তিনতলা বাড়ির ছাদে অর্পা প্রায় বিকেলে ছোটবোন অর্নার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। হিম হিম বাতাস ওর গাল ছুঁয়ে যায়। এলোমেলো বাতাসে সিল্কি চুলগুলো দোল খায়। আকাশের বিশালতার দিকে তাকিয়ে অর্পা কি যেন ভাবে এটা কেউ বুঝতে পারেনা। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা পাড়ার ছেলেগুলাও না। ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে ইমপ্রেস করার জন্য হাঙ্কি পাঙ্কি ড্রেসআপ করে। রবির দশ সেকেন্ড পালসের মত চুলগুলো জেল দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এইটা আবার চুলের নতুন স্টাইল। এই স্টাইলকে বলে স্পাইক।
akas
চুলগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করে রাখে যেন দেখে মনে হয় এইমাত্র কারেন্টের শখ খেয়ে মাথার চুলগুলো সব খাড়া হয়ে আছে।

একদিন সাহস করে আতিক তিনতলার সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে আসে। ওর ছাদে উঠে আসা অর্পা কিংবা অর্না কেউই খেয়াল করেনি। আতিক নীরবে তিন মিটারের মত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। কি বলে কথা শুরু করবে ঠিক করতে পারেনা। ভেতরে কথা গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে কিন্তু পরক্ষনেই সবকিছু গুলিয়ে যায়।

-আ... আ... আপনি কি করছেন?
--কে? কে আপনি?
- আমি আতিক।
-- আতিক কে?

এই প্রশ্নের জবাব আতিকের কাছে নেই। অর্না তখন মুখ খুলে; আপু তোমাকে না বলেছি। নিচে কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। উনি ওদের মধ্যে একজন।

-আপনি আমার কাছে কি চান?
-- আমি জানতে এসেছি আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবেন?
- আমার ভাবনার কথা আমি আপনাকে কেন বলব?
--ভাবনা চুরি হবার ভয়ে?
-এটাও একটা কারন।
--আরও কারন আছে নাকি?
-থাকলেই বা বলব কেন?
--কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি।

আতিকের কথায় অর্পা হেসে ফেলে। আতিক বোকা বোকা চেহারা নিয়ে অপরাধীর মত শাস্তির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে।

আতিক... জন্মের পর থেকে আমি মানুষের চোখে পৃথিবী দেখে বড় হয়েছি। মাথার উপরের আকাশটা নাকি ক্ষনে ক্ষনে তার রঙ বদলায়। কখনো আসমানী, কখনো নীল, আবার কখনো নাকি কালো রঙ ধারন করে। আমি নিজের চোখে আকাশ দেখিনি তাই কল্পনার চোখে আমি আমার আকাশ সাজাই। আমি চাঁদ দেখিনি। চাঁদ নাকি অনেক সুন্দর জোছনা ছড়ায়। আমি মনের চোখে কল্পনা করে নেই। আমি মানুষের মুখের কথা কথা শুনি। মানুষের মধ্যে নাকি আবার সুন্দর অসুন্দর আছে। আমি কল্পনার চোখে মানুষ দেখতে পাই। আমার জগতে সব মানুষই একই রকম। আমি কোন পার্থক্য করতে পারিনা। কি অদ্ভুত আমার ভাবনাগুলো। তাইনা?

আতিক অবাক চোখে অর্পার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর ইচ্ছে করছে ওর চোখ দুটো অর্পাকে দিয়ে দিতে। যেই চোখে ও অর্পাকে দেখেছে সেই চোখে আর কোন কিছু দেখার ইচ্ছে আতিকের নেই। এই একটা চেহারা কল্পনা করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে এক নিমেশে কাটিয়ে দিতে পারবে।

আপুর কথা শুনে অর্নার কান্না আসছে। ওর ধারনা ও এখন বড় হচ্ছে। আর বড়রা কাঁদেনা। মাঝে মাঝে অল্প একটু কাঁদে কিন্তু সবসময় না। আতিক নামের এই ছেলেটার সামনে ও কাঁদতে পারবে না। ও কাঁদলে ছেলেটা যদি হেসে দেয় তাহলে ওর অনেক লজ্জা লাগবে। কাঁদলে বাসায় গিয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে একা একা কাঁদবে। যেন কেউ কিছু বুঝতে না পারে।
 
Top