"আপনি ওনার কে হন?"
"জি উনি আমার হাসবেন্ড"
"উনিকি এর আগে কখনো মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন??"
"আমার জানামতে পায়নি। কেনো ডাক্তার সাহেব?? কোন সমস্যা??"
চিন্তিত মুখে ড. আহমেদ সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখছেন অনেক আগে থেকেই। বুঝতে পারছি না। কিছু বলবেন বলবেন করেও বলছেন না। এদিকে পাগলাটার চিন্তায় আমি অস্থির্। কয়েক সপ্তাহ থেকেই মাথা ব্যাথা মাথা ব্যাথা করছে। আরো আগেই আসা উচিত ছিলো। কিন্তু পাগলামি করতে করতে সময় পার করেছে। গত মাসের আগের মাসে বাইক এক্সিডেন্ট করেছিলাম আমরা। ওর মাথায় খানিকটা চোট লাগা ছাড়া কিছুই হয়নি। আমার হাতে প্লাস্টার নিয়ে বাইশ দিন বসে থাকতে হয়েছে। বুঝতে পারছিনা ওই সময়ই কি পাগলা কোন অঘটন ঘটিয়েছে কিনা। এদিকে ওনারতো কোন খবরি নেই। ওনার টেস্ট এর রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়চ্ছি আমি।
"আপনি বরং পরশু রাতে আসুন। সাথে অন্য কাউকে আনবেন। এই হসপিটালের ১৪ তলায় আমার বাসা। আপনার শশুর বা কোন দেবর বা ভাসুর কে নিয়ে আসবেন।"
"কিন্তু আমার তো শশুর দেবর বা ভাসুর কেউ নেই"
"পারিবারিক কোন বন্ধু??"
"তা আছে। আচ্ছা তাহলে আমি উঠি।"
খুব টেনশন হচ্ছে। রাস্তায় দাড়িয়ে পাগলাটাকে কল করলাম।
"এ্যাই, কই তুমি??"
"এইতো অফিসে। কাজ শেষ, ফাইল গুছিয়ে বাসায় আসছি"
"বাসায় যাবার সময় আমাকে কল্যানপুর ওভারব্রিজের গোড়া থেকে পিক আপ করো। আমি ওয়েট করছি"
"তুমি বেরিয়েছো কেনো?? হাতটা আবার ভেঙ্গে দিবো। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি। আমি আসছি"
ইস!!!! আমাকে আবার বকা দেয়। দাড়া আজ বাসায় গিয়ে দেখাচ্ছি মজা!!!
পাক্কা ২৫ মিনিট পর আসে পাগলাটা। আমাকে খুজছে। পাবে কি করে??? আমি ঠিক ওর মাথার উপরে ওভারব্রিজে দাড়িয়ে। আমাকে বকা দিয়েছে, এখন শাস্তি পাক। ও চারদিকে তাকালো। ফলের দোকান গুলোর দিকেও তাকালো। হঠাত দেখি আনমনে হাসছে। বাইক থেকে নেমে বাইকে তালা লাগিয়ে কই যে ছুট লাগালো বুঝতে পারলাম না। রেলিং দিয়ে আরেকটু ঝুকে ওকে খুজতে গেলাম। তখনি ঘটলো ঘটনাটা। কেউ একজন আমাকে ঠেলা দিলো পিছন থেকে। আতঙ্কে চিতকার করতে যাবার আগেই আমাকে সেই হাতটাই টান দিয়ে ঘুরিয়ে দিলো। পাগলা!!!!! এখানে এলো কি করে!!!! আমি ধরা পড়ে গেলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। কোন কথা না বলে নিচে নামলাম। ও দেখি কিছু বলছে না। মিটমিটিয়ে হাসছে শুধু। শয়তানটা খালি সব ব্যাপারে আমাকে হারিয়ে দেয়। বাইকেও দুরে সরে বসলাম। ও রিয়ারভিউ মিররে তা দেখে জোরে বাইক ছোটালো। ভয় পেলাম। ছিটকে ওর দিকে লেপ্টে বসলাম। মিররে হেলমেটের আড়ালে ওর মুচকি হাসি দেখলাম। মেজাজ খারাপ করার মত হাসি। এই হাসির কারনেই ওর ওপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। তন্ময় হয়ে ওকে দেখছিলাম।
ওর গুতোয় ধ্যানভঙ্গ হলো। বাসায় এসে গেছি। নেমে সিড়ি ভেঙ্গে উঠলাম। তালা খুলে ফ্লাটে ঢুকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রে শ হয়ে এলাম। চুলায় চা বসিয়ে বারান্দায় এলাম। হঠাত কাধে গরম কোন স্পর্শ পেলাম। পাগলাটা গোসল করে এসেছে।
"কি গো??? বকা খেয়ে মন খারাপ বুঝি???"
"নাহ। তুমি বস। আমি চা বসিয়েছি নিয়ে আসি।"
"হুমম। আজকের পেপারটা কই???"
"দিচ্ছি"
ওকে পেপার দিয়ে চা করে আবার বারান্দায় এলাম। ও বসে পেপার পড়ছে। আমার সাড়া পেয়ে পেপার নামিয়ে রাখলো। ওর এই জিনিসটা ভালো। ঘরে থাকলে আমাকে খুব প্রাইওরিটি দেয়। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিলো।
"তোমার মন খারাপ কেনো?"
"কই নাতো"
আমার কিছু হলে পাগলাটা কিভাবে যেনো আগে আগে বুঝে ফেলে।
" না হলেই ভালো"
"আচ্ছা, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?"
"করো"
"ধরো, আমার কিছু হলো, মানে মরে গেলাম না। কিন্তু এমন কিছু হলো যাতে আমি চলার শক্তি হারিয়ে ফেল্লাম বা আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেলো। তুমি কি করবে??"
"কি করবো?? নুতন একটা বিয়ে করবো"
আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি ওকে কারো সাথে কখনো ভাগাভাগি করতে পারবোনা।
আমারদিকে তাকিয়ে ও বুঝলো আমি কষ্ট পেয়েছি। চায়ের কাপটা রেখে আমার হাত ধরে ওর দিকে টানলো। ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
" আমি তোমার এমন কিছু হতে দেবো না। আর আল্লাহ না করুন যদি হয়েই যায় তবে আর কি করার! বাইরের কাজের সাথে সাথে বাসার কাজ গুলোও আমাকে করতে হবে আরকি!"
আমি জানি এটাই সত্যি। পাগলটা আমাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে। ওর দিকে এগিয়ে ওর একটা বাহু পেচিয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখলাম। ও জিজ্ঞেস করলো
" আচ্ছা পিচ্চি, সেম ঘটনা যদি আমার সাথে হয়??"
মুখ উল্টিয়ে জবাব দিলাম " আরেকটা বিয়ে করবো!"
হো হো করে হেসে উঠলো পাগলাটা। আমি কি হাসির কথা বলেছি নাকি?? কই একটু মন খারাপ করবে। আমারি মন খারাপ হয়ে গেলো।
" কখনো এমন হলে আমি সারাদিন তোমাকে ধরে বসে থাকবো। কোথাও যাবো না।"
"তাই নাকি??? ওরেব্বাবা!"
পাগলটা আমাকে খুব শক্ত করে ধরল। খুব ভালো লাগছে। কিন্তু কেনো যেনো মনে হচ্ছে something wrong. আমার আবার 6th sense খুব প্রখর্।
ড. আহমেদের বাসায় আমি আর আরাফাত বসে আছি। সামনে চায়ের কাপ। ডাক্তার সাহেব রাশভারি মানুষ।
" আপনার হাসবেন্ডের খুব খারাপ একটা রোগ ধরা পড়েছে। রোগ বলা ঠিক হবে না। traumatic injury. আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা???"
হতভম্ব হয়ে মাথা নাড়লাম।
" মাথায় আঘাতের দরুন ওনার স্বরনশক্তি খুব দ্রুত হারিয়ে যাবে। আর হয়তো এক বা দু মাসের মাথায় সব ভুলে যাবেন উনি। এটাকে আলজেইমার ডিজিস বলে। খুবি রেয়ার একটা কেস। আমার লাইফে ফার্স্ট এধরনের কেস হ্যান্ডল করছি। এটার কোন চিকিতসা নেই। আমাদের দেশে না সুধু, বাইরের দেশেও নেই। যত দ্রুত পারেন ওনাকে সব কাজ থেকে গুটিয়ে নিন। বিশ্রামে হয়তো আরো কটা দিন ভালো থাকবেন। "
আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা। কি শুনছি এসব!!! আরাফাত প্রশ্ন করলো "আপনি কি শিওর যে বাইরেও কোন চিকিতসা নেই?"
" মাউন্ট এলিজাবেথের নিউরোলোজির এক সার্জন আমার বন্ধু। ওর সাথে কথা বলেছি। সত্যি কিছু কিছু রোগ থাকে আমাদের ডাক্তারদের করার মত কিছুই থাকে না। ওনার এখন দরকার পূর্ণ বিস্রামের্। আমি কিছু মেডিসিন দিচ্ছি নিয়ে যান।"
বেরিয়ে এলাম। কিচ্ছু মাথায় কাজ করছে না!!!! পাগলাটা এত বড় সমস্যা মাথায় করে নিয়ে বেড়াচ্ছে???
দুনিয়াটা আধার হয়ে এলো। বাসায় ফিরে জামাটা বদলেই বারান্দায় এলাম। পাগলাটা আমার পায়ে পায়ে আমার পেছনে।
"জামিল, তোমার কাছে একটা জিনিস চাবো।"
ও ভয় পাবার ভাব করে বললো "দেখো মাস শেষের দিকে। আমার হাতে কিন্তু টাকা পয়সা নেই "
সব সময় ওর ফাজলামো। আমি ধার ধারলাম না। ওর একটা হাত ধরলাম।
"আমাকে একটা বাচ্চা নিতে দাওনা। আমার সময় কাটেনা। আমাদের ট এমন অভাব নেই যে একটা হাট্টিমাটিম টিম পালতে পারবোনা"
"এটা কিছু হলো??? বাচ্চা নেবো নাকি নেবো না এটা তোমার সিদ্ধান্ত। আমি কোনোদিন তোমাকে কিছুতে মানা করেছি???" হাসি হাসি মুখ পাগলাটার্।
আমি পারমানেন্ট হতে চাচ্ছি আসলে। একটা বাচ্চা হয়ে গেলে আমাকে আর বাসার কেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নেবে না। অনেক এডভান্স চিন্তা করে রাখছি। কাল ওর অফিসে গিয়ে ওর বসের সাথে কথা বলতে হবে। আরাফাতকে কল দিলাম। কাল ওর সাথে কথা বলেই সব ফাইনাল করবো।
ও যেমন আমার বন্ধু তেমনি জামিলেরো বন্ধু।
"তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস??"
"আমি অনেক ভেবেচিন্তে বলেছি।"
"তোর লাইফটা এখনো অনেক বাকি"
"হুমম। জামিলকে ছাড়া বাকি লাইফ দিয়ে কি করবো??"
"যা বুঝিস কর্। আমি সাপোর্ট দেবো। "
আশস্ত হলাম। দুনিয়ায় একটা অন্তত সাপোর্ট থাকবে।
৩ বছর পর্...
জামিল খাটে শুয়ে আছে। খুব চিন্তিত মুখ।
"আচ্ছা এই পিচ্চিটা কে?"
"হুমম। এটা পরশ। তোমার ছেলে।"
"ও!!!! আচ্ছা তুমি কে?"
"আমি তোমার বউ"
"ও!!!!! আচ্ছা আমার নাম কি?"
"তোমার নাম জামিল। এখন ঘুমাও। আজ অনেক প্রশ্ন করেছো।"
বাধ্য ছেলের মতো চোখ বন্ধ করে ফেলে জামিল। প্রাত্যাহিক বারো থেকে তেরো বার আমাকে প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে হয়। ওকে এখন আর পাগলা ডাকি না। ও নিজেও আমাকে এখন আর পিচ্চি ডাকে না। এখন আমরা লস এঞ্জেলস এ থাকি। দেশে যা সম্পত্তি ছিলো বিক্রি করে দিয়ে এখানে এসে উঠেছি। জামিলের জন্যও সুবিধা। হাতের কাছে ডাক্তার পাচ্ছি ভালো ভালো। ছোট একটা বাড়ি আছে আমাদের এখানে। আমি একটা স্কুলে পড়াই। চলে যায় আমাদের্। জামিলকে এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সময় ধরে কাছে পাই। খুব ভাবুক হয়ে গেছে ছেলেটা। আমার বাবা মা আমাকে আবার বিয়ে দেবার চেষ্টা করায় পালিয়ে চলে এসেছি। পুরোন দিনের কথা রোমন্থন করে দিন চলে যাচ্ছে। জামিলটা আর বেশিদিন বাচবে না। ডাক্তারের কথামত ওর যাবার সময় হয়ে এসেছে। চলে যাক। এভাবে বাচতে নিশ্চিত ওরো ভালো লাগেনা। ওপারে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।
## "আচ্ছা পিচ্চি, সেম ঘটনা যদি আমার সাথে হয়??"
মুখ উল্টিয়ে জবাব দিলাম " আরেকটা বিয়ে করবো!"
হো হো করে হেসে উঠলো পাগলাটা। আমি কি হাসির কথা বলেছি নাকি?? কই একটু মন খারাপ করবে। আমারি মন খারাপ হয়ে গেলো।
" কখনো এমন হলে আমি সারাদিন তোমাকে ধরে বসে থাকবো। কোথাও যাবো না।"##
আমি কথা রেখেছি জামিল। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাইনি।
"জি উনি আমার হাসবেন্ড"
"উনিকি এর আগে কখনো মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন??"
"আমার জানামতে পায়নি। কেনো ডাক্তার সাহেব?? কোন সমস্যা??"
চিন্তিত মুখে ড. আহমেদ সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট দেখছেন অনেক আগে থেকেই। বুঝতে পারছি না। কিছু বলবেন বলবেন করেও বলছেন না। এদিকে পাগলাটার চিন্তায় আমি অস্থির্। কয়েক সপ্তাহ থেকেই মাথা ব্যাথা মাথা ব্যাথা করছে। আরো আগেই আসা উচিত ছিলো। কিন্তু পাগলামি করতে করতে সময় পার করেছে। গত মাসের আগের মাসে বাইক এক্সিডেন্ট করেছিলাম আমরা। ওর মাথায় খানিকটা চোট লাগা ছাড়া কিছুই হয়নি। আমার হাতে প্লাস্টার নিয়ে বাইশ দিন বসে থাকতে হয়েছে। বুঝতে পারছিনা ওই সময়ই কি পাগলা কোন অঘটন ঘটিয়েছে কিনা। এদিকে ওনারতো কোন খবরি নেই। ওনার টেস্ট এর রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়চ্ছি আমি।
"আপনি বরং পরশু রাতে আসুন। সাথে অন্য কাউকে আনবেন। এই হসপিটালের ১৪ তলায় আমার বাসা। আপনার শশুর বা কোন দেবর বা ভাসুর কে নিয়ে আসবেন।"
"কিন্তু আমার তো শশুর দেবর বা ভাসুর কেউ নেই"
"পারিবারিক কোন বন্ধু??"
"তা আছে। আচ্ছা তাহলে আমি উঠি।"
খুব টেনশন হচ্ছে। রাস্তায় দাড়িয়ে পাগলাটাকে কল করলাম।
"এ্যাই, কই তুমি??"
"এইতো অফিসে। কাজ শেষ, ফাইল গুছিয়ে বাসায় আসছি"
"বাসায় যাবার সময় আমাকে কল্যানপুর ওভারব্রিজের গোড়া থেকে পিক আপ করো। আমি ওয়েট করছি"
"তুমি বেরিয়েছো কেনো?? হাতটা আবার ভেঙ্গে দিবো। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি। আমি আসছি"
ইস!!!! আমাকে আবার বকা দেয়। দাড়া আজ বাসায় গিয়ে দেখাচ্ছি মজা!!!
পাক্কা ২৫ মিনিট পর আসে পাগলাটা। আমাকে খুজছে। পাবে কি করে??? আমি ঠিক ওর মাথার উপরে ওভারব্রিজে দাড়িয়ে। আমাকে বকা দিয়েছে, এখন শাস্তি পাক। ও চারদিকে তাকালো। ফলের দোকান গুলোর দিকেও তাকালো। হঠাত দেখি আনমনে হাসছে। বাইক থেকে নেমে বাইকে তালা লাগিয়ে কই যে ছুট লাগালো বুঝতে পারলাম না। রেলিং দিয়ে আরেকটু ঝুকে ওকে খুজতে গেলাম। তখনি ঘটলো ঘটনাটা। কেউ একজন আমাকে ঠেলা দিলো পিছন থেকে। আতঙ্কে চিতকার করতে যাবার আগেই আমাকে সেই হাতটাই টান দিয়ে ঘুরিয়ে দিলো। পাগলা!!!!! এখানে এলো কি করে!!!! আমি ধরা পড়ে গেলাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। কোন কথা না বলে নিচে নামলাম। ও দেখি কিছু বলছে না। মিটমিটিয়ে হাসছে শুধু। শয়তানটা খালি সব ব্যাপারে আমাকে হারিয়ে দেয়। বাইকেও দুরে সরে বসলাম। ও রিয়ারভিউ মিররে তা দেখে জোরে বাইক ছোটালো। ভয় পেলাম। ছিটকে ওর দিকে লেপ্টে বসলাম। মিররে হেলমেটের আড়ালে ওর মুচকি হাসি দেখলাম। মেজাজ খারাপ করার মত হাসি। এই হাসির কারনেই ওর ওপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। তন্ময় হয়ে ওকে দেখছিলাম।
ওর গুতোয় ধ্যানভঙ্গ হলো। বাসায় এসে গেছি। নেমে সিড়ি ভেঙ্গে উঠলাম। তালা খুলে ফ্লাটে ঢুকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রে শ হয়ে এলাম। চুলায় চা বসিয়ে বারান্দায় এলাম। হঠাত কাধে গরম কোন স্পর্শ পেলাম। পাগলাটা গোসল করে এসেছে।
"কি গো??? বকা খেয়ে মন খারাপ বুঝি???"
"নাহ। তুমি বস। আমি চা বসিয়েছি নিয়ে আসি।"
"হুমম। আজকের পেপারটা কই???"
"দিচ্ছি"
ওকে পেপার দিয়ে চা করে আবার বারান্দায় এলাম। ও বসে পেপার পড়ছে। আমার সাড়া পেয়ে পেপার নামিয়ে রাখলো। ওর এই জিনিসটা ভালো। ঘরে থাকলে আমাকে খুব প্রাইওরিটি দেয়। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ নিলো।
"তোমার মন খারাপ কেনো?"
"কই নাতো"
আমার কিছু হলে পাগলাটা কিভাবে যেনো আগে আগে বুঝে ফেলে।
" না হলেই ভালো"
"আচ্ছা, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?"
"করো"
"ধরো, আমার কিছু হলো, মানে মরে গেলাম না। কিন্তু এমন কিছু হলো যাতে আমি চলার শক্তি হারিয়ে ফেল্লাম বা আমার চেহারা নষ্ট হয়ে গেলো। তুমি কি করবে??"
"কি করবো?? নুতন একটা বিয়ে করবো"
আমার চোখে পানি চলে এলো। আমি ওকে কারো সাথে কখনো ভাগাভাগি করতে পারবোনা।
আমারদিকে তাকিয়ে ও বুঝলো আমি কষ্ট পেয়েছি। চায়ের কাপটা রেখে আমার হাত ধরে ওর দিকে টানলো। ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
" আমি তোমার এমন কিছু হতে দেবো না। আর আল্লাহ না করুন যদি হয়েই যায় তবে আর কি করার! বাইরের কাজের সাথে সাথে বাসার কাজ গুলোও আমাকে করতে হবে আরকি!"
আমি জানি এটাই সত্যি। পাগলটা আমাকে পাগলের মতোই ভালোবাসে। ওর দিকে এগিয়ে ওর একটা বাহু পেচিয়ে ধরে ওর কাধে মাথা রাখলাম। ও জিজ্ঞেস করলো
" আচ্ছা পিচ্চি, সেম ঘটনা যদি আমার সাথে হয়??"
মুখ উল্টিয়ে জবাব দিলাম " আরেকটা বিয়ে করবো!"
হো হো করে হেসে উঠলো পাগলাটা। আমি কি হাসির কথা বলেছি নাকি?? কই একটু মন খারাপ করবে। আমারি মন খারাপ হয়ে গেলো।
" কখনো এমন হলে আমি সারাদিন তোমাকে ধরে বসে থাকবো। কোথাও যাবো না।"
"তাই নাকি??? ওরেব্বাবা!"
পাগলটা আমাকে খুব শক্ত করে ধরল। খুব ভালো লাগছে। কিন্তু কেনো যেনো মনে হচ্ছে something wrong. আমার আবার 6th sense খুব প্রখর্।
ড. আহমেদের বাসায় আমি আর আরাফাত বসে আছি। সামনে চায়ের কাপ। ডাক্তার সাহেব রাশভারি মানুষ।
" আপনার হাসবেন্ডের খুব খারাপ একটা রোগ ধরা পড়েছে। রোগ বলা ঠিক হবে না। traumatic injury. আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা???"
হতভম্ব হয়ে মাথা নাড়লাম।
" মাথায় আঘাতের দরুন ওনার স্বরনশক্তি খুব দ্রুত হারিয়ে যাবে। আর হয়তো এক বা দু মাসের মাথায় সব ভুলে যাবেন উনি। এটাকে আলজেইমার ডিজিস বলে। খুবি রেয়ার একটা কেস। আমার লাইফে ফার্স্ট এধরনের কেস হ্যান্ডল করছি। এটার কোন চিকিতসা নেই। আমাদের দেশে না সুধু, বাইরের দেশেও নেই। যত দ্রুত পারেন ওনাকে সব কাজ থেকে গুটিয়ে নিন। বিশ্রামে হয়তো আরো কটা দিন ভালো থাকবেন। "
আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা। কি শুনছি এসব!!! আরাফাত প্রশ্ন করলো "আপনি কি শিওর যে বাইরেও কোন চিকিতসা নেই?"
" মাউন্ট এলিজাবেথের নিউরোলোজির এক সার্জন আমার বন্ধু। ওর সাথে কথা বলেছি। সত্যি কিছু কিছু রোগ থাকে আমাদের ডাক্তারদের করার মত কিছুই থাকে না। ওনার এখন দরকার পূর্ণ বিস্রামের্। আমি কিছু মেডিসিন দিচ্ছি নিয়ে যান।"
বেরিয়ে এলাম। কিচ্ছু মাথায় কাজ করছে না!!!! পাগলাটা এত বড় সমস্যা মাথায় করে নিয়ে বেড়াচ্ছে???
দুনিয়াটা আধার হয়ে এলো। বাসায় ফিরে জামাটা বদলেই বারান্দায় এলাম। পাগলাটা আমার পায়ে পায়ে আমার পেছনে।
"জামিল, তোমার কাছে একটা জিনিস চাবো।"
ও ভয় পাবার ভাব করে বললো "দেখো মাস শেষের দিকে। আমার হাতে কিন্তু টাকা পয়সা নেই "
সব সময় ওর ফাজলামো। আমি ধার ধারলাম না। ওর একটা হাত ধরলাম।
"আমাকে একটা বাচ্চা নিতে দাওনা। আমার সময় কাটেনা। আমাদের ট এমন অভাব নেই যে একটা হাট্টিমাটিম টিম পালতে পারবোনা"
"এটা কিছু হলো??? বাচ্চা নেবো নাকি নেবো না এটা তোমার সিদ্ধান্ত। আমি কোনোদিন তোমাকে কিছুতে মানা করেছি???" হাসি হাসি মুখ পাগলাটার্।
আমি পারমানেন্ট হতে চাচ্ছি আসলে। একটা বাচ্চা হয়ে গেলে আমাকে আর বাসার কেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নেবে না। অনেক এডভান্স চিন্তা করে রাখছি। কাল ওর অফিসে গিয়ে ওর বসের সাথে কথা বলতে হবে। আরাফাতকে কল দিলাম। কাল ওর সাথে কথা বলেই সব ফাইনাল করবো।
ও যেমন আমার বন্ধু তেমনি জামিলেরো বন্ধু।
"তুই যা বলছিস ভেবে বলছিস??"
"আমি অনেক ভেবেচিন্তে বলেছি।"
"তোর লাইফটা এখনো অনেক বাকি"
"হুমম। জামিলকে ছাড়া বাকি লাইফ দিয়ে কি করবো??"
"যা বুঝিস কর্। আমি সাপোর্ট দেবো। "
আশস্ত হলাম। দুনিয়ায় একটা অন্তত সাপোর্ট থাকবে।
৩ বছর পর্...
জামিল খাটে শুয়ে আছে। খুব চিন্তিত মুখ।
"আচ্ছা এই পিচ্চিটা কে?"
"হুমম। এটা পরশ। তোমার ছেলে।"
"ও!!!! আচ্ছা তুমি কে?"
"আমি তোমার বউ"
"ও!!!!! আচ্ছা আমার নাম কি?"
"তোমার নাম জামিল। এখন ঘুমাও। আজ অনেক প্রশ্ন করেছো।"
বাধ্য ছেলের মতো চোখ বন্ধ করে ফেলে জামিল। প্রাত্যাহিক বারো থেকে তেরো বার আমাকে প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে হয়। ওকে এখন আর পাগলা ডাকি না। ও নিজেও আমাকে এখন আর পিচ্চি ডাকে না। এখন আমরা লস এঞ্জেলস এ থাকি। দেশে যা সম্পত্তি ছিলো বিক্রি করে দিয়ে এখানে এসে উঠেছি। জামিলের জন্যও সুবিধা। হাতের কাছে ডাক্তার পাচ্ছি ভালো ভালো। ছোট একটা বাড়ি আছে আমাদের এখানে। আমি একটা স্কুলে পড়াই। চলে যায় আমাদের্। জামিলকে এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সময় ধরে কাছে পাই। খুব ভাবুক হয়ে গেছে ছেলেটা। আমার বাবা মা আমাকে আবার বিয়ে দেবার চেষ্টা করায় পালিয়ে চলে এসেছি। পুরোন দিনের কথা রোমন্থন করে দিন চলে যাচ্ছে। জামিলটা আর বেশিদিন বাচবে না। ডাক্তারের কথামত ওর যাবার সময় হয়ে এসেছে। চলে যাক। এভাবে বাচতে নিশ্চিত ওরো ভালো লাগেনা। ওপারে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে।
## "আচ্ছা পিচ্চি, সেম ঘটনা যদি আমার সাথে হয়??"
মুখ উল্টিয়ে জবাব দিলাম " আরেকটা বিয়ে করবো!"
হো হো করে হেসে উঠলো পাগলাটা। আমি কি হাসির কথা বলেছি নাকি?? কই একটু মন খারাপ করবে। আমারি মন খারাপ হয়ে গেলো।
" কখনো এমন হলে আমি সারাদিন তোমাকে ধরে বসে থাকবো। কোথাও যাবো না।"##
আমি কথা রেখেছি জামিল। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাইনি।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন