প্রেম

নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ লাগছে । কেনো যে আসিফের মতো এমন একটা রোবটকে ভালোবাসতে গেলাম ! ওর জন্য একটা তৃতীয় মাত্রার রোবটী দরকার ছিল ; যার মধ্যে ইমোশনের বালাই নেই । তা না হয়ে তার কপালে কি না আমি জুটলাম ? পারফেক্ট রবীন্দ্রনাথের নায়িকা টাইপ । সিম্পল হিন্দি সিরিয়ালের স্যাড সিনেই যার চোখে জল গড়ায় তার ইমোশনের আর কোন ব্যখ্যার প্রয়োজন বোধহয় নেই ।
ঐদিন একটা গল্প পড়ে অনেক কেঁদেছিলাম । মেয়েটা শেষে লিউকোমিয়ায় মারা যায় । তিন চার মাসের মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ছেলেটা বিয়ে করে মেয়েটাকে । জানটা দিয়ে আগলে রাখে । এতো ভালোবাসা নিয়ে আমার মরতেও আপত্তি নেই ।
এই ব্যপারটা সারাক্ষণ মাথার মধ্যে ঘুরছিলো । গভীর আবেগে ডুব দিয়ে সেদিন রাতে আসিফকে যখন বললাম ,
আচ্ছা আসিফ , ধরো , আমার অনেক বড় একটা অসুখ হইলো । কয়েক মাসের মধ্যে মরে যাবো । তখন যদি ঐ কয়েক মাসের জন্য ই তোমাকে আমি বলি আমাকে বিয়ে করতে , করবা তুমি ?

কেমন বড় অসুখ ? ক্যন্সার ট্যন্সার ? নাকি এইডস ?

সবকিছুতে ফাইজলামি করো ক্যান ? ভাল লাগেনা ।

ওকে । আমি সিরিয়াস । বলো । (গলা নামিয়ে) আসলে কিছু হইছে নাকি ? ঝেড়ে কাশো ।
দিলো আমার আবেগের ১৪টা বাজায়া । কেমন লাগে ? রাগ কন্ট্রোল করে শান্ত হয়ে বললাম আবার ,

ঝেড়ে কাশার কি আছে ? এমনি জানতে চাইলাম ।

এমনি ভালো কিছু জানতে চাওয়া যায় না ? এমন উদ্ভট প্রশ্ন কেনো ?

আচ্ছা , যাও । একটা ভালো প্রশ্ন করবো । আগে বলো বিয়ে করতা ?

ধূউউরো , যত্ত আজাইরা প্রশ্ন...

থাক , কিছু বলতে হবে না ।

গুড । এবার ভালো প্রশ্নটা করে ফেলো ।

দরকার নাই ।

অবশ্যই দরকার আছে ।
একটু আগের কথা ভুলে গিয়ে আবার স্বপ্নের চোরাবালিতে ডুব দিলাম ।

আমরা কবে বিয়ে করবো ?

বিয়ে ? ১০বছর , ১০ বছর পর ।
মানে ? ৫ বছর আগেও তো এই কথা বলছো । বলো নাই ?

বলছি ই তো । ভদ্রলোকের এক কথা ।

আমি মরলে তারপর আমারে বিয়ে কইরো ।

ইনশাল্লাহ ।
বিশাল একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রণেভঙ্গ দিলাম সেদিন ।
ওর কি মনে পড়ে শেষ কবে আমার হাতটা ধরেছিলো ও ? শেষ কবে বকুল ছড়ানো পথে হেঁটেছিলাম দুজন মিলে ? কানের কাছে ফিসফিস করে শেষ কবে বলেছিলো ও 'ভালোবাসি ' ? মনে পড়ে ওর ? আমার তো পড়ে না ।

সবসময় এতো ব্যস্ত থাকে ও । ১০ বার ফোন দিলে একবার ধরে । ধরেই 'খুব ব্যস্ত । পরে কথা হবে ।' শেষ । আমাকে কিছু বলার সুযোগই দেয় না । কোন প্রয়োজন কিংবা সমস্যা - কিছু বলতেই পারিনা । 24 আওয়ার নিউজ চ্যানেলের মতো বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ডরা যখন ফোন দিয়ে তাদের খোঁজখবর নেয় তখন এতো খারাপ লাগে ।
কিছু বললেই তার রেডী এন্সার , 
'প্রতিদিন এতো কথা বলার কি আছে ? আমার এতো আজাইরা সময় নাই । ভাল না লাগলে যাও গিয়া । আমার কিছু করার নাই ।'
প্রায়ই কথাটা শুনতে হইতো , তবু যতোবার শুনতাম বুকটার ভিতর কেমন করে উঠতো । কনফিউসড হয়ে যাইতাম । সত্যিই কি আমাকে ভালোবাসে ও ? না কি আমি ওর গার্লফ্রেণ্ড জাস্ট টু শো ?

কাছাকাছি বাসা তবু দেখা পাওয়া মুশকিল । যাও একটু দেখা করতে আসে মাঝেমাঝে , ১৫/২০ মিনিট পরই যাও , বাসায় যাও । দেরী হয়ে যাচ্ছে । মা কি ভাববে ? বলতেই থাকবে । অবাক হয়ে ভাবতাম , সবাই ভালোবাসার মানুষকে কিছুক্ষণ বেশী কাছে পাওয়ার জন্য কত রিকোয়েস্ট করে আর ও কিনা ...
হঠাত্‍ ফোন দিয়ে বলবে , শোনো , আমার এক্সাম । নেক্সট এক মাস কথা বলতে পারবোনা । বাই ।
এক সময় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো আমার । অসহ্য লাগতে শুরু হলো তার অবহেলা টুকু । এতোটা নির্লিপ্ত মানুষ হয় কি করে ! ওর অবহেলা আমাকে ওর মতোই পাথর করে দিলো । সারারাত কেঁদে গিয়ে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম । চুপচাপ শুনে গেলো ও । একটা বার আটকালো না । মানা করলো না । রাগে জিদে উঠে চলে এলাম ।
দুইটা মাস কাটলো তার পর । একটা খোঁজ ও নেয়নি সে ।

অথচ এখনো আমার রাতে ঘুম হয়না । দু ঘন্টা পরপর এফবিতে ঢুকি তার খবর জানার জন্য ।
তোমাকে প্রচণ্ড মিস করি জানো ? প্রতিটা দিন ভাবি আজ হয়তো ফোধ দিবে । কিন্তু নাহ । একবার যদি বলতো 'ভালোবাসি' ,ছুটে চলে যেতাম ... কী ভীষণ ঠাণ্ডা বাইরে । কতক্ষণ ধরে বসে আছি ছাদে । বিশাল থালার মতো একটা চাঁদ আকাশে । 


দেখতে এসেই পছন্দ হয়ে গেলো তাদের এবং সাথে সাথেই আংটি পরানো । কিছুতেই তারা মেয়ে হাতছাড়া করবেনা । এতো ভালো লহ্মী মেয়ে ই তাদের চাই । এমন ভাবে অনুষ্ঠান ছাড়া সাদামাটা আঙটি পরানো নিয়ে রাগ হলেও আঙটি দেখে টাশকি খেলাম । এত সুন্দর আঙটি গত সাত জন্মেও দেখিনি । ছোট্ট একটা হীরের আঙটি .... অথচ ...
আঙটি সহ হাত আর বরের ছবি কয়েকটা এফবিতে আপলোড করে দিলাম । 
'এসেই ঝটপট করে এনগেজমেন্ট এবং হুট করেই বিয়ে ঠিক । আই অ্যম সো এক্সাইটেড ! ' - ঐরাতের এফবি স্ট্যাটাস । সব্বাই তো ভীষণ শকড । এবং রাগ ।
আমার মনে পড়ছে শুধু আসিফের কথা । মনটা পড়ে আছে ওর কাছে । বাট এমন কঠিন চীজ সে । আমিই কেমন গাধা যে ওর কাছে কিছু এক্সপেক্ট করি ? কোনদিন সে এসে আমাকে বলে নাই , একটু বারান্দায় আসবা ? তোমারে দেখতে আসছি ।

কখনো বৃষ্টি দেখে ফোনটা দিয়ে বলে নাই , MISS করতেছি তোমাকে ।
একটা দিন ও বলে নাই , তোমাকে দেখতে সুন্দর লাগতেছে ।
ছয়টা বছর প্রেম করে একটা দিন হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে আসলো না ! মন থেকে যতো তাকে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করি , দ্বিগুণ বেগে সে আমার বুকে ফেরত আসে ।
যাই হোক । সবকিছু ভুলে বিয়েতে মন দেবার চেষ্টা করলাম । ছেলেটার নাম আরাফ । জাপানের কি যেন একটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতেছে । বুয়েটে পড়তো । একমাত্র ছেলে ।যক্ষের ধন । দেখতেও সুন্দর । কথাবার্তাও....।, তো পুরাই ইমপ্রেসড । নেক্সট ইয়ার বিয়ে হবে । তাই আংটি পরানো হলেও আবার এনগেজমেন্টের আয়োজন করা হলো । আংটি খুলে আবার পরানো হবে ।সাখে আরো কিছু অর্নামেন্টস । নিশ্চয়ই তাতেও কোন চমক আছে । এমনিতেও বিশাল আয়োজন । এনগেজমেন্ট আর্মি গলফ ক্লাবে ।কনসার্ট টনসার্ট আর ফায়ার ওয়ার্কস দিয়ে হুলুস্থুল অবস্থা ! শাহবাগের সব ফুল যে ঐদিন গলফ ক্লাবে থাকবে তাতে আমার কোন সন্দেহ নেই 

এনগেজমেন্টের দিন পার্লারে যাবার সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গেলাম - গোয়িং টু ধানমণ্ডিস পারসোনা ... Only 4 bridal makeup(!)
আমরা তিন বোন , সাখে দুইটা কাজিন । প্রত্যেকেই এমন সাজছি যে কনে কে আলাদা করার সাধ্য কারো নাই । একটু পর পর মার ফোন , ফুপির ফোন , কই ? হইলো ? তাড়াতাড়ি কর । 
গাড়ি নিচেই রাখা । সরাসরি আমরা গলফ ক্লাবে চলে যাবো । অবশেষে সাজ গোজ শেষ হলো । নিচে নেমে ড্রাইভারকে ফোন দিচ্ছি , এমন ভারী শাড়ি আর মেক আপে রাস্তায় দাঁড়াতে অস্বস্তি লাগছে । দূর্গাপূজা এখন , তাই রাস্তাঘাট এদিকটা পুরা ফ্রি । গাড়ির খোঁজে উঁকিঝুঁকি মারছি , হঠাত্‍ই পেছন থেকে কে যেনো ধাক্কা মারলো , তাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়ে যেতেই একজন শক্ত হাতে টেনে ধরলো । পরবর্তী দুএক সেকেন্ডে কি হলো বুঝলাম না । পেছনে বোনদের চিত্‍কার শুনলাম । আমি কোন একটা গাড়িতে বন্দী ! দ্যট মিনস KIDNAP ?? একটা চিত্‍কার দিতে যাবো তখনি কিডন্যাপারের দিকে নজর পড়লো আর আমি তব্দা মেরে গেলাম । চোখ দুইটা কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো ।
তু-তু-তুমি !
জীবনে প্রথম বার তোতলায় কথা বললাম ।

হ্যাঁ আমি । ক্যান ? ঐ জাপানি বান্দর রে আশা করছিলা ?
এনগেজমেন্টের দিন পার্লারে যাবার সময় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে গেলাম - গোয়িং টু ধানমণ্ডিস পারসোনা ... Only 4 bridal makeup(!)
আমরা তিন বোন , সাখে দুইটা কাজিন । প্রত্যেকেই এমন সাজছি যে কনে কে আলাদা করার সাধ্য কারো নাই । একটু পর পর মার ফোন , ফুপির ফোন , কই ? হইলো ? তাড়াতাড়ি কর । 
গাড়ি নিচেই রাখা । সরাসরি আমরা গলফ ক্লাবে চলে যাবো । অবশেষে সাজ গোজ শেষ হলো । নিচে নেমে ড্রাইভারকে ফোন দিচ্ছি , এমন ভারী শাড়ি আর মেক আপে রাস্তায় দাঁড়াতে অস্বস্তি লাগছে । দূর্গাপূজা এখন , তাই রাস্তাঘাট এদিকটা পুরা ফ্রি । গাড়ির খোঁজে উঁকিঝুঁকি মারছি , হঠাত্‍ই পেছন থেকে কে যেনো ধাক্কা মারলো , তাল সামলাতে না পেরে সামনের দিকে পড়ে যেতেই একজন শক্ত হাতে টেনে ধরলো । পরবর্তী দুএক সেকেন্ডে কি হলো বুঝলাম না । পেছনে বোনদের চিত্‍কার শুনলাম । আমি কোন একটা গাড়িতে বন্দী ! দ্যট মিনস KIDNAP ?? একটা চিত্‍কার দিতে যাবো তখনি কিডন্যাপারের দিকে নজর পড়লো আর আমি তব্দা মেরে গেলাম । চোখ দুইটা কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো ।
তু-তু-তুমি !
জীবনে প্রথম বার তোতলায় কথা বললাম ।

হ্যাঁ আমি । ক্যান ? ঐ জাপানি বান্দর রে আশা করছিলা ?

চোখ বড় বড় করে তাকায় আছি আমি । মুখ দিয়ে কোন কথাও আসতেছে না ।

বিয়ের খুব শখ তোমার না ? বিদেশী ইন্জিরিয়ার বিয়ে করবা ? দেখি কেমনে করো !
বিকট শব্দে হেসে উঠলাম আমি । আমার হাসি তে ভ্যবাচেকা খেয়ে গেলো আসিফ । ভ্রু কুঁচকে বললো ,
হাসো কেনো ?
ছাখল একটা ।একদম দেশী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ।
কে ছাগল ?
তুমি । তুমি ভাবছো আমার বিয়ে ? ক্যান ঈশিতা আপু কি মরে গেছে যে ওরে রেখে আমার বিয়ে হবে ?
বোকার মতো তাকিয়ে আছে সে ।


উজবুক একটা । এখন কি যাইতে দিবা না আপুর এনগেজমেন্টের বারোটা বাজাবা ?
মনে হয় কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না সে । হঠাত্‍ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো ,
আমাকে ছেড়ে আর যায়ো না প্লিইজ । আমি থাকতে পারিনা !

আমার এত সাধের মেক আপ চোখের পানিতে একাকার । ভালোবাসার পরীক্ষায় ক্রমাগত ফেল করতে করতে শেষে এসে Golden A+ ই পেয়ে গেলো ও । ওর বুকে মাখা রেখে আমি কেঁদেই যাচ্ছি । গাড়িটা ছুটে চলছে ধানমন্ডির দিকে । গন্তব্য পারসোনা
 
Top