আরিফ বেশ সময় নিয়ে আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। তার চেহারার মধ্যে বোকা বোকা কিছু আছে কিনা সে বুঝার চেষ্টা করে। ক্লাস টু তে থাকতেই তার সঙ্গী মোটা ফ্রেমের চশমা। চশমার ওপাশে
তার চোখগুলোকে দেখতে ইয়া বিশাল বড় বড় গরুর চোখের মত বড় মনে হয়। ক্লাসের মেয়েরা তাকে দেখলে কেমন করে যেন তাকায়। একটু সামনে গিয়ে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে। প্রথম প্রথম আড়ালে সবাই ওকে গাধা বলে ডাকতো। এরপর নীতু একদিন ওকে ডেকে বলে, আরিফ আমি তোমার খুব চমৎকার একটা নাম দিয়েছি। তুমি কি নামটা শুনতে চাও? নীতুকে দেখে আরিফ একেবারে ভড়কে গেল। সাঙ্ঘাতিক ডেয়ারিং মেয়ে হিসেবে নীতু পুরো ক্যাম্পাসে পরিচিত। যেমন ডেয়ারিং তেমনি সুন্দরী। এক কথায় যাকে বলে ডেয়ারিং সুন্দরী। সমুদ্র দেখলে যেমন কোন কিছু চিন্তা না করে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে করে ঠিক তেমন ডেয়ারিং সুন্দরীদের দেখলে কোন কিছু চিন্তা না করে প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে করে। একদিন ক্যাম্পাসের এক ছেলে নীতুকে লাভ লেটার দিয়েছিল। নীতু খুব হাসিখুশি মুখ করে ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মুহূর্তেই মুখের ভাব চেঞ্জ হয়ে অগ্নিমূর্তি ধারন করল। ছেলেটার কলার চেপে ধমকাতে শুরু করল। আজ থেকে আমি তোর বোন। মনে থাকবে? সরি বল। বল সরি। ছেলেটা সরি বলতে বলতে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালালো। ঐ আরিফফা কথা কস না কেন? নীতুর ধমক খেয়ে আরিফ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করল। পালানোর পথ খুঁজছে কিন্তু পালানোর কোন রাস্তা পাচ্ছেনা। নীতুর সাথে বান্ধবীগুলা আরিফকে ঘিরে ধরেছে। আরিফের অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। মুচকি মুচকি হাসছে। আরিফ অনেক কষ্টে বলতে পারল, কি নাম নীতু?
আজকে থেকে তোমার নাম হল গাধু। গাধা থেকে এসেছে গাধু। বুঝেছো? - জ্বী বুঝেছি। -- গাধু নামটা শুনতে সুইট লাগেনা? - হ্যা অনেক সুইট। -- নাম পছন্দ হয়েছে। - অনেক পছন্দ হয়েছে। আরিফ নীতুর সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করছে। এর কারন হল ও যেকোন উপায়ে এই ডেয়ারিং সুন্দরীর হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়। আর এরজন্য ওর প্রতিটা কথায় সায় দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। নাহলে কখন কি কান্ড করে বসে কিছুই বলা যায়না। কিছুদিনের মধ্যেই গাধুকে নীতু এবং নীতুর কয়েকটা বান্ধবীর পিছন পিছন ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। কারন নাম গাধু হলেও আরিফ ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসেবে ভালো। ভালো বলতে যেনতেন ভালো না খুব বেশি পরিমানে ভালো। এছাড়া মোটামুটি অনেক বিষয়েই তার জ্ঞান সীমাহীন। সারা দিনরাত দেশি বিদেশি রাইটারদের প্রচুর বই পড়ে। আরিফ একটা সময় বুঝতে পারল সে নীতু নামের ডেয়ারিং সুন্দরীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আরিফ বুদ্ধির জন্য রাতুলের কাছে যায়। মেয়ে পটানোর জন্য যদি নোবেল প্রাইজ দেয়া হয় হত তবে চোখ বন্ধ করে রাতুলকে প্রতিবছর একবার করে নোবেল দিত। আরিফ গিয়ে দেখে রাতুল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। - দোস্ত তোর সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা ছিল। একটু সাইডে আয়। -- যা বলার এখানেই বল সমস্যা নাই। আমরা ভাই ভাই ই তো। - দোস্ত আমি বোধহয় নীতুর প্রেমে পড়ে গেছি।
-- কস কি? দুনিয়াতে আর কোন মাইয়া পাস নাই? শেষ পর্যন্ত নীতু? ও জানলে তোরে এক থাবড়া দিয়া উত্তরে নিব। আরেক থাবড়া দিয়া দক্ষিনে। - ভয় দেখাস কেন? একটা বুদ্ধি দে না। প্লিজ দোস্ত প্লিজ। -- আচ্ছা শোন... ড্রামাটিক কিছু একটা করতে হবে। এই যেমন, হাতভর্তি লাল গোলাপ নিয়ে নীতুর সামনে গিয়ে দাঁড়াবি। এরপর দুইহাত দুইদিকে বাড়িয়ে দিয়ে মাথাটা খানিকটা নিচু করে একটা মুচকি হাসি দিবি। এরপর হাঁটু গেঁড়ে ফুলগুলো নীতুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলবি, নীতু এই অধম তোমাকে ভালোবেসে জীবন দিতে প্রস্তুত। - দোস্ত আমি তো প্রপোজ করতে চাইছি যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাই নাই। -- যা বলছি তাই কর। - কাজ হবে তো? -- হবে হবে যা এখনই যা। নীতুকে প্রপোজ করলে কি ভয়াবহ কান্ড হতে পারে সে কথা চিন্তা না করে আরিফ হাতভর্তি ফুল নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে নীতুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। -কিরে গাধু কিছু বলবি? নীতুর হাসিখুশি চেহারা দেখে আরিফ ঘাবড়ে গেল। ফুল নিচের দিকে এবং স্টিক উপরে ধরে আছে এটা ওর খেয়াল নেই। আরিফ কোন রকমে উলটা স্টিক নীতুর হাতে গুঁজে দিয়ে ভোঁ দৌড় শুরু করল। এই দৌড় দেখলে উসাইন বোল্টও বোধহয় লজ্জা পেয়ে নেক্সট অলিম্পিকের খাতা থেকে নিজের নাম কাটিয়ে নিত। নীতু কড়িডোরে আসতেই শুনতে পেল রাতুল এবং ওর বন্ধুরা আরিফকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। রাতুল বলছে, আরিফ আসলেই একটা গাধা। প্রপোজের আইডিয়া দিয়ে কেমন বেকুব বানালাম দেখলি? বেচারা নিশ্চয়ই এখন নীতুর কাছে ধোলাই খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় যাচ্ছে।
সেদিন বাসায় যেতেই আরিফের সারা শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল। জোরে ঘোরে আবোল তাবোল বকা শুরু করল। আরিফের বাবা আফজাল সাহেব বদমেজাজী লোক। কিছু হতে না হতেই উনি রাগে টং হয়ে যান। আরিফের আবোল তাবোল বকবকানি শুনে উনি স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, ওর গালে কসে একটা থাপ্পড় মেরে ওর চাপার দাঁতগুলো খুলে ফেলো। এত বড় ধাড়ি ছেলে এখনো জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকে। ওদিকে পরপর কয়েকদিন আরিফকে ভার্সিটিতে না দেখে দেখে নীতু আরিফের নাম্বারে কল দিল। আরিফের মায়ের সাথে কথা বলে বাসার ঠিকানা জেনে নিয়ে বিকেলেই বাসায় এসে উপস্থিত। আরিফ বিছানায় শুয়ে আছে আর মা বাটিতে করে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। আরিফ লক্ষী ছেলের মত আধ শোয়া হয়ে স্যুপ খাচ্ছে। হঠাত করে রুমে নীতুকে ঢুকতে দেখে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। আর তাতে মায়ের হাত থেকে স্যুপের বাটি ফসকে গরম স্যুপ গিয়ে পড়ল আরিফের গায়ে। আরিফের কান্ড দেখে নীতু মুচকি হাসছে। আরিফ অসহ্য গায়ে জ্বলা নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছু হয়নি। গরম স্যুপ গায়ে পড়াটা মজাদার কোন অভিজ্ঞতা। আরিফের মা ওদের দুজনকে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আরিফ এবং নীতু পনেরো তলার বারান্দায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। - ঐদিন কিছু না বলে দৌড় দিয়েছিলে কেন? -- কি বলব ভুলে গিয়েছিলাম। - এখন মনে আছে? -- মনে আছে কিন্ত বলা যাবেনা।
- কেন বলা যাবেনা? -- তোমাকে ভীষন ভয় করে। - তাহলে থাকো তুমি তোমার ভয় নিয়ে। চললাম আমি। এই দাঁড়াও বলে আরিফ নীতুর হাত টেনে ধরে। নীতু ওর দিকে ফিরতেই নীতুর হাসিহাসি মুখ দেখে ভয়ে আরিফ ওর হাত ছেড়ে দেয়। নীতু, আমি খুব বোকা একটা ছেলে। এরজন্য সবাই আমাকে গাধা বলে ডাকে। তুমিও আমাকে গাধু ডাকো। আমি নিজেও জানি আমি একটা গাধা। তার উপর আমি ঠিকমত চোখে দেখিনা। চশমা ছাড়া আমার জগত অন্ধকার। সেই অন্ধকার জগতেও আমি তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাই। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা হয়ত আমার নেই। কিন্ত তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসার যোগ্যতা কি আমি পেতে পারি? নীতু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। গাধু টার কথা শুনে গলার কাছটা ভারী হয়ে উঠছে। বুকের ভীতরে কিসের যেন আলোড়ন টের পাচ্ছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়েও অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। আশ্চর্য্য এর আগে কখনো তো এমনটি হয়নি। এটাই কি তবে ভালোবাসা?
তার চোখগুলোকে দেখতে ইয়া বিশাল বড় বড় গরুর চোখের মত বড় মনে হয়। ক্লাসের মেয়েরা তাকে দেখলে কেমন করে যেন তাকায়। একটু সামনে গিয়ে হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে। প্রথম প্রথম আড়ালে সবাই ওকে গাধা বলে ডাকতো। এরপর নীতু একদিন ওকে ডেকে বলে, আরিফ আমি তোমার খুব চমৎকার একটা নাম দিয়েছি। তুমি কি নামটা শুনতে চাও? নীতুকে দেখে আরিফ একেবারে ভড়কে গেল। সাঙ্ঘাতিক ডেয়ারিং মেয়ে হিসেবে নীতু পুরো ক্যাম্পাসে পরিচিত। যেমন ডেয়ারিং তেমনি সুন্দরী। এক কথায় যাকে বলে ডেয়ারিং সুন্দরী। সমুদ্র দেখলে যেমন কোন কিছু চিন্তা না করে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছে করে ঠিক তেমন ডেয়ারিং সুন্দরীদের দেখলে কোন কিছু চিন্তা না করে প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে করে। একদিন ক্যাম্পাসের এক ছেলে নীতুকে লাভ লেটার দিয়েছিল। নীতু খুব হাসিখুশি মুখ করে ছেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মুহূর্তেই মুখের ভাব চেঞ্জ হয়ে অগ্নিমূর্তি ধারন করল। ছেলেটার কলার চেপে ধমকাতে শুরু করল। আজ থেকে আমি তোর বোন। মনে থাকবে? সরি বল। বল সরি। ছেলেটা সরি বলতে বলতে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালালো। ঐ আরিফফা কথা কস না কেন? নীতুর ধমক খেয়ে আরিফ কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করল। পালানোর পথ খুঁজছে কিন্তু পালানোর কোন রাস্তা পাচ্ছেনা। নীতুর সাথে বান্ধবীগুলা আরিফকে ঘিরে ধরেছে। আরিফের অবস্থা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। মুচকি মুচকি হাসছে। আরিফ অনেক কষ্টে বলতে পারল, কি নাম নীতু?
আজকে থেকে তোমার নাম হল গাধু। গাধা থেকে এসেছে গাধু। বুঝেছো? - জ্বী বুঝেছি। -- গাধু নামটা শুনতে সুইট লাগেনা? - হ্যা অনেক সুইট। -- নাম পছন্দ হয়েছে। - অনেক পছন্দ হয়েছে। আরিফ নীতুর সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করছে। এর কারন হল ও যেকোন উপায়ে এই ডেয়ারিং সুন্দরীর হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়। আর এরজন্য ওর প্রতিটা কথায় সায় দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। নাহলে কখন কি কান্ড করে বসে কিছুই বলা যায়না। কিছুদিনের মধ্যেই গাধুকে নীতু এবং নীতুর কয়েকটা বান্ধবীর পিছন পিছন ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। কারন নাম গাধু হলেও আরিফ ছোটবেলা থেকেই ছাত্র হিসেবে ভালো। ভালো বলতে যেনতেন ভালো না খুব বেশি পরিমানে ভালো। এছাড়া মোটামুটি অনেক বিষয়েই তার জ্ঞান সীমাহীন। সারা দিনরাত দেশি বিদেশি রাইটারদের প্রচুর বই পড়ে। আরিফ একটা সময় বুঝতে পারল সে নীতু নামের ডেয়ারিং সুন্দরীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আরিফ বুদ্ধির জন্য রাতুলের কাছে যায়। মেয়ে পটানোর জন্য যদি নোবেল প্রাইজ দেয়া হয় হত তবে চোখ বন্ধ করে রাতুলকে প্রতিবছর একবার করে নোবেল দিত। আরিফ গিয়ে দেখে রাতুল বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। - দোস্ত তোর সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা ছিল। একটু সাইডে আয়। -- যা বলার এখানেই বল সমস্যা নাই। আমরা ভাই ভাই ই তো। - দোস্ত আমি বোধহয় নীতুর প্রেমে পড়ে গেছি।
-- কস কি? দুনিয়াতে আর কোন মাইয়া পাস নাই? শেষ পর্যন্ত নীতু? ও জানলে তোরে এক থাবড়া দিয়া উত্তরে নিব। আরেক থাবড়া দিয়া দক্ষিনে। - ভয় দেখাস কেন? একটা বুদ্ধি দে না। প্লিজ দোস্ত প্লিজ। -- আচ্ছা শোন... ড্রামাটিক কিছু একটা করতে হবে। এই যেমন, হাতভর্তি লাল গোলাপ নিয়ে নীতুর সামনে গিয়ে দাঁড়াবি। এরপর দুইহাত দুইদিকে বাড়িয়ে দিয়ে মাথাটা খানিকটা নিচু করে একটা মুচকি হাসি দিবি। এরপর হাঁটু গেঁড়ে ফুলগুলো নীতুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলবি, নীতু এই অধম তোমাকে ভালোবেসে জীবন দিতে প্রস্তুত। - দোস্ত আমি তো প্রপোজ করতে চাইছি যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাই নাই। -- যা বলছি তাই কর। - কাজ হবে তো? -- হবে হবে যা এখনই যা। নীতুকে প্রপোজ করলে কি ভয়াবহ কান্ড হতে পারে সে কথা চিন্তা না করে আরিফ হাতভর্তি ফুল নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে নীতুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। -কিরে গাধু কিছু বলবি? নীতুর হাসিখুশি চেহারা দেখে আরিফ ঘাবড়ে গেল। ফুল নিচের দিকে এবং স্টিক উপরে ধরে আছে এটা ওর খেয়াল নেই। আরিফ কোন রকমে উলটা স্টিক নীতুর হাতে গুঁজে দিয়ে ভোঁ দৌড় শুরু করল। এই দৌড় দেখলে উসাইন বোল্টও বোধহয় লজ্জা পেয়ে নেক্সট অলিম্পিকের খাতা থেকে নিজের নাম কাটিয়ে নিত। নীতু কড়িডোরে আসতেই শুনতে পেল রাতুল এবং ওর বন্ধুরা আরিফকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। রাতুল বলছে, আরিফ আসলেই একটা গাধা। প্রপোজের আইডিয়া দিয়ে কেমন বেকুব বানালাম দেখলি? বেচারা নিশ্চয়ই এখন নীতুর কাছে ধোলাই খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় যাচ্ছে।
সেদিন বাসায় যেতেই আরিফের সারা শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল। জোরে ঘোরে আবোল তাবোল বকা শুরু করল। আরিফের বাবা আফজাল সাহেব বদমেজাজী লোক। কিছু হতে না হতেই উনি রাগে টং হয়ে যান। আরিফের আবোল তাবোল বকবকানি শুনে উনি স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, ওর গালে কসে একটা থাপ্পড় মেরে ওর চাপার দাঁতগুলো খুলে ফেলো। এত বড় ধাড়ি ছেলে এখনো জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকে। ওদিকে পরপর কয়েকদিন আরিফকে ভার্সিটিতে না দেখে দেখে নীতু আরিফের নাম্বারে কল দিল। আরিফের মায়ের সাথে কথা বলে বাসার ঠিকানা জেনে নিয়ে বিকেলেই বাসায় এসে উপস্থিত। আরিফ বিছানায় শুয়ে আছে আর মা বাটিতে করে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। আরিফ লক্ষী ছেলের মত আধ শোয়া হয়ে স্যুপ খাচ্ছে। হঠাত করে রুমে নীতুকে ঢুকতে দেখে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। আর তাতে মায়ের হাত থেকে স্যুপের বাটি ফসকে গরম স্যুপ গিয়ে পড়ল আরিফের গায়ে। আরিফের কান্ড দেখে নীতু মুচকি হাসছে। আরিফ অসহ্য গায়ে জ্বলা নিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছু হয়নি। গরম স্যুপ গায়ে পড়াটা মজাদার কোন অভিজ্ঞতা। আরিফের মা ওদের দুজনকে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আরিফ এবং নীতু পনেরো তলার বারান্দায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। - ঐদিন কিছু না বলে দৌড় দিয়েছিলে কেন? -- কি বলব ভুলে গিয়েছিলাম। - এখন মনে আছে? -- মনে আছে কিন্ত বলা যাবেনা।
- কেন বলা যাবেনা? -- তোমাকে ভীষন ভয় করে। - তাহলে থাকো তুমি তোমার ভয় নিয়ে। চললাম আমি। এই দাঁড়াও বলে আরিফ নীতুর হাত টেনে ধরে। নীতু ওর দিকে ফিরতেই নীতুর হাসিহাসি মুখ দেখে ভয়ে আরিফ ওর হাত ছেড়ে দেয়। নীতু, আমি খুব বোকা একটা ছেলে। এরজন্য সবাই আমাকে গাধা বলে ডাকে। তুমিও আমাকে গাধু ডাকো। আমি নিজেও জানি আমি একটা গাধা। তার উপর আমি ঠিকমত চোখে দেখিনা। চশমা ছাড়া আমার জগত অন্ধকার। সেই অন্ধকার জগতেও আমি তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাই। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা হয়ত আমার নেই। কিন্ত তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসার যোগ্যতা কি আমি পেতে পারি? নীতু কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। গাধু টার কথা শুনে গলার কাছটা ভারী হয়ে উঠছে। বুকের ভীতরে কিসের যেন আলোড়ন টের পাচ্ছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়েও অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে। আশ্চর্য্য এর আগে কখনো তো এমনটি হয়নি। এটাই কি তবে ভালোবাসা?
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন