন মাথা নিচু করে ওর সব কথা সুনে যাচ্ছিলো এসব মনে হতেই কেমন খারাপ লাগতে শুরু করল ওর। পরদিন খুব সকাল সকাল কোচিং এ চলে আসলো তিতলি যদি ছেলেটাকে পাওয়া যায় । কোচিং এর ভিতর যেতেই দেখে ছেলেটা মাথা নিছু করে সিঁড়িতে বসে আছে। ওকে ওইভাবে বসে থাকতে দেখে তিতলির খুব মায়া লাগে ,সেও আস্তে করে ওর পাশে গিয়ে বসে তারপর হঠ্যাৎ করেই বলে উঠে -“সরি” চমকে উঠে শ্রাবণ তাকিয়ে দেখে কালকের ওই বদরাগী মেয়েটা বসে আছে, সরি কি ওই বললো নাকি? অবাক করা ব্যাপার এই মেয়ে আবার সরি বলতে পারে নাকি? এদিকে তিতলি কথা বলেই যাচ্ছে “ আসলে কাল আমার ওইভাবে বলাটা উচিৎ হয় নাই , কাল আমার মেজাজটা খুব খারাপ ছিল তো তাই এইভাবে বলে ফেলসিলাম, কিছু মনে কর না। তুমি কথা বলছ না কেন?” প্রশ্ন শুনে ধ্যান ভাঙ্গে স্রাবনের। এতক্ষণ হা করে তিতলির কথা শুনছিল ও। -“না না ঠিক আছে আমি তেমন কিছু মনে করি নি । আর দোষটা তো আমারই। আসলে আমি কেমিস্ট্রি একটু কম পারি তাই কিছু ইকুয়েশন সিওর হয়ে নিচ্ছিলাম।” -“আগে বলবা তো ,আমাকে বললেই আমি নিজেই দেখাতাম। যাই হক আমি আবার কেমিস্ট্রি খুবি ভাল পারি। এরপর থেকে আমি তোমাকে হেল্প করব কেমিস্ট্রি বুঝতে।” এইভাবেই কথা শুরু হয় শ্রাবণ আর তিতলির, অল্প কথা থেকে একসময় ভাল ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায় ২ জনের মধ্যে। একসময় দেখা যায় একজনকে ছাড়া আর একজনের চলছে না। শ্রাবণের সকাল শুরু হয় তিতলির গুড মর্নিং দিয়ে এর তিতলি রাত এ ঘুমাতে যায় শ্রাবণের গুড নাইট শুনে আর সারাদিন কথার রেলগাড়ি তো চলছেই , কোনো সময় কোচিং এ আর কোচিং শেষ হলে মোবাইল এ। ওদের কথা আর ঘুরে বেড়ানোর যন্ত্রণাই শুধু কোচিং সেন্টার না পুরা ফার্মগেট এলাকাই বিরক্ত হয়ে গেল।
একদিন ক্লাস শেষ করে বাসায় যাওয়ার সময় ওরা বাসের জন্য ওয়েট করছে ,একটার পর একটা বাস চলে যাচ্ছে অথচ কোনটাতেই উঠতে পারছে না ওরা ,মেজাজ এমনি গরম হয়ে আছে শ্রাবণের এই সময় তিতলি ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে “দেখ দেখ কি সুন্দর রংধনু!!!!!” “হুম একটু আগে বৃষ্টি হইসে তাই” “আরে তুই এত বেরসিক কেন? কই এত সুন্দর একটা জিনিস দেখে খুশি হবি তা না। দেখ আকাশটাকে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে , ইস! আমি যদি ওইটা ধরতে পারতাম তাহলে কিছু রঙ নিয়ে গায়ে মাখতাম” রংধনু দেখে এত খুশি হওয়ার কি আছে তা শ্রাবণ বুঝে উঠতে পারে না কিন্তু পাগলিটার রংধনু ছোঁয়ার চেষ্টা দেখে
ওর খুব ভাল লাগে। “আরে এভাবে লাফাস না হাত পা ভাঙ্গবে , রংধনু কি ছোঁয়া যায় রে বোকা , বাস এসে পরছে বাসায় চল।” ইদানিং শ্রাবণের মনে খুব অচেনা এক অনুভূতি হয় ,কই আগেও তো ও অনেক মেয়ের সাথে মিশেছে কিন্তু তিতলির জন্য যা হচ্ছে এইরকম আর কারো জন্য তো কোনোদিন ও তো হয় নি। এখন শ্রাবণের সারাদিন কেবল এটাই মনে হয় তিতলি না থাকলে ওর জীবনে আর ভোর হবে না বিকেল আসবে না রাত ও নামবে না। কিন্তু এগুলা তো নিজের মধ্যে নিয়ে বসে থাকলে হবে না তিতলিকে জানাতে হবে। কিন্তু কিভাবে?? এই চিন্তাই সারাদিন ঘুরপাক খায় শ্রাবণের মাথায় । একদিন নিউমার্কেট এ গিয়ে ওর মাথায় অদ্ভুত এক চিন্তা আসে তিতলি কে যদি রংধনুর সাত রঙের চুড়ি কিনে দেয়া যায় তাহলে ও হয়ত অনেক খুশি হবে , রংধনু না এনে দিতে পারলেও ব্যাপারটা কিছু একটা হবে, যা হবে হইতবা ভালই হবে। সারদিন ধরে নিউমার্কেট পুরাটা চার বার চক্কর দিয়ে সে সাত রঙের সাতটা চুড়ি খুজে বের করে, আর কল্পনাতে দেখতে থাকে এইগুলা পরলে তিতলির হাতকে রংধনুর মতই ভাল লাগবে আর মেয়েটা খুব খুশি হবে , কল্পনাতেই তিতলির হাসি মুখ দেখে খুব ভাল লাগে শ্রাবণের। পরদিন ক্লাস শেষ করে ধানমণ্ডি লেক এ যায় ওরা। শ্রাবণ থিক করে আসছে আজ যা হক কিছু একটা করতে হবে এইভাবে আর চলা যায় না। আজ তিতলিকে নিজের হাতে চুড়ি পরিয়ে দিয়ে বলবে “আমার আকাশটা খুব ধুসর রে ,তুই আমার আকাশে রংধনু হবি?? যে রংধনু শুধু বছরে একবার উঠে না বরং সারাজীবন আকাশটাকে রাঙ্গিয়ে রাখবে।” -“শ্রাবণ দেখতো আমার জ্বর আসছে কিনা?” তিতলির কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠে শ্রাবণ। -“তোর তো বেশ জ্বর, শরীর একদম পুড়ে যাচ্ছে। চল এখুনি বাসায় চল।” তিতলিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে মনটাই খারাপ হয়ে গেল স্রাবনের।ধুর আজো বলা হোল না, চুড়ি গুলা পকেটেই থেকে গেল। এদিকে শ্রাবণ জানতেও পারলো না তিতলি গতকাল সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজেছে ইচ্ছা করে জ্বর আনার জন্ন,মনে করেছিল অনেক জ্বর আসলে জ্বরের ঘোরে শ্রাবণকে বলতে পারবে ওর ভালবাসার কথাটা। এমনি অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু বলতে পারে নি,আর ছেলেটাও এত বোকা ওর চোখের দিকে তাকিয়েও বুঝতে পারে না যে কি প্রচণ্ড ভালবাসা নিয়ে তিতলি ওর জন্য অপেক্ষা করছে শুধু ওর মুখে একটিবার ভালবাসি শুনার জন্য। -“কিরে জ্বর কমসে? “ রাত এ কল করে জিজ্ঞেস করে শ্রাবণ। -“হুম নাই এখন” -তাহলে কণ্ঠ এরকম শুনাচ্ছে কেন? মন খারাপ? দাঁড়া আমি এখুনি তোর মন ভাল করে দিচ্ছি।” এই বলে গীটার নিয়ে গান শুরু করে শ্রাবণ- “মুখটা তুলে আকাশটাতে দেখ আরেকবার তোমার সাথে আছি আমি যে চিরকাল জোছনার আলো যখন তোমার গায়ে পড়ে আমি তখন থাকি তোমারই পাশে পাশে” ফোনের অইপাশে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে তিতলি মনে মনে বলে তুই যদি আমাকে এভাবে গান শুনাস তাহলে সারাজীবন আমি মন খারাপ করে থাকতে রাজি আছি।ঁ” -“কি রে তুই কি কাঁদছিস” -“কই না তো” দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ।কেউ কোন কথা বলছে না কিন্তু দুজনেরেই অনেক কিছুই বলার আছে,,,,,, তবুও কিসের যেন একটা বাধা। “ঘুমিয়ে পর ,অনেক রাত হয়েছে।” “হুম। শোন কাল আমি রাজশাহী যাচ্ছি , মামার বিয়ে।এক সপ্তাহ পরে ফিরব।” “সাবধানে যাস আর পৌঁছে ফোন দিস।”
পরদিন রাজশাহি চলে যায় তিতলি। অইখানে ওদের বাড়িটা একদম পদ্মার পাড়ে। এখানে আসার পর থেকে তিতলির শ্রাবণের কথা আর বেশি করে মনে পরতে থাকে। ইস!!এখন যদি শ্রাবণ আমার পাশে থাকতো !!!!!!! গতকাল সারাদিন সারারাত ধরে তিতলির ফোন এ চেষ্টা করে যাছে শ্রাবণ, কিন্তু বারবার বন্ধ পাচ্ছে। ধুর মেয়েটা যে কি করে না। মামার বিয়ে নিয়ে হয়ত বিজি, নিজেকেই সান্ত্বনা দেয় ও।
শ্রাবণ খবরের কাগজ খুব একটা পরে না। আজ কি মনে করে যেন সকাল বেলায় পেপার নিয়ে বসলো ও। “পদ্মায় নৌকা থেকে পরে পানিতে ডুবে এক মেয়ের মৃত্যু” খবরটা পরেই পুরা কেপে উঠে শ্রাবন।ভিতরের নিউজ পরার মত শক্তি নিজের ভেতর পায় না। তিতলিও ত সাঁতার জানে না। তবে কি,,,,,,,,,,,,,, আর ভাবতে পারে না শ্রাবণ , মাথা ঘুরে পরে যায়। পরে ঠিক হলে জানতে পারে তিতলিরা সব কাজিন মিলে নৌকায় ঘুরতে বের হয়, নৌকাটা কাঁত হয়ে গেলে পড়ে যায় তিতলি , নদীতে অনেক স্রোত থাকার কারনে দূরে চলে যায় , যখন ওকে খুজে পাওয়া যায় তখন আর ওর দেহে প্রান নেই। সেইদিন এর পর থেকে আর বাসা থেকে বের হয় না শ্রাবণ কারো সাথে কথাও বলে না। ওর মত এরকম এত উচ্ছল ছেলেকে এইভাবে বদলে যাওয়ার কারনটা কেউ ঠিক বুঝতে পারে না। শ্রাবণ এখন বেশির ভাগ সময়ই অই চুড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে আর অদেরকেই তিতলি মনে করে নিজের মনেই কথা বলে। আজ একবছর পর বাসা থেকে বের হয়েছে শ্রাবণ তিতলির কাছে যাচ্ছে অ,পকেটে সেই চুড়িগুলো , আজ তিতলির মৃতু্বার্ষিকী । সময়ের সাথে সাথে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে শ্রাবণ কিন্তু না কষ্টটা একদমই কম্বে না বরং সময়ের সাথে সাথে বাড়বে পৃথিবিতে এমন কিছু কষ্ট থাকে যা মানুষ ইচ্ছা করে মনে রাখতে চায়।

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বন্ধুত্বের প্রেম অথবা প্রেমের বন্ধুত্ব

valobasar golpoবুকের বামপাশে একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।তার সাথে শুরু হয়েছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা।প্রচণ্ড অভিমানও হচ্ছে।মনে হচ্ছে অভিমানগুলো জমা আছে বলেই চিনচিনে ব্যথাটা হচ্ছে।মন খুলে কাঁদলে সেই অভিমানগুলোও বুক থেকে বেরিয়ে যেতো,সাথে কমে যেতো ব্যথাও।প্রিয় মানুষটাকে হারানোর কষ্টটা বুঝি এমনি হয়।আমার এই প্রিয়মানুষটার নাম বীথি।জ্ঞান হবার পর থেকে এই একটা মেয়েকেই চিনে এসেছি।ওই ছিল আমার বন্ধু,শত্রু,অভিভাবক সব।এতদিনের সম্পর্কটা সামান্য কয়েকটা কথার জন্য এভাবে ভঙ্গুর হয়ে গেল।এই বীথিই যে আমাকে প্রপোজ করে বসবে তা আমি ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি।কোনকালেই ওকে এই চোখে দেখিনি।ওর মুখে এই কথাটা শুনে বুকটা যেমন কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল,তেমনি ওর প্রতি রাগও হচ্ছিল।যে বন্ধুত্বে প্রেম প্রবেশ করে সেটা হয় পরিপূর্ণ প্রেম হয়ে যায়,নয়তো সেটা বন্ধুত্বটাকেই ধ্বংস করে দেয়।আমার ক্ষেত্রে বন্ধুত্বটাকেই গলা টিপে হত্যা করেছে।সমবয়স্ক কাউকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে কল্পনাও করতে পারি না।এইসব কিছুই বীথি ভাল করেই জানতো।আর এজন্যই ওর প্রতি খুব রাগ আর অভিমান হচ্ছিল।তারপরও ভেবেছিলাম সব ভুলে আবার আগের মতো করে নেব।কিন্তু শত চেষ্টাতেও আগের মত হল না।কোথায় যেন সম্পর্কের সুরটা কেটে গেছে।

বীথির সাথে এভাবে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমি প্রচণ্ড একা হয়ে গেলাম।আমার আসলে তেমন কোন বন্ধুও ছিল না।কেমন যেন বাধনহাঁরা হয়ে গেলাম।পরীক্ষার রেজাল্টও খারাপ হতে লাগলো,পাশাপাশি হতাশা আমাকে প্রচণ্ড ভাবে ঘিরে ধরল।বীথির সাথে ক্লাসে দেখা হলে খুব মায়া বোধ করতাম,মনে হতো ওর ইচ্ছাটা পূর্ণ করে দেই।নিজেকে হাজারবার বোঝানোর পরও বীথিকে ওইভাবে কল্পনা করতে পারছিলাম না।সেই থেকে ঠিক করলাম কোন সমবয়স্ক মেয়ের সাথেই বন্ধুত্ব করবোনা।সময় কাটানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে গেলাম ভার্চুয়াল জগতে।

তখনো ফেসবুকের প্রচলন তেমন হয়নি,চারিদিকে শুধু মিগের জয়জয়কার।সেখানে রুমি খান নামে একজনের সাথে পরিচয় হল।কেন জানিনা অল্পকিছুদিনের মাঝেই তার সাথে খুব চমৎকার একটা সম্পর্ক হয়ে গেল।ছেলেটা আমার সমবয়সী আর খুব বন্ধুবৎসল টাইপের।বন্ধু দিবসের দিন ওর সাথে ফোনে প্রথম কথা হল।ওইদিন আমি যেন কারেন্টের শক খেলাম।সেদিন আমার অতিপরিচিত ছেলে ‘রুমি’ মেয়ে হয়ে গেল।আমি এতোটাই অবাক হলাম যে কথাই বলতে পারছিলাম না।ভুলটা আসলে হয়েছিল আমারই।রুমি নামের যে মেয়ে হতে পারে সেটা আমার ধারনাই ছিল।তাছাড়া আমি যে ‘সমবয়সী নারীবিদ্বেষী’ হয়ে পরেছি তা আমার চ্যাট থেকেই রুমি বুঝে নিয়েছে।এজন্যই রুমি ইচ্ছে করে ওটা ক্লিয়ার করেনি।শুধু আমার ‘কাণ্ডকারখানা’ দেখে মজা নিয়ে গেছে।যেটাই হোক না চাইতেও আমার জীবনে বীথির মত আরেকজন মেয়েবন্ধুর আগমন হল।ওর সাথে যে এতদিনে পরিমান ঘনিষ্ঠতা হয়েছে তাতে অবশ্য ফিরে আসবারও উপায় ছিল না।তবুও বীথির স্মৃতি মাথায় রেখেই রুমির সাথে মিশতে লাগলাম।

মানুষকে আপন করে নেবার অদ্ভুত একটা ক্ষমতা আছে রুমির।অতি অল্প সময়েই আমার আপন কেউ হয়ে গেল।আমার পড়াশুনা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক অনেক সিদ্ধান্তেই ও আমাকে সাহায্য করতো।আমার প্রতি ওর take care এর বর্ণনা দিলে সত্যি সত্যিই মনে হবে সে আমায় ভালবাসে।অন্তত আমার বন্ধুরা তাই ভাবতো।কিন্তু ও এমন ভাবে take care করতো,তাতে আমার কখনই মনে হয়নি যে সে আমাকে ওইভাবে চিন্তা করে।যেমনটা সকাল ঘুম উঠতে দেরি হলেই এমন একটা ‘সুন্দর’ বাংলা গালি দিবে যে ঘুম থেকে না উঠে পারা যায় না।আর ওর হাতে যে প্রতিদিন কতো খামচি খেতে হয় তারতো ইয়ত্তা নেই।ও ছিল কখনো মা,কখনো বড় বোন আর কখনোবা আমার বন্ধু হিসেবে।রুমির জন্যই বীথির স্মৃতি আমার মাথা থেকে মুছে যেতে বেশি সময় লাগলো না।বরং অনেকক্ষেত্রেই বীথিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলো রুমি।বীথির কারনে আমার মনে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল সেটা রুমি অল্পদিনেই কাটিয়ে দিয়েছিল।ওর কাছে এমন কিছু ছিল না আমি শেয়ার করতাম না।এমনকি ছেলেদের ‘স্পেশাল’ ব্যাপারগুলাও বাদ যেত না।রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে আমরা ছেলেরা যেভাবে আলাপ করি ওর সাথেও সেভাবে করতাম।রুমিকে প্রায়ই বলতাম কলেজের জুনিয়র মেয়েদের কারো সাথে প্রেম করবো।কিন্তু কোন মেয়ে ভাল লাগলেও সেই ভালোলাগাটা বেশীদিন থিতু হত না।এজন্য রুমিকে কোন মেয়ের ব্যাপারে বললেই হেসে বলতো তোর দ্বারা আর যাই হোক প্রেম হবে না।

এভাবেই তাইরে নাইরে করে ভালয় ভালয় ভার্সিটি লাইফের ৩ টা বছর পার করে দিলাম।অবশেষে আমার জীবনে প্রেম এলো।নতুন বর্ষে কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হওয়া দিয়াকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম প্রেম কি জিনিস।টলটলে চোখ আর হালকা টোল পরা কাচা হলুদ বর্ণের মেয়েটায় আমার সমস্ত পৃথিবী কেন্দ্রিভুত হয়ে গেল।আগে কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলেই রুমিকে বলতাম ভাল লাগার কথা।কিন্তু দিয়ার কথাটা অন্য কেউতো নয়ই, রুমিকেও বলতে পারলাম না।দিয়াকে প্রপোজ করবো সেই সাহসটাও সঞ্চয় করতে পারলাম না।পুরো কলেজ জুড়ে যে আমি সবাইকে জ্ঞান দিয়ে বেড়াতাম প্রেম না করার জন্য,সেই আমিই যদি প্রেম করি তবে আর রক্ষা নেই। তাছাড়া দিয়া যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয়,তবে এই মুখ নিয়ে ভার্সিটিতে থাকতে পারব না।নিজের ভালোলাগা প্রকাশ না করতে পেরে কেমন যেন কুঁকড়ে গেলাম।ক্লাসে অনিয়মিত হয়ে গেলাম আর রুমিকেও এড়িয়ে চলতে লাগলাম।এইভাবে প্রায় ৩ মাস পার হয়ে গেল।ডুবে যাওয়া মানুষের মত খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাইলাম।রুমিকে বললাম দিয়ার নাম্বার জোগাড় করে দিতে।কপালে যা আছে ভেবে দিয়াকে ফোন দিয়েই বসলাম।প্রথম দিন কথা বলেই চমকে গেলাম।দিয়া বোধহয় এতদিন আমার ফোনেরই অপেক্ষা করছিল।মাত্র ৭দিন কথা বলতেই দিয়া আমাকে হ্যাঁ বলে দিল।আমি যেন স্বর্গ হাতে পেয়ে গেলাম।প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দের মাঝেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করছিল।দিয়ার এতো সহজে মেনে নেয়াটা আমি কেন যেন মেলাতে পারলাম না।সেই রহস্য ভেদ করলো দিয়াই।আমার হঠাৎ স্তব্দ হয়ে যাওয়াটা রুমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।তাছাড়া আমিও কিছু বলছিলাম না।বাধ্য হয়েই চুরি করে আমার ডায়েরি থেকে দিয়ার কথা জানতে পারে।সেই থেকে ২টা মাস তার দায়িত্ব ছিল দিয়ার মাথায় আমার ভুত ঢুকিয়ে দেয়া।এবং এই কাজটা সে দক্ষতার সাথে করেছে।

রুমি এমনিতেই আমার সবচেয়ে বন্ধুদের একজন।এই ঘটনার পর ওর প্রতি আমার ভালোলাগাটা অসম্ভব রকম বেড়ে গেলো।দিয়াকে আরো কাছে টানতে যা যা করার সবই রুমি আমাকে শিখিয়ে দিল।মেয়েরা মেয়েদের মন ভাল বুঝে।তাই খুব অল্প সময়েই দিয়ার সঙ্গে আমার বোঝাপরাটা হয়ে গেল।দিয়ার সঙ্গে প্রেম হয়ে গেলেও রুমিকে নিঃসঙ্গ করার মতো অকৃতজ্ঞ হলাম না।আমার প্রেমটা যে রুমির জন্যই হয়েছে তা দিয়া ভাল করেই জানতো।তাই হয়তো প্রথমদিকে রুমির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি দিয়া।কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে আমার।আর দশটা মেয়ের চেয়ে দিয়াও বেতিক্রম হতে পারল না।প্রথম দিক থেকেই দিয়া রুমির সাথে আমার সম্পর্কটা অবচেতনভাবেই ঘৃণা করে এসেছে।কিন্তু অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সেটা সচেতন ঘৃণায় পরিনত হল।সেটা বুঝেই রুমিও আমাকে এড়িয়ে চলতে লাগলো।দিয়ার এই ব্যাপারটায় আমি খুব বেশি দুঃখ পেলাম,যদিও মুখে কিছুই বললাম না।কিন্তু ওই থেকেই কেন জানিনা দিয়ার সাথে ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকতো।এই ঝামেলার হাত ধরেই মাত্র ১১ মাসের মাথায় আমাদের সম্পর্কের ইতি ঘটলো।ওর প্রতি এতই বিরক্ত হয়ে পরেছিলাম যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় একটুও খারাপ লাগেনি।রুমি বোধহয় এই কারনে কিছুটা অপরাধবোধে ভুগত।এইজন্যই বরাবরের মতো এড়িয়ে চলতো।কিন্তু এরপর আমার জীবনে যা ঘটলো তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।জানুয়ারির এক শীতের রাতে রুমির বাসা থেকে ফোন করে বলল,আমার আর রুমির সম্পর্কটা প্রেম কিনা জানতে চাইল।মাথায় বাজ পরলেও বোধহয় এতো অবাক হতাম না।কয়েকদিন পর রুমির মা ফোন করে অনেক কান্নাকাটি করলো।রুমি কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।আবার কাউকে পছন্দ করে কিনা সেটাও বলছে না।রুমির ভাইয়ের ধারনা আমাকে ভালবাসে বলেই ও বিয়েতে রাজি হচ্ছে না।জীবনে দ্বিতীয়বারের মত স্থবির হয়ে গেলাম।রুমি কি চাইছে তা আমার আর বুঝতে বাকি রইল না।দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করলো।আমি ভাল করেই বুঝতে পারলাম আমি যদি ওর সাথে সম্পর্ক রাখি,তাহলে আর ওর বিয়ে করা হবে না।ওর কাছ থেকে সরে আসার জন্যই মিথ্যে ছুতো ধরে বিশাল ঝগড়া লাগিয়ে রুমির সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে দিলাম।আমার এরকম বদলে যাওয়া দেখে রুমি বোধহয় মারাত্মক অবাক হল।

অনেক কষ্ট হলেও রুমির সাথে যোগাযোগ করিনি।এই ঘটনার এক বছর পর পারিবারিক সম্মতিতে নুহার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়।ভেবেছিলাম কিন্তু রুমিকে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে কাটা ঘায়ে আর নুনের ছিটা দেবো না।সম্পর্ক না রাখলেও রুমিকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি।তাই বিয়ের দাওয়াত না দিয়ে পারলাম না।সেইদিন অনেক দ্বিধা নিয়ে ভয়ে ভয়ে রুমিকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম কেন সে বিয়ে করছে না।উত্তর না দিয়ে রুমি কাঁদতে লাগলো।অনেক জোরাজুরির পর সে বলল ডাক্তার বলেছেন রুমির মা হবার সম্ভাবনা খুব কম।তিন বছর আগে হরমোন টেস্টে এটা ধরা পরেছে,যেটা এখনো রুমির পরিবারের কেউ জানেনা।সেদিন রুমির কান্না দেখে নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারলাম না।তীব্র অপরাধবোধ আমাকে ঘিরে ধরল।রুমিকে এতদিন আমি কতোটাই না ভুল বুঝেছি।আর ভুল বুঝে কতো পবিত্র একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলেছি।

নুহার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে ১৭ মাস হয়ে গেলো।এঁর মধ্যে নুহা আমাকে একজন দেবদূত উপহার দিয়েছে।এর জন্য আমি ওর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।নুহার সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে সে সবকিছুকেই সহজভাবে নিতে পারে।আমার সাথে রুমির সম্পর্কটা খুব সহজভাবেই নিয়েছে।আজমিনের জন্মের সময় রুমিই ছিল সব।নিজেকে মাঝে মাঝে খুব ভাগ্যবান মনে হয়।নুহা না চাইলে আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধুটাকে হয়তো আর কাছে পাওয়া হতো না।নুহার তাগিদেই দেশে রুমির চিকিৎসার অনেক চেষ্টা করেছি।কিন্তু ভাগ্যদেবী এখনো সাড়া দেয়নি।এইবার আমি আর নুহা মিলে ঠিক করেছি রুমিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে চিকিৎসা করাবো।ভাগ্যদেবীর সাথে এইবার আমার একটা সেইরকম বোঝাপড়া হবে।আমার পৃথিবীসেরা বন্ধুটার ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেবো না তাকে...

সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

নারীদের জন্য স্প্রে

hot Girlsযে সকল মহিলা দীর্ঘদিন ধরে যৌন শীতলতায় ভুগছেন তাদের জন্য এক আনন্দের বার্তা ঘোষণা করেছেন
গবেষকরা। গবেষকদের মতে, এক বিশেষ ধরনের তরল পদার্থ মহিলাদের যৌনাঙ্গে স্প্রে করলে তাদের যৌনাকাঙক্ষা বাড়তে পারে এবং সেই সাথে শরীরও হতে পারে চাঙ্গা। Alprostadil নামের এ ওষুধটি কিন্তু একেবারে নতুন নয়। ইতোপূর্বে এই ওষুধটি পুরুষদের যৌন সমস্যা সমাধানে ব্যবহ্নত হতো। Prostaglandin E  থেকে এটি প্র‘ত করা হয়।

মূলত সেই মহিলারাই যৌন শীতলতায় ভোগেন যাদের শরীর ও মন একই সাথে যৌন ইচ্ছায় সাড়া দেয় না। সম্প্রতি আমেরিকান ইউরোলজিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভায় এ সম্বন্ধীয় এক সমীক্ষায় রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। রজঃনিবৃত্তপ্রাপ্ত যৌন শীতলতায় ভোগা ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়স্ক মহিলাদের ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা যায় যেসব মহিলা অষঢ়ৎড়ংঃধফরষ নামক তরল ওষুধটি তাদের ভগাঙ্কুর ও যোনিপথে স্প্রে করেছেন তাদের তীব্র থেকে অতি তীব্র যৌনাকাঙক্ষা সৃষ্টি হয়েছে এবং শরীর ও মন সেজন্য প্র‘ত হয়েছে। সমীক্ষায় এই ফলাফলের কারণে গবেষকরা আশাম্বিত এবং সেই সাথে যারা যৌন শীতলতা সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন তারাও আশাম্বিত হতে পারেন এই ভেবে যে, অষঢ়ৎড়ংঃধফরষ স্প্রে ব্যবহারে জীবন আবারও হতে পারে মধুময়।

জিঙ্ক খাও নিউমোনিয়া হটাও

প্রতিদিন খাবারের সাথে জিঙ্ক সম্পূরক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরিদ্র শিশুদের নিউমোনিয়ার হার শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ কমিয়ে আনা যেতে পারে। সম্ভাবনাময় এবং চমকপ্রদ এ তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল।

সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরিদ্র শিশুরাই নিউমোনিয়াসহ শ্বাসনালীর বিভিন্ন প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ‘জিঙ্ক’ এর অভাবে শিশুর ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায় এবং এর ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও কমে যায়। এ ধরনের শিশুরাই পরবর্তীতে নিউমোনিয়া ও শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।

সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লীতে ১-১০ মাস বয়সী প্রায় আড়াই হাজার শিশুর ওপর ৪ মাসব্যাপী এক গবেষণা সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, যে সকল শিশু জিঙ্ক সম্পূরক খাদ্যগ্রহণ করেছে তাদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হার জিঙ্ক গ্রহণ করছে না এমন শিশুদের চেয়ে অনেক কম। আর তাই গবেষকদের ধারণা, জিঙ্ক সম্পূরক খাদ্য নিউমোনিয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। অতএব আপনার শিশুকে জিঙ্ক সম্পূরক খাদ্য খাওয়ান এবং নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করুন।

ভালোবাসি ভালোবাসি প্রেমের কবিতা

প্রেমের কবিতা

ভালোবাসি ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি...
ভালোবাসি ভালোবাসি ।

আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে
দিগন্তে কার কালো আঁখি
আঁখির জলে যায় ভাসি
ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি ।

সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সূরে সাগর কূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে
সেই সুরে বাজে মনে অকারনে
ভুলে যাওয়া গানের বাণী
ভোলা দিনের কাঁদন
কাঁদন হাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি ।

ভালোবাসি ভালোবাসি!!
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়
বাজায় বাঁশি
ভালোবাসি ভালোবাসি 

বন্ধু মানে ভালবাসার কবিতা

বাংলা কবিতা

বন্ধুত্ব মানে-
বয়সের সাথে বয়সের মিল নয়
বন্ধুত্ব মানে-
মনের সাথে মনের, গোপনে হয়ে যাওয়া পরিচয়।

বন্ধুত্ব মানে-
একাকীত্বের প্রতি অভিশাপ
বন্ধুত্ব মানে-
খুব প্রয়োজনে, খুঁজে পাওয়া ওই দুটি হাত।

বন্ধুত্ব মানে-
কবিতা কিংবা গানে
শব্দে-বর্ণে ছন্দের মতো নয়
বন্ধুত্ব মানে-
ছবির মতো করে
চোখে চোখ রেখে কথোপকথন নয়।

বন্ধুত্ব মানে-
মাটি আর আকাশে
সুদূরপ্রান্তে সংঘবদ্ধ দাবি
বন্ধুত্ব মানে-
সাগর-ঝর্ণা মাঝে
মিলনের তলে বয়ে চলা কোন নদী।

বন্ধু আমার, যেখানেই থেকে যাও
খুঁজে পেতে পারি হঠাৎ স্মরণে
বন্ধুত্বের ছলে, ছলে-বলে-কৌশলে
ধরা দিয়ো না মিছিমিছি ভালোবেসে;
বন্ধুত্ব মানে-
গোটা পৃথিবীটা তোমার
হতে পারে বন্ধুত্বের দাবিদার
বন্ধু আমার, বন্ধু তোমার,
বন্ধু তুমি হয়ে যেতে পারো সবার।

বন্ধুত্ব মানে-
বয়সের সাথে বয়সের মিল নয়
বন্ধুত্ব মানে-
মনের সাথে মনের, গোপনে হয়ে যাওয়া পরিচয়

তুই আমার পরী প্রেমের গল্প

bangla girls Photo- বাবা, আমি তো সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছি যেন অর্ডার টা পাই। এখন যদি......
- সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। চেষ্টার নমুনা।
- তোমাকে তো বারবার বলেছি, তোমার ছেলেকে দিয়ে কিছুই হবে না। কয়দিন পরে ওর কারণে আমাদের পথে বসতে হবে।
- আহ্‌, রোজি আমাদের মাঝে তুমি কেন কথা বলছ?
- হুম, আমি কথা বললেই তো দোষ। এর কারণে আমার জীবনটাই নষ্টই হয়ে গেল।

এখন আর আমার এখানে থাকার মানে হয় না। আমাকে নিয়ে এখন বাবা আর মায়ের মধ্যে ঝগড়া হবে। অথচ আমি সবসময় তাদের চোখে ভাল হতে চেয়েছি।

আমার যখন ৮ বছর বয়স তখন মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার পরে চাচা আর নানাদের ইচ্ছায় বাবা আবার বিয়ে করেন। আমার দেখা শোনার জন্য নতুন মার আগমন এই বাড়িতে। কতোটুকু দেখা শোনা হয়েছে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ওহ্‌, আমার নামটাই তো বলা হয়নি। আমি নীল।

ড্রাইভ করতে করতে চিটাগাং চলে এসেছি, আর ভাবছি জীবনের বেশীর ভাগ সময়টা গেল বাবা-মা কে খুশী করার চেষ্টায়। কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছি অপমান। আমার নিজের মা থাকলে আজ হয়ত এমনটা হতো না। কতোদিন হলো কেউ আমাকে আদর করে না, শরীর খারাপ হলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না, খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দিতে চায় না। শেষ কবে বাবার আদর পেয়েছি মনে করতে পারছি না। চোখ ভিজে উঠছে।

- Ohh, Shit. গাড়ি আর লাগার যায়গা পেল না। সোজা পুলিশের গাড়িতে।
- Excellent Driving!
আজকাল পুলিশরাও মজা করতে শিখেছে নাকি? ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেকে নামলাম।
- সরি অফিসার। আমি আসলে......
- সরি টরি সব থানায় বলবেন। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে আর হুঁশ থাকে না আপনাদের।

কি আর করা, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভেবে থানায় যাচ্ছি। থানায় যাওয়ার পরে একবার মনে হল নিজের পরিচয়টা দেই। পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। এতো রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার চেয় থানায় একরাত থেকে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৪ শিকের মধ্যে ঢুকলাম। সন্ধ্যা হতে অল্প বাকি। ভেতরটা গুমোট অন্ধকার। বিশ্রী গন্ধ। মনে হচ্ছে কয়েকদিনের বাসি খাবার পচে গন্ধ আসছে। এখানে সারারাত থাকা অসম্ভব। সেন্ট্রি কে ডাকতে যাবো এমন সময় করিডরে লাইট জ্বেলে দিল। এবার গরাদে কিছু আলো ঢুকেছে। ছোট একটা ঘর। একপাশে পানির কলসি, অন্য পাশে কেউ একজন উল্টোদিক ফিরে শুয়ে আছে। খাবার গুলো তাকেই দেয়া হয়েছিল। অর্ধেক ঘর জুড়ে খাবার ছিটানো। পাগল নাকি? পাগল হলে তার সাথে রাত কাটাতে হবে ভাবতেইগা শিউরে উঠল। থানায় আরো একটা জেলখানা ছিল। ওটাতে বেশ কয়েকজন আছে। ভয়ংকর চেহারা। আমার গেট আপ দেখেই হয়তো এই রুমে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে কোন পাগলের সাথে?

এমন সময় দেখলাম মানুষটি পাশ ফিরল। আমি ভেবে ছিলাম কোন ছেলে। এখন দেখছি একটা মেয়ে। ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। লোহার গরাদ গলে সামান্য আলো পড়ছে তার মুখে। এমন রুপ সাধারণত দেখা যায় না। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি। জোড় ভুরু, ঘন চোখের পাঁপড়ি, বরফি কাটা চিবুক, গায়ের রং এতো ফর্সা যে মনে হচ্ছে- একটু টোকা দিলেই রক্ত পড়বে, চুল গুলো এলোমেলো ভাবে ছোট ছোট করে কাটা। মনে হচ্ছে শ্রষ্ঠা জলরং দিয়ে তাকে বানিয়েছে। সেন্ট্রি কে ডেকে বললাম দয়া করে রুমটা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করেন, টাকা যা লাগে আমি দেব। সে নির্বিকার। জিজ্ঞাস করলাম আমাকে মেয়েদের সেলে রাখা হয়েছে কেন? সে বলল- ওটা মেয়ে নাকি? ও তো পাগলী। পাগলদের যে ছেলে-মেয়ে কোন ব্যপার নাই জানতাম না! বললাম- তো ও এখানে কেন? কি অপরাধ করেছে। কি অপরাধ আবার? সুন্দর মেয়ে হয়ে জন্মেছে। তার জন্য জেলে? আরে ভাই বুঝেন না কেন ওকে ছেড়ে রাখলে এলাকার ছেলেরা শেষ করে দিবে, এর মাঝে কি কম সহ্য করছে? কতো আর সইবে বেচারি। তো পাগলা গারদে পাঠায় দেন। সব প্রাইভেট, খরচ চালাবে কে? বলে হনহন করে সে হেঁটে গেল। কি আর করা চুপচাপ বসে থেকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। এমন মায়া কাড়া চেহারা কিন্তু কি দুর্ভাগ্য তার। তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন নেশা লাগে। কখন যে সকাল হয়েছে খেয়াল করিনি। মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগালো। এতো সুন্দর তার চোখ যে বিস্ময়ে আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমি জেগে উঠতেই সে নিজের যায়গায় গিয়ে বসল। তাকে খেতে দেয়া হয়েছে শুকনো রুটি আর ডাল। সে অর্ধেকটা খেয়ে বাকি টা আমার দিকে ঠেলে দিল।

কিছুক্ষণ পর ডিউটি অফিসার আসল, তাকে নিজের পরিচয় দিতেই মনে হল যেন ১০০০ ভল্টের শক খেয়েছে। কাল কেন তাকে বললাম না এই আফসোস করতে করতেই তার অবস্থা কাহিল। বাইরে থেকে নাস্তা নিয়ে এসে খাওয়ালও। উপরি হিসেবে গাড়িতে গ্যাস, তেল ভরে দিল। যাওয়ার সময় আমি বললাম- আমাকে আরেকটা উপকার করতে হবে আপনার। সে জিজ্ঞাস করল – কি? আমি মেয়েটাকে আমার সাথে নিতে চাইলাম। সে বলল- স্যার, ও তো পাগল, কয়দিন পরে আপনার আর ভালো লাগবে না। তখন তার কি অবস্থা হবে? আমি বুঝিয়ে বললাম- তার চিকিৎসা করাবো, হয়তো একদিন পরিপূর্ণ ভালো হয়ে যাবে সে।

ঢাকায় আসার পরে প্রথমেই তাকে আমার এক সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম। ও জানালো যে – মেয়েটার অবস্থা খুব সেরিয়াস না। একটু যত্ন, আর নিয়ম বেধে চিকিৎসা করালে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। বাসায় ওকে নেয়া যাবে না। সমস্ত ব্যাপারটা আব্বুকে জানানোর আগেই মা যেনে গেল। ব্যস বাসায় ঢোকা আমার জন্য নিষিদ্ধ। আব্বুকেও ফোনে পাচ্ছি না। কি আর করা নিকুঞ্জে আমাদের ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে থাকতে শুরু করলাম। প্রথমে ওকে আমার বন্ধুর হসপিটালেই রাখলাম। তিন মাস পরে ওর অবস্থা যখন একটু ভালো, নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এলাম। ভাবছি ওর একটা নাম দেয়া দরকার। পরী নামটা খুব পছন্দ হল। এই নামেই ডাকছি। অবাক করা ব্যপার হল- প্রথম আজ যখন ওকে পরী বলে ডাকলাম ও সোজা আমার ঘরে এসে দাঁড়াল। ওর চুল গুলো বেশ বড় হয়েছে। কিশোরী থেকে এখন অনেকটা তরুণী মনে হচ্ছে। মেয়েটা কি কথা বলতে জানে না? কোন কথা বললে শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়।
আজ সন্ধ্যায় দেখলাম ও গুনগুন করছে। কাছে যেতেই চুপ হয়ে গেল। আমি ওকে চা বানানো শিখিয়েছি কাল কে। আজ কেই অফিস থেকে আসার পরে সে আমাকে চা দিয়ে গেল। মেয়েরা মায়ের জাত বলেই কি এটা সম্ভব? আমাদের কাছে তারা সবসময় রহস্যময়ী হয়ে থাকবে, কিন্তু আজীবন সেবা করে যাবে কোন প্রকার চাওয়া-পাওয়া ছাড়াই।

শুক্রবার ছুটির দিন আর তাই আজ আমি অনেক বেলা করে ঘুমাচ্ছি। হটাত পরী এসে আমাকে ডাকছে- এই, এই জলদি ওঠেন। ঘরে আগুন লেগেছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি ফায়ার অ্যালার্ম বাজচ্ছে। দারোয়ান চলে এসেছে। পরীর রুমে কি করে যেন আগুন লেগেছে। বেচারী ভয়ে নীল হয়ে গেছে। তাকে আস্তে ধীরে শান্ত করলাম। এরপরে দেখি সে অল্প অল্প কথা বলা শুরু করেছে। সন্ধ্যায় শুনলাম তার জীবনের কথা। কেন সে এমন হল। তার বাবা ছিল নেশাখোর দিনমজুর। নেশার টাকা না পেয়ে তার মাকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে। সে ভালো ছাত্রী ছিল। ক্লাস সিক্স থেকে নিজের বৃত্তির টাকা দিয়েই পড়াশুনা করে। কলেজে উঠার পরে এক বর্ষার সময় কোন কাজ না পেয়ে তার বাবার নেশার টাকা পাওয়ার জন্য নিজের ২ বন্ধুর হাতে ওকে দিয়ে দেয়। ওখান থেকে পালাতে গিয়ে কাঁচা রাস্তা থেকে পিছলে পড়ে যায়। এরপরে আর কিছু সে জানে না।

বুঝলাম জীবনের অনেক কঠিন মুহূর্ত সে পার করে এসেছে। কাকতালীয় ভাবে ওর ডাকনাম পরী। সেদিন রাতে সে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াল। আমার মা’র বাড়ি ছিল চিটাগাং এ। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ অনেক বছর পড়ে পেলাম। খাওয়ার সময় আমার চোখে পানি চলে আসল। পরী উঠে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিল। আহারে, এমন ভালবাসা কতোদিন পাইনি। আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, এই মেয়েটা আবার আমাকে জাগিয়ে তুলছে। আমার সব বিষয়ে সে এখন খেয়াল রাখে। আমার ভাল-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সুখ-দুঃখ সব কিছু না বলার আগেই সে বুঝে। কি করে এতো বুঝে কে জানে? কখন বলতে হয়নি আমি কি চাই, কি খেতে পছন্দ করি, কেমন জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই। আমার সব কিছুতেই সে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে পরেছে। মাঝে একবার প্রচন্ড জ্বর আসলো। নিজেই এ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেল, আমার বন্ধুদের ফোন করে ডাকল। প্রতিটা কাজ এতোটাই গোছানো ছিল যে, আমার বন্ধুরাও ওর বুদ্ধির তারিফ করল। বুঝতে পারছিলাম আমরা একজন আরেকজনের পরিপূরক। ধীরে ধীরে ওর প্রতি জন্মানো মায়া-মমতা ভালবাসায় পরিণত হল। আজকাল সে এতো কথা বলে আর এতো ছটফট করে যে আমি অবাক হই এতো চঞ্চলতা কোথায় লুকানো ছিল?

প্রায় এক বছর ধরে একসাথে আছি আমরা। বন্ধু মহলে অনেক কথা হচ্ছে। মাঝে বাবা একদিন ফোন করে অনেক কথা শুনালেন। অনেকে বলতে লাগলো ওর বাড়িতে ওকে রেখে আসতে। কিন্তু ওকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করার ক্ষমতাও আমার ছিল না। আমি জানি ও নিজেও আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে বিয়ে করবো। ওর দিক থেকে কোন আপত্তি থাকার কথা না। বন্ধুদের জানাতে-কেউ রাজী হল, কেউ ভাবল আমি পাগল হয়ে গেছি, কেউ আবার আপত্তি তুলল- নীল, মেয়েটা তার এলাকার ছেলেদের দ্বারা.......! ধুর কার কথায় কি? আমি যখন ডিসিশান নিয়েছি তখন এটাই করবো। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করে আব্বু-আম্মুকে জানালাম। আব্বু এসে নিজে পরী কে দখে গেল। মনে হয় তার পছন্দ হয়েছে। মা কোন ভাবেই এল না। আমি অনেক করে বুঝালাম।

বিয়ের দিন সকালেই সব বন্ধুরা বাসায় চলে এসেছে। পরী মাথা নিচু করে বসে আছে। বেচারী লজ্জায় শেষ। বিকেলে আমি যখন বের হই তখন দেখলাম সে মাত্র লাল টুকটুকে শাড়িটা পরেছে। ইশশ্‌ কি সুন্দর না লাগছে। ইচ্ছা হচ্ছিল গিয়ে গালটা একটু ছুঁইয়ে আসি। কিন্তু না আমার পরী কে এভাবে আমি স্পর্শ করবো না, সে যখন আমার হবে তখনই কেবল তাকে আলতো করে, যত্ন করে ছুঁইয়ে দেখবো। সন্ধ্যায় পরীকে নিয়ে প্রিতি সহ আমার আরো বন্ধুরা কমিউনিটি সেন্টারে আসবে। সন্ধ্যার কিছু আগে প্রিতি ফোন করে জানালো মা এসেছে বাসায়। পরীর সাথে কথা বলছে। আমার খুব ভাল লাগছে এটা শুনে। সন্ধ্যা ৭.৩০ এখনো ওরা আসেনি। সোহেল কে কল দিতে যাবো এমন সময় ও আমাকে ফোন করে শুধু এই টুকু বলল- পরী, United Hospital, Emergency.

ওখানে পৌঁছানোর পরে শুনলাম পরী ICU তে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার জানালো Survive করতে পারবে বলে মনে হয় না। তিনদিন ওর হাতটা ধরে বসে আছি। নানা রকমের যন্ত্রপাতির ভেতরে নিথর ভাবে শুয়ে আছে আমার জল রঙে আঁকা পরী।

প্রিতির কাছে শুনলাম মা প্রায় আধ ঘন্টা ওর সাথে একা কথা বলে। উনি চলে যাওয়ার পরে, পরী কাউকে কিছু না জানিয়ে একা ছাদে চলে যায়। ওখান থেকে লাফ দিয়ে পরে সুইসাডের চেষ্টা করে।

চতুর্থ দিন সকালে মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য ওর জ্ঞান ফিরল। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার জ্ঞান হারালো। বিকেলে কিছুক্ষনের জন্য হসপিটাল থেকে বের হলাম। সন্ধ্যায় গিয়ে শুনলাম জ্ঞান ফেরার পর থেকে ও খুব চিৎকার করছে, যাকে বলে বদ্ধ উন্মাদ। ডাক্তার জানালো ও আর কখনই সুস্থ হতে পারবে না।

চারদিন পরে বাসায় আসলাম। পরী যেখানে পড়ে ছিল সেখানে রক্তের ধারাটা শুকিয়ে গেছে। কাঁচের চুড়ি ওর খুব পছন্দের। বিয়েতে কাঁচের চুড়ি পরবে বলে অনেক গোছা এনে দিয়েছিলাম। ভাঙ্গা কাঁচের চুড়ি এখানে সেখানে পরে আছে। আমি সব যত্ন করে তুলে রেখেছি। পরী সবার সাথে চিৎকার করে, সবসময় তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে রাখতে হয়, নয়তো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। শুধু আমাকে দেখলে একেবারে চুপ হয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি পরী একদিন ঠিক সুস্থ হবে, আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিতেই ওকে সুস্থ হতে হবে।

জোনাক জ্বলা রাত ভালবাসার গল্প

by Foyez Ahmed Saikat
hot bangla girls


আরিয়ান, স্বপ্নবিলাসী এক ছেলে। এই ব্যস্ত শহরের শান্ত এক এলাকার ছোট গলির একেবারে শেষ প্রান্তে তার বাস। আড্ডা, বন্ধু আর টুকটাক পড়ালেখায় চলে তার জীবন। স্বপ্নের দৌড়ে এখনো সে ক্লান্ত সময় কাটায়। প্রায় প্রতিদিনই বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বাসা থেকে বের হয় সে। ফিরে সন্ধার পরপরই। 

তার গলির এক কোনে নতুন একটি একতলা বাড়ি নির্মান হয়েছে। বাড়ির পেছন দিকটি তার গলির দিকে । জানালাগুলো সম্পুর্ণ নীল কাছে ঘেরা। সুন্দর এই বাড়িটি তাকে খুব আকর্ষন করে , অদ্ভুত আকর্ষণ। প্রতিদিন বিকেলে যখন সে গলির পথে বের হয়ে যায় সে ঐ নীল কাচের জানাগুলোর দিকে তাকায়। বিশেষ কোন কারনে নয়। জানালার কাচের মাঝে তার প্রতিফলিত চেহারা দেখার জন্যই তাকানো। মাঝে মাঝে এক দুই মিনিট সময় নিয়ে ঐ জানালার দিকে তাকিয়ে সে তার লম্বা চুলগুলোও ঠিক করে নেয় !!!! এই বাড়িটি নির্মাণ হওয়ার পর শেষ কবে সে তার বাসার আয়নার চেহারা দেখেছিলো মনে নেই!!! কারন প্রায় প্রতিদিনই এক মুহুর্তেই সে তার প্রতিফলিত চেহারা ঐ নীল কাচে দেখতে পারতো।

প্রায় সন্ধ্যায়ই আরিয়ান বন্ধুদের নিয়ে এই ব্যস্ত শহরের কোন এক রাস্তা ধরে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না! কারন পাখিদের মতো তারও যে নীড়ে ফেরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে । একদিন সন্ধ্যায়, বন্ধুদের সাথে রাস্তার ফুটপাত ধরে হাঠতে হাঠতে একটি দু তিন তলা বাড়ীর কাছে এলো। পাশেই অন্ধকারে তারা যা দেখলো তাতে তারা এক স্বপ্নের রাজ্যে প্রবেশ করলো। হাজার হাজার জোনাকি পোকা !!! এতো এতো জোনাকি পোকা এর আগে তারা কখনো দেখিনি!!! এতো সুন্দর দৃশ্য তাদের দু চোখে বিস্বাস করতে কস্ট হচ্ছিলো। কিন্তু হাতে নেয়ার পর তাদের বিস্বাস হলো। আরিয়ান একটি ভাংগা কাচের পাত্র জোগাড় করলো। বাসায় নেয়ার জন্যে তার ভেতর দুটি জোনাক ভরলো। বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে সে দুটি জোনাক নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো। আরিয়ান একা একা বাসার দিকে হাঠছে আর পাত্রের ভিতরের জ্বলন্ত জোনােকর দিকে তাকাচ্ছে........

বাসার কাছেই চলে আসলো আরিয়ান। ঐ সুন্দর বাড়িটির পাশ দিয়ে তার গলির দিকে ঢুকতেই একটা মিস্টি কন্ঠ তাকে পেছন থেকে ডাক দিলো .........
-এই যে শুনুন ?
(পেছন ফিরে আরিয়ানের অবাক হওয়া ছাড়া আর কিছুই রইলো না। কারন ঐ নীল জানালার ওপাশে যে এতো সুন্দরী একটি মেয়ে থাকতে পারে সে কখনো কল্পনাই করে নি। এতো সুন্দর মেয়ে সে এর আগে কখনো দেখে নি। মনে হচ্ছে আকাশের চাদ মাটিতে নেমে এসেছে। আরিয়ান নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আকাশের দিকে তাকালো, না, ঐদিন আকাশে চাদ উঠে নি। সে মনে মনে নিশ্চিত হলো, হয়তো আকাশের চাঁদই নেমে এসেছে তার সামনের নীল কাচের জানালা ধরে !!!!!!)
আরিয়ানের নিস্তব্ধতা দেখে মেয়েটিও অবাক হলো.....মেয়েটি আবার জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছেন?
-হুম...ভালো....আপনি কেমন আছেন?
-এইতো আছি একরকম।
-আপনি কি আমাকে চেনেন?

-হু চিনি। আপনাকে প্রায় ই আমার জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখি। আপনি হয়তো আমাকে দেখেন না। কারন থাই কাচের বাহির থেকে কিছুই দেখা যায় না কিন্তু ভিতর থেকে বাইরের সবি দেখা যায়। তাছাড়া প্রায়ই আপনার চাহনি আমার চোখের উপর পরে।
-আমি দু:খিত। আমি আসলে জানতাম না যে এই নীল কাচের আড়ালে আপনার মতো কেউ থাকেন।
-না। ইট্স ওকে...! বাই দা ওয়ে, আমি ইশিকা। আপনি?
-আমি আরিয়ান ...আরিয়ান মাহমুদ
-আপনার নাম দুইটা নাকি? আরিয়ান, আরিয়ান মাহমুদ?
-না...একটু জেমস বন্ড স্টাইলে বললাম আর কি
-হাতে কি?
-জোনাকি পোকা।
-কোথায় পেলেন?
-পাশের একটা এলাকা থেকে ধরে আনলাম।
- ও আচ্ছা। আমার জোনািক অনেক পছন্দ।
-তাই নাকি?
-হুম।

( মেয়েটির মিস্টি কথা শুনে কাচের মধ্যে জোনাকি দুটি একটু বেশি লাফাচ্ছিলো......হয়তো জোনাকিরাও তার মিস্টি কথায় মুগ্ধ হচ্ছিলো)
মেয়েটি আবারো বললো...
-আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
-হ্যা বলেন।
-জোনাকি দুটি কি আমাকে দিতে পারবেন? পরে আপনি সময় করে ধরতে পারবেন কিন্ত আমি তো আর পারবো না।
-অবশ্যই ....আপনি নিতে পারেন। এই যে নেন। একটু সাবধানে রাখবেন কিন্ত। কাচের জারটি যদি ফেরত দিতে পারেন তবে ভালো হয়, কারন যদি আবার জোনাকি ধরতে যাই তবে কিসে জোনাকি ভরে রাখবো
-ওকে....সমস্যা নেই....আপনি যদি চান তবে এর চেয়ে আরো সুন্দর সুন্দর কাচের জার দিতে পারি।
-না ঠিক আছে .....আমার এই ভাংগাটা ফেরত দিলেই আমি খুশি হবো।
-ঠিক আছে। আমি যাই ...আম্মু ডাকছে। কাল এমন সময়ে যদি আপনি আসেন ভালো হয়....ঝাড়টি ফেরত নিতে।
-ওকে আসবো।
-জোনাকিগুলোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
-ওয়েলকাম।
( ইশিকা নীল কাচের জানালাটা বন্ধ করে ভিতরে চলে গেলো। ইশিকা চলে যাওয়ার পর আরো অনেক্ষন ঐ জানালার পাশে আরিয়ান দাড়িয়ে ছিলো ......অনেক্ষণ .....)

বাসায় ফিরতেই আরিয়ানের প্রচন্ড জ্বরে ধরলো। টানা তিন দিন সে জ্বরের কারনে বাসা থেকে বের হতে পারলো না। এদিকে ইশিকা তার জানালার পাশে আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই তার মন স্থির থাকতে পারলো না। ইশিকা বুঝতে পারলোএকটা অনুভুতি আরিয়ানকে দেখার জন্যে তাকে অস্থির করে তুলছে। কিন্তু সে বুঝতে পারলো না এই অনূভুতিটা আসলে কি। তৃতীয় দিনে তার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ইশিকা কেদেই ফেললো।

চতুর্থ দিনে আরিয়ানের জ্বর কিছুটা কমলো। সে সন্ধ্যার দিকে একটু বের হলো। তার গলা কিছুটা ধরা। মাথায় হালকা বেথাও আছে। রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে এক কাপ কফিওয়ালা চা খেলে হয়তো মাথা ধারাটাও কিছুটা কমবে। অসুস্থতার মাঝেও ইশিকার কথা আরিয়ান ভেবেছে, প্রায় সময়ই তার সুন্দর চেহারাটা আরিয়ানের চোখে ভেসেছে।

ইশিকার জানালার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে লক্ষ্য করলো ইশিকার জানালা খুলা। পর্দা টানানো। তাই ভিতর দেখা যাচ্ছে না। বুঝা যাচ্ছে ভিতরে একটি লাইট জ্বলছে। আরিয়ান হালকা কাশি দিলো। ইচ্ছে করে নয়। জ্বরের সাথে কাশিও ধরেছে তাই। জানালার পাশে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ইশিকা আসলো। আজ তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে.....
-আরিয়ান, কেমন আছো?

( ইশিকার মুখ দেখে মনে হলো অনেক দিন সে ঘুমায় নি..... ইশিকার 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে সম্মোধন করাটাও আরিয়ান লক্ষ্য করলো না। কারন সে আনমনে হয়ে ইশিকাকে দেখছে। আজ তাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। বাসার উল্টো দিকের একটি দু তলা বাসা থেকে আলো এসে ইশিকার চেহারায় পরছে। এতে তার সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। )
ইশিকা আবারো জিজ্ঞেস করলো......
-কেমন আছো ?
-আছি ভালোই....আপনি?
-বেশী ভালো নেই....গত কয়েকদিন কোথায় ছিলে?
-জ্বর ছিলো।
-কি বলো? এখন কেমন? জ্বর কমেছে??
-হ্যা ..এখন জ্বর নেই। গত তিন দিন বিছানা থেকেই উঠতে পারি নি। তাই আপনার সাথে দেখা করতে পারি নি। আই এম সরি।
-সরি কেনো বলছো? তুমি তো অসুস্থ ছিলে। তাছাড়া আমি কিছু মনে করি নি। তবে গত কয়েকদিন তোমার অপেক্ষায় থেকে আমার খুব কস্টে গেছে।

-জোনাকিগুলো কেমন আছে?
-ভালো। ওরা ভালোই আছে। অন্তত আমার থেকে ভালো।
-আমি জোনাকি ধরতে যাবো। কাচের জারটি দিতে পারবেন?
-হুম...অবশ্যই। তবে তোমার ভাঙ্গা জারটি দিতে পারবো না। ঐটা আমার ভালো লেগে গেছে। দুটি জোনাকি আমি ঐটাতেই রেখেছি। ঐটা রাখলে কি তুমি কিছু মনে করবে?
-না...না...কিছু মনে করার প্রশ্নই আসে আসে। তবে জোনাকি আনার জন্য আমাকে আরেকটি জার জোগাড় করা লাগবে।
- তা আর করা লাগবে না। আমি তোমার জন্য নীল রঙ্গের একটি কাচের জার মেনেজ করেছি। তুমি একটু দাড়াও। আমি নিয়ে আসছি।
( ইশিকা জার আনার জন্য ভিতরে চলে গেলো। আরিয়ান সুবোধ বালকের মতো দাড়িয়ে রইলো।)

প্রায় পনেরো মিনিট চলে গেলো...ইশিকা আসছে না। আরিয়ানও দাড়িয়ে রইলো। এই প্রথম ইশিকার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মশার কামড়ও যেন তার কাছে ভালো লাগছে। সময় কাটানোর জন্য আরিয়ান ফেসবুকে ঢ়ূ মারলো। প্রথমেই হোম পেইজে দেখতে পেলো এক মেয়ে রিলেশনশিপ স্টাট্যাস চেইঞ্জ করেছে.....'অমুক' is in a relationship with 'তমুক'। সাথে সাথে সে ফেসবুক এক্সিট করে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো। আর ভাবলো 'এতো মানুষের রিলেশন হয় কিন্তু আমার হয় না কেনো? কেনো??
ঠিক পচিঁশ মিনিট পর ইশিকা আসলো। সে আরিয়ানকে এতক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।

-আমি দুঃখিত আরিয়ান। দেরী হয়ে গেছে। কিছু মনে করবে না। আসলে এটা খুজতে গিয়ে দেরী হয়ে গেলো। এই নাও।
ইশিকা নীল রঙ্গের কাচের জারটা আরিয়ানের হাতে দেয়ার সময় আরিয়ানের হাতে ইশিকার হাত স্পর্শিত হলো। ইশিকা তার হাতের স্পর্শে কিছুটা উষ্ণতা অনুভব করলো এবং বুঝতে পারলো যে আরিয়ানের জ্বর এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু আরিয়ানের কপাল স্পর্শ করে জ্বরের প্রকৃতি বুজার সাহস ইশিকার হলো না।
ইশিকা আরিয়ানকে বললো,
-তুমি কি এখনি যাচ্ছো জোনাকি ধরতে?
- হ্যা ।
-বেশী দেরী করে বাইরে থেকো না। তুমার জ্বর এখনো অনেক রয়ে গেছে।
আরিয়ান ইশিকার কথার সারমর্ম বুঝলো না। শুধু মুচকি হেসে বললো 'আচ্ছা'।
নীল কাচের জারটি পকেটে ঢুকিয়ে আরিয়ান ফুটপাত ধরে হাটা শুরু করলো। আজকে জোনাকি ধরতে তার কোন বন্ধু যাচ্ছে না, সে একাই যাচ্ছে। সে হাঠছে আর ইশিকার কথা ভাবছে। ইশিকার তার প্রতি দূর্বল হওয়া নিয়ে সে ভাবছে। একটি স্বল্প চেনা মেয়ে কেনো তার প্রতি দূর্বল হলো, সে কি পেয়েছে তার মধ্যে, মেয়েটি কি তাঁর প্রেমে পড়তে যাচ্ছে ....এর বেশী কিছু আরিয়ান ভাবতে পারে না।
ভাবতে ভাবতে সে জোনাকিদের কাছে চলে আসলো। আজ জোনাকির আনাগোনা একটু বেশী । সে হাজার হাজার জোনাকি থেকে চারটি জোনাকি নীল ঝারে ভরলো। সে ধীরে ধীরে বাসার উদেশ্যে রওনা দিলো। কিন্তু এর মধ্যেই অদ্ভুত একটি ব্যপার ঘটলো। জোনাকিগুলোর আলো নীল কাচের জারটি আলোকিত করছে, সে লক্ষ্য করলো এই আলোকিত ঝারে একটি কাগজের টুকরো! সে রাস্তার পাশে মৃদু আলো দেয়া একটি ভাঙ্গা ল্যাম্পপোষ্টের নিচে বসে বসলো। জারটি থেকে কাগজের টুকরোটি বের করলো সে। কাগজটি বের করতে গিয়ে জোনাকিগুলো উড়ে চলে গেলো। সে তাদের উড়ে যাওয়া লক্ষ্য করলো না। তার সম্পূর্ণ দৃষ্টি কাগজটির প্রতি। তাতে লিখা..........

আরিয়ান,
'আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার মতামত আগামী দুই দিনের ভিতরে আমাকে জানাও। আমার হাতে সময় খুব কম।
ইতি
ইশিকা।

চিঠিটা পড়ার পর আরিয়ান কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না। এই প্রথম সে বুঝতে পারলো কারো ভালোবাসার উত্তর দেয়া আসলেই কঠিন অনেক কঠিন । সে বুঝতে পারলো তার হাত পা কাপছে, গলা ধরে আসছে , জ্বর বাড়ছে। তখনো সে বসে আছে ভাঙ্গা ল্যাম্পপোস্টটির নিচে। কিন্তু একটি চিন্তা আরিয়ানকে খুব খুব চিন্তিত করে তুলছিল। ইশিকার হাতে সময় খুব কম কেনো? তার কি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? সে কি মারা যাচ্ছে? তাহলে কেন, কেন তার হাতে সময় খুব কম?? এসব ভাবনা আরিয়ানকে পাগল করে তুলছিল। অনেক্ষণ পর আরিয়ান তার বাসায় ফিরলো।

পরদিন আরিয়ান ইশিকার সাথে দেখা করার জন্য তার জানালার পাশে অনেক্ষণ দাড়িয়ে রইলো কিন্ত ইশিকার দেখা সে পেল না। সারা দিনই সে চেস্টা করলো কিন্ত তা আর ফলপ্রসু হলো না। তার চিন্তা বাড়তে থাকলো। ইশিকার কিছু হয়নি তো??
আরিয়ানের সারা দিন অপেক্ষা করার পর আর অপেক্ষা করার ধৈর্য্য হলো না।
সন্ধ্যার সময়, আরিয়ান সাহস করে ইশিকার বাসায় গেলো। কলিং বেল টিপতেই এক মধ্য বয়সী লোক দরজা খুললেন.......
-আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?
-ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আছি ভালো। আসো,ভিতরে আসো।
( ইশিকার বাবা , আরিয়ানের প্রায় সময়ই তার সাথে নামাজে দেখা হতো ....তাছাড়া পাড়ার মুরব্বী হিসেবে উনাকে সে সম্মান করতো। তাই ভদ্র ছেলে হিসেবে তার সাথে আরিয়ানের একটি অদৃশ্য সুসম্পর্ক ছিলো। কিন্তু আরিয়ান জানতো না তিনিই ইশিকার বাবা)
-তা বাবা কোন দরকার?
-না আংকেল এমনিতেই আসলাম। গত কয়েক দিন আপনাকে নামাজে দেখি নি। ভাবলাম আপনি অসুস্থ নাকি। তাই খোঁজ নিতে এলাম।
-না। আমি ঠিক আছি। আমরা মানে আমি, তোমার আন্টি আর আমার দুই মেয়ে কাল আমেরিকা চলে যাচ্ছি। সকালে ফ্লাইট। তাই গত দুই দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। তুমি বসো আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর কোন দিন তোমাদের সাথে দেখা হবে আল্লাহ ই জানেন।
এই বলে ইশিকার বাবা ভিতরে চলে গেলেন।

(আরিয়ান বসে আছে সোফায়। সে এখন বুঝতে পারলো কেন ইশিকা চিঠিতে বলেছিল যে তার কাছে সময় খুব কম। ইশিকা দূরে চলে যাচ্ছে ভেবে আরিয়ানের বুকের ভিতরটা হু হু করে কেদে উঠলো। পাচ ছয় মিনিটের মধ্যেই ইশিকা চা নিয়ে এলো। ইশিকার চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। হয়তো খুব কেঁদেছে। কিন্তু এই কান্না আরিয়ানের জন্য কি না তা সে আন্দাজ করতে পারলো না। )
-কেমন আছো?
-ভালো। আপনি।
-আমাকে আপনি করে বলবে না প্লিজ। তুমি করে বলো। আর আমি বেশি ভালো নেই। কাল চলে যাচ্ছি।
-আচ্ছা। তুমি করে বলবো। কত দিনের জন্য যাচ্ছ?
-সারাজীবনের জন্য।
-আর একবারও আসবে না?
-কার জন্য আসবো। পরিবারের সবাই তো চলে যাচ্ছি। চা নাও। ঠান্ডা হয়ে যাবে।
-চা তুমি বানিয়েছ?
-হুম। কন্ট শুনেই বুঝেছি তুমি এসেছ। তাই নিজ হাতেই তুমার জন্য চা বানালাম। চা কেমন হলো?
-খুব ভালো হয়েছে। আজ সারাদিন জানালার পাশে তোমাকে খুজেঁছি। কোথায় ছিলে?
-শপিং এ ছিলাম।
দু জনের কথা থেমে গেলো। বলার মতো কিছুই ছিলো না। ইশিকার চোখ দুটি ছল ছল করছিল। যেন এই মাত্রই অস্রু বর্ষীত হবে। ইশিকা চাচ্ছিল তার ভালোবাসার উত্তর যেনো আরিয়ানের দিক থেকে আসে। কিন্ত আরিয়ান ও ছিল নিস্তব্ধ। মেয়েদের হয়তো বৈশিষ্ট্য ই তাই। কাউকে একবার মনের কথা মুখ ফুটে বলে ফেললেও দ্বিতীয়বার তা উচ্চারণ করে না। তারা চায় বিপরীত দিক থেকেও সম্মতি আসুক। প্রকাশ ঘটুক ভালোবাসার। আরিয়ানের নীরবতা দেখে ইশিকা কাদতে চাইলো। কিন্তু পারলো না।

আরিয়ান উঠে দাড়ালো। আংকেল, আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ইশিকার কানে মৃদু স্বরে বললো 'একটু ছাদে আসতে পারবে? কিছু কথা আছে।' ইশিকা মৃদু হাসি দিয়ে সম্মতি জানালো।
আরিয়ান ছাদে দাড়িয়ে আছে। আজ হালকা বাতাস বইছে। সুন্দর চাদটা মেঘে ঢাকা পড়েছে। ছাদের উত্তর কোনে হলুদ রঙ্গের বাতিটি নিভু নিভু করছে।
প্রায় পাচ মিনিট পর ইশিকা এলো।
আরিয়ান অন্য দিকে তাকিয়ে ইশিকার সাথে কথা বলছে .....
-আরিয়ান, গতকাল জোনাকি ধরেছ?
-না।
-কেনো?
-ঝারের ভিতরে তোমার ভালোবাসা ধরতে গিয়ে জোনাকিরা পালিয়ে গেছে। তুমি কি সত্যি আমাকে ভালবাসো, ইশিকা?
-ইশিকা বললো হ্যা, তুমি???
আরিয়ান ইশিকার হাত ধরলো ......তার কানের কাছে মৃদু স্বরে বললো " আই লাভ ইউ ইশিকা "
আরিয়ানের উত্তর শুনে ইশিকা আনন্দে কেদে দিলো।
-কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে, আমেরিকা গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না তো??
-আমার প্রান থাকতে তোমাকে আমি ভুলব না। আর তোমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকবেই। প্রতি বছর একবার তোমার জন্য আমি দেশে আসবো। কিন্ত তুমি আমার হাতে হাত রেখে কথা দাও আমাকে ভুলবে না?
আরিয়ান উত্তর দিলো.....
-না কখনোই না।
-আমি তোমাকে অনেক মিস করবো আরিয়ান।
এই বলে ইশিকা আরিয়ানের হাতে তার আমেরিকার মোবাইল নাম্বার আর ফেসবুক আইডি লিখিত একটি কাগজ ধরিয়ে দিলো এবং বললো...
-আজই এই আইডি তে আমাকে এড করে নিবে। এখন থেকে ফেসবুকে প্রেম চলবে তোমার সাথে।
ইশিকা 'বাই' বলে চলে গেলো.......।

রাত বেশী হয় নি...আরিয়ান তার বন্ধুদের কল দিলো...."তোরা কই? তাড়াতাড়ি বের হ...আজ পার্টি হবে পার্টি...সবাইরে খবর দে....যা ইচ্ছা খাবি...সব বিল আমি দিমু ....কজ আই এম ইন লাভ...."
এখন ফেসবুকের কল্যাণে আরিয়ান আর ইশিকার প্রেম পুরোদমেই চলছে। ইশিকা বছরে একবার এক মাসের জন্য দেশে আসে....তারা দুজন পুরো এক মাস ঘুরাঘুরি করে এবং মাস শেষে ইশিকা আবার চলে যায়। এভাবেই তাদের 'নীল জানালা ও জোনাক পোকার প্রেম চলছে......চলবে....।
আজকাল আরিয়ান একটি গান খুব বেশি শুনে.......
''That you are not alone
I am here with you
Though you're far away
I am here to stay
But you are not alone
I am here with you
Though we're far apart
You're always in my heart''

ইমরান ও লিপির ভালবাসার গল্প

girl photoby ফরহাদ আহমদ নিলয়

লিপিকে ওর মা বাবার কাছে দিয়ে ইমরান নিজের বাড়িতে ফিরে যায় । লিপির আব্বা তো মহা ক্ষেপা ! মেয়েকে কিছুতেই ফিরিয়ে নেবেন না । এমন মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল !
তবে বাড়ির বাকি মুরুব্বিরা তাকে বুঝিয়ে শান্ত করলেন । মেয়েকে থাকতে দিতে রাজি হলেন ঠিকই তবে সাথে ছোট একটি শর্ত জুড়ে দিলেন । বাড়িতে থাকতে হলে লিপিকে কাজ করে খেতে হবে । অর্থাত্‍ ঘরের মেয়ের মত সে আর থাকতে পারবে না, থাকতে হবে কাজের মেয়ের মত ।
লিপি হাসিমুখেই সব মেনে নিল । উল্লেখ্য, লিপি তখন পাঁচ মাসের প্রেগনেন্ট !
এদিকে ইমরানেরও একই অবস্থা । বাপে পারলে তো তখনই ত্যাজ্য করে দেয় ! তবে চাচার বুঝিয়ে কোন রকমে তাকে ঠান্ডা করলেন । তবে এমন ছেলেকে তিনি কোনদিনও ক্ষমা করবেন না । শুধু করুণা করে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত বাসায় থাকতে দিয়েছেন । এরপর তার নিজের রাস্তা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে ।
ইমরান হাঁফ ছাড়ল । অন্তত পরীক্ষা পর্যন্ত তো নিশ্চিত । তবে সমস্যা এরপরও পিছু ছাড়ল না । ইমরানদের ঘটনাটা পুরো উপজেলায় প্রচার হয়ে গিয়েছিল, যার কারণে স্কুলের রেপুটেশান যথেষ্ট খারাপ হয় । হেডস্যার ইমরান-লিপি দুজনকেই স্কুলে অবান্ঞ্চিত ঘোষণা করলেন । ইমরানের পরীক্ষা দেয়া সংশয়ে পড়ে যায় ।
আমরা, স্কুলের বাকি শিক্ষকরা, এলাকার চেয়ারম্যান সহ বেশ কয়েকজন হেড স্যারকে অনুরোধ করলাম, তাকে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য । সে না হয় একটা ভুল করেছে, কিন্তু এর জন্য তার জীবনটা যাতে নষ্ট না করে দেয়া হয় । অবশেষে পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে তাকে শুধু এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয় । কিন্তু স্কুল বাউন্ডারিতে তার প্রবেশ আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ।

ইমরান শাস্তিটা হাসিমুখেই মেনে নেয় । পরীক্ষা দিতে পারছে এজন্যই সে খুশী ! ইমরান আমাদের কাছে তখন রীতিমত হিরো ! এই বয়সেই তার একটা বউ আছে ! একদম সত্যিকারের বউ ! অথচ আমরা ঠিকমত একটা প্রেমও করতে পারি নি ! ইমরানের কাছ থেকে আমরা তার অভিসারের গল্প শুনি, তার অভিজ্ঞতার গল্প শুনি । কিভাবে সে ওয়ার্ড কমিশনারকে টাকা খাইয়ে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ বানালো, কিভাবে বিয়ে করে কাবিন রেজেস্ট্রি করল, কিভাবে পালিয়ে রাঙামাটি গেল, সেখানে ভাই-বেরাদার বানিয়ে ছয় মাস থাকলো.... সেসব গল্প, হাজারো গল্প । পরীক্ষা শেষ, হাতে প্রায় দুই মাসের মত ছুটি পাওয়া গেল । আমরা যখন ছুটি কিভাবে কাটাবো, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো, কিসের কিসের কোর্স করব এইসব প্লান করছি, ইমরান তখন বাকি জীবনটা কিভাবে কাটাবে তার কঠিন হিসাব কষায় ব্যস্ত । দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল । পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল । আমরা খুশী, ইমরানও খুশী । আমাদের খুশির কারণ একটি, তবে ইমরানের খুশীর কারণ দুটি ! আমরা খুশী কারণ পরীক্ষা এ+ পেয়েছি । ইমরান খুশী কারণ সে পরীক্ষায় পাস করেছে এবং একই সাথে মেয়ের বাবা হয়েছে !!!

উন্নত শিক্ষার নাম করে গ্রাম ছাড়লাম, শহরের কলেজে এসে ভর্তি হলাম । এখানে নতুন নতুন বন্ধু জোটালাম । ইমরানের কোন খবর রাখিনি । প্রয়োজনবোধও করিনি । এভাবেই কেটে গেছে প্রায় তিন বছর । শহরে পড়তে এসে যে অনেক কিছু করে ফেলেছি এটা ভাবা ভুল হবে । আসলে কিছুই করতে পারি নি । কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাইনি । একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ই.ই.ই পড়ছি, বাপের কষ্টে উপার্জনের টাকা জলে ফেলছি ! এরই মাঝে একদিন ইমরানের সঙ্গে দেখা । মেয়েকে কাঁধে নিয়ে বাজার করে বাড়ি ফিরছে । তিন বছরের একটি মেয়ে আছে ওর !! কি অদ্ভুত !

আমাকে দেখেই পুরানো বন্ধুর মতই বুকে টেনে নিল । জোর করে ধরে বাসায় নিয়ে গেল । লিপিকে দেখলাম, প্রায় চার বছর পর । সেদিন পরীক্ষার হল থেকে বেরুনোর পর তার সাথে আর দেখা হয় নি ।
একটা মানুষ চার বছরে কতটা পরিবর্তন হতে পারে লিপিকে না দেখলে সেটা কখনোই বুঝতাম না । আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে । সবচেয়ে বড় ব্যাপার মেয়েকে থেকে সে একজন নারী হয়েছে, পরিপূর্ণ নারী !
কথা বলতে বলতে কে এখন কোথায় আছি এসব ব্যাপারও চলে এল । নিজের সম্পর্কে জানালাম, ওদের সম্পর্কেও জানলাম । শুনতে শুনতে চোখ কপালে উঠে গেল !

কবিরহাট সরকারি কলেজে ইমরান এখন ইংরেজীতে অনার্স করছে । পাশাপাশি একটা কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করে । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ ব্যাচ স্টুডেন্ট পড়ায় । ইংলিশ এবং ম্যাথ, ক্লাস সিক্স টু টেন পর্যন্ত । বাজারে একটা ফার্মেসীও খুলে বসেছে । সন্ধ্যার পর সেখানে বসে । এদিকে লিপি পরের বছর উন্মুক্ত থেকে এসএসসি পাশ করে । সে এখন একটি প্রাইভেট পলিটেকনিকে কম্পিউটার ইন্জ্ঞিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করছে । সব শুনে হিংসায় চোখ ছোট হয়ে এল । আমাদের সাথেরই ছেলে, অল্প বয়সে পালিয়ে বিয়ে করায় আমরা সবাই ভেবেছিলাম তার লাইফ বুঝি এখানেই শেষ, সেই ছেলেরই এখন মাসিক ইনকাম আপ টু ত্রিশ হাজার ! আর আমাদের এখনো মাস শেষে আব্বার কাছেই হাত পাততে হয় ।

তবে হিংসা করতে পারলাম না । এরপর যে কিছু কঠিন সত্যেরও মুখোমুখি হতে হল !
আমরা সবাই এলাকা ছাড়লেও সে লোকাল কলেজেই ভর্তি হয় । বাপ তাকে বাড়ি ছাড়া করে । বউ আর দুই মাসের বাচ্চা নিয়ে খালি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে । মাসে চারশো টাকা ভাড়ার একটা ঘরে উঠে । ভাড়ার এমাউন্ট শুনেই বোঝা যায় ঘরটা কেমন হতে পারে ! ছয় মাস রাজমিস্ত্রির হেল্পারের কাজ করে । দশটা ইট মাথায় নিয়ে ছয় তলার উপর উঠতে হত । কোন রেলিং ছিলনা সিঁড়িতে । একটু এদিকে সেদিক হলেই আর দেখতে হত না ।

পুরো দিন মাথায় করে ইট টানত বলে রাতে প্রচন্ড মাথাব্যথায় ছটফট করত । বেশীর ভাগ সময়ই ঘরে খাওয়ার কিছু থাকত না । মেয়েটা মায়ের বুকের দুধ পেত না । সারাদিন কাঁদত । মা-মেয়ে দুজনেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায় । সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে রাতভর কাঁদত । দুহাত তুলে স্রষ্টার কাছে সাহায্য চাইত তার মেয়েটার জন্য । স্রষ্টা তাকে নারাজ করেনি । অবশেষে একদিন মুখ তুলে চাইলেন । লিপির এক মামা, ভাগ্নীর এই দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন । তিনি তাদের শেল্টার দিলেন । ইমরানকে কিন্ডারগার্টেনের চাকরিটার ব্যবস্থা করে দিলেন । লিপিকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলেন । ধীরে ধীরে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতে লাগল । দুঃসময় কে পিছনে ফেলে অবশেষে সুখের দেখা পেল, যে সুখের জন্য দুজনেই ঘর ছেড়েছিল ।

ইমরান আর লিপিকে যতই দেখি আমি ততই অবাক হই । তারা কি ছিল, কি করেছিল এটা মোটেও বড় ব্যাপার নয় । তারা এখন কি সেটাই মূখ্য বিষয় । ইমরান একজন দায়িত্ববান স্বামী, একজন আদর্শ বাবা । লিপি একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী, একজন আদর্শ মা । ঘর আলো করে তাদের ফুটফুটে এক মেয়ে- আর কি লাগে জীবনে ? প্রাণ খুলে দোয়া করি তাদের জন্য । যে দুঃসহ অতীতকে তারা পিছনে ফেলে এসেছে তা যেন কখনো তাদের আর তাড়া না করে । তাদের ভবিষ্যত দিনগুলো যেন অনাবিল প্রশান্তিতে ভরে উঠে ।

(সমাপ্ত)
অপটপিক ১: সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্পটি রচিত । কবিরহাট সরকারী কলেজে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের (ইংরেজি সাহিত্য) ছাত্র ইমরান । চাইলেই কেউ তার খোঁজ করে জীবন সংগ্রামের সাহসী এই যোদ্ধাকে একটি স্যালুট দিয়ে আসতে পারেন ।

অফটপিক ২: ইমরানের সাথে আমার সরাসরি কখনো দেখা হয় নি । তবে তার কতা এত্ত বেশী শুনেছি যে তাকে আর অচেনা মনেই হয় না । আমার খুব ইচ্ছা তার সঙ্গে একবার সরাসরি দেখা করবো ।

অফটপিক ৩: ইমরানের কাহিনী থেকে আমরা কয়েকটি শিক্ষা নিতে পারিঃ
১,কথা দিলে কথা রাখতে হয় ।
২, কখনো সাহস হারাতে নেই ।
৩, ভাগ্য সবসময় সাহসীদেরই ফেবার করে ।
৪, লক্ষে অটুট থাকলে বিজয় সুনিশ্চিত ।
৫, লাইফের সকল সিদ্ধান্তই খুব ভেবে চিন্তে নিতে হয় ।
৬, একবার কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে সেটা ভুল হোক শুদ্ধ হোক সেটা নিয়ে আফসোস করার কোন মানে হয় না । সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সাহসের সাথে মোকাবেলা করে যেতে হয় ।

অপটপিক ৪: সব কথার মূল কথা হচ্ছে ইমরান-লিপির এই কাজটিকে আমি কখনো সাপোর্ট করি নি । তারা এখন যে অবস্থানে আছে অনেক ভাল আছে । কিন্তু এমনটাতো নাও হতে পারত । দুটো জীবন খুব সহজেই নষ্ট হতে পারত । সবাই তো আর ইমরান না । শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সাহস সবার থাকে না । মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলা মানেই অতলে তলিয়ে যাওয়া । জীবনটা তো আর ছেলেখেলা নয় 

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

তোমায় নিয়ে হৃদয়ে আমার হাজার সপ্ন আঁকা

premer photos।। ভালবাসার সাইড এফেক্ট ।।
by Ahnuf Sunvee

পদার্থবিজ্ঞানের মোটা বইটা হাতে নিয়ে আপনমনে হাটছি । মনে মনে নিউটন , আইনস্টাইন , ফ্যারাডের সূত্রগুলো আওড়াচ্ছি আর ঐ ব্যাটাগুলোর চোদ্দগুষ্টি উদ্দার করছি । একটু পর স্যারের বাসায় পরিক্ষা । অথচ যা পড়েছি সবই ভুলে গেছি প্রায় । হটাত্‍ ঠাস্ করে মাথার পিছনে কে যেনো থাপ্পড় দিলো । আমার তখন মেজাজ এমনিতেই গরম । তার উপর মাথার মধ্যে এতো নিখুঁত চপোটাঘাতের পর মগজের টেম্পারেচার গলনাংক থেকে স্ফুটনাংক পৌছে গেলো ।

দাড়িয়ে গেলাম । হাতের মুঠো পাকিয়ে , দাতে দাত চেপে ঘুরেই একটা ঘুষি দিতে গেলাম থাপ্পড়ের অসভ্য মালিককে ।কিন্তু আমার হাত মাঝপথেই থেমে গেলো । আমার সামনে নিশা দাড়ানো । ভারি পাওয়ারের চশমার আড়াল থেকে বড় বড় মাথাময় চোখগুলো দেখতে পেলাম । সেখানে তখন ভয় খেলা করছে। হাত নামিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললাম "এখনই তো মাইর খাইতি । তারপর হসপিটালে নিয়ে যেতে হতো আমার ।" নিশা দ্বিগুন ঝাঝালো কন্ঠে বললো "তো কি করবো ? ধ্যান্দা পোলা । কয়বার ডাকছি জানিস ! কি চিন্তা করিস এতো ?"

আমি তখন বিমর্ষ কন্ঠে বললাম "আরেহ্ বলিস না । ঐ ব্যাটা নিউটন , আইনস্টাইনের সূত্র পড়তে পড়তে লাইফটা হেল হইয়া গেলো । টাইম মেশিন থাকলে অতিতে গিয়া সবডিরে খুন করতাম ।" আমার কথা শুনে নিশা হেসে কুটিকুটি । হাসতে হাসতে ওর চোখে পানি এসে গেলো । হাসলে ওকে বেশ ভালো লাগে । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে ।

ইন্টারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি । নিশাটাও ভর্তি হয়েছে এখানে । বুয়েটে টিকার পরও কেনো সে এখানে ভর্তি হলো ঐ রহস্যের সমাধান হাজার ভেবেও খুঁজে পেলাম না । আমাদের আড্ডার প্রধান ছিলো নিশা । আমার বরাবরই এসব আড্ডা ভালো লাগে না , তার চেয়ে নিজের জগত্‍ নিয়ে থাকতেই বেশি ভালো লাগে । কিন্তু নিশার জন্য আড্ডাতে বসতেই হয় । কত যে ফন্দি করি পাগলিটার হাত থেকে বাচার ! কোন লাভই হয় না । একেবারে গ্রিক বীর হারকিউলিসের মতো দুর্নিবার নিশা ।

একবার বাসায় শুয়ে আছি । ও বার বার ফোন দিচ্ছিলো । আমি ইচ্ছা করে ফোন রিসিভ করিনি ।
নিশা বাসায় আসে । আম্মাকে জিজ্ঞেস করে "আন্টি সিয়াম কই ?" আম্মা হাসিমুখে দেখিয়ে দেন আমার রুম । আম্মা আব্বা নিশাকে এত্তো আদর করে আর সাপোর্ট করে যে মাঝে মাঝে কনফিউজ হয়ে যাই আসলে তাদের সন্তান আমি ! নাকি নিশা !

নিশা রুমে ঢুকে অনেকক্ষন ডাকাডাকি করে আমি । আমি তখন ভান করে আছি ঘুমানোর । নিশা একের পর এক ঝাড়ি দিচ্ছে । আর আমি প্রতিজ্ঞা করেছি আজকে আর যাই হোক ঘুম থেকে উঠবো না। একটু পর নিশা চলে গেলো । আর আমি তখন খুশিতে আটখানা । এখন আমার ছাম্মাকছাল্লো টাইপের নাচ দিতে ইচ্ছা করতেছে ।

মুখে ৩৬০ ওয়াটের বাল্বের আলোর মতো হাসি ফুটে উঠলো । হটাত্‍ ছপাত্‍ করে আমার সারা শরীরে পানি পরলো । আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম । তাকিয়ে দেখি নিশা একটা বালতি নিয়ে দাবাং স্টাইলে দাড়িয়ে আছে । ঐ দিন আমার কপালে নানান দুর্ভোগ জুটেছিলো । থাক ওসব না বলাই ভালো । তারপর থেকে আমি একেবারে ভালো ছেলে হয়ে গেছি । নিশার সব আজাইরা কাজে আমাকে হাজির দেখা যেতো।

এভাবেই চলছিলো সব । হটাত্‍ একদিন শুনি নিশার বাবা মারা গেছেন । খবরটা শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গেলাম । আঙ্কেল আমাকে ভীষন আদর করতেন । আব্বা আম্মাকে নিয়ে দ্রুত তাদের বাসায় গেলাম । গিয়ে দেখি সেখানে অনেক মানুষ । আঙ্কেলের লাসটা যেখানে রাখা তার পাশেই আন্টি আর নিশা আহাজারি করছে । আম্মা দ্রুত গিয়ে নিশার আম্মুকে ধরলেন । নিশাকে ওভাবে কখনো কাদতে দেখি নি।

ঐ দিনই প্রথম নিশার জন্য আলাদা একটা টান অনুভব করেছিলাম । মনের গহিনে নিশা যে তার নিজের স্থান করে নিয়েছে সেই দিনই প্রথম খুঁজে পেলাম । ঐ দিন আঙ্কেলকে কবর দিয়ে আসার পর নিশা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলো । তার দিকে এগিয়ে গেলাম । প্রাণচন্বল নিশার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম না ঐ নিশার মধ্যে । বুকের ভিতর একটা বিশাল শূন্যতা টের পেলাম সেদিন । নিশার কাছাকাছি যাওয়ার পরই , সে হু হু করে কেঁদে জড়িয়ে ধরলো আমাকে । শক্ত করে ধরে রইলো আমাকে । আমি সেদিন হতভম্ব হয়ে যাই । নিশাকে পাল্টা জড়িয়ে ধরার সাহস ছিলো না । কষ্ট হচ্ছিলো খুব ।

তারপর পুরো এক মাস নিশার সাথে দেখা করিনি । ওকে কিভাবে বলবো যে ওকে আমি ভালবাসি । দোটানায় আছি । ও কি আমাকে ভালবাসে ? এই ছাইপাশ চিন্তা করতে করতে এক মাস চলে গেলো । নিশা তখন আঙ্কেলের মিলাদ আর বাসার টুকটাক কাজ নিয়ে ব্যাস্ত ছিলো । আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে লাগলো আবার । আরো কয়েকমাস পর । নিশা তখন পুরোপুরি স্বাভাবিক । আমি অপেক্ষায় আছি ১৪ই ফেব্রুয়ারির । ঐ দিন যেভাবেই হোক ওকে বলবই বলবো । ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভোরে ওকে ফোন করে টিএসসিতে আসতে বললাম । ও জানতে চাইলো কেনো । কিন্তু আমি কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম ।

দাড়িয়ে ছিলাম । দূর থেকে দেখলাম নিশা আসছে । লাল সাদা একটা শাড়ি পরেছে সে । অপূর্ব লাগছে তাকে । পান্জাবিটা ঠিক করে নিলাম । ফুলগুলো আড়াল করে এগিয়ে গেলাম তার দিকে । তার কাছাকাছি গিয়ে তাকে অবাক করে দিয়ে একটা হাটু গেড়ে তার সামনে বসলাম । তারপর গোলাপ গুলো তার সামনে ধরে বললাম . .

"তোমায় নিয়ে হৃদয়ে আমার হাজার সপ্ন আঁকা , তুমি আমার সেই রাজকণ্যা , সপ্নে যাকে দেখা ।
তোমার জন্য হৃদয়ে আমার অনেক ভালবাসা , যেথায় আছে একটা ঘর , সুখ আনন্দে ঠাসা ।
জড়িয়ে নাও আপন করে এই আমাকে , হৃদয় দিয়ে বলছি তোমায় , ভালবাসি তোমাকে ।"

আবার বুক তখন ধুকপুক করছে । নিশার হাস্যজ্জ্বল মুখটা থেকে হাসি মুছে গেলো । আর আমার হৃদপিন্ড একটা বিট্ মিস করলো । নিশা কিছু বলছে না । চুপ করে দাড়িয়ে আছে । আমি আর কিছু না বলে উঠে দাড়ালাম । ঘুরে হাটা ধরলাম । হটাত্‍ ঠাস্ করে মাথায় থাপ্পড় মারলো কে যেনো । মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেলো । ফুলসহ মুঠো এক করে ঘুরেই ঘুষি দিতে গেলাম । মাঝপথেই থেমে গেলো আমার হাত । নিশা দাড়িয়ে আছে । তার চোখে অশ্রু মেশানো হাসি খেলা করছে ।

আমার পান্জাবির কলার ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে বলল "টানা ৫ বছর লাগিয়েছিস কথাটা বলতে । আর এক বছর গেলে তোকে খুন করতাম আমি ।" আমি তখন খুশি হব কি ! বাতাসের অভাবে খাবি খাচ্ছি । উফ্ কলারটা এত্তো জোরে ধরেছে ! একেই হয়তো বলে ভালবাসার সাইড এফেক্ট !

ভালবাসার সুখ পাখি

meyeder photoby- Khusir Rodro

'নাহিদ' - সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। সারাদিন কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই ডাকে। নেকা মেয়ে গুলা যেন নাহিদ বলতেই অজ্ঞেন। অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার।

বি.বি.এ -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি। নাহিদ আমার ১বছর এর সিনিয়র। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ও হঠাৎ একদিন আমকে প্রপস করে বসলো। কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। পেছন ঘুর ঘুর করে বিরক্ত করার ছেলে ও না। কোথা থেকে যেন আমার নাম্বারটা যোগাড় করেছে। প্রতিদিন রাতে শুধু একটা করে মেসেজ করত কখনো ফোন করেনি। কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো পড়তাম প্রতিদিন। ব্যাপারটা ধীরে ধীরে ভাল লাগতে শুরু করলো। মনের আড়ালেই কখন ভাল লাগার বীজ বপন করে বসে আছি বুজতেই পারিনি।

পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল। পরদিন ভার্সিটিতে মনে মনে ওকে খুজতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি সিমির খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে। বুকের ভেতর চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। কিছু চিন্তা না করেই সবার সামনে বলে দিলাম ওকে ভালবাসার কথা। সাথে সাথে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পেছন থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে দিল। খানিকটা অবাক হলাম। পরে জানতে পারলাম মেসেজ না করা, আমাকে জেলাস করা, পুরোটাই সাজানো ছিল। আর তার প্রধান হাতিয়ার ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী সিমি। চোখের জলটা থামাতে পারলাম না। সবার সামনেই কেদে দিলাম। একটা কান্না মানুষকে এতটা সুখ দিতে পারে জীবনে প্রথম অনুভব করলাম।

শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট সুখের সাত রঙ মিশিয়ে একি স্বপ্ন দুটি হৃদয় দিয়ে আঁকা। ও আমাকে সুখ পাখি বলে ডাকে। ওর পাগলামি গুলা যেন একি সাথে আমকে কাদাই আবার হাসাই। অদ্ভুত একটা অনুভুতি।

আমকে নিয়ে ওর গান। স্বপ্নের ভেলায় চড়ে তারার দেশে যাওয়া। হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা। মাঝ রাতে আমকে দেখার নাম করে আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা। ক্লাস ফাকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া। একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন করে গড়া। সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার একটা পৃথিবী সুখের স্বর্গ ও।

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। ওর বি.বি.এ শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম। যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত সেটাই হল। আমার আর নাহিদ এর সম্পর্কের কথাটা বাসাই জানা জানি হয়ে গেল।

আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সহেল ভাইয়াকে বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর এর রিলেশন বিয়ের এক বছরের মাথাই ছাড়াছাড়ি। এ ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক। সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। ফোনটাও আব্বুর কাছে। এক কথায় বন্দি আমি। আপুর ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পরেছিল এখনো সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু বলা মানে তাকে মৃত্যুর পথে একধাপ এগিয়ে নেয়া। কিছুই বলতে পারলাম না।

এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে। নিঃশব্দে কাদা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই আমার।

এদিকে নাহিদ পাগল এর মত চেষ্টা করছে আমার সাথে যোগাযোগ করার। কোন উপায় না পেয়ে সিমিকে আমার বাসায় পাঠালো খোজ নেবার জন্য। মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে। এত বড় অন্যায় কি করে করবো আমি। কি করে কাদাবো এই মানুষটাকে। ঠিক করলাম পালিয়ে যাব। সবাইকে ফাকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বেরও হলাম। কিন্তু আপুর চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর কষ্ট লজ্জা সব কিছুর ছবিটা চোখের সামনে আবারও ভেসে উঠলো। পারলাম না। একটা ফোন ফ্যাক্স এর দোকান থেকে কাদতে কাদতে নাহিদ কে সরি বলে অর্ধেক রাস্তা থেকেই আবার বাসাই ফিরে আসলাম। এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার সবাই চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমকে কোন দিন ধমক দিয়ে কথা বলিনি সে আব্বু আমার গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাদলাম। কান্নাই যেন একমাত্র সঙ্গী এখন। না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে না পারছি নাহিদকে কাদাতে।

পরদিন সকালে রাজ্জাক আঙ্কেল এর একটা ফোন আমার জীবনটাতে একই সাথে মুক্তি আর পঙ্গুত্ব দান করলো। ডাক্তার এর মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। বিয়েটা ভেঙ্গে গেল। কাঁদবো না মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলব বুজতে পারলাম না। শুধু স্থব্দ হয়ে থাকলাম।

নাহিদ এর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ আমার নেই। সিমির মাধ্যমে ও সব কিছু জানলো। আর সব জেনে শুনেই ওর আব্বুকে দিয়ে আবারও বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল আমার বাসাই। প্রথম বার ফিরিয়ে দিলেও এবার আর পারল না। কারণটা সহজ। আব্বু আম্মু স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা লজ্জিত হয়ে নাহিদ এর এক আকাশ সমান ভালবাসার কাছে হার মানল। পাওয়া না পাওয়াই আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের আর সুখের দিন এটা।

পরদিন নাহিদ এর অনুরোধেই আব্বু আম্মুর অনুমতি নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলাম । কথা বলার শক্তিটা যেন হারিয়ে ফেলছি। কাপতে কাপতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

ও কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল- আমি শুধু তোমাকে চাই হেনা আমার আর কিচ্ছু দরকার নেই বিশ্বাস করো আমার শুধু তোমাকে হলেই চলবে। বল আমকে আর কখনো ছেড়ে যাবা নাতো ?

উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না। বুক ফেটে কান্না এলো। ওর এই সীমাহীন ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগণ্য। কোথাই রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা। কি দিয়ে শোধ করবো আমি। সুখের কান্নাটা আর থামাতে পারলাম না। চোখের সামনে থাকা স্বর্গটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাদলাম। ও হাত দিয়ে চোখের জ্বল টুকু মুছে দিল।

ওকে হয়তো বাবা হবার সুখটা কোন দিনও আমি দিতে পারবো না। তবে আমার শেষ নিঃশ্বাসটা পর্যন্ত এক বিন্দু কষ্ট পেতে দিবো না ওকে। তাতে আমার মরন হলেও হাসতে হাসতে মেনে নেবো সেই মরণটাকে।

আমি ভালবাসি নাহিদ। অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে।

( উৎসর্গ- নাহিদ ভাই এবং হেনা আপুর এমন মহৎ একটা ভালসার গল্প আমার মত লেখক দ্বারা সম্পূর্ণ রূপে ফুটিয়ে তুলা নিতান্তই অসম্ভব। তবে আমার ধারা যত টুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। ১৪ই ফেব্রুয়ারি উনাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী। গল্পটা লেখার দিন সন্ধায় উনারদের সাথে দেখা হইছিল। যেখান থেকে লেখার আগ্রহটা সৃষ্টি। হিংসে করার মত একটা কাপল। আমার পক্ষ থেকে উনাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসা রইল। )

** ওনাদের বিবাহ বার্ষিকীতে ভালবাসার ডাকপিয়ন (the cafe of love) এর পক্ষ থেকেও শুভেচ্ছা রইলো...

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিশেষ গল্প আবিরের অঝর ধারা

কিছুদিন ধরেই মনটা কু ডাকছে, আমার ঘুমদেবী সম্ভবত কারো সাথে ভেগেছে। ঘুম আসেনা তো আসেই
valobasa diboser golpo
না। আর কেনই বা যাবে না। প্রতিরাতেই চোখদুটো জুড়ে থাকতে চাইত, কিন্তু প্রায়ই জোর করে বিদায় করতাম। ভোর সাড়ে পাঁচটা, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। উত্তরা ৩নম্বরের জসীমউদ্দিনের ওভারব্রীজের কাছে আসতেই দেখলাম কেউ একজন উপরে তাকিয়ে হাউকাউ করছে। উপরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। কাধে ব্যাগ হাতে এপ্রন টাইপের কিছু। সম্পর্কে বাপ মেয়ে হবে হয়তো।

তবে মেয়েটা মেডিক্যাল ছাত্রী নাকি নার্স তা বোধগম্য হয়নি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকটার একাকী হাউকাউ শোনেই বুঝলাম কোন এক দুরূহ কারনে এই সাতসকালে দুজনেই ঘর থেকে বিতারিত। আমি সিগারেট নিয়ে পকেটে হাত দিয়েই মনে হল লাইটার নিয়ে বের হইনি। তাকিয়ে দেখি আঙ্কেল সিগারেট ধরাচ্ছেন। কোন কিছু না ভেবেই উনার কাছে আগুন চাইলাম, তখনি তিনি একটা অগ্নি চাহনি দিয়ে বললেন,
- তোমার সাহস তো কম না, তুমি একজন আর্মি পারসনের কাছে সিগারেট ধরাতে আগুন চাইছ! তুমি কি জান, আমি একজন কর্নেল।

- আঙ্কেল, আপনার গায়ে তো ইউনিফর্ম নেই, তাই বুঝিনি। আর আপনাকে দেখে তা মনে হয়নি।
- আসলে হয়েছে কি বারখুরদার, আমি দেখতে বরাবরের মতই ইয়াং। [মুখ ভর্তি মুলায়েম হাসি দিয়ে]
- ওহ, না মানে আমি ভেবেছিলাম আপনি রিটায়ার্ড করেছেন।
সাথে সাথেই আঙ্কেলের চিকেনশর্মা টাইপের Expressionটা অগ্নিশর্মা হয়ে গেল।ব্রিজে উঠলাম ঐপাড়ে দোকান খোলা থাকবে ভেবে। রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, গাড়ি তেমন একটা নেই। আর তাছাড়া সকালের হালকা শীত শীত আমেজ। সে এক অসাধারণ অনুভূতি।প্রায় প্রতিদিনই এখানে দাঁড়িয়ে আমি সকাল দেখতাম। তারপর Scholasticaর বাচ্চাদের দেখতাম। প্রত্যেককেই কেউ না কেউ দিয়ে যেতে আসে। দূর থেকেই দেখতাম।

কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে একটা দোকান পেয়ে গেলাম। প্রায় আধাভাসমান দোকান। এর আগে দোকানটা দেখিনি। দোকানে একটা ছেলে বসা। শরীরের আকৃতিটা Square Shapeএর ছিল। দৈর্ঘ্যে যা, প্রস্থেও তাই। ঠিক তখনি দেখলাম ব্রিজের উপরে যাকে দেখেছিলাম, সেই মেয়েটি দোকান থেকে বের হয়ে গেল। দোকানের সামনে রাখা টুলটায় বসতেই ছেলেটি চা দিতে চাইল।
- আমি চা খাইনা। কফি হবে?
- না, তয় আমার চা খায়া দেহেন। অঝর আফা আমার চা না খাইয়া কেলাসেই [ক্লাসে] যায় না।
- তোর অঝর আপাটা আবার কে? কই ক্লাস করে?
- আরে আপনে দোকানে আসতেই যেই আফা বাইর হইল। ঐটাই অঝর আফা। ডাক্তারি পড়ে।
- বুঝলাম, তোর চা তুই খা। বিল আমি দিচ্ছি। বলেই সিগারেট টানতে শুরু করলাম।

ছেলেটার সাথে কথা বলতে ভালই লাগত। খুব সহজ সরল। বেচারার নাম রইস উদ্দিন। তার অঝর আপু ছোট করে রাসু ডাকে আর তাতে সে মহা খুশি। প্রায় প্রতিদিনই রাসুর চা বারে বসা হত। রাসুর অঝর আপুর সাথে প্রায় সকালেই দেখা হত। এসে রাসুর সাথেই চা খেত, সাথে ক্ষণিকের খোশ গল্প, তারপরেই চলে যেত।
এক সকালে, ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক তখনি বেশ ভালো টাইপের ঝগড়ার শব্দ কানে আসতে লাগল। বুঝলাম রাসুর সাথে ঝামেলা বেঁধেছে, সাথে যখন মেয়েলি আওয়াজ এল তখন দ্রুত নিচে যেয়ে দেখলাম একটা ছেলে রাসুর গলা চেপে ধরে আছে আর পাশে আরেকটা ছেলে অঝরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। আর অঝর ২টাকেই বকা ঝকা করছে রাসুকে ছেড়ে দেবার জন্যে।ঝামেলায় জড়াতে ভালো লাগেনা। কিন্তু এখানে চুপ থাকা হয় নি। সামনে গিয়ে বললাম,

- কিরে, তোর হাত তো দেখি অনেক লম্বা হয়ে গেছে, বল তো কেটে দেই।
- ঐ মিয়া নিজের কাজে যান, এইখানে পার্ট নিতে আইসেন না। বহুত মাইর জুটবে।
বুঝলাম কথায় কাজ হবে না। তাকিয়ে দেখি টুলের পাশে একটা গিটার পরে আছে। আর কিছু না ভেবেই গীটারটা হাতে নিয়ে ছেলেটার মাথায় মারলাম। কোনা লেগেছিল, তাই ছেলেটার মাথা দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হল। ব্যাপারটা এতই দ্রুত হল যে কেউ কিছু বলতে পারছিল না। ছেলেটা চিৎকার দিয়ে মাথা চেপে শুয়ে পড়ল আর পাশেরটা কি কি যেন হুমকি দিতে দিতে পালিয়ে গেল। সামনেই মেডিক্যাল কলেজ যেটায় অঝর পড়ে।
- রাসু দোকানে থাক, ভয় পাবি না। আমি হারামিটাকে হাসপাতালে রেখেই আসছি। অঝর আমার সাথে এস।

এটাই অঝরের সাথে আমার প্রথম কথা। আমি কোন মতে ছেলেটাকে উঠিয়ে হাসপাতালের দিকে চললাম আর অঝর সুবুধ বালিকার মত পেছনে আসছে। হাসপাতালের ভেতরে অঝরের সাথে অনেকক্ষণ কথা হল। সেখানেই জানতে পারলাম,
- ছেলেগুলো চা সিগারেট আরও কি সব খেয়েছে। তারপর বিল না দিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি বিলের কথা বলতেই ওরা আমাকে বাজে কথা বলে আর তখন রাসু ছেলেটাকে মারতে ধরে। আর তারপরে তো আপনি এলেন।
- গীটারটা কার ছিল?
- দুর্ভাগ্যবশত আমার ছিল, ভেবেছিলাম ঠিক করিয়ে বাজানো শিখব, তার আগেই তো ১২টা বাজিয়ে দিলেন।

লজ্জায় আর কথা বাড়াইনি। হাসপাতাল থেকে বের হবার আগে ছেলেটাকে কিছু বলে এলাম। তারপর থেকে আর তাদের রাসুর দোকানের আশেপাশে দেখা যায় নি।
ঐদিন সায়েন্সল্যাব থেকে Oscar Schmidtএর একটা গীটার কিনে আনলাম। তারপর এটা নিয়ে পরদিন সকালে রাসুর দোকানে গেলাম। ঢুকেই দেখি অঝর আর রাসু চা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে। আমি যেতেই চা এনে দিল।
- রাসু আমি চা খাইনা রে।
- ভাই, খাইয়া দেহেন একবার।
- বললাম তো, আমি খাই না।
- আজব তো, এতো করে সাধছে, নিচ্ছেন না কেন, আপনার সমস্যাটা কি? [অঝর with ঝাজ]

ঝাড়ি খেয়ে মুখে দিয়েই দেখি কফি। রাসু বলে উঠল,
- আফা গতকাল ফ্লাক্সডা কিনায়া আনছে, যখন আমি কইলাম আফনে চা খান না, কফি খান।
অঝর সাথে সাথেই প্রতিবাদ করে উঠল,
- মোটেও না, রাসুর Business যেন বেশী হয় সে জন্যে দেয়া।
ওর চেহারা দেখেই বুঝলাম লজ্জা পাচ্ছিল। তখন ওর দিকে গীটারটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
- কাল যে ভেঙেছি, সে জন্যে না, আজকের ফ্লাক্সটার জন্যে এটা।
- লাগবে না।
- আরে আজব, লাগবে না তো কাল আফসোস করলে কেন? আমার এতোগুলা টাকা বেঁচে যেত।
- আপনার কাছে রেখে দিলেই তো আর নষ্ট হবে না।
- আমার বাসায় এমনিতেই ২টা পড়ে আছে। এতগুলো দিয়ে কি আমি Exhibition করব?
- ওকে নিচ্ছি, আর আপনার টাকা নিয়ে আফসোস করতে হবে না। আমি কিস্তিতে শোধ করে দেব।
- এই মেয়ে আমাকে কি তুমি গ্রামীণ ব্যাংক পাইছো?
- আপনার কাছে ২টা গীটার, তার মানে আপনি গাইতে পারেন?

আমি অবাক, মুহূর্তেই ঝগড়ার ঝড় গায়েব। মেয়েটা পারেও।
- না আমি গাইতে পারি না, গীটার বাজানো আমার শখ। তাই মাঝে মাঝে নিয়ে টুংটাং করি।
- আমাকে এখন একটু বাজিয়ে শোনাতে হবে।
- হ, ভাইজান, আমিও শুনুম।
- আহা, এত সহজে ছারছি না, আমাকে তো বুঝতে হবে আমাকে কি ভালো নাকি পচা গীটার দেয়া হচ্ছে।
- আমি কারো সামনে বাজাই না।
- আপনাকে বাজাতেই হবে। [পুরাই ক্ষ্যাপা]
হুট করেই দেখি রাসু পায়ে ধরে বসে পড়েছে।
- আরে ছাড়, কি শুরু করলি?
- ভাই, আমার খুব শখ গীটার বাজানো শুনুম, আর আফা এতবার কইছে। আফারে কেউ কষ্ট দিলে আমার অনেক খারাপ লাগে।
- ওকে ওকে, তুই উঠ।

ব্যাপক ইমুশনাল পরিস্থিতি। কি আর করা, অবশেষে Slashএর কিছু Instrumental বাজালাম। বাজাবার সময় অবাক হয়ে দেখাল, ২জন মুগ্ধ শ্রোতা অনেক একাগ্রতা নিয়ে শুনছে। বাজানো শেষ হবার পরেও আরও ৩-৪বারের মত বাজাতে হয়েছিল। আর ছুটি পাবার জন্যে কথা দিতে হয়েছিল যে প্রতিদিন বাজিয়ে শোনাতে হবে। শুরুটা এভাবেই হয়েছিল। আগে অঝর তার ক্লাসমেটদের নিয়ে আসত। এখন একা আসে। রাসু আমার আর অঝরের জন্যে আলাদা টুল বসিয়েছে। আমি এলেই একটা নতুন বেনসনের প্যাকেট আরেকটা লাইটার দিয়ে যাবে। ওখানে গেলে নিজেকে মহারাজা মহারাজা মনে হত। দিনগুলো কেমন যেন স্বপ্নের মত লাগছিল। জীবনটা এতো সুন্দর হতে পারে, আমি তা কখনই ভাবি নি। এর মাঝেই কবে যে অঝর আপনি থেকে তুমিতে উঠে এসেছে খেয়াল করতে পারিনি। মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হত।

শীত আসি আসি করছে, অফিসের কাজে বাইরে থাকতে হচ্ছিল। টানা ২দিন বৃষ্টি, পরোটা আমার উপর দিয়েই গেছে।অবশেষে বাসায় ফেরার সময় দুনিয়া কাঁপানো জর নিয়ে ফিরলাম। এটা নতুন কিছু না, অভ্যেস আছে। শুধু প্রথমবারের মত বাসায় না থেকে রাসুর দোকানে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু শরীরের যা অবস্থা, বিছানা ছাড়তেই জান যাবার অবস্থা।পরদিন দুপুরবেলা, কলিং বেল একটানা বেজেই চলছে। চেষ্টা করেও উঠতে পারছিনা। পরে উঠে অনেক কষ্টে দরজা খুলেই দেখি রাসু দাঁড়িয়ে।
- ভাই, কি হইছে আপনের? ফোন বন্ধ, দোকানে আসেন না। কি হইছে?
- আরে তেমন কিছু না, একটু জর হয়েছে।

রাসু আমার কপালে হাত দিয়ে মনে হয় কারেন্টের শক খেল। হাত দিয়েই উল্টা দিকে দউর। বুঝলাম না কি হল। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। জ্ঞান হারাবার অবস্থা। এরকম অনেকবার হয়েছে, তাই ভয় হচ্ছে না। একসময় মনে হল আমাকে কেউ টানছে, তারপর মাথায় পানি দেয়ার অনুভূতি হচ্ছিল। একসময় চোখ খুললাম, দেখি অঝর আর রাসু বিছানার পাশে বসে আছে।
- অবশেষে মহারাজের জাগার সময় হল। [খুব রাগত স্বরে অঝর বলছিল]
- আফা, আমি যাই। পরে আবার আসুম নে। [বলেই রাসু বেড়িয়ে গেল]
- তোমার সমস্যা কি? একটা মানুষ এভাবে থাকে কি করে? মোবাইল বন্ধ, কোন খোজ নাই। একটা বার জানাবার প্রয়োজনও মনে হয় নি? আমি কি কেউ না? তুমি জানো, কত বার তোমার সাথে contact করতে চেয়েছি, ফোন বন্ধ, এখানেও আসনা। রাসু আর আমি কত চিন্তা করেছি? আজ যখন রাসু তোমার জরের কথা জানাল, ক্লাস ফেলে ছুটে আসি, এসে তোমার অবস্থা দেখে রাসুকে দিয়ে Medicine আনাই। আমি আর রাসু মিলে তো তোমাকে নিয়ে কোথাও যেতেও পারতাম না, এখানে থেকে যদি তোমার কিছু হয়ে যেত? কি কিছু বলছনা কেন?

- আরে এভাবে বলছ কেন?এটা এমন কিছু না। এমনিতেই ঠিক হয়ে যেত। তুমি অযথাই দুশ্চিন্তা করছ।
- অযথাই মানে কি? এভাবে থাক কেমন করে। তোমার Family Memberরা কোথায়? তোমার বাবা মা কি করে?
- হুহ, শুধু ঝগড়া করে।
- মানে?
- মানে কিছুই না, বাদ দাও, এই নিয়ে কথা বলতে চাই না।
- না আজ তোমাকে বলতেই হবে। বল তুমি।
- বাবা মা এই মুহূর্তে কোথায় আছে তা আমি সত্যি জানিনা। তবে যতটুকু ধারনা, সম্ভবত বেঁচেই আছে।
- হেয়ালি রাখ, আজকে তোমাকে বলতেই হবে। এতটা লোকানোর কি আছে। আর আমাকে যদি বলার মত কেউ মনে না কর তাহলে থাক, জোর করব না। [বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠল]

এই মেয়েটা পারেও। অবাক হলাম, আমার কাহিনী জানার কি দরকার, আমি নিজেই তো মনে করতে চাই না। এমনিতে তো ভালই ছিলাম। অঝরের দিকে তাকাতেই দেখি সে কাঁদছে। কেন কাঁদছে তা আমার জানা নেই। আমি এমন কেউ নই যার জন্যে কাঁদতে হবে। তারপরেও কেন যেন খুব ভালো লাগছিল এই ভেবে, জীবনে প্রথমবার কেউ আমার ব্যাপারে জানতে চাইছে।

- আমি তখন অনেক ছোট, ঠিক মত বুঝতেও শিখিনি। তখন শুনেছিলাম, আমার দুনিয়াতে আসাটা আব্বু আম্মু কারোরই পছন্দ হয় নি। আমার জন্যে আম্মু ভালো একটা চাকরি ছেরে দিয়েছিল। কারন সে সময়ে হয়ত মাতৃত্বকালিন ছুটির System ছিল না। আব্বুর দেশের বাইরে কিছু Business Conference ছিল, ঐগুলোও বাদ দিতে হয়েছিল। আর এই জন্যে দুজনেরই অনেক সমস্যা হয়েছিল।প্রায় প্রতিদিন অনেক ঝগড়া হত। বাড়িতে আত্মীয় স্বজনেরা আসা ছেড়ে দিয়েছিল। আব্বু আম্মু আলাদা থাকত। তারপর থেকে তাদের সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়, যেটা প্রতিনিয়ত খারাপ থেকে জঘন্য পর্যায়ে চলে যেতে থাকে। আমি কারো কাছেই থাকতে পারতাম না। রাতে একা ঘুমাতে খুব ভয় লাগত। প্রায় প্রতি রাতেই একবার আব্বুর দরজার সামনে আরেকবার আম্মুর দরজার সামনে যেয়ে ডাকাডাকি করতাম। কেউ শুনত না। একরাতে আব্বু দরজা খোলে এসে আমাকে অনেক মারে, বয়স তখন ৪এর মত ছিল। আমার এখনও মনে আছে প্রথমে অনেক বেথা পাচ্ছিলাম, পরে শুধু শরীরটা নড়ছিল, আমি অনুভূতি শুন্য হয়ে পরেছিলাম। তারপর থেকে মার খাওয়ার ভয়ে আর কাউকে কখনো ডাকিনি।

একসময় স্কুলে ভর্তি হলাম, আমি খুব ভালো করে পড়তে লাগলাম, যদি ভালো রেজাল্ট দেখে আব্বু আম্মু একবারের জন্যে হলেও বুকে জড়িয়ে নেয়। আমি কখনো দ্বিতীয় হইনি। খুব কষ্ট লাগত যখন Parents Dayতে সবার বাবা মা আসত, যখন রেজাল্ট হলেই ক্লাসমেটদের বাবা মা তাদের গিফট দিত। আমি আজ পর্যন্ত একটা খেলনা কারো কাছ থেকে পাইনি। আব্বু আম্মুর কারো কোন সমস্যা হলেই আমাকে মারত। একসময় ইচ্ছে হত পালিয়ে যাই বা আত্মহত্যা করি। কেন যেন পারিনি। তাই ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে Scholasticaর বাচ্চাদের দেখে আপনমনে ভাবতাম, যদি আমার জীবনটাও এমন হত। বাবা মায়ের হাত ধরে আসা যাওয়া করতে পারতাম। তারপর ক্লাস নাইনে হোস্টেলে চলে গেলাম। তারপর অনেক ভাল ছিলাম, শুধু রাতে ঘুমাতে পারতাম না। এখনও আমার রাতে ঘুমাতে ভয় হয়।

হোস্টেলে ভালো ছিলাম কারন সেখানে কারনে অকারনে আমানুষের মত মার খেতে হত না। স্কুল বন্ধের কথা শুনলে যেখানে সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত, সেখানে আমি বিমর্ষ হয়ে পড়তাম। আমার তো যাবার কোন জায়গা নেই। কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের পেছনেই একটা চায়ের দোকান ছিল, সেখানে কাজ জুটিয়ে নিয়েছিলাম। জতদিন বন্ধ, দোকানেই থাকব, সব কাজ করব, ২বেলা খেতে দেবে। এভাবেই HSC শেষ হয়, তারপর BUETএ ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এখন এখানে। কখনো কোন ক্লোজ বন্ধু পাইনি, না ভুল বললাম, কারো সাথে তেমনভাবে মিশিনি। সম্পর্কের প্রতি অনিহা এসে যায়। বাবা মা মাঝে মাঝে টাকা পাঠাত, ড্রাইভারকে দিয়ে খোঁজ নিত, এখন যে একাউন্টে টাকা আসত, সেটা আর চেক করিনা। ড্রাইভারের সাথে কথাও বলি না। রাসুর সাথে চলার কারন তাকে দেখে ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়। এমন একটা চায়ের দোকানেই রাতে মাথা গুঁজার জন্যে দিনরাত খাটতে হয়েছিল। আমি শুধু উপরে তাকিয়ে একতাই প্রশ্ন করতাম, কি এমন অপরাধ ছিল, যে কারনে আমি আমার শৈশব হারিয়েছি।

মুখ দিয়ে আর কথা বেরুচ্ছিল না। ঠিক তখনি গালে অঝরের হাতের স্পর্শ পাই। অবাক হলাম, চোখের পানিতে গাল ভিজে গেছে। এর আগে শেষবারের মত কবে কেঁদেছিলাম, মনে নেই।
- ধুর, জ্বরের ঘোরে কি কি সব প্রলাপ করেই যাচ্ছি? আমার কথা বাদ দাও। বক বক করার স্বভাব তো, তাই
- আবির, আমি এখন বের হব। অনেক দেরি হয়ে গেছে। কাল সকালে শরীর ভালো লাগলে চা বারে এস। তুমি না এলে সকালটা মলিন লাগে।ঔষধ খেয়ে নিও।
- চল, তোমাকে পৌঁছে দেই।
- এই অবস্থায় বের হতে হবে না, আমি রাসুকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আজ প্রথমবারের মত বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম। আবার ভয় হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছি না তো আবার! পরদিন বেশ সকালেই বেড়িয়ে পড়লাম। শীতটা ভালই পড়েছে। তাই গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে নিলাম। দোকানে যেয়ে দেখি, অঝর গায়ে শাল জড়িয়ে আছে, আর রাসু ৫-৬টা সার্ট আর গেঞ্জি গায়ে দিয়ে কাপছে। ওর পোশাক দেখে হাসি পেল। সব খুলতে বললাম, অবাক হলাম যখন দেখলাম এই শীতে একটা গেঞ্জি রেখে বাকিগুলো খুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জ্যাকেটটা খুলে রাসুকে পড়িয়ে দিলাম। জ্যাকেটটা বেচারার হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে। ঐদিন আমি আর অঝর মিলে রাসুর জন্যে শপিং করে আনলাম। শপিঙের সময় বেশ খাটনি গেছে। সারমর্মঃ রাসুর সাইজ এন্টিক।

একদিন সকালে এসে দেখি অঝর নেই। রাসু আপনমনে একটা হকিতে তেল মারছে।
- অঝর আসেনি?কি করিস তুই?
- ভাই মাথা গরম, আফারে কেডায় জানি জালায়। তাই এইডা ঠিক করতাছি। খালি সামনে পাই একবার, মাইরা ছাতু বানায়া দিমু।
- মানে কি, তোকে কে বলছে?
- আফায় কইল, খুব মন খারাপ ছিল, নৃপ নামের কে নাকি জালাইতাছে।
আমারও অফিসে কাজ ছিল, তাই আর সময় নষ্ট না করে চলে আসি। পরে ফোনে জানতে পারি ওর আক্কেল দাঁত গজাচ্ছে। সবাই এটার নাম নৃপ দিয়েছে। পরে যখন রাসুর সামনে তা বলা হল, বেচারা লজ্জায় মেরুন কালারের হয়ে গিয়েছিল। অঝর আর রাসু প্রায় আমার বাসায় চলে আসত। দুজনের কাছেই চাবি ছিল। প্রায় সময় বাসায় ৩জনের পার্টি হত। ৩জনের এই ছোট দুনিয়াটা আমার কাছে স্বর্গ হয়ে উঠল। একদিন ফোনে,
- আবির, তুমি কি জানো তুমি একটা উচু প্রজাতির গ আকার ধা?
- আয় হায়, এটা বুঝতে এতদিন লাগল?
- ফাজলামো রাখ, ১৪ই ফেব্রুয়ারির প্ল্যান কি?
- অফিস আছে।
- বহুত হইছে, শোন ছেলে, ১৪তারিখ বিকালে চলে আসবা। আমাদের কলেজের পেছনের যায়গাটায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে। তারপর আমাকে প্রপোজ করবে। আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ কর। শুধু তুমি কেন, সবাই করে। আমি প্রপোজ করব না, করলে পরে সারাজীবন তুমি ভাব নেবে। কি বললাম, বুঝলা কিছু?

ফোনটা কখন কেটে গেল বুঝিনি। কি হচ্ছে এসব? সত্যি নাকি এটা কেবলি স্বপ্নখোরের স্বপ্নঘোর! যাই হোক, ঠিক হল ১৪ তারিখ বিকাল ৫টায় দেখা হবে। ঝামেলা শেষ করতেই দেরি হয়ে গেল। তারপরে কি দেব না দেব, কিছুই মাথায় আসছিল না। অনেক ইচ্ছে ছিল ফুল দেব, কেন যেন অনেকবার ফুলের দোকানের পাশে থেকে ঘুরে এসেছি। লজ্জায় কেনা হয় নি। পরে অনেকগুলো চকলেট নিলাম। যেতেই ৫:২০ বেজে গেল। সামনে যেতেই যে একটা টাফ লুক দিল, জীবনেও ভুলব না।

- No, excuse. সোজা হাট। তোমার হাতে শুধু ১০ মিনিট আছে।
কি করি কি বলি, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হাঁটছি, টুকটাক কথা হচ্ছে আর আমি ওকে একটার পর একটা চকলেট দিচ্ছি। একসময় আবার উল্টা ঘুরে সে কলেজের দিকে আসতে শুরু করল। কলেজের গেইটে এসেই বলল,
- আর মাত্র এক মিনিট।
যা আছে কপালে, বলতেই হবে। বাকি চকলেটগুলো ওর হাতে একসাথে দিয়ে “আলাভু” বলেই দউর। এক দউরে রসুর চা বারে। সাথে সাথেই ওর কল, অনেক সাহস নিয়ে রিসিভ করলাম। ফোনে শুধুই ওর হাসি শোনা যাচ্ছে। সে কি হাসি। তারপর মাথায় এল, কি করতে যাচ্ছি। আমি এমন একজন যার কেউ থেকেও নেই। ভবিষ্যৎ কি, তা জানিনা। পরদিনই অঝরকে ডেকে সব বললাম। আমাকে ওদের পরিবারের কেউ কখনই মেনে নেবে না। ও কোন কথাই শুনল না। বলে,
- আমার কাউকেই লাগবে না। আর আমি তো ডাক্তার হচ্ছি, তোমাকে কিছুই করতে হবে না, সারাক্ষন আমার পাশে থাকবে আর ভালবাসবে। পারবে তো?

আমার কিছুই বলার ছিল না, ভয় পাচ্ছিলাম। এত সুখ, Digest হবে তো? অঝর স্বপ্ন দেখতে ভালবাসত। সেই প্রথম যে আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল। স্বপ্নের মত করেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। আর বাসায় এলেই ২টা মিলে বসত, গীটার বাজাতে হবে। একদিন বাথরোমে গান গাইছিলাম, কুটনা রাসু তা শুনে ফেলে আর অঝরকে জানিয়ে দেয়। তারপরদিন অঝর দেখা হতেই মারতে শুরু করল, থামার পর বলল
- এতক্ষণ হাতে বুঝিয়েছি, এখন মুখে বুঝাচ্ছি। একবারেই বলব। এখুনি একটা গান গাও
মানে কি, কি বলে মেয়েটা, আমি কিছু বলতে যাব, সেই পরিচিত টাফ লুক। বুঝলাম পার পাব না। গাইলাম একটা। শেষ হতেই আবার মার শুরু।
- আরে, গান খারাপ হতেই পারে, তাই বলে কি মারতে হবে নাকি?
- ভাব নাও আমার সাথে না? তুমি গান গাও আর আমাকে শুনাও নি? আজকে আর ছাড়ছি না, বলেই তেড়ে এল।

এভাবেই চলছিল খুনসুটি টুনাটুনির সংসার। আমি অবাক হতাম, অঝর ডাক্তার, আমি ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই বেশ বেস্ত থাকি, তারপরেও কত ভালো আছি। বাবা মা কেন পারেনি? কেন?

কিছুদিন পরের কথা, অঝর কেমন যেন হয়ে গেছে, কিছু জানতে চাইলেই বলে, সামনে প্রফ, তাই একটু ঝামেলায় আছে। রাসু আমাকে কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। কিছু একটা হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না। হুট করেই অঝরের কল দেয়া বা ধরার হারটা কমে গেল। আমার অঝর আর আগের মত নেই। অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। একরাতে অঝর বাসায় এল, রাসু ছিল, তাকে বেড়িয়ে যেতে বলল, রাসু সাথে সাথেই বেড়িয়ে গেল। সে চুপ করে বসে আছে। তারপর
- আবির তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
- বল
- তুমি আসার আগে একজন ছিল আমার জীবনে। আমার সবকিছু জুড়েই। সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছিল, পরে পারিবারিক সমস্যার কারনে সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন আবার সে ফিরে আসতে চায়, আমি কি করব বুঝতে পারছি না। আমাকে তুমি বল আমি কি করব। বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।

মানতে পারছিলাম না, কেন আমার সাথেই এমনটা হবে, কেন আপন বলে কেউ আমার থাকবে না। আমার চারিদিকে অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছিল। বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, অঝর, তুমি জানো কি, আমি শুধু তোমার স্বপ্ন দেখি, তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি, আমার হৃদয় জুড়ে ভালবাসা শুধু তোমার জন্যেই। সারাবেলা শুধু তোমার কথাই ভাবি, তোমার স্মৃতিগুলো আমায় ঘিরে রাখে সবসময়। আমার সমস্ত প্রার্থনা তোমাকে ঘিরেই। সারাটা জীবন তোমার হাতটি ধরে কাটিয়ে দিতে চাই, তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না, প্লিজ রাগ কর না আমার সাথে। আমাকে ছেড়ে যেও না। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই যে আমার। মনের জমানো কথামালা মনের ভেতরেই গুমরে মরল।

- তোমাকে আমার জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিলাম অঝর। তোমাকে তোমার জান্নাত ফিরিয়ে দিলাম। ভালো থেক। অঝর আর কোন কথা না বলেই চলে গেল। জীবনটা আবার অর্থহীন মনে হচ্ছিল। রাসুর দোকানে আর যাওয়া হচ্ছিল না। কাজে বেস্ত হয়ে সব ভুলে থাকার চেষ্টা করলাম। একদিন সন্ধ্যায় অঝরের কল, সে কাঁদছে আর দেখা করতে চাইছে। কে যেন ওর বয়ফ্রেন্ডের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সে অঝরের সাথে দেখা করতে এসেছিল। যাবার বেলায় অঘটনটা ঘটে। হাসপাতালের যাবতীয় ঝামেলা শেষ করে ফেরার পথে দেখি রাসুর দোকান বন্ধ, কয়েকদিন ধরে নাকি দোকানে আসে না। পরে যেখানে মাথা ফেটেছে, সেখানে যেয়ে রক্ত মাখা একটা হকি পাই। পরে আর বুঝতে বাকি থাকে না কি হয়েছিল। বাসায় ফিরে দেখি রাসু বসে আছে।

- রাসু, এমনটা কেন করলি?
- অঝর আফারে আপনের সাথে ছাড়া আর কারো সাথে দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয় ভাইজান। আর আপনের কষ্ট আমার সহ্য হয় না।
- আমি কাল এখান থেকে চট্রগ্রামে চলে যাচ্ছি। সেখানেই থাকব। তুই জাবি আমার সাথে?
- আপনে যেখানেই যান, আপনার পাশেই থাকব। ভাই কেন এমন হইল, এরপরে কি করবেন?
- এরপর –
“কি হয়েছে ?” , “কেন ?” – দূরে থাক ।
আমি ও আমরা আছি ভালো, শুধু -
ভালবাসা টুকু নির্বাক ।