বৃষ্টির ছাঁট এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিল। ঘুমানোর আগে জানালাটা বন্ধ করা হয় নি। ঘুম ভেঙে প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন আর খারাপ লাগছে না। ফ্যান টা ফুল স্পীডে ছাড়া। ঘরে কেমন যেন ১টা আরামদায়ক শীতলতা। ইচ্ছা করছে কাঁথাটা জড়াতে আবার আলসেমিও লাগছে। এমন সময় বালিশ টা কাঁপতে শুরু
করল। এই মোবাইল নামক যন্ত্রটা এখন আর কাউকে একাকী থাকতে দেয় না। আলসেমি করতে করতেই ফোনটা কেটে গেলো। খুব চেনা ১টা নাম স্ক্রিনে। ধ্রুব।

নাম্বারটা রিডায়াল করতেই ও কল কেটে দিল।অদ্ভুত স্বভাব এই ছেলেটার। কখন যে রাগ করে আর কেন যে রাগ করে তা বোধয় ও নিজেও হিসেব করে বলতে পারবে না। আবার ফোন। প্রথম রিং টা শেষ হওয়ার আগেই এইবার ধরে ফেললাম।

“কিরে কেটে দিলি যে...”

“আমার ইচ্ছা”- ধ্রুব

“আমার ইচ্ছা মানে...!!! কারণ টা কি সেটা বল।”

“সকালের প্রথম wish টা তুই কেন করবি...!!!! ওটা আমার right”

আমি একটু হেসে বললাম “কিন্তু এখনও তো wish করিস নি।”

“এই যে আমার কথায় খুশি হয়ে একটু আগে তুই হাসলি.....ওটাই আমার morning wish”

“খুব ভালো মেয়ে পটানো শিখে ফেলেছিস দেখি”

১টা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধ্রুব বলে “এতো দিনে তো তোকেই পটাতে পারলাম না। আফসোস।”

“ঠিক আছে তুই আফসোস কর। আমি এখন রাখি।”

আমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পাশের বাসার কদম ফুল গাছটা আমাদের বারান্দা থেকে হাত বাড়ালে ছোঁয়া যায়। বৃষ্টি ভেজা ফুল গুলো কে ছুঁয়ে দিতে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। তবে আজ কি একটু বেশিই ভালো লাগছে !!!! নাহ এতোসব ভাববার সময় নেই। একটু পর ক্লাস। তাই তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিলাম।

“মা আমি যাচ্ছি। ক্যান্টিনে খেয়ে নেবো। ফিরতে দেরি হতে পারে। আজ বোধহয় ল্যাব আছে।” – কথাগুলো ১ নিঃশ্বাসে বলেই বের হলাম। নাহয় মা আটকে দেবেন আর না খাইয়ে ছাড়বেন না। তাড়াতাড়ি পা চালালাম।

মোড়টায় পৌঁছতেই দেখি ধ্রুব দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে হাত ঘড়িটার দিকে ইশারা করল। আমি ঘড়ি দেখে জিব কেটে বললাম-

“সরি সরি সরি একটু দেরি করে ফেললাম”

“তোরা মেয়েরা না পারিসও বটে... এটাকে একটু বলে !!!!!”

“আচ্ছা আমরা কি বাস টা মিস করলাম?”

“আমরা না তুই। আর মহারানীর সেবায় নিয়জিত হয়ে আমিও মিস করলাম।”- ধ্রুব এই বলে সামনে হাঁটা শুরু করল।

“আচ্ছা এরপর থেকে আর এমন করবো না। solid বলছি।” বলতে বলতে আমি ওর পিছু নিলাম।ধ্রুব ততক্ষনে রিক্সা নিয়ে ফেলেছে।

“আমরা কোথায় যাবো?”

“জাহান্নামে। যাবি আমার সাথে?” আমার প্রশ্নের উত্তর দিল ধ্রুব। আমি উঠে পড়লাম রিক্সায়। চলতে শুরু করল রিক্সাটা। আজ বোধয় আর ক্লাসটা করা হবে না। পাগল খেপেছে।

“আচ্ছা আজ সকালে যখন তুই আমাকে ফোন করলি কেমন যেন ১টা টকাস টকাস শব্দ শুনলাম। কিসের শব্দ রে?” আমার প্রশ্নে কেমন যেন একটু চমকে উঠল ধ্রুব। যদিও বলল “শব্দ !!!! কিসের !!!!! মনে হয় নেটওয়ার্ক প্রবলেম। সকালে বৃষ্টি হচ্ছিল তো।”

“কিন্তু ধ্রুব আমি যে এই শব্দটা প্রায়ই শুনি তোকে ফোন দিলেই......”

“আমাদের বাসার পাশে কন্সট্রাকসনের কাজ চলছে তো......সেটাই শুনিস মনে হয়।”

আমি আর কিছু বলার আগেই আকাশ জোড়া মেঘ আমাদের ভাসিয়ে দিল। রিক্সার হুড তুলতে তুলতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। আজ বোধয় মেঘেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো শহর টাকে ভাসিয়ে দেবে। রিক্সাটা থামিয়ে একপাশে ১টা গাছের নিচে নিয়ে আসলো রিক্সাওয়ালা। আমি হটাৎ নেমে পড়লাম রিক্সা থেকে। ধ্রুব অবাক-

“কিরে......”

“চল বৃষ্টিতে ভিজি......প্লিজ।” ধ্রুবকে শেষ করতে দিলাম না আমি। সাথে সাথে ধ্রুব এক চিলতে হাসি দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিল। ওর এই হাসিটা দেখলে কেমন যেন অসাড় লাগে। কেন যেন বারবার ওর এই হাসিমুখটা দেখতে ইচ্ছা করে। আমাকে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও আমার সামনে হাত নেড়ে বলল “হ্যালো ম্যাডাম... কি হল!” ভাগ্যিস ওর পেছনে একটা পিচ্চি ছেলে কদম ফুল বিক্রি করছিল। আমি ওকে সেদিকে ইশারা করলাম।

“এক মিনিট। আমি যাবো আর মহারানীর চরণের পুষ্পার্ঘ্য নিয়ে আসব” এই বলে ধ্রুব পেছন ঘোরার আগেই আমি বললাম “ফোন টা দিয়ে যা বৃষ্টিতে ভিজে যাবে।” ধ্রুব ফোনটা আমার হাতে দিয়ে পা বাড়াল।

আমি ওর ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতেই বের হল ১টা ফোল্ডার ‘স্বপ্ন’। আমিও এটাই সন্দেহ করছিলাম। ওর মেমোরি কার্ডে কোন গান বা কোন অডিও নেই। শুধু আছে আমার সাথে ওর কথোপকথনের রেকর্ড। আর এই কারনেই আমার সাথে যখন ও কথা বলে অমন শব্দ হতো। দেখতে দেখতে খেয়ালই করিনি ধ্রুব কখন যে আমার পেছেনে এসে দাঁড়িয়েছে।

“খুব ইচ্ছা করতো ভোরে তোর কণ্ঠ শুনে ঘুম ভাঙবে আমার। কিন্তু কিভাবে বলবো এই কথা......তাই......” অপরাধী শোনালো ধ্রুবর কণ্ঠটা।

“তাই কি......?” ধ্রুবর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম।

“তাই তোর ভয়েস ক্লিপিংস গুলো অ্যালার্ম টোন সেট করলাম।” ধ্রুব খুব তাড়াতাড়ি বলে ফেলল। “আমি চাইলেই তো আর তুই সারাক্ষণ আমার সাথে কথা বলবি না তাই যতক্ষণ তোর সাথে কথা না হয় তোর রেকর্ড করা ভয়েসটাই শুনতে থাকি।” অভিমানি শোনালো ওর কণ্ঠ।

“তাই বলে তুই একটা মেয়ের পারমিশন ছাড়া তার কথা রেকর্ড করবি......” কিছুটা ধমকের সুরে বললাম।

“আই এম সরি।” ধ্রুবর মাথাটা ঝুঁকে পড়ল।

আমি ওর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম।

কিছুদূর গিয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম “কিরে এখনও আমি একাই ভিজবো? আমার হাতটা ধরবি না......”

ধ্রুব মাথাটা তুলে ভেজা চোখে ওর সেই অদ্ভুত হাসিটা আবার হাসল। আমি আবারো অসাড় হয়ে গেলাম। ভালবাসা কি সবাইকেই এমন অসাড় করে দেয়..................??????????!!!!!!!!!
 
Top