-আই রিকশা যাবা??
-কই??
-নিউ মার্কেট।
-হ যামু।
-ভাঁড়া কত??
-রেইট ভাঁড়া দিলেই হইব।
রিকশা করে যাচ্ছি। ভীষণ রোদ। প্রচণ্ড ঘামছি। একবারে সূর্যস্নান যাকে বলে আর কি! বাম পাশে ফিরে
দেখলাম শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ মুছছে নোভা।
পাশে বসে থাকা নোভা নামের মেয়েটি আমার স্ত্রী। হীরার মত মেয়ে সে। লাখে একটা হবে হয়ত। নিজের স্ত্রী বলে একটু ও বাড়িয়ে বলছিনা কিন্তু। যা সত্যি তাই বলছি।
আমি অভি। বাবা-মা কে হারিয়েছি ছোটকালেই। থাকি এই ঢাকা শহরেই। মাসিক ইনকাম খুব বেশি না। কোন মতে চলছে এই আরকি। একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরী করছি সাথে নিজের একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। সপ্ন দেখি একদিন আমার শশুরের মত বড় মাপের ব্যবসায়ী হব। আমার স্ত্রী নোভা তার বাবার একমাত্র মেয়ে।
বিত্তশালী বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্তেও আমার মত মধ্যবিত্ত স্বামীর সংসারে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে সে। বিয়ে হয়েছে প্রাই দু বছর হল। আজ পর্যন্ত তার মুখে কোন অভিযোগ আমি শুনিনি। যে মেয়ে বিয়ের আগে কখনো কোনও কাজ ও করেনি বিয়ের পর সে মেয়ে আজ ঘরের সকল কাজ নিজেই করে। কখনো মুখ ফুটে আমার থেকে কিছু চায় ও নি। তেমন কিছু দেওয়ার মত সামথ আমার নেই সেটা বেশ ভাল মতই সে বুঝে। আমি যদি কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করি সেটা তাকে বুঝতে দি না। কিন্তু কিভাবে যেন আমার চোখ দেখে সে সব কিছু টের পেয়ে যায়। তখন আমার কাছে এসে বলে- ‘এত চিন্তা করছ কেন? উপরে একজন আছেন। তিনি এভাবে আমাদের পরীক্ষা করেন নানা ভাবে। এ পরীক্ষায় ভাল করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। এত চিন্তা করে কোন লাভ নেই। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।’ এভাবে প্রতিটি বিপদে আমাকে সাহস জোগায় সে। সারাদিনের কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন তার নিষ্পাপ ফুলের মত মুখ খানি দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
আমার শশুরের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। নিশ্চয় ভাবছেন এমন মেয়ের পাত্র হিসেবে আমার শশুর আমাকে কেন বেছে নিয়েছে?
তাহলে শুনুন। আমার শশুরের নাম ছিল আকরাম চৌধুরী। ছিল কথাটা বলেছি কারণ তিনি এখন ওপাড়ের মানুষ। গাজিপুরে তার পাশাপাশি দুটি শিল্প কারখানা। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রী মারা যায়। একমাত্র মেয়ে নোভা কে ঘিরেই ছিল আমার শশুরের জগত। আমার বাবা এবং আমার শশুর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হন। এছাড়া শৈশবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্তের সম্পর্ক ছিল। আমার এস,এস,সি পাশের পর বাবা মারা যায়। মাকে তো ছোটকালেই হারিয়েছি। বাবাই ছিল আমার সব। বাবাকে হারিয়ে পুরপুরি ভেঙ্গে পরি। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলামনা কি করে চলব। ভিটে-বাড়ি আর কিছু ধানী জমি ছাড়া সহায় সম্পত্তি বলতে বিশেষ কিছু বাবার ছিলনা। এ সময় কাকা (আমার শশুর কে তখন কাকা বলেই ডাকতাম) আমাকে শহরে নিয়ে আসেন। ছোটকাল কাল থেকেই বরাবরের মত ভাল ছাত্র আমি। পড়াশুনার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে কাকা আমাকে বলেন টাকা পয়সার চিন্তা না করে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে। কিন্তু আমি তা মেনে নিতে পারলাম না। আমি বললাম আমাকে একটি চাকরী দিতে তাহলে বেশ ভালভাবে পড়াশুনা টা চাকরীর পাশাপাশি চালিয়ে নিতে পারব। কাকার বিশাল বাড়ির নিচের তলায় একটা রুমে আমি থাকতাম। তখন নোভাকে প্রায় সময় দেখলেও কখনো ওকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবিনি। মালিকের মেয়ে হিসেবে সবসময় সম্মানের চোখে দেখতাম। যতই দিন যেতে লাগল আমি কাকার কাছের মানুষ হতে লাগলাম। অনার্স শেষ করে কাকার অফিসে বেশ ভাল পোস্টে জয়েন করলাম। সাথে মাস্টার্স ও কমপ্লিট করতে লাগলাম। এমন সুখের সময়টাতেই একটা ঝড় এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। একদিন রাতে ঘুমুচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি কাকার আওয়াজ। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে দেখি কাকা ফোনে কথা বলতে বলতে নীচে নেমে আসছেন। আমাকে দেখে বলে উঠলেন ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বল। চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নোভাও নিচে নেমে এসেছে। কি হচ্ছে কিছুই আমি বুঝতে পারছিলাম না। তবে এটুকু আঁচ করতে পেরেছিলাম ভাল কিছু হচ্ছেনা।
গাড়িতে কাকার পাশে বসে আছি। গাড়ি কারখানার দিকে যাচ্ছে। আড় চোখে কাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। এমন চিন্তিত চোখ আগে কখনো দেখিনি। তবুও প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না।
কারখানার কাছাকাছি আসার পর সব প্রশ্নের উত্তর নিজেই আবিস্কার করলাম। এ আমি কি দেখছি! দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলছে তিনটি কারখানা। তার মধ্যে দুটো কাকার। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যেন। চারপাশে মানুষের ছুটোছুটি। কারখানা বন্ধের পর মাঝের কারখানা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরবর্তীতে আগুন পাশের যে দুটো আছে সেগুলতেও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কাকার কথা মনে পরতেই পিছে ফিরে দেখি কাকা একহাত কপালে আর একহাত বুকের কাছে রেখেছেন। হঠাৎ দেখলাম কাকা পড়ে যাচ্ছেন। দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললাম কাকাকে।
হাসপাতালে কাকা যে রুমটিতে আছেন তার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। নোভা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা কাঁদছে। কাকার ব্রেইন স্টোক হয়েছে। যেহেতু এইবার দ্বিতীয়বারের মত হয়েছে তাই বাঁচে কিনা সন্দেহ। কাকার বাড়িটি ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের আয়ত্তে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছিলাম। এমন সময় একজন নার্স এসে বললেন- আপনাদের কে রোগী ডাকছেন। ভেতরে গেলাম আমরা। কাকা তার হাত দিয়ে নোভাকে কাছে ডাকলেন। কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকালেন। এরপর কাকা নোভার কানে কানে কি যেন একটা বললেন। নোভা মাথা ঝাকিয়ে কাকার দিকে তাকাল। তারপর হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করল বাপ-মেয়ে। ওদের কে কাঁদতে দেখে আমারও ভীষণ কান্না পেল। কান্না লুকানর চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় কাকা আমাকে ডাকলেন। কথা বলতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বহু কষ্ট করে যা বলতে চাইলেন তার সারমর্ম হল এই নোভাকে আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি চট করে নোভার দিকে তাকালাম দেখলাম চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে।
বাসররাত টা নাকি অনেক বেশি আনন্দের হয় একটা মেয়ের জীবনে। কিন্তু আমার নোভার চোখে পানি। আজ প্রথম বারের মত মেয়েটিকে মুগ্ধ চোখে দেখলাম। নাহ এই মেয়ের চোখে পানি একদমই বেমানান। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। তবুও সাহস করে তার হাতটা ধরলাম। দেখলাম কান্না থামিয়ে আমার দিকে দেখে আছে অবাক চোখে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে আমায় জড়িয়ে ধরল সে! তারপর ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি তাকে বাধা দিলাম না একদম। বললাম ‘আজ ইচ্ছে মত কেঁদে নাও শেষ বারের মত। আর কখনো কাঁদতে দিবনা তোমায়’
আমার পাগলিটা ঐ রাতে আমার বুকে মাথা রেখে সারারাত কেদেছিল। আর আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম।
ওই দিনটির পর আজ পর্যন্ত নোভাকে আর কাঁদতে দিইনি। হতে পারে আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে আমার কিন্তু ভালবাসার অভাব আমার কখনও হবেনা। দোয়া করবেন যাতে যে সীমাবদ্ধতাটা আছে সেটিও যেন দূর করে দিতে পারি।
-কই??
-নিউ মার্কেট।
-হ যামু।
-ভাঁড়া কত??
-রেইট ভাঁড়া দিলেই হইব।
রিকশা করে যাচ্ছি। ভীষণ রোদ। প্রচণ্ড ঘামছি। একবারে সূর্যস্নান যাকে বলে আর কি! বাম পাশে ফিরে
দেখলাম শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ মুছছে নোভা।
পাশে বসে থাকা নোভা নামের মেয়েটি আমার স্ত্রী। হীরার মত মেয়ে সে। লাখে একটা হবে হয়ত। নিজের স্ত্রী বলে একটু ও বাড়িয়ে বলছিনা কিন্তু। যা সত্যি তাই বলছি।
আমি অভি। বাবা-মা কে হারিয়েছি ছোটকালেই। থাকি এই ঢাকা শহরেই। মাসিক ইনকাম খুব বেশি না। কোন মতে চলছে এই আরকি। একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরী করছি সাথে নিজের একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। সপ্ন দেখি একদিন আমার শশুরের মত বড় মাপের ব্যবসায়ী হব। আমার স্ত্রী নোভা তার বাবার একমাত্র মেয়ে।
বিত্তশালী বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্তেও আমার মত মধ্যবিত্ত স্বামীর সংসারে বেশ ভালই মানিয়ে নিয়েছে সে। বিয়ে হয়েছে প্রাই দু বছর হল। আজ পর্যন্ত তার মুখে কোন অভিযোগ আমি শুনিনি। যে মেয়ে বিয়ের আগে কখনো কোনও কাজ ও করেনি বিয়ের পর সে মেয়ে আজ ঘরের সকল কাজ নিজেই করে। কখনো মুখ ফুটে আমার থেকে কিছু চায় ও নি। তেমন কিছু দেওয়ার মত সামথ আমার নেই সেটা বেশ ভাল মতই সে বুঝে। আমি যদি কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করি সেটা তাকে বুঝতে দি না। কিন্তু কিভাবে যেন আমার চোখ দেখে সে সব কিছু টের পেয়ে যায়। তখন আমার কাছে এসে বলে- ‘এত চিন্তা করছ কেন? উপরে একজন আছেন। তিনি এভাবে আমাদের পরীক্ষা করেন নানা ভাবে। এ পরীক্ষায় ভাল করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। এত চিন্তা করে কোন লাভ নেই। যা হয় ভালোর জন্যই হয়।’ এভাবে প্রতিটি বিপদে আমাকে সাহস জোগায় সে। সারাদিনের কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন তার নিষ্পাপ ফুলের মত মুখ খানি দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
আমার শশুরের সম্মতিতেই আমাদের বিয়ে হয়েছে। নিশ্চয় ভাবছেন এমন মেয়ের পাত্র হিসেবে আমার শশুর আমাকে কেন বেছে নিয়েছে?
তাহলে শুনুন। আমার শশুরের নাম ছিল আকরাম চৌধুরী। ছিল কথাটা বলেছি কারণ তিনি এখন ওপাড়ের মানুষ। গাজিপুরে তার পাশাপাশি দুটি শিল্প কারখানা। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রী মারা যায়। একমাত্র মেয়ে নোভা কে ঘিরেই ছিল আমার শশুরের জগত। আমার বাবা এবং আমার শশুর দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হন। এছাড়া শৈশবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্তের সম্পর্ক ছিল। আমার এস,এস,সি পাশের পর বাবা মারা যায়। মাকে তো ছোটকালেই হারিয়েছি। বাবাই ছিল আমার সব। বাবাকে হারিয়ে পুরপুরি ভেঙ্গে পরি। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলামনা কি করে চলব। ভিটে-বাড়ি আর কিছু ধানী জমি ছাড়া সহায় সম্পত্তি বলতে বিশেষ কিছু বাবার ছিলনা। এ সময় কাকা (আমার শশুর কে তখন কাকা বলেই ডাকতাম) আমাকে শহরে নিয়ে আসেন। ছোটকাল কাল থেকেই বরাবরের মত ভাল ছাত্র আমি। পড়াশুনার প্রতি আমার আগ্রহ দেখে কাকা আমাকে বলেন টাকা পয়সার চিন্তা না করে পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে। কিন্তু আমি তা মেনে নিতে পারলাম না। আমি বললাম আমাকে একটি চাকরী দিতে তাহলে বেশ ভালভাবে পড়াশুনা টা চাকরীর পাশাপাশি চালিয়ে নিতে পারব। কাকার বিশাল বাড়ির নিচের তলায় একটা রুমে আমি থাকতাম। তখন নোভাকে প্রায় সময় দেখলেও কখনো ওকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবিনি। মালিকের মেয়ে হিসেবে সবসময় সম্মানের চোখে দেখতাম। যতই দিন যেতে লাগল আমি কাকার কাছের মানুষ হতে লাগলাম। অনার্স শেষ করে কাকার অফিসে বেশ ভাল পোস্টে জয়েন করলাম। সাথে মাস্টার্স ও কমপ্লিট করতে লাগলাম। এমন সুখের সময়টাতেই একটা ঝড় এসে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। একদিন রাতে ঘুমুচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি কাকার আওয়াজ। তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে দেখি কাকা ফোনে কথা বলতে বলতে নীচে নেমে আসছেন। আমাকে দেখে বলে উঠলেন ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বল। চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে নোভাও নিচে নেমে এসেছে। কি হচ্ছে কিছুই আমি বুঝতে পারছিলাম না। তবে এটুকু আঁচ করতে পেরেছিলাম ভাল কিছু হচ্ছেনা।
গাড়িতে কাকার পাশে বসে আছি। গাড়ি কারখানার দিকে যাচ্ছে। আড় চোখে কাকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। এমন চিন্তিত চোখ আগে কখনো দেখিনি। তবুও প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না।
কারখানার কাছাকাছি আসার পর সব প্রশ্নের উত্তর নিজেই আবিস্কার করলাম। এ আমি কি দেখছি! দাউ দাউ করে আগুনে জ্বলছে তিনটি কারখানা। তার মধ্যে দুটো কাকার। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যেন। চারপাশে মানুষের ছুটোছুটি। কারখানা বন্ধের পর মাঝের কারখানা থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়। পরবর্তীতে আগুন পাশের যে দুটো আছে সেগুলতেও ছড়িয়ে পড়ে। এসময় কাকার কথা মনে পরতেই পিছে ফিরে দেখি কাকা একহাত কপালে আর একহাত বুকের কাছে রেখেছেন। হঠাৎ দেখলাম কাকা পড়ে যাচ্ছেন। দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেললাম কাকাকে।
হাসপাতালে কাকা যে রুমটিতে আছেন তার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। নোভা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা কাঁদছে। কাকার ব্রেইন স্টোক হয়েছে। যেহেতু এইবার দ্বিতীয়বারের মত হয়েছে তাই বাঁচে কিনা সন্দেহ। কাকার বাড়িটি ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের আয়ত্তে চলে গেছে। পরিস্থিতি নিয়ে ভাবছিলাম। এমন সময় একজন নার্স এসে বললেন- আপনাদের কে রোগী ডাকছেন। ভেতরে গেলাম আমরা। কাকা তার হাত দিয়ে নোভাকে কাছে ডাকলেন। কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকালেন। এরপর কাকা নোভার কানে কানে কি যেন একটা বললেন। নোভা মাথা ঝাকিয়ে কাকার দিকে তাকাল। তারপর হঠাৎ করে কাঁদতে শুরু করল বাপ-মেয়ে। ওদের কে কাঁদতে দেখে আমারও ভীষণ কান্না পেল। কান্না লুকানর চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় কাকা আমাকে ডাকলেন। কথা বলতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তারপরও বহু কষ্ট করে যা বলতে চাইলেন তার সারমর্ম হল এই নোভাকে আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি চট করে নোভার দিকে তাকালাম দেখলাম চোখের পানি লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে।
বাসররাত টা নাকি অনেক বেশি আনন্দের হয় একটা মেয়ের জীবনে। কিন্তু আমার নোভার চোখে পানি। আজ প্রথম বারের মত মেয়েটিকে মুগ্ধ চোখে দেখলাম। নাহ এই মেয়ের চোখে পানি একদমই বেমানান। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। তবুও সাহস করে তার হাতটা ধরলাম। দেখলাম কান্না থামিয়ে আমার দিকে দেখে আছে অবাক চোখে। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে আমায় জড়িয়ে ধরল সে! তারপর ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি তাকে বাধা দিলাম না একদম। বললাম ‘আজ ইচ্ছে মত কেঁদে নাও শেষ বারের মত। আর কখনো কাঁদতে দিবনা তোমায়’
আমার পাগলিটা ঐ রাতে আমার বুকে মাথা রেখে সারারাত কেদেছিল। আর আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম।
ওই দিনটির পর আজ পর্যন্ত নোভাকে আর কাঁদতে দিইনি। হতে পারে আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে আমার কিন্তু ভালবাসার অভাব আমার কখনও হবেনা। দোয়া করবেন যাতে যে সীমাবদ্ধতাটা আছে সেটিও যেন দূর করে দিতে পারি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন