ফেসবুক। এ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অন্যতম। ২০০৪ সালে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা করা এই সাইট এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ অন করেই ব্রাউজার ওপেন করে সবাই এখন প্রথম যে সাইটে লগ ইন করে সেটা হচ্ছে ফেসবুক। আর এখন যে দামের মুঠোফোনই হোক বিক্রেতারা তাদের বিভিন্ন প্রচারণাতে এখন সবার আগে জোর দেন এই বলে “ফেসবুক ব্যবহার করা যায়।” ফেসবুক ব্যবহার প্রায় সবার কাছেই প্রায় নেশার মতোই হয়ে যাচ্ছে। কেউ হয়তো ভার্চুয়াল এই জগতে এসে বেশি সময় ব্যয় করেন, কেউ কম।ফেসবুকের প্রতি একজন মানুষ কতটা ও কেন আসক্ত হয় তা নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের এক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। এতে দেখা গিয়েছে, একজন মানুষ ফেইসবুকে ঠিক কতটা আসক্ত হবে তা মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একিউম্বেনস নামের এক বিশেষ অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মস্তিষ্কের এই অংশটি মানুষের প্রশংসা, সুখ, হাসি, আসক্তি, ভয় আগ্রাসী মনোভাব প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। Freie Universitat Berlin এর গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত এক গবেষণাতে এসব তথ্য উঠে আসে।
এই প্রথম বারের মত গবেষকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের উপর মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে সাড়া দেয় সেটি নিয়ে গবেষণা চালান। এর জন্য তারা Functional MRI পদ্ধতির সাহায্য নেন। তারা এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একিউম্বেন্স ফেইসবুক ব্যবহারকালে কিভাবে সাড়া দেয় সেটি বুঝতে চেষ্টা করেন।
facebook.ফেসবুক
এই গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক Dar Meshi বলেন, “মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মনে মনে খ্যাতিলাভের
আকাঙ্ক্ষা করে। আর বর্তমান সময়ে অনেকেই একটা উপায়ে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হন। সেটি হলো ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে। ফেসবুকে লাইক পাওয়াকে বেশিরভাগ মানুষ খ্যাতিলাভ হিসাবেই ধরে নেন। গবেষকরা দেখেছেন, ফেসবুকে যে ‘লাইক’ বাটন আছে সেটির এক বড় ভূমিকা আছে ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের মানসিকতার উপর। একটি পোস্ট দিয়ে যত বেশি ‘লাইক’ পাওয়া যায়, পোস্টদাতা মনে মনে কিছুটা হলেও নিজের খ্যাতির ব্যপারে সচেতন হন। কিংবা ‘লাইক’ পেয়ে আনন্দিত হন।

এই গবেষণাকাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৩১ জন্য ব্যক্তি অংশ নেন। প্রথমে তাদের সবার ফেসবুক বন্ধুর সংখ্যা কত, দিনের কতটা সময় তারা ফেসবুকে কাটান ও তাদের সধারণ চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে ধারণা নেয়া হয়। এরপর ৩১ জন ব্যক্তির সবার ভিডিও সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এরপর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের মস্তিষ্ক কিভাবে সাড়া দেয় সেটি Functional MRI এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে বলা হয় , “আপনার ভিডিও সাক্ষাৎকারটি অনেকেরই ভালো লেগেছে।” আবার কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে বলা হয়, ” অমুকের সাক্ষাৎকার সবাই অনেক পছন্দ করেছে।” প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেল, যখন একজন স্বেচ্ছাসেবী নিজের ব্যপারে ভালো কিছু শুনেছে, তখন তার মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একিউম্বেন্স অংশটি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু যখন অন্য কারো ব্যপারে প্রশংসাসূচক কিছু শুনে তখন নিউক্লিয়াস একিউম্বেন্স তেমন সাড়া দেয় না।

দেখা গেল, নিজের ব্যপারে ভালো কিছু শোনার পর যাদের মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস একিউম্বেন্স অনেক বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়, তারা বাস্তবে ফেসবুক অনেক বেশি সময় ধরে ব্যবহার করেন।
 
Top