গ্যালারী দৃক। নিজের তোলা আলোকচিত্রের প্রদর্শনীতে ব্যস্ত সময় কাটছে রুপমের। আগত অতিথিদের
সাথে কুশল বিনিময়, ছবি সম্পর্কে নানান কথা বলছে সে। এক দন্ড বসার সময় পাচ্ছে না সে। কিন্তু তারপর ও কিছুক্ষণ পরপর গ্যালারীর প্রবেশ পথের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিচ্ছে সে। প্রদর্শনীর আজকেই শেষ দিন। তার আশা মেয়েটি আজও আসবে। গত চারদিন ঠিক সন্ধ্যে ৭টায় মেয়েটিকে দেখেছে সে। আধা ঘন্টা ঘুরে ফিরে সব গুলো ছবি দেখে। তার সঙ্গে প্রতিবার কেউ না কেউ একজন থাকে। হয়তো তার কোন বান্ধবী। প্রথম দিন ই তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমন করে রুপম। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সাহস করে উঠতে পারে নি। আজ সে ঠিক করেছে যে করেই হোক কথা বলবে। টানা চারদিন মেয়েটি তার ছবি দেখে এসেছে, নিশ্চয় খুব পছন্দ করেছে বলেই।
ঠিক সাতটা বাজতেই বুক ঢিব ঢিব করতে লাগলো রুপমের। এই এলো বলে। কিন্তু দশ মিনিট পার হয়ে গেল, সে আসে নি। রুপম ভাবছে, শহরে যা জ্যাম তাতে দেরী হওয়া অস্বাভাবিক না। পচিশ মিনিট পার হবার পর যখন হাল ছেড়ে দেবে ঠিক তখন ই মেয়েটির দেখা পেল সে। দরজা ঠেলে মেয়েটিকে ঢুকতে দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রুপম।
দর্শনার্থীদের ঠেলে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো সে। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে সে। কি বলবে, কি বলবে না সব ঠিক করে নিচ্ছে। গোলমাল হওয়া যাবে না। ভুল মানেই সর্বনাশ। মেয়েটি ফিরেও তাকাবে না। মেয়েটি এক এক করে ছবি দেখছে, আর রুপম তার পেছন পেছন হাটছে। এই যে শুনছেন – বলে ডাকতে গিয়ে দেখল তার গলা দিকে স্বর বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির ছবি দেখা শেষ, কিন্তু রুপম এখনো তাকে ডাক দিতে পারে নি। প্রদর্শনীর সময় ও শেষ। ধীর লয়ে মেয়েটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে মুখটা মুছে হাটা দিল রাস্তায়।
মনে মনে নিজেকে গাল দিচ্ছে রুপম। মেয়েটার সাথে এবারো কথা বলতে পারল না সে। শেষ সুযোগটা হেলায় হারিয়েছে সে। এখন তাকে সে আর পাবে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাত করেই দরজার দিকে দৌড়াল সে। সিড়ির কাছ থেকে মেয়েটার ফেলে দেওয়া টিস্যুটা তুলে নিয়ে রাস্তায় উঠে এলো সে। অল্প একটু দুরেই মেয়েটি হনহন করে হাটছে। দৌড়ে তার কাছে এসে ডাক দিল সে,
- ‘ এই সে শুনছেন’
ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকায় মেয়েটি। রুপমকে দেখতে পেল সে।
ছবির প্রতি খুব একটা আগ্রহ নেই অনুভার। স্রেফ বান্ধবীদের চাপে পড়ে দৃক গ্যালারীতে গতচারদিন ধরে এসেছে সে। প্রতিবার তার এক বান্ধবীর এই প্রদর্শনী দেখতে ইচ্ছে করে, একা আসতে চায় না, ধরে নিয়ে আসে অনুভাকে। বাধ্য হয়ে আসতে হয় তাকে। রুপম শাহরিয়ার নামের একজন আলোকচিত্রীর প্রদর্শনী। তরুণ, প্রতিভাবান। দুইএকবার পত্রিকায় তার নাম দেখেছে অনুভা। তার বান্ধবীরা রুপনের ফ্যান ই বলা যায়।
প্রদর্শনীতে এসে রুপমের ছবি দেখে সে কিছু না বুঝলেও বান্ধবীদের উচ্ছ্বাস দেখে সেও ভান করেছে যে তার খুব ভালো লেগেছে। এটাই কাল হল তার। চার দিন আসা লাগলো। অবশ্য তাতে তার আপত্তি নেই। প্রথমদিন রুপমকে দেখে তার বেশ ভালোই লাগে। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও রুপম কথা বলবে কি না, এড়িয়ে যেতে পারে ভেবে আর কিছু বলেনি। টানা চার দিন এসেও সে কথা বলতে পারে নি। শেষ দিন ভার্সিটিতে ক্লাস শেষে আসার পথে যে জ্যামে পড়েছিল তাতে ভেবেছিল প্রদর্শনী বোধয় মিস। আধা ঘন্টা বাকি থাকতে গ্যালারীতে আসে সে। প্রবেশ পথ থেকেই রুপমকে দেখতে পায় অনুভা । চঞ্চল চোখে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছিল সে। ছবি গুলো দেখার সময় রুপম প্রায় তার পেছনেই ছিল, কিন্তু একবার ও কথা বলতে পারে নি। প্রদর্শনীর সময় শেষ হয়ে আসায় তাকে চলতে আসতে হল। কেন জানি তার চোখে পানি এসে গেলো। টিস্যু দিয়ে তা মুছে হাঁটা দিল বাসার পথে।
- ‘আমাকে ডাকছেন?’ রুপমকে দেখে অবাক হয় অনুভা। কোন মতে উত্তর দেয় সে।
মেয়েটিকে দেখেই কথা আটকে যেতে লাগলো রুপমের। হালকা সাদা জামায় মেয়েটিকে বেশ সুন্দর লাগছে। গভীর কালো মায়াবী চোখে কাজল। প্রথম দেখাতে প্রেমে পড়ে যাবার মত মেয়ে।
- ‘ জি আপনাকেই বলছি’ বলল রুপম
-‘ কেন?’
-‘ ইয়ে, মানে ইয়ে,’
-‘ ইয়ে? কি বলতে চাচ্ছেন। মনে মনে অনুভা যেমন খুশী তেমন ই দ্বিধাগ্রস্ত। কি বলতে চায় রুপম, আর সেও বা কি বলবে কে জানে।
হাতের মুঠোয় থাকা টিস্যুটি সামনে বাড়িয়ে রুপম বলে
-‘ আপনার টিস্যু। রাস্তায় ফেলে এসেছেন। পাশেই ডাস্টবিন ছিল। আপনার উচিত ছিল ডাস্টবিনে ফেলা’। কথাটা বলেই মনে মনে নিজেকে গাল দিল রুপম। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে গিয়ে মেয়েটাকে না আবার রাগিয়ে দেয়।
মুচকি হেসে রুপমের হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে ফেলল অনুভা।
- ‘ এবার ঠিক আছে তো?’
- ‘ হ্যাঁ, ঠিক আছে’
-‘সবাইকেই কি পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান দেন আপনি?’
-‘ সবাইকে না, যারা ভুলে যায় তাদের’
-‘ ওহ তাই বুঝি’
-‘ জি’
কথা হারিয়ে গেলো। কে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রুপম বলে
-‘ আমার নাম রুপম, আপনি?’
-‘ আমি অনুভা।‘
-‘ ও’
আবার কথা হারিয়ে যায়। দ্বিধান্বিত ভাবে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। অনুভা বলে উঠলো,
-‘ আপনি কি সেই রুপম যার আলোকচিত্রের প্রদর্শনী হচ্ছে দৃকে?’
-‘জি, আমিই সে।‘
-‘ আমিও এখন সেখান থেকেই এলাম। প্রতিদিন ই এসেছি’
-‘ শুনে খুশী হলাম। আপনার পছন্দ হয়েছে নাকি?’
-‘ আমার পছন্দ হয় নি। নিজের জন্য আসি নি। বান্ধবীরা ধরে নিয়ে এসেছে। আমি এসব বুঝি না।‘
-‘ও আচ্ছা তাই। খুব কঠিন কিছু তো না এসব’
-‘ আমার একটু তাড়া আছে, হাটতে হাটতে কথা বলি?’
-‘জি অবশ্যই। আপনি কোথায় থাকেন?’
-‘ জিগাতলায়। আপনি? ‘
-‘ বাহ, আমিও এদিকেই থাকি’
-‘বেশ তো, হাটতে হাটতেই কথা বলি’
কিন্তু কথা আর বলা হচ্ছে না। দুইজনই নিঃশব্দে হাটছে। কথা বলার মত কেউ ই কিছু পাচ্ছে না। কেমন আছেন, কি করেন, কোথায় পড়েন, এই ধরণের ফর্মাল কথাবার্তা শেষ শুরুতেই। অনুভা মাথা নিচু করে হাটছে। রুপমের হাত দুটো প্যান্টের পকেটে ঢুকানো। কিছুক্ষণ পর অনুভা বলে উঠে
-‘ আমি চলে এসেছি। সামনের বিল্ডিং এ আমি থাকি। এতদূর আসার জন্য ধন্যবাদ’
-‘ ধন্যবাদ এর কিছু নেই। আমি এখান থেকে বেশিদুর থাকি না।‘
-‘ ভালো থাকবেন।‘
-‘ আপনিও ভালো থাকবেন’
বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে যায় অনুভা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে রুপম ভাবছে, গাধামি হয়ে গেলো। কোন মতে ইনিয়ে বিনিয়ে পরের বার দেখা হবার কিংবা ফোন নাম্বার নেওয়ার সুযোগটা তো করা উচিত ছিল। এখন আবার কবে দেখা হবে কে জানে। ‘ধেৎ’ বলে রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খালি পানির বোতলে লাথি দেয় রুপম। চারতলার জানালার ফাঁক দিয়ে রুপমকে বোতলে লাথি মারতে দেখে মুচকি হাসি দেয় অনুভা।
দ্বিতীয় পাট প্রকাশিত হবে কালকে সকালে ।
সাথে কুশল বিনিময়, ছবি সম্পর্কে নানান কথা বলছে সে। এক দন্ড বসার সময় পাচ্ছে না সে। কিন্তু তারপর ও কিছুক্ষণ পরপর গ্যালারীর প্রবেশ পথের দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিচ্ছে সে। প্রদর্শনীর আজকেই শেষ দিন। তার আশা মেয়েটি আজও আসবে। গত চারদিন ঠিক সন্ধ্যে ৭টায় মেয়েটিকে দেখেছে সে। আধা ঘন্টা ঘুরে ফিরে সব গুলো ছবি দেখে। তার সঙ্গে প্রতিবার কেউ না কেউ একজন থাকে। হয়তো তার কোন বান্ধবী। প্রথম দিন ই তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমন করে রুপম। এরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সাহস করে উঠতে পারে নি। আজ সে ঠিক করেছে যে করেই হোক কথা বলবে। টানা চারদিন মেয়েটি তার ছবি দেখে এসেছে, নিশ্চয় খুব পছন্দ করেছে বলেই।
ঠিক সাতটা বাজতেই বুক ঢিব ঢিব করতে লাগলো রুপমের। এই এলো বলে। কিন্তু দশ মিনিট পার হয়ে গেল, সে আসে নি। রুপম ভাবছে, শহরে যা জ্যাম তাতে দেরী হওয়া অস্বাভাবিক না। পচিশ মিনিট পার হবার পর যখন হাল ছেড়ে দেবে ঠিক তখন ই মেয়েটির দেখা পেল সে। দরজা ঠেলে মেয়েটিকে ঢুকতে দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রুপম।
দর্শনার্থীদের ঠেলে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো সে। মনে মনে কথা গুছিয়ে নিচ্ছে সে। কি বলবে, কি বলবে না সব ঠিক করে নিচ্ছে। গোলমাল হওয়া যাবে না। ভুল মানেই সর্বনাশ। মেয়েটি ফিরেও তাকাবে না। মেয়েটি এক এক করে ছবি দেখছে, আর রুপম তার পেছন পেছন হাটছে। এই যে শুনছেন – বলে ডাকতে গিয়ে দেখল তার গলা দিকে স্বর বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির ছবি দেখা শেষ, কিন্তু রুপম এখনো তাকে ডাক দিতে পারে নি। প্রদর্শনীর সময় ও শেষ। ধীর লয়ে মেয়েটি দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো।ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে মুখটা মুছে হাটা দিল রাস্তায়।
মনে মনে নিজেকে গাল দিচ্ছে রুপম। মেয়েটার সাথে এবারো কথা বলতে পারল না সে। শেষ সুযোগটা হেলায় হারিয়েছে সে। এখন তাকে সে আর পাবে না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাত করেই দরজার দিকে দৌড়াল সে। সিড়ির কাছ থেকে মেয়েটার ফেলে দেওয়া টিস্যুটা তুলে নিয়ে রাস্তায় উঠে এলো সে। অল্প একটু দুরেই মেয়েটি হনহন করে হাটছে। দৌড়ে তার কাছে এসে ডাক দিল সে,
- ‘ এই সে শুনছেন’
ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকায় মেয়েটি। রুপমকে দেখতে পেল সে।
ছবির প্রতি খুব একটা আগ্রহ নেই অনুভার। স্রেফ বান্ধবীদের চাপে পড়ে দৃক গ্যালারীতে গতচারদিন ধরে এসেছে সে। প্রতিবার তার এক বান্ধবীর এই প্রদর্শনী দেখতে ইচ্ছে করে, একা আসতে চায় না, ধরে নিয়ে আসে অনুভাকে। বাধ্য হয়ে আসতে হয় তাকে। রুপম শাহরিয়ার নামের একজন আলোকচিত্রীর প্রদর্শনী। তরুণ, প্রতিভাবান। দুইএকবার পত্রিকায় তার নাম দেখেছে অনুভা। তার বান্ধবীরা রুপনের ফ্যান ই বলা যায়।
প্রদর্শনীতে এসে রুপমের ছবি দেখে সে কিছু না বুঝলেও বান্ধবীদের উচ্ছ্বাস দেখে সেও ভান করেছে যে তার খুব ভালো লেগেছে। এটাই কাল হল তার। চার দিন আসা লাগলো। অবশ্য তাতে তার আপত্তি নেই। প্রথমদিন রুপমকে দেখে তার বেশ ভালোই লাগে। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও রুপম কথা বলবে কি না, এড়িয়ে যেতে পারে ভেবে আর কিছু বলেনি। টানা চার দিন এসেও সে কথা বলতে পারে নি। শেষ দিন ভার্সিটিতে ক্লাস শেষে আসার পথে যে জ্যামে পড়েছিল তাতে ভেবেছিল প্রদর্শনী বোধয় মিস। আধা ঘন্টা বাকি থাকতে গ্যালারীতে আসে সে। প্রবেশ পথ থেকেই রুপমকে দেখতে পায় অনুভা । চঞ্চল চোখে কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছিল সে। ছবি গুলো দেখার সময় রুপম প্রায় তার পেছনেই ছিল, কিন্তু একবার ও কথা বলতে পারে নি। প্রদর্শনীর সময় শেষ হয়ে আসায় তাকে চলতে আসতে হল। কেন জানি তার চোখে পানি এসে গেলো। টিস্যু দিয়ে তা মুছে হাঁটা দিল বাসার পথে।
- ‘আমাকে ডাকছেন?’ রুপমকে দেখে অবাক হয় অনুভা। কোন মতে উত্তর দেয় সে।
মেয়েটিকে দেখেই কথা আটকে যেতে লাগলো রুপমের। হালকা সাদা জামায় মেয়েটিকে বেশ সুন্দর লাগছে। গভীর কালো মায়াবী চোখে কাজল। প্রথম দেখাতে প্রেমে পড়ে যাবার মত মেয়ে।
- ‘ জি আপনাকেই বলছি’ বলল রুপম
-‘ কেন?’
-‘ ইয়ে, মানে ইয়ে,’
-‘ ইয়ে? কি বলতে চাচ্ছেন। মনে মনে অনুভা যেমন খুশী তেমন ই দ্বিধাগ্রস্ত। কি বলতে চায় রুপম, আর সেও বা কি বলবে কে জানে।
হাতের মুঠোয় থাকা টিস্যুটি সামনে বাড়িয়ে রুপম বলে
-‘ আপনার টিস্যু। রাস্তায় ফেলে এসেছেন। পাশেই ডাস্টবিন ছিল। আপনার উচিত ছিল ডাস্টবিনে ফেলা’। কথাটা বলেই মনে মনে নিজেকে গাল দিল রুপম। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দিতে গিয়ে মেয়েটাকে না আবার রাগিয়ে দেয়।
মুচকি হেসে রুপমের হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে ফেলল অনুভা।
- ‘ এবার ঠিক আছে তো?’
- ‘ হ্যাঁ, ঠিক আছে’
-‘সবাইকেই কি পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান দেন আপনি?’
-‘ সবাইকে না, যারা ভুলে যায় তাদের’
-‘ ওহ তাই বুঝি’
-‘ জি’
কথা হারিয়ে গেলো। কে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রুপম বলে
-‘ আমার নাম রুপম, আপনি?’
-‘ আমি অনুভা।‘
-‘ ও’
আবার কথা হারিয়ে যায়। দ্বিধান্বিত ভাবে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে তারা। অনুভা বলে উঠলো,
-‘ আপনি কি সেই রুপম যার আলোকচিত্রের প্রদর্শনী হচ্ছে দৃকে?’
-‘জি, আমিই সে।‘
-‘ আমিও এখন সেখান থেকেই এলাম। প্রতিদিন ই এসেছি’
-‘ শুনে খুশী হলাম। আপনার পছন্দ হয়েছে নাকি?’
-‘ আমার পছন্দ হয় নি। নিজের জন্য আসি নি। বান্ধবীরা ধরে নিয়ে এসেছে। আমি এসব বুঝি না।‘
-‘ও আচ্ছা তাই। খুব কঠিন কিছু তো না এসব’
-‘ আমার একটু তাড়া আছে, হাটতে হাটতে কথা বলি?’
-‘জি অবশ্যই। আপনি কোথায় থাকেন?’
-‘ জিগাতলায়। আপনি? ‘
-‘ বাহ, আমিও এদিকেই থাকি’
-‘বেশ তো, হাটতে হাটতেই কথা বলি’
কিন্তু কথা আর বলা হচ্ছে না। দুইজনই নিঃশব্দে হাটছে। কথা বলার মত কেউ ই কিছু পাচ্ছে না। কেমন আছেন, কি করেন, কোথায় পড়েন, এই ধরণের ফর্মাল কথাবার্তা শেষ শুরুতেই। অনুভা মাথা নিচু করে হাটছে। রুপমের হাত দুটো প্যান্টের পকেটে ঢুকানো। কিছুক্ষণ পর অনুভা বলে উঠে
-‘ আমি চলে এসেছি। সামনের বিল্ডিং এ আমি থাকি। এতদূর আসার জন্য ধন্যবাদ’
-‘ ধন্যবাদ এর কিছু নেই। আমি এখান থেকে বেশিদুর থাকি না।‘
-‘ ভালো থাকবেন।‘
-‘ আপনিও ভালো থাকবেন’
বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে যায় অনুভা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে রুপম ভাবছে, গাধামি হয়ে গেলো। কোন মতে ইনিয়ে বিনিয়ে পরের বার দেখা হবার কিংবা ফোন নাম্বার নেওয়ার সুযোগটা তো করা উচিত ছিল। এখন আবার কবে দেখা হবে কে জানে। ‘ধেৎ’ বলে রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খালি পানির বোতলে লাথি দেয় রুপম। চারতলার জানালার ফাঁক দিয়ে রুপমকে বোতলে লাথি মারতে দেখে মুচকি হাসি দেয় অনুভা।
দ্বিতীয় পাট প্রকাশিত হবে কালকে সকালে ।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন