জোছনা নামাবো

ঝটপট রেডি হয়ে নেয় কিছুক্ষণ পরেই ওনারা এসে যাবে বলেই একটা মেরুন কালারের শাড়ি অরিনের হাতে দিলেন ভাবী। ভাবী শুনো তোমরা সব জেনেও আমার সাথে এমন করছো কেন? ভাবী কোন উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
গত কয়দিন অরিনের খুব মন খারাপ কিন্তু কারো যেন সেদিকে কোন খেয়ালি নেই, তার উপর আজ আবার কোন ছেলে নিয়ে আসছে তাকে দেখানোর জন্য। কই আগেতো মন খারাপ হলে ফ্যামিলির সবাই উঠে পড়ে লাগতো মন ভালো করার জন্য আর আজ সবাই কেমন অচেনা আচরন করছে। ভালো কথা আমার মন খারাপ তাতে কারো মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু তাই বলে কিছু না বলে না জানিয়ে বিয়ের জন্য দেখাতে হবে?! ফ্যামিলির সবাইকে শত্রু মনে হচ্ছে, সব থেকে বড় শত্রু মনে হচ্ছে হিমেলকে। হিমেলের সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে আর তাই নিয়ে কয়দিন মন খারাপ অরিনের। ছেলেটা এই কয়দিনে একবারও ফোন দেয়নি। উল্টা মোবাইল অফ করে রেখেছে। আজো অফ করে রেখেছে। খুব রাগ হচ্ছে হিমেল নামক বদের হাড্ডিটার উপর... শত রাগ নিয়ে হিমেলকে একটা এস.এম.এস লিখেছে অরিন আজো তোর ফোন অফ পেলাম, তিন বছরের ভালবাসায় কি দিয়েছিস আমাকে শুধু কষ্ট আর কান্না ছাড়া? যাই হোক ভালো থাকিস আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবিনা। আজ আমাকে দেখতে ছেলে পক্ষ আসবে, ছেলে নাকি দেখতে রাজপুত্র। পছন্দ হলে আজকেই আংটি পরাবে। এবার বুঝবি শালা আমি কি ছিলাম, যা এবার মুড়ি খা...

ছেলেপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে অরিন, সামনের কাউকে দেখার ইচ্ছে তার নেই। যাই হবার হোক সে মেনে নিবে। ছেলেদের খুব পছন্দ মেয়েকে তাই আজকেই বিয়ের জন্য বলাতে অরিনের মা বাবা সবাই রাজি হয়ে গেলো, অরিন বুঝতে পারছেনা কিছুই ভাবীর কাছে জানতে চাইলো কি হচ্ছে এইসব? ছেলের সম্পর্কে কিছু না জেনে না শুনে তোমরা রাজি হলে কেন তাও আবার আজকেই বিয়ে? আমি জানিনা তবে বাবার পরিচিত তাই বাবা রাজি হয়েছে আর ছেলের সম্পর্কে সব খবর তারা আগেই নিয়েছেন। অরিন বুঝতে পারছেনা কি করবে, হিমেলের উপর রাগ করেই আজকে ছেলে পক্ষের সামনে বসছে আর তাতেই এত কিছু হবে জানলে কিছুতেই রাজি হতোনা ছেলে পক্ষের সামনে আসতে। হিমেলের ফোন এখনো অফ, হারামি আর মানুষ হলোনা। যা যা পরের ঘরে চলে গেলেই বুঝবি...
বাসর সাজানো একটা রুমে বউ সাজে বসে আছে অরিন, হিমেলের জন্য খুব মন খারাপ। না হিমেল কে আমি ঠকাতে পারবোনা। আমি এই লোকটা কে বুঝিয়ে বলবো প্রয়োজনে পা ধরে মাফ চাইবো। তবু আমি হিমেলকে ঠকাতে পারবোনা। কেন যে রাগ করতে গেলাম? হটাৎ করে মোবাইলের মেসেজ টিউনের শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো অরিন। হিমেলের নাম্বার থেকে মেসেজ তিন বছরে মনে হয় খুব বেশী কষ্ট দিতে পারিনি তাই আরো কষ্ট দিতে আর কাঁদাতে সারাজিবনের জন্য নিয়ে এলাম। আমি বুঝতে চাইনা তুমি আমার কি ছিলে আমি বুঝতে চাই তুমি আমার কি আছো। আর মুড়ি আমি একা খাবোনা তোমাকে নিয়েই খাবো। তুমি না বলেছিলে বাসর রাতে তুমি আমার সাথে চাঁদ দেখবা তবে একা বসে আছো কেন? বারান্দায় আসো দুজন মিলে জোছনা নামাবো, হবে আজ মধুপূর্ণিমা...
হিমেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে অরিন, আর হিমেল তাকিয়ে আছে তার কাঁধে মাথা রাখা চাঁদের দিকে। কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বললো পুরো রাত কি কেঁদে শেষ করবা নাকি? তারপরে............ তারপরে আমরা না হয় আর কাবাব মে হাড্ডি হতে থাকলাম না। থাকুক তারা তাদের মতো পাগলামিতে।

কিছুকথাঃ আমি যখন এই পেইজের মেম্বার হই তখন এই পেইজের মেম্বার ছিল বিশ হাজার প্রায়। মন খারাপ হলে এই পেইজের গল্প মন ভালো করে দিতো। আজ সেই পেইজের ১০০০০০ মেম্বারের একটা ফ্যামিলি। ভাবতেই ভালো লাগছে এতো বড় একটা ফ্যামিলির মেম্বার আমি সেই প্রথম থেকেই। প্রথমে পাঠক, পরে লেখক। এইটা আমার তৃতীয় গল্প। একজন মানুষ যাকে সবসময় শুধু ভালোবাসার বিনিময়ে অবহেলা, হাসির বিনিময়ে কান্না, সুখের বিনিময়ে দুঃখ দিয়েছি আজ গল্পটা আর এতো বড় একটা ফ্যামিলির ভালোবাসা তাকে উৎসর্গ করার দুঃসাহস দেখাতেই পারি। 
 
Top