ভালোবাসার গল্পলাল শাড়িতে নীলা। আকাশ বেশ কয়েকবার ব্যাপারটা ভাবল, নীলা নামটা কি আদৌ লাল শাড়ির সাথে যায়? আকাশের ধারণা লাল শাড়িতে মেয়েদের দারুন লাগে। তবে নীলা কি জাতের শাড়ি পড়ে আসবে
সেটা নিয়ে খানিকটা চিন্তিত আকাশ।

লাল শাড়ির বিপরীতে নীলা আকাশকে স্যুট প্যান্ট আর সাদা শার্ট আর কোটি পড়তে বলেছে। টোটাল বয় ইন ব্ল্যাক হয়ে আসতে হবে।

নীলার বান্ধবী রুমার বড় বোনের বিয়ে আজ। নীলা আর আকাশ দুজনেই বেশ উত্তেজনায় আছে। কেননা আজই ওদের প্রথম দেখা হচ্ছে।

ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করতে করতে সাতটা বেজে গেছে। নীলা বনশ্রীর সিনেটর পার্টি হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আকাশের জন্য। ফোন করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। নিজের উত্তেজনার আগুনে একটু একটু করে ঘি ঢালছে নীলা।

বাড্ডায় জ্যামে আটকে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের পিয়ন থেকে শুরু করে মন্ত্রি পর্যন্ত সবার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে আকাশ। নীলা বলেছিল ছ'টার মধ্যে চলে আসতে। অথচ এখন সাতটা পনের বাজতে চলেছে। আজকে খবর আছে! রামপুরা খালে চুবিয়ে মারবে মেয়েটা।
রুমা এসে তিন চারবার নীলা কে ডেকে গেছে। নীলার একটাই জবাব, আকাশ এলে একসাথে ভেতরে যাবে। সাড়ে সাতটা বাজে এখনো আসার খবর নেই ছেলেটার। একটা গান মনে পড়ে যাচ্ছে নীলার। এবার আসুক তারে আমি মজা দেখাব। গানের অভিনেত্রী কি লাল শাড়ি পড়েছিলেন? নীলা মনে করার চেষ্টা করছিল। পরক্ষনেই মনে পড়ল ওটা তো সাদাকালো ছবি ছিল।

আকাশ এবার রিক্সা থেকে নেমে দৌড়াতে লাগল। এই জ্যামে বসে থাকলে আজ দেখাই হবে না। সু খুলে, মোজা তাতে ভরে খালিপায়ে দৌড়াতে লাগল। ভীড়ের মধ্যেই দৌড়াচ্ছে ছেলেটা। ভাগ্য ভালো আজ খুব একটা গরম পড়েনি। নইলে নীলার হাতে রান্নার পূর্বে সেদ্ধ হয়ে যেত আকাশ। আশে পাশের লোকজন একটা স্যুট প্যান্ট পরা, প্যান্টের নিচের দিকটা গোটানো এবং সু জোড়া হাতে নিয়ে দৌড়ানো ছেলেকে দেখে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। রামপুরা ব্রীজ চোখে পড়ার সাথে সাথে আকাশের দৌড়ের বেগ বেড়ে গেল।
নীলা এবার বাধ্য হয়ে ফোন করল আকাশকে। ভেবেছিলো ফোন করবে না। কিন্তু ছেলেটা যদি ফোনটাও রিসিভ না করে কেমন লাগে তখন?

নীলা ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছে। আকাশ একহাতে ফোন আরেক হাতে সু নিয়ে ছুটছে। ফোন রিসিভ করে সময় নষ্ট করার মানে হয়না। তার চেয়ে ছুটতে থাকাটাই শ্রেয়। বনশ্রীর রোডে ঢুকে রিক্সা নেবার কথা ভাবছিল আকাশ। ভাবতে ভাবতেই উপুড় হয়ে পড়ে গেল সে। একটানা দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে আকাশ। উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। মোবাইলটা খানিকটা দুরে ছিটকে পড়ে বাজছে। কয়েকজন ধরাধরি করে তাকে রিক্সায় তুলে দিল। রিক্সাওয়ালা ভাঙাচোরা রাস্তায় বেশ জোরেই চালাচ্ছে।

নীলা রাগে ফোনটা আছাড় মারতে গিয়েও মারলো না। প্রচন্ড কান্না চেপে রিক্সা ডাক দিল। আর একমূহুর্তও নয় এখানে। রিক্সায় উঠতে যাবে এমন সময় নীলার নাম ধরে কারো ডাক শুনতে পেল।

হাটুর নিচের অংশের প্যান্ট ছিড়ে গেছে আকাশের। মাথায় আঘাতের চিহ্ন। এক হাতে সু জোড়া এবং আরেক হাতে মোবাইলটা ধরে বিদ্ধস্ত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে আকাশ। নীলা আকাশের এই অবস্থা দেখে যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সু মাটিতে রেখে কোটের ভেতরের পকেট থেকে একটা চ্যাপ্টা গোলাপ বের করে নীলার দিকে এগিয়ে দিল আকাশ। নীলার দুচোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসছে।

আকাশ আর নীলা উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তায় হাঁটছে। এরকম অবস্থায় বিয়েতে গিয়ে লজ্জা পাবার কোনো মানে খুঁজে না পেয়ে আকাশ নীলা কে একসাথে হাটার অফার দিল। নীলাও যেন চাইছিল আকাশের হাত ধরে নির্জন রাস্তায় হাঁটতে।

দুজন চুপচাপ হাঁটছে। বলার মত কোনো কথা বাকি নেই ওদের। মাঝে মাঝে নিরবতাও অনেক কিছু বলতে থাকে। নীলা আকাশের হাত ধরে হাঁটছে আর আকাশের একহাতে সু এবং আরেক হাতে স্বর্গ।
 
Top