অনেকক্ষণ হল নীলা একা একা জিয়া উদ্যানের লেকের পাড়ে বসে আছে। ঠিক বসে আছে বললে ভুল হবে কারও জন্য অপেক্ষা করছে আর মনে মনে বলছে "শয়তানটা আসুক, আজ তোর একদিন কি আমার একদিন" শাহেদ হয়ত নীলার ব্যাপারে 'লেডিস ফার্স্ট' নীতিতে অতিরিক্ত মাত্রায় বিশ্বাসী যার দরুন সব সময় তার দেরি করে দেখা করতে যাওয়াটা রীতিমত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
এইতো পাগলীটা বসে আছে। 'এই মামা দাঁড়াও দাঁড়াও' দূর থেকেই নীলাকে দেখতে পায় শাহেদ। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে পিছন থেকে নীলাকে জড়িয়ে ধরে কর্কশ গলায় 'ভো' করে উঠে। সাথে সাথেই একশন! নীলাও একমুহূর্ত দেরি না করে বদমাইশ, খাটাশ, হারামি, ছাগল, ভেড়া বলে বুকেপিঠে এলোপাথারি কিলঘুষি মারতে থাকে।
দুজনেই দুইদিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কেউ কারও সাথে কোন কথা বলছে না। নীরবতা ভাঙ্গে শাহেদ। নীলা নীলা এদিকে দেখতো, ঐযে লাল ড্রেস পড়া মেয়েটাকে সেই লাগছে না' মুহূর্তেই যেন নীলা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। দুইহাত গলায় চেপে ধরে চোখ গরম করে 'ওই বদ পোলা! মাইয়া দেখতে এত শখ তোর? থাক তুই আমি গেলাম' বলে উঠা মাত্রই ডান হাত ধরে হেঁচকা টানে নীলাকে বসিয়ে দিয়ে, 'আরে আরে এটা তো এমনি ফান করলাম! কথা বলছ নাতো কি করব আজব তো!!! আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরি। নেক্সট টাইম আর এমন হবে না। তুমি দেখে নিও' 'হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না। এই কথাটা আজ নিয়ে কতবার বলেছ সে খেয়াল আছে তো!' উত্তরে নীলা।
বেচারা শাহেদ মাথা নিচের দিকে করে বসে আছে। দ্বিতীয় বারের মত দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। হঠাতই নীলা বলে উঠল, 'আচ্ছা ওই মেয়েটি কি আসলেই দেখতে খুব সুন্দরী ছিল?' এই বোকা মেয়ের কথা শোনে শাহেদ হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না। উত্তরে কিছু না বলেই নীলার দিকে তাকিয়ে সে গগনবিদারী শব্দে হাসতে লাগল। এবার সত্যি সত্যি নীলা লজ্জা পায়। কিভাবে দুজনের মাঝে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায় আর কিভাবেই বা রাগিণী নীলার সব রাগ লজ্জাবতীর ন্যায় চুপসে যায় সে রহস্য তলিয়ে যায় ভালবাসার অতল গহবরে।
দুজনে বসে পেয়ারা মাখানো আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে। এই দুটোই নীলার খুব ফেভারেট। দুটোর কোন একটির মামা নীলার সামনে পড়ে যাওয়া মানেই নার্সারি পড়ুয়া কোন এক বাচ্চার চোখে অপ্রত্যাশিতভাবে টেডি বিয়ার পড়ে যাওয়া! দুজনেই যখন খাওয়ায় ব্যস্ত তখন কোত্থেকে ৪/৫ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে এসে,
- ভাইয়া একটু দেন না...
- (শাহেদ ঘাড় ঘুরিয়ে) হবে না। সামনে যা।
- সারাদিন কিচ্ছু খাই নাই। ভুক লাগসে। দেন না ভাইয়া..
- ওই তোরে না যাইতে কইছি! যা ভাগ।
- (এবার নীলার হাত ধরে) এইযে আপু দেন না...
এতে শাহেদ বেশ চটে গিয়ে মেয়েটির গালে সজোরে দুই চড় বসিয়ে দিল। মেয়েটি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে শাহেদের দিকে একবার করুন দৃষ্টিতে তাকাল। তার ছলছল চোখের ভাষা স্পষ্ট। ঘটনার আকস্মিকতায় নীলা হতবাক। সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে শুধু একটাই বিস্ময় ঘুরপাক খাচ্ছে 'শাহেদ কিভাবে পারল এটা করতে! আর একবারও কি পারত না সে মেয়েটিকে ডেকে এনে একটু আদর করতে!!' আর কেবলই মনে হতে থাকে ' যে ছেলে এক মুহূর্তের জন্য একটি বাচ্চা মেয়েকে সহ্য করতে পারে না সে সারাজীবন আমাকে সহ্য করবে কিভাবে?' কিছুক্ষণ পর নীলা কিছু না বলেই প্রস্থান করল। শাহেদ পিছু পিছু ছুটেও কোন লাভ হয়নি। ততক্ষনে নীলা রিক্সায় উঠে পড়েছে। শাহেদ একাই বসে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।
রাত ১০ টা কিন্তু সেই তখন থেকেই নীলার ফোনটা সে সুইচড অফ পাচ্ছে। তখন রাগের মাথায় কি করতে গিয়ে কি করে বসেছে...কাজটা আসলেই বেশি রকম বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে ভেবে তার নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছে। একরকম অনুশোচনাবোধ ক্রমেই তাকে বিবেকের কাছে অপরাধী করে তুলছে। হঠাত করেই শাহেদের খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে যদিও নীলার জেদ এর কাছে হার মেনে এই জিনিসটাকে আরও দুই বছর আগেই না বলতে হয়েছিল। সুযোগ বুঝে চুপ করে বেরিয়ে গিয়ে মোড়ের দোকানটা থেকে এক প্যাকেট বেনসন নিয়ে আসে।
শাহেদ একা একা ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে। বাসার সবাই ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। রাতের আকাশের তারাগুলোও আজ নীলার মত অভিমানে মুখ লুকিয়েছে। চাঁদটি ক্রমশই মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। বড্ড রংচটা এই পৃথিবীটা যেন হঠাত করেই তার জৌলুসবিহীন রুদ্ররূপ ঢেলে দিচ্ছে। তার নিজেকে ওই মুহূর্তে রাস্তার পাশের ড্রেন ঘেসে হেঁটে যাওয়া কুকুরটি থেকেও অসহায় মনে হচ্ছে। সিগারেটের সুখটানে নিঃসঙ্গতাকে ক্ষণিকের ছুটি দিতে উদ্ধত হবে মাত্র তখনই বেজে উঠে ফোনটা।
- কি...আর কখনও এমন হবে?
- (এপাশে শুনশান নীরবতা)
- কি হল কথা বলছ না যে???
- সরি।
- হুম। ঠিক আছে। আমিও সরি ওভাবে চলে আসার জন্য। যাও এখন ঘুমাও। পারলে আজ বিকেল ৫ টায় আবার জিয়া উদ্যান চলে এসো। গুড নাইট।
- হুম...গুড নাইট।
নাহ আর সিগারেট খাওয়া হল না। শালার লাইটারটাও এই অভাগার সাথে বিট্রে করে বসলো! মাঝে মাঝে তো মনে হয় এই সবকিছুই যেন নীলার অনুগত দাস। এই মেয়েটা তাকে একদম পারফেক্ট দেখতে চায়। যার দরুন ছোট ছোট ভুলগুলোও কিভাবে যেন ম্যাডাম নীলার দৃষ্টিগোছর হয় না। আজকালকার যুগে এমন মেয়ে লাখেও একটা হয় কিনা তা নির্ণয় করার মত কোন প্রবাবিলিটির সূত্র এখন অবদি আবিষ্কার হয়নি তা ঢের বলে দেয়া যায়। শাহেদ মুচকি হেসে দামী বেনসনের প্যাকেটটাকে পাঁচতলার উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করল।
বিকাল ৫ টা বেজে ২০ মিনিট। নীলা চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরিষা ক্ষেতে ভূত আর জিয়া উদ্যানে নীলার আগে শাহেদ যখন সমার্থক বাক্য হয়ে দাঁড়ায় তখন তার বিস্মিত হওয়াটাই তো স্বাভাবিক বৈকি? নীলা আজ অনেক খুশি। যার দরুন কথা বলতে বলতে কিভাবে যে বেলা পরে যাচ্ছে কিছুই ঠাউর করে উঠতে পারছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে সময়টা আজ বড্ড তাড়াহুড়ো করে দৌড়াচ্ছে! সবে মাত্র উঠতে যাবে ঠিক তখনই একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে দৌড়াতে দৌড়াতে কোথা থেকে এক পিচ্চি এসে "ভাইয়া আপুর জন্য একটা ফুল নেন না...আপুকে অনেক সুন্দর লাগবে। নেন না ভাইয়া।" এবার নীলাকে কিছু বলতে না দিয়েই হাঁটু গেড়ে বসে শাহেদ,
- তোমার নাম কি?
- পাখি।
- দাও...তোমার সবগুলো ফুল আমাকে দাও।
- (মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে) এইযে নেন ভাইয়া। ১০০ টেকা না আপনে আমারে ৮০ টেকা দিলেই হইব।
- এইযে নাও ৮০ টাকা। আর এই ২০ টাকা তোমার গিফট।
শাহেদ ফুলগুলো নীলার হাতে তুলে দেয়। খুশিতে নীলার চোখ দুটি চিকচিক করছে। সে ফুলগুলো হাতে নিয়ে এক মুহূর্ত ভেবে মেয়েটির দিকে তাকায় "এই নাও। এগুলো তোমার জন্য। তোমার আপু তোমাকে দিল।" না চাইলেও নীলার জোড়াজুড়িতে শেষ পর্যন্ত সে ফুলগুলো নিতে বাধ্য হয়।
নীলা আর শাহেদ বাড়ির পথ ধরে। আর ছোট্ট পাখি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাদের পথপানে চেয়ে থাকে। কিছুদূর গিয়ে দুজনেই ফিরে তাকায়। মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে তার আনন্দের সাথে এই পড়ন্ত বিকেলের আবছা আলো মিশে একাকার হয়ে চোখেমুখে যে বর্ণিল আভা সৃষ্টি করেছে তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে।
[কিছু কথাঃ এই পাখিরা আসলে আমাদের কাছে বেশি কিছুই চায় না। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা পাখির মতই ছুটে আসে আবার ঘামের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো খুশির উপলক্ষ্য নিয়ে অন্য পাখিদের সাথে মিশে যেতে চায়। একবার ভাবুন তো দিনে, সপ্তাহে, মাসে গড়ে কতবার এদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন কখনও বা হাত উঠাচ্ছেন!! অথচ ওদের প্রতি আমাদের অল্প একটু ভালবাসাই কি সহজ সমাধান হতে পারে না? আশা করি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গাটা আমাদের কারও ভুলে গেলে চলবে না। ধন্যবাদ
এইতো পাগলীটা বসে আছে। 'এই মামা দাঁড়াও দাঁড়াও' দূর থেকেই নীলাকে দেখতে পায় শাহেদ। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে পিছন থেকে নীলাকে জড়িয়ে ধরে কর্কশ গলায় 'ভো' করে উঠে। সাথে সাথেই একশন! নীলাও একমুহূর্ত দেরি না করে বদমাইশ, খাটাশ, হারামি, ছাগল, ভেড়া বলে বুকেপিঠে এলোপাথারি কিলঘুষি মারতে থাকে।
দুজনেই দুইদিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কেউ কারও সাথে কোন কথা বলছে না। নীরবতা ভাঙ্গে শাহেদ। নীলা নীলা এদিকে দেখতো, ঐযে লাল ড্রেস পড়া মেয়েটাকে সেই লাগছে না' মুহূর্তেই যেন নীলা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে। দুইহাত গলায় চেপে ধরে চোখ গরম করে 'ওই বদ পোলা! মাইয়া দেখতে এত শখ তোর? থাক তুই আমি গেলাম' বলে উঠা মাত্রই ডান হাত ধরে হেঁচকা টানে নীলাকে বসিয়ে দিয়ে, 'আরে আরে এটা তো এমনি ফান করলাম! কথা বলছ নাতো কি করব আজব তো!!! আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরি। নেক্সট টাইম আর এমন হবে না। তুমি দেখে নিও' 'হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না। এই কথাটা আজ নিয়ে কতবার বলেছ সে খেয়াল আছে তো!' উত্তরে নীলা।
বেচারা শাহেদ মাথা নিচের দিকে করে বসে আছে। দ্বিতীয় বারের মত দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। হঠাতই নীলা বলে উঠল, 'আচ্ছা ওই মেয়েটি কি আসলেই দেখতে খুব সুন্দরী ছিল?' এই বোকা মেয়ের কথা শোনে শাহেদ হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না। উত্তরে কিছু না বলেই নীলার দিকে তাকিয়ে সে গগনবিদারী শব্দে হাসতে লাগল। এবার সত্যি সত্যি নীলা লজ্জা পায়। কিভাবে দুজনের মাঝে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায় আর কিভাবেই বা রাগিণী নীলার সব রাগ লজ্জাবতীর ন্যায় চুপসে যায় সে রহস্য তলিয়ে যায় ভালবাসার অতল গহবরে।
দুজনে বসে পেয়ারা মাখানো আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে। এই দুটোই নীলার খুব ফেভারেট। দুটোর কোন একটির মামা নীলার সামনে পড়ে যাওয়া মানেই নার্সারি পড়ুয়া কোন এক বাচ্চার চোখে অপ্রত্যাশিতভাবে টেডি বিয়ার পড়ে যাওয়া! দুজনেই যখন খাওয়ায় ব্যস্ত তখন কোত্থেকে ৪/৫ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে এসে,
- ভাইয়া একটু দেন না...
- (শাহেদ ঘাড় ঘুরিয়ে) হবে না। সামনে যা।
- সারাদিন কিচ্ছু খাই নাই। ভুক লাগসে। দেন না ভাইয়া..
- ওই তোরে না যাইতে কইছি! যা ভাগ।
- (এবার নীলার হাত ধরে) এইযে আপু দেন না...
এতে শাহেদ বেশ চটে গিয়ে মেয়েটির গালে সজোরে দুই চড় বসিয়ে দিল। মেয়েটি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগল। কিছুদূর গিয়ে শাহেদের দিকে একবার করুন দৃষ্টিতে তাকাল। তার ছলছল চোখের ভাষা স্পষ্ট। ঘটনার আকস্মিকতায় নীলা হতবাক। সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে শুধু একটাই বিস্ময় ঘুরপাক খাচ্ছে 'শাহেদ কিভাবে পারল এটা করতে! আর একবারও কি পারত না সে মেয়েটিকে ডেকে এনে একটু আদর করতে!!' আর কেবলই মনে হতে থাকে ' যে ছেলে এক মুহূর্তের জন্য একটি বাচ্চা মেয়েকে সহ্য করতে পারে না সে সারাজীবন আমাকে সহ্য করবে কিভাবে?' কিছুক্ষণ পর নীলা কিছু না বলেই প্রস্থান করল। শাহেদ পিছু পিছু ছুটেও কোন লাভ হয়নি। ততক্ষনে নীলা রিক্সায় উঠে পড়েছে। শাহেদ একাই বসে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।
রাত ১০ টা কিন্তু সেই তখন থেকেই নীলার ফোনটা সে সুইচড অফ পাচ্ছে। তখন রাগের মাথায় কি করতে গিয়ে কি করে বসেছে...কাজটা আসলেই বেশি রকম বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে ভেবে তার নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছে। একরকম অনুশোচনাবোধ ক্রমেই তাকে বিবেকের কাছে অপরাধী করে তুলছে। হঠাত করেই শাহেদের খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে যদিও নীলার জেদ এর কাছে হার মেনে এই জিনিসটাকে আরও দুই বছর আগেই না বলতে হয়েছিল। সুযোগ বুঝে চুপ করে বেরিয়ে গিয়ে মোড়ের দোকানটা থেকে এক প্যাকেট বেনসন নিয়ে আসে।
শাহেদ একা একা ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে। বাসার সবাই ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে। রাতের আকাশের তারাগুলোও আজ নীলার মত অভিমানে মুখ লুকিয়েছে। চাঁদটি ক্রমশই মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। বড্ড রংচটা এই পৃথিবীটা যেন হঠাত করেই তার জৌলুসবিহীন রুদ্ররূপ ঢেলে দিচ্ছে। তার নিজেকে ওই মুহূর্তে রাস্তার পাশের ড্রেন ঘেসে হেঁটে যাওয়া কুকুরটি থেকেও অসহায় মনে হচ্ছে। সিগারেটের সুখটানে নিঃসঙ্গতাকে ক্ষণিকের ছুটি দিতে উদ্ধত হবে মাত্র তখনই বেজে উঠে ফোনটা।
- কি...আর কখনও এমন হবে?
- (এপাশে শুনশান নীরবতা)
- কি হল কথা বলছ না যে???
- সরি।
- হুম। ঠিক আছে। আমিও সরি ওভাবে চলে আসার জন্য। যাও এখন ঘুমাও। পারলে আজ বিকেল ৫ টায় আবার জিয়া উদ্যান চলে এসো। গুড নাইট।
- হুম...গুড নাইট।
নাহ আর সিগারেট খাওয়া হল না। শালার লাইটারটাও এই অভাগার সাথে বিট্রে করে বসলো! মাঝে মাঝে তো মনে হয় এই সবকিছুই যেন নীলার অনুগত দাস। এই মেয়েটা তাকে একদম পারফেক্ট দেখতে চায়। যার দরুন ছোট ছোট ভুলগুলোও কিভাবে যেন ম্যাডাম নীলার দৃষ্টিগোছর হয় না। আজকালকার যুগে এমন মেয়ে লাখেও একটা হয় কিনা তা নির্ণয় করার মত কোন প্রবাবিলিটির সূত্র এখন অবদি আবিষ্কার হয়নি তা ঢের বলে দেয়া যায়। শাহেদ মুচকি হেসে দামী বেনসনের প্যাকেটটাকে পাঁচতলার উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করল।
বিকাল ৫ টা বেজে ২০ মিনিট। নীলা চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সরিষা ক্ষেতে ভূত আর জিয়া উদ্যানে নীলার আগে শাহেদ যখন সমার্থক বাক্য হয়ে দাঁড়ায় তখন তার বিস্মিত হওয়াটাই তো স্বাভাবিক বৈকি? নীলা আজ অনেক খুশি। যার দরুন কথা বলতে বলতে কিভাবে যে বেলা পরে যাচ্ছে কিছুই ঠাউর করে উঠতে পারছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে সময়টা আজ বড্ড তাড়াহুড়ো করে দৌড়াচ্ছে! সবে মাত্র উঠতে যাবে ঠিক তখনই একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে দৌড়াতে দৌড়াতে কোথা থেকে এক পিচ্চি এসে "ভাইয়া আপুর জন্য একটা ফুল নেন না...আপুকে অনেক সুন্দর লাগবে। নেন না ভাইয়া।" এবার নীলাকে কিছু বলতে না দিয়েই হাঁটু গেড়ে বসে শাহেদ,
- তোমার নাম কি?
- পাখি।
- দাও...তোমার সবগুলো ফুল আমাকে দাও।
- (মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে) এইযে নেন ভাইয়া। ১০০ টেকা না আপনে আমারে ৮০ টেকা দিলেই হইব।
- এইযে নাও ৮০ টাকা। আর এই ২০ টাকা তোমার গিফট।
শাহেদ ফুলগুলো নীলার হাতে তুলে দেয়। খুশিতে নীলার চোখ দুটি চিকচিক করছে। সে ফুলগুলো হাতে নিয়ে এক মুহূর্ত ভেবে মেয়েটির দিকে তাকায় "এই নাও। এগুলো তোমার জন্য। তোমার আপু তোমাকে দিল।" না চাইলেও নীলার জোড়াজুড়িতে শেষ পর্যন্ত সে ফুলগুলো নিতে বাধ্য হয়।
নীলা আর শাহেদ বাড়ির পথ ধরে। আর ছোট্ট পাখি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাদের পথপানে চেয়ে থাকে। কিছুদূর গিয়ে দুজনেই ফিরে তাকায়। মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না তবে তার আনন্দের সাথে এই পড়ন্ত বিকেলের আবছা আলো মিশে একাকার হয়ে চোখেমুখে যে বর্ণিল আভা সৃষ্টি করেছে তা ঠিক বুঝা যাচ্ছে।
[কিছু কথাঃ এই পাখিরা আসলে আমাদের কাছে বেশি কিছুই চায় না। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা পাখির মতই ছুটে আসে আবার ঘামের বিনিময়ে কেনা এক টুকরো খুশির উপলক্ষ্য নিয়ে অন্য পাখিদের সাথে মিশে যেতে চায়। একবার ভাবুন তো দিনে, সপ্তাহে, মাসে গড়ে কতবার এদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন কখনও বা হাত উঠাচ্ছেন!! অথচ ওদের প্রতি আমাদের অল্প একটু ভালবাসাই কি সহজ সমাধান হতে পারে না? আশা করি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গাটা আমাদের কারও ভুলে গেলে চলবে না। ধন্যবাদ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন