*** মেয়েটি ***

আজ মেয়েটির শুভরাত্রি।
দিদিকে বাসর বলাতে দিদি শুধরে দিয়েছে। বলেছে বাসর না, বল শুভরাত্রি। বাসর শব্দটা কানে কেমন জানি শোনায়, তাও আবার বড়দের সামনে।

মেয়েটি আজ দারুণ খুশি। সে বারান্দায় বসে বরের বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখছে। আজকের চাঁদটা অন্য রকম সুন্দর। পূর্ণচাঁদের মিষ্টি জোছনায় রূপালি আভা চারিদিকে।
বর ফিসফিস করে কানে-
: কি ভাবছ?
: কত কথা!
: পুরনো প্রেম?
: ধুর,প্রেম আবার কি?
: কেন, করনি নাকি?
: করলে কি আজ পেতে আমায়? প্রেম অকারণ বিলাসিতা, সে বিলাস আমার ধাতে সয়না।
: কেন বলতো!
: আমার ভালো লাগেনা
: নাকি ভাগ্যে জোটেনি?
: জুটবে না কেন! কলেজ ভার্সিটিতে কত পাগল ঘুরত পিছে
: স্পেশাল কেউ নেই তাদের মাঝে?
: ছিল এক বদ্ধ পাগল
: তারপর?
: তারপর কিছু না
: কখনো ভালবাসা জন্মে নি পাগলটার জন্য?
: আরে না,কলেজে পিছে ঘোরার কেউ থাকলে একটা ভাব থাকে
: সেই ভাব নিতেই বুঝি বেচারাকে কষ্ট দিলে?
: আরে ধুর, কষ্ট কিসের? দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। ওসব বাদ দাও, এসো চাঁদ দেখি, আর সামনের দিনের স্বপ্ন বুনি…

চাঁদ মুচকি হেসে আলো বিলায়………………..


*** ছেলেটি ***

ছেলেটি নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসে। তার সামনে চাঁদের আলো নদীতে ঠিকরে পড়ে তৈরী করেছে এক ভিন্ন ব্যঞ্জনা। তবে আলোটুকু পুরো রূপালি নয়। তার সাথে একধারে জ্বলা আগুনের সোনালি বর্ণ মিশে এক অন্যরকম আলেয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগুনে পুড়ছে ছেলেটির এ যাবতকাল লেখা যত কবিতার পাতা।
তার কবিতা পান্ডুলিপি হয়নি কখনো। মেয়েটির এককণা হাসির লোভে রাতজেগে তার ভাবনাগুলো সাদাপাতায় জমে কবিতা হয়েছে। সেই এক একটি পাতা পুড়ছে আগুনে, সাথে তার সেই ভাবনা আর অনুভবগুলো নিয়ে।
এখনো রাতজাগা হবে ঠিকই, কিন্তু আর কখনো বুঝি ভাবনাগুলো কাব্যের ছন্দে জড়াবে না।যদি জড়ায়ও- ভেজা কাগজের লেখাগুলো সকালে বুঝি শীতল বিদ্রুপ ছাড়া আর কিছুই দেবে না। আগুনে পুড়ছে ফেলে আসা মৃতগলা স্বপ্ন। ছেলেটি অপলক নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে দেখেই চলেছে সেই আগুন জ্বলা চাঁদের আলো।

চাঁদটা আরো একটু বিস্তৃত হয়ে মিষ্টি হাসে। নদীর জলে ঠিকরে পড়ে জোছনা………………..


*** হঠাৎ ছেলেটির মুঠোফোনে ***

: হ্যালো
: কি করছিস?
: কিছু না
: সত্যি বল
: কবিতার আগুনে হৃদয় পোড়াই
: তোর পাগলাসি ছাড়বে না!
: আমি তো রেজিষ্টার্ড পাগল।পাগলামি কমালে রেজিষ্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে যে- হা হা হা
: এই ফাজলামি করবি না, খুব কষ্ট হচ্ছে?
: কষ্ট-সুখের অনুভূতি নাই। নিজেকে বৃক্ষ মনে হচ্ছে।
: বৃক্ষ মনে হচ্ছে মানে!
: মানুষও জীব, বৃক্ষও জীব। খালি মানুষ চলতে পারে, অনুভূতি আছে; আর গাছ চলতে পারে না, অনুভূতি মৃত। এখন আমারো একই অবস্হা। তাই নিজেকে বৃক্ষ মনে হচ্ছে। হা হা হা
: এই, কথায় কথায় হাসবি না
: কেন, হাসা কি অপরাধ?
: তোর জন্য অপরাধ। সারাক্ষণ হাসিস কেন! সুখেও হাসিস, দুখেও হাসিস!
: হাসিটাই তো সম্বল রে, ওটা না থাকলে তো আমার আর কিছুই খাকে না।
: জানিস, আমি কিন্তু জানতাম ও তোকে ছেড়ে যাবে। দেখলি কেমন বিয়ে করে নিল!
: এ আর এমন কি! সেতো আমিও জানতাম।
: তুই জানতি! তারপরও...
: সে আমায় ছেড়ে যাবে ভেবে আমিই তাকে তার আগে ছেড়ে যাব, এই কি ভালবাসা, বল?
: এখনো ভালবাসিস!
: আগের চেয়ে বেশি।
: কেন!
: আগে তো চোখের সামনে ছিল। তাই ভালবাসার অর্ধেক দায়িত্ব ছিল চোখের,বাকিটা মনের। এখন ও নেই তাই চোখ পুরো দায়িত্ব মনকে ছেড়ে দিয়ে ঝর্ণার মত বয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে।
: তুই কি জানিস, আমি সেই কবে থেকে তোকে ভালবাসি?
: জানার প্রয়োজন নেই
: কেন রে!
: ও আমার নীলাঞ্জনা, হৃদয়ের অন্তঃপুরে তার অবাধ যাতায়াত, সেখানে অন্য কারো প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ।
: এখন তো সে নেই!
: তাতে কি? তাই বলে ওর পূজার আসনে অন্য দেবীর পূজা হবে! তুই সুরের পাখি সুরঞ্জনা আর ও মন-আকাশের নীলে মাখা নীলাঞ্জনা। হোক না সে দূরের এখন। আজ থেকে নাহয় আকাশ ভুলে বেদনার নীলে সাজাব! তুই থাক তোর ভুবনে। মনে রাখিস সব চাওয়া পাওয়া হতে নেই।
: একবার শোন প্লীজ...
: সুরঞ্জনা আর নীলাঞ্জনারা পাশাপাশি অবস্হানে অভ্যস্ত না। হৃদয়ের মাঝে আজীবন সংঘাতে মেতে থাকবে ওরা। কাউকেই ভালবাসা হয়ে উঠবে না তখন এই হৃদয়ের। তারচেয়ে আমাকে আমার নীলাঞ্জনাতেই থাকতে দে।
: আমি কি তবে কখনোই তোকে...
(ছেলেটি তখন কেটে দিয়েছে লাইন)

মুঠোফোন রেখে মেয়েটি আকাশ পানে চায় ভেজা চোখে।

মধ্যরাতে চাঁদের হাসি যেন বেড়ে গেছে শতগুণ। তিনটি হৃদয় স্নাত হয় একই চাঁদের আলোয়
 
Top