নুহাসের মন খারাপ। আবারো সে ঘরে বকা খেয়েছে। ওর কাছে ঘরে থাকাটা এখন নরকে বসবাসের সামিল। বের হয়ে গেলো ঘর থেকে। গলিতে হাঁটাহাঁটি করছিলো সে। ও মনে মনে নিজেকে হিমু ভাবতেছিল। ওর নিজেকে হিমু ভাবতে খুব ভালো লাগে। হাজারো চিন্তার মাঝে হটাত পিছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠলো নুহাসকে------
-এই যে শুনুন
-জি বলুন
-এই বাসাটা কোথায় বলতে পারেন?(নুহাসের হাতে একটা এড্রেস ধরিয়ে দিয়ে)
-জি। এটাতো সোহরাব আঙ্কেলের বাসা।
-জি। একটু বাসাটা দেখিয়ে দিবেন আমাকে প্লিজ অনেকক্ষণ থেকে খুঁজছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আসুন আমার সাথে।
-জি চলুন।
-এই তো এই বাসাটার ২য় তলার ডান পার্সনটা।
মেয়েটা হন হন করে চলে গেল নুহাসকে ধন্যবাদটা পর্যন্ত দিলো না। একশ একটা গালি দিলো সে মেয়েটাকে মনে মনে। সে আজকে হাঁটবে বলে ঠিক করেছিলো,নিজেকে হিমু ভাবতে নুহাসের খুব ভালো লাগে আজকাল। হিমুর সঙ্গে সে নিজের তফাৎ খুঁজতে শুরু করে পথমধ্যে। কিন্তু ওর ভাবনা অন্য দিকে চলে যায়। ও এখন একটু আগে দেখা মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতেছিল। কি করে হটাত তার ভাবনার ভুবনটা জুড়ে মেয়েটা আসলো সে জানে না। ক্ষণিকের দেখা থেকে ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। আর সে মানুষটা তখন অন্যের ভাবনার জগতে কিছুক্ষণের জন্য চলে আসে। নুহাস হটাত খেয়াল করলো সে বাসা থেকে অনেকদূর চলে এসেছে হাঁটতে হাঁটতে। ঘরে ফিরতে হবে কারণ এই দুনিয়াতে ঐটাই তার শেষ আশ্রয়স্থল।
ঘরে ফিরে নুহাস নিজের ঘরে চলে গেলো। পিসিতে গান ছেড়ে ঘর অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে আছে সে। আজ তার মার কথা মনে পড়তেছে। কত দিন মায়ের সাথে কথা হয় না তার। নুহাস অন্য জগতে চলে গেলো।
-খোকা কি করছিস রে? ঘুমিয়ে গেসস?
-না মা। ঘুম আসছে না। তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
-আচ্ছা খোকা দিচ্ছি তুই ঘুমা।
-মা ,তুমি একা কেনো চলে গেলে আমাকে রেখে।
-খোকা যাওয়ার সময় হলে যে সবার যেতে হয়।
-আমিও আসবো মা তোমার সাথে দেখা করতে?
-না খোকা তোর যে এখনো সময় হয় নাই। তোর অনেক কাজ বাকি।
-
-কাঁদছিস কেন খোকা?
-মাগো তুমি চোখের জল আঁচল দিয়ে মুছে দিবে বলে। কতদিন তোমার আঁচলের স্পর্শ পাই না।
নুহাসের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ওর পিসিতে গান বাজছিল রুমির মা গানটা:-
''মায়েরই মুখ দেখে দুঃখ ভুলি
মায়েরই আঁচলে জীবন গুজি।''
নুহাসের মন খারাপ হয়ে গেলো। ওর মা মারা গেছেন ৫ মাস হল। নুহাসের বাবা অনেক টাকা খরচ করেছেন নিজের স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য। টাকা দিয়ে তো আর জীবন কিনা যায় না। কেন্সার কেড়ে নিলো নুহাসের মাথার উপরের ছায়াকে।
নুহাসের ১টা বন্ধু এসে ডাকাডাকি করছে। নুহাস বন্ধুটিকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। অনেক কথা-বার্তা হল তাদের মাঝে। পড়ন্ত বিকাল যখন আসলো তখন নুহাসের চোখ গেলো সোহরাব আঙ্কেলের চাঁদের দিকে কেউ একজন হাত নাড়ছে তাদের দিকে বুঝতে পারলো। নুহাস চশমাটা পরে নিলো বুক পকেট থেকে বের করে। আরে এতো সেই দিনের সেই মেয়েটি। নুহাস হাত নেড়ে সাড়া দিলো।
২-১ দিন পর এক বিকেল বেলায় গলিতে আবার দেখা হল মেয়েটির সাথে।
-এই যে ভাইয়া
-জি(নুহাস একটু ততমত খেয়ে গেলো)
-গতদিন আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। গতদিনের জন্য ধন্যবাদ।
-(নুহাস এইবার আবেগময় কণ্ঠেই বলল) ঐটা একটা দায়িত্ব ছিল। বিপদে পড়া একজনকে সাহায্য করা।
-বাহ তাই বুঝি। আপনি খুব পরোপকারী?
-পরোপকারী কিনা বলতে পারবো না তবে বিপদ দেখলে মানুষকে সাহায্য করি।
-তাই ভালো? আপনার মোবাইলটা দেন দেখি পরোপকারী?
-কেন?
-আরে দেন না? ভয় পাবেন না আমি মোবাইল ডাকাতি করতেছি না?
নুহাস ইতস্তত করতেছিল মোবাইলটা পকেট থেকে হাতে নিয়ে দিবে কি না?
মেয়েটা মোবাইলটা নিল নুহাসের হাত থেকে কিছু বলার আগে এবং একটা নাম্বার সেভ করে নুহাসের হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল ১০০ টাকা ফেক্সিলোড করতে। মেয়েটি কারণ দর্শাল যে, গলির আশেপাশের সব দোকান বন্ধ।
-আপনি অপরিচিত মানুষকে ফোন নাম্বার দিয়ে দিলেন?
-না আমি পরিচিত মানুষকেই নাম্বার দিছি। যিনি একজন স্ব-ঘোষিত পরোপকারী। ফেক্সিলোডটা করে দিয়েন। টা টা কৃতজ্ঞ থাকবো পরোপকারী।
নুহাস তাকিয়ে থেকে ওর চলে যাওয়া দেখল। যাওয়ার সময় মেয়েটা একবার রহস্যময় হাসি নিয়ে পিছনে থাকালো। নুহাস সাথে সাথে চোখটা সরিয়ে নিল। নুহাস হাঁটা শুরু করল উদ্দেশ্য ফ্লেক্সির দোকান খুঁজে বের করা। অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে একটা ফ্লেক্সির দোকান পেয়ে গেলো। ফ্লেক্সি যখন দিবে তখন তার মাথায় আসলো যে ফোন করার জন্য একটা উপায় বের করতে হবে। ও ৫০ টাকা ফ্লেক্সি দিলো, বাকি ৫০ টাকা নিজের কাছে রেখে দিলো। ঐ ১০০ টাকার নোটটি নিজের কাছে রেখে দিলো নুহাস।
বাসায় এসে চিন্তা করতেছে মেয়েটাকে ফোন দিবে কিনা? বারবার ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিতে চেয়েও দিতে পারলো না সে। অবশেষে যা হবার হবে ভেবে ফোন দিয়ে দিলো।
-হ্যালো
-হ্যালো। আমি নুহাস।
-ও কেমন আছেন?
-ভালো তুমি সরি আপনি?
-তুমিটাই ভালো কি বলেন?
-হম? কেমন আছেন সরি কেমন আছো?
-হিহিহিহি, আমি ভালো আছি। কিন্তু রাগান্বিত?
-আমার উপরে?
-না তোমার মত দেখতে একটা ভূতের উপরে।
-আমি দেখতে ভূতের মত?
-হম, ভূতের চেয়েও বাজে দেখতে তুমি।
-তুমি কি পেত্নি?
-না আমি পরি।
-তুমি টয়লেট পরি।
-ছি তোমার ভাষা কি বাজে। অবশ্য ভূতের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিবা আশা করতে পারি আমি?
-সত্য কথা ভালো লাগে না বুঝি?
-মশাই আমি জানি আমি দেখতে পরির মত।
-ও কথা বল না। পেত্নিরা আড়ালে মুচকি হাসে যে।
-ঐ শালা ফোন রাখ কুত্তা।
-সত্য কথার দাম নাই আবারো প্রমাণিত।
-যা ভাগ তুই কোথাকার কোন সত্যবাদী।
ফোনের অপর প্রান্ত নিশ্চুপ হয়ে গেলো। নুহাসের হার্ট এখনও অনেক বেশি করে লাফাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে হাজারো একটা গালি দিলো সে কি করেছে এটা। ফোন দিল এক কারণে আর অন্য লাইনে কথা বলে দিলো নিজের বারোটা বাজিয়ে। গালি পর্ব শেষ করে ঘুমুতে গেলো সে কিন্তু ঘুম যেন বড্ডই অভিমানী আজ। ঘুম আসবে না বলেই ঠিক করেছে তার ২ চোখে। ভাবতে লাগলো সে অচেনা সেই পার্বতীকে নিয়ে। ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সে বুঝতে পারলো না। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তার এক অদ্ভুত অনুভূতির সাথে তার কেমন যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে। প্রেম পরলে বুঝি এমন হয় সে ভাবতে লাগলো। সে নাস্তা করে ভালো কিছু পরে নিয়ে দৌড়ে গলির মুখে গেলো।
নুহাস সেই কখন থেকে গলির মুখে বসা। মেয়েটি একটিবারের জন্য ঘর থেকে বের হল না। দুপুর হয়ে গেলো। নুহাস ফোনে চেষ্টা করতেছিল কিন্তু ফোন অফ। নুহাস চলে গেলো আঙ্কেলের বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিলো। কাজের বোয়া দরজা খুলল। নুহাস জিজ্ঞেস করলো ঘরে যে নতুন একটা আপু আসছিলেন উনি কই? উনিতো ভোরের ট্রেনে চলে গেছেন। বোয়া যে উত্তর দিবে নুহাস তা আশা করেনি? নুহাসের মাথায় যেন আশি মনের কোন বস্তা কেউ চাপিয়ে দিয়েছে ও হাঁটতে পারতেছে না। বাসায় এসে ও কান্না করলো যেন আবারো কিছু একটা হারিয়ে ফেললো। মা মারা যাওয়ার পরে এমন কষ্ট আর সে কখন পায়নি বা কেউ তাকে দেয়নি? এই কয়টিদিন নুহাস তার মা হারানোর দুঃখ ভুলে নিজেকে নতুন করে তৈরি করে নিয়েছিল কিন্তু মেয়েটির একটি ধাক্কা থাকে আবারো পিছিয়ে দিলো।
১....৫...১০ দিন চলে গেলো ফোন অফ। নুহাস এই কয়দিন যতবার ঐ নাম্বারটিতে চেষ্টা করেছে ফোন অফ ছিল। নুহাসের কাছে সেই ১০০ টাকার নোটটি এখনো আছে। মাঝে-মধ্যে দেখে সে নোটটি বের করে। নোটটিতে যেন অচেনা এক মায়া আছে। নুহাস কেমন যেন হয়ে যায় নোটটির দিকে থাকিয়ে। নুহাসের ডায়েরির শেষ পাথায় একটা কবিতা লিখা ছিল অচেনা সেই পার্বতীকে নিয়ে-
''অসীম এ পথ হাঁটিতেছি আমি হাজারো বছর ধরে,
অসীম এ পথে হাঁটা শেষ হবে না আমার এই সসীম জীবনে!!
হাজার হাজার বই পুস্তকে ঠাসা আমার এ ক্লান্তিযুক্ত জীবন।
আমি ক্লান্ত এক পথিক বর আজকের জন-জীবনে!
আমি হাঁটিয়াছি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া নিভৃত জীবনের লক্ষ্যে,
জরাজিন্য এ জীবনে দিয়েছিল স্হিতি, অচেনা এক পার্বতী
আমি হয়েছিলাম আহ্লাদিত, হয়ে তার রুপে আনন্দিত
চুল তার এলোকেশী, বাতাসে সজীব উড়ন্ত
মুখ তার সূর্যমুখী, আঁধারে দিবে আলো
কপালের মধ্যমণিতে তার কালো এক টিপ
এমনি সুনয়না ছিল সেই মেয়েটি।।
এক পলকেই কেড়ে নিয়েছিল হৃদয় সুনয়না সেই মেয়েটি
মেয়েটি,বিশ্বকর্মার হাতের তৈরি অনন্য এক সৃষ্টি!!''
“মেয়েটি যতোটুকু সুখ দিয়েছিল আমায় কেড়ে নিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি সুখ। তারপর আমি মেয়েটিকে ভালোবাসি এবং ভালোবেসে যাবো। সে আমার না বলা ভালোবাসা। আমি নুহাসের নির্যাসহীন ভালোবাসা সে।’
-এই যে শুনুন
-জি বলুন
-এই বাসাটা কোথায় বলতে পারেন?(নুহাসের হাতে একটা এড্রেস ধরিয়ে দিয়ে)
-জি। এটাতো সোহরাব আঙ্কেলের বাসা।
-জি। একটু বাসাটা দেখিয়ে দিবেন আমাকে প্লিজ অনেকক্ষণ থেকে খুঁজছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আসুন আমার সাথে।
-জি চলুন।
-এই তো এই বাসাটার ২য় তলার ডান পার্সনটা।
মেয়েটা হন হন করে চলে গেল নুহাসকে ধন্যবাদটা পর্যন্ত দিলো না। একশ একটা গালি দিলো সে মেয়েটাকে মনে মনে। সে আজকে হাঁটবে বলে ঠিক করেছিলো,নিজেকে হিমু ভাবতে নুহাসের খুব ভালো লাগে আজকাল। হিমুর সঙ্গে সে নিজের তফাৎ খুঁজতে শুরু করে পথমধ্যে। কিন্তু ওর ভাবনা অন্য দিকে চলে যায়। ও এখন একটু আগে দেখা মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতেছিল। কি করে হটাত তার ভাবনার ভুবনটা জুড়ে মেয়েটা আসলো সে জানে না। ক্ষণিকের দেখা থেকে ভালো লাগার সৃষ্টি হয়। আর সে মানুষটা তখন অন্যের ভাবনার জগতে কিছুক্ষণের জন্য চলে আসে। নুহাস হটাত খেয়াল করলো সে বাসা থেকে অনেকদূর চলে এসেছে হাঁটতে হাঁটতে। ঘরে ফিরতে হবে কারণ এই দুনিয়াতে ঐটাই তার শেষ আশ্রয়স্থল।
ঘরে ফিরে নুহাস নিজের ঘরে চলে গেলো। পিসিতে গান ছেড়ে ঘর অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে আছে সে। আজ তার মার কথা মনে পড়তেছে। কত দিন মায়ের সাথে কথা হয় না তার। নুহাস অন্য জগতে চলে গেলো।
-খোকা কি করছিস রে? ঘুমিয়ে গেসস?
-না মা। ঘুম আসছে না। তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
-আচ্ছা খোকা দিচ্ছি তুই ঘুমা।
-মা ,তুমি একা কেনো চলে গেলে আমাকে রেখে।
-খোকা যাওয়ার সময় হলে যে সবার যেতে হয়।
-আমিও আসবো মা তোমার সাথে দেখা করতে?
-না খোকা তোর যে এখনো সময় হয় নাই। তোর অনেক কাজ বাকি।
-
-কাঁদছিস কেন খোকা?
-মাগো তুমি চোখের জল আঁচল দিয়ে মুছে দিবে বলে। কতদিন তোমার আঁচলের স্পর্শ পাই না।
নুহাসের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ওর পিসিতে গান বাজছিল রুমির মা গানটা:-
''মায়েরই মুখ দেখে দুঃখ ভুলি
মায়েরই আঁচলে জীবন গুজি।''
নুহাসের মন খারাপ হয়ে গেলো। ওর মা মারা গেছেন ৫ মাস হল। নুহাসের বাবা অনেক টাকা খরচ করেছেন নিজের স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য। টাকা দিয়ে তো আর জীবন কিনা যায় না। কেন্সার কেড়ে নিলো নুহাসের মাথার উপরের ছায়াকে।
নুহাসের ১টা বন্ধু এসে ডাকাডাকি করছে। নুহাস বন্ধুটিকে নিয়ে ছাদে চলে গেলো। অনেক কথা-বার্তা হল তাদের মাঝে। পড়ন্ত বিকাল যখন আসলো তখন নুহাসের চোখ গেলো সোহরাব আঙ্কেলের চাঁদের দিকে কেউ একজন হাত নাড়ছে তাদের দিকে বুঝতে পারলো। নুহাস চশমাটা পরে নিলো বুক পকেট থেকে বের করে। আরে এতো সেই দিনের সেই মেয়েটি। নুহাস হাত নেড়ে সাড়া দিলো।
২-১ দিন পর এক বিকেল বেলায় গলিতে আবার দেখা হল মেয়েটির সাথে।
-এই যে ভাইয়া
-জি(নুহাস একটু ততমত খেয়ে গেলো)
-গতদিন আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। গতদিনের জন্য ধন্যবাদ।
-(নুহাস এইবার আবেগময় কণ্ঠেই বলল) ঐটা একটা দায়িত্ব ছিল। বিপদে পড়া একজনকে সাহায্য করা।
-বাহ তাই বুঝি। আপনি খুব পরোপকারী?
-পরোপকারী কিনা বলতে পারবো না তবে বিপদ দেখলে মানুষকে সাহায্য করি।
-তাই ভালো? আপনার মোবাইলটা দেন দেখি পরোপকারী?
-কেন?
-আরে দেন না? ভয় পাবেন না আমি মোবাইল ডাকাতি করতেছি না?
নুহাস ইতস্তত করতেছিল মোবাইলটা পকেট থেকে হাতে নিয়ে দিবে কি না?
মেয়েটা মোবাইলটা নিল নুহাসের হাত থেকে কিছু বলার আগে এবং একটা নাম্বার সেভ করে নুহাসের হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল ১০০ টাকা ফেক্সিলোড করতে। মেয়েটি কারণ দর্শাল যে, গলির আশেপাশের সব দোকান বন্ধ।
-আপনি অপরিচিত মানুষকে ফোন নাম্বার দিয়ে দিলেন?
-না আমি পরিচিত মানুষকেই নাম্বার দিছি। যিনি একজন স্ব-ঘোষিত পরোপকারী। ফেক্সিলোডটা করে দিয়েন। টা টা কৃতজ্ঞ থাকবো পরোপকারী।
নুহাস তাকিয়ে থেকে ওর চলে যাওয়া দেখল। যাওয়ার সময় মেয়েটা একবার রহস্যময় হাসি নিয়ে পিছনে থাকালো। নুহাস সাথে সাথে চোখটা সরিয়ে নিল। নুহাস হাঁটা শুরু করল উদ্দেশ্য ফ্লেক্সির দোকান খুঁজে বের করা। অনেকটা পথ হাঁটতে হাঁটতে একটা ফ্লেক্সির দোকান পেয়ে গেলো। ফ্লেক্সি যখন দিবে তখন তার মাথায় আসলো যে ফোন করার জন্য একটা উপায় বের করতে হবে। ও ৫০ টাকা ফ্লেক্সি দিলো, বাকি ৫০ টাকা নিজের কাছে রেখে দিলো। ঐ ১০০ টাকার নোটটি নিজের কাছে রেখে দিলো নুহাস।
বাসায় এসে চিন্তা করতেছে মেয়েটাকে ফোন দিবে কিনা? বারবার ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিতে চেয়েও দিতে পারলো না সে। অবশেষে যা হবার হবে ভেবে ফোন দিয়ে দিলো।
-হ্যালো
-হ্যালো। আমি নুহাস।
-ও কেমন আছেন?
-ভালো তুমি সরি আপনি?
-তুমিটাই ভালো কি বলেন?
-হম? কেমন আছেন সরি কেমন আছো?
-হিহিহিহি, আমি ভালো আছি। কিন্তু রাগান্বিত?
-আমার উপরে?
-না তোমার মত দেখতে একটা ভূতের উপরে।
-আমি দেখতে ভূতের মত?
-হম, ভূতের চেয়েও বাজে দেখতে তুমি।
-তুমি কি পেত্নি?
-না আমি পরি।
-তুমি টয়লেট পরি।
-ছি তোমার ভাষা কি বাজে। অবশ্য ভূতের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিবা আশা করতে পারি আমি?
-সত্য কথা ভালো লাগে না বুঝি?
-মশাই আমি জানি আমি দেখতে পরির মত।
-ও কথা বল না। পেত্নিরা আড়ালে মুচকি হাসে যে।
-ঐ শালা ফোন রাখ কুত্তা।
-সত্য কথার দাম নাই আবারো প্রমাণিত।
-যা ভাগ তুই কোথাকার কোন সত্যবাদী।
ফোনের অপর প্রান্ত নিশ্চুপ হয়ে গেলো। নুহাসের হার্ট এখনও অনেক বেশি করে লাফাচ্ছে। মনে মনে নিজেকে হাজারো একটা গালি দিলো সে কি করেছে এটা। ফোন দিল এক কারণে আর অন্য লাইনে কথা বলে দিলো নিজের বারোটা বাজিয়ে। গালি পর্ব শেষ করে ঘুমুতে গেলো সে কিন্তু ঘুম যেন বড্ডই অভিমানী আজ। ঘুম আসবে না বলেই ঠিক করেছে তার ২ চোখে। ভাবতে লাগলো সে অচেনা সেই পার্বতীকে নিয়ে। ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো সে বুঝতে পারলো না। সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তার এক অদ্ভুত অনুভূতির সাথে তার কেমন যেন সব কিছু নতুন নতুন লাগছে। প্রেম পরলে বুঝি এমন হয় সে ভাবতে লাগলো। সে নাস্তা করে ভালো কিছু পরে নিয়ে দৌড়ে গলির মুখে গেলো।
নুহাস সেই কখন থেকে গলির মুখে বসা। মেয়েটি একটিবারের জন্য ঘর থেকে বের হল না। দুপুর হয়ে গেলো। নুহাস ফোনে চেষ্টা করতেছিল কিন্তু ফোন অফ। নুহাস চলে গেলো আঙ্কেলের বাসায় গিয়ে কলিংবেল দিলো। কাজের বোয়া দরজা খুলল। নুহাস জিজ্ঞেস করলো ঘরে যে নতুন একটা আপু আসছিলেন উনি কই? উনিতো ভোরের ট্রেনে চলে গেছেন। বোয়া যে উত্তর দিবে নুহাস তা আশা করেনি? নুহাসের মাথায় যেন আশি মনের কোন বস্তা কেউ চাপিয়ে দিয়েছে ও হাঁটতে পারতেছে না। বাসায় এসে ও কান্না করলো যেন আবারো কিছু একটা হারিয়ে ফেললো। মা মারা যাওয়ার পরে এমন কষ্ট আর সে কখন পায়নি বা কেউ তাকে দেয়নি? এই কয়টিদিন নুহাস তার মা হারানোর দুঃখ ভুলে নিজেকে নতুন করে তৈরি করে নিয়েছিল কিন্তু মেয়েটির একটি ধাক্কা থাকে আবারো পিছিয়ে দিলো।
১....৫...১০ দিন চলে গেলো ফোন অফ। নুহাস এই কয়দিন যতবার ঐ নাম্বারটিতে চেষ্টা করেছে ফোন অফ ছিল। নুহাসের কাছে সেই ১০০ টাকার নোটটি এখনো আছে। মাঝে-মধ্যে দেখে সে নোটটি বের করে। নোটটিতে যেন অচেনা এক মায়া আছে। নুহাস কেমন যেন হয়ে যায় নোটটির দিকে থাকিয়ে। নুহাসের ডায়েরির শেষ পাথায় একটা কবিতা লিখা ছিল অচেনা সেই পার্বতীকে নিয়ে-
''অসীম এ পথ হাঁটিতেছি আমি হাজারো বছর ধরে,
অসীম এ পথে হাঁটা শেষ হবে না আমার এই সসীম জীবনে!!
হাজার হাজার বই পুস্তকে ঠাসা আমার এ ক্লান্তিযুক্ত জীবন।
আমি ক্লান্ত এক পথিক বর আজকের জন-জীবনে!
আমি হাঁটিয়াছি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া নিভৃত জীবনের লক্ষ্যে,
জরাজিন্য এ জীবনে দিয়েছিল স্হিতি, অচেনা এক পার্বতী
আমি হয়েছিলাম আহ্লাদিত, হয়ে তার রুপে আনন্দিত
চুল তার এলোকেশী, বাতাসে সজীব উড়ন্ত
মুখ তার সূর্যমুখী, আঁধারে দিবে আলো
কপালের মধ্যমণিতে তার কালো এক টিপ
এমনি সুনয়না ছিল সেই মেয়েটি।।
এক পলকেই কেড়ে নিয়েছিল হৃদয় সুনয়না সেই মেয়েটি
মেয়েটি,বিশ্বকর্মার হাতের তৈরি অনন্য এক সৃষ্টি!!''
“মেয়েটি যতোটুকু সুখ দিয়েছিল আমায় কেড়ে নিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি সুখ। তারপর আমি মেয়েটিকে ভালোবাসি এবং ভালোবেসে যাবো। সে আমার না বলা ভালোবাসা। আমি নুহাসের নির্যাসহীন ভালোবাসা সে।’
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন