এয়ারপোর্ট স্টেশনে আমি দাঁড়িয়ে আছি।বাবা ট্রেনে তুলে দিতে এসেছে।আজকে রাজশাহী চলে যাচ্ছি।কাল থেকে রুয়েটে ক্লাস শুরু।একটু পর মেঘা আসল।আমি আর ও একসাথেই যাই।ট্রেন চলে এসেছে।বাবাকে বিদায় দিয়ে ট্রেনে উঠলাম।সিট নাম্বার খুঁজে বসতে যাব দেখি এই বগিতে রুয়েটের একগাদা ছেলেমেয়ে।
কেউ আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের ফ্রেন্ড আর সিনিয়র আপু-ভাইয়ারা আছে।সবাই মিলে খুব হৈচৈ করতে করতে যাওয়া যাবে।কেমন একটা পিকনিক পিকনিক ভাব চলে এসেছে! কিন্তু আমার সব কিছু এক নিমিষেই শেষ করে দিল কেউ একজন। যাকে দেখলাম তাকে দেখার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।সারা শরীর আমার ঝিমঝিম করতে লাগল। তাকে দেখলে এই চিরচঞ্চল আমি এক মুহূর্তেই শান্ত হয়ে যাই, সারাদিন বকবক করতে থাকা এই আমার মুখে কোন কথা ফোটে না।কাঁধে গীটার ঝুলিয়ে ইমন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছি।ধুর! আমার জার্নিটাই মাটি! এই ছেলের দিকে আড়চোখে তাকাতে তাকাতেই আমার সময় কেটে যাবে।সবাই খুব আড্ডাবাজি করছে আর আমি উদাসী কবির মত বাইরে তাকিয়ে আছি।কারো কাছে যেন ধরা পড়ে না যাই তাই মুখে পেপার ঢাকা দিয়ে ঘুমানোর ভান করতে লাগলাম আর উৎকর্ণ হয়ে শুনতে লাগলাম তার হাসি,তার কথা, মাঝে মাঝে গীটারে টোকা দিয়ে তার গান।তাকে দেখলে আমার মাঝে আমিটাকে আর খুঁজে পাই না।
আমি ইমন ভাইয়াকে জীবনেও বলতে পারব না তার জন্য আমি কতটা তৃষিত। এভাবে শুধু তাকে দেখেই যেতে হবে আমার। কিভাবে হাসি হাসি মুখে সে নিশাত আপুর সাথে কথা বলে, ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েগুলো কিভাবে আহ্লাদী গলায় তাকে দরকারে-অদরকারে ভাইয়া ভাইয়া বলে চিল্লায়।আমি দেখি আর দেখে আমার গায়ে ফোস্কা পড়ে।
তার সাথে সবসময় আমার কেন এমন উদ্ভট সময়ে দেখা হয়? সাহেব বাজার যাওয়ার জন্য যখন অটোতে উঠে খিলখিল করতে করতে "রসনা সরিষার তেল ইশ" গান গাচ্ছি তখনই দেখব ড্রাইভারের পাশ থেকে হঠাৎ পেছন দিক ফিরে একজন বলছে "কি, মেঘা? কি খবর তোমাদের? কোথায় যাওয়া হচ্ছে?" আর সাথে সাথে আমি মূর্তির মত হয়ে গেছি! হায় ঈশ্বর! কৃপা কর। মনে হয় অটো থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ি। কি লজ্জা! অথবা যখন আমি আরডিতে এটা-ওটা কিনতে যেয়ে দোকানদারের সাথে দাম নিয়ে কচকচ করছি, তখনই হুট করে দেখব কেউ একজন অবাক হয়ে আমার চেঁচামেচি দেখছে। দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের মত হুড়াহুড়ি করে বৈশাখীতে ঢুকে গোগ্রাসে খাবার গিলছি তখনই সামনের টেবিল থেকে গম্ভীর ভাবে সে তাকিয়ে থাকে!
আমাকে ইমন ভাইয়া কেমন মনে করে কে জানে! পরীক্ষার পর আমাকে আর মেঘাকে একসাথে দেখলে কখনো সে জিজ্ঞেস করে না "ইপ্সিতা, পরীক্ষা কেমন হল? "আমাকে এড়িয়ে মেঘাকে জিজ্ঞেস করে। আমার যেন কোন অস্তিত্বই নেই সেখানে। আমিও একটা সালাম ঠুকে দিয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকি। নবীনবরন অনুষ্ঠানের সময় কে কে গান গাইবে, কি গান গাইবে সব ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার উপর, সবারটা ঠিক করে দিল, কিন্তু যখনই আমার সময় আসল তখনই বলে "এই, জয়ীতা এরটা একটু দেখে দে তো।" আজব! "এরটা" কি ধরনের শব্দ? আমার নামও যেন জানে না? ফেসবুকে জুনিয়র, সিনিয়র, ক্লাসমেট সবার ছবিতে, স্ট্যাটাসে লাইক -কমেন্ট দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু আমারটাতে না! ভাল রেজাল্ট করলে অন্য সবাইকে একগাদা কংগ্রাচুলেশন দিতে পারে মিষ্টি হাসি দিয়ে কিন্তু আমি বাদ। তার চোখে যেন আমি নেই ই! মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ডুব মারি, নয় হারিয়ে যাই কোথাও, দেখি তো তখন খেয়াল হয় কি না এই পাজী মেয়েটার কথা।
বই কিনতে সোনাদিঘীর মোড় গেছি। হঠাৎ করে খুব হুড়াহুড়ি শোনা গেল। একটা মিছিল গেল আর কাছেই কোথাও পরপর কয়েকটা কক্টেইল ফুটল। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ছে। আমি একগাদা বই নিয়ে রাস্তার মাঝে ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছি! কি করব বুঝতে পারছি না। সামনের দিকে দৌড় দিলাম, এক্টা রিক্সার সাথে প্রচণ্ড জোড়ে ধাক্কা খেলাম।বাম হাতটা আর নাড়াতে পারছি না! আমি নিশ্চিত আজকে আমার গায়ে কক্টেইল ফুটবে, চোখ ফেটে কান্না আসছে। তখনই আমার হাত ধরে কেউ একজন আমাকে উঠিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে দৌড়াল। একটা দোকানের সাটার ফেলছে। তাড়াতাড়ি করে দোকানটার ভেতর ঢুকলাম। আমার মাথা তখন ফাঁকা। কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝতে পারছি না। হাতটা মনে হয় খুলে পড়ে গেছে, কোন অনুভূতি নেই হাতে। কেঁদেই যাচ্ছি। তখন খেয়াল হল কেউ একজন আমার হাত চেপে ধরে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ইমন ভাইয়া! আমার ওই মুহূর্তে মনে হল 'ইশ, আমার দুই হাত ই কাটল না কেন?' অবাক হয়ে গেলাম দেখে যে ইমন ভাইয়ার চোখে পানি! কাঁদছে! কেন?
ডাক্তারের কাছ থেকে ভাইয়া আমাকে হলে নামিয়ে দিয়ে গেল। হাতে চারটা সেলাই পড়েছে।ডাক্তার যখন সেলাই করছিল আমি ইমন ভাইয়ার হাত খামচে ধরে ছিলাম। বেচারার হাতের চামড়াই মনে হয় ছিলে গেছে।
ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এবার মেঘার সাথে ঢাকা যাই নি। ও আমার দুইদিন আগে চলে গেছে। আমার একটা কাজ আছে বলে থেকে গেছি। আজ আমি ঢাকা যাচ্ছি। ট্রেনে উঠার পর থেকে চানাচুর মাখা, ভুট্টা ভাজা, মিনি সিঙ্গারা, ঝাল পিঁয়াজু এইসব হাবিজাবি খেয়েই যাচ্ছি আর আমার পাশে ছেলেটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মেঘস্বরে বলছে "ইপ্সিতা, এবার থাম প্লিয! এসব হাবিজাবি আর খেতে হবে না।"
-ইমন, তুমি খাবা না, খুব ভাল কথা! আমাকে খেতে দাও। তুমি বসে বসে আমার খাওয়া দেখ।
ইমন আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আর আমি ওর হাত খামচে ধরে বসে আছি।বেচারার হাতের চামড়া মনে হয় খুবলে উঠে যাচ্ছে!
কেউ আমাদের সেকেন্ড ইয়ারের ফ্রেন্ড আর সিনিয়র আপু-ভাইয়ারা আছে।সবাই মিলে খুব হৈচৈ করতে করতে যাওয়া যাবে।কেমন একটা পিকনিক পিকনিক ভাব চলে এসেছে! কিন্তু আমার সব কিছু এক নিমিষেই শেষ করে দিল কেউ একজন। যাকে দেখলাম তাকে দেখার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।সারা শরীর আমার ঝিমঝিম করতে লাগল। তাকে দেখলে এই চিরচঞ্চল আমি এক মুহূর্তেই শান্ত হয়ে যাই, সারাদিন বকবক করতে থাকা এই আমার মুখে কোন কথা ফোটে না।কাঁধে গীটার ঝুলিয়ে ইমন ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।আমি বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছি।ধুর! আমার জার্নিটাই মাটি! এই ছেলের দিকে আড়চোখে তাকাতে তাকাতেই আমার সময় কেটে যাবে।সবাই খুব আড্ডাবাজি করছে আর আমি উদাসী কবির মত বাইরে তাকিয়ে আছি।কারো কাছে যেন ধরা পড়ে না যাই তাই মুখে পেপার ঢাকা দিয়ে ঘুমানোর ভান করতে লাগলাম আর উৎকর্ণ হয়ে শুনতে লাগলাম তার হাসি,তার কথা, মাঝে মাঝে গীটারে টোকা দিয়ে তার গান।তাকে দেখলে আমার মাঝে আমিটাকে আর খুঁজে পাই না।
আমি ইমন ভাইয়াকে জীবনেও বলতে পারব না তার জন্য আমি কতটা তৃষিত। এভাবে শুধু তাকে দেখেই যেতে হবে আমার। কিভাবে হাসি হাসি মুখে সে নিশাত আপুর সাথে কথা বলে, ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েগুলো কিভাবে আহ্লাদী গলায় তাকে দরকারে-অদরকারে ভাইয়া ভাইয়া বলে চিল্লায়।আমি দেখি আর দেখে আমার গায়ে ফোস্কা পড়ে।
তার সাথে সবসময় আমার কেন এমন উদ্ভট সময়ে দেখা হয়? সাহেব বাজার যাওয়ার জন্য যখন অটোতে উঠে খিলখিল করতে করতে "রসনা সরিষার তেল ইশ" গান গাচ্ছি তখনই দেখব ড্রাইভারের পাশ থেকে হঠাৎ পেছন দিক ফিরে একজন বলছে "কি, মেঘা? কি খবর তোমাদের? কোথায় যাওয়া হচ্ছে?" আর সাথে সাথে আমি মূর্তির মত হয়ে গেছি! হায় ঈশ্বর! কৃপা কর। মনে হয় অটো থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ি। কি লজ্জা! অথবা যখন আমি আরডিতে এটা-ওটা কিনতে যেয়ে দোকানদারের সাথে দাম নিয়ে কচকচ করছি, তখনই হুট করে দেখব কেউ একজন অবাক হয়ে আমার চেঁচামেচি দেখছে। দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষের মত হুড়াহুড়ি করে বৈশাখীতে ঢুকে গোগ্রাসে খাবার গিলছি তখনই সামনের টেবিল থেকে গম্ভীর ভাবে সে তাকিয়ে থাকে!
আমাকে ইমন ভাইয়া কেমন মনে করে কে জানে! পরীক্ষার পর আমাকে আর মেঘাকে একসাথে দেখলে কখনো সে জিজ্ঞেস করে না "ইপ্সিতা, পরীক্ষা কেমন হল? "আমাকে এড়িয়ে মেঘাকে জিজ্ঞেস করে। আমার যেন কোন অস্তিত্বই নেই সেখানে। আমিও একটা সালাম ঠুকে দিয়ে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকি। নবীনবরন অনুষ্ঠানের সময় কে কে গান গাইবে, কি গান গাইবে সব ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার উপর, সবারটা ঠিক করে দিল, কিন্তু যখনই আমার সময় আসল তখনই বলে "এই, জয়ীতা এরটা একটু দেখে দে তো।" আজব! "এরটা" কি ধরনের শব্দ? আমার নামও যেন জানে না? ফেসবুকে জুনিয়র, সিনিয়র, ক্লাসমেট সবার ছবিতে, স্ট্যাটাসে লাইক -কমেন্ট দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে পারে কিন্তু আমারটাতে না! ভাল রেজাল্ট করলে অন্য সবাইকে একগাদা কংগ্রাচুলেশন দিতে পারে মিষ্টি হাসি দিয়ে কিন্তু আমি বাদ। তার চোখে যেন আমি নেই ই! মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ডুব মারি, নয় হারিয়ে যাই কোথাও, দেখি তো তখন খেয়াল হয় কি না এই পাজী মেয়েটার কথা।
বই কিনতে সোনাদিঘীর মোড় গেছি। হঠাৎ করে খুব হুড়াহুড়ি শোনা গেল। একটা মিছিল গেল আর কাছেই কোথাও পরপর কয়েকটা কক্টেইল ফুটল। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ছে। আমি একগাদা বই নিয়ে রাস্তার মাঝে ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছি! কি করব বুঝতে পারছি না। সামনের দিকে দৌড় দিলাম, এক্টা রিক্সার সাথে প্রচণ্ড জোড়ে ধাক্কা খেলাম।বাম হাতটা আর নাড়াতে পারছি না! আমি নিশ্চিত আজকে আমার গায়ে কক্টেইল ফুটবে, চোখ ফেটে কান্না আসছে। তখনই আমার হাত ধরে কেউ একজন আমাকে উঠিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে দৌড়াল। একটা দোকানের সাটার ফেলছে। তাড়াতাড়ি করে দোকানটার ভেতর ঢুকলাম। আমার মাথা তখন ফাঁকা। কি হচ্ছে না হচ্ছে বুঝতে পারছি না। হাতটা মনে হয় খুলে পড়ে গেছে, কোন অনুভূতি নেই হাতে। কেঁদেই যাচ্ছি। তখন খেয়াল হল কেউ একজন আমার হাত চেপে ধরে রক্ত পড়া বন্ধ করার চেষ্টা করছে। ইমন ভাইয়া! আমার ওই মুহূর্তে মনে হল 'ইশ, আমার দুই হাত ই কাটল না কেন?' অবাক হয়ে গেলাম দেখে যে ইমন ভাইয়ার চোখে পানি! কাঁদছে! কেন?
ডাক্তারের কাছ থেকে ভাইয়া আমাকে হলে নামিয়ে দিয়ে গেল। হাতে চারটা সেলাই পড়েছে।ডাক্তার যখন সেলাই করছিল আমি ইমন ভাইয়ার হাত খামচে ধরে ছিলাম। বেচারার হাতের চামড়াই মনে হয় ছিলে গেছে।
ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এবার মেঘার সাথে ঢাকা যাই নি। ও আমার দুইদিন আগে চলে গেছে। আমার একটা কাজ আছে বলে থেকে গেছি। আজ আমি ঢাকা যাচ্ছি। ট্রেনে উঠার পর থেকে চানাচুর মাখা, ভুট্টা ভাজা, মিনি সিঙ্গারা, ঝাল পিঁয়াজু এইসব হাবিজাবি খেয়েই যাচ্ছি আর আমার পাশে ছেলেটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মেঘস্বরে বলছে "ইপ্সিতা, এবার থাম প্লিয! এসব হাবিজাবি আর খেতে হবে না।"
-ইমন, তুমি খাবা না, খুব ভাল কথা! আমাকে খেতে দাও। তুমি বসে বসে আমার খাওয়া দেখ।
ইমন আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আর আমি ওর হাত খামচে ধরে বসে আছি।বেচারার হাতের চামড়া মনে হয় খুবলে উঠে যাচ্ছে!
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন