শূন্যতা
চারদিন জ্বরে ভুগে তাহের সুস্থ হলো কিছুক্ষন আগে।নিজেই সুস্থতার সার্টিফিকেট দেওয়ার কারণ তার সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়েছে।সিগারেটের তৃষ্ণা পেলেই বুঝতে হবে শরীরে এখন কোন জ্বরটর নেই।
তাহের রুমে সিগারেট খুজে পাচ্ছে না।চারদিন ধরে সে তার রুমেই বন্ধী।যেদিন রাতে জ্বর আসল সেদিন সে ১০ টা সিগারেট নিয়ে সবসময়ের মতই রাতে বাসায় ফিরেছে।সেদিন মধ্যরাতেই ত জ্বর আসল।এরপর ত সে আর সিগারেট খায়নি একটাও।নাকি খেয়েছিলো?মনে পরছে না।জ্বর আসার আগে হয়ত দুই তিনটা সিগারেট খাওয়া হয়েছিলো।এখন ত তার রুমে কম করে হলেও ৫টা সিগারেট থাকার কথা।একটা সিগারেটও পাওয়া যাচ্ছে না।
তার মেজাজ খারাপ হতে লাগল।
এই দুপুরবেলা বাহিরে গিয়ে সিগারেট আনতে ইচ্ছে করছে না।তাহের এশট্রের দিকে তাকালো।আধ খাওয়া সিগারেট থাকলে এখন সেটাই ভরসা।নেশাটাকে ভোতা করে দিতে হবে।তাহের এশট্রেতে আধখাওয়া সিগারেট পেলো না।আধখাওয়া সিগারেট দিয়ে এশট্রে ভরা থাকে বড়লোকদের।এশট্রেকে তখন আর ছাইদানি মনে হয় না মনে হয় সিগারেটদানি।তাহের গরীবঘরের সন্তান।তার ছাইদানি খাটি ছাইদানী।খাটি ছাইদানীর প্রধান বৈশিষ্ট হলো সেখানে কোন আধখাওয়া সিগারেট থাকবে না।
তাহের তার ঘরের ছোট জানালার ময়লা হয়ে যাওয়া পর্দাটা সরালো।রুমে কেমন একটা জ্বর জ্বর গন্ধ হয়ে আছে।ছোট জানালা দিয়ে গন্ধটা বের হয়ে যাক।এই ফাকে যদি কাউকে পাওয়া যায় সিগারেট আনাবার জন্য।তাহের পরিচিত মুখ খুজে বেরাচ্ছে।
হঠাৎ করে তাহের তার এক প্রাক্তন বান্ধবীকে আসতে দেখল রাস্তা ধরে হেটে হেটে।প্রাক্তন বান্ধবী কথাটা কি ভুল?বান্ধবী আবার প্রাক্তন অপ্রাক্তন কি?প্রাক্তন অপ্রাক্তন কথাটা ব্যবহার হবে প্রেমিকার ক্ষেত্রে।কি জানি এটা নিয়ে তাহেরের কোন ভাবনা সৃষ্টি হলো না।
তাহেরের এই বান্ধবীর নাম টুম্পা।এই মেয়ে তার স্কুল লাইফের বান্ধবী।তার বাসা থেকে একটু দূরেই টুম্পার বাসা।এখন আর তেমন যোগাযোগ নেই তাদের মধ্যে।মাঝে মাঝে হয়ত রাস্তায় দেখা হয়ে যায়।কখন চোখাচোখি পর্ব পর্যন্ত থাকে দেখা হওয়াটা আবার কখন হয়ত "কেমন আছো" প্রশ্নটা পর্যন্ত গড়ায়।

তাহেরের খুব ইচ্ছে করছে টুম্পাকে ডেকে বলতে টুম্পা কেমন আছো?টুম্পা উত্তর দিবে ভাল আছি।তারপর তাহের খুব মোলায়েম গলায় বলবে আমার শরীরটা বেশি ভাল নেই।একটা কাজ করে দিতে পারবে?টুম্পার উত্তর হ্যা পারব,কি কাজ?ঔষধ এনে দিতে হবে? তাহের বলবে না আমাকে একটা সিগারেট কিনে দিতে পারবে?
অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন রোগী একটা মেয়ের কাছে সিগারেট কিনে দেওয়ার আবদার করলে সেই মেয়ের চেহারা তখন কেমন হবে?তাহেরের খুব দেখতে ইচ্ছে করছে সেই চেহারা।
এসব ভাবতে ভাবতে টুম্পা তার ছোট জানালা অতিক্রম করে ফেললো।তাহের সন্ধ্যা পর্যন্ত সিগারেটের তৃষ্ণা নিয়ে শুয়ে শুয়ে সময় কাটালো।

...............

তাহের তার বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যা হলে এই পুকুর পাড়টাতে বসে আড্ডা দেয়।পুকুর না বলে গোল একটা ড্রেন বলাই ভালো।পানি থেকে মাঝে মাঝে বিটকা গন্ধ ভেসে আসে।তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে তাই তারা আর আগের মতন নাক কুচকে ফেলে না।অনেকে এই পুকুরের পাশ দিয়ে হেটে গেলে শুধু নাকই বন্ধ করে না সাথে চোখও বন্ধ করে ফেলে।

তাহের আজ এসে শুধু সজীবকে পেলো।একা একা বসে সজীব সিগারেট টানছে।হাতে নতুন কেনা মোবাইল সেট।দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে হাত দিয়ে সে মোবাইল সেটের স্ক্রীন পরিষ্কার করছে।টাচ স্ক্রীন সেটগুলো তাহেরের তেমন ভাল লাগে না।ইদানিং ত কোন মোবাইলেই বাটন নেই।মোবাইল কোম্পানি গুলো তাহেরের চাহিদার দিকে কোন নজর না দিয়ে ইচ্ছেমত সব টাচ সেট বানিয়ে যাচ্ছে।তাহের সেই চিন্তা করতে করতে পকেটে রাখা তার মোবাইল সেটের বাটন গুলোতে একটু হাত বুলিয়ে নিলো।হয়ত একসময় আর এই বাটনগুলো চাইলেও আর দেখা যাবে না।

তাহের সজীবের পাশে গিয়ে বসল।সজীব তার হাতের আধখাওয়া সিগারেটটা তাহেরকে খেতে দিয়ে তাহেরের সেই আধখাওয়া সিগারেটের চাহিদা মিটালো ।মানুষের গভীর মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।দেরি হলেও পূরণ হয়।তাহের আস্ত না আধখাওয়া সিগারেটে টান দিয়ে মনে সৃষ্টি হওয়া গভীর ইচ্ছেটাকে পূরণ করে ফেলল।

সজীব মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে রাখল।
- তোর বলে শরীর খারাপ।কাউসার বললো আমাকে।
- তেমন কিছু না।একটু জ্বর হইছিলো।তোদের কি অবস্থা?
- চলে।
- কি চলে?
- অবস্থা চলে আর কি।
- ও।কাউসার কই?ওর ছোট বোনটার বলে কি হইছে?হাসপাতালে নাকি ভর্তি করতে হয়েছিলো।
- হুম,কাউসার হাসপাতালেই আছে।ওর ছোটবোনের সেদিন হঠাৎ করেই নাক দিয়ে রক্ত পড়লো।আজ মনে হয় রিলিজ পাবে।তুই জানস কিভাবে?
- সেদিন কাউসার আমার রুমের জানলা দিয়ে বলল।তার ছোট বোনের শরীর ভাল না।দোয়া করতে বলেই দ্রুত চলে গেলো।আমি নিজের জন্য দোয়া চাইতে পারলাম না।
- তুই দোয়া চাবি কেন?তুই কি মেট্রিক পরীক্ষা দিবি নাকি তোরও নাক দিয়ে রক্ত পরে।
- আরে আমারও ত শরীর খারাপ ছিলো।
-ব্যাঙের সর্দি তার জন্য আবার মিলাদ।তুই ত দুইদিন পরপরই অসুস্থ হস।তোর জন্য দোয়া করতে হলে মাঝে মাঝে সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু তোর জন্যই দোয়া করতে হবে।সেদিন হাতে কোন কাজ রাখা যাবে না।পাড়ার মসজিদে হুজুরকেও বলে রাখতে হবে আজ একটু সময় দিয়েন,আমার বন্ধুর শরীর তেমন ভালো না।একটু মিলাদ দেওয়া দরকার।

তাহের হাসছে।সজীবকে তার খুবই ভাল লাগে।কথায় কথায় মজা করার মত একটা সুন্দর গুন সজীবের আছে।এই গুন সবার থাকে না।সবাই এই গুনের অধীকারী হতে চায়।সবচেয়ে বেশি হতে চায় একজন প্রেমিক যখন তার প্রেমিকার সাথে কথা বলে।সজীবের প্রেমিকার ভাগ্য ভালো হবে।তার প্রেমিক তাকে কথায় কথায় হাসাতে পারবে।

কিরে আজ ত কাউসার আসবে না,চল কামরুলদের ঐখানে থেকে ঘুরে আসি।সজীব তাহেরের দিকে না তাকিয়েই বলল কেন গাজা খাবি নাকি?
- কেন কামরুলদের ঐখানে গেলেই কি গাজা খেতে হয়?
- হুম হয়।কামরুলের সব বন্ধুরাই গাজাখোর।তাদের ওইখানে এখন গেলে মনে হয় মাজারে গেলাম।গাজা না খেলে কামরুল বাবার মাজারের অসম্মান করা হবে।
- আরে ধুর চল ত।গাজাটাজা খেতে হবে না।আড্ডা দিয়ে আসি।৩-৪ দিন ধরে ঘরে বসে থেকে আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে গেছি।আর আজ কাউসার নেই এখানে বসে তুই আর আমি কি করব?

তাহের আর সজীব তাদের বন্ধু কামরুল বাবার মাজারের দিকে রওনা দিলো।
কামুরুল তাদের স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।কামরুলের প্রধান কাজ হলো দিনের ভিতর ৩-৪ বার গাজার সন্ধান করা।ইদানিং গাজা হেভি রেয়ার হয়ে গেছে।দুঃখ কষ্ট যত প্রকট হচ্ছে দুঃখ কষ্ট ভোলার জন্য নেশার উপকরণ তত রেয়ার হয়ে যায়।এটাও একটা দুঃখের ব্যাপার।

কামরুলদের ওইখান থেকে আড্ডা দিয়ে ফেরার পথে সজীব দুইটান গাজা খেয়ে আসল।তার নাকি আজ মনটা ভাল না।তাই সে গাজা খেয়েছে না হলে এই জিনিস তাকে কোটি টাকা দিয়েও কেউ খাওয়াতে পারত না।কোটি টাকা খরচ না করেই সজীব তার মন ভাল করার জন্য সামান্য টাকার গাজা খেয়ে আসল।

কাউসার ২ দিন ধরে তার ছোটবোনের সাথে রাতে হাসপাতালে ঘুমায়।তার ছোটবোনের কোন রোগ ডাক্তাররা ধরতে পারেনি।নাক দিয়ে রক্ত পরার কারণ হিসেবে তারা শুধু এটাই বলেছে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া না করার কারণে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হয়ে রক্ত পরেছে।ঠিকমত রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।তারা পর্যবেক্ষনের জন্য ৩ দিন হাসপাতালে রোগীকে রাখবে।
আগামীকাল তিনদিন শেষ হবে।বিকাল নাগাদ তার ছোটবোনকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবে।

রাত ১ টা বাজে কাউসার বিথীদের বাসার নাম্বারে ট্রাই করছে।বিথীর পার্সোনাল মোবাইল নেই।তার আম্মার ফোন মাঝে মাঝে রাতে বিথী সাথে নিয়ে ঘুমায়।ক্লাস নাইনের মেয়েকে অবশ্যই বাসা থেকে মোবাইল দিবে না এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু নাইনের মেয়ে সেটা বুঝবে না এটা আরো স্বাভাবিক।সে না বুঝে রাতে বাসার সবচেয়ে নরম মনের যে মানুষ সে মানুষের মোবাইল সেট সাথে নিয়ে ঘুমাবে।এক্ষেত্রে মাদের ফোন সবচেয়ে ভরসাপূর্ণ।

বিথীর আম্মার ফোন আজ বিথী নিতে পারেনি।তার আব্বা অফিসের কি কাজ করার জন্য জানি ২-৩ টা সেট নিয়ে বসেছিলো।ফোনটা তাই বিথীর বাবার কাছেই রয়ে গেছে।কাউসার বিথীর আম্মার ফোনে ফোন দিলো।ফোন কয়েকবার রিং বাজার পর বিথীর বাবা ফোন রিসিভ করলো।

- হ্যালো।
কাউসার চুপ করে আছে।তার মনটা খারাপ হয়ে গেলো বিথীর আব্বার ভয়েস ফোনে শুনে।আজ আর বিথীর সাথে তার কথা হবে না।তার মেজাজও খারাপ হয়ে গেলো।সে মেজাজ খারাপ করে ঠিক করল বিথীর আব্বার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে।
বিথীর বাবা আবার জিজ্ঞেস করলেন হ্যালো কে বলছেন?
- কাকা আছেন নাকি?
- কাকে চাচ্ছেন?
- কেন আপনার বয়স কি যুবকদের মতন নাকি?আপনাকেই কাকা বলছি।আছেন নাকি?
- কে বলছেন আপনি?আর আমি আছি নাকি মানে কি?
- আমি কেউ না,আমাকে দিয়ে আপনার কোন কাজ নেই।আপনি আছেন নাকি সেটা বলেন আগে।
- এই বেয়াদপ কে তুই?আমি আছি মানে কি?
- আমি বেয়াদপ হলে আপনার তাতে কোন সমস্যা নেই।আপনি কি আছেন?
বিথীর বাবা ফোন রেখে দিলেন।মনে মনে ভাবলেন দেশটা শেষ।পৃথিবীটা শেষ।কোন ভাল মানুষ আর নেই এই দুনিয়ায়।সবাই বেয়াদপ আর জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে।কত্তবড় বেয়াদপ বারবার তাকে বলেই যাচ্ছে "সে আছে নাকি?" কি বোঝালো ফোনের জানোয়ারটা? সে আছে নাকি মানে কি?
বিথীর বাবা মানে খুজতে গেলেন না।ঘুমিয়ে পরলেন।ঘুমিয়েও সে স্বপ্ন দেখলেন ইয়া বড় এক দানব তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে "কাকা আছেন নাকি?" তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো মধ্যরাতে দানবের ফোন পেয়ে।

গভীর রাতে বিথী কয়েকবার চেষ্টা চালালো তার বাবার পাশ থেকে মোবাইলটা নেওয়ার কিন্তু সাহসে কুলালো না।এখনকার প্রেমিক প্রেমিকারা সাহসী হয় না।তারা হয় খুবই রোমান্টিক কিন্তু দারুন ভীতু।তারা হালকা কথায় রোমান্স অনুভব করে যেমনভাবে তেমনি হালকা ব্যাপারে ভয় পেয়ে রোমান্সও হারিয়ে ফেলে।তাই তাদের সম্পর্কগুলো তেমন জোরালো না।রোমান্স গুলোও না।

কাউসার মোবাইলে স্বর্ণার সাথে কথা বলে আর হাসপাতালের বারান্দায় হাটাহাটি করে রাত পাড় করে দিলো।স্বর্ণার সাথে তার সম্পর্ক হয়েছে মাত্র আটদিন হলো।এখনো বন্ধুত্বের সম্পর্কেই তারা কথা বলছে।স্বর্ণার সাথে কথা বলার মধ্যে কাউসার তেমন আনন্দ পায় না।কারণ স্বর্ণার ভয়েস মোটা।মাঝে মাঝে বিথীর সাথে কথা না বলতে পারার টাইমটুকু পাস করার জন্য কাউসার সজীবের কাছ থেকে স্বর্ণার নাম্বার নিয়েছে।টাইম বেশি ভাল পাস হচ্ছে না।স্বর্ণা গাধী টাইপের ঘোড়া ভয়েসের মেয়ে।এই ধরনের মেয়ের সাথে কথা বলে আনন্দ পাবে বোকা টাইপের প্রেমিকরা।যারা মেয়ে বলতেই পাগল।কাউসার এমন ছেলে না।

------

প্রতিদিন কামরুলের ঘুম ভাঙ্গে তার মায়ের বকুনি শুনে।তার মা ফুলঝাড়ু নিয়ে প্রায় বছর চারেক ধরে কামরুলের ঘুম ভাঙ্গিয়ে আসছে।ঘর ঝাড়ু দিতে ঢুকে তার মা তার ঘর ঝাড়ু না দিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গায়।এক সময় ঘর ঝাড়ু না দিয়েই চলে যায় অন্য কাজে।

কামরুলের মা আজ দেরি করে কামরুলের রুমে ঢুকেছে।ঢুকেই দেখে কামরুলের লুঙ্গি ঠিক অবস্থায় নেই।মায়ের কাছে সন্তান কখনই বড় হয় না।সন্তান মায়ের কাছে বড় হলে লুঙ্গির এই অবস্থা কোন মা সহ্য করতে পারত না।

উঠ হারামি।দুপুর হয়ে যাইতেছে এখনো ঘুম শেষ হয় না তোর?মরার ঘুমানো ঘুমাছ নাকি?মরতে পারছ না?মরলে আর কেউ তোরে ডাকবে না।
-কি হইছে সমস্যা কি তোমার?
-সমস্যা কি মানে?সমস্যা বুঝোস না?সমস্যা ত তুই।তুই শেষ হইলেই আমার আর কোন সমস্যা নেই।

আনোয়ারার কথা গুলো বলতে কষ্ট হচ্ছে তবুও তাকে বলতে হয়।কারণ সে মা।সন্তানের ক্ষতি দেখলে মায়ের মাথা ঠিক থাকবে না এটাই স্বাভাবিক।অস্বাভাবিক কথাগুলো তাই আনোয়ারা প্রতিদিনই স্বাভাবিক ভাবে বলে যায়।

কামরুল তার মাকে ঝাড়ি দিয়ে নাস্তা না করেই গাজার সন্ধানে বের হয়ে গেলো।এভাবেই অনেকদিন চলে আসছে।
কামরুল এখন যাবে সরাসরি ইসমাইলের কাছে।ইসমাইল এই এলাকার গাজা সরবরাহকারী।তার কাছে সবসময় গাজা পাওয়া যায় কিন্তু গাজা চাইলে সে বলবে গাজা নাইরে মামা।দেশে এখন গাজার বড়ই অভাব।অভাবের মাঝেও ইসমাইল গাজা খেয়ে সারাদিন চোখ লাল করে রাখে।

কামরুল ইসমাইলকে খুজে বের করলো।শুধু মাত্র কামরুলের কাছেই ইসমাইল নিজ ইচ্ছায় গাজা সরবরাহ করে।তাকে কখনই শুনতে হয় না "গাজা নাই দেশে"।
কামরুলের জন্য ইসমাইলের দেশে সবসময় গাজা থাকে।
কামরুল গাজা খেয়ে আবার বাসায় ফিরল।তার ক্ষুধা লেগেছে।

সজীব তাহেরের রুমে বসে আছে।তাহেরের হাতে সিগারেট।দুজন অনেকক্ষন ধরে চুপ করে বসে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না।দুজনের মনে একটাই চিন্তা কাউসার কখন আসবে।

তাহের সিগারেট সজীবের দিকে বাড়িয়ে ধরল।

ধুর সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না।গাজা দরকার।
-তুই গাজা খাবি?
এত অবাক হচ্ছিস কেন? গাজা কি গু নাকি?
-না তুই না সেদিন কামরুলের সাথে আড্ডা দিতেই রাজি হলি না,কামরুল গাজা খায় দেখে।আর আজ তুই বলছিস গাজা খাবি।অবাক হবো না?
হ অবাক হ।অবাক হয়ে মরে যা।কামরুলের নাম্বারটা দিয়ে মরে যা।আমার নতুন মোবাইলে ওর নাম্বার নেই।

তাহের কামরুলের নাম্বার দিলো সজীবকে।তাহের দারুন অবাক হয়েই সজীবের দিকে চেয়ে আছে।মানুষ কত পরিবর্তনশীল।একদিনও লাগে না একটা মানুষের চেঞ্জ হতে।আচ্ছা সব মানুষই কি পরিবর্তনশীল?নাহ সব মানুষ পরিবর্তনশীল না।কিছু মানুষ আছে যারা দেখায় তারা পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তাদের ভিতরটা কখনই পরিবর্তন হয় না।সজীব সেই দলের লোক।তার ভিতরটা পরিবর্তন হয়নি কিন্তু বাহিরের রূপ দিয়ে সে গাজা খাবে।মানুষ এমনটা করে যখন সে কোন কষ্টে থাকে।

সজীব তোর কি হয়েছেরে?
-কিছু হয় নাই,কি হবে?
না হয়েছে কিছু একটা।নাহলে তুই গাজা খাওয়ার লোক না।তোকে ত আমি চিনি।
-চিনলে কেচি আর সিগারেটের ব্যবস্থা কর।আমি কামরুলকে ফোন দিচ্ছি,ও গাজা নিয়ে আসলে ওগুলি লাগবে।
বল না কি হয়েছে তোর?
-তাহের কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবি না।থাপড়ায়া দিবো।মশার মত ল্যাপটায়া যাবি।যত্তসদ বালছাল।ঘ্যান ঘ্যান করতেছে কানের সামনে।

তাহেরে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।মন খারাপ করে তাহের আরেকটা সিগারেট জ্বালালো।
আধা ঘন্টা পর কামরুল তাহেরের বাসায় এসে পৌছালো।কামরুল আর সজীবের গাজা খাওয়া শেষ হতে আধাঘন্টা লাগল।

আধা ঘন্টা ধরে তাহের চুপচাপ সুখী হবার প্রক্রিয়া দেখল।মানুষ এখন নেশা করে সুখী হবার জন্য।কি অদ্ভুত।সুখ এখন আসলেই গাছে ধরে।গাজা যদি সুখ হয় তবে ত সুখ গাছেই ধরে।

কামরুল সুখ বিতরণ করে বিদায় নিয়ে চলে গেলো তার নাকি কি কাজ আছে।
সজীব সুখী হয়ে তাহেরের খাটে শুয়ে পরল।তার আকাশ এখন রঙিন।রঙিন আকাশ দেখলে গোপন দুঃখের কথা ভাবতে ভালো লাগে।বলতেও ভালো লাগে।সজীব তাহেরকে সিগারেট জ্বালাতে বলল।

বুঝলি তাহের দুনিয়াটা বড়ই সুন্দর।আমরা মানুষরাই এইটারে ডাস্টবিন বানায়া ফেলতেছি।নিজেরা নোংরা করে দোষ দিয়ে দিচ্ছি এরে ওরে।মাঝে মাঝে ত দেখি সৃষ্টিকর্তারেও অনেকে দোষী বলে সাব্যস্ত করে ফেলে।ওদেরকে জুতা মারা উচিৎ বুঝলি।এই মুহুর্তে অবশ্য আমার কাউসারকে জুতা মারতে ইচ্ছে করছে।হারামজাদা আসল না দেখলি?
-হুম বুঝলাম।ঠিকই বলছছ দুনিয়া নষ্ট করে ফেলেছি আমরাই।কাউসারের মনে হয় কোন কাজ আছে।আসবে হয়ত সন্ধ্যায় আড্ডাতে।

কাউসারের কথা বাদ দে এই দেখ আমার বাবা-মার কথা বলি।তাদের একমাত্র সন্তান আমি।যা চাই তার ৯০% আমার পূরণ করা হয়।তাও আমার চাহিদা মিটে না।আমি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করি।এতে কি হয়?তারা কষ্ট পায় আর আমাকে গাজা খেতে হয়।তারা আমার ব্যবহার দেখে কষ্ট নিয়ে বেচে আছে আর আমি গাজা খেয়ে সুখ নিয়ে বেচে আছি।
-কি করছছ আবার বাসায়?

কিছুই করিনি।যা করেছি ঠিক করেছি।তাদের যা পাওনা সেটা পরিশোধ করেছি।তারা আমার পাওনা পরিশোধ করতে পারবে না।চাহিদা আর পাওনা এক না।তাই আমিই শোধ করেছি তাদের পাওনা।
- কি সব আবোল তাবোল বলতেছিস সজীব।কি হয়েছে?

তুই একটা বাল,তাহের।তুই কি সেটা জানস?বাল না হলে এই প্রশ্ন করতি না আমাকে।আমার বাবা-মা আমাকে ছোটবেলা কখন কোলে নিয়ে দেখেছে কিনা আমার মনে পরে না।বুঝজ্ঞান হবার পর থেকেই দেখছি তারা ব্যস্ত।ভীষণ ব্যস্ত।তাদের সন্তানের চেয়ে তারা তাদের অফিস আর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে।আমার ব্যবহারে তারা সম্ভবত কষ্টও পায় না।আমিই কষ্ট পাই মিছে মিছে।এরকম ব্যস্ত বাবা মার সন্তান হিসেবে ত আমার লালন ফকিরের খাদেম হওয়া উচিৎ ছিলো।যার কোমরে সবসময় একটা কলকি থাকবে।তাতে কখনই গাজার অভাব হবে না।

সজীবের রঙিন আকাশে মেঘ।সেই মেঘ সজীবের চোখে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরছে।তাহের মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে সজীবের দিকে।তার মনে প্রশ্ন জমছে।হাজার হাজার প্রশ্ন।এইসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।দুইজন অনেকক্ষন বসে রইল নিশ্চুপ হয়ে।এভাবে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অন্যের উপর অভিমান করে।

...............

কাউসার বিথীর সাথে দেখা করার জন্য একঘন্টা ধরে আবুলের টঙ্গে বসে আছে।এদিক দিয়েই বিথী যাবে কোচিং শেষ করে।বেয়াদপটার দেখা নেই কেনো?অন্য কোন ছেলের সাথে নিশ্চয়ই কোচিং শেষে টাঙ্কি মারছে।এই জামানার কোন মেয়েকে বিশ্বাস নেই।
তার প্রচুর রাগ উঠে আছে মাথায়।ইচ্ছে করছে কোচিং-এ ঢুকে দেখতে, কি করে বিথী।যদি দেখে আসলেই টাঙ্কি মারছে তাহলে ওইখানেই কান লাল করে ফেলা দরকার থাপরায়া।আর যদি দেখে কোচিং চলছে,বিথী কোচিং এ বসে পড়াশোনা করছে তাহলে টঙ্গে ফেরত এসে আরো এক ঘন্টা অপেক্ষা করা যায়।

ইদানিং যে দিনকাল পরছে তাতে ভালবাসা জীবিত আছে কিন্তু বিশ্বাস বড়ই ঠুনকো হয়ে গেছে।অথচ বিশ্বাস ভালবাসাকে বাচিয়ে রাখে।বিশ্বাস ঠুনকো বলেই ভালবাসা গুলো দ্রুত মারা যাচ্ছে।

বিথী আসল আরো বিশ মিনিট পর।কাউসার টঙের বিল মিটিয়ে বিথীকে নিয়ে রিক্সায় উঠল।কিছুক্ষন রিক্সায় ঘুরাঘুরি করেই তারা সবসময় একে অপরের সাথে ভালবাসা বিনিময় করে।

কি ব্যাপার কোচিং থেকে আসতে এত দেরি হলো কেন তোমার?
-আজ পরীক্ষা নিয়েছেন স্যার।তাই দেরি হয়ে গেছে।তুমি কেমন আছো?
ভালো আছি খেয়ে পরে।তোমার আব্বা কেমন আছেন?
-বাবা ভালো আছেন।তুমি আমার খোজ না নিয়ে বাবার খোজ নিচ্ছো যে?
না তোমার আব্বা ত একজন পিস।জিনিস বলা যায়।তাই খোজ নিলাম।জিনিসের খোজ খবর নেওয়া ভালো।
-কি বলো আবোল তাবোল?বাবা জিনিস মানে?
কিছু না।এইবার বলো তুমি কেমন আছো?
-আমি ভালো আছি।তোমার বোনটার কি অবস্থা?এখন কি সুস্থ?
হ্যা ভালো আছে।

রিক্সাওয়ালা একবার পিছনে ফিরে তাকালো।তাদের কথা বার্তা রিক্সাওয়ালা মোটেই শুনছে না।রিক্সাওয়ালারা এমন ভালবাসার কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত।এর পর কে কি বলতে পারে তারা তা আগেই জানে।রিক্সা এগিয়ে চলল।সন্ধ্যার আগে আগে কাউসার বিথীকে বিথীদের বাসার গলির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেলো।

............

তাহের বসে আছে তাদের বাসার ছাদে।সূর্য্যটা অস্ত যাচ্ছে।আচ্ছা সূর্য্যের ত মনে হয় মন বলে কিছু একটা আছে।তা না হলে এই সূর্য্য যখন উদয় হয় তখন তার আলো থাকে নমনীয়।যখন তার বয়স আরেকটু বাড়ে তখন তার আলো হয় কঠোর যখন তার বয়স মধ্য তখন সে প্রখর।শেষ বেলায় এই সূর্য্য একদম ম্রিয়মান হয়ে অস্ত যায়।অদ্ভুত সুন্দর নিয়মে এই সূর্য্য তার দিন পাড় করে যাচ্ছে।কোন অদল বদল নেই।

তাহেরের হাতের সিগারেট শেষ হয়ে এসেছে।শেষ টান দিয়ে সিগারেট ফেলে দিয়ে সে ছাঁদ থেকে নেমে পুকুর পাড়ের দিকে হাটা দিলো।আজ আড্ডা মারতে তার ভালো লাগবে না তবুও আড্ডায় যেতে হবে।কারণ এই সন্ধ্যায় তার কিছুই করার নেই।

আজ আড্ডায় সবাই আছে।কাউসার,সজীব,কামরুল।আরেকজন নতুন মুখও আছে।
ইসমাইল।বিশিষ্ট গাজা সরবরাহকারী।

পুরো সন্ধ্যাটা তারা আড্ডা দিলো।চুপ থাকল শুধু সজীব।পুরো আড্ডা তে সে কোন কথা বলেনি।বন্ধুরা কয়েকবার প্রশ্ন করাতে সে শুধু একটা উত্তরই দিয়ে গেছে তার ভাল লাগছে না।

আড্ডা শেষ হতে হতে রাত ১১টার মতন বেজে গেলো।ইসমাইল আজ আড্ডায় প্রচুর গাজা সরবরাহ করেছে।তাহের বাদে সবাই ভরপুর গাজায় সুখ খুজেছে।কে কতটুকু সুখ পেলো তা বোঝা যায়নি।গোপন ব্যাপার বোঝা না যাওয়ারই কথা।

আড্ডা থেকে ফিরেই সজীব আত্নহত্যা করল।রুমের দরজা বন্ধ ছিলো ভিতর থেকে।দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকতে হয়েছে।ততক্ষনে সজীবের গলায় দড়ির দাগ গাড় হয়েছে।নাইলনের দড়ি গলায় ক্ষত তৈরি করেছে।কাল একটা দাগ হয়ে রয়েছে গলায়।লাশের গলায় এমন দাগ দেখতে ভাল লাগছে না।ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে।ভিষণ ভয়ঙ্কর।

তাহের,কাউসার আর কামরুল দাঁড়িয়ে আছে তাদের বন্ধুর লাশের পাশেই।কামরুল কাদছে।শুধু তার চোখেই পানি।তাহের আর কাউসার নির্বাক।তাহেরের হাতে সজীবের কেনা নতুন মোবাইল সেট।মোবাইলের স্ক্রীনে ওয়াল পেপারটা সুন্দর।ব্যাকগ্রাউন্ড এ মেঘলা আকাশের ছবি,তাতে ইংরেজীতে লেখাঃ

One day I'll explode!
I am boy and not a toy
I will kill and I will destroy
I am boy and not a toy
I will kill and I will destroy parents
Parents, parents
They don't even know I'm a boy
They treat me like a toy
But little do they know
One day I'll explode!
 
Top