বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে রোহান । কোলবালিশটাকেও বারবার সাইড চেঞ্জ করাতে হচ্ছে । এই একটা জিনিস কাছে না থাকলে তার কিছুতেই ঘুম আসে না । সেই ছোটবেলা থেকে অভ্যাস । ছোটবেলায় রাতে রোহান বাবা মার মাঝখানে ঘুমাতো কিন্তু যেদিন থেকে ওকে আলাদা রুমে আলাদা খাটে শোয়ানোর ব্যবস্থা করা হলো সেদিন থেকেই ওর জন্য একটা কোলবালিশ বরাদ্দ করা হলো । সেই থেকে শুরু । এরপর থেকে কত চাদর, কাথা, বালিশ চেঞ্জ হলো কিন্তু কোলবালিশটা ঠিকই রয়ে গেলো নিত্য
ভালোবাসার কোলবালিশ
সঙ্গী হিসেবে । মাঝে মাঝে এটাকে নতুন জামা পড়ানো হয় । তখন কোলবালিশটাকে আরো সুন্দর দেখায় । কোলবালিশটাকে একটা অপরিহার্য জিনিস হিসেবেই মনে করে রোহান । শুনতে আজব লাগলেও এটা সত্য যে কোলবালিশটাকে রোহান নিজের পরম বন্ধু মনে করে যে তার গত ১৬ বছরের প্রায় প্রতিটা রাতে তার পাশেই ছিলো ।
কোলবালিশটাকে নিজের বাহুর মধ্যে আটকে রেখে এই কথাগুলোই ভাবছে রোহান । এখন সে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে । লম্বা চওড়ায় প্রায় তার সব বন্ধুকেই টেক্কা দিয়েছে অথচ তার কোলবালিশটা সেই আগের সাইজেই আছে । মাঝখানে এটাকে দুবার ভেঙ্গে নতুন তুলা ভরা হয়েছে কিন্তু সাইজের কোন পরিবর্তন হয় নি । তাই ইদানীং প্রায়ই ছোট কোলবালিশটাকে নিয়ে প্রব্লেম হচ্ছে তার ।

অবশ্য ইদানীং আরো কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে রোহান । তাহলো ভার্সিটিতে । এমনিতে রোহান খুবই হৈহুল্লোড়প্রিয় ছেলে । একলাই আড্ডা জমিয়ে রাখতে পারে । ফ্রেন্ড সার্কেলে তাই ওর অপরিহার্যতা অপরিসীম । কিন্তু যেদিন থেকে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে আনিশা মেয়েটা যুক্ত হয়েছে সেদিন থেকেই রোহানের দুনিয়াটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে । এখন কেনো জানি পৃথিবীটা একটু বেশীই রঙ্গীন লাগে রোহানের কাছে । ঠিক আনিশার মতো । মেয়েটাকে দেখলেই কেনো জানি রোহানের ভিতরে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয় যার কোনো ব্যাখ্যা এপর্যন্ত রোহান দিতে পারেনি । সায়েন্সের স্টুডেন্ট হওয়ার কারণে কত সমীকরণ সমাধান করেছে রোহান, কতকিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছে অথচ নিজের ভাবাবেগটাকেই কেনো জানি কোনো মাত্রা দিতে পারছে না বরঞ্চ আনিশার সামনে দাড়ালেই ওর ভিতরে থাকা সকল তত্ত্ব, উপাত্ত, সমীকরণ, হিসাব, ফলাফল সবকিছু জট পাকিয়ে যায় । জট খোলা তো দূরের কথা বরঞ্চ মেয়েটার চোখেই দিকে তাকালেই নিজেকে নিজের কাছে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি মনে হয় । বলার মতো কোনো কথাই রোহানের মুখে আসে না অথচ এ যাবতকাল সকল আড্ডা রোহানই মাতিয়ে রাখতো । সেকারণে ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডার সময় ভুলেও রোহান আনিশার চোখের দিকে তাকায় না ।
সেদিনতো আনিশা বলেই ফেললো,
-সবাই বলে আড্ডা জমাতে তুমি একলাই একশ অথচ তুমার মুখ দিয়ে দেখি কোনো কথাই বের হয় না । আর কথা বললেও মাটির দিকে তাকায়া থাকো । তোমার প্রব্লেম কী ?
কোনো রিপ্লাইতো দূরে থাক বরং আনিশার দিকে পাক্কা দুই মিনিট হা করে তাকিয়ে ছিলো রোহান । যেনো আনিশা কোনো মানুষ নয় বরং ভিনগ্রহের কোনো এলিয়েন কথা বলছে । পাশ থেকে সাকিব ফোড়ন কেটে উঠলো,
-দোস্ত আমার ভালো হইয়া গেছে । বেগানা নরনারীর দিকে তাকায় না । তাইতো অলটাইম মাটির দিকে তাকায় থাকে ।
সাকিবের কথা শুনে পুরো আড্ডাতে হাসির রোল পড়ে যায় । রোহান বেচারা আরকিছু বলতেই পারে না । সেদিন রোহানই হয়ে উঠলো আড্ডার টপিক ।আড্ডার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় রোহানকেই পচানো হলো । আর রোহান পুরোটা সময় মাটির দিকে তাকিয়ে পচানি হজম করলো ।

2/
সেদিন রাতের বেলা খাবার টেবিলে বসে মাছের মুড়োটাকে একমনে সাইজ করছিলো রোহান । বাপের ডাকে সংবিত্‍ ফিরে পায় সে
-কিরে পড়ালেখা কেমন চলছে ?
-এইতো বাবা ভালোই ।
-তা প্রেমসেমের অবস্থা কতদূর ?
হঠাত্‍ করে বাপের মুখে এই কথা শুনে রোহানের বিষম লেগে যায় । এমনিতে রোহান ওর বাবার সাথে খুবই ফ্রি । কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে রোহান বলে উঠে,
-বাবা আমি ভালো ছেলে তাই এসব চিন্তা ভাবনা করি না ।
-ধুররর গাধা ছেলে কোথাকার !!!!!! তোর মতে কি শুধু খারাপ ছেলেরাই প্রেম করে নাকি ?
-না বাবা ঠিক তা না । আসলে পড়ালেখার মাঝখানে প্রেম করার টাইমই পাই না ।
-তুই দেখি পুরাই আতেল হয়া গেসিসরে । তোর ডিপার্টমেন্টে মেয়ে টেয়ে নাই নাকি ? নাকি মেয়েদের দিকে তাকাসই না ?
-না আছে কিন্তু সেরকমভাবে কাউকে আসলে ভালো লাগে নাই ।
-দেখ তোর মাকে আমি যখন প্রোপোস করছিলাম তখন সে মাত্র এসএসসি পাশ করছে আর আমি কলেজে উঠছি । সোজা তার সামনে দাড়ায় বলছিলাম, 'দেখো আমি তোমাকে ভালবাসি । আমাকেও তোমার ভালবাসতে হবে । অন্য কারো কথা ভাবতেও পারবা না ।' তোর আম্মা তো ভয়ে প্রায়ই কেঁদেই দিছিলো । পরে অবশ্য অনেক কাঠখড় পুড়ানোর পর তোর মা আমাকে হ্যা বলছে ।
মনে মনে বাবার সাহসের প্রশংসা না করে পারলো না রোহান ।
-আর তুই ভার্সিটিতে উঠেও কিছু করতে পারলি না !!! আফসোস তুই আমার ছেলে, এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন রোহানের বাবা ।
-ঠিক আছে বাবা । আমি এখন থেকে ট্রাই করবো নে ।
-ট্রাই করো আর যাই করো বাবা পড়ালেখা কিন্তু ঠিক থাকতে হবে । আর আরেকটা কথা যাকে ভালবাসবা তাকে সবকিছু উজাড় করে ভালবাসবা । যদি তুমি সত্যিকারের ভালবাসতে পারো তবেই তুমি আসল ভালবাসার সন্ধান পাবা । আজকালকার নিউ জেনারেশনের মতো রিলেশন ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মেতো না । স্পেশাল একজন জীবনে একবারই আসে । সে যাতে তোমার জীবন থেকে হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবা । যদি তাকে হারায় ফেলো তবে জীবনটাকেই অর্থহীন মনে হবে ।
-জ্বি আচ্ছা বাবা ।

3/
বিছানায় শুয়ে বাবার বলা শেষ কথাগুলো রোহানের কানে বাজতে থাকে ।
'স্পেশাল একজন জীবনে একবারই আসে । সে যাতে তোমার জীবন থেকে হারিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবা । যদি তাকে হারায় ফেলো তবে জীবনটাকেই অর্থহীন মনে হবে ।'
আচ্ছা বাবাকে ও ভুল বলে নিতো ? সেরকমভাবে কাউকে আসলে ভালো লাগে না - কথাটা কি আসলেই ঠিক ? আনিশাকে তো ওর অনেক ভালো লাগে । মেয়েটার মধ্যে প্রচন্ড একটা মায়া আছে । যা রোহানকে প্রতিমূহূর্তে আকর্ষণ করে । কিন্তু আনিশার গভীর দৃষ্টির সামনে পড়লেই রোহানের সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায়
নাহহহ আনিশাকেই ও ভালোবেসেই ফেলেছে । কিন্তু ও আনিশাকে বলবে কিভাবে ? আনিশার সামনে তো রোহানের মুখ দিয়ে কথাই বের হয় না । তারপরেও আনিশাকে বলতে হবে কারণ আনিশাই ওর জীবনে স্পেশাল ওয়ান যাকে রোহান কোনোভাবেই হারিয়ে যেতে দেবে না । কালকেই কিছু একটা করতে হবে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠে রোহান । শোয়া অবস্থাতেই কোলবালিশটাকে আরেকটু চেপে ধরে রোহান ।
ধুরররররর শালা কোলবালিশটাও আজকাল ঠিকমত এডজাস্ট হচ্ছে না । আর কতকাল কোলবালিশ পাশে নিয়ে ঘুমাবে ? - মনে মনে কোলবালিশটাকে গালি দেয় রোহান ।
রোহানও ওর বন্ধুদের মতো হবে । সারারাত ফোনে প্রেম করবে আর সকালে লাল লাল চোখ নিয়ে ভার্সিটিতে যাবে । ওরও গার্লফ্রেন্ড চাই । কিন্তু আনিশাকে ও প্রোপস করবে কিভাবে ? ফ্রেন্ড হওয়া সত্ত্বেও আনিশার সাথে তেমনভাবে কথা বলা হয়নি ওর ।
শোয়া থেকে ঝটপট উঠে দাড়ায় রোহান । কোলবালিশটাকেও খাটের এক কোনায় সরিয়ে রাখে । এখন থেকে রাতে কোলবালিশ নিয়ে সুখনিদ্রার দিন শেষ । সিরিয়াস বিষয় ভাবতে হলে নিজেকেও সিরিয়াস হতে হয় । আর শুয়ে থাকলে রোহানের সকল সিরিয়াসনেস ঘুমে রূপান্তরিত হয় । তাই বসে বসে কিভাবে আনিশাকে প্রোপোস করা যায় তা ভাবতে থাকে রোহান । প্রোপোসের কথা মনে করতেই রোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠে । পুরোনো একটা স্মৃতি মনে পড়েছে রোহানের । ওর বেস্টফ্রেন্ড সাকিব তার গার্লফ্রেন্ড তিথিকে প্রোপোস করার সময় সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলো ।
'ঐ তিথি আমি তোমারে ভালা পাই' - এই উদ্ভট বাক্যটা বলে সেদিন সাকিব নিজেই বোকা হয়ে গিয়েছিলো ।
নাহহহহহহ রোহান কোনোমতেই এ ভুল করবে না । আনিশাকে ঠিকঠাকভাবে প্রোপোস করতে হবে ।
'আনিশা তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে । আমি তোমাকে ভালবাসি ।'- নাহহহ বড় আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে ।
'আনিশা তোমাকে দেখলে আমি আমার মুখের কথা হারিয়ে ফেলি । তুমি কি আমার ভাষা হবে ? বর্ণ দিয়ে তোমাকে সাজিয়ে রাখবো চিরদিন।' -শুনতে পুরাই বাংলা সিনেমার ডায়লগের মতো লাগে রোহানের কাছে ।
নাহহহহহহ রোহান এত ঝামেলায় যাবে না । ও ওর বাবার স্টাইলে প্রোপোস করবে । বীরদর্পে এগিয়ে গিয়ে বলবে,
-আনিশা আমি তোমাকে ভালবাসি । আমাকেও তোমার ভালবাসতে হবে । অন্য কারো কথা চিন্তাও করতে পারবা না ।
মনে মনে কিছুটা রিলাক্স ফিল করে রোহান । যাক কিভাবে প্রোপোস করবে তার ঝামেলাটা গেলো এখন দেখা যাক কাল সকালে কি হয় । এতোবড় কাজটা করার জন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তাই দেরী না করে রোহান তাড়াতাড়ি আবার শুয়ে পড়ে । খাটের এক কোণায় থাকা কোলবালিশটাকে পরম আদরে সেই ছোটবেলার মতো জড়িয়ে ধরে রোহান ।

4/
সকাল সকাল ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় রোহান । আজকে ওর জন্য বিশেষ দিন । সবকিছু জয় করার দিন । আজকে আনিশাকে জয় করতে হবে । রোহানের জীবনের স্পেশাল ওয়ানকে ওর স্পেশাল স্থানটা দিতে হবে । আশেপাশে আনিশাকে খুঁজতে থাকে রোহান । একটু দূরে কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে আনিশাকে দেখতে পায় রোহান । মেয়েটার থেকে যেন এক অতি উজ্জ্বলময় আলোকদ্যুতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে । স্বমহিমায় নিজের চারপাশটাকে আলোকিত করে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা । আনিশাকে দেখে সেই পুরনো অনুভূতি জেগে ওঠে রোহানের মাঝে । কেমন জানি সবকিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছে । নাহহহহহহ আজকে নার্ভাস হলে চলবে না । আজকে দিনটাকে নিজের করে নিতে হবে । মনে মনে সাহস সঞ্চার করে আনিশার দিকে এগিয়ে যায় রোহান ।
এদিকে আনিশা অন্যান্য ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডায় মশগুল থাকলেও রোহানকে ঠিকই দেখতে পায় । ধীরে ধীরে রোহানকে এগিয়ে আসতে দেখে । প্রথম যখন রোহানকে দেখে একটা হাসিখুশি প্রাণবন্ত উচ্ছল ছেলে বলেই মনে হতো ওর অথচ আস্তে আস্তে ছেলেটা কেমন জানি নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেলো । বিশেষ করে ওর সামনে আসলে তো রোহান কথাই বলতে পারে না । মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে । তারপরেও রোহানকে আনিশার অনেক ভালো লাগে । ওর সারল্যতা, বোকা বোকা চাহনী, সবার থেকে একটু ভিন্নতা কেনো জানি আনিশাকে খুব আকর্ষণ করে অথচ রোহানের সাথে ওর ঠিকমত কথাই বলা হয় না । কথা বলতে গেলেই ছেলেটা কোনো না কোনো অজুহাত দিয়ে ভেগে যায় । আজকে রোহান নিজেই ওর দিকে এগিয়ে আসছে বলে কিছুটা অবাক হয় আনিশা ।
আনিশার সামনে এসে রোহান বলে,
-তোমার সাথে একটু কথা ছিলো । একটু ঐদিকে আসবা ।
রোহানের কথা শুনে আশেপাশের ফ্রেন্ডরা মুচকি মুচকি হাসতে থাকে । বিনাবাক্যব্যয়ে রোহানের সাথে একদিকে সরে আসে আনিশা।
-কি বলবা বলো ? কিছুটা তাগাদার সুরেই বলে আনিশা ।
-ইয়ে মানে আরকি কেমন আছো ?
-কেমন আছি জিজ্ঞেস করার জন্য আমাকে সাইডে নিয়া আসছো ? বলেই মুখ টিপে হাসতে থাকে আনিশা ।
আনিশার এই রহস্যময়ী হাসি রোহানকে আরো এলোমেলো করে দেয় । ওর ভিতরে সবকিছু তালগোল পাকাতে থাকে । পাল্লা দিয়ে বিপুল বেগে ঘামতে শুরু করে রোহান । মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না ওর । একবার ভাবে ঘুরে দৌড় দিবে নাকি কিন্তু পরক্ষণেই এ চিন্তা বাতিল করে দেয় রোহান । নাহহহ আজকে ওর নার্ভাস হলে চলবে না । আজকে কিছু একটা করতেই হবে ।
-কিছু বলবা নাকি মাটির দিকে চেয়েই থাকবা ? আনিশার মুখ থেকে হাসিটুকু এখন উধাও । একটু সিরিয়াস ভাব ফুটে উঠেছে।
-ইয়ে আসলে তোমাকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম ?
-বলো । সমস্যা কোথায় ?
আনিশার দিকে তাকায় রোহান । নাহ মেয়েটার চোখ সবকিছু গন্ডগোল করে দেয় । এই চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারবে না রোহান। তাই মাটির দিকে তাকিয়ে একটি গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে একদমে রোহান বলে ফেললো,
'তুমি আমার কোলবালিশ হবা ?'
বলে নিজেই অবাক হয়ে যায় রোহান । এইটা ও কি বললো ????? শেষ পর্যন্ত কোলবালিশ !!!!!!!! আনিশাকে ও কোলবালিশ বললো !!!!!!! রোহানের কোলবালিশ প্রীতির কথা বন্ধুমহলে সবাই জানে এমনকি আনিশাও । কিন্তু রোহানের মুখে এই কথা শুনে কিছুটা ভড়কে যায় আনিশা।
আর রোহান ভাবতে থাকে কত বড় ভুলটাই না সে করেছে । পুরা ব্যাপারটাকে ও শুরুতেই পন্ড করে দিয়েছে । আর কিছুই ভাবতে পারে না রোহান । নিজেকে ওর ভারশূণ্য মনে হয় । কোনোকিছু আর চিন্তাভাবনা না করেই হর্ঠাত্‍ করে ঘুরে দৌড় দেয় রোহান ।
প্রথমে একটা উদ্ভট কথা তারপরে রোহানের উর্ধ্বশ্বাস দৌড় দেখে আনিশা ওখানেই স্ট্যাচু হয়ে যায় । মনে মনে ভাবতে থাকে,
-ছেলেটা আসলেই বোকা । ঠিকমত প্রোপোসটাও করতে পারলো না । পরেরবার ওকে হাতের কাছে পেয়ে নিই । শার্টের কলারটা ধরে বলবো, 'ঐ গাধা কোলবালিশটাকে একা ফেলে দৌড়ে পালালি কেন ?' এই ভেবে রোহানের খোজে পা বাড়ায় আনিশা ।
ঐদিকে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়রত এক কোলবালিশপ্রেমী জানতেও পারলো না যে, সে একটা নতুন কোলবালিশ পেতে যাচ্ছে । অনেক সুন্দর জীবনের শ্রেষ্ঠ স্পেশাল একটা কোলবালিশ ।

উত্‍সর্গ নিয়ে কিছু কথা : আগের গল্পগুলো কাউকেই উত্‍সর্গ করা হয় নি । তবে এবারের গল্পটা উত্‍সর্গ করবো একজনকে । আর সে হলো আমার প্রাণপ্রিয় কোলবালিশ । ব্যাচলরদের অতি প্রিয় একটা জিনিস । যতদিন ব্যাচেলর আছি ততদিন ভালবেসে যাবো এই কোলবালিশকে ।
 
Top