অনেক খুজখবর নেয়ার পর জানতে পারল এই মেয়ের সাথে কিছু হওয়াটা অসম্ভব। এই পর্যন্ত অনেকেই চেষ্টা করছে । অনেক গালে ওর হাতের ছাপ আজো বিকশিত ।তাই কষ্ট করেই মনের বাসনা সুপ্ত করে রাখতে হচ্ছে। তবে ওই দিনের ঘটনার পর মেয়েটাকে আর না দেখে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় বাসা থেকে বের হয় তরু। একটু হাটার পর মেইন রোডে এসে রিকশা ধরে। লেট হয়ে গেলে মাঝে মাঝে বাস। বাসে যাওয়াটা অনেক কম। এত মানুষের ভিড়ে বাসের পরিবিশটা কেমন জানি বিদঘুটে। আর কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে লোকগুলো। এর চেয়ে চল্লিশ মিনিটে হেটে যাওয়াই ভাল লাগে। রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকান। এখানে আসার পর অনেকেই তাকিয়ে থাকে। তবে কয়েকদিন ধরে কে যেন একটু বেশিই নজর দিচ্ছে। প্রথম দুই দিন বুজতে পেরেও তাকাই নাই। এর পর দিন একটু দেখে নিল। চায়ের দোকান থেকে অনেকটা সামনে এসে বসে আছে ছেলেটা। দুই বার তাকালো তরু। ছেলেটা ছেড়টা টাইপের। চোখ সরাচ্ছে না। আর অপেক্ষা না করে চলে গেলে।
আজ প্রায় পনেরদিন ধরে রাসেল বসে থাকে এই চায়ের দোকানের সামনে। অনিচ্ছা সত্তেও কয়েক কাপ চা খাওয়া হয়। এখন অভ্যস্ত। কিন্তু যার জন্য বসে থাকা তার সাথে কথা বলা দূরে থাক, চেয়েও দেখে না মেয়েটা। দুই দিন একটুর জন্য চেয়ে দেখছিল। এইটুক ই।
তবে ইদানিং একটু হলেও দেখে যায়। এটাই খারাপ কি ? মেয়েটার নজরে তো আসতে পারছে। এখন একটু সাহস হলেই হয়, কথা একটু বলতে পারলেও শান্তি। গতকালের ঘটনার জন্য রাসেলের কনফিডেন্স অনেকটা বেড়ে গেছে। বাসা থেকে একটু লেট করে বের হইছিল। দোকানটার সামনে আসার পরই দেখতে পেল তরু এদিক ওদিক খুজতেছে। নিশ্চয় রাসেলকেই। কিন্তু যেই না দেখতে পেল, একটা ভাব নিয়ে চলে গেলে তরু।
উনিশ দিনের মাথায় বাসা থেকে পূর্ন প্রস্তুতি নিয়ে আসল । আজ যে করেই হোক, কিছু একটা বলতে হবে। অন্তত হাই, হ্যালো। মেয়েটার নজরে আসতে পারলে একটু সম্ভাবনা বাড়বে।
পরদিন অনেক আগেই চলে আসছে বাসা থেকে । রাতে ঘুমটাও ঠিক মত হয় নাই। আসার পর এক কাপ, দুই কাপ করে পাচ কাপ চা শেষ করল । কিন্তু আজ আসল না। নিজের গালে নিজেই একটা থাপরা মারার ইচ্ছা হচ্ছে।
সমস্যা কি ছেলেটার ।চায়ের দোকান থেকে আধা মাইল সামনে এসে চা নিয়ে বসে থাকে কেন? আমরা কি চা খাই না ? তু্ই খেতে পারস, এটা দেখানোর কি আছে। চা খাইবি ভাল কথা, দোকানের সামনে খা। রাস্তায় কেন? ঠিক আছি, রাস্তায় খাবি তোর ইচ্ছা, চায়ের দিকে দেখ । আমার দিকে দেখার কি আছে ? আজ মনটা খারাপ, তাই বের হই নাই । কাল গিয়ে একটা থাপড়া লাগাতে হবে। তারপর, সব ঠিক হয়ে যাবে। দেবদাস গিড়ি ছুটে যাবে, ব্যটা ছাগল।
বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার মোড়ের দিকে উকি দিল তরু । দুর থেকে কাউকে দেখা যায় কিনা। হল না। আরেকটু আগানোর পরও কাউকে দেখা গেল না। তারপর দোকানের সামনে এসে কতক্ষন দাড়িল। একটু সামনে গিয়ে আরো কয়েকসেকেন্ড এর অপেক্ষা । কাউকে না দেখে চলে আসল।
কিরে, চলে আসলি যে। ভার্সিটি যাবি না।
না মা, ভাল লাগতেছে না।
সকালে না এত তাড়াহুড়ো করে বের হলি, কি ইম্পরটেন্ট ক্লাস আছে বলে।
মায়ের কথার উত্তর দেয়ার ইচ্ছে হল। চলে গেল নিজের রুমে।
পরের দিন আবারো বের হল সকালে। আজ আর দাড়াতে ইচ্ছে হল না। একটু চোখটা ঘূড়িয়ে কাউকে না দেখে রওয়ানা দিল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ।
-ওই মামা, যাবা?
রিকশার ড্রাইবারের উত্তরের চিন্তা না করেই উঠে পড়ল।
-কই যাইবেন আপা?
জাহান্নামে। যাও।
রাস্তা তো চিনি না আপা !
আমি চিনি , যাও।
আমার গাড়ির লাইসেন্স নাই আপা। পুলিশ দেখলে সমস্যা করব। টাকা বাড়াই দিতে হবে।
ওকে দিব, যাও।
পুলিশ গুলা এমন ক্যান আপা? আমি গরিব মানুষ, আমার কাছ থেকেও টাকা খাওয়া লাগবে? খাইলে আপনাদের থেকে খাক। আপনারার টাকা আছে অনেক।
এই থামা। যাবই না তোর রিকশায়। সবগুলা ছাগল। কার মুখ দেখে যে বের হইছি ?
পরের দিন বাসা থেকে বের হওয়ার পরই ছেলেটাকে দেখতে পেল। আজ বাসার কাছেই দাড়িয়ে আছে। কয়েকবার ছেলেটার দিকে তাকাল সে। আজ তার দিকে চেয়েও দেখছে না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । ইচ্ছে হচ্ছে জুরে একটা থাবড়া দিতে। ছাগল পাগল পোলাপান। এতদিন চোখ নামাস নাই, আজ দেখস না কেন ?
এই যে, আপনার সমস্যা কি ? বাড়ির সামনে কি করেন?
……….
কি হল, কথা বলেন না যে। এইখানে কি করেন ?
-দাড়িয়ে আছি।
সেটা তো দেখতিছিই। কারন কি? কারো বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা ভদ্র ছেলের কাজ না, সেটা জানেন না ?
-ধন্যবাদ।
এখানে ধন্যবাদের কি হল?
-এই যে আমাকে ভদ্র ছেলে বললেন।
আপনাকে ভদ্র বললাম কবে, আপনি তো ছেচড়া পোলা। এই পাড়ায় তো আগে দেখি নাই। এখানে আসেন কেন?
-চা খেতে।
চা খেতে চায়ের দোকানে বসবেন। ভাব ধরে রাস্তার সামনে বসেন কেন?
-কাউকে দেখার জন্য।
এত দেখে কি হবে ?
-ভাল লাগে।
থাপড়া ভাল লাগে ?
-আপনি দিলে লাগবে।
ফাজলামি করেন ?
-জানেন, আমি আপনার থাপড়া দেখেই আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
আপনি তো হেভি বেহায়া।
-ওই দিন মার্কেটে একটা ছেলেকে থাপড়া দিছিলেন, আপনাকে ফুল দিছিল বলে। আমি ভাবছিলাম, ছিনেমার সুটিং। পড়ে দেখলাম, ক্যামেড়া নাই। এইভাবে সবার সামনে থাপড়া মারলেন, কেউ যদি কিছু করত আপনার ?
আমার এসবের অভ্যাস আছে। কারো সাহস নাই আমাকে কিছু করার। আমি যে এখানে থাকি, জানলেন কিভাবে?
ওই দিন আপনার পিছে পিছে আসছিলাম।
আরে, আমিতো ভাবছিলাম, আপনি ছেচড়া পোলা। এখনতো দেখতেছি, আপনি চোর।
-কি করব, আপনাকে না দেখে থাকার ইচ্ছে ছিল না। হারিয়ে যেন না যান, তাই পিছু নিলাম।
না দেকে থাকতে পারেন না। ? তাহলে কয়েকদিন আসেন নাই কেন?
-আসছিলাম। পিছনে ছিলাম । দেখেন নাই ।
আপনি আসলেই চোর। গেলাম।
-কোথায় যান ?
জাহান্নামে।
-আমাকে নিবেন? চোরদের জায়গা কিন্তু জাহান্নামেই হয়। একা একা গিয়ে কষ্ট করবেন, কাউকে চিনবেন ও না। আমাকে নিয়ে যান সাথে করে। আমার অনেক নামডাক আছে ওইখানে।
ইডিয়েট।
-রাসেল।
কি রাসেল।
-আমার নাম।
জানতে চাইছি ?
-না, ভুলে আরেকটা নাম ডাকছিলেন, তাই বলছি।
বুজেই ডাকছি।
-আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে, জানেন ?
সব প্লান করে করছেন, তাই না ?
-কি ?
ওই যে, কয়েকদিন দেখা দিলেন, তারপর গায়েব। তারপর একেবারে সামনে ?
-সাহস হয়নাই প্রথম দিকে ।তাই বুজতেছিলাম না কি করব।
এইভাবে কতজনকে পটাইছেন ?
-আপনি ই ফাস্ট।
হ্যালো মিস্টার , আমি কিন্তু পটি নাই। এত সহজ না সবকিছু।
-জানি।
জানলে ভাল, এখন যাই, ক্লাসে লেট হয়ে গেছি অলরেডি।
-আর কথা হবে না ?
জানি না।
-এখানেই দাড়িয়ে থাকব প্রত্যেকদিন ?
জানি না।
(কয়েকদিন পর)
-একটা দু:সংবাদ আছে।
কি ?
-বাবা অনেকদিন ধরেই চিল্লাচিল্লি করতেছে বাহিরে পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হয় নাই ।। মাঝে অনেক রাগারাগিতে রাজি হলাম। কাগজপত্র জমা দিলাম। সবই হয়ে গেছে। ৫ তারিখ ফ্লাইট।
মানে কি ? আগেতো বল নাই আমাকে।
-সুযোগ পাই নাই। আমিও চাই না যেতে । দেশে কিছু একটা করার ইচ্ছা। কিন্তু বাবা রাজি না।
কিভাবে কি ?
-টেনশন এর কিছু নাই। দেখি cancel করা যায় কিনা। তোমাকে না দেখেতো সম্ভব না । আর গেলেও মিনিমাম দুই বছরের আগে ছুটি পাব না। দেখি কি করা যায়।
এখন কিছু সম্ভব ?
-চাইলে তো সবই সম্ভব। চলো বাসায় পৌছে দেই।
হুমমমম।
-হ্যালো….
রাসেল? কইটা বাজে দেখছ?
-হুমম, চারটা।
এত রাতে কেউ ফোন দেই ? বলছিনা আমার সকালে ক্লাস আছে। না ঘুমালে সারাদিন মাথা ধরে থাকবে।
-ভাল লাগতেছে না, তাই দিলাম। মিস করতেছিলাম কাউকে।
ইটস ওকে, মন খারাপ কেন?
-কাল বিকাল ৫ টায় ফ্লাইট।
হোয়াট ননসেন্স। কি বলতেছো?
-ঠিকই বলতেছি।
রাতে তো বলনাই ?
-ইচ্ছে হয় নাই তোমাকে কষ্ট দেয়ার।
এথন যে দিলা।
-আর দিবনা।
তুমি না বলছিলা মেনেজ করবা ?
-পারি নাই। বাবা রাজি হয় না। বিদায় দিতে আসবানা?
না আসব না। তুমি না বলছিলা, আমাকে না দেখে থাকতে পারবানা। তাহলে এমনটা কেন করতেছ?
-আর কি করতাম। দুই বছর পর একেবারেই চলে আসব।
দুই বছরে যদি তোমাকে হারিয়ে দেই?
-যাব না কোথাও। ঠিকই চলে আসব । আর কথা তো হবেই। ফোন আছে কোন দিনের জন্য। সকাল ৯ টায় অপেক্ষা করব।
ওকে, আমি আসব।
…………………………
(সকাল ৯টার কাহিনী এখানে বলা হল না। কেউ কোন কথাই বলে নাই। কি বলব ?)
(বিকাল ৫ টা)
হ্যালো , উঠছ ঠিক মত।
-হুমম।
কোন সমস্যা হয় নাই তো?
-না।
মন খারাপ করে আছ কেন? তুমি মন খারাপ করলে আমার কি হবে ?
-যেতে ইচ্ছে করছে না।
তুমি ইতো সব ব্যবস্থা করছ। এখন বলতেছো ইচ্ছে করছে না। দেশে কত কাজ আছে। সবাই কি বাহিরে যায়, দেশে ভালভাবে থাকতেছে না অনেকে ?
-কি করতাম কউ ?
প্লেন থেকে একটা লাফ দিয়ে চলে আসো।
-সিউর ?
হুমমম।
-আসলে কি হবে ? একটা দিনওতো কাছে ডেকে জড়িয়ে ধর নাই।
তুমি ইতো গাল ফোলিয়ে রাখতা । আজ পেলে ঠিকই ধরতাম।
-ওকে , নিচে আসো।
মানে ?
-মানে নিচে আসো। আমাকেতো আর বাসায় আসতে দিবা না। নিচে এসে ইচ্ছে পূরন কর।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় বাসা থেকে বের হয় তরু। একটু হাটার পর মেইন রোডে এসে রিকশা ধরে। লেট হয়ে গেলে মাঝে মাঝে বাস। বাসে যাওয়াটা অনেক কম। এত মানুষের ভিড়ে বাসের পরিবিশটা কেমন জানি বিদঘুটে। আর কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে লোকগুলো। এর চেয়ে চল্লিশ মিনিটে হেটে যাওয়াই ভাল লাগে। রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকান। এখানে আসার পর অনেকেই তাকিয়ে থাকে। তবে কয়েকদিন ধরে কে যেন একটু বেশিই নজর দিচ্ছে। প্রথম দুই দিন বুজতে পেরেও তাকাই নাই। এর পর দিন একটু দেখে নিল। চায়ের দোকান থেকে অনেকটা সামনে এসে বসে আছে ছেলেটা। দুই বার তাকালো তরু। ছেলেটা ছেড়টা টাইপের। চোখ সরাচ্ছে না। আর অপেক্ষা না করে চলে গেলে।
আজ প্রায় পনেরদিন ধরে রাসেল বসে থাকে এই চায়ের দোকানের সামনে। অনিচ্ছা সত্তেও কয়েক কাপ চা খাওয়া হয়। এখন অভ্যস্ত। কিন্তু যার জন্য বসে থাকা তার সাথে কথা বলা দূরে থাক, চেয়েও দেখে না মেয়েটা। দুই দিন একটুর জন্য চেয়ে দেখছিল। এইটুক ই।
তবে ইদানিং একটু হলেও দেখে যায়। এটাই খারাপ কি ? মেয়েটার নজরে তো আসতে পারছে। এখন একটু সাহস হলেই হয়, কথা একটু বলতে পারলেও শান্তি। গতকালের ঘটনার জন্য রাসেলের কনফিডেন্স অনেকটা বেড়ে গেছে। বাসা থেকে একটু লেট করে বের হইছিল। দোকানটার সামনে আসার পরই দেখতে পেল তরু এদিক ওদিক খুজতেছে। নিশ্চয় রাসেলকেই। কিন্তু যেই না দেখতে পেল, একটা ভাব নিয়ে চলে গেলে তরু।
উনিশ দিনের মাথায় বাসা থেকে পূর্ন প্রস্তুতি নিয়ে আসল । আজ যে করেই হোক, কিছু একটা বলতে হবে। অন্তত হাই, হ্যালো। মেয়েটার নজরে আসতে পারলে একটু সম্ভাবনা বাড়বে।
পরদিন অনেক আগেই চলে আসছে বাসা থেকে । রাতে ঘুমটাও ঠিক মত হয় নাই। আসার পর এক কাপ, দুই কাপ করে পাচ কাপ চা শেষ করল । কিন্তু আজ আসল না। নিজের গালে নিজেই একটা থাপরা মারার ইচ্ছা হচ্ছে।
সমস্যা কি ছেলেটার ।চায়ের দোকান থেকে আধা মাইল সামনে এসে চা নিয়ে বসে থাকে কেন? আমরা কি চা খাই না ? তু্ই খেতে পারস, এটা দেখানোর কি আছে। চা খাইবি ভাল কথা, দোকানের সামনে খা। রাস্তায় কেন? ঠিক আছি, রাস্তায় খাবি তোর ইচ্ছা, চায়ের দিকে দেখ । আমার দিকে দেখার কি আছে ? আজ মনটা খারাপ, তাই বের হই নাই । কাল গিয়ে একটা থাপড়া লাগাতে হবে। তারপর, সব ঠিক হয়ে যাবে। দেবদাস গিড়ি ছুটে যাবে, ব্যটা ছাগল।
বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার মোড়ের দিকে উকি দিল তরু । দুর থেকে কাউকে দেখা যায় কিনা। হল না। আরেকটু আগানোর পরও কাউকে দেখা গেল না। তারপর দোকানের সামনে এসে কতক্ষন দাড়িল। একটু সামনে গিয়ে আরো কয়েকসেকেন্ড এর অপেক্ষা । কাউকে না দেখে চলে আসল।
কিরে, চলে আসলি যে। ভার্সিটি যাবি না।
না মা, ভাল লাগতেছে না।
সকালে না এত তাড়াহুড়ো করে বের হলি, কি ইম্পরটেন্ট ক্লাস আছে বলে।
মায়ের কথার উত্তর দেয়ার ইচ্ছে হল। চলে গেল নিজের রুমে।
পরের দিন আবারো বের হল সকালে। আজ আর দাড়াতে ইচ্ছে হল না। একটু চোখটা ঘূড়িয়ে কাউকে না দেখে রওয়ানা দিল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ।
-ওই মামা, যাবা?
রিকশার ড্রাইবারের উত্তরের চিন্তা না করেই উঠে পড়ল।
-কই যাইবেন আপা?
জাহান্নামে। যাও।
রাস্তা তো চিনি না আপা !
আমি চিনি , যাও।
আমার গাড়ির লাইসেন্স নাই আপা। পুলিশ দেখলে সমস্যা করব। টাকা বাড়াই দিতে হবে।
ওকে দিব, যাও।
পুলিশ গুলা এমন ক্যান আপা? আমি গরিব মানুষ, আমার কাছ থেকেও টাকা খাওয়া লাগবে? খাইলে আপনাদের থেকে খাক। আপনারার টাকা আছে অনেক।
এই থামা। যাবই না তোর রিকশায়। সবগুলা ছাগল। কার মুখ দেখে যে বের হইছি ?
পরের দিন বাসা থেকে বের হওয়ার পরই ছেলেটাকে দেখতে পেল। আজ বাসার কাছেই দাড়িয়ে আছে। কয়েকবার ছেলেটার দিকে তাকাল সে। আজ তার দিকে চেয়েও দেখছে না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । ইচ্ছে হচ্ছে জুরে একটা থাবড়া দিতে। ছাগল পাগল পোলাপান। এতদিন চোখ নামাস নাই, আজ দেখস না কেন ?
এই যে, আপনার সমস্যা কি ? বাড়ির সামনে কি করেন?
……….
কি হল, কথা বলেন না যে। এইখানে কি করেন ?
-দাড়িয়ে আছি।
সেটা তো দেখতিছিই। কারন কি? কারো বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা ভদ্র ছেলের কাজ না, সেটা জানেন না ?
-ধন্যবাদ।
এখানে ধন্যবাদের কি হল?
-এই যে আমাকে ভদ্র ছেলে বললেন।
আপনাকে ভদ্র বললাম কবে, আপনি তো ছেচড়া পোলা। এই পাড়ায় তো আগে দেখি নাই। এখানে আসেন কেন?
-চা খেতে।
চা খেতে চায়ের দোকানে বসবেন। ভাব ধরে রাস্তার সামনে বসেন কেন?
-কাউকে দেখার জন্য।
এত দেখে কি হবে ?
-ভাল লাগে।
থাপড়া ভাল লাগে ?
-আপনি দিলে লাগবে।
ফাজলামি করেন ?
-জানেন, আমি আপনার থাপড়া দেখেই আপনার প্রেমে পড়ে গেছি।
আপনি তো হেভি বেহায়া।
-ওই দিন মার্কেটে একটা ছেলেকে থাপড়া দিছিলেন, আপনাকে ফুল দিছিল বলে। আমি ভাবছিলাম, ছিনেমার সুটিং। পড়ে দেখলাম, ক্যামেড়া নাই। এইভাবে সবার সামনে থাপড়া মারলেন, কেউ যদি কিছু করত আপনার ?
আমার এসবের অভ্যাস আছে। কারো সাহস নাই আমাকে কিছু করার। আমি যে এখানে থাকি, জানলেন কিভাবে?
ওই দিন আপনার পিছে পিছে আসছিলাম।
আরে, আমিতো ভাবছিলাম, আপনি ছেচড়া পোলা। এখনতো দেখতেছি, আপনি চোর।
-কি করব, আপনাকে না দেখে থাকার ইচ্ছে ছিল না। হারিয়ে যেন না যান, তাই পিছু নিলাম।
না দেকে থাকতে পারেন না। ? তাহলে কয়েকদিন আসেন নাই কেন?
-আসছিলাম। পিছনে ছিলাম । দেখেন নাই ।
আপনি আসলেই চোর। গেলাম।
-কোথায় যান ?
জাহান্নামে।
-আমাকে নিবেন? চোরদের জায়গা কিন্তু জাহান্নামেই হয়। একা একা গিয়ে কষ্ট করবেন, কাউকে চিনবেন ও না। আমাকে নিয়ে যান সাথে করে। আমার অনেক নামডাক আছে ওইখানে।
ইডিয়েট।
-রাসেল।
কি রাসেল।
-আমার নাম।
জানতে চাইছি ?
-না, ভুলে আরেকটা নাম ডাকছিলেন, তাই বলছি।
বুজেই ডাকছি।
-আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে, জানেন ?
সব প্লান করে করছেন, তাই না ?
-কি ?
ওই যে, কয়েকদিন দেখা দিলেন, তারপর গায়েব। তারপর একেবারে সামনে ?
-সাহস হয়নাই প্রথম দিকে ।তাই বুজতেছিলাম না কি করব।
এইভাবে কতজনকে পটাইছেন ?
-আপনি ই ফাস্ট।
হ্যালো মিস্টার , আমি কিন্তু পটি নাই। এত সহজ না সবকিছু।
-জানি।
জানলে ভাল, এখন যাই, ক্লাসে লেট হয়ে গেছি অলরেডি।
-আর কথা হবে না ?
জানি না।
-এখানেই দাড়িয়ে থাকব প্রত্যেকদিন ?
জানি না।
(কয়েকদিন পর)
-একটা দু:সংবাদ আছে।
কি ?
-বাবা অনেকদিন ধরেই চিল্লাচিল্লি করতেছে বাহিরে পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হয় নাই ।। মাঝে অনেক রাগারাগিতে রাজি হলাম। কাগজপত্র জমা দিলাম। সবই হয়ে গেছে। ৫ তারিখ ফ্লাইট।
মানে কি ? আগেতো বল নাই আমাকে।
-সুযোগ পাই নাই। আমিও চাই না যেতে । দেশে কিছু একটা করার ইচ্ছা। কিন্তু বাবা রাজি না।
কিভাবে কি ?
-টেনশন এর কিছু নাই। দেখি cancel করা যায় কিনা। তোমাকে না দেখেতো সম্ভব না । আর গেলেও মিনিমাম দুই বছরের আগে ছুটি পাব না। দেখি কি করা যায়।
এখন কিছু সম্ভব ?
-চাইলে তো সবই সম্ভব। চলো বাসায় পৌছে দেই।
হুমমমম।
-হ্যালো….
রাসেল? কইটা বাজে দেখছ?
-হুমম, চারটা।
এত রাতে কেউ ফোন দেই ? বলছিনা আমার সকালে ক্লাস আছে। না ঘুমালে সারাদিন মাথা ধরে থাকবে।
-ভাল লাগতেছে না, তাই দিলাম। মিস করতেছিলাম কাউকে।
ইটস ওকে, মন খারাপ কেন?
-কাল বিকাল ৫ টায় ফ্লাইট।
হোয়াট ননসেন্স। কি বলতেছো?
-ঠিকই বলতেছি।
রাতে তো বলনাই ?
-ইচ্ছে হয় নাই তোমাকে কষ্ট দেয়ার।
এথন যে দিলা।
-আর দিবনা।
তুমি না বলছিলা মেনেজ করবা ?
-পারি নাই। বাবা রাজি হয় না। বিদায় দিতে আসবানা?
না আসব না। তুমি না বলছিলা, আমাকে না দেখে থাকতে পারবানা। তাহলে এমনটা কেন করতেছ?
-আর কি করতাম। দুই বছর পর একেবারেই চলে আসব।
দুই বছরে যদি তোমাকে হারিয়ে দেই?
-যাব না কোথাও। ঠিকই চলে আসব । আর কথা তো হবেই। ফোন আছে কোন দিনের জন্য। সকাল ৯ টায় অপেক্ষা করব।
ওকে, আমি আসব।
…………………………
(সকাল ৯টার কাহিনী এখানে বলা হল না। কেউ কোন কথাই বলে নাই। কি বলব ?)
(বিকাল ৫ টা)
হ্যালো , উঠছ ঠিক মত।
-হুমম।
কোন সমস্যা হয় নাই তো?
-না।
মন খারাপ করে আছ কেন? তুমি মন খারাপ করলে আমার কি হবে ?
-যেতে ইচ্ছে করছে না।
তুমি ইতো সব ব্যবস্থা করছ। এখন বলতেছো ইচ্ছে করছে না। দেশে কত কাজ আছে। সবাই কি বাহিরে যায়, দেশে ভালভাবে থাকতেছে না অনেকে ?
-কি করতাম কউ ?
প্লেন থেকে একটা লাফ দিয়ে চলে আসো।
-সিউর ?
হুমমম।
-আসলে কি হবে ? একটা দিনওতো কাছে ডেকে জড়িয়ে ধর নাই।
তুমি ইতো গাল ফোলিয়ে রাখতা । আজ পেলে ঠিকই ধরতাম।
-ওকে , নিচে আসো।
মানে ?
-মানে নিচে আসো। আমাকেতো আর বাসায় আসতে দিবা না। নিচে এসে ইচ্ছে পূরন কর।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন