রাগ করা বা রেগে যাওয়া। এটি খুব সাধারণ একটি ঘটনা।। বিভিন্ন মুহূর্তে আমরা প্রায় সবাই রেগে যাই। কেউ কম , কেউ বেশি। কেন রাগ উঠে, রাগের ক্ষতিকর দিক, কিভাবে রাগ কমানো যেতে পারে, তার একটি ছোট বর্ণনা আজ আপনাদের দিবো। একটু বড় হলেও সবাই আশা করি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
রেগে যাওয়া মানুষের ক্ষেত্রে দুটো কথা খুব বেশি প্রচলিত। একটি হলো, যারা খুব দ্রুত রেগে যায়, তাদের রাগ খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। আবার যারা ঠাণ্ডা মানুষ বলে পরিচিত, তাদের রাগ খুব আস্তে আস্তে উঠে এবং রাগ প্রশমনে অনেক সময় লাগে। আরেকটি কথা হলো, রেগে গেলে মানুষ নিজের আসল রূপ দেখায়, তার মনের ভিতরের কথাগুলো প্রকাশ করে দেয়।
কথাগুলো পুরোপুরি নাহলেও আংশিক সত্য। তা ছাড়া মানুষ রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ে, অনেক সময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এসময় আপনি অনেক কাজ করতে পারেন কিংবা কথা বলতে পারেন , যা আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য আরও বিরম্বনাকর পরিস্থিতি তৈরি করবে কিংবা এর জন্য আপনি কারো কাছে চিরজীবনের জন্য লজ্জিত ও ছোট হয়ে যাবেন। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা খুব বেশি প্রয়োজন।
তাহলে মানুষ কি রেগে যাবে না??? হুম যাবে, অবশ্যই যাবে। কারন ,এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আসুন প্রথমে জানার চেষ্টা করি, মানুষ কেন রেগে যায়??
••রেগে যাওয়ার সাধারণ কারনসমূহ••
মানুষ বিভিন্ন কারনে রেগে যায়, তবে সাধারণ কয়েকটি কারন হলো-
→কেউ আপনাকে ভুল বুঝলে।
→আপনার সাধারণ কথা কেউ বুঝতে না চাইলে।
→আপনার কোন কাজের স্বীকৃতি চুরি হলে।
→কেউ খারাপ ব্যাবহার করলে।
→অন্যায়- অবিচার -জুলুম করলে।
→কর্তৃত্ব হারানোর ভয় থাকলে।
→আপনার কোন প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হলে।
→মানসিক বা কোন প্রকার চাপ থাকলে।
→প্রিয়জন দ্বারা কটাক্ষের স্বীকার হলে।
••রেগে যাওয়ার কুফল••
আপনি রেগে গেলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে।
আপনার বন্ধুবান্ধব আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করবে। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন।
এ সম্পর্কে হযরত আলী (রা) এর খুব সুন্দর একটি কথা আছে।
রাগান্বিত অবস্থায় চারটি কাজ থেকে বিরত থাকোঃ
১. সিদ্ধান্ত গ্রহণ
২. শপথ গ্রহণ
৩. শাস্তি প্রদান
৪. আদেশ প্রদান
১৪০০ বছর আগের এ কথাগুলো এখন বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত।
এছাড়া মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।
যীশু বলেন, যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভুও তোমাকে ক্ষমা করবেন।
বেদে আছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থেকো।
মহানবী (সা) বলেন, ক্রদ্ধ হয়ো না। যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর। (বোখারী)
••রেগে গেলে যা করবেন••
সবই বুঝলাম। তা এডমিন, রাগ উঠলে কি করবো?? হুম, এবার তাই বলছি।
হাদিস অনুসারে বললে, মহানবী (সাঃ) এর কয়েকটি হাদিস বিশ্লেষণে জানা যায়, তিনি রাগ আসলে বসে পড়তে বলেছেন কিংবা শুয়ে থাকতে বলেছেন। আরও বেশি রাগ উঠলে ঠাণ্ডা পানি পান করতে বলেছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, রাগ উঠলে চুপ করে বসে থাকুন। কিংবা ঘরের বাহির থেকে ঘুরে আসুন।
নিজের ভুল গুলো খুজে বের করার চেষ্টা করুন। নিজের ভুল খুজে পেলে অন্যের উপর থেকে রাগ অনেকটাই কমে যায়।
•••একটি চমৎকার গল্প•••
মহামতি বুদ্ধ তখন বৃদ্ধ। এক চালবাজ লোক জুটে গেল। সে ভাবলো বুদ্ধ আর বেশিদিন বাঁচবেন না। এখন তার সাথে কিছুদিন থেকে যদি কিছু কায়দা-কানুন টেকনিক শিখে নেয়া যায়, তাহলে বুদ্ধ মারা যাওয়ার সাথে সাথে নিজেকে বুদ্ধের অবতার ঘোষণা করে দেব। তখন আর পরিশ্রম করতে হবে না। বসে বসে দান-দক্ষিণা গ্রহণ করেই জীবনটা সুখে কাটিয়ে দেয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ভণ্ড একেবারে নিবেদিতপ্রাণ শিষ্যের মতো ভান করে বুদ্ধের সেবাযত্ন করতে লাগল। মহামতি বুদ্ধ তার মতলব বুঝলেও কিছুই বললেন না।
বছর দুই পার হওয়ার পর ভণ্ড শিষ্য বুঝতে পারলো যে, সে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি কিছুই লাভ করেনি। কারণ নিয়ত পরিষ্কার না থাকলে ধ্যানের ক্ষমতা বা আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করা যায় না। ভণ্ড শিষ্য এর ফলে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। মনে মনে ঠিক করলো এর উপযুক্ত প্রতিশোধ সে নেবে। একদিন ভোরবেলা মহামতি বুদ্ধ একা বসে আছেন। ভণ্ড ভাবলো এই সুযোগ। সে কাছে গিয়ে বুদ্ধকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে লাগলো। বুদ্ধ চুপচাপ শুনছেন। কিছুই বলছেন না।
অনেকক্ষণ গালিগালাজ করার পর ভণ্ড শিষ্য যখন একটু থামলো বুদ্ধ তখন মুখ খুললেন। শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি তোমাকে কোনো প্রশ্ন করতে পারি? ভণ্ড শিষ্যের মেজাজ তখনও ঠাণ্ডা হয়নি। সে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো, জিজ্ঞেস করেন, কি জিজ্ঞেস করবেন? বুদ্ধ বললেন, ধরো তোমার কিছু জিনিস তুমি কাউকে দিতে চাচ্ছো। কিন্তু সে যদি তা না নেয়, তাহলে জিনিসগুলো কার কাছে থাকবে? উত্তেজিত শিষ্য জবাব দিল, ‘এ তো সহজ বিষয়। এটাও আপনি বোঝেন না? আমার জিনিস আমি যাকে দিতে চাচ্ছি সে যদি না নেয় তাহলে আমারই থাকবে। বুদ্ধ আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার জিনিস তুমি তাকে দিতে চাচ্ছো সে না নিলে তোমার থাকবে?’ ভণ্ড শিষ্যের উত্তর, ‘হ্যাঁ আমার থাকবে।’ এবার মহামতি বুদ্ধ বললেন, তাহলে এতক্ষণ তুমি আমাকে যা (গালিগালাজ) উপহার দিলে, আমি তার কিছুই নিলাম না।’
শিক্ষাঃ কেউ আপনার উপর রাগ ঝারলে আপনি চুপ করে থাকুন। সরাসরি তাকে ইগনোর করুন। তার রাগ তাকেই ফিরিয়ে দিন।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের প্রচারনার কারনে, আমাদের দেশের একটি কথা চরম ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তা হলো, "রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন"।, ্শুরু করবেন আপনার সম্মান, সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে হারাবেন সাম্রাজ্য।
→কষ্ট করে এত্ত বড় লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আশা করি, আমরা সবাই রাগ দমন করে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের সাফল্যের চুড়োয় নিয়ে যেতে পারবো। ধন্যবাদ....
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন