bangla girls Photo- বাবা, আমি তো সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছি যেন অর্ডার টা পাই। এখন যদি......
- সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। চেষ্টার নমুনা।
- তোমাকে তো বারবার বলেছি, তোমার ছেলেকে দিয়ে কিছুই হবে না। কয়দিন পরে ওর কারণে আমাদের পথে বসতে হবে।
- আহ্‌, রোজি আমাদের মাঝে তুমি কেন কথা বলছ?
- হুম, আমি কথা বললেই তো দোষ। এর কারণে আমার জীবনটাই নষ্টই হয়ে গেল।

এখন আর আমার এখানে থাকার মানে হয় না। আমাকে নিয়ে এখন বাবা আর মায়ের মধ্যে ঝগড়া হবে। অথচ আমি সবসময় তাদের চোখে ভাল হতে চেয়েছি।

আমার যখন ৮ বছর বয়স তখন মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার পরে চাচা আর নানাদের ইচ্ছায় বাবা আবার বিয়ে করেন। আমার দেখা শোনার জন্য নতুন মার আগমন এই বাড়িতে। কতোটুকু দেখা শোনা হয়েছে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ওহ্‌, আমার নামটাই তো বলা হয়নি। আমি নীল।

ড্রাইভ করতে করতে চিটাগাং চলে এসেছি, আর ভাবছি জীবনের বেশীর ভাগ সময়টা গেল বাবা-মা কে খুশী করার চেষ্টায়। কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছি অপমান। আমার নিজের মা থাকলে আজ হয়ত এমনটা হতো না। কতোদিন হলো কেউ আমাকে আদর করে না, শরীর খারাপ হলে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না, খেতে না চাইলে জোর করে খাইয়ে দিতে চায় না। শেষ কবে বাবার আদর পেয়েছি মনে করতে পারছি না। চোখ ভিজে উঠছে।

- Ohh, Shit. গাড়ি আর লাগার যায়গা পেল না। সোজা পুলিশের গাড়িতে।
- Excellent Driving!
আজকাল পুলিশরাও মজা করতে শিখেছে নাকি? ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেকে নামলাম।
- সরি অফিসার। আমি আসলে......
- সরি টরি সব থানায় বলবেন। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে আর হুঁশ থাকে না আপনাদের।

কি আর করা, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভেবে থানায় যাচ্ছি। থানায় যাওয়ার পরে একবার মনে হল নিজের পরিচয়টা দেই। পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। এতো রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার চেয় থানায় একরাত থেকে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ১৪ শিকের মধ্যে ঢুকলাম। সন্ধ্যা হতে অল্প বাকি। ভেতরটা গুমোট অন্ধকার। বিশ্রী গন্ধ। মনে হচ্ছে কয়েকদিনের বাসি খাবার পচে গন্ধ আসছে। এখানে সারারাত থাকা অসম্ভব। সেন্ট্রি কে ডাকতে যাবো এমন সময় করিডরে লাইট জ্বেলে দিল। এবার গরাদে কিছু আলো ঢুকেছে। ছোট একটা ঘর। একপাশে পানির কলসি, অন্য পাশে কেউ একজন উল্টোদিক ফিরে শুয়ে আছে। খাবার গুলো তাকেই দেয়া হয়েছিল। অর্ধেক ঘর জুড়ে খাবার ছিটানো। পাগল নাকি? পাগল হলে তার সাথে রাত কাটাতে হবে ভাবতেইগা শিউরে উঠল। থানায় আরো একটা জেলখানা ছিল। ওটাতে বেশ কয়েকজন আছে। ভয়ংকর চেহারা। আমার গেট আপ দেখেই হয়তো এই রুমে দিয়েছে। কিন্তু তাই বলে কোন পাগলের সাথে?

এমন সময় দেখলাম মানুষটি পাশ ফিরল। আমি ভেবে ছিলাম কোন ছেলে। এখন দেখছি একটা মেয়ে। ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। লোহার গরাদ গলে সামান্য আলো পড়ছে তার মুখে। এমন রুপ সাধারণত দেখা যায় না। আমি অবাক হয়ে চেয়ে আছি। জোড় ভুরু, ঘন চোখের পাঁপড়ি, বরফি কাটা চিবুক, গায়ের রং এতো ফর্সা যে মনে হচ্ছে- একটু টোকা দিলেই রক্ত পড়বে, চুল গুলো এলোমেলো ভাবে ছোট ছোট করে কাটা। মনে হচ্ছে শ্রষ্ঠা জলরং দিয়ে তাকে বানিয়েছে। সেন্ট্রি কে ডেকে বললাম দয়া করে রুমটা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করেন, টাকা যা লাগে আমি দেব। সে নির্বিকার। জিজ্ঞাস করলাম আমাকে মেয়েদের সেলে রাখা হয়েছে কেন? সে বলল- ওটা মেয়ে নাকি? ও তো পাগলী। পাগলদের যে ছেলে-মেয়ে কোন ব্যপার নাই জানতাম না! বললাম- তো ও এখানে কেন? কি অপরাধ করেছে। কি অপরাধ আবার? সুন্দর মেয়ে হয়ে জন্মেছে। তার জন্য জেলে? আরে ভাই বুঝেন না কেন ওকে ছেড়ে রাখলে এলাকার ছেলেরা শেষ করে দিবে, এর মাঝে কি কম সহ্য করছে? কতো আর সইবে বেচারি। তো পাগলা গারদে পাঠায় দেন। সব প্রাইভেট, খরচ চালাবে কে? বলে হনহন করে সে হেঁটে গেল। কি আর করা চুপচাপ বসে থেকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। এমন মায়া কাড়া চেহারা কিন্তু কি দুর্ভাগ্য তার। তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন নেশা লাগে। কখন যে সকাল হয়েছে খেয়াল করিনি। মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগালো। এতো সুন্দর তার চোখ যে বিস্ময়ে আমি কথা বলতে পারছিলাম না। আমি জেগে উঠতেই সে নিজের যায়গায় গিয়ে বসল। তাকে খেতে দেয়া হয়েছে শুকনো রুটি আর ডাল। সে অর্ধেকটা খেয়ে বাকি টা আমার দিকে ঠেলে দিল।

কিছুক্ষণ পর ডিউটি অফিসার আসল, তাকে নিজের পরিচয় দিতেই মনে হল যেন ১০০০ ভল্টের শক খেয়েছে। কাল কেন তাকে বললাম না এই আফসোস করতে করতেই তার অবস্থা কাহিল। বাইরে থেকে নাস্তা নিয়ে এসে খাওয়ালও। উপরি হিসেবে গাড়িতে গ্যাস, তেল ভরে দিল। যাওয়ার সময় আমি বললাম- আমাকে আরেকটা উপকার করতে হবে আপনার। সে জিজ্ঞাস করল – কি? আমি মেয়েটাকে আমার সাথে নিতে চাইলাম। সে বলল- স্যার, ও তো পাগল, কয়দিন পরে আপনার আর ভালো লাগবে না। তখন তার কি অবস্থা হবে? আমি বুঝিয়ে বললাম- তার চিকিৎসা করাবো, হয়তো একদিন পরিপূর্ণ ভালো হয়ে যাবে সে।

ঢাকায় আসার পরে প্রথমেই তাকে আমার এক সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম। ও জানালো যে – মেয়েটার অবস্থা খুব সেরিয়াস না। একটু যত্ন, আর নিয়ম বেধে চিকিৎসা করালে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। বাসায় ওকে নেয়া যাবে না। সমস্ত ব্যাপারটা আব্বুকে জানানোর আগেই মা যেনে গেল। ব্যস বাসায় ঢোকা আমার জন্য নিষিদ্ধ। আব্বুকেও ফোনে পাচ্ছি না। কি আর করা নিকুঞ্জে আমাদের ডুপ্লেক্স বাড়িটাতে থাকতে শুরু করলাম। প্রথমে ওকে আমার বন্ধুর হসপিটালেই রাখলাম। তিন মাস পরে ওর অবস্থা যখন একটু ভালো, নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে এলাম। ভাবছি ওর একটা নাম দেয়া দরকার। পরী নামটা খুব পছন্দ হল। এই নামেই ডাকছি। অবাক করা ব্যপার হল- প্রথম আজ যখন ওকে পরী বলে ডাকলাম ও সোজা আমার ঘরে এসে দাঁড়াল। ওর চুল গুলো বেশ বড় হয়েছে। কিশোরী থেকে এখন অনেকটা তরুণী মনে হচ্ছে। মেয়েটা কি কথা বলতে জানে না? কোন কথা বললে শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়।
আজ সন্ধ্যায় দেখলাম ও গুনগুন করছে। কাছে যেতেই চুপ হয়ে গেল। আমি ওকে চা বানানো শিখিয়েছি কাল কে। আজ কেই অফিস থেকে আসার পরে সে আমাকে চা দিয়ে গেল। মেয়েরা মায়ের জাত বলেই কি এটা সম্ভব? আমাদের কাছে তারা সবসময় রহস্যময়ী হয়ে থাকবে, কিন্তু আজীবন সেবা করে যাবে কোন প্রকার চাওয়া-পাওয়া ছাড়াই।

শুক্রবার ছুটির দিন আর তাই আজ আমি অনেক বেলা করে ঘুমাচ্ছি। হটাত পরী এসে আমাকে ডাকছে- এই, এই জলদি ওঠেন। ঘরে আগুন লেগেছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি ফায়ার অ্যালার্ম বাজচ্ছে। দারোয়ান চলে এসেছে। পরীর রুমে কি করে যেন আগুন লেগেছে। বেচারী ভয়ে নীল হয়ে গেছে। তাকে আস্তে ধীরে শান্ত করলাম। এরপরে দেখি সে অল্প অল্প কথা বলা শুরু করেছে। সন্ধ্যায় শুনলাম তার জীবনের কথা। কেন সে এমন হল। তার বাবা ছিল নেশাখোর দিনমজুর। নেশার টাকা না পেয়ে তার মাকে মারতে মারতে মেরেই ফেলে। সে ভালো ছাত্রী ছিল। ক্লাস সিক্স থেকে নিজের বৃত্তির টাকা দিয়েই পড়াশুনা করে। কলেজে উঠার পরে এক বর্ষার সময় কোন কাজ না পেয়ে তার বাবার নেশার টাকা পাওয়ার জন্য নিজের ২ বন্ধুর হাতে ওকে দিয়ে দেয়। ওখান থেকে পালাতে গিয়ে কাঁচা রাস্তা থেকে পিছলে পড়ে যায়। এরপরে আর কিছু সে জানে না।

বুঝলাম জীবনের অনেক কঠিন মুহূর্ত সে পার করে এসেছে। কাকতালীয় ভাবে ওর ডাকনাম পরী। সেদিন রাতে সে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াল। আমার মা’র বাড়ি ছিল চিটাগাং এ। মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ অনেক বছর পড়ে পেলাম। খাওয়ার সময় আমার চোখে পানি চলে আসল। পরী উঠে এসে আমার চোখের পানি মুছে দিল। আহারে, এমন ভালবাসা কতোদিন পাইনি। আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম, এই মেয়েটা আবার আমাকে জাগিয়ে তুলছে। আমার সব বিষয়ে সে এখন খেয়াল রাখে। আমার ভাল-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সুখ-দুঃখ সব কিছু না বলার আগেই সে বুঝে। কি করে এতো বুঝে কে জানে? কখন বলতে হয়নি আমি কি চাই, কি খেতে পছন্দ করি, কেমন জীবন নিয়ে বাঁচতে চাই। আমার সব কিছুতেই সে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে পরেছে। মাঝে একবার প্রচন্ড জ্বর আসলো। নিজেই এ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেল, আমার বন্ধুদের ফোন করে ডাকল। প্রতিটা কাজ এতোটাই গোছানো ছিল যে, আমার বন্ধুরাও ওর বুদ্ধির তারিফ করল। বুঝতে পারছিলাম আমরা একজন আরেকজনের পরিপূরক। ধীরে ধীরে ওর প্রতি জন্মানো মায়া-মমতা ভালবাসায় পরিণত হল। আজকাল সে এতো কথা বলে আর এতো ছটফট করে যে আমি অবাক হই এতো চঞ্চলতা কোথায় লুকানো ছিল?

প্রায় এক বছর ধরে একসাথে আছি আমরা। বন্ধু মহলে অনেক কথা হচ্ছে। মাঝে বাবা একদিন ফোন করে অনেক কথা শুনালেন। অনেকে বলতে লাগলো ওর বাড়িতে ওকে রেখে আসতে। কিন্তু ওকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করার ক্ষমতাও আমার ছিল না। আমি জানি ও নিজেও আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে বিয়ে করবো। ওর দিক থেকে কোন আপত্তি থাকার কথা না। বন্ধুদের জানাতে-কেউ রাজী হল, কেউ ভাবল আমি পাগল হয়ে গেছি, কেউ আবার আপত্তি তুলল- নীল, মেয়েটা তার এলাকার ছেলেদের দ্বারা.......! ধুর কার কথায় কি? আমি যখন ডিসিশান নিয়েছি তখন এটাই করবো। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করে আব্বু-আম্মুকে জানালাম। আব্বু এসে নিজে পরী কে দখে গেল। মনে হয় তার পছন্দ হয়েছে। মা কোন ভাবেই এল না। আমি অনেক করে বুঝালাম।

বিয়ের দিন সকালেই সব বন্ধুরা বাসায় চলে এসেছে। পরী মাথা নিচু করে বসে আছে। বেচারী লজ্জায় শেষ। বিকেলে আমি যখন বের হই তখন দেখলাম সে মাত্র লাল টুকটুকে শাড়িটা পরেছে। ইশশ্‌ কি সুন্দর না লাগছে। ইচ্ছা হচ্ছিল গিয়ে গালটা একটু ছুঁইয়ে আসি। কিন্তু না আমার পরী কে এভাবে আমি স্পর্শ করবো না, সে যখন আমার হবে তখনই কেবল তাকে আলতো করে, যত্ন করে ছুঁইয়ে দেখবো। সন্ধ্যায় পরীকে নিয়ে প্রিতি সহ আমার আরো বন্ধুরা কমিউনিটি সেন্টারে আসবে। সন্ধ্যার কিছু আগে প্রিতি ফোন করে জানালো মা এসেছে বাসায়। পরীর সাথে কথা বলছে। আমার খুব ভাল লাগছে এটা শুনে। সন্ধ্যা ৭.৩০ এখনো ওরা আসেনি। সোহেল কে কল দিতে যাবো এমন সময় ও আমাকে ফোন করে শুধু এই টুকু বলল- পরী, United Hospital, Emergency.

ওখানে পৌঁছানোর পরে শুনলাম পরী ICU তে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ডাক্তার জানালো Survive করতে পারবে বলে মনে হয় না। তিনদিন ওর হাতটা ধরে বসে আছি। নানা রকমের যন্ত্রপাতির ভেতরে নিথর ভাবে শুয়ে আছে আমার জল রঙে আঁকা পরী।

প্রিতির কাছে শুনলাম মা প্রায় আধ ঘন্টা ওর সাথে একা কথা বলে। উনি চলে যাওয়ার পরে, পরী কাউকে কিছু না জানিয়ে একা ছাদে চলে যায়। ওখান থেকে লাফ দিয়ে পরে সুইসাডের চেষ্টা করে।

চতুর্থ দিন সকালে মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য ওর জ্ঞান ফিরল। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার জ্ঞান হারালো। বিকেলে কিছুক্ষনের জন্য হসপিটাল থেকে বের হলাম। সন্ধ্যায় গিয়ে শুনলাম জ্ঞান ফেরার পর থেকে ও খুব চিৎকার করছে, যাকে বলে বদ্ধ উন্মাদ। ডাক্তার জানালো ও আর কখনই সুস্থ হতে পারবে না।

চারদিন পরে বাসায় আসলাম। পরী যেখানে পড়ে ছিল সেখানে রক্তের ধারাটা শুকিয়ে গেছে। কাঁচের চুড়ি ওর খুব পছন্দের। বিয়েতে কাঁচের চুড়ি পরবে বলে অনেক গোছা এনে দিয়েছিলাম। ভাঙ্গা কাঁচের চুড়ি এখানে সেখানে পরে আছে। আমি সব যত্ন করে তুলে রেখেছি। পরী সবার সাথে চিৎকার করে, সবসময় তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে রাখতে হয়, নয়তো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। শুধু আমাকে দেখলে একেবারে চুপ হয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি পরী একদিন ঠিক সুস্থ হবে, আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিতেই ওকে সুস্থ হতে হবে।
 
Top