--আমার না আজ অনেক মন খারাপ।
--মন খারাপ কেন?!
--আমার না কোন ছোট ভাই বোন নেই
--আচ্ছা ছোট ভাই-বোন না থাকা কি খুব দুঃখের?
--হ্যাঁ,অনেক দুঃখের......
--দুঃখের কেন হবে?ভেবে দেখো ছোট ভাই-বোন থাকলে তারা তোমার খাবারে ভাগ বসাতো,অকারনে মায়ের কাছে নালিশ করে মার খাওয়াতো,রাত বিরাতে চকলেট এনে দিতে বলত,তোমার আম্মুও তোমাকে আর আগের মত আদর করতো না......বল,এসব হলে কি তোমার
ভাল লাগতো?
(কিছুক্ষণের জন্য চিন্তায় পড়ে গেলাম......ছোট ভাই-বোন থাকলে কি তাহলে এতোটাই খারাপ অবস্থা হবে?কই সৌরভ ভাইয়াকে তো কখনো দুঃখ করতে দেখিনি,মাঝে মাঝে যখন ভাইয়াদের বাড়ি যেতাম তখন দেখতাম উনি আর ওনার ছোট ভাই কত মজা করে ক্রিকেট
খেলছে।ছোট ভাই-বোন থাকলে দুজন মিলে গেম খেলা যায়,রাত বিরাতে লুকোচুরি খেলা যায়,কারো সাথে ঝগড়া হলে দুজন মিলে পিটানো যায়। নাহ ছোট ভাই-বোন থাকা মনে হয় না অত খারাপ হবে......)
"কিরে?!! একা একা কার সাথে কথা বলিস!!খেতে আয়......",আম্মুর ডাকে হুঁশ ফিরলো।মাঝে মাঝেই আমি নিজের সাথে নিজে আলোচনা করি।আলোচনার কথাগুলো ঘুরেফিরে এখানে এসেই থেমে যায়।
রাত ১২ টা,আম্মু আমার বিছানা গুছিয়ে দিচ্ছে।
--আম্মু?
--বল
--আমার না একটা ভাইয়ের খুব শখ...
-ভাই?বোন না কেন?
--বোনের সাথে তো ক্রিকেট খেলতে পারতাম না।
--আচ্ছা ঠিক আছে,এখন ঘুমা।
মাসখানেক পরঃ
খেলাধুলা শেষ করে বাসায় ফিরলাম,সবাই দেখি কিছু একটা নিয়ে খুব খুশি হয়ে আছে,দাদীর কাছে জানতে পারলাম আম্মুর বাবু হবে।ভাই না বোন হবে এখন জানা সম্ভব না,কিন্তু আমি সব্বার কাছে বলে বেড়ালাম," ওই জানিস,আমার না ভাই হবে।"
নিজের খেলনাগুলো তো সব আগেই নষ্ট করে ফেলেছি,এখন ভাইকে কি দিবো,ভাই এর নাম কি হবে এসব ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাচ্ছিলো।
আম্মুর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়েছে,জানতে পারলাম ভাই না,একটা বোন পেতে যাচ্ছি আমি।প্রথমে খুব মন খারাপ হল,পরে যখন দুষ্টুমিতে মেতে থাকা একটা ছোট্ট বোনের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো,তখন আর মনে কোনকষ্ট থাকলো না।নতুন উদ্দমে আবার সব পরিকল্পনা করতে থাকলাম।একবার বাজারে গিয়ে একটা ব্যাট পছন্দ করেছিলাম।টিফিনের টাকাগুলো জমিয়ে একটা মাটির ব্যাঙ্কে জমা করে রাখছিলাম ব্যাট টা কেনার জন্য।কিন্তু আজ ব্যাঙ্কটা ভেঙে ফেললাম,টাকাগুলো দিয়ে মাহিনের জন্য পুতুল কিনবো,আমার বোনটা নাহলে
খেলবে কি দিয়ে?ও বলতে ভুলে গেছি আমার যে ছোট্ট বোন আসছে তার নাম আমিই দিয়েছি,মাহিন।
আম্মুকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে ১০ দিন আগে।আজ আমরা হসপিটালে যাচ্ছি,আম্মুর সাথে দেখা করতে।ডাক্তারগুলো কি বদমাইশ,বলে কি ১২ বছরের নিচে কাউকে ঢুকতে দিবেনা।আমি এতো বললাম যে আর তিনমাস পর ই আমার বয়স ১২ হবে,তবুওআমাকে ঢুকতে
দিলোনা।খুব কান্না পাচ্ছিলো,কিন্তু না আমি কাঁদবোনা।ডাক্তার বলেছে এখন নাকি আম্মুকে কোন কষ্ট দেওয়া যাবেনা,তাহলে মাহিন কষ্ট পাবে।
আর বড়জোর দুই-তিন সপ্তাহ,তার মধ্যেই মাহিন এসে যাবে বাসায়।অনেক ভালো লাগছে ভাবলেই,বাসায় কেমন জানি ঈদ ঈদ ভাব।
আব্বুকে আজ খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে,দাদীর সাথে অনেক্ষন ধরে কি নিয়ে যেন আলোচনা করলো,তারপর মটরসাইকেল বের করে কোথায় যেন চলে গেলো।আমি কয়েকবার দাদীর কাছে জানতে চাইলাম,কিন্তু দাদী মানা করে দিল।বললো ছোটদের এসব শুনতে নেই।
কেন জানি কিছু ভালো লাগছেনা।
এক সপ্তাহ আব্বুর খোঁজ নেই,দাদী বললো আজ নাকি আব্বু আম্মু আর মাহিন কে নিয়ে আসবে।এটাতো অনেক খুশির সংবাদ,কিন্তু দাদী এমন মনমরা হয়ে আছে কেন?আমি অবশ্য ওসব বুঝতে গেলাম না।বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আব্বু আসে।
বাসার সামনে একটা সাদা মাইক্রোবাস এসে থামলো,আমি আর আমার বড় বোন ছুটে গেলাম নিচে।পিছনের দরজা খুলে আব্বু আর আম্মু বের হল।আমি উঁকিঝুঁকি মেরে মাইক্রোর ভিতরটা দেখার চেষ্টা করলাম,কিন্তু ভিতরে কোথাও মাহিনকে দেখলাম না।আম্মুকে প্রশ্ন করলাম,"কই?মাহিন কোথায়?" কি হল বুঝলাম না,আম্মু আমাকে আর আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।আমার সামনে থেকে সবকিছু কেমন জানি ঝাঁপসা হয়ে আসছে।আব্বুর হাতে মাঝারি সাইজের একটা বাক্স,কি আছে ভিতরে?
ছোট্ট একটা খাটিয়ায় আমার বোনটাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।কয়েকজনের সাথে আব্বুও খাটিয়ার একপাশ কাঁধে তুলে নিল।যেই কাঁধে চড়ে স্কুলে যাবার কথা সেই কাঁধে ভর করে আজ আমার ছোট্ট বোনটা অজানার দেশে যাচ্ছে।ছোট্ট এই দলটার গন্তব্য গোরস্থান।কেউ মাহিনের খেলনাগুলো নিলোনা কেন?আমার বোনটা একা একা কি করবে তাহলে?
অনেক আগেই সবাই চলে গেছে।গোরস্থানের ভিতরে এখন অদ্ভুত নিরবতা।ঢোকার পথেই ডান পাশে ছোট্ট একটা কবর।আমি আস্তে করে সামনে গিয়ে বসলাম,"আমার উপর তোর অনেক অভিমান,তাইনা?বোন না চেয়ে ভাই চেয়েছিলাম তাই রাগ করেছিস?এই দ্যাখ তোর জন্য পুতুল কিনে এনেছি,খেলবিনা তুই? আর রাগ করে থাকিস না,বাসায় চল।তোর জন্য প্রতিদিন এত্তগুলো চকলেট এনে দেবো,আম্মু তোকে বেশি আদর করলেও রাগ করবোনা,তবুও ফিরে চল।"
প্রতিদিন অনেক আশা নিয়ে যাই,কিন্তু আমার ছোট্ট বোনটা বড্ড অভিমানী,এখনো রাজি হয়নি আমার সাথে ফিরে যেতে।আমি অবশ্য হাল ছাড়িনি,একদিন না একদিন ওকে ফিরে আসতেই হবে এই ভাইয়ের কাছে।..........
--মন খারাপ কেন?!
--আমার না কোন ছোট ভাই বোন নেই
--আচ্ছা ছোট ভাই-বোন না থাকা কি খুব দুঃখের?
--হ্যাঁ,অনেক দুঃখের......
--দুঃখের কেন হবে?ভেবে দেখো ছোট ভাই-বোন থাকলে তারা তোমার খাবারে ভাগ বসাতো,অকারনে মায়ের কাছে নালিশ করে মার খাওয়াতো,রাত বিরাতে চকলেট এনে দিতে বলত,তোমার আম্মুও তোমাকে আর আগের মত আদর করতো না......বল,এসব হলে কি তোমার
ভাল লাগতো?
(কিছুক্ষণের জন্য চিন্তায় পড়ে গেলাম......ছোট ভাই-বোন থাকলে কি তাহলে এতোটাই খারাপ অবস্থা হবে?কই সৌরভ ভাইয়াকে তো কখনো দুঃখ করতে দেখিনি,মাঝে মাঝে যখন ভাইয়াদের বাড়ি যেতাম তখন দেখতাম উনি আর ওনার ছোট ভাই কত মজা করে ক্রিকেট
খেলছে।ছোট ভাই-বোন থাকলে দুজন মিলে গেম খেলা যায়,রাত বিরাতে লুকোচুরি খেলা যায়,কারো সাথে ঝগড়া হলে দুজন মিলে পিটানো যায়। নাহ ছোট ভাই-বোন থাকা মনে হয় না অত খারাপ হবে......)
"কিরে?!! একা একা কার সাথে কথা বলিস!!খেতে আয়......",আম্মুর ডাকে হুঁশ ফিরলো।মাঝে মাঝেই আমি নিজের সাথে নিজে আলোচনা করি।আলোচনার কথাগুলো ঘুরেফিরে এখানে এসেই থেমে যায়।
রাত ১২ টা,আম্মু আমার বিছানা গুছিয়ে দিচ্ছে।
--আম্মু?
--বল
--আমার না একটা ভাইয়ের খুব শখ...
-ভাই?বোন না কেন?
--বোনের সাথে তো ক্রিকেট খেলতে পারতাম না।
--আচ্ছা ঠিক আছে,এখন ঘুমা।
মাসখানেক পরঃ
খেলাধুলা শেষ করে বাসায় ফিরলাম,সবাই দেখি কিছু একটা নিয়ে খুব খুশি হয়ে আছে,দাদীর কাছে জানতে পারলাম আম্মুর বাবু হবে।ভাই না বোন হবে এখন জানা সম্ভব না,কিন্তু আমি সব্বার কাছে বলে বেড়ালাম," ওই জানিস,আমার না ভাই হবে।"
নিজের খেলনাগুলো তো সব আগেই নষ্ট করে ফেলেছি,এখন ভাইকে কি দিবো,ভাই এর নাম কি হবে এসব ভাবতে ভাবতেই দিন চলে যাচ্ছিলো।
আম্মুর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়েছে,জানতে পারলাম ভাই না,একটা বোন পেতে যাচ্ছি আমি।প্রথমে খুব মন খারাপ হল,পরে যখন দুষ্টুমিতে মেতে থাকা একটা ছোট্ট বোনের চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠলো,তখন আর মনে কোনকষ্ট থাকলো না।নতুন উদ্দমে আবার সব পরিকল্পনা করতে থাকলাম।একবার বাজারে গিয়ে একটা ব্যাট পছন্দ করেছিলাম।টিফিনের টাকাগুলো জমিয়ে একটা মাটির ব্যাঙ্কে জমা করে রাখছিলাম ব্যাট টা কেনার জন্য।কিন্তু আজ ব্যাঙ্কটা ভেঙে ফেললাম,টাকাগুলো দিয়ে মাহিনের জন্য পুতুল কিনবো,আমার বোনটা নাহলে
খেলবে কি দিয়ে?ও বলতে ভুলে গেছি আমার যে ছোট্ট বোন আসছে তার নাম আমিই দিয়েছি,মাহিন।
আম্মুকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে ১০ দিন আগে।আজ আমরা হসপিটালে যাচ্ছি,আম্মুর সাথে দেখা করতে।ডাক্তারগুলো কি বদমাইশ,বলে কি ১২ বছরের নিচে কাউকে ঢুকতে দিবেনা।আমি এতো বললাম যে আর তিনমাস পর ই আমার বয়স ১২ হবে,তবুওআমাকে ঢুকতে
দিলোনা।খুব কান্না পাচ্ছিলো,কিন্তু না আমি কাঁদবোনা।ডাক্তার বলেছে এখন নাকি আম্মুকে কোন কষ্ট দেওয়া যাবেনা,তাহলে মাহিন কষ্ট পাবে।
আর বড়জোর দুই-তিন সপ্তাহ,তার মধ্যেই মাহিন এসে যাবে বাসায়।অনেক ভালো লাগছে ভাবলেই,বাসায় কেমন জানি ঈদ ঈদ ভাব।
আব্বুকে আজ খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে,দাদীর সাথে অনেক্ষন ধরে কি নিয়ে যেন আলোচনা করলো,তারপর মটরসাইকেল বের করে কোথায় যেন চলে গেলো।আমি কয়েকবার দাদীর কাছে জানতে চাইলাম,কিন্তু দাদী মানা করে দিল।বললো ছোটদের এসব শুনতে নেই।
কেন জানি কিছু ভালো লাগছেনা।
এক সপ্তাহ আব্বুর খোঁজ নেই,দাদী বললো আজ নাকি আব্বু আম্মু আর মাহিন কে নিয়ে আসবে।এটাতো অনেক খুশির সংবাদ,কিন্তু দাদী এমন মনমরা হয়ে আছে কেন?আমি অবশ্য ওসব বুঝতে গেলাম না।বারান্দায় বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন আব্বু আসে।
বাসার সামনে একটা সাদা মাইক্রোবাস এসে থামলো,আমি আর আমার বড় বোন ছুটে গেলাম নিচে।পিছনের দরজা খুলে আব্বু আর আম্মু বের হল।আমি উঁকিঝুঁকি মেরে মাইক্রোর ভিতরটা দেখার চেষ্টা করলাম,কিন্তু ভিতরে কোথাও মাহিনকে দেখলাম না।আম্মুকে প্রশ্ন করলাম,"কই?মাহিন কোথায়?" কি হল বুঝলাম না,আম্মু আমাকে আর আপুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।আমার সামনে থেকে সবকিছু কেমন জানি ঝাঁপসা হয়ে আসছে।আব্বুর হাতে মাঝারি সাইজের একটা বাক্স,কি আছে ভিতরে?
ছোট্ট একটা খাটিয়ায় আমার বোনটাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।কয়েকজনের সাথে আব্বুও খাটিয়ার একপাশ কাঁধে তুলে নিল।যেই কাঁধে চড়ে স্কুলে যাবার কথা সেই কাঁধে ভর করে আজ আমার ছোট্ট বোনটা অজানার দেশে যাচ্ছে।ছোট্ট এই দলটার গন্তব্য গোরস্থান।কেউ মাহিনের খেলনাগুলো নিলোনা কেন?আমার বোনটা একা একা কি করবে তাহলে?
অনেক আগেই সবাই চলে গেছে।গোরস্থানের ভিতরে এখন অদ্ভুত নিরবতা।ঢোকার পথেই ডান পাশে ছোট্ট একটা কবর।আমি আস্তে করে সামনে গিয়ে বসলাম,"আমার উপর তোর অনেক অভিমান,তাইনা?বোন না চেয়ে ভাই চেয়েছিলাম তাই রাগ করেছিস?এই দ্যাখ তোর জন্য পুতুল কিনে এনেছি,খেলবিনা তুই? আর রাগ করে থাকিস না,বাসায় চল।তোর জন্য প্রতিদিন এত্তগুলো চকলেট এনে দেবো,আম্মু তোকে বেশি আদর করলেও রাগ করবোনা,তবুও ফিরে চল।"
প্রতিদিন অনেক আশা নিয়ে যাই,কিন্তু আমার ছোট্ট বোনটা বড্ড অভিমানী,এখনো রাজি হয়নি আমার সাথে ফিরে যেতে।আমি অবশ্য হাল ছাড়িনি,একদিন না একদিন ওকে ফিরে আসতেই হবে এই ভাইয়ের কাছে।..........
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন