কিভাবে প্রেম হবে
ছোটবেলায় অবশ্য বলতাম, আমি কোনোদিন বিয়ে করব না। আস্তে আস্তে যখন বড় হলাম, দিনদুনিয়া বুঝতে শিখলাম, তখন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম, না, বিয়ে আমাকে করতে হবেই! আর তখন থেকেই বিয়ে নিয়ে আমার অনেক চিন্তা ভাবনা শুরু হলো।

আমরা সাধারনত দুই ধরণের বিয়ের সাথে পরিচিত। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এবং লাভ ম্যারেজ।

আপনি কোন ম্যারেজ করবেন?? ভাবতে থাকুন। ব্যক্তিগতভাবে, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ব্যাপারটাকে আমি মেনে নিতে পারি না। আমার মতের পক্ষে আমার যুক্তি আছে।

ছোটবেলা থেকে গুরুজনেরা আমাকে বলেছেন, “মেয়েদের সাথে খুব একটা মিশবা না। ভদ্রতা করে দু একটা কথা বলবা। কিন্তু বেশি ঘনিষ্ট হওয়া যাবে না।”

অথচ, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের সময় কী হচ্ছে? সেই গুরুজনেরা একটা অচেনা মেয়েকে আমার ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন! এমনকি তখন তারা মনে মনে প্রার্থনা করা শুরু করছেন, ওদের দুইজনের মধ্যে খুব মিল মহব্বত হয়ে যাক!

ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। আমি একটা কাগজে স্বাক্ষর করে দিলাম। আর সাথে সাথেই গুরুজনেরা তাদের এতদিনের উপদেশবানী ভুলে অজানা অচেনা দুইটা ছেলেমেয়েকে এক করে দিলেন। দুজনার মধ্যে “মিল মহব্বত” তৈরী করার জন্য ঘরের দরজাও বন্ধ করে দিলেন।

আচ্ছা, ওটা তো আমার নিজের ঘর। সেখানে নতুন একজন মানুষ ঢুকেছে। নিজের আপন পরিবেশে আমার খুব বেশি অস্বস্তি লাগবে না। আমি সহজেই মানিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ঐ মেয়েটার কেমন লাগবে একবার ভেবে দেখেছেন?? অচেনা পরিবেশে অচেনা মানুষের সাথে। যে মেয়েটা সারাজীবন ইভটিজারদের ঝামেলা সহ্য করে এসেছে, সেই মেয়েটা কিভাবে নিশ্চিত হবে যে আমি খুব ভদ্রলোক?? এই ভরসা তাকে কে দিবে?? আরো কাহিনী আছে, বিয়ের আগে তাকে আবার বলে দেয়া হয়েছে, “বাসর রাতে স্বামী যা করতে বলবে, তাই করবা। স্বামীর আদেশ অমান্য করা মহাপাপ।” ভেবে দেখুন, মেয়েটার মনের অবস্থা তখন কেমন হয়।

এভাবে আর যাই হোক, বন্ধুত্বপূর্ণ সুস্থ সম্পর্ক তৈরী হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েটা নিজেকে ঐ পরিবারের আশ্রিতা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। হ্যা এটা ঠিক, পরবর্তীতে অনেক স্বামী স্ত্রীর মাঝেই একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বিয়ের দিন, বিয়ের রাত এবং বিয়ের পরবর্তী কয়েক দিন বা কয়েক বছর একটা মেয়েকে যে মানসিক যন্ত্রনা, অপমান সহ্য করতে হয়, তার দায়ভার কে নেবে?? ভদ্র পরিবারে এই যন্ত্রনা, এই অপমান অদৃশ্য রয়ে যায়, শুধু মেয়েটাই বোঝে। আর অভদ্র পরিবারে এটা তো শারীরিক নির্যাতনের পর্যায়েও চলে যায়। (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে তা খুব খুব কম)

“মিল মহব্বত” তৈরী করতে ঘরের দরজা আটকে দিতে হয় না। শুধু দুটো হৃদয়ের স্বাধীনতা থাকলেই হয়।

লেখার এই পর্যায়ে এসে পাঠক হয়তো আমাকে ভুল বুঝছেন। হয়তো ভাবছেন যে আমি প্রেম করে বিয়ে করতে বলছি? না, প্রেম করেই যে বিয়ে করতে হবে এমনটা আমি বলছি না। আমি চাই, বিয়ের আগে অন্তত ছেলেটা আর মেয়েটা একে অপরের বন্ধু হোক। যদি সেটা পারিবারিকভাবে হয়, তাহলে তো খুবই ভালো। আবার কোনো ছেলে মেয়ে যদি নিজেই ভালোলাগার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে নিতে পারে, তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে, সমস্যা শুধু তখনই, যখন দুজন ছেলেমেয়ে বাবা মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করবে। পালিয়ে বিয়ে করার মত একটা ভুল কাজ কখনোই সুখী জীবনের সুচনা করতে পারে না। (আবারো বলছি, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে।
 
Top