love golpoবারান্দায় দাড়িয়ে আকাশে মেঘের ছুটে যাওয়া দেখছে তিথি। ক’দিন ধরে খুব মন খারাপ তিথির। মন খারাপ হলে ও বারান্দায় এসে দাড়িয়ে দুরের আকাশ দেখে আর বৃষ্টি হলে হাত বাড়িয়ে দেয় বৃষ্টি ছুঁতে। আজ অনেক দিন বৃষ্টি হয়না তাই শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা আর মন ভালো করার বৃথা চেষ্টা প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। আজ মেঘ দেখে মনটা একটু বেশি খারাপ হয়ে আছে। খুব মনে পড়ছে অভির কথা, সেদিন না হয়একটু বেশি রাগ দেখাইছি তাই ছেলেটা এমন করবে? অবশ্য ওর-ই বা কি দোষ? ওকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম কই? নিজেই শুধু বলেছি, অপমান করেছি। কিছু একটা বলতে ছেয়েছিল অনেকবার শুনিনি,অপমান করে হাঁটা দিয়েছি পিছন থেকে হাত ধরেছিলো কিছু বলার জন্য শুনিনি হাত ছাড়িয়ে চলে এসেছি। ভেবেছি আবার ধরবে, পুরুষত্ব ধমকের স্বরে বলবে আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে।

খুব অভিমান তোমার! কি হতো আর একবার ডাকলে? হাত ধরে কথা গুলো বলতে পারতেনা? খেয়াল করোনি হাত ছাড়ানোর পর আমার হাঁটার গতি ছিলো কচ্ছপ গতির চেয়েও কম, শুধু তুমি আর একবার আটকাবে তাই।
পিছনে তাকিয়ে দেখি তুমি নেই। তারপর পুরোটা পথ আমি কেঁদেছি আজো কাঁদছি...

তিথির ভার্সিটির গেইটে অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছে আদিবা, আদিবা অভির ছোট বোন। ছোট বোন হলেও ভাই বোনের সম্পর্ক ভালো বন্ধুর চেয়ে কম নয়। তিথির সমন্ধে সব কিছু আদিবাকে বলে অভি এবং কি তিথির সাথে দেখা করার সময় কোন জামাটা পরবে তাও আদিবা ঠিক করে দিতো। আদিবা তিথিকে একবার দেখছে অভির সাথে তাই দূর থেকে দেখেও বুঝতে পারলো তিথি আসছে। তিথি ও খেয়াল করলো আদিবাকে।

আদিবা তুমি এইখানে? কেমন আছো?
হুম আপু ভালো। ভাইয়া এইটা তোমাকে দিতে বলেছে তাই এলাম বলেই একটা কাগজ দিয়ে বললো, আপু ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখতে হয় আর তাকে যত্ন করে বড় করতে হয়। রাগ না কোমলতা মেয়েদের সব চেয়ে বড় গুণ। আমি আসি আর কথাগুলা বলার জন্য সরি, ভাল থেকো।
তিথি কোন কথা বলেনি বা বলতে পারেনি। বুকের কোথায় যেন ব্যাথা অনুভব করলো। ক্লাসে না গিয়ে লাইব্রিতে বসলো আস্তে আস্তে হাতের কাগজটা খুললো
পরী কেমন আছো? জানি আজ আমায় ঘৃনা করো তুমি কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার মুখে ভালোবাসি শুনে খুব রাগ হচ্ছে? আচ্ছা পরী তুমি না আমাকে অনেক বিশ্বাস করতে? তবে সেদিন কেন বিশ্বাস করতে পারোনি? কেন আর আট দশটা মানুষের মতো ভেবেছ? সেদিন কেন আমার কোন কথা শুননি? কেন আমাকে বলতে দাওনি? হাত ধরার পর যখন ছাড়িয়ে নিলে আর সাহস হয়নি তোমার সামনে দাড়াতে। তবে আজ তোমাকে আমার বলতেই হবে, না হলে মরেও যে শান্তি পাবোনা।

আমি তোমাকে ঠকাইনি সেদিন নির্দিষ্ট সময়ে আমি কাজি অফিসে আসার জন্য রেডি হয়ে বের হচ্ছিলাম এমন সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাই আমি। আমার পুরনো মাথা ব্যাথা চরম আকার ধারন করলো, ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিলেন। বাসায় আনা হলো। আদিবা তোমার মোবাইলে কল করেছিলো , কিন্তু তোমার মোবাইল অফ ছিলো। এতে অবশ্য আমার দোষ কারণ আমি তোমাকে মোবাইল আনতে না করেছিলাম ধরা পড়ার ভয়ে। যেহেতু তুমি তোমার বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করবে তাই চেয়েছিলাম আমাদের কেউ খুজে না পায়। সারাদিন অপেক্ষা করে তুমি যখন বাসায় ফিরে যাচ্ছিলে তোমার আশা, বিশ্বাস আর আমাকে নিয়ে ছোট্ট একটা প্রাসাদ গড়ার সাতরঙা কল্পনা যখন ভেঙ্গে চুরমার আমি বুঝতে পারি কতটা ঘৃণা জন্মেছিলো আমার উপর।

তিন দিন পর অনেক কষ্টে তোমার সামনে যখন দাঁড়ালাম শুধু একটা কথা বলার ছিলোঃ ডাক্তার বলেছে আমি আর বেশিদিন পৃথিবীর আলো বাতাস ধ্বংস করতে পারবোনা। বড়জোর তিন মাস তারপর আমার ছুটি। আমি চাইনি সিনেমার মতো গল্পের মতো সেই তিন মাস আমি তোমাকে ছাড়া থাকি তাই ছুটে গিয়েছি আমি যে কয়দিন বাঁচবো তোমার সাথে বাঁচতে চাই। তুমিতো বলেছিলে যদি পৃথবীতে একটা মুহূর্ত বাঁচতে হয় তবে একসাথে বাঁচবো সেই কথার সাহস নিয়ে সেদিন তোমার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু আমার অভিমানী পরী আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো কই? অবশ্য আজ আমার ভালো লাগছে যে আমার প্রিয়া অন্য কাউকে নিয়ে কয়েক মাস না কয়েক যুগ সংসার করবে সুখী হবে তাতেই আমার সুখ...

জানো তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কয়েকদিন ধরে ইচ্ছেটা প্রবল আকার ধারন করেছে তাই আর থাকতে পারলামনা আদিবাকে দিয়ে চিঠিটা পাঠালাম। আসবে একটু অভিমান ভেঙ্গে?? আমার দেয়া নীল শাড়িটা পড়ে আসবে আমার রাজকুমারি হয়ে অল্প কয়েক মিনিটের জন্যে?? এসো প্লিজ...
ইতি
তোমার বাবু।

তিথি হাউমাউ করে কান্না করতে করতে হাসপাতালে এলো। সামনে দিয়ে একটা এ্যাম্বুলেন্স চলে গেলো। ভিতরে ঢুকতে অভির বন্ধু রাসেলকে দেখেই তিথি ছুটে গেল।
না তিথি আর কাঁদছেনা, তিথি কাঁদবেনা। শুধু শক্ত মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে একটা কাগজ হাতে।
অভির দেয়া শেষ চিরকুটঃ সব সময় আমার আসতে দেরী হতো তাতে তোমার কতো অভিমান! কত রাগ। আজ তুমি এতো দেরী করছো কেন? না না আমি কিন্তু তোমার দেরী দেখে একটু ও রাগ করছিনা তবে কষ্ট হচ্ছে তোমাকে বুঝি আর দেখা হলোনা...

ওরা আমাকে নিতে এসেছে, আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা। তোমাকে ছেড়ে আমি যাবোনা। ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, তুমি দূরে সরে যাচ্ছ কেন তিথি? তুমিতো আমার শেষ নিঃশ্বাস তুমি না থাকলে আমি মরে যাবোনা!!! তিথি যেওনা প্লিজ যেওনা তিথি...

 
Top