''এরই নাম প্রেম
এ মুহূর্তে ঘরটায় পিনপতন নীরবতা ৷দুজন মানুষ যে ঘরে আছে সেটা বুঝার উপায় নেই ৷অবশ্য সব সময় যে খুব বেশি চিৎকার চেচাঁমেচিঁ চলে তা কিন্তু নয় ৷তবে মাঝে মাঝে যখন দু'জনের মুড খুব ভাল থাকে তখন হই হুল্লোড় করে ঘরটা মাথায় তুলে রাখে হিমেল আর লাবণ্য ।কিছুক্ষন আগেও ঝালমুড়ি আর চানাচুর খেয়ে জম্পেশ আড্ডায় মেতে ছিল দুজন ।আড্ডার সাথে সাথে তারা দেখছিল ''মাষ্টার শেফ'' অনুষ্টানটি ।ষ্টার প্লাস এর এ অনুষ্টানটি লাবণ্য'র খুব প্রিয় ।পারত পক্ষে সে অনুষ্টানটি মিস করে না ।তার কারনে হিমেলকেও এ সময় টিভি সেটের সামনে বসে থাকতে হয় ৷ আজকে অনুষ্টানটি শুরু হওয়ার আগে হিমেল লাবণ্যকে শর্ত দিয়েছিল এই অনুষ্টানের পরে লাবণ্যকেও তার সাথে বসে ''চেলসি ও ম্যান ইউ'' এর খেলা দেখতে হবে ৷কিন্তু 'মাষ্টার শেফ' শেষ হতেই রান্নার অজুহাতে লাবণ্য ওঠে চলে যায় ৷ একা একা খেলা দেখতে একদম ভাল লাগে না হিমেলের ৷ রান্না ঘর থেকে লাবণ্য ২/৩ বার জানতে চাইলো হিমেল চা খাবে কী-না ৷জবাব দিল না হিমেল ৷তার মেজাজ গরম ৷লাবণ্য খেলা না দেখে এভাবে ওঠে চলে গেল কেন ,সেজন্যে ৷ গত এক ঘন্টা ধরে তাই দুজনের কথা বলা বন্দ্ব ৷এ রকম মাঝে মাঝেই হয় ৷ কখনও দুই তিন ঘন্টা ,কখনও পুরো রাত আবার কখনও পুরো দিন কেউ কারো সাথে সরাসরি কথা বলে না ৷তবে কথা চলে ঠিকই ৷হয়তো মোবাইলে ম্যাসেজ আদান প্রদান করে নয়তো তৃতীয় মাধ্যম ব্যবহার করে ৷ একজন আরেকজনের উপর কোন কারনে অভিমান করলেই তারা এই পদ্দ্বতি ব্যবহার করে কথা বলার ক্ষেত্রে ৷ যেমন এখন রান্না ঘর থেকে লাবণ্য বলল,'কেউ কি আমার কথা শুনছে? টেবিলে কি খাবার দেয়া হবে ?ড্রয়িং রুম থেকে হিমেল বলল-'খাবার কেউ খাবে না ৷ক্ষিদে নেই ।নিজে নিজেই খেয়ে নেয়া হউক ।কিন্তু না খেয়ে লাবণ্য রুমে চলে এল ।সে ভাল করেই জানে কিছুক্ষন পর রাগ পড়ে গেলে হিমেল ঠিকই তাকে নিয়ে খেতে বসবে।আরও ঘন্টা খানেক হিমেল একা একা টিভি দেখল ।কিন্তু আর পারছে না ।এখন পেট চুঁ চুঁ করছে ।নিশ্চয়ই লাবণ্য'র ও ক্ষিধা লেগেছে । সোজা রুমে এসে তাই লাবণ্য কে বলল খেতে চল ।-এতক্ষন যে বললে ক্ষিধা নেই ?-হুম ,ছিল না ।এখন খেতে ইচ্ছে করছে ।-এখন রাগ পড়েছে ।তাই, না ?ঠিক আছে চল। খেতে বসে হিমেল বলল তুমি আমার সাথে খেলাটা দেখলেই পারতে ।একা একা খেলা দেখে মজা পাই না ।আচ্ছা তুমি এমন ছেলে মানুষি কেন কর ?লাবণ্য বলল ।আমি রান্না না করলে শুধু খেলা দেখে কি পেট ভরত ?হুম ,তুমি আমার সাথে একসাথে খেলা দেখলেই আমার পেট ভরত ।আচ্ছা ,বাদ দাও ।এখন চল কালকের প্ল্যান করে ফেলি ।আগামীকাল শুক্রবার ।প্রতি উইক এন্ডেই তারা বাইরে খেতে এবং ঘুরতে যায় ।তাই খেতে খেতে দুজনে ঠিক করে নিল আগামীকাল কি কি করবে,কোথায় কোথায় যাবে ।দুইঃ ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তা ঘাট অনেকটা ফাঁকা ।এই ফাঁকা রাস্তায় রিকশা্য় করে ঘুরতে লাবণ্যর ভাল লাগে তাই ইচ্ছে করেই গাড়ি আনেনি হিমেল।তাছাড়া গাড়ির ভিতর কেমন যেন একটা দম বন্দ্ব হওয়া ভাব বিরাজ করে।রিকশা্য় করে গেলে যেমন প্রকৃতিকে অনেকটা ছুঁয়ে যাওয়া যায়,প্রকৃতির মুক্ত বাতাস গাঁয়ে মাখা যায় আর দেখা যায় চারপাশের বিচিত্র সব মানুষজনকে, গাড়িতে করে গেলে বেড়ানোর সেই আমেজটা পাওয়া যায় না ।তাছাড়া সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল গাড়ি সাথে থাকলে ড্রাইভিং এর কারনে হিমেল এর সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে না লাবণ্য ।তাই বেড়ানো জন্য বের হলে তারা রিকশা ব্যবহার করে । আজ তারা এসেছে বাংলা একাডেমীর বই মেলায় ।সারাদিন বিভিন্ন ষ্টল ঘুরে বেশ কিছু বই কিনল দুজন।স্বন্দ্ব্যায় মহিলা সমিতি থিয়েটারে মঞ্চ নাটক দেখে এখন তারা ডিনারের জন্য বসে আছে 'হ্যাঁলো'তে ।বসুন্দরা সিটির এই রেষ্টুরেন্টটা তাদের খুব প্রিয় তাই বাইরে খেলে এটাতেই তারা আসে সবসময় ।খেতে বসে হঠাৎ লাবণ্য বলে উঠল ,'এই তুমি বার বার ঐ মেয়েগুলোর দিকে তাকাচ্ছ কেন '?-আশ্চর্য ! চোখ বন্দ্ব করে থাকব নাকি?- না ,চোখ বন্দ্ব রাখতে হবে না ।খোলা রেখে শুধু আমাকে দেখবে তুমি ।-আচ্ছা বাবা ,ঠিক আছে ।''তোমারও তরে চাহিব তব, জনম জনম'' কথাটা লাবণ্য'র এত ভাল লাগল,বিনিময়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল আচ্ছা ,ভাল লাগার সময়গুলো যদি রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে আটকে রাখা যেত কতই ভাল হত, না?এই সময়গুলো এত দ্রুত ফুরিয়ে যায় কেন?-হুম্,ভাল লাগার সময়গুলো খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায় বলেই এই সময়গুলো সাধারন সময়ের চেয়ে এত আলাদা আমাদের কাছে ।-হুম্ ৷ সেটা ঠিক ৷আচ্ছা ,তুমি কি সব সময় আমাকে এভাবে ভালবাসবে ?-কোন সন্দেহ আছে ?-আমার তো মনে হয় ,আমার চেয়ে সুন্দরী কোন মেয়ে পেলে তুমি আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে ৷-তোমার কাছ থেকে হারিয়ে যেতাম ,কিন্তু যেহেতু তোমার চেয়ে ভাল আর সুন্দরী মেয়ে এ পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না কাজেই তোমার কাছ থেকে যে হারিয়ে যাব না সেটা নিশ্চিত ৷স্মিথ হাসল লাবণ্য ,সে হিমেলকে রাগানোর চেষ্টা করছিল এতক্ষন৷ কিন্তু তার সোজা সাপ্টা উত্তরে লাবণ্য'র সে চেষ্টা ব্যার্থ হল আর কোন প্রকার ঝগড়া ছাড়াই তারা কাটাল চমৎকার একটা দিন ৷ 


দুই: 

ক'দিন ধরে হিমেলের কিছুটা অস্বাভাবিক আচরন লক্ষ্য করছে লাবণ্য ৷আজকাল অফিস থেকে বাসায় ফিরছে কিছুটা দেরী করে ৷মাঝে মাঝে কার সাথে যেন অনেক সময় ধরে মোবাইলে কথা বলে ৷ লাবণ্য লক্ষ্য করেছে নির্দিষ্ট ঐ নাম্বার থেকে কল আসলেই নানা অজুহাতে হিমেল তাকে রান্না ঘরে পাঠিয়ে দেয় ৷ প্রথম দিকে বিষয়টা খুব একটা পাত্তা দেয়নি লাবণ্য ৷কিন্তু আজ অফিস থেকে ফেরার পর হিমেল যখন 'ফ্রেস এন আপ 'হচ্ছিল তখনই ঐ নাম্বার থেকে কল আসে ৷মোবাইল স্ক্রীনে ভেসে উঠে......ফাহমী কলিং.... ৷লাবণ্য ফোনটা ধরবে কি-না চিন্তা করতে করতেই লাইনটা কেটে যায় ৷সন্দেহ আর কৌতুহলে নাম্বারটা নিয়ে নিজ নাম্বার থেকে কল ব্যাক করে সে৷ আনসার হতেই ওপাশে শুনতে পায় একটা নারী কন্ঠ ৷কোন কথা না বলে লাইন কেটে দেয় লাবণ্য৷ সে যা সন্দেহ করেছিল তা-ই৷ওর বান্দবী মিলি ও তাহলে ঐ দিন মিথ্যা বলেনি ৷মিলি বলেছিল সেদিন সে উত্তরায় হিমেলকে দেখেছে গাড়িতে একটি মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে ।তখন মিলির কথা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল লাবণ্য ।বলেছিল তুই ভুল দেখেছিস ।একই রকম চেহারার অন্য কেউ ছিল হয়তো ।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মিলির কথাই ঠিক।ফোনের এই মেয়েটিকে নিয়েই অফিসের পর ঘোরাঘুরি করে হিমেল ।চিন্তাটা মাথায় আসতেই মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠে লাবণ্য'র ।অজান্তেই চোখ বেয়ে পড়তে থাকে অশ্রুর ফোঁটা ।পুরো শরীর কেমন অবশ হতে থাকে ।কোন রকমে রুমে এসে শুঁয়ে পড়ে সে ।বাথরুম থেকে বেরিয়ে লাবণ্যকে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় হিমেল ।কিছুক্ষন আগেও তো প্রানবন্ত ছিল ,হঠাৎ কী হল ? সে কী অফিস থেকে ফিরে লাবণ্য'র সাথে কোন ভুল করেছে?একবার চিন্তা করে নিল ।নাহ্,এরকম কিছু মনে পড়ছে না ।তারপরও সে লাবণ্য'র পাশে বসে নানা ভাবে মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে ।লাবণ্য'র সাথে কথা না বলে সে বেশিক্ষন থাকতে পারে না ।কেমন যেন দম বন্দ্ব হয়ে আসে ।তাই লাবণ্য'র সাথে ঝগড়ার পর বেশির ভাগ সময় সে নিজেই যেচে গিয়ে মিটমাট করে ফেলে ।অবশ্য মাঝে মাঝে লাবণ্য ও হিমেলের মান ভাঙ্গাতে বাচ্চাদের মত কান ধরে বলে sorry আর হবে না এমন ।এবার একটু হাস প্লিজ ।সাথে সাথে সব মান অভিমান ভুলে যায় দু'জন ।কিন্তু আজ অনেক চেষ্টা তদবির করেও সে লাবণ্য'র মান ভাঙ্গাতে পারল না কোনভাবেই । রাতের খাবার খেল না লাবণ্য ।অনেক জোরাজুরি করেও তাকে খাবার খাওয়াতে পারল না হিমেল ।কী হয়েছে জিজ্ঞাস করাতে লাবণ্য শুধু বলেছে তার ভীষন মাথা ধরেছে ।সে খাবে না ।সকালেও বিছানা ছেড়ে উঠছে না দেখে হিমেল নিজেই রান্নাঘরে গিয়ে তার এবং লাবণ্য'র জন্য চা নাস্তা তৈরী করছে এখন ।এ সময় তার মোবাইলে একটি ম্যাসেজ এলার্ট টোন বেজে উঠে ।বেড সাইড টেবিলেই রাখা ছিল মোবাইলটা ।মনের সন্দেহ দূর করার জন্য ম্যাসেজটা পড়ল লাবণ্য ।হ্যাঁ ,ফাহমী নামের সেই নাম্বার থেকেই এসেছে ।ম্যাসেজটা এরকম -'আজকে কি একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবে'? রান্নাঘর থেকে হিমেল ফিরে আসতেই লাবণ্য জানতে চাইল ,ফাহমী কে? 'আমার অফিস কলিগ ,কেন ?পাল্টা প্রশ্ন করল হিমেল ।আর কথা বাড়াল না লাবণ্য ,যা বুঝার সে বুঝে গেছে এবং এ মুহূর্তে একটা কঠিন সিদ্দ্বান্ত নিয়ে ফেলেছে । নাস্তা সেরে হিমেল তড়িঘড়ি করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল ।তার যাবার পর পরই একটা চিরকুট লিখল লাবণ্য ,''আমি বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি , আর খবরদার আমার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগের চেষ্টা করবে না ।'' চিরকুটটা ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে ঘর ছাড়ল সে । অফিস থেকে ফিরে চিরকুটটা পড়ে হিমেলের মাথা নষ্ট হবার জোগাড় ।সাথে সাথেই ফোন করল লাবণ্য কে ।কিন্তু আনসার করছে না সে ।বেশ কয়েকবার ট্রাই করল ,শেষবার যখন ট্রাই করল তখন বন্দ্ব পেল লাবণ্য'র ফোন ।এ মুহূর্তে কিছুই ভাল লাগছে না তার ।চারিদিক কেমন ফাঁকা আর শূন্য শূন্য লাগছে ।অস্হির লাগছে নিজেকে ।খাওয়া দাওয়া না করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল হিমেল ।কিছুটা তন্দ্রা ভাব এসে গেছে এ সময় হঠাৎ মনে হল আজ সকালে মোবাইলের ম্যাসেজটা দেখে লাবণ্য জানতে চেয়েছিল 'ফাহমী' কে ।তাহলে কী লাবণ্য আমাকে সন্দেহ করেই বাড়ি ছেড়েছে ?এ চিন্তাটা মাথায় আসতেই ঝটপট করে সে আবার লাবণ্যকে ফোন করল ।কিন্তু একই অবস্হা ।ফোন আনসার করছে না সে।অনেকটা নিরুপায় হয়ে শেষে একটা ম্যাসেজ পাঠাল -''ভুল বুঝে ভুল করো না ,ভালবেসে দূরে যেও না ''। ,, ম্যসেজের রিপ্লাইটা পর্যন্ত করেনি ।প্রতিদিনই নানা ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে হিমেল ।কিন্তু ব্যার্থ হয়েছে ।এই তিন দিনে উদভ্রান্তের মত হয়ে গেছে হিমেল ।অনিয়মিত হয়ে গেছে নাওয়া খাওয়া ।হঠাৎ তার মনে পড়ল ,আজ ফাহমীর সাথে দুপুর ১২ টায় দেখা করার কথা ।দুজনেই আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে ।ঘড়ি দেখল সে।দশটা বেজে গেছে ,তাই ঝটপট তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল হিমেল । দুপুর তিনটা ।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিমেল ও তার অফিস কলিগ ফাহমী-রুমী ।ফাহমীর স্বামী হিমেলেরই আরেক কলিগ রওনকের আজ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা ।মাত্র কিছুদিন হয় ভালবেসে বিয়ে করেছে রওনক ও ফাহমী ।ফাহমীর পরিবার মেনে নেয়নি তাদের বিয়ে ।তাই রওনকের বিরুদ্দ্বে ফাহমীকে ভয় দেখিয়ে জোর করে বিয়ে করার মিথ্যা মামলা টুকে দেয় ফাহমীর বাবা ।তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে গত এক সপ্তাহ ফাহমীর সাথে আদালত-উকিল, জেলখানা সবখানেই দৌঁড়াদৌঁড়ি করেছে হিমেল । ঢাকায় রওনকের ঘনিষ্ট কোন আত্মীয় না থাকায় মানবিক কারনে ফাহমীকে হিমেলই সবরকম সাহায্য করেছে ।জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এ মুহূর্তে তাদের দুজনের খুশি দেখে কিছুক্ষনের জন্য হিমেল ভুলে গেল তার সব কষ্ট ।এখন খুব ভাল লাগছে তার ।কেন যে মানুষ ভালবাসার মানুষগুলোকে আলাদা করতে চায় ,কিছুতেই মাথায় ঢুকে না হিমেলের ।রওনক আর ফাহমীর আবেগঘন মুহূর্ত শেষে সবকিছুর জন্য হিমেলকে ধন্যবাদ জানাল রওনক ।সেই সাথে তাদের কারনে লাবণ্য'র সাথে হিমেলের ভুল বোঝাবুঝির জন্য দুঃখ প্রকাশ করল ।তবে তারা কথা দিল ২/১ মধ্যে লাবণ্য'র কাছে গিয়ে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবে। তিন : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী ।ভালবাসা দিবস ।হাসপাতালে লাবণ্য'র বিছানার পাশে বসে রয়েছে হিমেল ।সারারাত ধরে সে এভাবেই বসে আছে ।কিছুক্ষন আগে রওনক আর ফাহমী ও এসেছে লাবণ্যকে দেখতে ।লাবণ্য এখন ঘুমচ্ছে ।ডাক্তাররা বলেছেন এখন আশন্কা মুক্ত ।কাল রাতে যখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ডাক্তার ।এতগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে কেউ বাঁচে না সাধারনত ।তবে খুব দ্রুত হাসপাতালে আনায় আর ডাক্তারদের আপ্রান চেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে লাবণ্য। ঘুম ভেঙ্গেছে লাবণ্য'র ।তাকে বিছানায় উঠে বসতে সাহায্য করল হিমেল ।পরিচয় করিয়ে দিল রওনক ও ফাহমীকে।কুশল বিনিময়ের পর তারা সব ঘটনা খুলে বলল লাবণ্যকে।সেই সাথে দুঃখ প্রকাশ করল অনাকান্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির জন্য । হালকা আরও কিছু কথাবার্তা শেষে দুজনে বিদায় নিল ।ওরা চলে যাবার পর রুমটাতে এখন বিরাজ করছে শুনশান নীরবতা। কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না যেন কেউই ।হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে লাবণ্য বলল, তুমি আমাকে সব কিছু খুলে বললে না কেন?-আমাকে বলার সুযোগটা দিলে কই ?-আচ্ছা বাদ দাও ।এই ,তোমার চোখ দুটো এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন?পুরো রাত তুমি কি এভাবে আমার পাশে বসা ছিলে?-তোমার এ অবস্হায় আমি ঘুমাই কী করে ,বলো ?আচ্ছা ,তুমি এভাবে পাগলামী করলে কেন ?অভিমানে সুরে লাবণ্য বলল তোমাকে ছাড়া যে আর থাকতে পারছিলাম না ।তাছাড়া তুমি আমাকে ফিরিয়ে নিতে আস নাই সেজন্য আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছিল না ।হিমেল উত্তরে বলল ,তোমাকে ছাড়া আমার এ ক'টা দিনও যেন থমকে ছিল ।কথাটা বলেই লাবণ্য'র দিকে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে হিমেল বলল 'ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছে ।''সকালে হঠাৎ করে আজ ভালবাসা দিবস এটা মনে পড়ায় লাবণ্যে'র ঘুমের এক ফাঁকে লাবণ্যে'র পছন্দের লাল গোলাপ নিয়ে আসে হিমেল ।গোলাপগুলো হাতে নিয়ে লাবণ্য বলল তোমাকেও ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা ।এরপর আবার দুজনের মাঝে নীরবতা ।তাদের চোখের কোনে সুখের অশ্রু ছলছল করছে ।মন্ত্রমুগ্দ্বের মত হিমেল ও লাবণ্য একে অন্যের দিকে চেয়ে আছে অপলক নয়নে ।দূরে কোথাও থেকে ক্ষীন স্বরে ভেসে আসছে তাদের পছন্দের একটি গান ........ ''মেঘ হয়ে কাঁদো বলে আমি শ্রাবনে ভাসি ,এরই নাম প্রেম প্রিয় ভালবাসাবাসি ''।


উৎসর্গ :(যাদের জীবন ভালবাসার সাত রঙে রাঙানো ৷ সবাই খুজে পাক তার ভালবাসার মানুষকে ৷)

 
Top