আজ হটাৎ করেই সন্ধ্যারাত মানে ৮টা থেকেই ঝুম বৃষ্টি। এখন রাত্রি ১০টা ৩০, থামার নাম গন্ধই নেই।
love photoকি আজব রে বাবা। ভিজতে ভিজতে ৯টার দিকে বাসায় আসলাম। মাথাটা কোনমতে মুছে নিয়ে বিছানায় সটান হয়ে পড়লেও এখনো ঘুম আসলো না। রাতে খাবার জন্য মা অনেক ডাক দিলেও গেলাম না। এখন একটু একটু খিদা লাগছে। কি করা যায়, খিদা নষ্ট করতে হবে। প্যান্টের পকেটে ২টা বেনসন আছে, ঐটা ধরিয়েই খিদাটাকে মারতে হবে। অনেকটা খুন করার মতো। কিন্তু খিদা তো আর মানুষ না তাই তাকে খুন করলে কারো মনে ঘৃণা জমবে না। বৃষ্টির ভিতর ছাদে উঠে এলাম। হাতে বেনসন সুইচ, মাথার উপর টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। দু’দিন হল জ্বর। কমে আর বাড়ে শালা একবারে সাড়ে না। ধুত! বৃষ্টিতে ভিজবে কিনা সেই কথা ভাবতেই এই জ্বরের কথা মনে পড়লো। চোখ দুটো মাল হয়ে আছে, আজ অবন্তী ওকে দেখে খুবই ভয় পেয়ে গেছিল। বলেছে আমার নাকি সিরিয়াস কোন প্রবলেম হইছে যাতে আমি ডাক্তার দেখাই। ধুর! শালা খাইয়া দাইয়া কাজ নাই ডাক্তার দেখাব। এমনেই কিছু না। জ্বর হইছে ঠিক হয়ে যাবে। বলেই পাশ কেটে চলে আসি। আমি জানিনা মেয়েটা কেন আমাকে নিয়ে এতো ভাবে। যদিও সে আমার আর লাবণ্যর কথা সব জানে, আর এও জানে লাবণ্য ছাড়া কাউকে আমার পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব না। তারপরও জানিনা কেন। সে যাক ওইটা তার মাথা ব্যথা। সারাজীবন কষ্ট পাবে পেল আমি তো আর তাকে বলিনি পেতে। নিজে নিজে আগুন নিয়ে খেললে তো হাত পুড়বেই। আচ্ছা অরে নিয়া এতো কথার মানে কি? এখন এই সময়টা অসাধারণ লাগছে। মাথায় বৃষ্টির পানি, অনেক সাবধানে পানি থেকে হাতের কায়দায় বাঁচিয়ে রাখা সিগারেট, আস্তে আস্তে ধোয়া ছাড়ছি, নিজেকে কল কারখানার মতো মনে হচ্ছে। মিলের বড় বড় চিমনীগুলার মতো, বা ইট ভাটার ঐ বড় বড় চিমনী। যেটাই হোক, এক কথায় অসাধারণ। জ্বরের ঘোরে মাথা ঝিমঝিম করছে। তার উপর আবার নিকোটিনের বিষের জ্বালায় মাথার ভিতরটা দপদপ করছে। লাল চোখটা জ্বলছে, শীতে গায়ে কাঁপুনি ধরে গেছে কিন্তু উঠতে মন চাইছে না। মনে করতে চাই না, তবুও বারবার লাবণ্যর কথা মনে পরে, এই যেমন এখন আবার একবার মনে পড়ল। একটা প্রশ্ন বারবার মনে আসে যখনই ওর কথা মনে আসে, আচ্ছা গায়ের রংই কি সব? একটা মানুষের, পরিচিতি কি গায়ের রং দিয়েই গড়া? মাথাটা ধরে আসে, মনে করতে চাইনা, কিন্তু তবুও মনে পরে। তার টানা টানা দীঘির জলের মতো টলমলে চোখ। আমি কোন সাহিত্যিক না, তাই সঠিক উপমা জানিনা। বা আদৌ দীঘির জলের মতো কারো চোখ হয় কিনা? আমি তো তার সেই চোখেই ডুবে মরেছি। মেয়েটার কি ছিল না। সব ছিল শুধু গায়ের রংটাই একটু ময়লা, তাতেই যত দোষ। না তাকে আর আমার আপন করা হয়না। লাবণ্য এখন অনেক দূরে। বাসা থেকে কিছুতেই মেনে নেয় না, কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। আর তাই লাবণ্য নিজেকে অপরাধী ভেবে কি একটা কাজ করলো? আমাকে ছেড়ে অন্য আর একজনকে বিয়ে করলো? আমি ঘৃণা করি তাকে, ভুলতে চাই, কিন্তু পারিনা। সেই থেকে জীবনটা এমন হয়ে গেলো ছন্নছাড়া। বাসা থেকে অবন্তীকে পছন্দ করলো, মেয়েটা ভালো কিন্তু কেন জানিনা আমার বিতৃষ্ণা এসে গেছে এই সম্পর্কের উপর। আমি আর চাইনা কোন সম্পর্কের মায়াজালে বাঁধা পরতে। মাঝে একদিন লাবণ্য ফোন করেছিলো অনেক অনুরোধ করেছে যেন অবন্তীকে বিয়ে করে সুন্দর সংসার গড়ি, আর এও বলেছে সে সুখে আছে। রাগ হচ্ছিলো খুব। নিকুচি করি তোমার সুখের, নিকুচি করি এই সমাজ এই সংসারের। ফোনটা কেটে দেই আর কখনো কথা হয়নি ওর সাথে। ঐ ঘটনার পর থেকেই জীবনটা আরও এলোমেলো হয়ে যায়। বাসায় কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কথা বলতে গেলেই মনে হয় এদের জন্যই আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছি। আমার ভালোবাসার মানুষটার গায়ের রং কালো হতে পারে, কিন্তু মনটা পরিষ্কার, ধবধবে সাদা। কিন্তু তোমাদের গায়ের রং পরিষ্কার হলে কি হবে ভিতরটা কুচকুচে কালো, আঁধার অমাবস্যার রাতের মতো।তাই ধিক তোমাদের আর তোমাদের মতো সবাইকে যারা আমার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি। আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে পারেনি। সবাই বর্ণবাদী। সবাই খারাপ। শুধু আমার ভালোবাসা বর্ণহীন, বর্ণহীন বর্ণালীতে আঁকা, যা হারিয়ে গেছে সময়ের জলস্রোতে, আমি ধরে রাখতে পারিনি। ক্ষমা করো আমাকে।
 
Top