একটা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি মেয়ের ওয়েট কত হতে পারে? বিষয়টা নিয়ে অনেক্ষন ধরে চিন্তা করছে তন্ময়।চিন্তা করতে করতেই এক প্যাকেট বেনসন ফুরিয়ে ফেললো। আসলে ওয়েট টাও মূল ব্যাপার না।বডি স্ত্রাকচার-বডি ফিগার, হাইট-ওয়েট সবকিছু সম্বন্ধেই একটা ভালো আইডিয়া দরকার।আইডিয়া না থাকলে যে খুব
valobasa
বেশি সমস্যা হয়ে যাবে তা না।কিন্তু তন্ময়ের ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস সবকিছু প্রিপ্ল্যানড হয়ে কাজ করা।হিসেবে একবিন্দু ভুল হলে কাজ করে মজা পায় না তন্ময়। রিটা’র ফিগার কিছুটা মোটার দিকে।অবশ্য মোটা বলাও যায় না সেভাবে।বড়োজোর মোটার ধাত আছে বলা যায়। বিয়ের সময় রিটার ওয়েট ছিল ৫২।৩ মাসের মাথায় সেটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ালো ৫৪। ৩ দিন আগে। রিটার উত্তর- তোমার জন্য কি এখন ওয়েট মাপাতে বসবো? সারাদিন কাজ নাই কর্ম নাই,হুইল চেয়ারে বসে বসে রাজ্যের সব উদ্ভট চিন্তাভাবনা।

কথাটা সত্যি আবার মিথ্যাও।হুইলচেয়ারে বসে থাকা একটা মানুষ কাজকর্ম করতে পারবে না,কিন্তু তার সব চিন্তাভাবনাও যে উদ্ভট হবে এমন তো কোন কথা নাই!

যেমন তন্ময় গত দুইমাস ধরে একটা বিশাল রকমের প্ল্যান নিয়ে ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। এই প্ল্যান যে শুধু মাথার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে তা না,রীতিমতো খাতা কলমের সাথেও যুদ্ধ হয়েছে অনেক। খরচের ও তো একটা ব্যাপার আছে,সবকিছুই চিন্তা করতে হবে।

যা যা দরকার তা মোটামুটি যোগাড় হয়ে গেছে।একটা জিনিসই বাকি। সেটাই প্রধান বলা চলে।সেটা পেতে কষ্টও কম না। সচরাচর কেও বিক্রিও করতে চায় না। আশার কথা,একজনের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া হয়েছে,সেটাও এসে পড়বে সময়মত।

ঘড়িতে রাত ১১ টা। রিটার আসার সময় হয়ে এলো। মেয়েটা কি সুন্দর অভিনয়ই না করতে পারে।প্রতিদিন রাত ১১ টায় তাদের ছোট্ট ফ্ল্যাটে নিখুঁত অভিনয় চলে। চরিত্র ২ জন। ২ জনই মনপ্রাণ ঢেলে সে অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করে। বাইরে থেকে যে কেও দেখলে বোঝার উপায় নেই কিচ্ছু।
আস্তে আস্তে গেট খোলার শব্দ পায় তন্ময়। সিস্টেমটা রিটার ই করা। যেহেতু ঘরে কেও থাকে না,তাই ও নিজেই বাইরে থেকে লক করে যায়,আবার খুলে ঢুকে। কাজের একটা মহিলা আসে অবশ্য।টুকটাক রান্না করে দিয়ে যায়।তার কাছেও চাবি আছে।হুইলচেয়ারে বসে থাকা একটা মানুষের পক্ষে একটু কষ্টকরই ছুটাছুটি করে দরজা খুলে দেওয়া।

পৃথিবীর মানুষের কাছে এখনো পঙ্গু একটা মানুষ তন্ময়। কিন্তু নিজের ইচ্ছা শক্তি আর ডাক্তারের দেওয়া এক্সারসাইজ রোজ করতে করতে এখন পুরাপুরি সুস্থ সবল স্বাভাবিক মানুষের মতই হাঁটতে পারে ও। প্যারালাইজড হবার অভিনয়টা আরও একমাস আগে থেকেই করে আসছে। রিটা ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পায়নি। জানতে দেওয়াও যাবে না বিষয়টা। ঐ যে প্ল্যান বলে কথা!সবকিছুই প্ল্যান এর অংশ।

দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে ফ্যান চালিয়ে দেয় রিটা। দরদর করে ঘামছে। কি সুন্দরই না লাগছে অপরূপ মুখটা। তন্ময়,তন্ময় হয়েই তাকিয়ে থাকে।
-খেয়ে এসেছ?
-হ্যা। রাকিব না খাইয়ে ছাড়লো না।
মনে মনে এই উত্তরই আশা করছিলো তন্ময়। আফটারঅল, একটা প্যারালাইজড হাজবেন্ডকে দিয়ে তো আর একটা তরুণী স্ত্রীর দেখাশোনা হয় না। তার নানারকম আহ্লাদ,আব্দার,শারীরিক চাহিদা সবকিছুর জন্যই একটা শক্তপোক্ত লোক দরকার। তন্ময়ের ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড হবার সুবাদে সে দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করছে রাকিব গত দুবছর ধরে। ঠিক দু বছর আগেই তন্ময় রোড এক্সিডেন্ট করে প্যারালাইজড হয়েছিলো কিনা!
-তোমার জন্য চায়নিজ নিয়ে এসেছি। হাতমুখ ধুয়ে এসো। খাবে।
-কি দরকার ছিল! খামাকা। টাকাটা নষ্ট হল। ঘরেই তো খাবার ছিল। তোমার কষ্টের উপার্জন এভাবে ...
-কষ্ট করি তো আমাদের জন্যই। আমার লক্ষ্মী স্বামীটার জন্যই। আমার উপার্জন তুমি খাবে না তো কে খাবে? আজ যদি আমি তোমার জায়গায় থাকতাম তাহলে তুমি কি আমার জন্য করতে না বল? ...
- হ্যা, তা তো অবশ্যই...
মনে মনে বেদম হাসি পাচ্ছে তন্ময়ের। কি নিখুঁত অভিনয়! কারো কিচ্ছু বুঝার সাধ্য নেই। এমন পতিপরায়না স্ত্রী পেলে কেও মনে হয় না স্বর্গেও যেতে চাইবে। উপার্জন শব্দটা শুনেই কেমন অদ্ভুত লাগলো তন্ময়ের। একজন কিন্ডারগার্টেন টিচার রাত ১১ টায় কি করে বাইরে? নাকি রাকিবের ফ্ল্যাটে স্কুল ছুটি হওয়ার পর ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট লেসন নেওয়ার কোর্স চালু হয়েছে নতুন করে? কি জানি, হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ছোট ছোট বাচ্চারাও যে ফাস্ট আজকাল...
রাকিব আর রিটার প্রাইভেট ওয়ার্ক একবছরের বেশি সময় ধরে।অনেক সোর্সই খবরটার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
-এই তোমার অ্যালসেশিয়ান টা কই? খাইয়েছো?
- হ্যা খাইয়েছি,ঘুমায় এখন।

এই অ্যালসেশিয়ান টা আনার ব্যাপারেও রিটার অমত ছিল। কিন্তু প্ল্যান বলে কথা। প্ল্যানটা ফুলফিল করতে ওকে খুব দরকার।২ মাসে বেশ খাতির হয়ে গেছে তন্ময়ের সাথে। টার্ক বলে ডাক দিলে বিশাল জিব বের করে হেলতে দুলতে আসে। দুর্বলচিত্তের কেও দেখলে হটাৎ করে ছোটখাট চিতা বলে ভুল করতেই পারে।

টার্ক এর সাথেই নিজের মনের সব কথা বলে হালকা হয় তন্ময়। টার্ক এর খাবার সময়টায় খুব মনোযোগ দিয়ে ওর খাওয়া দেখে। বাজার থেকে লোক এসে হাড়-মাংসের একটা বিশাল টুকরো দিয়ে যায়। সেটা কামড়িয়ে কামড়িয়ে খায় টার্ক ২-৩ ঘণ্টা ধরে। ওর খাওয়ার সুবিধার জন্য তন্ময় এখন নিজেই হাড় মাংস আলাদা করে দেয়। টার্ক এর যা ওয়েট তাতে এক মনের উপর মাংস সাবাড় করা ওর একদিনের ব্যাপার। ধরাযাক,৫০-৫৫ কেজি একটা হাড় মাংসের স্তুপ যদি টার্ক কে দেওয়া হয় তাহলে সেটা ফিনিশ করতে আপ্রক্সিমেটলি ২ দিন লাগার কথা।খাওয়ার সুবিধার জন্য না হয় তন্ময় আরেকটু কষ্ট করে সুন্দর সুন্দর পিস করে দিবে।

দুইদিন পরের কথা। বারন্দার রেলিং এ ভর দিয়ে সিগারেট ফুঁকছে তন্ময়।এতখনে নীচের নর্দমায় ফেলা কাঁটা মাথার অংশবিশেষ সুয়ারেয লাইনের সাথে মিলেমিশে যাওয়ার কথা। প্ল্যানটা সাকসেসফুল করতে অনেক কষ্ট হয়েছে। সিনেমা আর বাস্তব জীবন একজিনিস না। হাতে নাতে প্রমাণ পেয়েছে ও। স্প্যানিশ মুভির গুষ্টি তুলে একটা গালি দিলো মনে মনে। সেই মুভি দেখেই না এইরকম প্ল্যান করা! প্ল্যান ঠিকই ছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে এসে মায়া পড়ে যায়। কি করবে , মানুষ তো । কুকুর তো কুকুর খুন করে না। মানুষ করে।

আর শালার যে চাপাতির জন্য এত প্রতীক্ষা সেটাও কিনা বিশ্বাসঘাতকতা করলো!! ধার না করলে মাংসই কাটতে চায় না!!
তবে একটা ব্যাপারে ওর অনুমান দেখে তন্ময় নিজেই সাটিস্ফায়েড। টার্ক কে নিয়ে ওর অনুমান একবিন্দু ভুল না। কুকুর বিশ্বাসঘাতকতা করে না...
কখনোই না।
 
Top