মেয়েদের সেক্সআমি বহুগামিতায় বিশ্বাস করি। মানুষ মাত্রেই তাই, তবে এভাবে কেউ বলে তো না-ই, ভাবেও না। এমনটা ভাবলে সমাজ নাকি রসাতলে যাবে! আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই বড় হয়েছি আমি। শিক্ষিত বাঙালি পরিবার। তবে ছোট থেকেই খুব রোম্যান্টিক ছিলাম আমি। আমার মাসির মেয়ের সঙ্গে ছুটিতে দেখা হলেই দুপুরের গোপনীয়তায় আমরা বর-বউ খেলতাম, আর আমি কোনও দিন বর হতে চাইনি। কতই বা বয়স তখন আমার? লেখাপড়া একটু যখন বাড়তে থাকল তখন লুকিয়ে ‘রাত ভোর বৃষ্টি’ পড়েছিলাম। নিজে কতটুকুই বা বুঝি তখন? কিছুই না। কিন্তু লুকিয়ে যৌন দৃশ্য দেখা, পড়া সবই চলত। আজকের স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে যৌনতার শিরশিরানি, দৃশ্য যত সহজ ব্যাপার, আমাদের সময় তা ছিল না। ইন্টারনেট বস্তুটি তখনও আমাদের শৈশবকে মাতিয়ে রাখেনি।

বড় হলাম। আমার বড় হওয়া মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা ফেলা। এর মাঝে যে সব প্রেম এল সেগুলো সবই চিঠি লেখা, সঙ্গে থাকা, লুকিয়ে দেখার মধ্যে দিয়ে পেরিয়ে গেল। সেখানে অদ্ভুতভাবে যৌনতা ছিল না। এটা আজ আমার কাছেও খুব বিস্ময়কর! আমার প্রথম প্রেমিক উচ্চমাধ্যমিকের সময় আমার বুক ছুঁতে চাইলে আমি এড়িয়ে যেতাম। খুব যে ছোট ছিলাম, এমনটাও তো নয়। আসলে তখন বড়সড় চেহারার আমি আমার শরীরটাকেই ভালবাসতে শিখিনি। উল্টে ফিজিক্যাল এডুকেশন ক্লাসে টি-শার্ট পড়লে নিজের বুক নিয়ে আমি বেজায় লজ্জা পেতাম।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিল আমার প্রান্তর। প্রথম গালি দিতে শিখলাম। আমার উচ্ছল শরীরের রক্তিম নেশার সঙ্গে বাইরের নেশার আবেশি টান মন মজাল। ওড়না দিয়ে আর আড়াল করলাম না নিজের অপার ঐশ্বর্য। তখনও কিন্তু নিজের চাওয়াগুলোকে বুঝতে পারিনি আমি, আজ যেমন পারি। তাই ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকরির পর, ভাল প্রেমের কমিটমেন্টে বিয়ে করলাম। এই বিয়েই আমায় নিজেকে চিনিয়ে দিল।

বিয়ের পরেও দেখলাম অন্য, বন্ধু পুরুষ নিয়ে ভাবছি আমি। এসএমএস, দেখা, মন, শরীর। আমার দিকে চোখ থামাল সুপর্ণা। বলল ‘তোমার একটু বিদঘুটে লাগবে আমায় জানো। শিক্ষা আর রুচির আড়ালে তুমি হয়তো আমায় নষ্ট মেয়ে ভাববে না, তবুও’- আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর খালি গ্লাসে ওর পছন্দের পানীয় ঢালতে ঢালতে বললাম-‘যা ইচ্ছে করছে তাই বলো, আগে পরে নিয়ে ভাবার মেয়ে তো তুমি নও’।

‘বিয়ের পর পর-ই জানো আমার পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে প্রথম আমি শরীর খেলি। আর সবচেয়ে অদ্ভুত কী জান? সেই রাতেই আমি আমার স্বামীর সঙ্গেও মিলিত হই। দু’ ক্ষেত্রের রমণ-ই আমার রমণীয়। যদি বলো, বিয়ের পর পুরনো প্রেম তীব্র হয়, তাই এমন, আসলে তা কিন্তু নয়। আমার পুরুষ বন্ধুর সংখ্যাই বেশি, খুব সহজেই বন্ধুতাও এসে যায়। সেই পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে কেবল মনের মেশা থাকবে, এটা আমি কখনও মানতে পারি না। পছন্দের মানুষ, অথচ তাকে ছোঁওয়া যাবে না! এ আমার হবে না, এটা ক্রমশ বুঝতে পারি। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথাগত বিয়েটাও এরপর-ই আমার ভেঙে যায়। কারণ আমার স্বামীকে কোনওদিন কোনও মিথ্যা বলতে চাইনি আমি।

আমার চেহারা, ব্যক্তিত্বের টানে বেশিরভাগ পুরুষ-ই আমার কাছে চলে আসে এটা জানি আমি। কিন্তু যে কোনও পুরুষকেই তো আমার ভাললাগে না। অল্প কয়েকজন কাছের বন্ধুদের সঙ্গেই কেবল আমার মন-শরীর, দুয়েরই আলিঙ্গন। বেশ কয়েকবছর হল কর্মসূত্রেই আমার শৌনকের সঙ্গে আলাপ হয়। খুব মেলে ওর সঙ্গে আমার, প্রচুর আড্ডা বসাই আমরা নিজেদের খেয়ালখুশি। খেলা থেকে বই, কত কী চলে আসে। তো এরকম একটা ভাললাগার, আনন্দের সঙ্গ-এ শরীরকে কি আলাদা করা যায়? কিন্তু শৌনক-ই আমার একমাত্র বন্ধু তাও তো নয়! শৌনকের সঙ্গে আদর খেলার সময় যদি অয়ন এসএমএস-এ আমার সঙ্গে আমাদের রাতনেশার রূপকথা শোনায়, সেখানে ক্ষতি কোথায়? আমার ভাবনা-তো দুটোকে ঘিরেই আছে! এর চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু হয় না। কাউকে ঠকিয়ে, লুকিয়ে, আঘাত দিয়ে তো আমি কিছু করছি না। আর আমি একইসঙ্গে দুটো মানুষের এই ভাললাগা, ভালবাসাকে ভালবাসছি। তাতে আমি এবং তারাও সকলেই ভাল থাকছি। কোথাও তো বলছি না ‘আমি কেবল তোমার। সেইরকম মানসিকতার পুরুষ আমার বন্ধুই হতে পারে না। আমি কখনই মনে করি না একজনকে ভালবাসা মানে সারাটাজীবন কেবল একজনকেই ভালবাসা বা হঠাৎ আমার জীবনে নতুন কোনও ভালবাসা আসা মানেই আমার এক্সিসটিং ভালবাসার মৃত্যু।

লোকে ভাবে শরীরের জন্যে আমি পুরুষ বন্ধু খুঁজে ফিরি, কী অসম্ভব হতাশা থেকে তারা এমন বলে! রসিয়ে রসিয়ে চর্চা করে, আমি জানি। আমি যা, আমি তাই-ই বলি। ‘আমার পায়ের আঙুলে রেগে নুড়ি বাজলে আমি শুনি ঝর্ণা/ সে-আওয়াজ কি আর কারো কাছে পৌঁছয়। যারা পায় তারাই জানে আমায়। এতেই খুশি আমি।
এমনও বলছি না যে এর মধ্যে দিয়ে খুব মহান কিছু হওয়ার দাবি আমি করছি বা সকলের-ই এমনটাই করা উচিত। আমি কেবল এটাই বলতে চাই এক জীবনে ভাললাগার, ভালবাসার চাওয়া এক মানুষে কখনই মেটে না। আর শরীরটাকে বিয়ের শিকল পরিয়ে, বেঁধে রাখার কোনও কারণ নেই। এখন তো বাচ্চা নেওয়ার সুযোগ-ও অনেক সহজ হয়েছে।

সমাজ মানবে না। মানেও নি। নেহাত ভাল চাকরি করি বলে একা থাকতে পারি। তবে বহু লোকের সঙ্গে মেশা, সর্বদা লোকের উপকার করা আমিকে, হয়তো আমার স্বভাবের জন্যেই একঘরে হতে হয়নি। আর আমার নিজের ভরসা, ভালবাসা আর বিশ্বাস আমাকে কোনওদিন একা, অসহায়, অবাঞ্ছিত ভাবতে শেখায় নি। ‘আমি যে সময়ের চকচকে ধারের উপর পা রেখে হাঁটছি/ আমি যে এগিয়ে যাচ্ছি প্রকাণ্ড পাথরচাঙের ফাঁকে’- এটাই আমার জীবন।

কবিতা : অরুণ মিত্র।

লেখক : স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
 
Top