এলোমেলো পায়ে ফুটপাত ধরে হাটছি। নাকে ফুলকো ফুলকো ডিম মামলেটের সুন্দর একটা গন্ধ পাচ্ছি। পকেটে হাত দিলাম। মাত্র ৫ টাকার একটা নোট। কি ভাব্ছেন ছেঁড়া কিনা? না নোট ঠিকই আছে। কিন্তু ৫
টাকায়কে আমাকে ডিম খাওয়াবে? রাস্তাঘাটেতো আর আমার শশুর গজিয়ে ওঠে নাই। এতক্ষণ খিদা টের পাই নাই। পকেট সংকট দেখা মাত্রই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। মাথাটা কেমন যেন একটু টলে উঠলো। ফুটপাতের একটা চা দোকান থেকে ২ টাকা দামের ২ টা বিস্কুট খেয়ে পেট ভরে পানি খেয়ে নিলাম। যাক পেটেতো তাও কিছু পরেছে। অন্তত এইবেলা আর খুব বেশি জালাবেনা।
নিজের বর্তমান অবস্থা খুবই হাস্যকর। কষ্টের মাত্রা নাকি খুব বেশি হলে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে যায়।আগে জানতাম। এখন বিশ্বাস করি।বছর খানেকআগের কথা, এস।এস।সি+ এইচ।এস।সি দুইটাতেই গোল্ডেন এ+ আমার। অনেক আশা নিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করি। দুইটাতেই এ+ ভেবেই কিনা নিজেকে অনেক আহামরি ভাবতে শুরু করি। কোচিংয়ে যাই ঠিকই কিন্তু পড়ালেখা তেমন করি না। ফলশ্রুতিতে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নটার দাফন হয়ে গেলো। ঊঠেপরে লাগলাম যদি কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী করে ফেলেছি। কোথাও চান্স পেলাম না। পরিবারের সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে। ছোটবোনতো কাঁদতে কাঁদতে বলেই ফেলল,"ভাই তোর অন্তত একটা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া উচিত ছিলো"
যেই আমি গ্রামে সবার কাছে ভালো ছাত্র হিসেবে আলাদা খাতির পেতাম। সেই আমাকেই এখন দেখলে সবাই বলে;"ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেলো। কোথাও চান্স পায় নাই। দুইটা এ+ ধুইয়া কি পানি খাইবো?"
সবার বিষ দৃষ্টিতেই যেন পরলাম আমি। বাড়ি থেকে বেরোতাম না প্রথম প্রথম। খুব নিঃসঙ্গ অনুভব করতে থাকি নিজেকে। আম্মা-আব্বাও দেখি ঠিক করে কথা বলে না। একদিন সকালে মা বলল,"তুই বাড়িতে থাক আমরা তোর খালার বাড়ি যাচ্ছি" আমি বাদে সবাই খালার বাড়ি গেলো। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালাম। বিকেলে খালা ফোন করে যা বলল তাই জীবনের ষোল আনা মাটি করার জন্য যথেষ্ট। আম্মারা যে বাসটায় যাচ্ছিলো ওটা এক্সিডেন্ট করেছে। আব্বা-আম্মা স্পট ডেড। ছোট বোনটার অবস্থা গুরুতর। তখনি ছুঁটে গেলাম হাস্পাতালে। গিয়ে দেখি ছোট বোনটার পা কেটে ফেলা হয়েছে। ও আই।সি।ইউ তে। হয়্তো আরও কষ্ট পেয়ে মরবে। আমার মূলটুকু যেন খোদা নিজ হাতে উপড়ে ফেললেন। পাথরের মত হয়ে গেছি যেন পা নড়্ছেনা। খালা জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরুকরলেন। মর্গে গিয়ে মা-বাবার লাশ দেখে আসলাম। একফোঁটাও পানি পরেনি চোখ থেকে। উলটো যেন চোখ জলে যাচ্ছিলো। টানা দুইদিন মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ে শেষমেষ হাল ছেঁড়ে দিলো আমার আদরের ছোট বোনটা। কাছের আত্মীয় স্বজনরা শ্বান্তনা নামক বিষ ঢেলে আমাকে কাঁদাতেচাইলো। আমিতো আগেই শুকিয়ে কাঠ। রস আর ঝড়বে কোথা থেকে?
সবার দাফন শেষে বাড়িতে ঢুকলাম। পুরো বাড়িটাকে শ্বশানের থেকে একটুও ভাল কিছু মনে হচ্ছিলো না। নিঃশব্দের ঝংকার যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। আব্বার রেখে যাওয়া বিষয়-আশয় বলতে শুধুই এই ভিটেবাড়ি, তাও নাকি বন্ধকী। আব্বা,আম্মা,আর বোনটা মরার ৪০ দিন পেরিয়েছে। খালারা ছোটখাটো একটা কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছিলো। আমার থাকা ঠিক হল খালার বাড়িতে। আমি ঐ রাতেইরাস্তায় বেড়িয়ে পরলাম, হারানো নিজেকে যদি কিছুটাও খুঁজে পাই এই আশায়। সারারাত হাটতে থাকলাম আর এতোদিনের জমানো চোখের পানি সব একসাথেই ঝড়িয়ে দিলাম। ভোরে এক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে ঢাকায় এলাম। ঢাকা নাকি সব পেয়েছির শহর।
আজ ঢাকায় আমার ২৫তম দিন। কোথাও থাকার জন্য একটা চৌকি আর খাওয়ার জন্য একপ্লেট মমতায় মাখানো ডালভাত আমার জোটেনি। আমার কথা শোনার সময় কারো নেই। সবাই ব্যাস্ত আপন কক্ষে। শুধু আমি ডাবল গোল্ডেন এ+, পরিবার্হীন, সোডিয়াম আলোর নিচে পকেটে এক টাকার একটা কয়েন নিয়ে শুণ্যের পানে হেটে চলেছি..
টাকায়কে আমাকে ডিম খাওয়াবে? রাস্তাঘাটেতো আর আমার শশুর গজিয়ে ওঠে নাই। এতক্ষণ খিদা টের পাই নাই। পকেট সংকট দেখা মাত্রই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। মাথাটা কেমন যেন একটু টলে উঠলো। ফুটপাতের একটা চা দোকান থেকে ২ টাকা দামের ২ টা বিস্কুট খেয়ে পেট ভরে পানি খেয়ে নিলাম। যাক পেটেতো তাও কিছু পরেছে। অন্তত এইবেলা আর খুব বেশি জালাবেনা।
নিজের বর্তমান অবস্থা খুবই হাস্যকর। কষ্টের মাত্রা নাকি খুব বেশি হলে তা উপলব্ধি করার ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে যায়।আগে জানতাম। এখন বিশ্বাস করি।বছর খানেকআগের কথা, এস।এস।সি+ এইচ।এস।সি দুইটাতেই গোল্ডেন এ+ আমার। অনেক আশা নিয়ে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করি। দুইটাতেই এ+ ভেবেই কিনা নিজেকে অনেক আহামরি ভাবতে শুরু করি। কোচিংয়ে যাই ঠিকই কিন্তু পড়ালেখা তেমন করি না। ফলশ্রুতিতে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্নটার দাফন হয়ে গেলো। ঊঠেপরে লাগলাম যদি কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী করে ফেলেছি। কোথাও চান্স পেলাম না। পরিবারের সবাই খুব কষ্ট পেয়েছে। ছোটবোনতো কাঁদতে কাঁদতে বলেই ফেলল,"ভাই তোর অন্তত একটা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া উচিত ছিলো"
যেই আমি গ্রামে সবার কাছে ভালো ছাত্র হিসেবে আলাদা খাতির পেতাম। সেই আমাকেই এখন দেখলে সবাই বলে;"ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেলো। কোথাও চান্স পায় নাই। দুইটা এ+ ধুইয়া কি পানি খাইবো?"
সবার বিষ দৃষ্টিতেই যেন পরলাম আমি। বাড়ি থেকে বেরোতাম না প্রথম প্রথম। খুব নিঃসঙ্গ অনুভব করতে থাকি নিজেকে। আম্মা-আব্বাও দেখি ঠিক করে কথা বলে না। একদিন সকালে মা বলল,"তুই বাড়িতে থাক আমরা তোর খালার বাড়ি যাচ্ছি" আমি বাদে সবাই খালার বাড়ি গেলো। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালাম। বিকেলে খালা ফোন করে যা বলল তাই জীবনের ষোল আনা মাটি করার জন্য যথেষ্ট। আম্মারা যে বাসটায় যাচ্ছিলো ওটা এক্সিডেন্ট করেছে। আব্বা-আম্মা স্পট ডেড। ছোট বোনটার অবস্থা গুরুতর। তখনি ছুঁটে গেলাম হাস্পাতালে। গিয়ে দেখি ছোট বোনটার পা কেটে ফেলা হয়েছে। ও আই।সি।ইউ তে। হয়্তো আরও কষ্ট পেয়ে মরবে। আমার মূলটুকু যেন খোদা নিজ হাতে উপড়ে ফেললেন। পাথরের মত হয়ে গেছি যেন পা নড়্ছেনা। খালা জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরুকরলেন। মর্গে গিয়ে মা-বাবার লাশ দেখে আসলাম। একফোঁটাও পানি পরেনি চোখ থেকে। উলটো যেন চোখ জলে যাচ্ছিলো। টানা দুইদিন মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ে শেষমেষ হাল ছেঁড়ে দিলো আমার আদরের ছোট বোনটা। কাছের আত্মীয় স্বজনরা শ্বান্তনা নামক বিষ ঢেলে আমাকে কাঁদাতেচাইলো। আমিতো আগেই শুকিয়ে কাঠ। রস আর ঝড়বে কোথা থেকে?
সবার দাফন শেষে বাড়িতে ঢুকলাম। পুরো বাড়িটাকে শ্বশানের থেকে একটুও ভাল কিছু মনে হচ্ছিলো না। নিঃশব্দের ঝংকার যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। আব্বার রেখে যাওয়া বিষয়-আশয় বলতে শুধুই এই ভিটেবাড়ি, তাও নাকি বন্ধকী। আব্বা,আম্মা,আর বোনটা মরার ৪০ দিন পেরিয়েছে। খালারা ছোটখাটো একটা কাঙালি ভোজের আয়োজন করেছিলো। আমার থাকা ঠিক হল খালার বাড়িতে। আমি ঐ রাতেইরাস্তায় বেড়িয়ে পরলাম, হারানো নিজেকে যদি কিছুটাও খুঁজে পাই এই আশায়। সারারাত হাটতে থাকলাম আর এতোদিনের জমানো চোখের পানি সব একসাথেই ঝড়িয়ে দিলাম। ভোরে এক ট্রাক ড্রাইভারের সাথে ঢাকায় এলাম। ঢাকা নাকি সব পেয়েছির শহর।
আজ ঢাকায় আমার ২৫তম দিন। কোথাও থাকার জন্য একটা চৌকি আর খাওয়ার জন্য একপ্লেট মমতায় মাখানো ডালভাত আমার জোটেনি। আমার কথা শোনার সময় কারো নেই। সবাই ব্যাস্ত আপন কক্ষে। শুধু আমি ডাবল গোল্ডেন এ+, পরিবার্হীন, সোডিয়াম আলোর নিচে পকেটে এক টাকার একটা কয়েন নিয়ে শুণ্যের পানে হেটে চলেছি..
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন