premer golpoবাস থেকে নামলাম আমরা দুজন। আমি ও আমার বউ। ও স্যরি, বউ বলে বোধহয় ভুলই করলাম। ব্যাপার না, কারেকশন করছি..... .... ... .. . বাস থেকে নামলাম আমরা দুজন। আমি ও একটি মেয়ে। সমাজের চোখে ও আমার চোখে মেয়েটি আমার বউ। কিন্তু তার মতে আমি ওর স্বামী নই। বাসর রাতেই সে আমাকে বলে দিয়েছে আমি যাতে ওকে বউ না ভাবি। এজন্যই কারেকশনটা দিলাম...... .... ... .. . .... ... .. . আমাদের বিয়েটা ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মত। কিন্তু ওর কাছে এটা একটা দুর্ঘটনা। ও হচ্ছে শহরের পরিবেশে বড় হওয়া একটি মেয়ে। যে কিনা স্বপ্ন দেখতো হ্যান্ডসাম একটা বর পাবে ঠিক যেন রূপকথার রাজপুত্র, বড় চাকুরি করবে, গাড়ি থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি। যার কোনটাই আমার মাঝে নেই। আমি হলাম গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে পড়াশোনা করা এক আনস্মার্ট ছেলে। কচ্ছপ গতির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কোনমতে বিসিএস করে একটা সাদামাটা চাকরী করছি। আর আমার বেশভূষাও পুরা সেই। একদম আংকেল টাইপের। মোট কথা আমার মত দেখতে একটা মানুষকে কোন মেয়ে দুঃস্বপ্নেও বর হিসেবে চাইবে না। আর মেয়েটি যদি হয় শহরের পরিবেশে বড় হওয়া একজন তবে তো কথাই নেই... .... ... .. . ওর বর্ণনা আর কি দিব..., যা বলব কম হয়ে যাবে। তাই না বলাটাই বরং ভালো। এতকিছুর পরও যে ওর সাথে আমার বিয়েটা কিভাবে হল তা মেয়ের বাপ জানে, ঘটক জানে আর আরেকজন জানেন। যিনি উপর থেকে আমার আর ওর বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছেন... .... ... .. . ধুর কতক্ষণ ধরে মেয়ে মানুষের মত ওর ওর করেই যাচ্ছি। ওর তো একটা নাম আছে। ওর নাম হল অনিন্দিতা। সবাই ওকে এতবড় নামটা ধরেই ডাকে। যেটা আমাকে বেশ অবাক করেছিল। ইতিমধ্যেই আমি মনে মনে নামটি সংক্ষেপ করে ফেলেছি। কিন্তু ডাকার সাহস পাই নি। কোনদিন পাবো কি না তাও জানি না। সংক্ষিপ্ত নামটা হল অনু... .... ... .. . .... ... .. . বাস থেকে তো নামলাম। এখন আরেকটা বাস ধরতে হবে। তারপর সেই বাসে ৫ কি.মি. গিয়ে রেলস্টেশনে যেতে হবে। তারপর ট্রেনে করে বাড়ি পৌঁছুতে হবে। বাড়ি বলতে গ্রামের বাড়ি। বিয়ের পর এই প্রথম গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। বিয়েটা শহরেই আমার বড় ভাইয়ের বাসায় হয়.... .... ... .. . ওকে সাথে নিয়ে কাউন্টারে গেলাম। কিন্তু পোড়া কপাল। ঐ এলাকায় নাকি কিসের ধর্মঘট চলছে। তাই বাস যাবে না। এদিকে ঘড়ির কাটা জানিয়ে দিল যে এগারোটা বেজে গেছে। তাই ভ্যান রিক্সা কোনটাই পাওয়া যাবে না। গ্রামে ১০ টা বাজলেই গভীর রাত হয়ে যায়। তাই এসব যানবাহন পাওয়া যায় না.... ট্রেন আছে রাত ১ টায়। মিস হলেই সর্বনাশ। বুঝলাম যে হেটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই.. . পাকা রাস্তা দিয়ে গেলে স্টেশন ৫ কি.মি. আর কাঁচা একটা শর্টকাট আছে যেটা দিয়ে গেলে মোটে সাড়ে তিন কি.মি. এর মত..... .... ... .. . মেয়েটা এমনিতেই আমাকে পছন্দ করে না, তার উপর আমি ওকে নিয়ে এসেছি ওর চরম অপছন্দের গ্রাম এলাকায়। এখন আবার বাস জার্নি করে গ্রামের রাস্তায় হাটতেও হবে। কিভাবে অনুকে হাটার প্রস্তাব দিব বুঝতেছি না। লজ্জা সংকোচের জানাজা পড়িয়ে সাহস করে ওকে বললাম, "উপায় নেই, হাটতে হবে।" নিজের উচ্চারিত বাক্যটা শুনে নিজের উপরই রাগ হচ্ছে। অনুর যে কি হচ্ছে সেটা অন্তর্যামীই ভালো বলতে পারবেন... ব্যাগটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে হাটা শুরু করলাম। অনুর হাতে ওর ভ্যানিটি ব্যাগ... .... ... .. . .... ... .. . চাঁদটা মাঝারি আকারের। তাই জ্যোৎস্না খুব বেশি নয়। রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় চাঁদের আলোয় বেশ সাদা দেখাচ্ছে। রাস্তার দু পাশে ছোট ছোট গাছ। কোথাও আবার কাঁশের ঝোপ। চারপাশে কোন বাড়ি-ঘর না থাকায় মানুষের অস্তিত্বও টের পাওয়া যাচ্ছে না... চারপাশে রাজ্যের নীরবতা বিরাজ করছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ, দূরের গ্রাম থেকে ভেসে আসা কুকুরের ঘেউঘেউ আর মাঝেমাঝে শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। ও হ্যাঁ, আরো শব্দ আছে। দুটো মানুষের হাটার শব্দ... .... ... .. . আমি অনুর দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। ভীষণ দ্বিধাগ্রস্থ লাগছে। মেয়েটাকে এত কষ্ট দিয়ে নিয়ে যেতে মোটেও ভালো লাগছে না। ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে ওকে। নীরবতা ভেঙে বললাম, "কিছু খাবে ?" অনু চুপ করে রইল। উত্তর না পেয়েও আমি ব্যাগ থেকে একটি বিস্কুটের প্যাকেট আর পানির বোতল অনুর হাতে ধরিয়ে দিলাম। ও সেগুলো নিল। কিন্তু কোন কথাই বলল না..... .... ... .. . কিছুক্ষণ হাটছি... কারো মুখে কোন কথা নেই... শুনতাম যে, যখন দুজনের মুখে কোন কথা থাকে না তখন নাকি নীরবতাই কথা বলে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে নীরবতাও এখন নীরব। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। কিছু একটা বলা দরকার। কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। কিছু একটা বলার জন্য ওর দিকে ঘুরতেই লক্ষ্য করলাম ওর হাতে শুধুই ভ্যানিটি ব্যাগ। বুঝলাম যে অনু ওগুলো না খেয়েই ফেলে দিয়েছে... এ মুহূর্তে মেয়েটার উপর রাগ করা উচিত। ব্যাগে আর কোন খাবার নেই। বাকী রাস্তায় ক্ষুধা লাগলে এখন কি খাবে... সামনে তো আর দোকানও নেই যে কিছু কিনে নিব। নাহ্.... রাগ করতে পারছি না। মেয়েটার অবস্থা অনুভব করে রাগেরও জানাজা পড়ালাম! .... ... .. . .... ... .. . গ্রামে শহরের মত উঁচু দালানকোঠা না থাকায় দিগন্তজোড়া আকাশ দেখা যায়..... আকাশটা আজকে একদমই মেঘমুক্ত। অজস্র তারার মেলা বসেছে... মাঝে মাঝে জোনাকিগুলোকে জ্বলতে দেখে উল্কা বলে ধোঁকা খাচ্ছি... এরকম একটা পরিবেশে এতগুলো তারার মাঝে এত সুন্দর একটা স্নিগ্ধ চাঁদ দেখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাওয়ার কথা... কিন্তু অনুর হচ্ছে না... এত সুন্দর একটা প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে ও মাথা নিচু করে হাটছে। হয়তো বা মনে মনে নিজের ভাগ্যকে দুষছে। আমার মত একটা লোকের সাথে বিয়ে হওয়ায়... ওর মন খারাপের কথা ভেবে আমিও এই প্রকৃতির রূপটাকে উপভোগ করতে পারছি না... .... ... .. . .... ... .. . দুজনে হাটছি.... আমি একটু সামনে আর ও আমার পাশাপাশি একটু পিছনে... হঠাৎ করেই একটি বড় সাপ সরসর করে রাস্তা থেকে সরে গেল। অনু ভয় পেয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরল। আমিও এমনিতেই চমকে গিয়েছিলাম। তার উপর অনু এভাবে আমার হাত ধরায় যেন শক খেলাম। মনে মনে সাপটিকে ধন্যবাদ দিলাম কি না জানি না..! সম্বিৎ ফিরে পেয়েই অনু হাত সরিয়ে নিল। আবারো হাটছি.... আবারো নীরবতা এসে ভর করলো... .... ... .. . ভয়, মন খারাপ আর চাঁদের স্নিগ্ধ আলো মিলে অনুর চেহারায় একটি অদ্ভুত মায়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ মায়ায় সারাজীবন ডুবে থাকা যায়... অনুকে দেখতে দেখতে হাটতে গিয়ে গর্তের মধ্যে একটু ধাক্কা খেলাম আর অস্ফুটে মুখ দিয়ে উঃ করে উঠলাম। অনু চমকে গিয়ে আমার দিকে তাকালো। তখনই একটু চোখাচোখি হল। তারপর আবারো সেই মাথা নিচু করে চলা .... .... ... .. . .... ... .. . চলতে চলতে সামনে পড়ল একটা বাঁশের সাঁকো। বেশ নড়বড়ে। সাঁকোটির অবস্থা অত্র এলাকার চেয়ারম্যানের ন্যায় নীতির পরিচয় বহন করছে। অনভিজ্ঞদের জন্য এটা পার হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একটি বাঁশে পা দিয়ে আরেকটি হাতে ধরে পার হতে হয়। আমি মহা বিপদে পড়লাম এবার। অনুর পক্ষে এটা পার হওয়া প্রায় অসম্ভব। আমি ভাবছি এবার উপায় কি? আগে জানলে কক্ষনো এই রাস্তায় আসতাম না... .... ... .. . অনু গোটা সফরের নীরবতা ভেঙে এই প্রথম কথা বলল। বলল, "আমি এটা পার হতে পারব না। অন্য কোন উপায় নেই?" হায়রে অভাগা আমি.... এতক্ষণ পরে বউ আমার আমাকে কোন প্রশ্ন করলো আর আমি কোন সন্তোষজনক জবাবই দিতে পারছি না। বলতে হল,"উপায় নেই যে... এটাই পার হতে হবে..." অনু রাগত স্বরে বলল,"বললাম তো পারব না পার হতে..." আমি আরেকবার লজ্জা সংকোচের জানাজা পরিয়ে বলেই ফেললাম- "আমি আগে আগে যাচ্ছি। তুমি বরং আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে আসো..." হাত ধরার কথা শুনেই অনু মনে হয় আরো রেগে গেল। বলল,"থাক। আমি নিজেই পারবো।" আমি বুঝলাম এটা ওর জেদ... ... অনু ভ্যানিটি ব্যাগটি ঘাড়ে ঝুলিয়ে হিল পরা অবস্থাতেই সাঁকোতে উঠল। পা দিয়েই বুঝতে পারলো হিল পরে এখানে ১০ সেকেন্ডও দাড়ানো সম্ভব না। তাই আবার নেমে এল... .... ... .. . মেয়েটার কান্ড দেখে আমি মনে মনে একটু হেসেই ফেললাম । কিন্তু খারাপও লাগছিলো। ওকে বললাম, "হিলজোড়া আর ব্যাগটা এখন রাখো। তোমাকে পার করিয়ে পরে আমি আবার এসে নিয়ে যাবো...." অনু রাগ হলেও আমার কথা মেনে নিল। তারপর সাঁকোতে পার হচ্ছি দুজনে... আমি একটু সামনে আর অনু আমার পা অনুসরণ করে ঠিক পিছনে। সাঁকোর মাঝামাঝি প্রায় এসে গেছি। দুটো বাঁশের জোড়া এখানে। তাই একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পিছন ফিরে বলতে যাবো যে এবার একটু সাবধানে ....... বলতে না বলতেই অনুর পা পিছলে গেল... একটা মৃদু আর্তনাদ করে পরে যাচ্ছিল অনু...!!! আমি কিভাবে যেন বিদ্যুৎ গতিতে ধরে ফেললাম অনুর হাতটা... অনু আমার হাতে ভর করে বাঁশে এক পা দিয়ে হেলে আছে। আমি এক হাতে বাঁশ ধরে আছি আর অন্য হাতে অনুকে। ওর মুখের দিকে তাকালাম। ভীত হরিণীর মত চোখ দুটো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এত মায়া কেন ওর চোখেমুখে.... আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না। কলিজাটা চিরচির করে উঠছে। চোখ দুটো বন্ধ করে আস্তে আস্তে করে টেনে তুললাম ওকে... .... ... .. . আচ্ছা... মেয়েটা কি আমার দিকে তাকিয়েই ছিল নাকি আমার ভূতের মত মুখটা দেখে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিয়েছিল ...?? .... ... .. . যাক সে কথা... এই ঘটনার পর আমি আর কোন ঝুঁকি নিতে চাইলাম না। অনুর হাত শক্ত করে ধরে বাকি সাঁকোটাও পার হয়ে গেলাম। অনুও আর জেদ করল না.... এবার আমাকে আবার সাঁকো পার হয়ে ওপাড়ে গিয়ে ব্যাগ দুটো আর হিলজোড়া নিয়ে আসতে হবে.... ... .. . ওকে রেখে আবার সাঁকোতে পা দিতেই ও বলে উঠল, "না তুমি যাবে না..." আমি অবাক হয়ে বললাম, "ওগুলো আনতে হবে যে..." অনু বলল, "থাক আর আনতে হবে না..." আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতে পারলাম এই গ্রামের অচেনা অজানা পরিবেশে সে এপাড়ে একা থাকতেপারবে না। তা সে যতই সাহসী আর জেদী হোক না কেন...কাজেই ব্যাগ আর হিলজোড়ার মায়া ত্যাগ করতে হল... .... ... .. . আবার হাটা শুরু হল... অনু খালি পায়ে নিঃশব্দে হাটছে। সেটা দেখে আমিও কি যেন মনে করে স্যান্ডেল জোড়া ফেলে দিলাম। গ্রামের ঠান্ডা মেঠোপথটিতে পা দিয়েই বেশ আরাম লাগলো... দুজনে নিঃশব্দে খালি পায়ে হাটছি। এতগুলো ঘটনার পর ওর রাগ যে কিছুটা কমে এসেছে সেটা মুখ দেখে আঁচ করতে পারছি। এটা দেখেই আমার হৃদয়েও ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো ... .... ... .. . স্টেশন আর বেশি দূরে নেই। কিন্তু আমাদের নীরবতার অবসান হচ্ছে না ... মনে মনে অনেক চিন্তা করছি যে কি বলে নীরবতা ভাঙবো। মন আমার অনেক কথাই তুলে ধরল, কিন্তু এর মধ্য থেকে কোনটা বেছে নিব তা ঠিক করতে পারছি না... .... ... .. . অনু এবার কোন কথা বাছবিচারের সুযোগ দিল না। হঠাৎ করেই "উফফ" শব্দ করে উঠল... বুঝতে পারলাম খালি পায়ে হাটায় কিছু একটা বিঁধেছে। অনুকে থামিয়ে ওর হাত আমার ঘাড়ে রাখতে বললাম। তারপর আমি বসে মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে দেখলাম কিছু একটা দিয়ে অনেকখানি কেটে গেছে। প্রচুর রক্ত ঝরছে... ওর শরীরের রক্ত দেখে আমি সহ্য করতে পারছি না। অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে গেলাম। আমি ব্যাগ থেকে ব্যান্ডেজ বের করতে যাচ্ছিলাম... যেগুলো সবসময় আমার ব্যাগে থাকতো.. কিন্তু মনে হল ব্যাগ তো ফেলে এসেছি। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। হঠাৎ রাস্তার দু ধারের দুর্বা ঘাসগুলো চোখে পরলো... কিছু না ভেবে কিছু দুর্বা ঘাস সংগ্রহ করে দাঁত দিয়ে পিষলাম। তারপর সেগুলো কাঁটাস্থানে লাগিয়েই পকেট থেকে রুমালটা বের করে বেঁধে দিলাম। পুরো কাজটা করলাম অনুর দিকে না তাকিয়েই। তাকালে বোধহয় এমন করার সাহস হত না... আমি যখন ঘাস চিবাচ্ছিলাম তখন অনু অবাক হয়েছিল কি না, আমাকে গরু ভেবেছিল কি না, তার কিছুই খেয়াল করি নি। ওর পায়ের রক্ত দেখে আমার মাথায় কিছুই কাজ করছিল না... .... ... .. . স্টেশনের খুব কাছেই ঘটে ঘটনাটি। হঠাৎ ট্রেনের হুঁইসেল শুনতে পেলাম। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে...!! .... ... .. . অনুর পায়ের অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম ও হাঁটতে পারবে না। এদিকে ট্রেনটাও ধরতে হবে। পরের ট্রেন ভোর পাঁচটায়। এই অচেনা জায়গায় অনুকে নিয়ে এই অবস্থায় ততক্ষণ অপেক্ষা করা মোটেও ঠিক হবে না। যে করেই হোক, ট্রেনটা ধরতেই হবে। কিন্তু কি উপায় সেটা বুঝতে পারছিলাম না... .... ... .. . হঠাৎ সকল দ্বিধা সংকোচকে কবর দিয়ে (জানাজা আগেই পড়িয়েছি) অনুকে কোলে তুলে নিলাম!! অনু হয়তো বা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর দৃষ্টির ভাষা তখন কি ছিল আমি জানি না। আমি শুধু একবার ওর মুখের দিকে তাকালাম। তারপর দৃষ্টিস্থাপন করলাম ট্রেনের দিকে। যে করেই হোক ট্রেনটা ধরতে হবে। অনুকে কোলে নিয়ে ছুটলাম। সিনেমায় নায়ক যেভাবে নায়িকাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায়, অনেকটা সেভাবে.... .... ... .. . অনু আমার দিকে তাকিয়েই ছিল কিনা জানিনা।অনেক দৌড়ে অনুকে ট্রেনে তুলে দিলাম... ট্রেনের স্পীড বাড়ছে.... কিন্তু আমি তখনো উঠতে পারি নি। ট্রেনটার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছি... অনু এবার একপায়ে ভর দিয়ে হেলে হাতটা বাড়িয়ে দিল। আমি হাত ধরার চেষ্টা করছি। সিনেমার কথা মনে পরল। কিন্তু সিনেমায় নায়ক যে পজিশনে ছিল সেখানে আছে আমার নায়িকা অনু, আর নায়িকা যে পজিশনে ছিল সেখানে আছি আমি। আমিও দৌড়াচ্ছি... ট্রেনও ছুটছে... অনেক দৌড়ে অনুর হাতটি ধরে ট্রেনে উঠলাম.... .... ... .. . কে জানে, হয়তো বা এরই মাধ্যমে ওর জীবনেও আমার অনুপ্রবেশ ঘটল... আমি রীতিমত হাঁপাচ্ছিলাম। মেয়েটা আমাকে ঠিকমত নিশ্বাস ফেলারও সুযোগ দিল না... আমার গলা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না এরকম কিছুর জন্য। একদম হতভম্ব হয়ে গেলাম। এতটাই হতভম্ব যে, এই মুহূর্তে ওকেও জড়িয়ে ধরে যে সান্ত্বণা দিতে হবে সেও ভুলে গেলাম... .... ... .. . সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলাম। বুঝতে পারলাম, এই মেয়েটাই আমার বউ; সমাজের কাছে, আমার কাছে, ওর নিজেরও কাছে। আমার বউয়ের মুখটা এবার ধরে বুক থেকে তুলে চোখের পানিগুলো মুছে দিলাম। আর বললাম, "পাগলী কোথাকার ..এভাবে কেউ কাঁদে"... অনু বলল, "আমাকে ক্ষমা করে দেও।" বললাম, "ক্ষমা চাচ্ছো কেন বোকা মেয়ে। তুমি তো কোন ভুল কর নি।" অনু মাথা নিচু করে বলল,"অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। অনেক অবহেলা করেছি। প্লিজ মাফ করে দেও।" আমি বললাম,"শোনো অনু... তুমিও আমাকে কোন কষ্ট দেও নি আর আমিও কোন কষ্ট পাই নি। প্লিজ কান্না থামাও... আমার ভালো লাগছে না তোমাকে এভাবে দেখতে। সাহস করে এতদিন পর আমার বউটার দিকে তাকাচ্ছি। একটু তো হাসো..." ... .. . অনু এবার সত্যিই হেসে ফেলল, মুচকি হেসে বলল, "ভীতুর ডিম কোথাকার... I love you..." বলেই অনু লজ্জা পেয়ে আমার বুকে মুখ লুকালো। .... ... .. . ইশশ মেয়েটা এত নিষ্ঠুর কেন... ও স্যরি, আমার বউটা এত নিষ্ঠুর কেন... ওর I love you শুনে বুকে যে ধাক্কাটা লাগলো, বুকে মাথা দিয়ে ও সেই ধাক্কাটাকেই ত্বরান্বিত করে দিল... সত্যিই নিষ্ঠুর। কি আর করার ... আমি এবার দুহাতে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম.... .... ... .. . .... ... .. . ট্রেনটা চলছে... পুরো স্পীডে... দারুণ একটা ছন্দে... আমার জীবনটাও এখন ট্রেনটার মত দারুণ একটা ছন্দে চলছে... সাথে আমার বউ আছে যে...... ..... .... ... .. . ..... .... ... .. . ******************************

আমি লেখক নই... সেটা লিখা দেখেই বুঝেছেন হয়তো। আমি পাঠক। গল্প পড়তেই ভালো লাগে। এটা আমার দ্বিতীয় কোন গল্প...কাজেই অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে... সেগুলো মাফ করবেন... লিখাটি লিখতে যে মানুষটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, তার আজ জন্মদিন। স্পেশাল মানুষটির স্পেশাল দিনে, তাকেই লিখাটি উৎসর্গ করছি... "শুভ জন্মদিন ........"
 
Top