তথ্য প্রযুক্তিরাশেদ (ছদ্মনাম), একটি স্বনামধন্য স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।  প্রতিদিন বিকালে সে স্কুল থেকে ফিরে একটু
বিশ্রাম নিয়ে পড়তে বসে। ১১টা বাজলে পরিবারের সাথে রাতের খাবার শেষে করে।  পরিবারের সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন রাশেদ তার কম্পিউটারের সামনে বসে।

 কৈশর বয়সে প্রযুক্তির নতুনত্বের স্বাদ পেতে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে তার ঘুরে বেড়ানো। ফ্রেইন্ডশিপ ওয়েব সাইটে রেজিস্ট্রেশন ও মেইল আদান প্রদান, থ্রেড পড়া এবং ওয়েব ক্যামে অবাধ চ্যাট- এভাবেই প্রতি রাতে তার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় পার হয়।

 তার ব্যক্তিগত কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ভিডিও চিত্র। মাল্টিমিডিয়া সুবিধাসমৃদ্ধ মোবাইল ফোন ও পেনড্রাইভের মাধ্যমে এসকল ভিডিও চিত্র মাঝে মধ্যে সে তার সহপাঠীদের দিয়ে থাকে। তার সহপাঠীরাও রাতের বড় একটি সময় ব্যয় করে কম্পিউটারের সামনে।

অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজের বড় একটি অংশ আশঙ্কাজনকভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের সাইবার ক্রাইমে।

 সাইবার ক্রাইম থেকে পরবর্তীতে ঘটছে নানা ধরনের বড় বড় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, নতুনত্বের প্রতি তরুণ সমাজের আসক্তি, সামাজিকভাবে সচেতনতার অভাব, পরিবারের উদাসীনতা, ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে জীবন যাপন, সুফল কুফল বিচার বিবেচনা না করেই প্রযুক্তির ব্যবহার, সঙ্গ দোষ, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবই মূলত সাইবার ক্রাইম সংঘটনের মূল কারণ। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগের গাফিলতিও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অলিতে গলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সাইবার ক্যাফে। এ সকল ক্যাফেতে মূলত উঠতি বয়সীরাই বেশি ভিড় করে থাকে। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা এ সকল ক্যাফেতে সময় কাটায়। ফেসবুক, স্কাইপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপকর্মে।

 এ ধরনের কয়েকটি সাইবার ক্যাফেতে কথা বলে জানা গেছে, মূলত এখানে যারা আসে তারা ইন্টারনেটে চ্যাট বা কনভারসেশন করে বেশি সময় পার করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন অশ্লীল ওয়েব সাইটে তারা প্রবেশ করে ভিডিওচিত্র সিডিতে বা পেনড্রাইভে ডাউনলোড করে নিয়ে যায়। পরে তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।

 সরকারের টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে শতাধিক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিলেও এখনো কয়েক হাজার অশ্লীল ও অরুচিকর ওয়েব সাইট বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এসকল ওয়েব সাইটে ১৮ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশে নামমাত্র একটি সতর্কতা নোটিশ দেয়া থাকে। যা বাস্তবিক অর্থে কেউই মানে না। এ সকল ওয়েব সাইট শুধু মাত্র নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না।

ইদানীং মোবাইল ও কম্পিউটারের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফির মারাত্মক বিস্তার ঘটেছে। বিভিন্ন সিডি’র দোকান ও সাইবার ক্যাফের মাধ্যমে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। এ কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন।

 বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট আইন বা নির্দেশনা নেই। কম দামী হওয়ায় মাল্টিমিডিয়া সুবিধা সম্বলিত হ্যান্ডসেট তরুণদের হাতে হাতে ঘুরে ফিরছে। ইন্টারনাল বা এক্সটারনাল মেমরীর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও চিত্রগুলো সংরক্ষণ ও ব্লু টুথ প্রযুক্তিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে অন্যের মোবাইল ফোনে।

 এক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণী ও গৃহবধূরা।

সব কিছুরই ভালো-মন্দ উভয় দিক রয়েছে। প্রযুক্তির এ দু’টি দিক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের আগেই প্রযুক্তি আমাদের হাতে চলে আসে। তরুণ প্রজন্ম স্বাভাবিকভাইে নতুনত্বকে গ্রহণ করে। কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয়।



তাই আইনের প্রয়োগের চেয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা বেশী জরুরী। পরিবারের অসচেতনতাও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তর রয়েছে।

 সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব থেকেই মূলত ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে।

 নৈতিক অধঃপতন থেকে তাদের ফেরাতে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় লাইব্রেরী ও খেলাধুলার ক্লাব স্থাপন করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পরিবারকে সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। প্রযুক্তির অপব্যবহার বন্ধ করতে সরকারেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে।
 
Top