বাচ্চাটার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল পরি ।কী সুন্দর দেখতে হয়েছে বাচ্চাটা!!!পরি চোখ ফেরাতে পারেনা। বাচ্চাটাকে বুকে চেপে ধরতে খুব ইচ্ছা হয় তার ।কিন্তু পারেনা ।মজিদ তাকে বলেছে বাচ্চাটাকে ছুলে টুকরো টুকরো করে কেটে পানিতে ভাসিয়ে দেবে।মজিদকে ভীষণ ভয় পায় সে।গত পাঁচটা বছর ধরে ভয়ের মাত্রা বেড়েই চলেছে, যত দিন যাবে তত বাড়বে ছাড়া কমবে না।
“ডেলিভারি কবে দিবা মজিদ মিয়া??আমার কিন্তু বহুত তাড়া আছে।’’ বলল মানুষটা। “কাইল্কের মধ্যেই মাল পাইবেন স্যার ।মজিদ মিয়া কথার খেলাপ করে না। বাড়িতে মেয়েছেলে আছে তো,খালি ঝামেলা করে।তয় বেপার না, সোজা ভাষায়ে না বুঝলে অন্য ভাষা দিয়া বুঝামু। আপনে টেনশন নিয়েন না।’’মজিদের কথা শুনে হাটা দেয় লোকটা। লোকটার পকেটের দিকে তাকিয়ে চোখ চক চক করে ওঠে মজিদের।
বাড়িতে ফিরেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল মজিদের। “শালা,ঘরে বাইরে কুনখানে শান্তি নাই।বাইরে কাস্টমার ঘেন ঘেন করে,আর ঘরে এই ছেমড়ি। মন চাইতেসে গলা টিপা খুন কইরা ফালাই। খালি ভ্যা ভ্যা কইরা কান্নাকাটি। হারামজাদির হাত থেইকা কবে যে মুক্তি পামু।’’ পরি শুনেও না শোনার ভান করে। সে জানে মজিদ নিজের মেয়েকে খুন করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ ,টাকার লোভে বিক্রি করে দিতে তার বাধবে না। কাল বাচ্চাটাকে বিক্রি করে দিবে সে,বিনিময়ে পাবে ৫০,০০০ টাকা। পরি কিছুতেই মেনে নিতে পারে না,কাল থেকে তার মেয়েটা আর তার থাকবে না। অন্য কারো হয়ে যাবে। অন্য কাউকে মা বলে ডাকবে ।পরিকে কোনদিনও চিনবে না,জানতেও পারবে না পরির কথা। টাকার বিনিময়ে এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে মেয়েকে তুলে দেবে মজিদ। তারাই মানুষ করবে মজিদ আর পরির মেয়েকে। কিন্তু কেন?? হা,তারা গরিব।তাই বলে নিজের মেয়েকে এই ভাবে বিক্রি করে দিতে হবে??তারা কি পারত না মেয়েটাকে মানুষ করতে?এর আগেও তাদের একটা বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছে মজিদ। পরি কিছুই করতে পারেনি, শুধু চোখের পানি ফেলেছে। এইবারও তার কিছু করার নেই। মানুষ টাকে যে বড্ড ভয় পায় সে।
রাত পেরিয়ে সকাল হয়।মজিদ তৈরি হতে থাকে বের হওয়ার জন্য। পরি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।হুম,পরি তার মেয়েটার নাম রেখেছে মায়া।“মা আমার,আমারে মাফ কইরা দিশ।আমি কিসুই করতে পারলাম না তর জন্ন ।তর বাপরে আমি আটকাইতে পারমু না,সে আমার কথা শুনব না। তুই তর এই খারাপ মা টারে মাফ কইরা দিস।’’ মজিদ ফুরফুরে মেজাজে মায়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে বেরিয়ে যেতেই কান্নায়ে ভেঙ্গে পরে পরি। “মায়ারে,,ও মায়া,মা আমার,তরে ছাড়া আমি বাচমু নারে”বলে কাঁদতে থাকে। মজিদ তার গন্তবের দিকে চলতে থাকে। এক সময় পৌঁছে যায়।গিয়ে দেখে লোকটা দাড়িয়ে আছে জায়গা মত, মোবাইল ফোনে কথা বলছে।দেখে খুশি হয় সে।কাছে যেতেই লোকটার কথা শুনতে পেল মজিদ।“আরে না,কিচ্ছু টের পাবে না।প্রথমে বাচ্চাটাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। সব কিছু চেক করে নিতে হবে। অপারেশান টা কালকের মধ্যেই সেরে ফেলব। নাইলে পুলিশ ঝামেলা করতে পারে।তারা যদি জানতে পারে যে আমারা বাচ্চা কিনে কিডনি,লিভার বিক্রি করে দিচ্ছি তাইলে পুরো ফেসে যাব।কাজ শেষ হলেই বাচ্চাটাকে খতম করে দেব।”
”এ কী শুনছে মজিদ??!! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা সে। লোকটা তো তাকে বলল বাচ্চাটাকে নিজের বাচ্চার মত মানুষ করবে।ভালো খাবার দেবে, কাপড় দেবে, মানুষের মত মানুষ করবে।তবে কী তাকে মিথ্যা বলল?? মিথ্যা বলে তার মেয়েটাকে মেরে ফেলতে চায় এই শয়তানটা?? না,মজিদ সেটা হতে দেবে না।সে বেঁচে থাকতে তার মেয়েকে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না,সে দিতে দেবে না। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট তুলে নিল সে,পিছন থেকে যেয়ে মানুষটার মাথায়ে সজোরে আঘাত করে।একটা চীৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে লক্তা।মেয়েকে বুকে চেপে ধরে প্রানপনে দৌড় লাগায়।এক দৌড়ে বাড়ি ফেরে।মজিদ আর মায়াকে দেখে ছুটে আসে পরি।“ কী হইসে আপ্নের?”প্রশ্ন করে পরি। “অত কিছু কওয়ার সময় না।জলদি ছল।আমাদের পালাতে হইব এইখান থেইকা।” “ক্যান??” “প্রশ্ন করিস না বউ।
জলদি কর।”হাতের কাছে যা ছিল সব একটা কাপড়ে বেঁধে বেরিয়ে তারা বেরিয়ে যায় বস্তির বাড়িটা থেকে। নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেই তারা। বাসের মধ্যে বসে পরিকে সব খুলে বলে মজিদ।পরির চোখ পানিতে ভরে ওঠে। মজিদ তাকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে “তুই ভয় পাইস না বউ,হারামজাদাটারে উচিৎ শিক্ষা দিয়া আইছি। আমি থাকতে কেউ আমার মাইয়ারে কিসসু করবার পারব না।” “আপনে খুব ভালা,মায়ার বাপ।“মজিদ হেসে দেয়। তাই দেখে পরিও হেসে ফেলে। হাসলে পরিকে যে এতো সুন্দর লাগে তা আজ আবিষ্কার করল মজিদ। “তরে অনেক কষ্ট দিসি বউ,আমারে মাফ কইরা দিস পারলে।’’পরির চোখে চোখ রেখে বলে মজিদ।পরের কথাটা বলতে খুব লজ্জা লাগে মজিদের,বলবে নাকি বলবে না বুঝতে পারে না। শেষমেশ বলেই ফেলে সে ,“তরে মেলা ভালবাসিরে বউ।আমারে ছেড়ে কোনদিন যাস না।’’ “যামুনা, কোনদিনও যামু না।”-পরি বলল। এক হাতে মায়া আর এক হাতে পরিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এক নতুন জীবনের দিকে চলতে থাকে মজিদ, যে জীবনে শুধু সুখ,ভালোবাসা আর মায়া।
“ডেলিভারি কবে দিবা মজিদ মিয়া??আমার কিন্তু বহুত তাড়া আছে।’’ বলল মানুষটা। “কাইল্কের মধ্যেই মাল পাইবেন স্যার ।মজিদ মিয়া কথার খেলাপ করে না। বাড়িতে মেয়েছেলে আছে তো,খালি ঝামেলা করে।তয় বেপার না, সোজা ভাষায়ে না বুঝলে অন্য ভাষা দিয়া বুঝামু। আপনে টেনশন নিয়েন না।’’মজিদের কথা শুনে হাটা দেয় লোকটা। লোকটার পকেটের দিকে তাকিয়ে চোখ চক চক করে ওঠে মজিদের।
বাড়িতে ফিরেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল মজিদের। “শালা,ঘরে বাইরে কুনখানে শান্তি নাই।বাইরে কাস্টমার ঘেন ঘেন করে,আর ঘরে এই ছেমড়ি। মন চাইতেসে গলা টিপা খুন কইরা ফালাই। খালি ভ্যা ভ্যা কইরা কান্নাকাটি। হারামজাদির হাত থেইকা কবে যে মুক্তি পামু।’’ পরি শুনেও না শোনার ভান করে। সে জানে মজিদ নিজের মেয়েকে খুন করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ ,টাকার লোভে বিক্রি করে দিতে তার বাধবে না। কাল বাচ্চাটাকে বিক্রি করে দিবে সে,বিনিময়ে পাবে ৫০,০০০ টাকা। পরি কিছুতেই মেনে নিতে পারে না,কাল থেকে তার মেয়েটা আর তার থাকবে না। অন্য কারো হয়ে যাবে। অন্য কাউকে মা বলে ডাকবে ।পরিকে কোনদিনও চিনবে না,জানতেও পারবে না পরির কথা। টাকার বিনিময়ে এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে মেয়েকে তুলে দেবে মজিদ। তারাই মানুষ করবে মজিদ আর পরির মেয়েকে। কিন্তু কেন?? হা,তারা গরিব।তাই বলে নিজের মেয়েকে এই ভাবে বিক্রি করে দিতে হবে??তারা কি পারত না মেয়েটাকে মানুষ করতে?এর আগেও তাদের একটা বাচ্চাকে বিক্রি করে দিয়েছে মজিদ। পরি কিছুই করতে পারেনি, শুধু চোখের পানি ফেলেছে। এইবারও তার কিছু করার নেই। মানুষ টাকে যে বড্ড ভয় পায় সে।
রাত পেরিয়ে সকাল হয়।মজিদ তৈরি হতে থাকে বের হওয়ার জন্য। পরি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে।হুম,পরি তার মেয়েটার নাম রেখেছে মায়া।“মা আমার,আমারে মাফ কইরা দিশ।আমি কিসুই করতে পারলাম না তর জন্ন ।তর বাপরে আমি আটকাইতে পারমু না,সে আমার কথা শুনব না। তুই তর এই খারাপ মা টারে মাফ কইরা দিস।’’ মজিদ ফুরফুরে মেজাজে মায়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে বেরিয়ে যেতেই কান্নায়ে ভেঙ্গে পরে পরি। “মায়ারে,,ও মায়া,মা আমার,তরে ছাড়া আমি বাচমু নারে”বলে কাঁদতে থাকে। মজিদ তার গন্তবের দিকে চলতে থাকে। এক সময় পৌঁছে যায়।গিয়ে দেখে লোকটা দাড়িয়ে আছে জায়গা মত, মোবাইল ফোনে কথা বলছে।দেখে খুশি হয় সে।কাছে যেতেই লোকটার কথা শুনতে পেল মজিদ।“আরে না,কিচ্ছু টের পাবে না।প্রথমে বাচ্চাটাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। সব কিছু চেক করে নিতে হবে। অপারেশান টা কালকের মধ্যেই সেরে ফেলব। নাইলে পুলিশ ঝামেলা করতে পারে।তারা যদি জানতে পারে যে আমারা বাচ্চা কিনে কিডনি,লিভার বিক্রি করে দিচ্ছি তাইলে পুরো ফেসে যাব।কাজ শেষ হলেই বাচ্চাটাকে খতম করে দেব।”
”এ কী শুনছে মজিদ??!! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা সে। লোকটা তো তাকে বলল বাচ্চাটাকে নিজের বাচ্চার মত মানুষ করবে।ভালো খাবার দেবে, কাপড় দেবে, মানুষের মত মানুষ করবে।তবে কী তাকে মিথ্যা বলল?? মিথ্যা বলে তার মেয়েটাকে মেরে ফেলতে চায় এই শয়তানটা?? না,মজিদ সেটা হতে দেবে না।সে বেঁচে থাকতে তার মেয়েকে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না,সে দিতে দেবে না। পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটা ইট তুলে নিল সে,পিছন থেকে যেয়ে মানুষটার মাথায়ে সজোরে আঘাত করে।একটা চীৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে লক্তা।মেয়েকে বুকে চেপে ধরে প্রানপনে দৌড় লাগায়।এক দৌড়ে বাড়ি ফেরে।মজিদ আর মায়াকে দেখে ছুটে আসে পরি।“ কী হইসে আপ্নের?”প্রশ্ন করে পরি। “অত কিছু কওয়ার সময় না।জলদি ছল।আমাদের পালাতে হইব এইখান থেইকা।” “ক্যান??” “প্রশ্ন করিস না বউ।
জলদি কর।”হাতের কাছে যা ছিল সব একটা কাপড়ে বেঁধে বেরিয়ে তারা বেরিয়ে যায় বস্তির বাড়িটা থেকে। নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেই তারা। বাসের মধ্যে বসে পরিকে সব খুলে বলে মজিদ।পরির চোখ পানিতে ভরে ওঠে। মজিদ তাকে এক হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে “তুই ভয় পাইস না বউ,হারামজাদাটারে উচিৎ শিক্ষা দিয়া আইছি। আমি থাকতে কেউ আমার মাইয়ারে কিসসু করবার পারব না।” “আপনে খুব ভালা,মায়ার বাপ।“মজিদ হেসে দেয়। তাই দেখে পরিও হেসে ফেলে। হাসলে পরিকে যে এতো সুন্দর লাগে তা আজ আবিষ্কার করল মজিদ। “তরে অনেক কষ্ট দিসি বউ,আমারে মাফ কইরা দিস পারলে।’’পরির চোখে চোখ রেখে বলে মজিদ।পরের কথাটা বলতে খুব লজ্জা লাগে মজিদের,বলবে নাকি বলবে না বুঝতে পারে না। শেষমেশ বলেই ফেলে সে ,“তরে মেলা ভালবাসিরে বউ।আমারে ছেড়ে কোনদিন যাস না।’’ “যামুনা, কোনদিনও যামু না।”-পরি বলল। এক হাতে মায়া আর এক হাতে পরিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এক নতুন জীবনের দিকে চলতে থাকে মজিদ, যে জীবনে শুধু সুখ,ভালোবাসা আর মায়া।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন