- তোমার কোন জায়গাটা সবচেয়ে ভাল লাগে?
বিয়ে পরবর্তী ভ্রমণের জায়গা নির্বাচন নিয়েই নববধূ মহুয়া কে প্রশ্ন টা ছুড়ে দেয় নীরব। মহুয়া বোধহয় এ প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল, একটা জায়গার নাম জানতে চাইতে হুরমুড় করে বলতে শুরু করলো ...
- কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, সিলেট তো আছেই কারণ আমার চা বাগান দেখার অনেক ইচ্ছে বহুদিনের।
নীরব হাসে আর ভাবে আজকালকার নববধূ গুলো আর আগের মত চুপটি করে থাকেনা, দাদার কাছে শুনেছে দাদীর সাথে নাকি বিয়ের তিন দিন পর চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন তাও অল্প ক টা কথা! আর চার দিন আগে এরেঞ্জ মেরেজ করা বউটা কে বেড়ানোর জন্য একটা জায়গার নাম বলতে বলায় সে চারটা /পাঁচ টা বলে বসে আছে।
- এত জায়গায় যাওয়ার তো সময় নাই বউ, তবে কথায় আছেনা,'শেষ ভাল যার, সব ভাল তার ' তোমার বলা শেষ জায়গাটি কে আমি বেছে নিলাম, বলতে পারো বেছে নিতে হলো। আমার এক পরিচিত চাচার কিছু জিনিস আছে তার ভাতিজি কে দিতে হবে। মেয়েটি সিলেটের শাহজালাল এ পড়ে। ভাবছিলাম কুরিয়ার করে দিব, কিন্তু তোমার যেহেতু চা বাগান দেখার অনেক শখ তাহলে চল সিলেটেই যায় ..
- অই অই! আমি কি বলছি যে সব গুলো জায়গায় যেতে চাই? এমনি বললাম আর কি।
কথাগুলো বলেই গাল ফুলিয়ে ফেললো মহুয়া, এ নিয়ে চার দিনে তেরো বার গাল ফুলালো মহুয়া, সব ক টা বারের ফটো তুলে রেখেছে নীরব তার সেলফোনে।
আগের বারের অভিমান গুলো খুব দীর্ঘস্থায়ী ছিলনা। তবে এবারের টা নিয়ে চিন্তিত নীরব আনলাকি থার্টিন বলে কথা! চিন্তিত মুড নিয়ে ক্যামেরা তাক করতে গেলেই হেসে ফেলে মহুয়া।
- এই তুমি না!! ছবি তুলবা না কইলাম। রাগলে আমার ছবি ভালো আসেনা।
- আগের গুলো তো ভাল আসছে, আহা! ছাড়ো তো, একটা মাত্র ছবি।
মুহুর্তে অভিমান পালিয়ে গেল মহুয়ার! নীরব নিজের এই গুণ টা নিয়ে অবাক হয়! বেকুবদের মত অবাক! আরে আমিতো আগে বিয়ে করিনি তবে বউয়ের মান ভাঙ্গাতে জানি কি করে!
সকাল সাতটায় বাস। এত তাড়াতাড়ি উঠতে ভাল্লাগেনা নীরবের মহুয়ার চেচামেচি তে উঠে গেল।
- সাতটা বাজতে আরও দু ঘন্টা বাকী, এত তাড়াতাড়ি উঠালে কেন?
- তুমি কি এটাকে সিডনি পাইছো? জানো স্টেশন পৌঁছাতে লাগবে এক ঘন্টা?
-জানতাম না এখন জানলাম।
বাস ছুটে চলছে সিলেটের দিকে, ঢাকা -সিলেট। চলন্ত গাড়িতে হাই ভলিউমে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা টা অভ্যাস নীরবের তাই করছে। হঠাৎ এক কান থেকে একটা মাইক টেনে নিজের কানে গলিয়ে দিল মহুয়া।
-এমন করছো কেন?
- গান শুনবো।
- তোমার টা তে শুন!
- না, একটা তে ভাগাভাগি করে শুনব, তোমার সব কিছুতেই আমার ভাগ বুঝলে?
বলেই নীরবের বুকে মাথাটা গুজে দিল মহুয়া, বাস ভর্তি সবাই ঘুমোচ্ছে কেউ কেউ নাক ও ডাকছে শুধু এ দম্পতি জেগে আছে।
মহুয়া অল্প কদিনে অনেক আপন করে নিয়েছে নীরব কে, নীরবের অনেক মায়া জন্মে গেছে মেয়েটার উপর। রাত্রির ক্ষত টা এখনো রয়ে গেছে নীরবের বুকে, যদিও রাত্রি আর নেই এখন আর আগের জায়গায় ইচ্ছে করেই তাকে সরিয়ে দিয়েছিল নীরব। তবুও একবার দেখার লোভ টা রয়েই গেছে মনে, তার জন্যই এই সিলেট যাত্রা! সেটা জানেনা মহুয়া, জানবেও না কোন দিন।
রাত্রির সাথে নীরবের পরিচয় কোন এক নীরব নিঝুম রাত্রিতে, যোগাযোগ টা ভার্চুয়ালি। দেখা হবার আগেই শেষ তাদের রিলেশন। শেষ বলতে একদম শেষ নয়, হলে কি আর এখন দেখা করতে যেত!
কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যা মনের গভীরে আজীবন ই থেকে যাবে, যার শেষ হবেনা কখনও। রাত্রির যে দিন এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায় তার আগেও নীরবের হতে চেয়েছিল সে। নীরবের সেই একই জবাব
- I can't afford you
- Can u tell me, who can afford me?
- I don't know but i am not
- তাহলে কেন ভালবেসেছো?
- তুমি বেসেছো তাই! শুধু তোমার ভালবাসা গুলো ফেরত দিতে চেয়েছি ..
কথা শেষে কাঁদতে থাকে নীরব। আসলে যে ভালবেসে ফেলেছে অনেক রাত্রি। ভার্চুয়াল সম্পর্ক গুলো কেমন জানি!! অদ্ভুত!!
' না দেখেও তার ছায়া,
তবু অনেক হয় মায়া '
জানালা খুলে দেয় মহুয়া, চলন্ত বাস, পাগলা হাওয়া আসছে অবিরত। চুল গুলো উড়ে গিয়ে নীরবের মুখে পড়ছে, কমলা রঙ্গের জামা টি তে অনেক সুন্দর লাগছে মহুয়া কে। অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখছে নীরব। একটা কথা মনে পড়ে যায় নীরবের। একবার রাত্রি ঠিক এ রঙ্গের একটা জামা গায়ে দেয়া ফটো আপলোড দেয়, নীরব সেখানে কমেন্ট করেছিল 'কমলা সুন্দরী '।
স্টেশনে এসে গেল বাস। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলো রাত্রি আর তার স্বামী। রাত্রির স্বামীর আতিথেয়তার কমতি নেই, মামা শ্বশুরের প্রতিনিধি বলে কথা। রাত্রি কে চিনতে অসুবিধা হয়নি নীরবের কিংবা নীরব কে রাত্রির।
- কেমন আছেন? মামা কেমন আছে? ইনিই বুঝি ভাবি? বাহ! অনেক সুন্দরী, কমলা সুন্দরী! ভাবি কিছু মনে করবেন না কমলা সুন্দরী আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের ছদ্মনাম।
- জি ভালো আছি, আপনার মামা ও ভালো!
সাথে মহুয়া ও বলে উঠে না কি মনে করব? ঠিক আছে।
নীরব ভাবে এখনো আগের মত দ্রুত কথা বলে রাত্রি। সবাই সুরমা রিসোর্ট এর দিকে রওনা দেয়, সেখানেই রুম বুকড করে রেখেছে রাত্রির স্বামী শুভ। রিসোর্ট এ উঠিয়ে দিয়ে, বিকেলে চা বাগানে ঘুরার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় রাত্রি দম্পতি।
- প্যাকেট টা নিয়ে যান, আপনার মামা দিয়েছেন, সিডনি থেকে।
রাত্রি ঠিকই জানে এটা মামার পাঠানো না, নীরবের দেয়া তার বিয়ের উপহার, হাত বাড়িয়ে নেয় প্যাকেট টি তারপর পা বাড়ায় বাহিরের দিকে।
- কি ব্যাপার কেমন জানি হয়ে গেছো তুমি! কোন সমস্যা? জানতে চাই মহুয়া,
-না, লম্বা জার্নিতে কাবু হয়ে গেছি, নিজের ইমোশন টা লুকিয়ে জবাব দেয় নীরব।
-রেস্ট নাও, ঠিক হয়ে যাবে...
বাসায় এসে প্যাকেট টি খুলে রাত্রি, লাল পারের একটা সাদা শাড়ি, আর একটা BLADE এর হাত ঘড়ি শুভর জন্য। গত বৈশাখে এমন একটি শাড়ি দেয়ার ইচ্ছা ছিল নীরবের দূরে থাকায় দিতে পারেনি। রাত্রির মনে আছে সে নীরব কে একটা ফতুয়া দিতে চেয়েছিল। আজ সেটা দেয়ার সুযোগ এসেছে, অন্তত মামার নাম করে দেয়া যাবে শুভ বুঝবেনা কিংবা নীরবের বউ।
শুভ আর রাত্রি গিয়ে রিসোর্ট থেকে নীরব আর মহুয়া নিয়ে বের হয়। সিলেটের দর্শনীয় জায়গা গুলো ঘুরে দেখাবে।
- ভাবি আপনার তো চা বাগান দেখার অনেক শখ, চলেন ওদিকে যায়।
রাত্রি মহুয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে আমার দিকে তাকায়, নীরব বলে উঠে -শুধু ভাবীর শখ পুরো করবেন ! আমার কি হবে।
- সফর যেহেতু ভাবীর উপলক্ষে, সো ভাবীর চাওয়াগুলো প্রাধান্য পাবে।
চারজন ই একসঙ্গে হেসে উঠে। চা বাগানের গা ঘেঁষে হেটে চলেছে দু দম্পতি! রাত্রির হাতটি শক্ত করে ধরে হাটছে শুভ। অথচ একদিন রাত্রি বলেছিল তাকে হাতে হাত রেখে চা বাগান ঘুরিয়ে দেখাবে সে, সন্ধ্যা নেমে আসবে তবুও তারা ফিরে যেতে চাইবে না নীড়ে। নীরব নিজের হাতটি খুজে ফিরে, মহুয়া সেটা শক্ত করে ধরে রেখেছে পরম মমতায়। রাত্রি হাজার বার চাইলেও আর সে হাত ধরবে না নীরব। তার এ দু হাত এখন শুধু মহুয়ার, শুধুই মহুয়ার।
ঘুরাফেরা শেষে রিসোর্টে নামিয়ে দিয়ে আসে নীরব আর মহুয়া কে। কাল সকালে চলে যাবে তারা।
- স্টেশনে দিয়ে আসবো আমরা আপনারা তৈরী থাকবেন।
- আচ্ছা।
রাত্রি রা আসার আগেই রেডি হয়ে বসে আছে মহুয়া আর নীরব, তারা আসার পর এক সাথে নাস্তা সেরে স্টেশনের দিকে পা বাড়ায় সবাই।
বাসে উঠার পূর্বে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় রাত্রি ...
- এটা মামা কে পৌঁছে দিবেন, বলবেন উনার জামাই পছন্দ করে কিনে দিয়েছেন,
কথাটা শুভর দিকে তাকিয়ে বলছে রাত্রি আর শুভ মিস্টি একটা হাসি দিচ্ছিল তখন ভাবটা এমন আমার হাসিটা ও পারলে মামা শ্বশুর কে পৌঁছে দিবেন।
- আচ্ছা, (আমিতো জানি এটা আমাকে দিয়েছে রাত্রি)
রাত্রি কে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল নীরবের, শেষের দেখা তো হলো, গল্পের নাম অনুসারে পাঠকরা হয়তো পরের দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন?
এর পরেও দেখবে রাত্রি কে, তবে তা মহুয়ার মাঝে, মহুয়ার মাঝেই রাত্রিকে খুজেঁ নিবে নীরব। বাসায় পৌছে সিমকার্ডটা নষ্ট করে ফেলবে, যদিও রাত্রি খুব একটা ফোন করেনা। ফেসবুকে রাত্রিকে ব্লক করে দিবে, কিন্তু হৃদয়ের কোণে যে আছে সেটা কে কি করবে ভেবে পায়না নীরব, আরে মহুয়া আছেনা! তার ভালবাসায় নিশ্চয়ই এক কোণে পড়ে থাকবে রাত্রি, তবুও সে থাকবেই প্রথম প্রেম বলে কথা..... মহুয়া আর নীরবের সুখের নীড়ে থেকে থেকে উঁকি দিবে, চিনিচিন ব্যাথা লাগিয়ে দিবে হয়তো ..
বিয়ে পরবর্তী ভ্রমণের জায়গা নির্বাচন নিয়েই নববধূ মহুয়া কে প্রশ্ন টা ছুড়ে দেয় নীরব। মহুয়া বোধহয় এ প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিল, একটা জায়গার নাম জানতে চাইতে হুরমুড় করে বলতে শুরু করলো ...
- কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, সিলেট তো আছেই কারণ আমার চা বাগান দেখার অনেক ইচ্ছে বহুদিনের।
নীরব হাসে আর ভাবে আজকালকার নববধূ গুলো আর আগের মত চুপটি করে থাকেনা, দাদার কাছে শুনেছে দাদীর সাথে নাকি বিয়ের তিন দিন পর চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন তাও অল্প ক টা কথা! আর চার দিন আগে এরেঞ্জ মেরেজ করা বউটা কে বেড়ানোর জন্য একটা জায়গার নাম বলতে বলায় সে চারটা /পাঁচ টা বলে বসে আছে।
- এত জায়গায় যাওয়ার তো সময় নাই বউ, তবে কথায় আছেনা,'শেষ ভাল যার, সব ভাল তার ' তোমার বলা শেষ জায়গাটি কে আমি বেছে নিলাম, বলতে পারো বেছে নিতে হলো। আমার এক পরিচিত চাচার কিছু জিনিস আছে তার ভাতিজি কে দিতে হবে। মেয়েটি সিলেটের শাহজালাল এ পড়ে। ভাবছিলাম কুরিয়ার করে দিব, কিন্তু তোমার যেহেতু চা বাগান দেখার অনেক শখ তাহলে চল সিলেটেই যায় ..
- অই অই! আমি কি বলছি যে সব গুলো জায়গায় যেতে চাই? এমনি বললাম আর কি।
কথাগুলো বলেই গাল ফুলিয়ে ফেললো মহুয়া, এ নিয়ে চার দিনে তেরো বার গাল ফুলালো মহুয়া, সব ক টা বারের ফটো তুলে রেখেছে নীরব তার সেলফোনে।
আগের বারের অভিমান গুলো খুব দীর্ঘস্থায়ী ছিলনা। তবে এবারের টা নিয়ে চিন্তিত নীরব আনলাকি থার্টিন বলে কথা! চিন্তিত মুড নিয়ে ক্যামেরা তাক করতে গেলেই হেসে ফেলে মহুয়া।
- এই তুমি না!! ছবি তুলবা না কইলাম। রাগলে আমার ছবি ভালো আসেনা।
- আগের গুলো তো ভাল আসছে, আহা! ছাড়ো তো, একটা মাত্র ছবি।
মুহুর্তে অভিমান পালিয়ে গেল মহুয়ার! নীরব নিজের এই গুণ টা নিয়ে অবাক হয়! বেকুবদের মত অবাক! আরে আমিতো আগে বিয়ে করিনি তবে বউয়ের মান ভাঙ্গাতে জানি কি করে!
সকাল সাতটায় বাস। এত তাড়াতাড়ি উঠতে ভাল্লাগেনা নীরবের মহুয়ার চেচামেচি তে উঠে গেল।
- সাতটা বাজতে আরও দু ঘন্টা বাকী, এত তাড়াতাড়ি উঠালে কেন?
- তুমি কি এটাকে সিডনি পাইছো? জানো স্টেশন পৌঁছাতে লাগবে এক ঘন্টা?
-জানতাম না এখন জানলাম।
বাস ছুটে চলছে সিলেটের দিকে, ঢাকা -সিলেট। চলন্ত গাড়িতে হাই ভলিউমে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা টা অভ্যাস নীরবের তাই করছে। হঠাৎ এক কান থেকে একটা মাইক টেনে নিজের কানে গলিয়ে দিল মহুয়া।
-এমন করছো কেন?
- গান শুনবো।
- তোমার টা তে শুন!
- না, একটা তে ভাগাভাগি করে শুনব, তোমার সব কিছুতেই আমার ভাগ বুঝলে?
বলেই নীরবের বুকে মাথাটা গুজে দিল মহুয়া, বাস ভর্তি সবাই ঘুমোচ্ছে কেউ কেউ নাক ও ডাকছে শুধু এ দম্পতি জেগে আছে।
মহুয়া অল্প কদিনে অনেক আপন করে নিয়েছে নীরব কে, নীরবের অনেক মায়া জন্মে গেছে মেয়েটার উপর। রাত্রির ক্ষত টা এখনো রয়ে গেছে নীরবের বুকে, যদিও রাত্রি আর নেই এখন আর আগের জায়গায় ইচ্ছে করেই তাকে সরিয়ে দিয়েছিল নীরব। তবুও একবার দেখার লোভ টা রয়েই গেছে মনে, তার জন্যই এই সিলেট যাত্রা! সেটা জানেনা মহুয়া, জানবেও না কোন দিন।
রাত্রির সাথে নীরবের পরিচয় কোন এক নীরব নিঝুম রাত্রিতে, যোগাযোগ টা ভার্চুয়ালি। দেখা হবার আগেই শেষ তাদের রিলেশন। শেষ বলতে একদম শেষ নয়, হলে কি আর এখন দেখা করতে যেত!
কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যা মনের গভীরে আজীবন ই থেকে যাবে, যার শেষ হবেনা কখনও। রাত্রির যে দিন এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায় তার আগেও নীরবের হতে চেয়েছিল সে। নীরবের সেই একই জবাব
- I can't afford you
- Can u tell me, who can afford me?
- I don't know but i am not
- তাহলে কেন ভালবেসেছো?
- তুমি বেসেছো তাই! শুধু তোমার ভালবাসা গুলো ফেরত দিতে চেয়েছি ..
কথা শেষে কাঁদতে থাকে নীরব। আসলে যে ভালবেসে ফেলেছে অনেক রাত্রি। ভার্চুয়াল সম্পর্ক গুলো কেমন জানি!! অদ্ভুত!!
' না দেখেও তার ছায়া,
তবু অনেক হয় মায়া '
জানালা খুলে দেয় মহুয়া, চলন্ত বাস, পাগলা হাওয়া আসছে অবিরত। চুল গুলো উড়ে গিয়ে নীরবের মুখে পড়ছে, কমলা রঙ্গের জামা টি তে অনেক সুন্দর লাগছে মহুয়া কে। অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখছে নীরব। একটা কথা মনে পড়ে যায় নীরবের। একবার রাত্রি ঠিক এ রঙ্গের একটা জামা গায়ে দেয়া ফটো আপলোড দেয়, নীরব সেখানে কমেন্ট করেছিল 'কমলা সুন্দরী '।
স্টেশনে এসে গেল বাস। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলো রাত্রি আর তার স্বামী। রাত্রির স্বামীর আতিথেয়তার কমতি নেই, মামা শ্বশুরের প্রতিনিধি বলে কথা। রাত্রি কে চিনতে অসুবিধা হয়নি নীরবের কিংবা নীরব কে রাত্রির।
- কেমন আছেন? মামা কেমন আছে? ইনিই বুঝি ভাবি? বাহ! অনেক সুন্দরী, কমলা সুন্দরী! ভাবি কিছু মনে করবেন না কমলা সুন্দরী আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের ছদ্মনাম।
- জি ভালো আছি, আপনার মামা ও ভালো!
সাথে মহুয়া ও বলে উঠে না কি মনে করব? ঠিক আছে।
নীরব ভাবে এখনো আগের মত দ্রুত কথা বলে রাত্রি। সবাই সুরমা রিসোর্ট এর দিকে রওনা দেয়, সেখানেই রুম বুকড করে রেখেছে রাত্রির স্বামী শুভ। রিসোর্ট এ উঠিয়ে দিয়ে, বিকেলে চা বাগানে ঘুরার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় রাত্রি দম্পতি।
- প্যাকেট টা নিয়ে যান, আপনার মামা দিয়েছেন, সিডনি থেকে।
রাত্রি ঠিকই জানে এটা মামার পাঠানো না, নীরবের দেয়া তার বিয়ের উপহার, হাত বাড়িয়ে নেয় প্যাকেট টি তারপর পা বাড়ায় বাহিরের দিকে।
- কি ব্যাপার কেমন জানি হয়ে গেছো তুমি! কোন সমস্যা? জানতে চাই মহুয়া,
-না, লম্বা জার্নিতে কাবু হয়ে গেছি, নিজের ইমোশন টা লুকিয়ে জবাব দেয় নীরব।
-রেস্ট নাও, ঠিক হয়ে যাবে...
বাসায় এসে প্যাকেট টি খুলে রাত্রি, লাল পারের একটা সাদা শাড়ি, আর একটা BLADE এর হাত ঘড়ি শুভর জন্য। গত বৈশাখে এমন একটি শাড়ি দেয়ার ইচ্ছা ছিল নীরবের দূরে থাকায় দিতে পারেনি। রাত্রির মনে আছে সে নীরব কে একটা ফতুয়া দিতে চেয়েছিল। আজ সেটা দেয়ার সুযোগ এসেছে, অন্তত মামার নাম করে দেয়া যাবে শুভ বুঝবেনা কিংবা নীরবের বউ।
শুভ আর রাত্রি গিয়ে রিসোর্ট থেকে নীরব আর মহুয়া নিয়ে বের হয়। সিলেটের দর্শনীয় জায়গা গুলো ঘুরে দেখাবে।
- ভাবি আপনার তো চা বাগান দেখার অনেক শখ, চলেন ওদিকে যায়।
রাত্রি মহুয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে আমার দিকে তাকায়, নীরব বলে উঠে -শুধু ভাবীর শখ পুরো করবেন ! আমার কি হবে।
- সফর যেহেতু ভাবীর উপলক্ষে, সো ভাবীর চাওয়াগুলো প্রাধান্য পাবে।
চারজন ই একসঙ্গে হেসে উঠে। চা বাগানের গা ঘেঁষে হেটে চলেছে দু দম্পতি! রাত্রির হাতটি শক্ত করে ধরে হাটছে শুভ। অথচ একদিন রাত্রি বলেছিল তাকে হাতে হাত রেখে চা বাগান ঘুরিয়ে দেখাবে সে, সন্ধ্যা নেমে আসবে তবুও তারা ফিরে যেতে চাইবে না নীড়ে। নীরব নিজের হাতটি খুজে ফিরে, মহুয়া সেটা শক্ত করে ধরে রেখেছে পরম মমতায়। রাত্রি হাজার বার চাইলেও আর সে হাত ধরবে না নীরব। তার এ দু হাত এখন শুধু মহুয়ার, শুধুই মহুয়ার।
ঘুরাফেরা শেষে রিসোর্টে নামিয়ে দিয়ে আসে নীরব আর মহুয়া কে। কাল সকালে চলে যাবে তারা।
- স্টেশনে দিয়ে আসবো আমরা আপনারা তৈরী থাকবেন।
- আচ্ছা।
রাত্রি রা আসার আগেই রেডি হয়ে বসে আছে মহুয়া আর নীরব, তারা আসার পর এক সাথে নাস্তা সেরে স্টেশনের দিকে পা বাড়ায় সবাই।
বাসে উঠার পূর্বে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় রাত্রি ...
- এটা মামা কে পৌঁছে দিবেন, বলবেন উনার জামাই পছন্দ করে কিনে দিয়েছেন,
কথাটা শুভর দিকে তাকিয়ে বলছে রাত্রি আর শুভ মিস্টি একটা হাসি দিচ্ছিল তখন ভাবটা এমন আমার হাসিটা ও পারলে মামা শ্বশুর কে পৌঁছে দিবেন।
- আচ্ছা, (আমিতো জানি এটা আমাকে দিয়েছে রাত্রি)
রাত্রি কে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল নীরবের, শেষের দেখা তো হলো, গল্পের নাম অনুসারে পাঠকরা হয়তো পরের দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন?
এর পরেও দেখবে রাত্রি কে, তবে তা মহুয়ার মাঝে, মহুয়ার মাঝেই রাত্রিকে খুজেঁ নিবে নীরব। বাসায় পৌছে সিমকার্ডটা নষ্ট করে ফেলবে, যদিও রাত্রি খুব একটা ফোন করেনা। ফেসবুকে রাত্রিকে ব্লক করে দিবে, কিন্তু হৃদয়ের কোণে যে আছে সেটা কে কি করবে ভেবে পায়না নীরব, আরে মহুয়া আছেনা! তার ভালবাসায় নিশ্চয়ই এক কোণে পড়ে থাকবে রাত্রি, তবুও সে থাকবেই প্রথম প্রেম বলে কথা..... মহুয়া আর নীরবের সুখের নীড়ে থেকে থেকে উঁকি দিবে, চিনিচিন ব্যাথা লাগিয়ে দিবে হয়তো ..
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন