দুর্দান্ত সম্পাদনা আর পরিচালকের অভিজ্ঞতার ঠেকনায় কোনওমতে নড়বড়ে হয়ে রইল। ছবি- অগ্নিদেব চ্যাটার্জি প্রোডাকশনস।পরিচালক অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমা মানেই দর্শক এতকাল ভেবে এসেছে যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া প্রেম-পরকীয়া, আঁচল খসানো বউদির অতৃপ্ত কামবাসনা কিংবা উন্মুক্তবসনা
নায়িকার লাস্যময় আবেদন। এবার কিন্তু খোলস বদলে তিনি হাজির করেছেন এক জমজমাট থ্রিলার ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’।
বাংলার অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক উদয় শেখর ইন্দুকে (রাহুল বন্দোপাধ্যায়) মারলেন এক কষিয়ে থাপ্পড়। সেই থেকে শুরু। তারপর সিনেমার রিল কখনও গড়াল টেনে-হিঁচড়ে, কখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার কখনও বা প্রচণ্ড ছুটে, তারপর হাঁপিয়ে কলকাতার মাঠে ময়দানে নায়ক-নায়িকার হাতে হাত ধরে গান গেয়ে। ছবির সবচেয়ে বড় খামতি চিত্রনাট্য এবং কাহিনির আবহ নির্মাণে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব। কোনও থ্রিলার তখনই সফল হয় যখন দর্শক প্রতিটি দৃশ্যে, প্রতিটি চরিত্রের পদচারণায় ঢুকে পড়তে পারেন। প্রতিটি আকস্মিকতার শিহরণ অনুভব করতে পারেন। কিন্তু কোথাও যদি চলচ্চিত্রায়ণে নিখুঁত বাস্তববোধের বিন্দুমাত্র অভাব ঘটে তখনই থ্রিলারের ছন্দপতন ঘটে। আ পলিটিকাল মার্ডারেও তাই ঘটল। বিশ্বাস করতে অসুবিধা হল কেন ছাত্র সংসদের নির্বাচনে জয়লাভের উল্লাসে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, মায় অধ্যক্ষ পর্যন্ত ‘কলকাতা awesome শালা’ গানে ধেই ধেই করে উদ্বাহু নৃত্য শুরু করে দিলেন? কেনই বা গোটা কলেজ জুড়ে মাত্র পাঁচ-ছয়জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাই কোঁদল করে গেলেন? কেন কলেজের অধ্যাপিকা পুরুষদের টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে নিগৃহীতা হন? এতগুলি কেন কিন্তুর অবিশ্বাস মনে পুষে রেখে থ্রিলার গল্পে গায় কাঁটা দেওয়ানোর চেষ্টা করা মুশকিলের। গল্পের শেষটাও হল কোনওমতে ছেঁড়া প্যান্ট তাপ্পি দিয়ে সেলাই করার মত। ছড়িয়ে পড়ে কাহিনিসূত্র এক বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় কাহিনিকার জোড় করে উত্তর-দক্ষিণ এক করে দিলেন।
যদিও সিনেমার নাম ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’, তবুও সিনেমাটি আদ্যোপান্ত ‘আপলিটিকাল’ তথা ‘অরাজনৈতিক’ হয়েই থেকে গেল। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন রাজনৈতিক খুনোখুনির জেরে ক্ষেতে-খামারে, খালে-বিলে প্রায় প্রতিদিন রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে, তখন এই সিনেমার নামকরণ থেকে আর একটু রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রত্যাশা ছিল। সেই বস্তাপচা স্ক্যামের গল্প আর ব্যক্তিগত দুর্নীতিকে দোষারোপ করে পরিচালক যেন একটু সেফ খেলে বেরিয়ে গেলেন, কোনও বলিষ্ঠ রাজনৈতিক বক্তব্য না রেখেই।
আরও একটি কথা না বলে পারছি না। ঋতুপর্ণ ঘোষ মারা গিয়েছেন। সিনেমাশিল্পে কবে যে এই ‘ঋতুপর্ণ-সুলভ’ চরিত্রায়ণে ‘কমিক-রিলিফ’-এর মৃত্যু ঘটবে জানা নেই। ততদিন হয়তো তিনি মেয়েলি পুরুষ অধ্যাপক (সুজন মুখোপাধ্যায়)-এর মতো চরিত্রদের মধ্য দিয়ে অসংবেদনশীল, খিল্লিবাজ জনতাকে আমোদিত করে যাবেন।
অনেকদিন পর বাপি লাহিড়ির সুরে অলকা যাজ্ঞিকের গলায় ‘তোর প্রাণ তোর মন’ গানটি নব্বই দশকের আমেজ এনে দিল। গঙ্গাবক্ষে সিআইডি ইন্সপেক্টর আর ইন্দুর ইন্টারোগেশনের দৃশ্যটি ভাল। আর ভাল কৌশিক সেন, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় এবং কল্যাণী মণ্ডলের অভিনয়। এর একটু সিরিয়াসনেস, শিক্ষাজগতের প্রকৃত দুর্নীতি নিয়ে আর একটু গবেষণা করলে হয়তো ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’ দাঁড়িয়ে যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত সম্পাদনা আর পরিচালকের অভিজ্ঞতার ঠেকনায় কোনওমতে নড়বড়ে হয়ে রইল।
পরিচালনা : অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়
প্রযোজনা : অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় প্রোডাকশনস্
সঙ্গীত : বাপি লাহিড়ি
অভিনয় : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, কৌশিক সেন, সুজন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ
নায়িকার লাস্যময় আবেদন। এবার কিন্তু খোলস বদলে তিনি হাজির করেছেন এক জমজমাট থ্রিলার ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’।
বাংলার অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক উদয় শেখর ইন্দুকে (রাহুল বন্দোপাধ্যায়) মারলেন এক কষিয়ে থাপ্পড়। সেই থেকে শুরু। তারপর সিনেমার রিল কখনও গড়াল টেনে-হিঁচড়ে, কখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবার কখনও বা প্রচণ্ড ছুটে, তারপর হাঁপিয়ে কলকাতার মাঠে ময়দানে নায়ক-নায়িকার হাতে হাত ধরে গান গেয়ে। ছবির সবচেয়ে বড় খামতি চিত্রনাট্য এবং কাহিনির আবহ নির্মাণে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব। কোনও থ্রিলার তখনই সফল হয় যখন দর্শক প্রতিটি দৃশ্যে, প্রতিটি চরিত্রের পদচারণায় ঢুকে পড়তে পারেন। প্রতিটি আকস্মিকতার শিহরণ অনুভব করতে পারেন। কিন্তু কোথাও যদি চলচ্চিত্রায়ণে নিখুঁত বাস্তববোধের বিন্দুমাত্র অভাব ঘটে তখনই থ্রিলারের ছন্দপতন ঘটে। আ পলিটিকাল মার্ডারেও তাই ঘটল। বিশ্বাস করতে অসুবিধা হল কেন ছাত্র সংসদের নির্বাচনে জয়লাভের উল্লাসে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, মায় অধ্যক্ষ পর্যন্ত ‘কলকাতা awesome শালা’ গানে ধেই ধেই করে উদ্বাহু নৃত্য শুরু করে দিলেন? কেনই বা গোটা কলেজ জুড়ে মাত্র পাঁচ-ছয়জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাই কোঁদল করে গেলেন? কেন কলেজের অধ্যাপিকা পুরুষদের টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে নিগৃহীতা হন? এতগুলি কেন কিন্তুর অবিশ্বাস মনে পুষে রেখে থ্রিলার গল্পে গায় কাঁটা দেওয়ানোর চেষ্টা করা মুশকিলের। গল্পের শেষটাও হল কোনওমতে ছেঁড়া প্যান্ট তাপ্পি দিয়ে সেলাই করার মত। ছড়িয়ে পড়ে কাহিনিসূত্র এক বিন্দুতে মিলিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় কাহিনিকার জোড় করে উত্তর-দক্ষিণ এক করে দিলেন।
যদিও সিনেমার নাম ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’, তবুও সিনেমাটি আদ্যোপান্ত ‘আপলিটিকাল’ তথা ‘অরাজনৈতিক’ হয়েই থেকে গেল। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন রাজনৈতিক খুনোখুনির জেরে ক্ষেতে-খামারে, খালে-বিলে প্রায় প্রতিদিন রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে, তখন এই সিনেমার নামকরণ থেকে আর একটু রাজনৈতিক দৃঢ়তার প্রত্যাশা ছিল। সেই বস্তাপচা স্ক্যামের গল্প আর ব্যক্তিগত দুর্নীতিকে দোষারোপ করে পরিচালক যেন একটু সেফ খেলে বেরিয়ে গেলেন, কোনও বলিষ্ঠ রাজনৈতিক বক্তব্য না রেখেই।
আরও একটি কথা না বলে পারছি না। ঋতুপর্ণ ঘোষ মারা গিয়েছেন। সিনেমাশিল্পে কবে যে এই ‘ঋতুপর্ণ-সুলভ’ চরিত্রায়ণে ‘কমিক-রিলিফ’-এর মৃত্যু ঘটবে জানা নেই। ততদিন হয়তো তিনি মেয়েলি পুরুষ অধ্যাপক (সুজন মুখোপাধ্যায়)-এর মতো চরিত্রদের মধ্য দিয়ে অসংবেদনশীল, খিল্লিবাজ জনতাকে আমোদিত করে যাবেন।
অনেকদিন পর বাপি লাহিড়ির সুরে অলকা যাজ্ঞিকের গলায় ‘তোর প্রাণ তোর মন’ গানটি নব্বই দশকের আমেজ এনে দিল। গঙ্গাবক্ষে সিআইডি ইন্সপেক্টর আর ইন্দুর ইন্টারোগেশনের দৃশ্যটি ভাল। আর ভাল কৌশিক সেন, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় এবং কল্যাণী মণ্ডলের অভিনয়। এর একটু সিরিয়াসনেস, শিক্ষাজগতের প্রকৃত দুর্নীতি নিয়ে আর একটু গবেষণা করলে হয়তো ‘আ পলিটিকাল মার্ডার’ দাঁড়িয়ে যেত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত সম্পাদনা আর পরিচালকের অভিজ্ঞতার ঠেকনায় কোনওমতে নড়বড়ে হয়ে রইল।
পরিচালনা : অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়
প্রযোজনা : অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় প্রোডাকশনস্
সঙ্গীত : বাপি লাহিড়ি
অভিনয় : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, কৌশিক সেন, সুজন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন