পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে মেয়েটির বসতি, ভারতীয় বংশদ্ভূত। হঠাৎ একটি সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছে সে। মেয়েটি দেখতে খুবই ছোটখাটো গড়নের। কোনরকম টেনেটুনে তিন ফুটে নেয়া যাবে। বাদামি পাড়ের পোশাক পরা মেয়েটি অনেকটা লাজুক আর অতিশয় নম্র স্বভাবেরও। বয়স বেশি হলে পাঁচ হবে।
সমস্যা হলো, ছোট্ট এই মেয়েটির পেট ভয়ঙ্কর রকম ফোলা-ফাঁপা। হাসপাতালের ডাক্তাররা কিছুই ধরতে পারছিলেন না। তারা ভাবলেন, বুঝি অন্য কোন অদ্ভুত ঘটনা। তবে অনেকেই মনে করেন, এই ফুলে যাওয়ার কারণ তার ওপর ভূত আছর করেছে। মেয়েটি তাই হাসপাতালটির ডাক্তার সার্জন জেরাল্ডো লোজাদোর কাছে এই ভূত তাড়ানোর মিনতি করলো।
ডাক্তার লোজাডো ভেবেছেন, ভূতের আছর তো আর কিছু না, মেয়েটির পেটে হয়ত টিউমারের মত কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনা মিথ্যা করে দিয়ে লোজাডো যখন পরীক্ষা করলেন আর বিস্ময়করভাবে দেখলেন, এই ছোট্ট মেয়েটিই কিনা আট মাসের অন্ত:সত্ত্বা! অনাকাঙ্খিত হলেও লিনা মেদিনা নামের এই মেয়েই এখন নিজেই বিশ্ব রেকর্ড গড়ল। সে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠতম মা।
ঘটনাটি বহু বছর আগের হলেও এতদিন প্রকাশ পায়নি। সম্প্রতি মিডিয়ায় উঠে আসে বিষয়টি। ডেইলি মেইলসহ ইউরোপের বিভিন্ন গণমাধ্যমে লিনার ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।
লিনার তখন বয়স ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে হবে। এমন একটা সময়ে ১৯৩৯ সালের ১৪ মে সিজারিয়ানের সাহায্যে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন লিনা। তার শ্রোণী সে সময় খুবই সংকোচিত ছিল। সিজার করা প্রায় অসম্ভবই ছিল।
লোজাডো জানান, তার সিজারের ঘটনাটি ছিল একেবারেই ব্যাতিক্রম। এত অল্প বয়সে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছে ভাবাই যায় না। অথচ সে সময় তার স্তন বাচ্চার জন্য সুগঠিত হয়নি। শ্রোণী একেবারেই সংকুচিত ছিল। শেষ মুহূর্তে তার স্তন, শ্রোণী কিছুটা খুলে যায়। সন্তান লালন পালনের জন্য স্ফীত হয়।
জন্ম দেয়ার পর লিনার ছেলে জিরাডোর ওজন তখন ২.৭ কেজি। তবে জিরাডো বিশ্বাস করত, তার মা লিনা তারই বোন। কিন্তু যখন তার বয়স দশ হল, তখনে জিরাডো সত্যি ঘটনাটা বুঝতে লাগল। তবে দু:খের বিষয় হল, হাড় বাঁকা হয়ে জন্ম নেয়ার কারণে ৪০ বছর বয়সেই জিরাডো মারা যায়।
কিন্তু লিনার এভাবে অন্ত:সত্তার হওয়ার পেছনে কারণ কি, তা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত নয়। বহু অনুসন্ধার করার পরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
লিনার চিকিৎসকরা জানান, যে বয়সে লিনার এই ঘটনাটি ঘটে, সে সময় সে কিছুই বুঝতে পারত না, বুঝাতেও পারত না।
লিনার সিজারিয়ান ডা. এসকোমেল জানান, ও বিষয়টি “যথার্থভাবে বুঝাতে পারত না। তিনি বলেন, “সে নিজে এতটা বুঝের হয়ে ওঠেনি তখনও। তারমধ্যে তখন এতটুকু সচেতনতা তৈরি হয়নি যাতে এ ধরনের কিছু তার নিজের কাছে বোধগম্য হতে পারে।”
তবে, লিনার এ ঘটনার জন্য তার বাবাকে জোর সন্দেহ করা হয়েছিল। লিনাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ তার বাবাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে তার বাবা ছাড়া পেয়ে যান।
কিন্তু লিনার চিকিৎসকরা পুরাপুরি নিশ্চিত, লিনা কোন অনৈতিক এবং অসৎ আচরণের শিকার হয়েই অন্ত:সত্তা হয়। তারা বিভিন্ন মেডিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে আসেন।
পরে লিনা রাউল জোরাডো নামের একজনকে বিয়ে করেন। ১৯৭২ সালে তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। লিনা এবং রাউল এখন পেরুর লিমা শহরে বসবাস করছেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন