ভাললাগার গল্পদুষ্টামীর শাস্তিস্বরূপ শুভকে পঞ্চাশবার কানে ধরে উঠবস করতে দিয়েছে তার
মা ।কিন্তু উঠবস করতে গিয়েও সে তার মুখের দুষ্ট হাসি ফেলতে পারছে না ।সে
মুখ দিয়ে কান্নার আওয়াজের মত শব্দ বের করতে চাচ্ছে কিন্তু তার চোখে মুখে
হাসির আভা ঠিকই থেকে গেছে ।মনে হচ্ছে, সে ব্যাপারটিতে খুব মজা পাচ্ছে
।হঠাত্‍ তাদের কলিংবেল বেজে উঠলো ।শুভ বুঝে গেছে তার আব্বু অফিস থেকে
ফিরেছে; মানে আজকের মতো তার শাস্তি এখানেই শেষ ।সে তাড়াতাড়ি গিয়ে আব্বুর
পেছনে লুকিয়ে পড়লো ।এটাই শাস্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় ।শুভ'র মা
সুস্মিতা তার কঠিন মুখ আর ধরে রাখতে পারলেন না ।তিনি হেরে যাওয়ার ভঙ্গিতে
মুচকি হেসে বললেন,"আজকের মতো বেঁচে গেলে, যাও ব্রাশ করে ঘুমিয়ে পড়...''
.
.
শুভ এবছর ক্লাস থ্রির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে ।এবার ক্লাস ফোরে উঠবে ।এখন
তার স্কুল বন্ধ ।সারাদিন বাসায় বসে বসে কম্পিউটারে গেম্স খেলা এবং
দুষ্টামী করা ছাড়া আপাতত তার কোন কাজ নেই ।শুভ'র দুষ্টামীতে সুস্মিতা
বিরক্ত হয় বটে কিন্তু ভাল কিছু করলে আদরে বুকে জড়িয়ে ধরতেও তিনি ভুল করেন
না ।আর বিরক্ত না হয়েই বা কি করবেন, বাড়িতে কোন কাজের বুয়া নেই, সব কাজ
তাকেই করতে হয় ।সারাদিন বাসায় মা-ছেলে দুজন ছাড়া কেউ থাকেনা ।শুভ'র বাবা
আসিফ সাহেব ব্যাংকে চাকরি করেন ।তাঁর ফিরতে ফিরতে রাত ৮-৯ টা তো বেজেই
যায় ।তিনি ছেলের দুষ্টামী পছন্দ করেন এবং প্রশ্রয় দেন ।তার মতে এই বয়সে
দুষ্টামী না করলে করবেই বা কখন? মাঝে মাঝে তিনি ছেলেকে নিয়ে
শিশুপার্কে-চিড়িয়াখানাও যান ।
.
.
শুভ আজ সকাল থেকেই কম্পিউটারের সামনে ।নতুন একটা গেম্স পেয়েছে সে ।সেটা
খেলতে এত মজা লাগছে তার ! দুপুরের ভাত খেতে ডাকলে সে অনেকটা সোহাগের সুরে
বলে,"মামুনি আমার হাত এখন গেম খেলায় ব্যস্ত ।তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দাও
।অগত্য সুস্মিতাকে নিজহাতে খাইয়ে দিতে হলো ।বিকেল ঘুম থেকে উঠে সুস্মিতা
দেখে শুভ তখনো কম্পিউটারের সামনে ।সে অনেকটা রাগান্বিত ভঙ্গিতে শুভ'র
রুমে ঢুকে বলল,"শাস্তি দেওয়া শুরু করব নাকি কম্পিউটার অফ করবে? তোমাকে
কতবার বলেছি কম্পিউটার সামনে বেশীক্ষণ বসলে চোখ বিড়ালের মত হয়ে যায় ।আজকে
আবার যদি গেম খেলতে বসো তাহলে মারতে মারতে আমিই তোমাকে বিড়াল বানিয়ে দেবো
।"
শেষের কথাটা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো ।সুস্মিতাও তার কঠিনমুখ আর ধরে রাখতে
পারল না ।কারণ বেশীক্ষণ কম্পিউটারের বসলে চোখ বিড়ালের মত হয়ে যায় এসব কথা
ছোট ছেলেদের ভয় দেখানো কথা ।বাস্তবে এরকম হয় না ।
.
.
বিড়ালের চোখের কথা শুনতেই শুভ'র মনে পড়ে গেল তাদের পাশের ফ্ল্যাটের লাকি
আপুর কথা ।তিনি চোখে লেন্স লাগিয়ে চোখ একেবারে বিড়ালের মত করে ফেলেছেন
।লেন্স লাগানোর পর থেকে সে লাকি আপুকে 'বিড়ালী আপু' ডাকে ।তিনি
বলেন,"বিড়ালের চোখ অনেক দামি ।বিভিন্ন নায়িকা লেন্স লাগিয়ে চোখ বিড়ালের
মত করে ফেলে ।" এসব কথা সে তার লাকি আপুর কাছ থেকেই শুনেছে ।মনে মনে
শুভ'র দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল ।তার ধারণা, এই আইডিয়াটা কাজ করলে তার মা
পুরো চমকে যাবে ।
.
.
শুভ ইচ্ছে করেই রাত আবার গেম খেলতে বসে ।যাতে তার মা তাকে আবার বকা দিতে
আসে ।শুভ'র প্ল্যান কাজ করলো ।কিছুক্ষণ পর সুস্মিতা এসে শুভ'র পিঠে ঠাস
করে কয়েকটা চড় বসাল ।সাথে সাথে শুভ 'ম্যাঁও ম্যাঁও' বলে পিছনে ফিরলো
।সুস্মিতা ভয়ে সাথে সাথে একপা পিছিয়ে গেল ।ছেলে কি সত্যি বিড়াল হয়ে গেলো
নাকি? একেবারে বিড়ালের মতই চোখ, মুখের দুপাশে কয়েকটা গোফ, মুখে বিড়ালের
মতো ডোরাকাটা রং করা ।সুস্মিতা সম্বিত ফিরে পেয়ে আসিফকে ডাকলো ।আসিফ এসে
ডাকলো এই শুভ..!!
শুভ আবার বলে উঠলে 'ম্যাঁও ম্যাঁও'
.
.
শেষে শুভ অবাক করে দিয়ে বলল,"মামুনি তুমি কি সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে
গিয়েছিলে? এই বিড়ালের লেন্স আমি লাকি আপু থেকে ধার নিয়েছি ।তোমাকে চমকে
দেওয়ার জন্যে..."
সুস্মিতা তখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ।সে চুপ করেই আছে ।আসিফ
ছেলের বুদ্ধি দেখে বুকে জড়িয়ে ধরল ।শুভ লক্ষ্য করলো ইতোমধ্যে সুস্মিতাও
এসে তাদের জড়িয়ে ধরেছে ।শুভ দেখল তার মায়ের বুক থেকে এক প্রকার মৃদু
সুগন্ধ বের হচ্ছে ।পৃথিবীর সব মায়ের বুকই কি এরকম?
আহ্...কি মধুর সেই গন্ধ!!
 
Top