আজকের ঘোর লাগা মায়াবী চাঁদটা যখন সন্ধ্যে নামার একটু আগেই আকাশ ছুঁল, তখন ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলা আনমনা আমি থমকে দাঁড়িয়েছিলাম রাস্তা পেরোতে গিয়ে, অযথাই বুঝি। হরতালের মতো দিনে নিজেকে যখন রাজপথের মাঝ দিয়ে হেঁটে চলা ভবঘুরে মনে হয়, আর মনে হয়, এই তপ্ত রোদের আড়ালে কোথাও তোমার চোখের মায়ার ভিজে আসে শহরটা আর শহরের মানুষগুলো, তখনই ইচ্ছে জেগেছিলো হঠাৎ করে, তোমাকে যে আমার কিছু বলার ছিলো মেয়ে।আমাকে বলতে পারো, ঠিক কতগুলো সংখ্যা একসাথে করলে বিশ হাজার হয়? সংখ্যা নিয়ে আমার ধারণা খুব কম, ছেলেমানুষ বলেই কী না জানি না, কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই অনেক বড়ো কিছু নিয়ে ভাবতে গেলেই মাথার ভিতর কেমন জানি যন্ত্রণা করে উঠে মেয়ে। কিন্তু আমি ভেবে বের করেছি জানো? আমি যদি বিশ হাজার কাগজ কিনি, তবে আমার বাসা থেকে তোমার বাসা পর্যন্ত একটা কাগজের রাজপথ তৈরি করে ফেলতে পারবো জানো? যদি বিশ হাজার গোলাপ কিনে তার পাঁপড়ি তোমার বাসার সামনে এনে রাখি, তবে তোমাদের বাসার দরজাটা আর দেখাই যাবে না, যদি বিশ হাজার জোনাক পোকা একসাথে করে ফেলতে পারি, তবে রাতের বদলে হঠাৎ করেই দিন চলে আসবে সেখানে, এমনই ভয়ংকর বিশ হাজার সংখ্যাটি।
মাত্র বছর ঘুরে এলো, হূমায়ুন আহমেদের "নির্বাসন" নামের বড়গল্প কিংবা উপন্যাসে ভর করে তুমি প্রথম লিখেছিলে চিঠি। এই অদ্ভুত সময়ে এখন আর কেউ চিঠি লিখে না, কেউ আর কথা বলে না, এখন যে শুধুই ব্যস্ততা। আমরাও তো আলাদা নই। তাই ব্যস্ততায় আমাদের চিঠি লিখা কমে এসেছিলো অনেকখানি, আমরা সময় করে উঠতে পারতাম না, ভীষণভাবে বেঁচে থাকা এই আমরা দুজন একসাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে থাকলাম নিয়ত, এতোগুলো মাসের চিঠি লিখালিখি, কিংবা আরেকটু বেশি সময়ের পরিচয়, তবু কথার তো শেষ নেই। আর তাই, আজকে হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম তোমার আমার ২০০০০ মেসেজ পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো এরপর থেকেই, খুব বেশি মনে হচ্ছিলো তোমাকে সাথে করে এক ছুটে কোন এক খোলামাঠে চলে যাই, আজকের ভয়ানক ধরণের সুন্দর চাঁদটাকে সাক্ষী করে তোমার কপাল ছুঁয়ে যাই ভালোবাসায়, তুমি অল্প চমকে উঠে আমাকে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরবে, তোমার চুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে রেখে আস্ফুটে তোমার কানে কানে বলবো, “রাজকুমারী, এই যে একটা জীবনে তুমি আমার কাছে এসেছো, এমন করেই হবার কথা ছিলো গো মেয়ে, আমার তোমাকে এমন করেই পাবার কথা ছিলো গো মেয়ে...
আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামুক, ভিজে একসা হয়ে যাক সবকিছু, আমি তোমার আড়াল হবো, ঝড়ো হাওয়া এসে সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাক, আমি তোমার শক্ত করে ধরে রাখা আশ্রয় হবো, বিশাল ঢেউ এসে আর সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাক, আমি তোমার জড়িয়ে ধরা পাহাড় হবো, আমি পাগলাটে, আমি ছন্নছাড়া, আমি আসলে কিছুই না একটা, কিন্তু শুধু তোমার পাশে এলেই আমি অন্য কেউ, আমি ভীষণ রকমের বাচ্চা একটা ছেলে, আবার ভীষণ রকম ক্ষেপে যাওয়া অদ্ভুত একজন, আমি ভীষণ রকম ছেলেমানুষ, আবার তোমাকে আগলে রাখা একজন প্রহরী বুঝি......”
জানো, আজ তুমি আমার সাথে দেখা করতে এলে, আজকে আমি তুমি মুখোমুখি বসে রইলাম অনেকটাক্ষণ, আমি কখনো কল্পনা করি নি এমন করে ঘণ্টার পর ঘন্টা ভালোবেসে কথা কিংবা না কথায় অহর্নিশ ডুবে থাকা যায় সময়কে না জানিয়ে, তোমাকে যখন হঠাৎ করেই আলতো করে তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম, ভীষণ রকম মায়া হচ্ছিলো তোমার জন্য।
স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম তোমার খুব ইচ্ছে করছে চোখটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেতে। এমন যদি হতো, আমার অনেক ক্ষমতা থাকতো, আমি আজকের ঢাকাটা কিনে নিতাম, আর সব্বাইকে ঘুম পাড়িয়ে দিতাম, তুমি ঘুমোতে, আমি শুধু তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম, সৃষ্টিকর্তাকে বলতাম, একটাই তো জীবন, আমায় এই মেয়েটির পাশে রেখো আল্লাহ, আর তো কিছু না......
জানি না, মনে হচ্ছে আজ বুঝি তোমার নতুন করে জন্ম হলো আমার জীবনে, আজ বুঝি আমি তোমাকে আরেকটু আমার করে পেলাম, রাজকুমারী, আমি এমন পাগলাটে একটা সময়েই বেঁচে থাকবো সর্বদা, আমার বড়ো হতে ভালো লাগে না, আমার অনেক হিসেব-নিকেশ আর ছকে বাঁধা জীবন ভালো লাগে না গো, আমি ঠিক ঠিক একদিন তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো, সব কিছু ছেড়ে এমন একটা অদ্ভুত সময়ে, যেখানে তোমাকে আমাকে এমন করে খুঁজে দেখার দরকার হবে না কারো, আমি তুমি আর অগুনতি সময়ে বেঁচে থাকা অসংখ্য স্মৃতি......
আমি স্বপ্ন দেখি , ভীষণ রকম, ভীষণ রকম। তুমি আমার পাশে রবে, তুমি তুমি তুমি তুমি, তুমি আমার পাশে রবে..আমার পাশে এখন তোমার দেয়া বই, আমার প্লেলিস্টে বাজছে তোমার দেয়া গান, আমার সামনে তোমার দেয়া ডায়েরী, তোমার তুলে দেয়া ছবি, আমি কোথায় যাবো গো এসব ছেড়ে বলো...
তাই পণ করেছি, এই একটাই জীবনে, তোমাকে আকড়ে ধরবো ভীষণ ভালোবেসে, ভীষণ রকম শক্ত করে জড়িয়ে রাখবো তোমাকে... কিংবা কোন এক রাতে দেখো, ঠিক একটা পাখি হয়ে যাবো, এই ইট কাঠ পাথর ছেড়ে আমি উড়াল দেবো তোমার সাথে, আমি তোমার সাথে হারিয়ে যাবো অদ্ভুত একটা সময়ের মাঝে......
এলেবেলে এই লিখাটা তুমি যখন পড়বে আমি জানি না আসলে কী ভাববে তুমি, কিন্তু সত্যি কথা, এই লিখাটার উপর ব্যক্তি আমার কোনই হাত ছিলো না, নিজের মনেই লিখে গেছে কেউ একজন, আর আমি এক বিন্দুও বাঁধা দেই নি...কিংবা দিতে চাই নি, কিংবা পারি নি......
ইতি, পুরোই অদ্ভুতুড়ে আমি
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন