এই বৃষ্টির মধ্যে টিউশানে যেতে ইচ্ছে করছিল না অর্কের।
স্টুডেন্টের পরীক্ষা সামনে। তাই এই তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও তাকে বাসা থেকে বের হতে হল। ছাতা মাথায়, প্যান্টের পা গুটিয়ে বাইরে বের হতে ভালো লাগে না তাঁর। কিন্তু আজ কিছুই করার ছিল না।
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ক। কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। এইদিকে বৃষ্টিটাও তুমুল আকার ধারণ করেছে। সাথে প্রচন্ড বাতাস। বাতাসে তাঁর হাত থেকে ছাতা উড়ে যাওয়ার অবস্থা। রাস্তা মোটামোটি ফাঁকা। কিন্তু তাঁর গন্তব্যে যাওয়ার মত গাড়ি আসছে না। ভাবছে রিক্সায় চলে যাবে। কিন্তু রিক্সায় গেলে তাকে ৩০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হবে। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে রিক্সাওয়ালারা এই ভাড়ায় যায় কিনা সন্দেহ আছে। আর এত দাম দিয়ে রিক্সায় চড়ে টিউশানে যাওয়াটা তাঁর পছন্দ না। এত টাকা খরচ করে টিউশানে যাওয়াটা তাঁর কাছে টিউশান বিলাস বলে মনে হয়। একজন ছাত্রের কোন কাজেই বিলাসী হওয়া ঠিক না। অন্তত টাকা পয়সা ঘটিত ব্যপারে। এইটা অর্কের বিশ্বাস। যদিও ছাঁই পাস খেয়ে সে অনেক টাকা উড়ায়!
ত্রিপল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট চা সিগারেটের দোকানে গেল অর্ক। একটা বেনসন সিগারেট ধরিয়ে আবার মোড়ে চলে এল। এই বৃষ্টিতে সিগারেটটা ভালোই যায়। সাথে একটা চা হলে ভালো হত। কিন্তু এই মুহুর্তে চা তে রূচি নেই ওর। শুধু সিগারেটটাই টানছে সে। আর ধোঁয়ার রিং বানিয়ে বাতাশে ছেড়ে দিচ্ছে। রিং গুলো বৃষ্টির ফোটার সাথে লেগে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। বিষয়টা ভালোই লাগছে অর্ক। রাস্তায় অর্কের পাশে আরও কিছু মানুষ ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। একেক ছাতার নিচে তিনের অধিক মাথা। লোক গুলো শুধু মাথাটাকে সুরক্ষিত করছে। শরীরের অন্য জায়গা গুলো প্রায়ই ভিজে গেছে। কিছু মানুষ আশে পাশের দোকানে আশ্রয় নিয়েছে। টং দোকান গুলোর ত্রিপলের নিচেও অনেক মানুষ। একটা নাম্বারের বাস আসছে তো অনেক মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বাসে উঠার জন্যে। যাঁরা উঠতে পারে না তাঁরা আবার দোকান গুলোর দিকে দৌঁড় দেয়। হয়ত আগে স্বাচ্ছন্দে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গাটা হারাতে হয় অনেককে। মানুষের এমন কীর্তি কলাপ দেখছে আর বিরক্ত হচ্ছে অর্ক। এখনো একটা বাসও আসে নি ওর গন্তব্যে যাওয়ার মত। কিছু বুঝতে পারছে না সে।
হঠাৎ একটি বাস এসে থামল। অর্ক এই নাম্বারের বাসের জন্যেই অপেক্ষা করছিল। মানুষ পড়ি মড়ি করে বাসে উঠার জন্য দৌঁড় দিল। অর্ক তাঁর ছাতা বন্ধ করে বাসে উঠার জন্য ছুটতে লাগল। বাসে উঠবে এমন সময় একটা মেয়ে পেছন থেকে হুমড়ি খেয়ে বাসে উঠতে গেল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল। বাসের পাদানিতে পিছলা খেয়ে মেয়েটা পড়ে যেতে লাগল। তাড়াতাড়ি করে অর্ক তাঁর বাম হাত এগিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে ধরে ফেলল। মেয়েটার পুরো শরীরের ভর অর্কের বাম হাতের উপর। এতক্ষণে মেয়েটার মুখ দেখতে পেল অর্ক। এত সুন্দরী মেয়ে তাঁর হাতের উপর ভর করে আছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না। চোখ দুটো এত সুন্দর ছিল; এমন সুন্দর চোখের মেয়ে সে প্রথম দেখতে পেল। হয়ত আরও সুন্দর চোখের মেয়ে আছে পৃথিবীতে। কিন্তু এত কাছ থেকে তো সেইসব মেয়ের চোখ সে দেখেনি। ডাগর চোখে আবার কাজল দিয়েছে মেয়েটা। কাজলে মেয়েটার ডাগর নয়ন জোড়া টানা টানা লাগছে। বৃষ্টির পানিতে মেয়েটার বা চোখের কাজল কিছুটা লেপ্টে গেছে। মনে হচ্ছে কাজল পড়ে মেয়াটা কিচ্ছুক্ষণ আগে কেঁদেছে। অর্কের মনের ভেতরে একটা গানের কথা ভেসে উঠল। মিফতাহ জামানের সূরে সারাহ বিল্লাহর গাওয়া সেই গানটি,
" বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক কাজলে,
চোখেরই কাজল মুছবোনা আঁখি জলে,
মেঘেরই মত মুখ লুকাবোনা, না, অভিমানে,
আজকে হৃদয় উঠুক ভরে মাতাল বাদলে।
বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক, কাজলে..……
টুপটাপ বৃষ্টির কোলাহলে,
বাতাস চেয়ে থাকুক অনিমেষে।
সময় থমকে গেছে জলে ভিজে,
বিষাদ গুলো যায় মুছে অবশেষে।
জানালা খুলে দিয়ে, এই হাত দেব বাড়িয়ে,
সুখেরই শালুক হাসুক বরষার ঘোলা জলে।
আজকে হৃদয় উঠুক ভরে, মাতাল বাদলে।
বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক, কাজলে..…"
অর্কের মনে হল এই গানটি তাঁর হাতের উপর ভর করে থাকা মেয়েটি ই গেয়েছে। তাঁর হৃদয়ে যে গান বেজে উঠেছে, যাঁর কারনে বেজে উঠেছে, এই সেই মেয়ে। অন্য কেউ হতে পারে না।
হ্যালো, আমাকে তুলুন। এই যে শুনতে পাচ্ছেন?
অর্কের ঘোর কাটল। মেয়েটিকে তাঁর হাতের উপর থেকে তুলল অর্ক। তাঁর কাছে মনে হল, আরও কিছুক্ষণ থাকলেই তো ভালো হত।
- ধন্যবাদ আপনাকে।
- না না, ঠিক আছে। আপনি ঠিক আছেন তো?
- ঠিক আছি বলে মনে হচ্ছে। আসলে আমার একটা জুরুরী কাজ ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই..…
তাড়াহুড় করেছেন বেশ করেছেন। তা না হলে আপনার সাথে আমার দেখা হত কোথায়? অর্ক মনে মনে বলল।
- চুপ করে আছেন কেন? আমাকে হার্ট হতে না দিয়ে নিজেই হার্ট হয়ে গেলেন?
- না, ঠিক তা নয়।
- আমি শশী। আপনি?
- আমি অর্ক।
পিচ্ছিল খেয়ে পড়ার সময় মেয়েটার একটা জুতা ছিঁড়ে গেছে। তাই জুতা খুলে হাতে নিয়ে নিল। পাশে একটা মুচির দোকান ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ আছে।
মেয়েটা বলল, আরেকটা উপকার করবেন?
অর্ক বলল, অবশ্যই।
আমাকে একটা সিএনজি বা রিক্সা ঠিক করে দিন না। পড়ে জুতা ছিঁড়ে গেছে। বাসায় চলে যাব।
আপনি এখানটায় দাঁড়ান। আমি দেখছি।
অর্ক তাঁর ছাতাটা খুলে মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিল। আর ভিজতে ভিজতে রাস্তার ঐ পাড়ে চলে গেল। মেয়েটা কোথায় যাবে তাঁর জানা নেয়। ঐ পাড় থেকেই ডাক হাঁকলো, আপনি কোথায় যাবেন??
- হালিশহর। কে ব্লক।
মেয়েটা সিএনজিতে উঠে গেল।
অর্ক ড্রাইবারকে সাবধানে চালাতে বলল।
মামা সাবধানে চালাবেন। আপু অসুস্থ। আর ওনাকে অবশ্যই বাসার সামনে নামিয়ে দিবেন।
আপনি চিন্তিত হবেন না তো, অর্ক। আমি ঠিকঠাক মত যেতে পারব।
একটু দেখেশুনে যাবেন।
অটোটা চলে গেল। অর্ক দাঁড়িয়ে রইল ছাতা হাতে।
যাহ শালা! মেয়েটার নাম্বারইতো নিলাম না। আমারটাও দিলাম না। কি যেন নাম বলল! ও হ্যা, শশী শশী। অর্ক ভাবতে লাগল।
অটোটা ২০-৩০ হাত দূরে গিয়ে থামল। অর্ক দৌঁড় দিয়ে অটোর সামনে গেল।
- কোন সমস্যা মামা?
- না, আমি ই থামাতে বলেছি। এই কাগজটা ধরুন।
- কি আছে এতে?
- ধরুন তো।
কাগজটি ধরিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলল, ভালো থাকবেন।
এই মামা, চালান।
অটোটা আবার চলতে লাগল।
অর্ক কাগজটার ভাঁজ খুলে দেখে,
শশী
অর্কের তো খুশিতে লাফ দেওয়ার অবস্থা! কাগজটা বুক পকেটে রেখে হাঁটা ধরল।
আজ আর টিউশান নয়। ছাতা বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে গেল অর্ক।
বাসায় এসেই পিসি অন করল অর্ক। তাঁর পছন্দের পুরোনো দিনের কিছু গান প্লে করল। ওয়াশরূমের দরজা খুলেই গোসল করতে লাগল। গোসল সেরে এসে বৃষ্টিতে ভেজা শার্ট প্যান্ট ধোঁয়ার জন্য গুড়ো সাবানে ভিজিয়ে রাখল।
মাথার পানি মুছতে মুছতে সেলটা হাতে নিল। সেল রেখে দৌঁড় দিয়ে ওয়াশরূমে ঢুকল সে! গুড়ো সাবানে ভিজিয়ে রাখা শার্টটির বুক পকেটে হাত দিল। কাগজটা বের করে নিল। কাগজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও, কাগজের ভিতরে কোন স্পষ্ট লিখার অস্তিত্ব খুঁজে পেল না। ছিল লেপ্টে যাওয়া কালির আঁছড়। কোনভাবেই শেষের তিনটা ডিজিট সে মিলাতে পারল না। নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছিল অর্কের। কি করবে বুঝতে পারছে না! পিসি থেকে মান্না দের গাওয়া একটি গান ভেসে আসছিল তাঁর কানে,
" আমার এ ভালোবাসা, জানি গো তোমার, ক্ষণিকের ভালো লাগা ফুল.…"
স্টুডেন্টের পরীক্ষা সামনে। তাই এই তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও তাকে বাসা থেকে বের হতে হল। ছাতা মাথায়, প্যান্টের পা গুটিয়ে বাইরে বের হতে ভালো লাগে না তাঁর। কিন্তু আজ কিছুই করার ছিল না।
রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ক। কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। এইদিকে বৃষ্টিটাও তুমুল আকার ধারণ করেছে। সাথে প্রচন্ড বাতাস। বাতাসে তাঁর হাত থেকে ছাতা উড়ে যাওয়ার অবস্থা। রাস্তা মোটামোটি ফাঁকা। কিন্তু তাঁর গন্তব্যে যাওয়ার মত গাড়ি আসছে না। ভাবছে রিক্সায় চলে যাবে। কিন্তু রিক্সায় গেলে তাকে ৩০ টাকা বেশি ভাড়া গুনতে হবে। যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে রিক্সাওয়ালারা এই ভাড়ায় যায় কিনা সন্দেহ আছে। আর এত দাম দিয়ে রিক্সায় চড়ে টিউশানে যাওয়াটা তাঁর পছন্দ না। এত টাকা খরচ করে টিউশানে যাওয়াটা তাঁর কাছে টিউশান বিলাস বলে মনে হয়। একজন ছাত্রের কোন কাজেই বিলাসী হওয়া ঠিক না। অন্তত টাকা পয়সা ঘটিত ব্যপারে। এইটা অর্কের বিশ্বাস। যদিও ছাঁই পাস খেয়ে সে অনেক টাকা উড়ায়!
ত্রিপল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট চা সিগারেটের দোকানে গেল অর্ক। একটা বেনসন সিগারেট ধরিয়ে আবার মোড়ে চলে এল। এই বৃষ্টিতে সিগারেটটা ভালোই যায়। সাথে একটা চা হলে ভালো হত। কিন্তু এই মুহুর্তে চা তে রূচি নেই ওর। শুধু সিগারেটটাই টানছে সে। আর ধোঁয়ার রিং বানিয়ে বাতাশে ছেড়ে দিচ্ছে। রিং গুলো বৃষ্টির ফোটার সাথে লেগে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। বিষয়টা ভালোই লাগছে অর্ক। রাস্তায় অর্কের পাশে আরও কিছু মানুষ ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। একেক ছাতার নিচে তিনের অধিক মাথা। লোক গুলো শুধু মাথাটাকে সুরক্ষিত করছে। শরীরের অন্য জায়গা গুলো প্রায়ই ভিজে গেছে। কিছু মানুষ আশে পাশের দোকানে আশ্রয় নিয়েছে। টং দোকান গুলোর ত্রিপলের নিচেও অনেক মানুষ। একটা নাম্বারের বাস আসছে তো অনেক মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বাসে উঠার জন্যে। যাঁরা উঠতে পারে না তাঁরা আবার দোকান গুলোর দিকে দৌঁড় দেয়। হয়ত আগে স্বাচ্ছন্দে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গাটা হারাতে হয় অনেককে। মানুষের এমন কীর্তি কলাপ দেখছে আর বিরক্ত হচ্ছে অর্ক। এখনো একটা বাসও আসে নি ওর গন্তব্যে যাওয়ার মত। কিছু বুঝতে পারছে না সে।
হঠাৎ একটি বাস এসে থামল। অর্ক এই নাম্বারের বাসের জন্যেই অপেক্ষা করছিল। মানুষ পড়ি মড়ি করে বাসে উঠার জন্য দৌঁড় দিল। অর্ক তাঁর ছাতা বন্ধ করে বাসে উঠার জন্য ছুটতে লাগল। বাসে উঠবে এমন সময় একটা মেয়ে পেছন থেকে হুমড়ি খেয়ে বাসে উঠতে গেল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল। বাসের পাদানিতে পিছলা খেয়ে মেয়েটা পড়ে যেতে লাগল। তাড়াতাড়ি করে অর্ক তাঁর বাম হাত এগিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে ধরে ফেলল। মেয়েটার পুরো শরীরের ভর অর্কের বাম হাতের উপর। এতক্ষণে মেয়েটার মুখ দেখতে পেল অর্ক। এত সুন্দরী মেয়ে তাঁর হাতের উপর ভর করে আছে, বিশ্বাসই হচ্ছে না। চোখ দুটো এত সুন্দর ছিল; এমন সুন্দর চোখের মেয়ে সে প্রথম দেখতে পেল। হয়ত আরও সুন্দর চোখের মেয়ে আছে পৃথিবীতে। কিন্তু এত কাছ থেকে তো সেইসব মেয়ের চোখ সে দেখেনি। ডাগর চোখে আবার কাজল দিয়েছে মেয়েটা। কাজলে মেয়েটার ডাগর নয়ন জোড়া টানা টানা লাগছে। বৃষ্টির পানিতে মেয়েটার বা চোখের কাজল কিছুটা লেপ্টে গেছে। মনে হচ্ছে কাজল পড়ে মেয়াটা কিচ্ছুক্ষণ আগে কেঁদেছে। অর্কের মনের ভেতরে একটা গানের কথা ভেসে উঠল। মিফতাহ জামানের সূরে সারাহ বিল্লাহর গাওয়া সেই গানটি,
" বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক কাজলে,
চোখেরই কাজল মুছবোনা আঁখি জলে,
মেঘেরই মত মুখ লুকাবোনা, না, অভিমানে,
আজকে হৃদয় উঠুক ভরে মাতাল বাদলে।
বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক, কাজলে..……
টুপটাপ বৃষ্টির কোলাহলে,
বাতাস চেয়ে থাকুক অনিমেষে।
সময় থমকে গেছে জলে ভিজে,
বিষাদ গুলো যায় মুছে অবশেষে।
জানালা খুলে দিয়ে, এই হাত দেব বাড়িয়ে,
সুখেরই শালুক হাসুক বরষার ঘোলা জলে।
আজকে হৃদয় উঠুক ভরে, মাতাল বাদলে।
বৃষ্টি এসে আঁছড়ে পড়ুক, কাজলে..…"
অর্কের মনে হল এই গানটি তাঁর হাতের উপর ভর করে থাকা মেয়েটি ই গেয়েছে। তাঁর হৃদয়ে যে গান বেজে উঠেছে, যাঁর কারনে বেজে উঠেছে, এই সেই মেয়ে। অন্য কেউ হতে পারে না।
হ্যালো, আমাকে তুলুন। এই যে শুনতে পাচ্ছেন?
অর্কের ঘোর কাটল। মেয়েটিকে তাঁর হাতের উপর থেকে তুলল অর্ক। তাঁর কাছে মনে হল, আরও কিছুক্ষণ থাকলেই তো ভালো হত।
- ধন্যবাদ আপনাকে।
- না না, ঠিক আছে। আপনি ঠিক আছেন তো?
- ঠিক আছি বলে মনে হচ্ছে। আসলে আমার একটা জুরুরী কাজ ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই..…
তাড়াহুড় করেছেন বেশ করেছেন। তা না হলে আপনার সাথে আমার দেখা হত কোথায়? অর্ক মনে মনে বলল।
- চুপ করে আছেন কেন? আমাকে হার্ট হতে না দিয়ে নিজেই হার্ট হয়ে গেলেন?
- না, ঠিক তা নয়।
- আমি শশী। আপনি?
- আমি অর্ক।
পিচ্ছিল খেয়ে পড়ার সময় মেয়েটার একটা জুতা ছিঁড়ে গেছে। তাই জুতা খুলে হাতে নিয়ে নিল। পাশে একটা মুচির দোকান ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ আছে।
মেয়েটা বলল, আরেকটা উপকার করবেন?
অর্ক বলল, অবশ্যই।
আমাকে একটা সিএনজি বা রিক্সা ঠিক করে দিন না। পড়ে জুতা ছিঁড়ে গেছে। বাসায় চলে যাব।
আপনি এখানটায় দাঁড়ান। আমি দেখছি।
অর্ক তাঁর ছাতাটা খুলে মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিল। আর ভিজতে ভিজতে রাস্তার ঐ পাড়ে চলে গেল। মেয়েটা কোথায় যাবে তাঁর জানা নেয়। ঐ পাড় থেকেই ডাক হাঁকলো, আপনি কোথায় যাবেন??
- হালিশহর। কে ব্লক।
মেয়েটা সিএনজিতে উঠে গেল।
অর্ক ড্রাইবারকে সাবধানে চালাতে বলল।
মামা সাবধানে চালাবেন। আপু অসুস্থ। আর ওনাকে অবশ্যই বাসার সামনে নামিয়ে দিবেন।
আপনি চিন্তিত হবেন না তো, অর্ক। আমি ঠিকঠাক মত যেতে পারব।
একটু দেখেশুনে যাবেন।
অটোটা চলে গেল। অর্ক দাঁড়িয়ে রইল ছাতা হাতে।
যাহ শালা! মেয়েটার নাম্বারইতো নিলাম না। আমারটাও দিলাম না। কি যেন নাম বলল! ও হ্যা, শশী শশী। অর্ক ভাবতে লাগল।
অটোটা ২০-৩০ হাত দূরে গিয়ে থামল। অর্ক দৌঁড় দিয়ে অটোর সামনে গেল।
- কোন সমস্যা মামা?
- না, আমি ই থামাতে বলেছি। এই কাগজটা ধরুন।
- কি আছে এতে?
- ধরুন তো।
কাগজটি ধরিয়ে দিয়ে মেয়েটা বলল, ভালো থাকবেন।
এই মামা, চালান।
অটোটা আবার চলতে লাগল।
অর্ক কাগজটার ভাঁজ খুলে দেখে,
শশী
অর্কের তো খুশিতে লাফ দেওয়ার অবস্থা! কাগজটা বুক পকেটে রেখে হাঁটা ধরল।
আজ আর টিউশান নয়। ছাতা বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে গেল অর্ক।
বাসায় এসেই পিসি অন করল অর্ক। তাঁর পছন্দের পুরোনো দিনের কিছু গান প্লে করল। ওয়াশরূমের দরজা খুলেই গোসল করতে লাগল। গোসল সেরে এসে বৃষ্টিতে ভেজা শার্ট প্যান্ট ধোঁয়ার জন্য গুড়ো সাবানে ভিজিয়ে রাখল।
মাথার পানি মুছতে মুছতে সেলটা হাতে নিল। সেল রেখে দৌঁড় দিয়ে ওয়াশরূমে ঢুকল সে! গুড়ো সাবানে ভিজিয়ে রাখা শার্টটির বুক পকেটে হাত দিল। কাগজটা বের করে নিল। কাগজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেও, কাগজের ভিতরে কোন স্পষ্ট লিখার অস্তিত্ব খুঁজে পেল না। ছিল লেপ্টে যাওয়া কালির আঁছড়। কোনভাবেই শেষের তিনটা ডিজিট সে মিলাতে পারল না। নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছিল অর্কের। কি করবে বুঝতে পারছে না! পিসি থেকে মান্না দের গাওয়া একটি গান ভেসে আসছিল তাঁর কানে,
" আমার এ ভালোবাসা, জানি গো তোমার, ক্ষণিকের ভালো লাগা ফুল.…"
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন