যখন তুমি এই চিঠিটা টা পড়ছ তার মানে হল এই মুহূর্তে তোমার আর আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক বিদ্যমান নেই ! এর আগের একটা চিঠিতে তোমাকে বলেছিলাম ঐ টা আমার শেষ চিঠি । তারপরও আজকে আরেকটা আবেগি চিঠি লিখছি তোমাকে । যদি বিরক্তবোধ করো তাহলে চিঠিটা টা আর না পড়ে এখনি ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারো । তবে ভয় পেয়ো না, তোমাকে কোন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার জন্য এই চিঠি লিখছি না। তোমার আর আমার সম্পর্ক শেষ বিধায় তোমাকে আমার সব অনুভূতির কথা প্রকাশ করে দিব আজকে । এই চিঠির পর আমি মেঘ তোমার সাথে আর কোনদিন যোগাযোগ করব না কথা দিলাম । তোমার কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে চলে গেলাম তোমার জীবন থেকে । মহান আল্লাহ তোমাকে আমার কাছ থেকে বাচিয়েছেন, তাই বেঁচে থাকো, ভালো থাকো, সুখে থাকো।
প্রথমেই তোমাকে ধন্যবাদ জানাই ভদ্রতা দেখিয়ে তোমার জন্মদিনে আমাকে আর আমার বোন কে সন্ধ্যা বেলায় নিমন্ত্রন জানানোর জন্য । কিন্তু তোমার ভদ্রতায় মুগ্ধ হয়েই নিমন্ত্রন রক্ষা করতে পারলাম না। আসলে তোমার কাছ থেকে ভদ্রতা নয়, অধিকারের অভিমানী কণ্ঠ আশা করেছিলাম। তোমার জন্মদিন টা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমি তোমার জীবনে আসার পর তোমার এমন একটা বিশেষ দিনে আমি বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলাম । তোমার খুব পছন্দের একটা উপহার কিনে সেটার সাথে হাতে লিখা চিঠি সবুজ খামে ভরে বেলি ফুলের সন্নিবেশে প্যাকিং করে রেখেছিলাম । আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তুমি আজ আমার সাথে দেখা করবেই । আমরা যতই এঁকে অপরের সাথে ঝগড়া করে, রাগ করে থাকি না কেন আমাদের এমন বিশেষ আনন্দের দিন গুলোতে এঁকে অপরের সাথে আনন্দ টুকু ভাগ করে নিবো, এমটাই ভেবেছিলাম আমি । আমি মনে করেছিলাম, আমার সকল আনন্দ যেমন তুমি ছাড়া পরিপূর্ণতা পায় না তেমনি হয়তো তোমার আনন্দ গুলোও আমি ছাড়া অপূর্ণ ! জানো, রাত ১২ টায়ও তোমাকে অভিনন্দন জানাই নি । তুমি আমাকে আশা করো কিনা সেটা দেখতে চেয়েছিলাম । তুমি আশা করেছিলে বলেই এত অভিমান ছিল তোমার কণ্ঠে সেদিন । ভালোবাসা তো এমনি নিরব আশার বন্ধনে আবদ্ধ হয়,তাই না ?? সকাল থেকে মেসেজ দিয়ে সারাদিন অপেক্ষা করেছি, তুমি নিশ্চয়ই ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে "কোথায় তুমি ?" । আর আমিও প্রশ্তুত ছিলাম তোমাকে জবাব দেয়ার জন্য ! কিন্তু সারাদিন শেষে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও আমার অপেক্ষা শেষ হয় নি , এখন জানি আর কখনো শেষ হবে না । ভালোই করেছ, তোমার দুঃখে তোমার পাশে না থাকতে পারলে তোমার আনন্দে শরিক হওয়ার অধিকার আমার নেই । এই দিকটা আমি কখনো ভাবি নি ।
তোমার কি মনে আছে, তুমি আমাকে প্রথম দিনে একটা মেসেজ করেছিলে ?? “জীবনটা বড় অদ্ভুত মেঘ,খুব ইচ্ছে করছে তোমার দুঃখ গুলো ভাগ করে নিই। সারা জীবন এই যন্ত্রণার পাহাড় তাকে বুকে আগলে রাখি । মানুষ বড়ই স্বার্থপর ।“ ---তুমি ঠিক বলেছিলে মানুষ বড় স্বার্থপর । আমার যন্ত্রণা নয় বরং এখন তোমার কাছে আমাকেই একটা যন্ত্রণা মনেহয় যাকে তুমি তোমার জীবন থেকে বিতাড়িত করতে চাও। তোমার আবেগি মনের কারনেই আমি তোমাকে পছন্দ করেছিলাম । আবেগি মনের মানুষেরা আমার মতো সব কিছু আবেগ দিয়ে চিন্তা করে । তাদের আবেগ তাদের কে যে কোন খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখে, তারা ভালোবাসার অনুভূতি টা বুঝতে পারে । তবে আমি জানি না তুমি আমাকে কেন পছন্দ করেছিলে । তুমি আমাকে বলেছিলে, তুমি আমাকে ভালোবাসো । যখন তোমাকে ভালবেসেছি তখন তোমার দোষ- গুন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, তুমিও আমার দোষ-গুন সম্পর্কে কিছুই জানতে না । তারপরও তোমাকে ভালবেছিলাম সব গুনগুলো কে ধারণ করে আর দোষ গুলো শুধরে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেবো বলে। আমার ধারনা ছিল, তুমিও এমনটাই হয়তো ভেবেছিলে। জানো, তুমি আমাকে যখন “আমার বউ” বলে ডাকতে, আমার নিজেকে তোমার সত্যিকারের বউ মনে হতো । আমি মনে মনে তোমার লক্ষ্মী বউ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজেকে তোমার অন্তর-আত্মার অর্ধেক পার্ট মনে করা শুরু করেছিলাম। সেইজন্য-ই নিজেকে তোমার বউ মনে করেই পরম নির্ভরতায় তোমার হাত ধরে ঘর থেকে অজানার উদ্দেশে বের হয়েছিলাম । সেদিন একটুও আশঙ্কা বা ভয় মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দেয় নি অথবা নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি নি। কারন তুমি-ই তো আমার ভবিষ্যৎ ছিলে, আমার ভরসা ছিলে । তোমার আর আমার সম্পর্ক কখনো শেষ হতেই পারে না । একটা ভরসা ছিল যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা এক সাথেই থাকবো । সেদিন মাওয়ায় সারা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি । তোমার গায়ে হাত দিয়ে রেখেছিলাম কেন জানো ? সারা জীবনের জন্য যে মানুষটার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম তার স্পর্শ যেন পাই সেজন্য । সেদিন তোমার হৃদয়ের স্পন্দন গুলো কে আমার নিজের সম্পদ মনে হয়েছিলো । আমি সবসময় তোমাকে আমার নিজের সম্পদ মনে করেছি । তোমার নিজের উপর তোমার চেয়েও আমার অধিকার বেশী বলেই ধরে নিয়েছি । আচ্ছা বলতো, যতই ঝগড়া হোক আর চিৎকার চেঁচামেচি হোক, কোন জামাই কি তার ভালোবাসার বউ কে অথবা কোন বউ কি তার ভালোবাসার জামাই কে ছেড়ে দিতে পারে ??? পারে কি সব সম্পর্ক শেষ করে দিতে ?? যদি দুইজনের ভালোবাসা সত্যি আর আত্মার ভালোবাসা হয় তবে সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ছাড়া বাঁচবে কেমন করে ?? ভালোবাসার মানুষটি যেমন- ই হোক তাকে ছাড়া জীবন কাটানো যায় না, তাই হয়তো এই “সম্পর্ক শেষ” করে দেয়ার ব্যাপার টা আমি তাই কখনোই সিরিয়াসলি নিই নি । আমি অনেকবার তোমার উপর বিরক্ত হয়ে সম্পর্ক রাখবো না-বলেছি । কিন্তু ঠিকি আবার যখনি তুমি কাছে টেনে নিয়েছ, তোমার কাছে চলে গেছি , আগে যখন তোমাকেও কাছে টেনে নিয়েছিলাম, তখন তুমিও চলে এসেছিলে । কিন্তু গত দুইবার তুমি সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলে।কিভাবে থাকতে পেরেছিলে আমাকে ছাড়া ??? তোমার কি কষ্ট হয় নি ?? কি করে আমি-হিন কাটিয়েছিলে সময় গুলো ??? অনেকদিন ভেবেছি এই কথাগুলো জানবো তোমার কাছ থেকে কিন্তু কেন যেন আর জানা হয়ে উঠে নি । আর কখনোই জানা হবে না।
তুমি ইদানীং আমার উপর খুব বিরক্ত এবং আমাকে সহ্য করতে পারো না । এবং আমাকে মিথ্যেবাদী কেন মনে কর আমি জানি না। আমি কোন পারফেক্ট মানুষ না । আমারও গুন-দোষ আছে । আমার সব চেয়ে বড় দোষ হল আমি রেগে গেলে খুব রেগে যাই এবং খুব চিৎকার করি আর আমি জেদি একটা মেয়ে । তুমি আমার এই দোষ টুকু কে মেনে নিতে পারো নি ??? শুনেছিলাম এঁকে অপরের দোষ গুলো কে মেনে নিয়ে এঁকে অপরের গুন গুলোকে আরও পরিস্ফুটিত করে নাকি ভালোবাসা কে চিরন্তন রুপ দান করে । হয়তো ভুল শুনেছিলাম । আর এই কারনেই তুমি আমার উপর এতই বিরক্ত যে সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছ এবং তা বহাল রেখেছ । আমি তোমার জীবনের কাগজের বউ বলেই তুমি যখন-তখন সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারছ । তোমার সত্যিকারের জীবনে তোমার বউ যদি এমন হয়,তাকেও কি তুমি এই কারনে ডিভোর্স দিতে পারতে ????? তুমি যখন রেগে যাও তখন শুধু বাজে ব্যাবহার কর না বরং সেই সাথে খুব বাজে গালিগালাজও করো , যেখানে-সেখানে,স্থান-কাল-পাত্র ভেদে চিন্তা না করে ঝাড়ি দিয়ে দাও, বিনা কারনে মিথ্যে কথা বলে ফেল- তোমার এইসব দোষের কারনে কি তোমার সত্যিকারের বউ তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিবে ?????? আমি জানি না তোমার সত্তিকারের বিবাহিত জীবন কেমন হবে ?? আবার দেখো, তুমি আমাকে মিথ্যেবাদী বল,আমার কোন কথা তোমার বিশ্বাস হয় না।এর কারন কি ??? আমি জানি না । জানি,এই কথাগুলোর কোন গুরুত্ব আজ আর নেই, তারপরও বলি, যেদিন তোমার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম সেই দিন থেকেই আমি নিজেকে তোমার জন্যই গড়েছিলাম । শুধুই তোমার জন্য ।তুমি আমাকে যখনি কোন কারনে বলেছ “মেঘ,এই ব্যাপারটা পছন্দ হল না” তখন থেকে ঐ ব্যাপারটা আমার কেন যেন আর করতে ইচ্ছে করত না, কারন তুমি সেটা পছন্দ করো না । আমি বন্ধুদের সাথে ঘুরাফেরা করা, ফোনে যোগাযোগ করা,দেখা করা প্রায় বন্ধ-ই করে দিয়েছিলাম, কারন তুমি পছন্দ করতে না,তাই আমারও ভালো লাগত না । তোমার সাথে ছুটির দিনগুলোর সময় কাটাতে আমার ভালো লাগত । আমি মনেমনে তোমাকে নিয়ে আমাদের ঘর বেঁধে ফেলেছিলাম তো তাই ঐ ঘর সাজানোতে সব সময় ব্যাস্ত থাকতাম । তোমাকে নিয়ে স্বপ্নের মুহূর্ত সাজাতাম । কতদিন কত ছোট ছোট স্বপ্ন সাজিয়েছি !! ধরো যখন তুমি রেগে গিয়ে কপাল কুঁচকে ফেল আর কোন কথা শুনতেই চাও না, তখন আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলে তুমি আরও রেগে গিয়ে দুই/তিন বার হাত ঝেরে ফেলে দেয়ার পরও যখন দেখবে আমি আবারো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তখন তোমার রাগ এমনিতেই পড়ে যেতে থাকবে আর তুমি আস্তে করে আমার কোলে মাথাটা রেখে দিবেনা বল ??? আবার ধরো, ছুটির দিনের সকাল বেলায় আমি যখন রান্না ঘরে নাস্তা তৈরি তে ব্যাস্ত তখন তুমি চুপিসারে পিছন থেকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে আমার ঘাড়ে তোমার ঠোটের স্পর্শ করলে আমি চমকে যাবনা, বল ??? আর প্রতিদিন সকাল বেলায় তোমাকে যখন আমি ঘুম থেকে উঠাতে যাব তখন তুমি আধো ঘুমের মধ্যেই আমাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে নিশ্চয়ই বলবে “আর পাঁচ মিনিট ঘুমাতেও দাও সোনা”। এমন আরও অনেক অনেক স্বপ্ন নিয়ে তৈরি আমাদের ঘরখানি। আর সেই কারনেই হয়তো তোমার কাছে তাই আমার আশা-ভরসা সব কিছুই সবচেয়ে বেশী ছিল । এই কারনেই তোমাকে অন্য কোন মেয়ের কথা বলতে শুনলে আমার প্রচণ্ড কষ্ট লাগতো, আমার মনে হতো আমার জামাই বাবুটা অন্য কারো কথা কেন বলবে ?? সে শুধুই আমার কথা ভাববে আর আমার কথাই বলবে, আমার মাঝেই থাকবে। আর আমি সেই কষ্ট থেকেই তোমার সাথে চিৎকার- চেঁচামেচি করতাম যা তোমার কাছে ঝগড়া বলে মনেহল, আমার “খেই-খেই স্বভাব” মনেহল তোমার কাছে । তোমার অন্যান্য দোষ গুলো আমাকে কষ্ট দিত, কিন্তু তা নিয়ে তো ঝগড়া করি নি তোমার সাথে । যখন-তখন বিনা কারনে মিথ্যে বলে ফেলেছ, আমাকে দেয়া কথা মুহূর্তে ভেঙ্গে ফেলেছ- তারপরও তোমাকে ছেড়ে দিতে পারি নি, তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে পারি নি । আমি অনেক জেদি মেয়ে কিন্তু কখনো তোমার জেদের কাছে নিজের জেদ প্রকাশ করি নি । আমার মনে হতো, আমাদের ঘরে তুমি জেদ দেখালে আমি সেটা মেনে নিবই,এতেই তো ঘরের মধ্যে সুখের হওয়া বইবে আর ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আর ভেবেছিলাম,তুমিও হয়তো আমার জেদ মেনে নিবে এই একি কথা চিন্তা করে । এখন বুঝলাম, সব-ই আমার মনের ভ্রান্ত ধারনা ছিল । আরও অনেক অনুভূতি আছে যা লিখতে ইচ্ছে করছে না ।
আজ ঝড়ে আমার স্বপ্নের ঘর ভেঙ্গে গেছে, সেই সাথে সব স্বপ্ন-আশা-র মৃত্যু হয়েছে । এই ভগ্ন মৃত্যুতে সব চেয়ে বেশী ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে আমার মেয়েটা । খুব অভিমান করে তার মাকে বলছে সে আর এই পৃথিবীর আলো দেখবে না। যাক, ভুলে যাও এইসব সস্তা আবেগি অনুভূতির কথা আর এই মুহূর্ত থেকে তোমার প্রতি আমার সব অনুভূতি আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম, হয়তো এমন সস্তা অনুভূতি তোমাকে স্পর্শ করতে পারে নি, তাই ছুঁড়ে ফেলে দিও কোন ময়লার স্থুপে । আর একটা কথা বলি তোমাকে “হৃদয় ভাঙ্গার খেলায় তুমি জয়ী হয়েছ আর আমি হেরে গেছি” ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন