ব্লু মস্কে প্রবেশপথে একজনকে ছবি তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে ভদ্রলোক আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন। বললেন, যে উনি একজন চিত্রকর। পথে বসে ছবি আঁকেন। সেদিন ছবি আঁকার সরঞ্জাম কাছে ছিল না বলে আমার ছবি আঁকতে পারেননি, তবে আমাকে চা খাওয়ান। তুরস্কের চা সাধারণত ছোট
ছোট কাচের গ্লাসে দেওয়া হয় এবং খুবই সুস্বাদু। এক কাপ চায়ের মূল্য দুই লিরা। এরপর আমার সাথে ভদ্রলোকের অনেক কথোপকথন হয়। তার শেষের অংশ খানিকটা এমন
-তুমি কি একা ঘুরতে এসেছ?
-জি
-আমি কি তোমার সাথে আসতে পারি? তোমাকে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাব।
-অবশ্যই। এতে আমার উপকার হবে।
[একটু বিরতির পর]
-তুমি কি বিবাহিত?
-না
- তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
- আছে এবং ইনশাল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছি।
একথা শুনে ভদ্রলোকের বাতি কেমন জানি ধপ করে নিভে গেল। কুপি যেমন একটু বাতাস পেলে ধপ করে নিভে যায় ঠিক তেমন করে ওনার বাতিও নিভে গেল। আমি কারনটা ঠিক ধরতে পারলাম না। চা শেষে বললাম চলুন যাই। ভদ্রলোকের আচরন কেমন যেন বিচিত্রভাবে পাল্টে গেল এবং বললেন দুঃখিত আমি তোমার সাথে যেতে পারব না। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার পিঠে ব্যথা। আমি এত পথ হাঁটতে পারব না। তুমি একা যাও। আমি একথা শুনে একটু অবাক হলাম। আমার পুরুষমিত্রের কথা শুনে তার মন কেনও এত খারাপ হল তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। মাঝে মাঝে আমি না ছেলেদের ঠিক বুঝতে পারি না, আমার সাথে এক মিনিটের পরিচয়েই প্রেমের স্বপ্ন দেখে। এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয় কীভাবে নাকি শুধু দেহের প্রতি আসক্তি তা বুঝতে পারি না। আমি একটু মনে কষ্ট নিয়ে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একা একাই রওনা হয়ে গলোম ‘ব্লু মস্ক’ অথবা সুলতান আহমেদ মস্কের দিকে।
সুলতান আহমেদ ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। অটোম্যান চতুর্দশ সম্রাট সুলতান আহমেদ প্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। সুলতান আহমেদ অটোম্যান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় স্থাপত্য। এই মসজিদ তুরস্কের একমাত্র মসজিদ, যেখানে রয়েছে ছ’টি মিনারেত। সুলতান আহমেদকে ‘ব্লু মস্ক’ বলা হয়ে থাকে, কারণ এই মসজিদের টাইলসের কারুকাজ ‘নীল’ ও ‘সবুজ’ রং দ্বারা নির্মিত।
আমি যখন সুলতান আহমেদ পৌঁছাই তখন দুপুর ১২টা বেজে ৩৫ মিনিট, শুক্রবার। সেদিন জুম্মা দিন। কয়েকশ দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কেউই সেদিন দুপুর আড়াইটার আগে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমি মুসলিম বলে প্রবেশের অনুমতি পেলাম। আমি ভাবলাম এত বড় সুযোগ যখন এলো তাহলে জুম্মার নামাজ আমি ‘ব্লু মস্কে’ পড়ে যাই। সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে প্রথম জুম্মার নামাজ। আমি কোনওদিন মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়িনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে বলেছেন তানিয়া আমার রহমতের সব ঝুলি তোমাকে দিয়ে দিলাম, তুমি যতখানি নিতে পারবে নাও। আমি মসজিদে প্রবেশ করে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এত সুন্দর মসজিদ আমি আমার জীবনে কোনদিনও দেখিনি। অসাধারণ কারুকাজ, অপূর্ব নির্মাণ। ছবিতে দেখে বা পড়ে ওই সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে অনুভব করা যায় না। মসজিদের ভেতরটা সম্পূর্ণভাবে টাইলস দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি টাইলসে হাতের কারুকাজ করা রয়েছে। কারুকাজগুলো মূলত ফুল, লতা-পাতা বিশিষ্ট।
সুলতান আহমেদ মসজিদের প্রতিটি সারিতে প্রায় ২০ হাজার টাইলস রয়েছে। এ ছাড়া এই মস্কে রয়েছে বিশাল ঝাড়বাতি। সুসজ্জিত ও আলোকিত এ মসজিদ। সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল মিহরাব যা মারবেল পাথর দ্বারা নির্মিত, পাথরে রয়েছে নিখুঁত কারুকাজ। মিহরাবের পাশেই রয়েছে সুসজ্জিত মিনবার যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে শুক্রবারের জুমা দিনের খুতবা পাঠ করেন। ‘ব্লু মস্ক’ হচ্ছে এমন এক মসজিদ যা এখনো মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং একই সাথে দর্শনার্থীদের দর্শন স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটা সচরাচর চোখে পড়ে না।
‘আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর’-এ কথাটি আমি জীবনে কত হাজার বার শুনেছি কিন্তু কখনও ওই রকম অনুভব অনুভূত হয়নি, যা আমার ‘ব্লু মস্কে’ ওই পবিত্র শব্দ শোনার পর হয়েছিল। কলম বারবার থেমে যাচ্ছে, আমি আমার ওই অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারছি না। ওই রকম তো কোনওদিন আমার হয়নি, আজ আমার কী হল? মনে হচ্ছে কোনও এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে আমার হৃদয় ভরে উঠেছে। ‘ব্লু মস্কে’র আজানের আহ্বান আমাকে এ রঙিন পৃথিবী ভুলিয়ে দিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও অন্য কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিল। ওই অনুভূতি ব্যক্ত করার ক্ষমতা আমার কলমের নেই। দুপুর ১টা বেজে ১০ মিনিট। শুরু হলো ‘ব্লু মস্কে’ জুমার নামাজ, ইমাম সাহেব শুরু করলেন। ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আউজুবিল্লাহির মিনাস শায়তানুল আজিম।’
জুম্মার নামাজ ছেলেরা এক তলায় ও মেয়েরা দোতলাতে পড়ে থাকেন। দোতলা থেকে যখন আমি ইমাম সাহেবের সুরার ওই অংশটুকু শুনি, জানি না কেন আমি কেঁদে উঠি। তুরস্কে আমি মাত্র তিন দিনের জন্য গিয়েছিলাম। তিনদিনেই আমি ‘ব্লু মস্কে’ নামাজ আদায় করতে পারছি। অনেক তুর্কিও তা করতে পারেন না তাদের জীবনে। হাজারো মানুষের ভিড়ে আমি এক বাংলাদেশি যে ওই পবিত্র জুম্মার শরিক হওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছি। প্রকৃতির সৌর্ন্দয্যের, সমুদ্রের বিশালত্বের, মানুষের মানবতার মহত্ত্বে কতবার কেঁদেছি কিন্তু কোনদিনও সৃষ্টিকর্তার এ আহ্বান তো আমায় কাঁদায়নি! পুরো জুম্মার নামাজের সময়ই ছিল আমার চোখে অশ্রু আর মোনাজাতে আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম। ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের। এতবড় ভাগ্য বোধহয় বাংলাদেশের কোনও মেয়ের আজ পর্যন্ত হয়নি। মনে হচ্ছিল হয় বিধর্মীদের দেশে থাকতে থাকতে আমিও কিছুটা তাদের মতো হয়ে গিয়েছি আমি সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়েছিলাম। এই জুমার নামাজ আমার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন এনে দেয়। মনে চরম প্রশান্তি নিয়ে ‘ব্লু মস্ক’ থেকে বেরিয়ে এসে রওনা হলাম হাজিয়া সোফিয়া দর্শনের জন্য। হাঁটছিলাম আর মনে হচ্ছিল যে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পিত করবার মতো প্রশান্তি আর কোনো কিছুতেই নেই। কত রকমের মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে এ মসজিদের সামনে আজ দাঁড়িয়ে, কী সুন্দরনিয়মমতো ছবি তুলছেন, কোনো বিবাদ নেই, নেই কোনো বৈষম্য। পৃথিবীর যে ধর্মীয় স্থানেই ভ্রমণ করি না কেন সে সব স্থানেই দেখতে পাই ধর্ম কখনো বিবাদ শেখায় না, বৈষম্যতা শেখায় না, শেখায় মানবতা ও পবিত্রতা।
ছোট কাচের গ্লাসে দেওয়া হয় এবং খুবই সুস্বাদু। এক কাপ চায়ের মূল্য দুই লিরা। এরপর আমার সাথে ভদ্রলোকের অনেক কথোপকথন হয়। তার শেষের অংশ খানিকটা এমন
-তুমি কি একা ঘুরতে এসেছ?
-জি
-আমি কি তোমার সাথে আসতে পারি? তোমাকে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাব।
-অবশ্যই। এতে আমার উপকার হবে।
[একটু বিরতির পর]
-তুমি কি বিবাহিত?
-না
- তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
- আছে এবং ইনশাল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে যাচ্ছি।
একথা শুনে ভদ্রলোকের বাতি কেমন জানি ধপ করে নিভে গেল। কুপি যেমন একটু বাতাস পেলে ধপ করে নিভে যায় ঠিক তেমন করে ওনার বাতিও নিভে গেল। আমি কারনটা ঠিক ধরতে পারলাম না। চা শেষে বললাম চলুন যাই। ভদ্রলোকের আচরন কেমন যেন বিচিত্রভাবে পাল্টে গেল এবং বললেন দুঃখিত আমি তোমার সাথে যেতে পারব না। আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার পিঠে ব্যথা। আমি এত পথ হাঁটতে পারব না। তুমি একা যাও। আমি একথা শুনে একটু অবাক হলাম। আমার পুরুষমিত্রের কথা শুনে তার মন কেনও এত খারাপ হল তা ঠিক বুঝতে পারলাম না। মাঝে মাঝে আমি না ছেলেদের ঠিক বুঝতে পারি না, আমার সাথে এক মিনিটের পরিচয়েই প্রেমের স্বপ্ন দেখে। এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয় কীভাবে নাকি শুধু দেহের প্রতি আসক্তি তা বুঝতে পারি না। আমি একটু মনে কষ্ট নিয়ে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একা একাই রওনা হয়ে গলোম ‘ব্লু মস্ক’ অথবা সুলতান আহমেদ মস্কের দিকে।
সুলতান আহমেদ ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ। অটোম্যান চতুর্দশ সম্রাট সুলতান আহমেদ প্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করেন। সুলতান আহমেদ অটোম্যান সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় স্থাপত্য। এই মসজিদ তুরস্কের একমাত্র মসজিদ, যেখানে রয়েছে ছ’টি মিনারেত। সুলতান আহমেদকে ‘ব্লু মস্ক’ বলা হয়ে থাকে, কারণ এই মসজিদের টাইলসের কারুকাজ ‘নীল’ ও ‘সবুজ’ রং দ্বারা নির্মিত।
আমি যখন সুলতান আহমেদ পৌঁছাই তখন দুপুর ১২টা বেজে ৩৫ মিনিট, শুক্রবার। সেদিন জুম্মা দিন। কয়েকশ দর্শনার্থী দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু কেউই সেদিন দুপুর আড়াইটার আগে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমি মুসলিম বলে প্রবেশের অনুমতি পেলাম। আমি ভাবলাম এত বড় সুযোগ যখন এলো তাহলে জুম্মার নামাজ আমি ‘ব্লু মস্কে’ পড়ে যাই। সেটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে প্রথম জুম্মার নামাজ। আমি কোনওদিন মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়িনি। মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাকে বলেছেন তানিয়া আমার রহমতের সব ঝুলি তোমাকে দিয়ে দিলাম, তুমি যতখানি নিতে পারবে নাও। আমি মসজিদে প্রবেশ করে বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এত সুন্দর মসজিদ আমি আমার জীবনে কোনদিনও দেখিনি। অসাধারণ কারুকাজ, অপূর্ব নির্মাণ। ছবিতে দেখে বা পড়ে ওই সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে অনুভব করা যায় না। মসজিদের ভেতরটা সম্পূর্ণভাবে টাইলস দিয়ে ঘেরা। প্রতিটি টাইলসে হাতের কারুকাজ করা রয়েছে। কারুকাজগুলো মূলত ফুল, লতা-পাতা বিশিষ্ট।
সুলতান আহমেদ মসজিদের প্রতিটি সারিতে প্রায় ২০ হাজার টাইলস রয়েছে। এ ছাড়া এই মস্কে রয়েছে বিশাল ঝাড়বাতি। সুসজ্জিত ও আলোকিত এ মসজিদ। সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হল মিহরাব যা মারবেল পাথর দ্বারা নির্মিত, পাথরে রয়েছে নিখুঁত কারুকাজ। মিহরাবের পাশেই রয়েছে সুসজ্জিত মিনবার যেখানে ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে শুক্রবারের জুমা দিনের খুতবা পাঠ করেন। ‘ব্লু মস্ক’ হচ্ছে এমন এক মসজিদ যা এখনো মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং একই সাথে দর্শনার্থীদের দর্শন স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটা সচরাচর চোখে পড়ে না।
‘আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর’-এ কথাটি আমি জীবনে কত হাজার বার শুনেছি কিন্তু কখনও ওই রকম অনুভব অনুভূত হয়নি, যা আমার ‘ব্লু মস্কে’ ওই পবিত্র শব্দ শোনার পর হয়েছিল। কলম বারবার থেমে যাচ্ছে, আমি আমার ওই অনুভূতি ব্যক্ত করতে পারছি না। ওই রকম তো কোনওদিন আমার হয়নি, আজ আমার কী হল? মনে হচ্ছে কোনও এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে আমার হৃদয় ভরে উঠেছে। ‘ব্লু মস্কে’র আজানের আহ্বান আমাকে এ রঙিন পৃথিবী ভুলিয়ে দিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও অন্য কোথায় যেন নিয়ে গিয়েছিল। ওই অনুভূতি ব্যক্ত করার ক্ষমতা আমার কলমের নেই। দুপুর ১টা বেজে ১০ মিনিট। শুরু হলো ‘ব্লু মস্কে’ জুমার নামাজ, ইমাম সাহেব শুরু করলেন। ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আউজুবিল্লাহির মিনাস শায়তানুল আজিম।’
জুম্মার নামাজ ছেলেরা এক তলায় ও মেয়েরা দোতলাতে পড়ে থাকেন। দোতলা থেকে যখন আমি ইমাম সাহেবের সুরার ওই অংশটুকু শুনি, জানি না কেন আমি কেঁদে উঠি। তুরস্কে আমি মাত্র তিন দিনের জন্য গিয়েছিলাম। তিনদিনেই আমি ‘ব্লু মস্কে’ নামাজ আদায় করতে পারছি। অনেক তুর্কিও তা করতে পারেন না তাদের জীবনে। হাজারো মানুষের ভিড়ে আমি এক বাংলাদেশি যে ওই পবিত্র জুম্মার শরিক হওয়ার ভাগ্য নিয়ে জন্মেছি। প্রকৃতির সৌর্ন্দয্যের, সমুদ্রের বিশালত্বের, মানুষের মানবতার মহত্ত্বে কতবার কেঁদেছি কিন্তু কোনদিনও সৃষ্টিকর্তার এ আহ্বান তো আমায় কাঁদায়নি! পুরো জুম্মার নামাজের সময়ই ছিল আমার চোখে অশ্রু আর মোনাজাতে আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম। ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের। এতবড় ভাগ্য বোধহয় বাংলাদেশের কোনও মেয়ের আজ পর্যন্ত হয়নি। মনে হচ্ছিল হয় বিধর্মীদের দেশে থাকতে থাকতে আমিও কিছুটা তাদের মতো হয়ে গিয়েছি আমি সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়েছিলাম। এই জুমার নামাজ আমার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন এনে দেয়। মনে চরম প্রশান্তি নিয়ে ‘ব্লু মস্ক’ থেকে বেরিয়ে এসে রওনা হলাম হাজিয়া সোফিয়া দর্শনের জন্য। হাঁটছিলাম আর মনে হচ্ছিল যে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পিত করবার মতো প্রশান্তি আর কোনো কিছুতেই নেই। কত রকমের মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে এ মসজিদের সামনে আজ দাঁড়িয়ে, কী সুন্দরনিয়মমতো ছবি তুলছেন, কোনো বিবাদ নেই, নেই কোনো বৈষম্য। পৃথিবীর যে ধর্মীয় স্থানেই ভ্রমণ করি না কেন সে সব স্থানেই দেখতে পাই ধর্ম কখনো বিবাদ শেখায় না, বৈষম্যতা শেখায় না, শেখায় মানবতা ও পবিত্রতা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন