love storyনীরার সাথে রাজিবের পরিচয় ১ বছরের উপর হল । প্রথমে ফেসবুকে পরিচয় এরপর মোবাইল নাম্বার নেওয়া। এভাবে কথা বলা। ছেলেমেয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েরা একটু লাজুক হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে উল্টা। রাজিব একটু লাজুক প্রকৃতির। কম কথা বলা টাইপ। ওদের মধ্যে যে প্রেম তা না। কথা বলতে ভাল লাগে , একজনের কথা অন্যকে শেয়ার করা এই আর কি!!

কিন্তু রাজিব মনে মনে ঠিকই নীরাকে ভালবাসে। কথা বলার ফাঁকে কখন যে নীরার কথার প্রেমে পরে গেছে তা রাজিব নিজেও জানে না? শুধু কি নীরার কথার যাদু নাকি অন্য কোন কিছু ও আছে?? সেটাও রাজিবের অজানা। জানার ই বা কি দরকার? প্রেম ভালবাসায় এত জানাজানির কিছু নেই। কিন্তু নীরাকে যে বলা হয়ে উঠেনি? বলতে পারবে নাকি তাও জানে না।

নীরা রাজিব একই শহরেই বাস করে। কিন্তু কখনও দেখা করেনি। কি জন্যই বা করবে? এমন কোন কিছু তো হয় নি তাদের মধ্যে? আর ফেসবুকে তো না জানা কত কারও সাথেই কথা হয়। তাই বলে কি সবার সাথে দেখা করা লাগে?

তবে আজকাল রাজিবের খুব নীরাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। যদিও ফেসবুকে ছবি আছে অনেক নীরার। তবুও সামনাসামনি আর ছবি কি এক হল? কিভাবে নীরার সাথে দেখা করা যায় তাই ভাবে সে। কিভাবে বলবে?

সেদিক থেকে রাজিব পুরাই উল্টা। ফেসবুকে তার কোন ছবি নেই। নীরা মাঝেমধ্যে দেখতে চেয়েছে তবে রাজিব বলে দিয়েছে তার ছবি দিতে ভাল লাগে না। নীরা ও জোর করেনি তেমন। শুধু হেসে বলে, তুমি কি মেয়ে নাকি? মেয়েরাই না ছবি দিতে ভয় পায়?? এভাবে হাসাহাসি খুনসুটি ভালই চলে তাদের মধ্যে।

সেদিন নীরা খুব করে ধরেছে রাজিবকে। একটা ছবি দিতেই হবে। কিন্তু রাজিব বরাবরের মতই না। আসলে রাজিবের ভয়টা ছিল অন্য জায়গায়। সে দেখতে সুন্দর না। শ্যামলা কালো। আর ততটা স্মার্টও না। সুন্দর করে ছবিও তুলতে পারে না। যদি তার ছবি দেখে নীরা আর কথা না বলে? বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়? ভয় তো একটা থেকেই যায়।

তবে এত জোরাজুরির ফলে রাজিব একটা সুযোগ কিন্তু ঠিকই পেয়ে যায়। সে বলে , আমি ছবি দিব না । আমাকে না হয় সামনাসামনিই দেখো। আমি কেমন? এই সুযোগে রাজিবের নীরার সাথেও দেখা হবে।
যদিও মনে ভয় ঠিকই থাকে। সে তো দেখতে আসলেই কালো। সামনাসামনি কি আর ছবি কি?তবুও এ সুযোগে একবার হলেও তো নীরাকে দেখতে পাবে সে। ছবি আগে দেখে ফেললে যদি আর দেখা না করে?
রাজিবের মনে এত ভয় কিন্তু একটা কারনেই। আর সেটা হল ভালবাসার ভয়।ভালবাসায় ভয় একটু বেশিই থাকে। হয়তোবা হারাবার ভয়!!


নীরা রাজিবকে দেখবেই তা যেভাবেই হোক!! তাই তারা ঠিক করলো দেখা করবে। টিএসসিতে দেখা করবে ঠিক হল।
কিন্তু দেখা করার দিনে বুক কাপছে রাজিবের। সে একা দেখা করার সাহস পাচ্ছে না। এমনিতেই একটু লাজুক। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আরিফকে তার সাথে যেতে বলল সে। আরিফ অবশ্য সবই জানে। এত কাছের বন্ধু। রাজিব মোটামুটি সবই বলেছে আরিফকে। আরিফ ও যেতে সম্মত হল।

নীরার সাথে বসে আছে রাজিব। এত দিনে তার ভাললাগার মানুষটিকে সামনাসামনি দেখছে। ছবির থেকেও সুন্দর নীরা। আর অনেক স্মার্ট, মর্ডান। রাজিব খুব ভয় পাচ্ছে। তাকে কি নীরা পছন্দ করবে? সে কি আজই তার মনের কথা নীরাকে বলবে? যদি না করে দেয়?? মনে সে অনেক কষ্ট পাবে। নীরা রাজিবকে অনেক ভাল বন্ধু হিসেবে হয়তো মানে। কিন্তু সে কি ভালবাসে?

ভাবনা ভাবনাই থেকে যায়। বলা হয় না কিছুই। আর আরিফ দূর থেকে সব দেখে। তাদের পাশাপাশি বসে থাকা। যদিও রাজিব নীরার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। নীরা মাঝে মাঝে আরিফকে দেখছে আর মিটমিট হাসছে।

নীরাকে কোন কিছুই বলা হয়নি রাজিবের। তার ভাললাগার কথা। আজকে চ্যাটে সবকিছু বলবে সে।দেখা যাক নীরা কি বলে?
রাতে নক করলো নীরাকে।

- কেমন লাগলো আজ সারাদিন?
- অনেক ভালো। আমি তো ঘুরতে ভীষণ ভালবাসি।
- নীরা তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।কিভাবে যে বলব?
- আরে বলে ফেল?
- আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।
- কিন্তু আমি তো বাসি না। আমার আসলে এগুলার ইচ্ছা নেই।আর তোমাকে বন্ধু হিসেবেই মনে করি।
- আমরা কি রিলেশনে যেতে পারি না? একদিন তো বিয়ে করবাই। তাহলে?
- তা দেখা যাবে। আমি তোমাকে ও ভাবে পছন্দ করি না।

কথা শেষ হয় আর তেমন কিছু না বলেই। রাজিবের মন খারাপ। এভাবে না উত্তর পাবে ভাবেনি সে। নীরার সাথে আজকাল তেমন কথা হয় না। এড়িয়ে চলে নীরা। দেখা হওয়ার পর থেকেই।

রাজিব নীরাকে ভুলতে পারছে না। তার বিশ্বাস নীরা একদিন তাকে অবশ্যই ভালবাসবে। তা যত দেরীতেই হোক না কেন? রাজিব আরিফকে সব বলবে। আরও বলবে নীরাকে যাতে ও বুঝায়। বন্ধুই তো বন্ধুর জন্য করবে। আর আরিফ কথা বলাতেও ওস্তাদ। সে ঠিকই নীরাকে বুঝাতে পারবে।

..................................

নীরা আর আরিফের ভাল বন্ধুত্ব এখন। রাজিবের সাথেও এখন নীরা ভালই কথা বলে। আরিফকে বলে মনে হয় ভালই কাজ দিয়েছে।

মাঝে মাঝে গ্রুপ চ্যাট হয় তিনজনের। নীরার ফোন নং ও জানে আরিফ। কনফারেন্সে একসাথে তিনজন প্রায়ই কথা বলে। তবে রাজিবের ভাবনা- নীরার মন কি গলেছে? আরিফ কি তাকে বুঝাতে পেরেছে?

আজকাল আর তেমন গ্রুপ চ্যাট হয় না বা কনফারেন্স। আরিফকে রাজিব বলে, কি রে কি অবস্থা? রাজি কেমন করালি? ‘ হুম! প্রায়ই রাজি করিয়ে ফেলছি। আমার কথায় তো সে মুগ্ধ। তাই আজকাল গ্রুপ চ্যাটে বলি না । এগুলা তো আলাদাভাবেই বোঝাতে হয়।‘ রাজিব ও খুশিতে মাথা নাড়ে।
রাতে আজকাল প্রায়ই ওয়েটিং নীরা আর আরিফের ফোন। হয়তো আরিফ নীরাকে বোঝায় রাজিবের ভালবাসার কথা!!???

***************

দুই মাস পর.......


আজ নীরার গায়ে হলুদ। আরিফ নীরাকে বুঝিয়ে ফেলেছে। তবে রাজিব বুঝতে পারেনি। এই বুঝানো সেটা নয়। রাজিবের হাতে নীরা আর আরিফের বিয়ের খাম।

এই কয়েকদিন আগে অন্য বন্ধুদের থেকে রাজিব জানতে পেরেছে আরিফ আর নীরা একজন অন্যকে ভালবাসে। আর নীরার ভাললাগা নাকি আরিফকে প্রথম দেখার পর থেকেই।রাজিবকে দেখার পর থেকেই রাজিবকে ভাললাগে না নীরার। আর আরিফও সে সুযোগ নেয়। এভাবেই তাদের প্রেম। রাজিবকে কিছুই বলেনি আরিফ। একমাস কোন যোগাযোগ ও নেই। আজই বিয়ের দাওয়াত দেয় আরিফ।



একা রাস্তায় হেটে চলছে রাজিব। হাতে নীরা আর আরিফের বিয়ের খাম । রাজিব জানে না তার গন্তব্য।পথ জানা নেই রাজিবের। এ পথের শেষ কোথায় তাই হয়তো এখনও খুজে বেড়াচ্ছে রাজিব।
 
Top