যখন থেকে সাগর বুঝতে পারে ভালবাসা কি, ঠিক তখন থেকে সাগরের মনে ভালবাসার রঙ লেগে যায়। সে রঙ আগের চেয়ে এখন আর বেশি বর্তমান, সামনের দিনেও থাকবে এটা যে নিশ্চিত তা সাগর ভাল করেই জানে। কিন্তু বেপারটা কেমন যেন সাগরের মানুসিকতার সাথে মিলে না। যার মাঝে এত রোমান্টিকতার ছোঁয়া যার মনে ভালবাসার রঙ লাগানো তার কপালে কিনা এখনও ভালবাসার আসল অর্থ অনুভব করার সুযোগ মিলেনি!!!
সাগরের মনে এসব খেলা করে ঠিকই কিন্তু সাগর জানে না কে দিবে সেই ভালবাসার ছোঁয়া। পাঠক আপনি কি বলতে পারবেন কে আপনাকে ভালবাসবে ঠিক আপনি যেমনটা চাইবেন? উত্তর হবে, “Not Possible”!
সাগর এসবকে বুঝেও চুপ থাকে। একবার ভুল পথে পা বাড়িয়ে সেই ভুলের মাসুল দিবার পর থেকে সাগর অনেকটাই আশাহত। আসলে, সাগর যেমনটা চায় ঠিক তেমনটা এ সমাজে মেলা দায়!!! আপনিও ভেবে দেখুন না আসলেই কতটা ঠিক এই কথাটা। অর্থ, সৌন্দর্য আর প্রচুর্যের বিনিময়ে শারীরিক ভালবাসা এই ভয়াল যুগে তাই সাগর আর সাহস পায়না।
সাগর সব সময় নিজের সময়কে কাজের পিছে ব্য্য করত। বন্ধুবান্ধব থাকলেও দেখা সাক্ষাৎ হতো অনেক কম। কারণ, সাগরের বন্ধুরাও সাগরেরই মত। তাই ওদের মাঝে সমস্যা না। মাঝে সাঝে দেখা হলে মন খুলে গল্প আড্ডায় সময় পার করে আবার যার যার কাজে চলে যেত।
Dawn
ও হ্যাঁ, যাকে নিয়ে লিখছি তার ব্যাপারে একটু জানিয়ে রাখাটাওতো জরুরী…
সাগর অতান্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে। সাধারণ গ্রেডের সাবজেক্ট নিয়ে টুকটাক পড়াশুনা করে সরকারি ভার্সিটিতে নিজ শহরেই। পাশাপাশি টুকটাক কাজবাজ করে নেটের মাধ্যমে। কাজের মাঝে অবসরে সাগরের মন কাঁদে আক্ষেপ থেকে প্রতিনিয়তই কেন তাকে কেউ নিজের করে চায় না। কেন তাঁকে নিজের থেকে কেই ভালবাসার, ভাললাগার কথা বলে নাহ!!! একটা সময় সাগরের মন থেকে এসব চিন্তা পুরোদমে বেড়িয়ে যায়। তখন সাগর শুধু নিজেকে নিয়ে থাকতো। অনেকটা রবোটিক ভাবে…
সাগর পড়াশুনা, কাজবাজ এর পাশাপাশি টুকটাক লিখতেও জানতো। সেই লিখা পাঠক মহলে কতটা সমাদিত তা সাগরের জানার ইচ্চাও ছিল না কখনও। একটা সময় এই লিখার মাঝেই সাগর খুঁজে পায় তার সকল না বলা কথা প্রকাশের অধিকার। তাই সাগর কাজ ও পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে লিখে চলে মনে ক্ষুধা মিটাতে।
সাগর যেহেতু নেটের মাধ্যমে কাজ করত তার ইচ্ছা ছিল তার জ্ঞানকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ায়। সেই লক্ষে বলা চলে পুরো অপ্রস্তুত ভাবেই সাগর একটি ইবুক তৈরি করে ফেলে তার জানা মধ্যে থেকে যততুকু সম্ভব। বইটিকে প্রকাশ করার কিছুদিনের মধ্যেই সাগর দেশে বিদেশে থেকে কল পেতে শুরু করে তার এই বই এর জন্য। অথচ সাগর জানতই না এত দ্রুত কিভাবে এই বইটা পাঠক মহলে পছন্দনীয় হবে। এতে সাগর খানিকটা বিব্রত হয় আবার সফল হিসেবেও ভাবতে পারে। কারণ তার এই লিখা পড়ে অনেকেই তো উপকৃত হচ্ছে। :-)
সাগরের দিন কাটতে থাকে আগের মতই সাদামাটা। দৈনন্দিন কাজটাই বেশি করা হতো। পড়াশুনার বালাই নাই বললেই চলে। তেমনি একদিন সন্ধ্যা ৭.৪৫ মিনিট। সাগর তার পিসিতে কাজে ব্যস্ত……
সাগরের মোবাইল বাজলো। রিসিভ করেই সাগর বুঝল নারীর কণ্ঠ। স্বভাবতই সাগর কাজের সময় কারো সাথেই তেমন কথা বলে না, কারণ তাতে কাজের কনসেন্ট্রেশন নষ্ট হবেই হবে। তারপরও রিসিভ যখন করেছে তখন কথাতো বলতেই হবে। প্রথমত বিরক্তি নিয়েই কথা শুরু…
ওপার থেকে…
হ্যালো, আপনি কি সাগর বলছে?
জি আমি সাগর, আপনি কে?
আমি তন্বী বলছি…
ও আচ্ছা, বলেন… কি বলবেন…
আচ্ছা আমাকে কিছুক্ষন সময় দিবেন কিছু কথা বলবো…
দেখেন আমি কাজে ব্যস্ত, কি বলবেন বলুন প্লীজ…
আচ্ছা আমার মোবাইল এ এখনও টাকা নেই আমি আপনাকে আগামীকাল কল দিই?
ওকে, as u wish!
সাগর ফোন রেখে কাজে মন দিল… ঠিক ১০ মিনিট পর আবারো সেই নাম্বার থেকে কল! সাগর কল রিসিভ করল।
হ্যালো সাগর…
জি বলুন কি বলবেন…
আচ্ছা আমাকে কিছুক্ষন সময় দিবেন প্লীজ আমার কিছু কথা ছিল।
(সাগর একটু রাগ ফিল করল, কি জ্বালাতনে পড়ল বেচারা!)
ক্ষানিকক্ষন চিন্তা করে বলল, আচ্ছা বলুন…
অনেকক্ষণ ধরে পিসির সামনে বসে থাকার কারণে সাগরের পা ঝিমঝিম করছে তাই এই ফাঁকে একটু বারান্দায় দিয়ে হাটাও হবে… কথা বলাও হবে।
সাগর মন দিয়ে তন্বীর কথা শুনছে। তন্বীর ইচ্ছা অনেক বড় ফ্রীলান্সার হওয়ার, তবে সে এখনও কম্পিউটার চালাতেই পারেন!!!!!! মেয়েটা কথা শুনে সাগর কিছুটা হাসল মনে মনে। কম্পিউটার চালাতে যানে না অথচ স্বপ্ন বড় ফ্রীলান্সার!!! মেয়েটা কথা সাগর অনেক সিরিয়াসলিই নিল। কি কি করতে হবে সব ইন্সট্রাকশন বলে দিল সাগর। সাগরের মাঝে একটা ভাল গুন আছে সেটা হল সাগর কখনই কাউকে হেয় করে না। যেকারো কথা সাগর মনযোগ দিয়েই শুনে। কাজের কথা সব বুঝিয়ে বলার পর তন্বী এবার সাগরের ব্যক্তিগত কথা জানতে চাইলে সাগর সরাসরি ‘না’ বলে দেয়। কারণ সাগর চায় না অন্যকেউ তার লাইফ সম্পর্কে ইন্টার্ফেয়ার করুক। সেখানে তন্বী ছিল সাগরের কাছে নতুন মানুষ, কেন সে একজন অজানা মানুষকে তার বেপারে বলতে যাবে! সাগর ঘড়ি দেখে আর কথা বলে। এভাবে কথা বলতে বলতে প্রায় ৩৭ মিনিট অতিবাহিত হবার পর সে নিস্তার পেল।
সাগর কখনও তার সময়ের অপব্যবহার করে না ভুলেও। তাই সেই কল এর পর থেকে কিছুটা বিরক্তবোধ করছিলো। যাহোক… সাগর কাজে বসল আবারো। আবারো সেই নাম্বার থেকে মেসেজ। মেসেজ ওপেন করে পড়ার পর সাগর কিছুটা লজ্জিত হল। যার উপরে সে বিরক্ত বোধ করছিলো সে কিনা সাগরকে সরি বলছে এভাবে তার টাইম ওয়েস্ট করার জন্য।
সেদিনের কাজ করে রাতের খাবার খেয়ে সাগর ঘুমিয়ে পড়ল…
সাগরের স্বাভাবিক কাজ চলতে থাকল। কিন্তু দুদিন পর আবার সেই নাম্বার থেকে মেসেজ। সাগর মেসেজ তাঁকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারল না। কেন জানি মেসেজটা অন্য ধাঁচের!!! যে ধাঁচকে সাগর অনেক দূরে রাখে নিজের থেকে যেনো তার চলার পথে এসব বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।
এভাবে টুকটাক মেসেজ আসতে থাকে সেই নাম্বার থেকে। যেগুলো আন্সার দেয়ার প্রয়োজন সাগর সুধু সেগুলোরই আন্সার দিত। কারণ, অন্য মেসেজ গুলোর সারমর্ম সাগর ভাল করেই বুঝে গেছে। আর সে যেহেতু নিজেকে নিয়ে থাকতে চায় তাই নতুন করে একটা অধ্যায় শুরু করা অনেকটাই কঠিন ছিল সাগরের জন্য।
তন্বী একের পর এক মেসেজ দিয়েই যাচ্ছিল সাগরকে। সাগর রিপ্লে করছিলো তবে, নিজের আত্মকেন্দ্রিকটা থেকে ইন্ডারেক্টলি ইগ্নরড। আসলে সাগর এখন এসবকে ভয় পায়। তাই সাগর যতটাই রোমান্টিক হোক না কেন। আপাতত এসব থেকে দূরে থাকাটাই সমীচীন হিসেবে নিয়ে তন্বীকে বুঝাতে থাকে।
এদিকে তন্বীর মেসেজ এর পর মেসেজে সাগরের ইনবক্স ওভারলোড!!! সাগর কিছুটা হলেও নস্টালজিক হয়ে পড়ে তন্বীর অস্বাভাবিক ইমশন আর শিশুসুলভ আচরণে। সাগর কিন্তু মনে মনে সবসময় চাইত কেউ তাঁকে এতটাই ভালবাসুক, যেটার কারণে সাগরের সামনের চলার পথ আর মসৃণ হবে। সাগর চেয়েছিল এমন কাউকে যে তার শুধু ভালবাসা না, তার ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গি হবে। কিন্তু আজকালের যুগে এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া ভার তা সাগর জানে বিধায় সাগর কিছুতেই রাজি না এই সম্পর্কে। এসবের কারণে সে তার রোমান্টিকতাকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে সব সময়। সাগর ভাবতে থাকে আচ্ছা তন্বী কি চায় আসলেই!!! নাকি আবারো সাগর কোন ভুল পথের হাত ছানি পাচ্ছে। এসব চিন্তা সাগরকে কিছুটা কাজের মাঝে ব্যাঘাত ঘটায়। তবে সাগর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে কাজে মন দেয় সব সময়।
কিছুদিনের মধ্যে একদিন বিকেলে তন্বী সাগরকে ইন্ডাইরেক্টলি প্রপোজ করে বসে। সেটা সাগর বুঝতে পারলেও আভোয়েট করে চলে। কিন্তু শেষমেশ সাগর তন্বীর আবেগ, ভালবাসার টানের কাছে হেরে যায়। তারপরেও সেটা তন্বীকে বুঝতে দেয় না। কারণ সাগরের তখনও ট্রাস্ট করতে পারছিলনা কেউ তাঁকে এভাবে ভালবাসতে পারে, যেভাবে সে কল্পনা করে, যেভাবে সে চাইতো সবসময়, ঠিক তেমন ভাবেই! সাগর ভাবতে থাকে “তন্বী তুমি কি সত্যি আমাকে চাইছো, নাকি অন্যসব মেয়ের মত …!!”
এভাবে চলতে থাকে আর কিছুদিন। সাগরের কাজ চলছে ভালই। সাগরের মনে তন্বী লালন হতে থাকে। সাগর তার জীবনকে সব সময় ফ্রিডম রাখতে চায়, এটলিস্ট তার ক্যারিয়ারের লক্ষ অর্জন না করা পর্যন্ত। সাগর তার ক্যারিয়ারের উচ্চাসনে বসবে এটা তার লক্ষ। তবে, অনেক আগে থেকেই সাগর চাইতো, কেউ একজন তাঁকে সঙ্গ দিক। তাঁকে অনুপ্রেরণা দিক যার উপরে ভিত্তি করে সাগরের কাজের স্পৃহা আর বাড়বে……
তবে কি সাগর আবারো…………
হ্যাঁ পাঠক! সাগর তন্বীর চঞ্চল, অপকটতা শিশুসুলভ আচরণ এবং রোমাঞ্চের কাছে হেরে গেছে। তন্বীর ভালবাসায় জয় হয়েছে। তারপরেও সাগরের রাগ পাচ্ছিল তন্বীকে এসব বলতে। তাই সাগর চাইছিল তন্বীর মুখ থেকে ভালবাসার সাতকাহন শুনতে। তন্বী নিজেও হয়তো সাহস পাচ্ছিলনা, যদি সাগর এটা সরাসরি শুনার পরেই “না” বলে দেয়। কিন্তু, সাগর তো বলেই দিয়েছে সত্যি সরাসরি বলার সাহস না থাকলে সাগরের কিছু করার নাই। এটা তন্বী নিশ্চয় বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে সাগরও তন্বীকে ভালবাসতে শুরু করেছে। একদিকে সাগরও চুপ আছে, কারণ সে আগে তন্বীকে প্রপোজ করবে না এটা বেপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! ;)
একদিন বিকেলে…
সাগর আর তন্বীর মধ্যে কথা হচ্ছিলো। সাগর মনে মনে চাচ্ছিল যেন আজ তন্বী তাঁকে প্রপোজ করে। তন্বী ইনডাইরেক্টলি আজও বলেছে ২/৩ বার। কিন্তু সাগর নাছোড়বান্দা, সে সরাসরিই ভালোবাসি শুনবেই…
…সাগর?
জী বলেন, আসলে আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা যদি ক্লিয়ার বলতে না পারেন তাহলেতো আপনার সাহসি নাই। প্লীজ তন্বী, যা বলবেন সরাসরি বলুন। আমি সরাসরি পছন্দ করি। সেটা যতই কটু হোক না কেন…
আমি পারবো না বলতে আর ক্লিয়ার করে…
তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না তন্বী।
তুমি কি বুঝ না আমি কি বলতে চাই? আচ্ছা বুঝেও কেন অবুঝের মত আচরণ করছো?
তন্বী… আমি সরি, ওকে?
তন্বীর দীর্ঘশ্বাস… একটু সাহস করে…
সাগর, আমি যদি তোমাকে ভালবেসে ফেলি তাহলে?
দেখেন তন্বী, “যদি” বলতে কিছু আমার লাইফে নাই। আমি অনেক বাস্তববাদি। আপনি সরাসরি বলুন প্লিজ (খানিক রাগের ইমু)।
তন্বী অনেক সিরিয়াস এবার!
সাগর, আমি তোমাকে ভালোবাসি! ( :D )
সাগর তন্বীর কথাপকথন…
সত্যি?
হ্যাঁ সাগর, যেদিন প্রথম তোমার সাথে কথা বলি সেদিন থেকে তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছি। তুমি কি আমাকে ভালবাসতে পারো?
এইদিকে মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে আসছিলো। তন্বী আমি নামাজে যাবো। পরে কথা বলি?
না, আমার কথা উত্তর না দিয়ে ফোন রাখবা না প্লিজ।
প্লিজ, আমি নামাজ পরে এসে কথা বলছি, জেদ করবেন না।
নাআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ!!! এখনি বলো !!!!
আচ্ছা, ওকে, ভালোবাসি! সত্যি বলছি আমি ভালোবাসি।
সাগর নামাজে গেল। মনে অজস্র ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে। সাগরের নামাজ শেষে এবার কল দিল তন্বীকে। তন্বী অনেক এক্সসাইটেড!
সাগর, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালবাসো নাকি মন রক্ষা করতে বললে?
দেখেন তন্বী, আমি যা বলি সেটা আমি অনেক ভাবার পর বলি। কেন মনে হচ্ছে আমি মন রক্ষার কথা বলছি?
এভাবে সাগর আর তন্বীর মধ্যে কথা চলার এক পর্যায়ে তন্বী বলল…
সাগর?
হ্যাঁ, বলেন…
তুমি কিন্তু এখনও আমাকে তুমি করে বল নাই! কেন সাগর?
সাগর একটু জিভে কামড় খেলো।
ওকে তুমি বলবো!
না এখন থেকে বল প্লিজ।
ওকে তন্বী বলো তোমার কি বলার আছে!
এবার তন্বীর কথা শুরু। এভাবে প্রায় অনেক কথা হল তাঁদের। দুজনই দুজনের চাওয়া পাওয়া গুলো শেয়ার করল দুজনের কাছে। কাকতালীয় ভাবে দুজনের ভাবধারা, চিন্তাচেতনা অজস্র্য মিল খুঁজে পেল দুজনই।
এভাবে একের পর এক দিন-রাত কাটতে থাকলো দুজনের। কথোপকথন হতো প্রতিদিনই। কিন্তু তারা দুজন দুজনের থেকে এত দূরে থাকতো যে চাইলেই ওদের দেখা করার চান্স নাই। দু’জনের অবস্থানগত দূরত্ব প্রায় ৬০০ কি.মি পথ। একদিন তন্বী জেদ ধরে বসলো সাগরকে দেখবে বলে। এ জেদ বাঁধন ভাঙ্গা! তন্বীকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিল না। সাগর অনেক্ষন চিন্তা করে ঠিক করল ওর ছবি তার পার্সনাল সাইটে দিয়ে লিঙ্কটা তন্বীকে দিবে দেখার জন্য। যেই ভাবা সেই কাজ! সেদিনই তন্বী সাগরকে দেখে নিল। এবার সাগর তন্বীকে তার ছবি দেখাতে বলল মেইল করে। কিন্তু তন্বী বেচারিতো নেট চালাতেই পারে না মেইল তো দূরের কথা! বাধ্য হয়ে সাগর অতৃপ্তি নিয়েই চুপ থাকলো যেদিন সুযোগ হবে সেদিনই তন্বীকে দেখবে সাগর!
এভাবে ৩/৪ দিন গেল। এবার তন্বীর জেদ চাপলো সরাসরি দেখা করার। কিন্তু চাইলেইতো এটা করা পসিবল না! কিন্তু তারপরেও তন্বী এই জেদ নিয়ে বসে পরলো ফাইনালি…
সাগর পড়লো বিপাকে, কিভাবে হুট করে এতটা পথ পাড়ি দিবে সে ভাবে পাচ্ছিলো না! ইন্সটান্ট এমন ডিসিশন নিয়াও অনেকটা নিজের সাথে যুদ্ধ করার মতই।
কিছুক্ষন থিঙ্ক করার পর সাগর ঠিক করলো, সে যাবে ৪/৫ দিনে মধ্যেই! এ খবর তন্বীকে জানানোর পর তন্বী আনন্দে আত্বহারা হয়ে পরার মতো অবস্থা!! এদিকে সাগরও অনেক এক্সসাইটেড তন্বীকে দু’পলক দেখার জন্য! সিলেটে গিয়ে যে ভাইয়ের মেসে থাকবে ওনার নাম মঞ্জু, সেই ভাইকেও জানিয়ে দিল সাগর। সেই ভাইয়ের সাপর্টের কারণে সাগরের আর তন্বীর আত দ্রুত দেখা হবার সুযোগ হয়। এর পরের দিন গুলো তাদের অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে। কারণ, দেখা হবার এক অনাবিল ছোঁয়া তাদের ইতিমধ্যে ঘিরে ফেলেছিল।
তন্বীকে কনফার্ম করার ১ দিন পর সাগর বাসের টিকেট কাটলো। গন্তব্যের দিন ঠিক হল রবিবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে। শুক্র, শনি এভাবে দিনগুলো যেন একেকটা হাজার বছরের সমান হয়ে দেখা দিচ্ছিল। যাবার আগের দিন রাতেই সাগর ব্যাগ গুছিয়ে রাখল। অবশেষে রবিবার এলো, সকাল গড়িয়ে দুপুর এভাবে সন্ধার আগ মুহুর্ত, সাগর বেড়িয়ে পড়ল বাস স্টান্ডের উদ্দেশে। সাথে ছোট ভাই গেল এগিয়ে দিবে বলে।
এদিকে যেদিন সাগর রওনা দিবে তারপরের দিন রাজধানী জুড়ে বিক্ষোব সমাবেশ হবে। তাই সাগর বাস স্টান্ডে যাবার সময় মনে মনে শান্তি পাচ্ছিল না, কেন জানি মনে হচ্ছিলো যাবার পথে বাঁধা পড়বে। বাস স্টান্ডে গিয়ে সাগরের মনের সন্দেহ ঠিক প্রমানিত হল। যে বাসের টিকেট কাটেছিল সে বাস ছাড়বে না সেদিন! ঐ সময় সাগরের মনের অবস্থা প্রথমত সাগর এর দ্বিতীয়ত আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ বুঝতে পারার কথা না! টিকেট কাউন্টার থেকে পরের দিনে যাবার সিট এবং টিকেট ঠিক করে নিল সাগর।
এরপর এক তীব্র হাহাকার নিয়ে সাগর বাসায় ফিরে কাপড় ছাড়াল। এরপর তন্বীকে কল দিতে ভয় পাচ্ছিলো। তারপরেও দিল। সাগর বুঝতে পারছিল না যাবার কথাটা ঠিক কিভাবে বলবে তন্বীকে। এরপরেও বলতে হল। কথাটা শুনার পর তন্বীর কান্নার ঝড় শুরু হয়! সাগর নিজেও ঐ মুহূর্তে নস্টালজিক হয়ে পরে। যেতে না পারার ব্যাথা যে সাগরকেও কাঁদাচ্ছিল। অনেক বুঝানোর পর তন্বীর কান্না থামে।
এরপর পরের দিন যাবার প্রত্যাশায় দুজনেই রাত পার করে দুই পাড়ে। আবারও সোমবার সকাল, দুপুর, বিকেল এভাবে সন্ধার আগে মুহুর্ত সাগর বাস স্টান্ডের দিয়েই কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করলো আবারও কোন প্রবলেম আছে কিনা, এবার মনে শান্তি পেল সাগর, অতঃপর আধাঁ ঘন্টার মধ্যে সাগরের বাস ছুটে চলতে শুরু করলো সন্ধার দিগন্ত জোড়া গোধূলিকে পাড়ি দিয়ে। 
সন্ধ্যা গড়িয়ে, রাত, মধ্যরাত, ভোর অতঃপর সকাল…
সকাল ৮.১৫ মিনিটে সাগরের বাস থামলো সিলেট শহরে। সাথে সাথে তন্বীকে ফোন করে জানিয়ে দিল শহরে তাঁর পদধূলি পরার কথা। বাস স্ট্যান্ডের সামান্য কিছু পাশেই তন্বীর বাসা এটা সাগর জেনে নিয়েছিল আগেই। তন্বী সাগর বাস থেকে নামার পরেই একপলক দেখা করতে চাইছিল কিন্তু পরে অবশ্য সাগর বলার পরে এই জেদটি দমিয়ে রাখে।
ভোর থেকে আকাশের অবস্থা ভাল ছিল না তাই সাগরের সিলেটে নামা মাত্র মুষলধারে বৃষ্টি নামলো! সাগর বাস থেকে নেমেই মঞ্জু ভাইকে জানিয়ে দিল তাঁর সিলেটে আসার কথা। এর ফাঁকে সাগর হাল্কা নাস্তা সেরে নিল। প্রায় ৩০ মিনিট পর মঞ্জু ভাই অটো নিয়ে সাগরের সামনে উপস্থিত হল। এবার মঞ্জু ভাইয়ের মেসে যাবার পালা। অঝোর ধারার এই বৃষ্টির সাথে সাথে সাগরের অটো ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে মেসে পৌছালো। সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাস্তা খেয়ে নিল সাগর। এবার খানিক রেস্ট নেবার পালা। কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার পরেও সাগরের শরীরে এক ফোটাও ক্লান্তিবোধ নেই। কারণ, কিছুক্ষন বাদেই তন্বীর সাথে তাঁর দেখা হবে। এত পথ পাড়ি দেবার পর এই দেখা হবার তীব্র কামনা সব ক্লান্তিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু দেখা করতে চাইলেই কি এর হয়। সিলেটে নেমেই যে বৃষ্টির ধাঁরা নেমেছে সে ধারার সকাল ১২টা অবধি কমেনি তেমন। সাগর শুধু বৃষ্টি কমার জন্য মিনতি করেছিল। খানিকক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি উধাও হয়ে গেল! তখন বেলা ১.৩০ মিনিট। তন্বী সাগরকে কল দিল রেডি হবার জন্য। সাগর তন্বীর কল পেয়ে কিন্তু নস্টালজিক ফিল করতে লাগলো। সাগর অনেকটা নার্ভাস!!!! এরপর তন্বীর সাথে দেখা করতে রওনা হল সাগর…

 
Top