আরিফ আর অরনির সম্পর্ক প্রায় ৪ মাস হতে চলল,এই চারমাসে ওরা দুজন দুজনের অনেক বেশি কাছে
চলে এসেছিল, যদিও সম্পর্কের শুরুটা ছিল এমনেই, দুজনেই দুজন কে বলে রেখেছিল ওরা যদি কখনও এক হতে না পারে তাহলেও এমন কিছু করবে না যাতে দুজনের জন্যে ঝামেলা হয়। চুপচাপ সবকিছু মেনে নিবে। কিন্তু সময়ের সাথে ওরা এখন ঠিক ই বুঝে নিয়েছে ওরা এখন একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতে পারবেনা, আর তাই এখন প্রতিদিন ওদের কথোপকথন এর মূল বিষয় হল ভবিষ্যৎ। কিন্তু ওরা এটা নিয়ে সবসময় টেনশনেই থাকে কারন আরিফের তেমন করে কোন সার্টিফিকেট এর শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, আর এদিকে অরনির পরিবারে এই বিষয় টাকেই খুব বেশি গুরুত্ব দেয়। আর অরনি আর আরিফ থাকে দুইজন দুই জেলায় মাঝখানে অনেক দূরত্ব এটাও একটা সমস্যা। অরনি আর আরিফ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা পালিয়েই বিয়ে করবে, এরপর পরিবারে জানাবে। আর ওরা যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক দুজনই তাই ওরা যদি ঠিক থাকে পরিবার মেনে নিবেই।
ওদের সম্পর্কের কথা বন্ধুমহলে এখন প্রায় সবাই ই জানে, দুজনের বন্ধুমহলে নামকরা কাপল আরিফ আর অরনি। ওরাও নিজেদের ওইভাবে রাখে, আর একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসার এতটুকু কমতি নেই।
গত চারমাসের ভিতর অরনি এতটা টেনশনে কখনও ভুগেনি, কিন্তু আজ কেন যেন কিছুক্ষন পর পর ওর ভয় হচ্ছে, কি হবে কি হবে,ভিতর থেকে বার বার এই কথা টাই বলছে। ভাবছে আরিফ কে বলবে কিনা, কিন্তু আরিফ কে বললে ও হয়ত রেগে যাবে, কারন অরনির আগে থেকে কিছু শত্রু আছে, শত্রু বলতে একসময়ের কাছের বন্ধু কিন্তু সময়ের নিয়মে ওরা এখন অরনির ক্ষতি করার চিন্তায় ই থাকে। অনেক ভেবে অরনি সিদ্ধান্ত নিলো আরিফ কে বলবেই কারন ওকে কোন কথা না বলে সে থাকতে পারেনা আর ও কিছু লুকিয়ে রাখলে সেটা আরিফ এমনেই বুঝে যায়।
অরনি – হ্যালো, আমার বাবু টা কি করে ? আরিফ – এইত অফিস থেকে আসলাম, ফ্রেশ হলাম, তুমি কি কর ? নাস্তা করছ ?? অরনি – হুম করছি, ভালোবাসি বাবু। আরিফ – কি হয়েছে তোমার ? কণ্ঠ টা এরকম লাগছে কেন ? অরনি – কই কিছু না তো, যাও তুমি নাস্তা করে নাও। আরিফ – উহু আমার কাছে লুকাবে না, বল কি হয়েছে ?? কেউ কিছু বলছে ? বাসা থেকে কিছু বলছে ? অরনি – তুমি কেমনে বুঝ সবকিছু ?? আরিফ – বুঝতে হবে না, এই মানুষটার সাথে যে সারাজিবন কাটাবো, তাকে না বুঝে কাকে বুঝব হু ? আচ্ছা এবার বল কি হয়েছে ? অরনি – বাবু আগে বল তুমি রাগ করবে না ? আরিফ – হু করব না বল ? অরনি – না প্রমিস কর মন খারাপ করবানা। রেগে যাবা না। আরিফ – আচ্ছা বাবু, কিছু করবনা এবার বল?? অরনি – জানো আব্বু ফোন করেছে,আমাকে অনেক কথা শুনাইছে, আমাকে বাসায় চলে যেতে বলছে হল থেকে। আরিফ – কিন্তু কেন ? আবার নতুন করে কি হল ? অরনি - কয়েকদিন ধরে বাসার টি এন্ড টি তে কারা যেন ফোন করে আমার নামে কি কি বলছে, তোমার নাম ও বলেছে আব্বু কে, এই জন্যে আব্বু রেগে আছে। আরিফ – এটা তো নতুন কিছু না, এরকম ফোন তো নতুন আসছে না, অরনি – হু কিন্তু তোমার নাম আগে কেউ বলেনি, আব্বু জানতে চেয়েছে তুমি কে, আমি বলেছি তুমি কি ওদের কথা বিশ্বাস করে আমাকে অবিশ্বাস করছ ? এরপর আব্বু কিছু বলেনি , কিছুক্ষন বকা দিল, এরপর বলেছে কয়েকদিনের ভিতর আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে, বাবু এখন কি হবে বল ? আমি তোমার কাছে কেমনে আসবো ? তুমি তো জানোই বাসায় আসলে আমি আর বের হতে পারি না, অনেক টা গৃহ বন্ধী, তুমি চুপ করে আছো কেন ? কথা বল না বাবু ? মন খারাপ করলে ? এই জন্যেই আমি তোমাকে বলতে চায় নি। আরিফ - আরেহ না মন খারাপ করিনি, তবে টেনশন হচ্ছে, ভাবছি কি করা যায়। আচ্ছা ধর তোমাকে বাসায় নিয়ে গেল , অন্য কোথাও সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দিল, পারবানা থাকতে ? অরনি – মানে কি ? তোমাকে তোমাকে তোমাকে, তুমি জানো না ?? তুমি জানো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আর বিয়ে দিয়ে দিলেই হল, আমি করলে তো দিবে, তুমি এটা বল্লা কেন ? এই তুমি ফোন রাখো, আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, বাই। আরিফ – এই দাড়াও দাড়াও, আমি তো দুষ্টামি করছি, তুমি আমাকেই বিয়ে করবে, তোমার আব্বু ই আমার সাথে বিয়ে দিবে। অরনি – এই মানে কি ? কি করবা তুমি ? বল না প্লিজ, প্লিজ উল্টাপাল্টা কিছু কর না, তখন হিতে বিপরীত হবে। আরিফ – একদম টেনশন করো না, কিচ্ছু হবে না, আমি নাস্তা করতে যায়, আম্মু চা বানিয়ে দিয়েছে সেই কখন খেয়ে ফোন দিচ্ছি। ভালোবাসি বাবু। অরনি – হু ভালোবাসি।
(২)
রসিদ সাহেব, অবসর প্রাপ্ত সরকারী অফিসার, খুব হাসিখুসি আবার খুব বদ মেজাজি মানুষ।এলাকায় নামকরা মানুষ,বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি আছে, মোটামুটি উচ্চ মধ্যবিত্ত ই বলা যায়। উনার ছোট খাট সংসার, এক ছেলে দেশের বাইরে লেখাপড়া করছে, আর এক মেয়ে একটা নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠে জগিং করেন, এসে খবরের কাগজ নিয়ে বসেন, সারাদিন মেয়ে কে কয়েকবার ফোন করা, বউ এর সাথে কিছু খুনসুটি,বাজার, পরিবার এইত এভাবেই চলে যাচ্ছে জীবন। রসিদ সাহেব সিগারেট তেমন একটা খান না, মাঝে মাঝে পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হলে আড্ডা তে দু একটা, এর বেশি কখনই না, কিন্তু এই কয়েকদিন উনি নিয়মিত সিগারেট এর ভিতর থাকছেন, আসলে খুব টেনশনে আছেন, মেয়েকে নিয়ে এমনেই নানা ঝামেলায় আছেন, কিছু আত্নিয় রুপি শত্রু সহ অনেকেই আছেন উনার মেয়ের বিরুদ্ধে নানা কথা রটানোর তালে, সামান্য কিছু পেলে এদের কাজ হল এটাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে অনেক বড় করা। তাই মেয়ে কে নিজের জেলার বাইরের রেখেছেন এসব কিছু থেকে দূরে থাকতে, কিন্তু মেয়েও হয়েছে উনার মত রাগি। ওর ও শত্রুর অভাব নেই, ওর সাথে কেউ পেরে না উঠলে আসে রসিদ সাহেবের কেছে, এসব নতুন কিছু না, মেয়ে থাকলে এরকম হয় ই। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উনার টেনশন হচ্ছে অন্য ব্যাপারে, কয়েকটা ফোন আসছে আর মেয়ের নামে উল্টা পাল্টা কথা বলছে, সে নাকি কোন আরিফ নামের ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায়, ছেলেটা ভালো না সাবধান হয়ে যান, মেয়েকে সামলান এই জাতীয় কথা সব। রসিদ সাহেব ইতিমধ্যে রাগে এইসব ব্যাপার নিয়ে মেয়েকে বকেছেন, যদিও মেয়েকে বকতে নিজের বুকেই লাগে, এতদুরে পড়ে থাকে আদরের মেয়েটা, যাকে এখনও পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হয়, আর তাকে বকতে তঁ গায়ে লাগবেই। রাতে ঠিকমত খেতে পারলেন না, সব টেনশন আর ফোনের কথা গুলো মাথায় ঘুরছে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু খবর দেখবে ভেবে টিভি টা ছেড়ে বসলেন তখন ই টি অ্যান্ড টির রিং বেজে উঠল, আজকাল ফোন ধরতে ইচ্ছেই করে না। কে না কে, আবার উনার বড় ছেলে না তো, ও এই সময় টাতেই ফোন করে, উনি পাশের সোফায় গিয়ে ফোন টা ধরলেন .... আরিফ - আসসালাম-ওয়া-লাইকুম রসিদ সাহেব - ওয়ালাইকুম সালাম, কে ? আরিফ - ভালো আছেন ? রসিদ সাহেব - হ্যা আমি ভালো, কিন্তু আপনি কে? আ. - আমি আপনার অনেক ছোট আমাকে তুমি করে বলতে পারেন, আমার নাম হয়ত শুনেছেন, কিন্তু এখন বলতে চাইতেছি না আসলে, কারন আমার নাম শুনার সাথে সাথে আপনি রেগে যাবেন, আর রেগে গেলে আপনি আমার কথা সব নেগেটিভলি নিবেন, তখন আমার বলা টায় বৃথা হয়ে যাবে, এই জন্যে নাম টা বলতে চাচ্ছি না। র. সা - কি বলতে চাও ? আ - আসলে আমার কিছু কথা ছিল আপনি অনুমতি দিলে শুরু করতে পারি, র. সা - হু বল, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি একটু পর আমার ঘুমাতে যেতে হবে, ভদ্র টা শিখো নি এত রাতে কেন ফোন দিয়েছ, আ. - না আসলে এত রাতে ফোন দেওয়ার কারন হল আমি যদি কথাগুলো দিনের বেলা বলি তখন হয়ত আপনি অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকতে পারেন, তখন আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটবে, আর কথাগুলো নিয়ে ভাবার সময় ও পাবেন না, রাতে ঘুমাতে যাবার আগের সময় টা যে কোন কিছু নিয়ে ভাবার জন্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। র. সা. - তুমি কি আমাকে জ্ঞ্যান দেওয়ার জন্যে এই রাতের বেলা ফোন করেছ ??? আ. - না আসলে কিছু জরুরী কথা বলার জন্যে ফোন করেছি। আপনি অনুমতি দিলে শুরু করতে পারি। র. সা. - এত কিছু বল্লা অনুমতি নিলা না আর এখন আবার অনুমতি, যাই হোক বল ?? আ. - দয়া করে আমার কোন কথা শুনে রেগে গেলে পুরা কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্লিজ ফোন রাখবেন না আর রাগবেন না। র. সা. - হু হু বল আ - আমি আরিফ, এবং আপনি এতদিন আপনার বিভিন্ন শুভাকাঙ্কি থেকে যা শুনে এসেছেন, বা সন্দেহ করেছে তা ই ঠিক আমি আপনার মেয়ে অরনি কে ভালোবাসি, এবং তাকে আপনাদের অনুমতি নিয়ে আপনাদের আশীর্বাদ সাথে নিয়েই বিয়ে করতে চাই, এবং আমি খুব নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে খুব বেশি লেখাপড়া করি না, ছোট একটা চাকরি করি, তবে হ্যা এই বেতন দিয়ে আপনার মেয়ে সন্তুষ্ট বলেছে, আমি ওকে খুব বেশি সুখী করতে পারবো কিনা জানিনা, তবে হ্যা ওকে প্রতিক্ষনে হাসাতে পারব। আর খুব বেশি কিছু দিতে পারবো কিনা আমার জানা নেই, আপনাদের মেয়েকে এটা আমি বলেছি, এবং সেও আমাকে ভালোবাসে তাই সে এভাবেই আমার সাথে সংসার করতে রাজি আছে। র. সা - কি ? তোমার সাহস তো কম না বেয়াদপ ছেলে রাতদুপুরে ফাজলামি করতে আসো, আমার সাথে? আ. - আমি আগেই বলেছিলাম আপনি আমার কথা শুনার পর রেগে যাবেন, র. সা. - রাগব না তো কি হ্যা ? তোমার সাহস তো কম না আমার মেয়ে কে নিয়ে কথা বলি, আ. - আমি যদি আপনার মেয়ে কে নিয়ে ভেগে যাওয়ার পর আপনাকে ফোন দিতাম তাহলে কি আপনি খুশি হতেন ?যদিও আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করা, কিন্তু পড়ে ঠিক আপনার জায়গাটায় নিজেকে বসিয়ে ভাবলাম এটা উচিত হবে না। তাই আপনার অনুমতি নিয়ে আমাদের দুই পরিবার কে এক করেই আপনার মেয়ে কে আমাদের ঘরে নিতে চাই। আমি জানি প্রতিটা বাবার মত আপনিও চান আপনার মেয়ে সুখে থাকুক, আর আমি এটা কথা দিতে পারি ওকে ভালোবাসা দিয়ে সবসময় ই সুখে রাখব, যদিও আপনার মনে হতে পারে আমি ছবির ডায়লগ দিচ্ছি কিন্তু কথাগুলো বাস্তব। আপনি দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন। আমি এখন রাখছি, এর চেয়ে বেশি রেগে গেলে আপনার প্রেসার টা আরও বেড়ে যাবে শরীরের জন্যে ক্ষতি হবে, আর প্লিজ ঠাণ্ডা মাথায় ভাববেন। আমি রাখছি আসসালাম ওয়া লাইকুম।
বিপ বিপ বিপ করে ফোনের লাইন টা কেটে গেলো, রশিদ সাহেব ফোনের ক্রেডল টা ধরেই চুপচাপ বসে আছেন, আসলে বুঝতে পারছেন না কি হল এটা, প্রায় ৩০ মিনিট পর রসিদ সাহেব বসা থেকে উঠলেন, টিভি বন্ধ করে, সব দরজা বন্ধ করে চুপচাপ উনার ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশে এসে শুলেন, উনি খুব ভালো করেই জানেন এখন তিনি ঘুমাতে পারবেন না। উনি আসলে ভেবে পাচ্ছেন না, উনি ফোনে এসব কি শুনলেন, শেষ পর্যন্ত উনার নিজের মেয়ে উনাকে ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল, কি করবে উনি ? অরনি কে কি হল থেকে নিয়ে এসে তার ছেলের ঠিক করা পাত্রের সাথে বিয়ে দিবেন ? এটা কি ঠিক হবে ?
(৩)
ছেলেটার সাহস আছে বলতে হবে কি নির্দ্বিধায় অকপটে সব বলে ফেলল। ছেলেটাকে কি তাহলে আমার ভালো লাগা শুরু করল, ওকে কি মেনে নিব, না টা কিভাবে হয় যেই আমি এই লাভ ম্যারিজ নামের অসভ্য প্রথাটার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি সেই আমি নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে মেনে নিবো। না এ হতে পারে না, কাল সকালেই অরনি কে হল থেকে নিয়ে আসব, আর পাত্র পক্ষ কে জানিয়ে দিবো আমরা রাজি, কিছুদিনের ভিতর বিয়ে হয়ে যাবে।
কিন্তু, ধ্যাত আবার কিন্তু আসছে কেন ??? না ওরা যদি পালিয়ে যায় ?? তখন তো আমি মুখ দেখাতে পারব না কাউকেই, আর আজকাল মেয়েরা অনেক ইমোশনাল যদি বিষ টিশ খেয়ে বসে, না এ হতে পারে না, আমার সবচেয়ে পছন্দের মেয়েটা এভাবে আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। কিন্তু ও বরাবরেই বদমেজাজি, কি না কি করে ফেলে, ছেলেটার কথায় দম আছে অবশ্য, ও আমার মেয়ে কে সুখে রাখতে পারবে হয়ত। কিন্তু তেমন ভালো তো চাকরি করে না, সে অবশ্য নিজেই স্বীকার করেছে, ও তো বলল ভালোবাসা দিয়ে রাখবে। আসলেই কি কেবল ভালোবাসা দিয়ে সংসার চলে , জীবন চলে ??? না আমি ছেলেটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি কেন, আমার উচিত হচ্ছে না, আমার শক্ত থাকা উচিত, ছেলেটা বললেই হল, আমি আমার মেয়ে কে আমার জেলার বাইরে দিয়ে দিবো না। এতদূরে নতুন পরিবেশে আমার মেয়েটা থাকবে কিভাবে, কিন্তু, কিন্তু বিয়ে তো দিতেই হবে , আমার মেয়েটা সুখে থাকবে তো এই ছেলেটার সাথে, রিস্ক কি একটা নিবো ? আমি জানি আমি রাজি হলে আর কেউ আপত্তি করবে না, সবাই আমাকেই ভয় পায়, তাহলে!!! তাহলে কি ছেলেটা এই কারনেই সরাসরি আমাকেই বলল। কিন্তু আমি যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে এই পিচি ছেলের কাছে আমার হেরে যাওয়া, আমাদের বংসের রীতির বিপরীতে কাজ হবে, না আমি আসলেই আর ভাবতে পারছি না, কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। আজকের রাত টা এত বড় কেন, সকাল হয় না কেন, সকাল হলেই আমি অরনি কে হল থেকে নিয়ে আসবো, না ওকে আর হল এ রাখা যাবে না, কোন সময় পালিয়ে যায় , না আসলেই ঠিক হবে না।
(৪)
এই ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় অরনির বিয়ে হয়, না অরনি পালিয়ে যায় নি, বাবার ঠিক করা পাত্রের সাথেও তার বিয়ে টা হয় নি। হ্যা ওর বিয়ে হয় ওর ভালোবাসার মানুষ আরিফ এর সাথেই, এবং দুই পরিবারের সম্মতি ক্রমেই।
ভালোবাসার ক্ষেত্রে ভালো মন, ভালোবাসা, আর পবিত্রতা যেমন দরকার , ঠিক তেমনি ভালোবাসার মানুষ টি কে নিজের করার জন্যে সৎ সাহস টাও দরকার। এতেই কেবল একটি ভালোবাসার শুভ পরিনয় টা সম্ভব। অবশ্য এর জন্যে প্রতি টা পিতামাতার নিজের ইগো আর বংস টা কেবল না দেখে, নিজেদের সন্তান দের সুখের কথাটাও ভাবা দরকার, সবাই তো ওদের সুখের কথাটায় ভেবে, সারাজীবন সুখে থাকার জন্যে তাদের নিয়ে এত ভাবেন। তবে হ্যা এর জন্যে আমাদের নিজেদের ও ঠিক থাকতে হবে, এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নিতে হবে যার সাথে সারাজিবন থাকা যায়। নিজের জীবনের বাকী সব বছর কাটানো যায়। কেবল আবেগ দিয়ে ভালোবাসা বা সংসার কখনও হয় না, আবেগ দিয়ে কেবল প্রেম ই হয় যার কোন ভবিষ্যৎ নেই। তাই আগে নিজে নিজেকে জানুন এবং জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার সময় ভেবেচিন্তে সঠিক মানুষ টির সাথেই সারাজীবন এক ঘরে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিবেন।
চলে এসেছিল, যদিও সম্পর্কের শুরুটা ছিল এমনেই, দুজনেই দুজন কে বলে রেখেছিল ওরা যদি কখনও এক হতে না পারে তাহলেও এমন কিছু করবে না যাতে দুজনের জন্যে ঝামেলা হয়। চুপচাপ সবকিছু মেনে নিবে। কিন্তু সময়ের সাথে ওরা এখন ঠিক ই বুঝে নিয়েছে ওরা এখন একজন আরেকজন কে ছাড়া থাকতে পারবেনা, আর তাই এখন প্রতিদিন ওদের কথোপকথন এর মূল বিষয় হল ভবিষ্যৎ। কিন্তু ওরা এটা নিয়ে সবসময় টেনশনেই থাকে কারন আরিফের তেমন করে কোন সার্টিফিকেট এর শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, আর এদিকে অরনির পরিবারে এই বিষয় টাকেই খুব বেশি গুরুত্ব দেয়। আর অরনি আর আরিফ থাকে দুইজন দুই জেলায় মাঝখানে অনেক দূরত্ব এটাও একটা সমস্যা। অরনি আর আরিফ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওরা পালিয়েই বিয়ে করবে, এরপর পরিবারে জানাবে। আর ওরা যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক দুজনই তাই ওরা যদি ঠিক থাকে পরিবার মেনে নিবেই।
ওদের সম্পর্কের কথা বন্ধুমহলে এখন প্রায় সবাই ই জানে, দুজনের বন্ধুমহলে নামকরা কাপল আরিফ আর অরনি। ওরাও নিজেদের ওইভাবে রাখে, আর একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসার এতটুকু কমতি নেই।
গত চারমাসের ভিতর অরনি এতটা টেনশনে কখনও ভুগেনি, কিন্তু আজ কেন যেন কিছুক্ষন পর পর ওর ভয় হচ্ছে, কি হবে কি হবে,ভিতর থেকে বার বার এই কথা টাই বলছে। ভাবছে আরিফ কে বলবে কিনা, কিন্তু আরিফ কে বললে ও হয়ত রেগে যাবে, কারন অরনির আগে থেকে কিছু শত্রু আছে, শত্রু বলতে একসময়ের কাছের বন্ধু কিন্তু সময়ের নিয়মে ওরা এখন অরনির ক্ষতি করার চিন্তায় ই থাকে। অনেক ভেবে অরনি সিদ্ধান্ত নিলো আরিফ কে বলবেই কারন ওকে কোন কথা না বলে সে থাকতে পারেনা আর ও কিছু লুকিয়ে রাখলে সেটা আরিফ এমনেই বুঝে যায়।
অরনি – হ্যালো, আমার বাবু টা কি করে ? আরিফ – এইত অফিস থেকে আসলাম, ফ্রেশ হলাম, তুমি কি কর ? নাস্তা করছ ?? অরনি – হুম করছি, ভালোবাসি বাবু। আরিফ – কি হয়েছে তোমার ? কণ্ঠ টা এরকম লাগছে কেন ? অরনি – কই কিছু না তো, যাও তুমি নাস্তা করে নাও। আরিফ – উহু আমার কাছে লুকাবে না, বল কি হয়েছে ?? কেউ কিছু বলছে ? বাসা থেকে কিছু বলছে ? অরনি – তুমি কেমনে বুঝ সবকিছু ?? আরিফ – বুঝতে হবে না, এই মানুষটার সাথে যে সারাজিবন কাটাবো, তাকে না বুঝে কাকে বুঝব হু ? আচ্ছা এবার বল কি হয়েছে ? অরনি – বাবু আগে বল তুমি রাগ করবে না ? আরিফ – হু করব না বল ? অরনি – না প্রমিস কর মন খারাপ করবানা। রেগে যাবা না। আরিফ – আচ্ছা বাবু, কিছু করবনা এবার বল?? অরনি – জানো আব্বু ফোন করেছে,আমাকে অনেক কথা শুনাইছে, আমাকে বাসায় চলে যেতে বলছে হল থেকে। আরিফ – কিন্তু কেন ? আবার নতুন করে কি হল ? অরনি - কয়েকদিন ধরে বাসার টি এন্ড টি তে কারা যেন ফোন করে আমার নামে কি কি বলছে, তোমার নাম ও বলেছে আব্বু কে, এই জন্যে আব্বু রেগে আছে। আরিফ – এটা তো নতুন কিছু না, এরকম ফোন তো নতুন আসছে না, অরনি – হু কিন্তু তোমার নাম আগে কেউ বলেনি, আব্বু জানতে চেয়েছে তুমি কে, আমি বলেছি তুমি কি ওদের কথা বিশ্বাস করে আমাকে অবিশ্বাস করছ ? এরপর আব্বু কিছু বলেনি , কিছুক্ষন বকা দিল, এরপর বলেছে কয়েকদিনের ভিতর আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে, বাবু এখন কি হবে বল ? আমি তোমার কাছে কেমনে আসবো ? তুমি তো জানোই বাসায় আসলে আমি আর বের হতে পারি না, অনেক টা গৃহ বন্ধী, তুমি চুপ করে আছো কেন ? কথা বল না বাবু ? মন খারাপ করলে ? এই জন্যেই আমি তোমাকে বলতে চায় নি। আরিফ - আরেহ না মন খারাপ করিনি, তবে টেনশন হচ্ছে, ভাবছি কি করা যায়। আচ্ছা ধর তোমাকে বাসায় নিয়ে গেল , অন্য কোথাও সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দিল, পারবানা থাকতে ? অরনি – মানে কি ? তোমাকে তোমাকে তোমাকে, তুমি জানো না ?? তুমি জানো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না, আর বিয়ে দিয়ে দিলেই হল, আমি করলে তো দিবে, তুমি এটা বল্লা কেন ? এই তুমি ফোন রাখো, আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, বাই। আরিফ – এই দাড়াও দাড়াও, আমি তো দুষ্টামি করছি, তুমি আমাকেই বিয়ে করবে, তোমার আব্বু ই আমার সাথে বিয়ে দিবে। অরনি – এই মানে কি ? কি করবা তুমি ? বল না প্লিজ, প্লিজ উল্টাপাল্টা কিছু কর না, তখন হিতে বিপরীত হবে। আরিফ – একদম টেনশন করো না, কিচ্ছু হবে না, আমি নাস্তা করতে যায়, আম্মু চা বানিয়ে দিয়েছে সেই কখন খেয়ে ফোন দিচ্ছি। ভালোবাসি বাবু। অরনি – হু ভালোবাসি।
(২)
রসিদ সাহেব, অবসর প্রাপ্ত সরকারী অফিসার, খুব হাসিখুসি আবার খুব বদ মেজাজি মানুষ।এলাকায় নামকরা মানুষ,বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি আছে, মোটামুটি উচ্চ মধ্যবিত্ত ই বলা যায়। উনার ছোট খাট সংসার, এক ছেলে দেশের বাইরে লেখাপড়া করছে, আর এক মেয়ে একটা নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। ঘুম থেকে উঠে জগিং করেন, এসে খবরের কাগজ নিয়ে বসেন, সারাদিন মেয়ে কে কয়েকবার ফোন করা, বউ এর সাথে কিছু খুনসুটি,বাজার, পরিবার এইত এভাবেই চলে যাচ্ছে জীবন। রসিদ সাহেব সিগারেট তেমন একটা খান না, মাঝে মাঝে পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা হলে আড্ডা তে দু একটা, এর বেশি কখনই না, কিন্তু এই কয়েকদিন উনি নিয়মিত সিগারেট এর ভিতর থাকছেন, আসলে খুব টেনশনে আছেন, মেয়েকে নিয়ে এমনেই নানা ঝামেলায় আছেন, কিছু আত্নিয় রুপি শত্রু সহ অনেকেই আছেন উনার মেয়ের বিরুদ্ধে নানা কথা রটানোর তালে, সামান্য কিছু পেলে এদের কাজ হল এটাকে বাড়িয়ে বাড়িয়ে অনেক বড় করা। তাই মেয়ে কে নিজের জেলার বাইরের রেখেছেন এসব কিছু থেকে দূরে থাকতে, কিন্তু মেয়েও হয়েছে উনার মত রাগি। ওর ও শত্রুর অভাব নেই, ওর সাথে কেউ পেরে না উঠলে আসে রসিদ সাহেবের কেছে, এসব নতুন কিছু না, মেয়ে থাকলে এরকম হয় ই। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উনার টেনশন হচ্ছে অন্য ব্যাপারে, কয়েকটা ফোন আসছে আর মেয়ের নামে উল্টা পাল্টা কথা বলছে, সে নাকি কোন আরিফ নামের ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায়, ছেলেটা ভালো না সাবধান হয়ে যান, মেয়েকে সামলান এই জাতীয় কথা সব। রসিদ সাহেব ইতিমধ্যে রাগে এইসব ব্যাপার নিয়ে মেয়েকে বকেছেন, যদিও মেয়েকে বকতে নিজের বুকেই লাগে, এতদুরে পড়ে থাকে আদরের মেয়েটা, যাকে এখনও পর্যন্ত খাইয়ে দিতে হয়, আর তাকে বকতে তঁ গায়ে লাগবেই। রাতে ঠিকমত খেতে পারলেন না, সব টেনশন আর ফোনের কথা গুলো মাথায় ঘুরছে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু খবর দেখবে ভেবে টিভি টা ছেড়ে বসলেন তখন ই টি অ্যান্ড টির রিং বেজে উঠল, আজকাল ফোন ধরতে ইচ্ছেই করে না। কে না কে, আবার উনার বড় ছেলে না তো, ও এই সময় টাতেই ফোন করে, উনি পাশের সোফায় গিয়ে ফোন টা ধরলেন .... আরিফ - আসসালাম-ওয়া-লাইকুম রসিদ সাহেব - ওয়ালাইকুম সালাম, কে ? আরিফ - ভালো আছেন ? রসিদ সাহেব - হ্যা আমি ভালো, কিন্তু আপনি কে? আ. - আমি আপনার অনেক ছোট আমাকে তুমি করে বলতে পারেন, আমার নাম হয়ত শুনেছেন, কিন্তু এখন বলতে চাইতেছি না আসলে, কারন আমার নাম শুনার সাথে সাথে আপনি রেগে যাবেন, আর রেগে গেলে আপনি আমার কথা সব নেগেটিভলি নিবেন, তখন আমার বলা টায় বৃথা হয়ে যাবে, এই জন্যে নাম টা বলতে চাচ্ছি না। র. সা - কি বলতে চাও ? আ - আসলে আমার কিছু কথা ছিল আপনি অনুমতি দিলে শুরু করতে পারি, র. সা - হু বল, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি একটু পর আমার ঘুমাতে যেতে হবে, ভদ্র টা শিখো নি এত রাতে কেন ফোন দিয়েছ, আ. - না আসলে এত রাতে ফোন দেওয়ার কারন হল আমি যদি কথাগুলো দিনের বেলা বলি তখন হয়ত আপনি অন্য কাজে ব্যাস্ত থাকতে পারেন, তখন আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটবে, আর কথাগুলো নিয়ে ভাবার সময় ও পাবেন না, রাতে ঘুমাতে যাবার আগের সময় টা যে কোন কিছু নিয়ে ভাবার জন্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়। র. সা. - তুমি কি আমাকে জ্ঞ্যান দেওয়ার জন্যে এই রাতের বেলা ফোন করেছ ??? আ. - না আসলে কিছু জরুরী কথা বলার জন্যে ফোন করেছি। আপনি অনুমতি দিলে শুরু করতে পারি। র. সা. - এত কিছু বল্লা অনুমতি নিলা না আর এখন আবার অনুমতি, যাই হোক বল ?? আ. - দয়া করে আমার কোন কথা শুনে রেগে গেলে পুরা কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্লিজ ফোন রাখবেন না আর রাগবেন না। র. সা. - হু হু বল আ - আমি আরিফ, এবং আপনি এতদিন আপনার বিভিন্ন শুভাকাঙ্কি থেকে যা শুনে এসেছেন, বা সন্দেহ করেছে তা ই ঠিক আমি আপনার মেয়ে অরনি কে ভালোবাসি, এবং তাকে আপনাদের অনুমতি নিয়ে আপনাদের আশীর্বাদ সাথে নিয়েই বিয়ে করতে চাই, এবং আমি খুব নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে খুব বেশি লেখাপড়া করি না, ছোট একটা চাকরি করি, তবে হ্যা এই বেতন দিয়ে আপনার মেয়ে সন্তুষ্ট বলেছে, আমি ওকে খুব বেশি সুখী করতে পারবো কিনা জানিনা, তবে হ্যা ওকে প্রতিক্ষনে হাসাতে পারব। আর খুব বেশি কিছু দিতে পারবো কিনা আমার জানা নেই, আপনাদের মেয়েকে এটা আমি বলেছি, এবং সেও আমাকে ভালোবাসে তাই সে এভাবেই আমার সাথে সংসার করতে রাজি আছে। র. সা - কি ? তোমার সাহস তো কম না বেয়াদপ ছেলে রাতদুপুরে ফাজলামি করতে আসো, আমার সাথে? আ. - আমি আগেই বলেছিলাম আপনি আমার কথা শুনার পর রেগে যাবেন, র. সা. - রাগব না তো কি হ্যা ? তোমার সাহস তো কম না আমার মেয়ে কে নিয়ে কথা বলি, আ. - আমি যদি আপনার মেয়ে কে নিয়ে ভেগে যাওয়ার পর আপনাকে ফোন দিতাম তাহলে কি আপনি খুশি হতেন ?যদিও আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করা, কিন্তু পড়ে ঠিক আপনার জায়গাটায় নিজেকে বসিয়ে ভাবলাম এটা উচিত হবে না। তাই আপনার অনুমতি নিয়ে আমাদের দুই পরিবার কে এক করেই আপনার মেয়ে কে আমাদের ঘরে নিতে চাই। আমি জানি প্রতিটা বাবার মত আপনিও চান আপনার মেয়ে সুখে থাকুক, আর আমি এটা কথা দিতে পারি ওকে ভালোবাসা দিয়ে সবসময় ই সুখে রাখব, যদিও আপনার মনে হতে পারে আমি ছবির ডায়লগ দিচ্ছি কিন্তু কথাগুলো বাস্তব। আপনি দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন। আমি এখন রাখছি, এর চেয়ে বেশি রেগে গেলে আপনার প্রেসার টা আরও বেড়ে যাবে শরীরের জন্যে ক্ষতি হবে, আর প্লিজ ঠাণ্ডা মাথায় ভাববেন। আমি রাখছি আসসালাম ওয়া লাইকুম।
বিপ বিপ বিপ করে ফোনের লাইন টা কেটে গেলো, রশিদ সাহেব ফোনের ক্রেডল টা ধরেই চুপচাপ বসে আছেন, আসলে বুঝতে পারছেন না কি হল এটা, প্রায় ৩০ মিনিট পর রসিদ সাহেব বসা থেকে উঠলেন, টিভি বন্ধ করে, সব দরজা বন্ধ করে চুপচাপ উনার ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশে এসে শুলেন, উনি খুব ভালো করেই জানেন এখন তিনি ঘুমাতে পারবেন না। উনি আসলে ভেবে পাচ্ছেন না, উনি ফোনে এসব কি শুনলেন, শেষ পর্যন্ত উনার নিজের মেয়ে উনাকে ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল, কি করবে উনি ? অরনি কে কি হল থেকে নিয়ে এসে তার ছেলের ঠিক করা পাত্রের সাথে বিয়ে দিবেন ? এটা কি ঠিক হবে ?
(৩)
ছেলেটার সাহস আছে বলতে হবে কি নির্দ্বিধায় অকপটে সব বলে ফেলল। ছেলেটাকে কি তাহলে আমার ভালো লাগা শুরু করল, ওকে কি মেনে নিব, না টা কিভাবে হয় যেই আমি এই লাভ ম্যারিজ নামের অসভ্য প্রথাটার বিরুদ্ধে কথা বলে আসছি সেই আমি নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে মেনে নিবো। না এ হতে পারে না, কাল সকালেই অরনি কে হল থেকে নিয়ে আসব, আর পাত্র পক্ষ কে জানিয়ে দিবো আমরা রাজি, কিছুদিনের ভিতর বিয়ে হয়ে যাবে।
কিন্তু, ধ্যাত আবার কিন্তু আসছে কেন ??? না ওরা যদি পালিয়ে যায় ?? তখন তো আমি মুখ দেখাতে পারব না কাউকেই, আর আজকাল মেয়েরা অনেক ইমোশনাল যদি বিষ টিশ খেয়ে বসে, না এ হতে পারে না, আমার সবচেয়ে পছন্দের মেয়েটা এভাবে আমাদের ছেড়ে যেতে পারে না। কিন্তু ও বরাবরেই বদমেজাজি, কি না কি করে ফেলে, ছেলেটার কথায় দম আছে অবশ্য, ও আমার মেয়ে কে সুখে রাখতে পারবে হয়ত। কিন্তু তেমন ভালো তো চাকরি করে না, সে অবশ্য নিজেই স্বীকার করেছে, ও তো বলল ভালোবাসা দিয়ে রাখবে। আসলেই কি কেবল ভালোবাসা দিয়ে সংসার চলে , জীবন চলে ??? না আমি ছেলেটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি কেন, আমার উচিত হচ্ছে না, আমার শক্ত থাকা উচিত, ছেলেটা বললেই হল, আমি আমার মেয়ে কে আমার জেলার বাইরে দিয়ে দিবো না। এতদূরে নতুন পরিবেশে আমার মেয়েটা থাকবে কিভাবে, কিন্তু, কিন্তু বিয়ে তো দিতেই হবে , আমার মেয়েটা সুখে থাকবে তো এই ছেলেটার সাথে, রিস্ক কি একটা নিবো ? আমি জানি আমি রাজি হলে আর কেউ আপত্তি করবে না, সবাই আমাকেই ভয় পায়, তাহলে!!! তাহলে কি ছেলেটা এই কারনেই সরাসরি আমাকেই বলল। কিন্তু আমি যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে এই পিচি ছেলের কাছে আমার হেরে যাওয়া, আমাদের বংসের রীতির বিপরীতে কাজ হবে, না আমি আসলেই আর ভাবতে পারছি না, কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। আজকের রাত টা এত বড় কেন, সকাল হয় না কেন, সকাল হলেই আমি অরনি কে হল থেকে নিয়ে আসবো, না ওকে আর হল এ রাখা যাবে না, কোন সময় পালিয়ে যায় , না আসলেই ঠিক হবে না।
(৪)
এই ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় অরনির বিয়ে হয়, না অরনি পালিয়ে যায় নি, বাবার ঠিক করা পাত্রের সাথেও তার বিয়ে টা হয় নি। হ্যা ওর বিয়ে হয় ওর ভালোবাসার মানুষ আরিফ এর সাথেই, এবং দুই পরিবারের সম্মতি ক্রমেই।
ভালোবাসার ক্ষেত্রে ভালো মন, ভালোবাসা, আর পবিত্রতা যেমন দরকার , ঠিক তেমনি ভালোবাসার মানুষ টি কে নিজের করার জন্যে সৎ সাহস টাও দরকার। এতেই কেবল একটি ভালোবাসার শুভ পরিনয় টা সম্ভব। অবশ্য এর জন্যে প্রতি টা পিতামাতার নিজের ইগো আর বংস টা কেবল না দেখে, নিজেদের সন্তান দের সুখের কথাটাও ভাবা দরকার, সবাই তো ওদের সুখের কথাটায় ভেবে, সারাজীবন সুখে থাকার জন্যে তাদের নিয়ে এত ভাবেন। তবে হ্যা এর জন্যে আমাদের নিজেদের ও ঠিক থাকতে হবে, এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে নিতে হবে যার সাথে সারাজিবন থাকা যায়। নিজের জীবনের বাকী সব বছর কাটানো যায়। কেবল আবেগ দিয়ে ভালোবাসা বা সংসার কখনও হয় না, আবেগ দিয়ে কেবল প্রেম ই হয় যার কোন ভবিষ্যৎ নেই। তাই আগে নিজে নিজেকে জানুন এবং জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার সময় ভেবেচিন্তে সঠিক মানুষ টির সাথেই সারাজীবন এক ঘরে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিবেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন