নিজের সবচেয়ে ভালো জামাটা পরে
কলেজে এসেছে সালমা(ছদ্মনাম)।
কিন্তু আশেপাশের মেয়েদের দেখে নিজের
জামার
প্রতি মুগ্ধতা আর থাকলো না।
কী সুন্দর করে সেজে গুজে এসেছে মেয়েগুলো, আরতাদের
জামাগুলোও কী সুন্দর। প্রায় সবারকাছেই
মোবাইল ফোন আছে, একটু পরপরইফোন
অথবা মেসেজ
আসছে।
মেয়েগুলো হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে, ক্লাশের ভিতরও লুকিয়ে ফিস ফিস
করে কথা বলে, খুব
জরুরী ফোন বোধ হয়। এদের
মাঝে নিজেকে বেমানান
লাগে সালমার। বিউটি পার্লারের
কিওয়াশিং , রিবন্ডিং কী কী যেন সব বলে, তার অর্ধেক
সালমা বুঝতেও পারে না। সে মাথায়
চপচপে তেল
দিয়ে ক্লিপ লাগিয়ে কলেজে আসে,
উড়না দিয়ে নিজের
ছেঁড়া ব্যাগটা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তার
কোন
বান্ধবী হয়নি এই কলেজে, সে যে স্কুল
থেকে এসেছে সেখান থেকে শুধু তার রেজাল্টই
খুব
ভালো ছিলো, তাইতো এই কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তার
পিছনে মেয়েরা তাকে খ্যাত
বলে ডাকে। কিন্তু তা একটুও আমলে নেয়
না সালমা। অনেক প্রতিকূলতা জয় করে এই
পর্যন্ত এসেছে সে।
বাবা নেই সালমার। একদিন এক মাতাল ট্রাক ড্রাইভার তার বাবার
রিকশাটাকে দুমড়ে মুচড়ে চলে গিয়েছিলো,
সাথে তার
বাবাকেও। মা একটা বাসায় আর
গারমেন্টসে কাজ
করে। তা দিয়েই বহু কষ্টে সংসার চলে তাদের।
ছোট দুইটা ভাই বোন আছেসালমার, তাদের
দেখাশুনা সালমাকেই করতে হয়। বাসার
কাজের
ফাকে ফাকে পড়াশুনা করে সে।
মা যে টাকা আয় করে সে টাকা দিয়ে পুরো মাস চলে না,পাশের
বাড়ির
লিটন চাচা থেকে প্রায়ই ধার করতে হয়। এস
এস
সি পাশ করার পর লিটন চাচা তার জন্য
গারমেন্টসের একটা কাজ ঠিক করেছিলো, কিন্তু
সে পড়ালেখা করতে চায়। লিটন চাচা তার
মা কে বুঝায় কলেজে কত খরচ, বইপত্র, খাতা,
কলম
বাদেও আরো অনেক খরচ। মাও অসহায়
ভাবে সালমার মুখের দিকে চেয়েছিলেন। সালমা মা কে বুঝালো কোনো টাকা লাগবে না,
এইসব
খরচ মেটানোর জন্য সরকার উপবৃত্তির
ব্যবস্থা করে দিয়েছে। লিটন
চাচা থেকে ধার
নিয়েই কলেজে ভর্তি হয়েছিলো সালমা। উপবৃত্তির
টাকাটা পেয়েই ফিরিয়ে দিবে।
সালমা ভেবেছিলো এই
কলেজে সে ছাড়া হয়তো কেউ উপবৃত্তির জন্য
আবেদন করেনি। কিন্তু
দেখা গেলো প্রায় সবাই আবেদন করেছে। প্রতিদিন
নোটিশবোর্ডে চোখ বুলিয়ে যায় সালমা,
উপবৃত্তির
লিষ্টের জন্য। একদিন লিষ্ট দিলো,
হালকা ভীড়
জমেছে নোটিশ বোর্ডের সামনে। ভীড় ঠেলে লিষ্টের
উপর থেকে নিচে চোখ বুলালো সালমা, নিজের
নাম না দেখে বিশ্বাস করতে পারলো না।
আরো দুইবার
চোখ বুলালো, কিন্তু নিজের নাম
খুজে পেলো না। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে, বুক
ফেটেকান্না আসছে। পাশের দুইটা মেয়ে খুব
খুশি, তারা উপবৃত্তি পেয়েছে।
একজন বলছে “ যাক বিউটি পার্লারের
খরচটা হয়ে গেলো”। “এইচল
পার্টী দিবি”। ।
যারা এই পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়েছেন, তাদের
জন্য
একটা সুখবর আছে, মেয়েটার মা অন্নের
বাসায়
কাজ করে, সে বাসার লোকেরা মেয়েটার পড়ালেখা বন্ধ হতে দেই
নি। কিন্তু এরকম আরো কত ঘটনাই
না জানি বাংলাদেশের
আনাচে কানাচে ঘটছে। সরকার উপবৃত্তির
ব্যবস্থা করে দিয়েছে, কিন্তু তা যে ন্যায্য
দাবীদাররা পাচ্ছে তার নিশ্চয়তা কতটুকু। আমি আমার এলাকায় খোজ নিয়ে দেখেছি,
অধিকাংশ
ক্ষেত্রে স্কুল কলেজের কমিটির
সুপারিশে অথবা শিক্ষকদের পরিচিতদের
মধ্যেই
উপবৃত্তি দেয়া হয়। এই উপবৃত্তি দরিদ্র ছাত্রীদের
বই, কলম কেনার চেয়ে বেশি বিউটি পার্লার
আর
ফাস্ট ফুডের পিছনে ব্যয় হচ্ছে। স্বচ্ছল
পরিবারের মেয়েদের প্রতি আমার আবেদন,
উপবৃত্তির এই টাকাটা গরীব ছাত্রীদের জন্য ছেড়ে দাও,
তাতে হয়তো বিউটি পার্লারে একদিন কম
যাওয়া হবে, ফাস্ট ফুডে গিয়ে বান্ধবীদের
নিয়ে একদিন কম হই হল্যা করলে কিন্তু
তাতে হয়তো একটা গরীব মেয়ের
লেখাপড়া বন্ধ হওয়া থেকে বেচে যাবে ।
প্লিজ তাদের
অধিকার
ছিনিয়ে নিয়ো না, প্লিজ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন