i love youলিখেছেন - মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন

সিরাজ সাহেব এখন যে চারতলা বিল্ডিংটার ছাদে আছেন সেখান থেকে এর আগে দুই জন লাফিয়ে পড়েছিলেন।কিন্তু সিরাজ সাহেব লাফাবেন না।কারণ যেই দুইজন এর আগে লাফিয়ে পড়েছিলেন,তাদের কেউই মরেননি।কিছু হার-গোর আর কোমর ভেঙেছে যা আর কি।হার-গোর ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মত টাকা এখন পকেটে নেই,এই মাসে তা হওয়ার সম্ভবনাও তিল পরিমাণও নেই।তাছাড়া আত্মহত্যা করার মত দিন এখনো তার আসেনি।তবে সিরাজ সাহেবের ধারণা সেই দিনটি খুব দূরে নেই যেদিন তার নিজেকে হত্যা করতে হবে না,জাগতিক জালা-যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে তার আত্মাই শরীর ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
সিরাজ সাহেব সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে নামছেন।এখন বাড়ি যাবেন।বেসরকারি একটা স্কুলে পড়িয়ে তিনি রোজ দুপুর দুইটায় বাড়ি ফিরেন।বাড়ি ফিরে সোজা চলে যান তার মায়ের ঘরে।তার মায়ের দিন ঘনিয়ে এসেছে।সারাদিন বিছানায় শুয়ে তসবিহ পড়েন,শুয়ে শুয়েই নামাজ আদায় করেন।সিরাজ সাহেব ঘরে ঢুকে মায়ের পাশে কিছুক্ষণ বসেন।তারপর চলে আসেন তার নিজের ঘরে।চলে আসার আগে মায়ের কপালে একটা চুমু দিয়ে আসেন,ছোটবেলায় ঠিক যেভাবে সিরাজ সাহেবকে তার মা স্কুলে পাঠানোর আগে কপালে চুমু দিতেন ঠিক সেভাবে।
বাড়ি ফিরে মায়ের ঘর থেকে তার নিজের ঘরে এসে দেখেন রিমা ঘুমিয়ে।রিমার পাশে ঘুমিয়ে আছে তাদের একমাত্র ছেলে রিফাত।রিফাতের বয়স কিছুদিন পরই এক বছর হবে।দিনের এই সময়টায় রিফাত ঘুমায়,আর রাতে জেগে থাকে।আবার ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে।রিমার এখন ঘুমানোর কথা না,সেও ঘুমাচ্ছে।সিরাজ সাহেব প্রতিদিন ঘরে ফিরে রিমাকে প্রচুর ক্লান্ত দেখেন,আজকে তিনি দেরি করে আসায় ক্লান্তি জোর করে রিমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।ঘুমানোরই কথা,সারা দিন সংসারের সব কাজ তাকেই তো করতে হয়।টাকা বাঁচানোর জন্য কাজের মেয়েকে বিদায় দেয়া হয়েছে।তুলটা টেনে সিরাজ সাহেব রিমার পাশে বসেন।ছোট্ট ফর্সা মুখটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকেন,কখনো ভাবেন অতীতের মধুর সব স্মৃতির কথা আবার কখনো ভবিষ্যতের আগত করূন পরিণতির কথা।
রিমা মেয়েটাও সিরাজ সাহেবের সাথে একই স্কুলে পড়াতো।দারুন চটপটে মেয়ে।কথা বলার ধরনটা সবারচেয়ে আলাদা,মেয়েটার এই কথা বলার ধরনটাই সিরাজ সাহেবকে বধ করেছে।সেই দিন সিরাজ সাহেব বুঝেছিলেন চেহারাই সব কিছু নয়।বুকের ভেতরের ভয়ের কারখানাটাকে অনেক কষ্টে অকেজো করে একদিন সিরাজ সাহেব রিমাকে বলেছিলেন ''রিমা,আমি দিন দিন আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছি।আপনি কি নিজের বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?''
রিমা সোজা জানিয়ে দেয় ''যা করার আব্বা-আম্মা করবে''
পরদিনই সিরাজ সাহেব তার মাকে পাঠান রিমাদের বাড়িতে।দুই পরিবারের মতেই বিয়ে হয় তাদের।এক বছর পর রিফাত পেটে আসলো,রিমাকে চাকরী ছাড়তে হলো।সংসারের ভাড় পড়লো একা সিরাজ সাহেবের উপর।কিছুতেই তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।গত ছয় মাস ধরে চেষ্টা করছেন বাড়িতে পড়ার জন্য একটা শাড়ি রিমাকে কিনে দেয়ার।কিন্তু পারছেন না।সেই কবেকার দুটো শাড়ি আর শ্বাশুড়ির পূরোনো শাড়িগুলো দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে বেচারী রিমাকে।রিফাতের পিছনেই চলে যায় বেতনের অনেকটা অংশ।বাড়ির খরচ,মায়ের ওষুধ পত্র,নিজের পকেট খরচ এসবের কথা ভাবলেই তিনি ডুবে যান অন্ধকারে।মরে যেতে ইচ্ছে করে তার।
সিরাজ সাহেব অনেকক্ষণ রিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন এই সময়টায় কোন কষ্টই তার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারলো না,পারলো না তাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে।তিনি ঠিক করে ফেললেন প্রতিদিন কিছুটা সময় ঘুমন্ত রিমার দিকে তাকিয়ে থেকে কষ্ট ভুলে থাকবেন।গ্রামের বাড়ির একমাত্র জমিটা বিক্রি করে কোন ব্যাবসা শুরু করবেন নাকি তাও ভাবলেন একবার।রিমার কষ্ট আর তার সহ্য হচ্ছে না একদম।তবে এ ব্যাপারে রিমার সাথে কথা বলা আবশ্যক।সিরাজ সাহেব এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিলেন রিফাতের উপর,ওমা পিচ্চিটা যে বাবার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে!কোন শব্দ না করেই ও জেগেছে,কোন শব্দ না করেই হাসছে।সিরাজ সাহেবের কেন যেন মনে হলো রিফাত তার ভাবনাগুলো বুঝতে পেরেছে।

2 comments:

Joy Babu Jewel বলেছেন... ৩০ জুলাই, ২০১৯ এ ৩:৫৭ PM

নতুন উপায়ে মেয়েদের মন জয় করতে চাইলে আমার সাইটে ভিজিট করুন
www.valobasargolpo2.xyz

kacievadeboncoeur বলেছেন... ৪ মার্চ, ২০২২ এ ১১:১৯ AM

Wynn Resorts Casino and Tower Suites - JT Hub
JT Hub 평택 출장마사지 offers guests the best in luxury hotel accommodations, exclusive spa, exciting restaurants, 여주 출장샵 exciting 파주 출장안마 leisure activities and 의왕 출장마사지 a relaxing 여주 출장안마 spa

 
Top