aso hatta dhoriবিকেল পাঁচটা। বার বার ঘড়ি দেখছে শুভ। আজ বাসায় তাড়াতাড়ি যেতে হবে। শাহাবাগ থেকে নিবে কিছু
গোলাপ ফুল আর নীলক্ষেত থেকে নিবে দুটো হুমায়ুন আহমেদের বই। আহামরি তেমন কিছুই না কিন্তু শুভ জানে এই দুটো জিনিস পেলে কি যে খুশী হবে বৃষ্টি। বৃষ্টি আর কেউ না শুভর বিবাহিতা স্ত্রী। বিয়ের পড়ে আজ তার প্রথম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে বৃষ্টির কয়েকজন বান্ধুবি, শুভর মামা মামি কে দাওয়াত করেছে বৃষ্টি। শুভ কেও বার বার বলে দিয়েছে যেন আটটার মধ্যেই চলে আসে শুভ। সাড়ে পাঁচটা বাজতেই শুভ সব কাজ শেষ করে ফেলল, অফিস থেকে বের হবে এমন সময় অফিসের ম্যানেজার জয়নাল বাবু ডাক দিল, কি ব্যাপার শুভ সাহেব, এত তাড়াহুড়া যে, কোথাও যাবেন নাকি????? এই লোকটাকে শুভ পছন্দ করে না। এর আচার ব্যাবহারে কেমন যেন একটা তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটে উঠে। শুভ বলল জি না কোন তাড়াহুড়া নাই, অফিসের সব কাজ শেষ তাই ভাবলাম যে বাসায় চলে যাই। ওহ আচ্ছা আচ্ছা হাসতে হাসতে বলছেন পরিমল বাবু, তা বাড়িতে তো যাবেন ই আজ না হয় আমাদের কেও একটু বেশী সময়ের জন্য সহ্য করুন। জি???? না বুঝতে পেরে শুভ বলে। জয়নাল বাবু বলা শুরু করলেন আজ অফিসে বড় সাহেব আসবেন এই জন্য আমরা সবাই আজ এখনো অফিসে আর আপনি কিনা???? শুভ বলল বড় সাহেব আসবেন???? কই আমি তো জানতাম না জয়নাল দা। জয়নাল বাবু আবার হেসে বললেন আপনি হলেন গিয়ে অফিসের মামুলী কর্মচারী। এসব খবর আপনাকে জানাবে কে??? শুভ ভেবে পায় না হাসতে হাসতে একটা লোক, আরেকটা লোক কে কিভাবে অপমান করতে পারে। জয়নাল বাবু আরও বলতে লাগলো আপনার চাকরি টা তো পার্মানেন্ট না, এখন যায় তো তখন যায় অবস্থা, এক কাজ করুন বড় সাহেব আসবে আঁটটায়, আঁটটা পর্যন্ত থাকুন, বড় সাহেব আসুক তাঁকে বলে আপনার চাকরি টা পার্মানেন্ট করিয়ে দেই। আমি উনার বিশ্বস্ত কর্মচারী আমি বললে উনি না করবেন না। এই কথা বলার পড়ে শুভর আর কোন কথা বলার থাকে না। ভিতরে ভিতরে ঘামতে থাকে শুভ। নিশ্চয়ই বৃষ্টি অপেক্ষা করবে তার জন্য। পকেট থেকে মোবাইল বের করে শুভ, আছে মাত্র দুটা টাকা, মাসের শেষ দিক তাই পকেটের অবস্থা একটু করুন, বৃষ্টির মোবাইলেও ব্যালেন্স নেই জানে শুভ নয়তো এতক্ষনে কল দিত বৃষ্টি। সাহস করে ফোন দিল এই কথা জানাতে যে তার আসতে লেট হবে। হ্যালো বৃষ্টি???? না বৃষ্টি না দুলাভাই আমি অরিন, কেমন আছেন আপনি??? ওহ অরিন আমি ভালো তুমি ভালো তো???? জি ভাইয়া আমিও ভালো। অরিন একটু বৃষ্টি কে দিবে আপু। বৃষ্টি তো রান্নাঘরে একটু দাঁড়ান দিচ্ছি, একটু তাড়াতাড়ি দাও আপু আমার ওকে দরকার। ওপাশ থেকে বৃষ্টি ফোন ধরে হ্যালো বলতেই পিপ পিপ পিপ। ব্যালেন্স শেষ। কথা টা আর বলা হোল না শুভর। ঘড়ি দেখল শুভ সাড়ে ছয়টা বাজে। এখনো দেড় ঘণ্টা বাকী। কাজ নেই কিছু চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া। মনে মনে হিসেব করছে শুভ স্যার আসবে আঁটটায়, বড়জোর থাকবে আধা ঘণ্টা সাড়ে আঁটটায় রওনা দিলে শাহাবাগ যেতে যেতে বাজবে সাড়ে নয়টা। আচ্ছা পরিমল দা সাড়ে নয়টার সময় কি শাহাবাগে ফুল পাওয়া যাবে???? প্রশ্ন টা করেই মনে হোল ভুল করেছে শুভ। উনি এখন এটা নিয়ে ত্যানা পেঁচাবেন। কিন্তু শুভ কে অবাক করে দিয়ে উনি কিছুই বললেন না। শুভ এবার চুপচাপ অতীতে হারাল। অতীতের স্মৃতি গুলো যেন একেকটা জীবিত প্রান। শুভর এখনো মনে পড়ে টানা দুই বছর ঘুরেছে শুভ তারপর হ্যাঁ বলেছে বৃষ্টি। দুজনের পরিচয় ফেসবুকেই। একবার বই মেলায় দেখা হয়েছিল তাদের। তারপর থেকেই শুভ আঠার মতো লেগেছিল। যেদিন বৃষ্টি শুভ কে তার সব বান্ধুবিদের সামনে ডেকে নিয়ে জানতে চেয়েছিল আপনি কি আমার জন্য কখনো মরতে পারবেন??? ভেবে চিন্তে বলবেন কিন্তু, আমি প্রমান চাইতে পারি। শুভ সাত পাঁচ না ভেবেই বলেছিল হ্যাঁ পারব। কারন শুভ জানে এগুলো কেউ কাউকে প্রমান দিতে বলে না। কিছুক্ষন শুভর মুখের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি বলেছিল এসো হাত ধরি। সেই হ্যাঁ বলাটাই কাল হয়েছিল শুভর জন্য। সম্পর্কের দেড় বছরের মাথায় একদিন বৃষ্টি হঠাৎ করেই ফোন দেয় শুভ কে, ফোনে তেমন কিছুই বলে না শুধু জানায় আর্জেন্ট দেখা করার দরকার। শুভ তখন মাস্টার্স দিবে আর বৃষ্টি সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল। বলে রাখা ভালো যে বৃষ্টি খুবই অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে। কোটিপতি না হলেও লাখপতি আর শুভরাও মুটামুটি সচ্ছল। খেয়ে পড়ে বেশ ভালো আছে। যাই হোক সেদিন বৃষ্টির ডাকে শুভ ক্লাস ফেলে গিয়েছিল। গিয়ে দেখে বৃষ্টির আকাশে মেঘ জমে আছে। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি তার মেঘ দিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। শুভ বলে কি ব্যাপার জরুরী তলব যে????? বৃষ্টি বলে তুমি আজ থেকে দেড় বছর আগে বলেছিলে আমার জন্য মরতে পারবা মনে আছে সেটা???? শুভ বলে মনে থাকবেনা কেন অবশ্যই মনে আছে, কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেন??? বৃষ্টি সে কথার জবাব না দিয়েই বলতে লাগলো ব্যাস, মনে কর আজকেই সেই দিন। বলেই ব্যাগ থেকে প্রায় ত্রিশটার মত ঘুমের ওষুধ বের করল। শুভর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল এই নাও অর্ধেক তোমার আর অর্ধেক আমার। এগুলো এখন আমরা খাব। শুভ কিছুই না বুঝে বৃষ্টির দিকে হা করে তাকিয়েই রইল। তা দেখে বৃষ্টি বড়সড় একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল হা করে কি দেখছ??? শুভ থতমত খেয়ে বলে মরতে আর মারতে চাচ্ছো কেন জানতে পারি???? বৃষ্টি বলে এত প্রশ্ন কেন??? সেদিন তো বলনি যে প্রশ্ন করে যাচাই বাছাই করে তারপর জীবন দিবে??? শুভ বুঝল নিশ্চয়ই কোন বড় সমস্যা না হয় বৃষ্টি এমন করতো না। শুভ আস্তে করে বৃষ্টির মাথায় হাত রাখল, শুভ জানে বৃষ্টির মাথায় হাত রাখলে সে নরম হয়, হোলও তাই। কিছুক্ষন থেমে বৃষ্টি বলা শুরু করল অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার খালাত ভাই এসেছে। এম বি এ করে ওখানেই একটা জব করছে। আব্বু আম্মু মিলে ওই কাজিন এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে। আমি মানা করায় আম্মু বলল যে আমার পছন্দের কেউ আছে কিনা থাকলে যেন বলি,ওরা প্রপোজ নিয়ে গেলে আর আম্মু আব্বুর বিবেচনায় ভালো লাগলে তারা বিয়ে দিয়ে দিবে। একটু থেমে আবার বলা শুরু করল কিন্তু আমি জানি শুভ তুমি এখনো তৈরি না, বিয়ের কথা বললে নানা দোহাই দিবে যে তোমার মাস্টার্স এক্সাম শেষ হয় নি, চাকরি বাকরি কিছু করো না, বিয়ের জন্য মেন্টালি প্রিপেয়ারড না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমার পক্ষে তোমাকে ছাড়া অন্য কেউকেই বিয়ে করা সম্ভব না তাই এই ব্যাবস্থা। কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে গেল বৃষ্টি, শুভ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। এখন আস দুজনে মিলে খাই। শুভ চুপ থেকে বলল এগুলো খাওয়া লাগবে না, চল তোমার বাসায় যাই দেখি কি করা যায়। বৃষ্টির আব্বু আম্মু রাজী হোল না। একটা বেকার ছেলের জন্য একটা এম বি এ করে জব করা ছেলে কে হাতছাড়া করার মত বোকা তারা নন। তারা বৃষ্টির বিয়ে ঠিক করে ফেললো। এদিকে উপায় না দেখে বৃষ্টি আর শুভও বিয়ে করে ফেললো। মানুষ বলে সুখের অশ্রু আর দুখের অশ্রু নাকি একিরকম। কিন্তু না, যেদিন তদের বিয়ে হল সেইদিন বৃষ্টির চোখে যে জল ছিল তাঁকে আলাদা করেই চেনা গিয়েছিল। বিয়ে করে তারা উঠল শুভর মামার বাসায় কারন দুপরিবারের কেউই বিয়েটা মেনে নেয় নি। শুভ বাসা থেকে যা পারে টাকা পয়সা নিয়েছিল, বৃষ্টির কাধে ভারি ব্যাগ দেখে শুভ ভেবেছিল হয়তবা বৃষ্টিও কিছু এনেছে। কিন্তু না এই মেয়ে ঘর থেকে নিয়ে এসেছে ৭৫টা হুমায়ুন আহমেদ এর বই। এই বই ছাড়া নাকি তার চলেই না। শুভর মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গিয়েছিল। রাগ চেপে রেখে বাসর রাতেই শুভ বলেছিল বুদ্ধির ঢেঁকি একটা বউ পেয়েছি। পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে প্রায় নয়টা বাজল। বড় স্যার এলেন ৯টা ১০এ। কিছুক্ষণ থেকে কথাবার্তা বলে চলে গেলেন। জয়নাল বাবু যে কথা বলার জন্য শুভকে আটকে রেখেছিলেন সেটা ঘুণাক্ষরেও বললেন না। সাড়ে নয়টায় শুভ বাসে উঠল। শাহাবাগে নিশ্চয়ই ফুল পাওয়া যাবে না??? নীলক্ষেত ও যেতে যেতে বন্ধ হয়ে যাবে। শুভর ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বাজল। রাস্তায় জ্যামের কথা বাঙ্গালীদের আলাদা করে না বললেও চলে। ভয়ে ভয়ে বাসার কলিংবেল চাপল শুভ। বৃষ্টি এসে চুপচাপ দরজা খুলে দিয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়ল। শুভ কোন কথা না বলেই ভয়ে ভয়ে বাথরুমে ঢুকল, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখল বৃষ্টি কুন্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। আহারে বেচারি। কাজল লেপটে আছে চোখের নিচে, কেঁদেছে নিশ্চয়ই। খায়ওনি। শুভর জন্য প্লেটে খাবার বাড়া। সেটা নিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করল শুভ তারপর রেখে দিল। একবার ভাবল বৃষ্টি কে ডেকে খাইয়ে দেয় কিন্তু সাহসে কুলাল না। খাবার রেখে দিয়ে শুভ বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরাল। আকাশের চাঁদ নির্লজ্জের মত তাকিয়ে আছে তার দিকে যেন বলছে তুমিও আমার মতই, আমার নিজের আলো নেই, তোমারও নেই। শুভর চা খেতে ইচ্ছে করছে। সিগারেট শেষ করে রুমে যাওয়ার জন্য পিছনে ফিরতেই দেখে বৃষ্টি চা নিয়ে এসেছে। শুভ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইল। কি অপূর্ব লাগছে বৃষ্টি কে,আজ কি জোছনা???? কোথায় যেন পড়েছিল জোছনায় মেয়েদের রুপ বেড়ে যায়। মনে চায় বার বার এই মেয়ের প্রেমে পড়ি। বৃষ্টি বলল হা করে তাকিয়ে আছ কেন??? মুখ বন্ধ করো দেখতে বিশ্রী লাগছে। শুভ নরম গলায় বলল বৃষ্টি আসলে হয়েছে কি, এইটুকু বলতেই বৃষ্টি বলতে লাগলো, চুপ কোন কথা না। আমি জানি নিশ্চই কোন জরুরী কাজ ছিল নয়ত আর যাই হোক আজকের দিন তুমি মিস করতে না। অবশ্যই আসতে। ইটস ওকে, আমি কিছুই মনে করিনি। তুমিও এটা নিয়ে মনে কষ্ট রেখো না। শুভর চোখে পানি চলে এলো এত ভালো কেন মেয়েটা???? যে কথা যে সান্ত্বনা শুভর বৃষ্টি কে দেয়া উচিৎ সেটা দিচ্ছে বৃষ্টি শুভ কে। শুভর চোখে পানি দেখে বৃষ্টি বলল তোমাকে না বলেছি কথায় কথায় মেয়ে মানুষের মত কাদবে না??? চোখের পানি মুছ দেখতে বিশ্রী লাগে। শুভ হেসে বলে এতই যখন বিশ্রী লাগে নিজে কেঁদেছ কেন??? বৃষ্টি বলে কই কাঁদলাম??? আমি কাঁদি নি। শুভ বলল আমার জন্য কেঁদেছ তাই না??? বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে বলল তোমার জন্য কেঁদেছি কে বলল?? তোমার জন্য কাঁদতে যাব কোন দুঃখে???? আম্মু ফোন দিয়েছিল তাই কেঁদেছি। আম্মু ফোন দিলে কাঁদতে হয় বুঝি প্রশ্ন শুভর???? আম্মু ফোন দিয়ে কিসব উল্টা পাল্টা বলেছে তাই কেঁদেছি। কি উল্টা পাল্টা বলেছে???? যা বলেছে সেটা তোমার না শুনলেও চলবে জবাব বৃষ্টির। শুভ বলল তুমি কি ভেবেছ না বললে আমি বুঝবো না??? তোমার মা ঠিক ই বলেছে বৃষ্টি তুমি বাসায় চলে যাও। এ জীবন আসলেই কোন জীবন না। আমাকে ফেলে গেলে আমি এত টুকুও অভিমান করব না বৃষ্টি। শুভ লক্ষ্য করল বৃষ্টির চোখে পানি জমতে শুরু করেছে, বৃষ্টি প্রানপনে সেই পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। বৃষ্টি ঝাড়ি দিয়ে বলল চুপ থাক, আমি আমার সিদ্ধান্তে হতাশ ও না আবার দুঃখিত ও না, তাছাড়া আমি কোন সিদ্ধান্তহীনতায় ও ভুগছি না যে তোমাকে পরামর্শ দিতে হবে। আমি বেশ সুখে আছি। এখন ভ্যান ভ্যান বন্ধ করে শুতে চল কাল সকালে অফিস আছে। তারপর থেকে সব ভালোই চলছিল দিনগুলো। রমজান মাস চলছে দু সপ্তাহ পরেই ইদ। বৃষ্টি একটা সমস্যায় পড়ে গেল সামনে ইদ আর ইদের কিছুদিন পরেই শুভর জন্মদিন। বৃষ্টি যদি ইদে শুভ কে কিছু দেয় তাহলে জন্মদিনে দিতে পারবে না, আর জন্মদিনে দিলে ইদে পারবে না এত টাকা তার নেই। কি করবে কি করবে না সেটা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছে। শেষে বৃষ্টি ঠিক করল ইদেই কিছু দিবে শুভ কে কারন শুভ খুব অল্প কিছু টাকা বোনাস পেল ইদে আর সেখান থেকে অর্ধেক দিল বৃষ্টি কে ইদে জামা কিনতে আর বাকী অর্ধেক ঘরে ইদের বাজার আর টুকিটাকি করল। নিজের জন্য কিছুই নিল না। বলল পুরুষ মানুষদের নাকি ইদে কিছু নিতে হয় না আপনজনেরা নিলেই তারা খুশি। অফিসে ২৮ রোজার আগে কোন ছুটি নেই তাই শুভ বলেছে পাশের ফ্ল্যাট এর ভাবীর সাথে গিয়েই শপিং এর কাজ সারতে। পাশের ফ্ল্যাট এর ভাবীর সাথে গিয়ে বৃষ্টি শুভর জন্য শার্ট প্যান্ট কিনল আর নিজে ফিরল খালি হাতে। শুভ বলল তোমার জামা কাপড় কই??? বৃষ্টি বলল আনি নি। অন্য একটা জিনিস এনেছি। বৃষ্টি কে বেশ খুশি মনে হোল। শুভ এদিকে আসই না দেখে যাও কি এনেছি আমি। শুভ দেখল ছোট্ট পাতার মত একটা বস্তু সাদা আর সবুজ পাথরে ঝিকমিক করছে। কি এই বস্তু??? জিজ্ঞেস করল শুভ। এটা একটা লকেট, গলায় পরে, চেইন এর সাথে। শুভ হতাশ হয়ে বলল বৃষ্টি এটা তুমি ইদে পরবে???? একটা ড্রেস কিনা উচিৎ ছিল না???? বৃষ্টি সেদিকে কান না দিয়ে বলল কিছু একটা বলো লকেট টা নিয়ে। শুভ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে বুদ্ধির ঢেঁকি একটা বউ পেয়েছি। এটার চেইন আনলে না??? বিধু বলল চেইন টার দাম ২০০০ টাকা, টাকায় হয় নি তাই ওইটা পরে আনব। শুভ এটা নিয়ে আর কিছু বলল না কারন বৃষ্টি লকেট না ফকেত যাই হোক ওটা কিনে খুব খুশী। অবশেষে ইদ এলো ইদের দিন শুভ টার বাবা মাকে ফোন করায় তারা ফোন কেটে দিল। আর বৃষ্টির পরিবারের একি কথা যে ওই ছেলে কে ফেলে চলে আসলে তারা তাদের মেয়ে কে আবার গ্রহন করতে রাজী আছে।

কিছু দিন পরের কথাঃ
ইদ শেষ শুভর ছুটিও শেষ, অফিস শুরু। আবার সেই চিরাচরিত ১০ টা ৫ টা অফিস। একি রুটের বাস আর বাসায় যেয়ে এক কাপ চা। আগের মত খুবই স্বাভাবিক জীবন যাপন শুভর। কিন্তু উত্তেজনায় বৃষ্টির অবস্থা কাহিল। মাত্র কয়েকটা দিন পরেই শুভর জন্মদিন অথচ বৃষ্টির হাতে একটা টাকাও নেই। মাথায় কিছুই আসছে না বৃষ্টির। নাহ উত্তেজিত হলে চলবে না, ঠাণ্ডা মাথায় রিলাক্স মুডে বসে ভাবতে হবে কি করা যায় যেন নিজের সাথেই কথাগুলো বলছে বৃষ্টি। একটু পরেই শুভ চলে আসবে তাই শুভর জন্য চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথা গুলো ভাবছে বৃষ্টি, চা বানাতে গিয়ে দেখে ঘরে চাপাতা নেই সাথে সাথেই শুভ কে ফোন দিল বৃষ্টি কারন বৃষ্টি জানে এসেই চা খেতে চাইবে শুভ। কিন্তু একি শুভর মোবাইল বন্ধ। এমন তো কখনোই হয় না, ও তো মোবাইল অফ রাখে না। তবে কি কোন বিপদ হোল???? অজানা আশংকায় কেপে উঠে বৃষ্টি, শুভর কিছু হলে ও কি করবে??? কোথায় যাবে??? টেনশনে কাটে অপেক্ষার প্রতি প্রহর। অন্য দিন তো আটটার মধ্যেই এসে পরে আজ কি হোল??? ঘড়ির কাঁটা যখন নয়টায় পা ফেলল শুভ তখনও ঘরে ফেরেনি। বৃষ্টি সিউর যে কোন বিপদ হয়েছে, বৃষ্টি ঘর তালা দিয়ে শুভর অফিসের জন্য বেরুবে এমন সময় শুভ বাসায় আসে, আস্তেই বৃষ্টির জেরার মুখে পরতে হয়, কি হয়েছে, ফোন বন্ধ কেন?? এত দেরী হোল কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। শুভ মুখ অন্ধকার করে বলে আজ সকালে বাসে যাওয়ার সময় ফোন টা চুরি হয়ে গেছে বৃষ্টি মনটা এই জন্যই খারাপ। বৃষ্টিরও মনটা খারাপ হয়ে যায় কারন ইদ ভাঙ্গা বাজারে তদের পক্ষে নতুন ফোন কেনা প্রায়ই অসম্ভব। বৃষ্টি চা বানাতে বানাতে বলতে লাগলো সমস্যা নেই আপাতত তুমি আমারটা চালাও, আমি তো সারাদিন বাসাতেই থাকি আমার ফনের দরকার হয়না খুব একটা। শুভ কোন জবাব দেয় না, চুপ থাকাই যেন একমাত্র কাজ তার।

কিছুদিন পরের কথাঃ
আজ শুভর জন্মদিন সকালে শুভেচ্ছা জানায়নি বৃষ্টি সন্ধ্যায় জানাবে বলে। শুভ অফিস চলে যাওয়ার পরেই বের হয় বৃষ্টি একটা মার্কেটে গিয়ে দুইহাজার টাকা দিয়ে চায়না একটা সেট কিনে শুভর জন্য। সন্ধ্যায় শাড়ি পরে চোখে কাজল দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শুভর জন্য। অন্যসময় হলে ফোন দিত বৃষ্টি কিন্তু এখন তো শুভর মোবাইল নেই যে ফোন দিবে সাড়ে আঁটটায় ফিরে শুভ বৃষ্টি কে দেখেই অবাক হয়ে যায় সুন্দর লাগছে আজ বৃষ্টি কে। বৃষ্টি বলল যাও ফ্রেশ হয়ে নাও আমি চা বানিয়ে আনছি, শুভ বলল দাড়াও বৃষ্টি আজ চা আমি বানাব, বেশ খুশি খুশি লাগছে শুভ কে। শুভ চা বানিয়ে আনল তারা দুজনেই খেল তারপর অভ্যাস মত শুভ বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল, আর বৃষ্টি কে ডাক দিল, বৃষ্টিও সাথে সাথেই চলে এলো যেন বারন্দায় আসার জন্য তৈরিই ছিল শুধু এই ডাকের অপেক্ষাতেই ছিল। বারান্দায় গিয়েই পিছনে কি যেন লুকাল বৃষ্টি, তোমার হাতে কি বৃষ্টি প্রশ্ন শুভর। আমার হাতে যেটাই হোক তোমার হাতে কি সেটা বল উত্তর দিল বৃষ্টি, তুমিও কিছু একটা লুকাচ্ছ আগে ওইটা দেখাও। শুভ আড়াল করার চেষ্টা করতে বৃষ্টি বলে লাভ হবে না আমি কিন্তু দেখেছি হাত সামনে আন তো শুভ ঢং কর না প্লিজ। শুভ হাত সামনে আনতেই দেখল ছোট্ট একটা বক্স। বৃষ্টি বলল আজ তো তোমার জন্মদিন আমাকে গিফট কেন দিচ্ছ??? শুভ বলল আমার জীবনের সব চেয়ে বড় গিফট তো তুমি তাছাড়া ভালবাসতে যেমন কারন লাগে না ঠিক তেমনি ভালোবাসার মানুষ কে ভালবাসা দিতেও কোন অকেশন লাগে না। বক্স টা খুলে খুশী হবার পরিবর্তে বৃষ্টির মুখ ছাই বর্ণের হয়ে গেল কারন গিফট টা আর কিছুই না সেই লকেটের চেইন। শুভ বলল এখন থেকে লকেটটা তুমি সব সময় পরে থাকবে যাও লকেটটা পরে আস। তোমার শখ পুরন হোক। বৃষ্টি মুখ ঝামটা দিয়ে বলল কিসের শখ এতদিনে ওইটা পুরান মডেল হয়ে গেছে তাছাড়া ওইটা কালার ডিস কালার হয়ে গেছে অইগুলা এখন খ্যাতরা পরে, শুভ বৃষ্টির এই আচরনের কোন মানে খুঁজে পেল না। বৃষ্টি নিজের গিফট টা এগিয়ে দিল শুভ দিকে, মোবাইল দেখে শুভর মুখ হাঁ হয়ে গেল। শুভ বৃষ্টি কে জিজ্ঞেস করল তুমি টাকা পেলে কই???? বৃষ্টি বলল পেলাম কই মানে??? আমি জমিয়েছি। বৃষ্টির মিথ্যা সাফ ধরল শুভ। আর দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাল। কঠিন গলায় বলল তুমি কি লকেটটা বিক্রি করে দিয়েছ??? বৃষ্টি নিশ্চুপ। শুভর এখন রাগ লাগছে যে কারনে নিজের মোবাইল টা বিক্রি করল সে, ভাবল বৃষ্টির জন্মদিনে মেয়েটা কেঁদেছে তাই শুভর জন্মদিনে আজ মেয়েটাকে খুশী করবে শুভ টা হোল না, বৃষ্টি শুভর প্লান এ পানি ঢেলে দিল। শুভ বাজখাই গলা করে ধমকে বলল বুদ্ধির ঢেঁকি, গর্ধব নারী কোথাকার কে বলেছিল লকেটটা বিক্রি করতে???? বৃষ্টিও কম যায় কিসে সেও বিরাট সিরাট এক ঝাড়ি দিয়ে বলতে লাগলো বুদ্ধির বিল্ডিং ওয়ালা পুরুষ মানুষ আপনাকে কে বলেছিল মোবাইল টা বিক্রি করতে???? বৃষ্টির এই ঝাড়ি শুনে শুভ মিইয়ে গেল, আর মনে মনে ভাবতে লাগলো মোবাইল বিক্রির কথা বৃষ্টি কি করে জানল??? বৃষ্টি আরও বলল মনে করেন আমি কিছু বুঝি না আমি সেইদিনি বুঝেছি যেদিন মিথ্যে টা বলেছিলেন কারন আপনি বলেছেন সকালে বাস এ যাওয়ার সময় আপনার ফোন চুরি হইয়েছে অথচ সেদিন দুপুরে আপনার সাথে আমার কথা হয়েছে। শুভ নিজে জিবে কামর দিল। আর সেটা দেখে বৃষ্টি তার গলার পাওয়ার বুহুগুনে বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলো আমি তো মিথ্যে ওইদিন ই বুঝেছিলাম শুধু মিথ্যে বলার কারন টা ধরতে পারি নি, আজ লকেটের চেইন দেখে সব ক্লিয়ার হোল, আমি না বুদ্ধির ঢেঁকি তাহলে দুইয়ে দুইয়ে চার কিভাবে মেলালাম???? শুভ বলল দুই দুইয়ে চার হয় না বুদ্ধির ঢেঁকি, দুয়ে দুইয়ে বাইশ হয়। এই কথা শুনে বৃষ্টি শুভ দুজনেই হেসে উঠল, আবার দুজনের চোখও একসাথে ভিজে উঠল। একসাথে হাসতে ও কাদতে পারার ক্ষমতা স্রষ্টা শুধু মানুষ কেই দিয়েছে হয়ত। শুভ বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরল। বৃষ্টিও আদুরে গলায় বলল ভালোবাসি গান টা শুনাও তো। শুভ গান ধরল ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায়, বৃষ্টি শুভ কে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ানোর উদ্দেশে বলল এইটা না তো শফিক তুহিনের ভালোবাসি গানটা গাও। এইবার শুভ ঠিকই ভ্যাবাচ্যাকা খেল কারন এই গান সে জীবনে একবার মাত্র শুনেছে তারপরও বৃষ্টি কে খুশি করার জন্য গান ধরল ভালোবাসি প্রান পাখি ময়না, এর চেয়ে বেশী ভালবাসা যায় না। বৃষ্টি হাসতে হাসতে বলল এই ছাগল লিরিক্স তো ভুল হচ্ছে। শুভ বলে হোক ভুল ইমোশন তো ঠিক আছে। আবার হেসে উঠল দুজনে, যেন পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ তারা। ইট পাথর আর কংক্রিট ঘেরা এই শহরে কত মানুষই তো অভিনয় করে যায়। মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয়, মিথ্যা সম্পর্কের অভিনয়, সুখে থাকার অভিনয়। তেমনি শুভ আর বৃষ্টিও নাহয় করুক কিছুটা সুখী হবার অভিনয় এতে কোন দোষ হয় না এই শহরে।
 
Top