রাত ১২টা
টুং টুং শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। মাত্র চোখটা লেগেছিল। ভীষণ রাগ হচ্ছে। এসএমএস এসেছে রুনুর, ‘দোস্ত, আই অ্যাম ইন লাভ।’
সকাল সাতটা
ফেসবুক হয়ে গেছে তিন বেলার খাবারের মতো। সকাল, দুপুর, রাত অনলাইন হতেই হবে। যথারীতি অনলাইন হলাম। আরে! আমার কলিগ রুনু লিখেছে, ‘ইন এ রিলেশনশিপ উইথ রায়হান।’ মনে পড়ল রাতের এসএমএসের কথা। এই রায়হানটা আবার কে? দেখি, অফিসে যাই, রুনু আসুক।
সকাল নয়টা
মাত্র অফিসে ঢুকেছি, রুনু যেন উড়ে এল, ‘এই আমার এসএমএস পেয়েছিস? রায়হানকে দেখেছিস? সুন্দর না? আজ আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করব, তুই কিন্তু কোনো বাহানা করবি না।’ আমার ডেস্ক পর্যন্ত চলে এসেছে রুনু। আজ ওকে লাগছে অস্থির প্রজাপতির মতো, উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।
দুপুর ১২টা
কাজের খুব চাপ গেছে সারাটা সকাল। ফেসবুকে ঢুঁ মারার কোনো সুযোগ হয়নি। ঢুকেই রায়হানের ছবি দেখলাম। রুনু শেয়ার করেছে। বাহ্! রায়হান তো দেখতে খুব সুদর্শন। রুনুর পাশে খুব মানাবে।
দুপুর একটা
অতিথি শুধু আমি, রুনু আর রায়হান পাশাপাশি বসেছে। আমি ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো তাদের খুনসুটি উপভোগ করছি। ‘শোন, ও কি বলে জানিস, হানিমুন করতে নাকি প্যারিস যাবে। দেখ, এত টাকা খরচ করার কোনো দরকার আছে?’ ‘আরে! আমার বউয়ের জন্যই তো আমার সব। আপনি বলেন, আমি কি ভুল বললাম।’ রায়হানের কৃত্রিম অভিযোগ। ‘কিন্তু টুনির জন্য কিছু জমাতে হবে না?’ ‘টুনি!’ রুনুর কথার রেশ ধরে আমার বিস্ময়। ‘ও, তোকে তো বলা হয়নি, রায়হান ঠিক করেছে আমাদের প্রথম বেবির নাম টুনি রাখবে।’ রুনুর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। লাঞ্চ শেষ, আমাকে এবার বিদায় নিতে হবে। দুজনের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে আমি চললাম অফিসের দিকে। রায়হান আর রুনু প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেল বিকেলটা উপভোগ করতে।
বিকেল চারটা
উফ্! এত কাজ! দুপুরে যে কি খেয়েছি, মনে করতে পারছি না। রুনু কি মজাই না করছে। তাদের ওয়ালে কমেন্ট পড়েই যাচ্ছে। শুভেচ্ছা, কেউ কেউ আবার বিয়ের দাওয়াত চাইছে। একটু হিংসা হচ্ছে। কীভাবে এত ভালো একটা বর পেয়ে গেল! হ্যাঁ! রায়হানকে তো ও বর বলেই ডাকে। আমার তো ফেসবুক আছে, কিন্তু রায়হানের মতো কোনো ফ্রেন্ড নেই।
রাত আটটা
মাত্র বাসায় পৌঁছালাম। বিধ্বস্ত। এর মধ্যে রুনুকে অনেকবার ফোন দিয়েছি, ধরেনি। এখন কি আর ওর আমার ফোন দেখার সময় আছে? প্রচণ্ড খিধে পেয়েছে। খাবার দিতে বলে ফ্রেশ হতে গেলাম।
রাত ১১টা ৩০ মিনিট
রুনু ফোন দিয়েছে। ‘কী ব্যাপার! সারাটা দিন লাপাত্তা, আজিই হানিমুন সেরে ফেললি নাকি? আমি তো...’
মুখের কথা শেষ করতে পারলাম না, রুনু কেড়ে নিয়ে বলল, ‘খবরদার, ওই ছোটলোকটার কথা বলবি না। ওর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দুই দিনে আমাকে পাবনা গিয়ে ভর্তি হতে হবে, ছিঃ! জানিস, আমার আগেও কত মেয়ের সাথে..., থ্যাংকস গড, আমি আগেই জানতে পেরেছি, এসব ছেলে...’
রুনুর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল হয়ে গেছে। দেয়ালঘড়িতে ১২টার ঘণ্টা বাজছে।
 
Top